Wednesday, October 1, 2014

জামায়াতের কাছে সারদা গ্রুপের অর্থের চালান তদন্তে এনএসআই তদন্ত দল কোলকাতায়-সুমি খান

বাংলাদেশে জামায়াতের কাছে সারদা গ্রুপের অর্থের চালান তদন্তে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনএসআই এর তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল কোলকাতায় কাজ শুরু করেছে।এদিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে জামায়াত এবং জঙ্গীবাদের অর্থায়নে নজরদারীর জন্যে এখনো সরকারের উচ্চপর্যায়ে কোন উদ্যোগ নেই।  কাউন্টার টেররিজম নিয়ে এখনো সরকারের উচ্চপর্যায়ে কোন টীম গঠিত হয়নি বলে জনকন্ঠকে জানালেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল।
পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রতিবেশী । মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত  উগ্র সাম্প্রদায়িক দল জামায়াতের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আর্থিক লেনদেন বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যে উদ্বেগজনক -বললেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল । তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিষয়টি উদ্বেগ জনক । তবে  এ বিষয়গুলো তদন্তে উচ্চপর্যায়ে টীম গঠন করা সম্ভব হয়নি। তার  দাবি, সরকারী কাজ;  ইচ্ছে করলেও জরুরীভাবে করা সম্ভব হয়না। তাই বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বললেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী।

 সাম্প্রতিক সময়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আইএস এবং নুসরা সংগঠক গ্রেফতারের পর সরকার এ  নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং  রাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রশ্নে  জরুরী ভাবে কাউন্টার টেররিজম টীম গঠনে তৎপর বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন,  মহানগর গোয়েন্দা দলের নিজস্ব কাউন্টার টেররিজম টীম গঠন করে দেশে  আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়দার অনুসারীদের  জঙ্গী তৎপরতার তথ্যপ্রমাণ অনুসন্ধান করছি আমরা। তবে এই জঙ্গীদের অর্থের উৎস অনুসন্ধান এবং এই উগ্রবাদী জঙ্গীদের শেকড়ের সন্ধানে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোন সুষ্পষ্ট নির্দেশনা আমরা এখনো  পাইনি। এ কারণে আমাদের তেমন কিছু করার নেই ।
সম্প্রতি  গ্রেফতারকৃত আল-কায়দা, আইএস এবং সিরিয়ার  আত্মঘাতী জঙ্গী সংগঠন জাভাত -আল-নুসরা ফ্রন্টের সক্রিয় জঙ্গী সদস্য সামিয়ুন রহমানের ব্যাপারে সিরিয়া পুলিশ এবং ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম  জনকন্ঠকে বলেন, এই জঙ্গীকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তার ব্যাপারে নিঃসন্দেহে গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন। তবে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা না পেলে , আমরা এ ব্যাপারে এগুতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করণীয় নেই।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তার সাম্প্রতিক নয়াদিল্লী সফরে জামায়াতকে সারদা গ্রুপের অর্থ দেবার অভিযোগ তদন্তের দাবি তোলেন ভারত সরকারের  কাছে । এ এইচ মাহমুদ আলী ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোতালকে বলেন, “বংলাদেশের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বানচালে বড়ো ধরণের নৈরাজ্য ঘটাতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর কাছে সারদা গ্রুপের  বড়ো অংকের অর্থ গেছে।” ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা  নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেছেন , আমাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের হাসিনা সরকার খুব সচেতন। তাদেও বিষয়ে আমরা অমনোযোগী হতে পারি না। ”
ভারতের আলোচিত সারদা গ্রুপের অর্থ কেলেংকারী তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশান (সিবিআই) ও এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এনআইএ’র তিন কর্মকর্তা। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় সূত্রে প্রকাশ, সারদার অর্থ কার হাত থেকে কোথায় গেছে এবং এই অর্থ লেনদেনে সম্পৃক্ত রাজনীতিকদের ভ’মিকা কী ছিল-তা এনআইএ তদন্ত দল খতিয়ে দেখছে।
জানা যায়, তৃণমূল নেতা আহমেদ হাসান ইমরানের আদি বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটে। ইমরানের বাবা  জামায়াতে ইসলামীর সংগঠক হিসেবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে এলাকার রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন বলে  সূত্রে প্রকাশ।  
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমুল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে। ইমরানের আদি বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটে, তার বাবা একাত্তরে রাজাকার ছিল, সবই সত্য। তবে এ ব্যাপারে গভীর অনুসন্ধান এবং তদন্ত করার ব্যাপারে কোন কাজ হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। শীগগীর এ ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করবো।
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে গরু চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় সারদা কেলেঙ্কারির টাকার একটি বিরাট অংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। এই বিপুল বিনিয়োগের একটিই উদ্দেশ্য,  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে  একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি  জামায়াত নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রবর্তন।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সারদা গ্রুপের জামায়াত সম্পৃক্ততা এবং বিনিয়োগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রে প্রকাশ। বিষয়টি বন্ধু-রাষ্ট্র ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব সংবেদনশীল বলে উল্লেখ করেছেন রাজনাথ সিংহ । আহমেদ হাসান ইমরান ২০০১ সালে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন  জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ভারতের  নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ইসলামিক ষ্টুডেন্টস মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া (সিমি)  বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে ভারত-বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত।  তিনি এ ও বলেছেন , সিমির প্রাক্তন অনেক নেতা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইমরানের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একই ধরনের রিপোর্ট করেছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে  পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নলিয়াখালিতে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের সক্রিয় সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। তৃণমূলের আরেক সংসদ সদস্য বিখ্যাত অভিনেত্রী মুনমুন সেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র এবং   পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন বলে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থা দাবি করেছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, মুনমুন, ইমরান খান এবং আইএসআই এর  ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।

ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফের ক্ষমতায় শরিক পাকিস্তানী জামায়াত। প্রদেশটি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে  পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি নেওয়াজ শরীফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আইএসআই’র প্রেসক্রিপশনে আজাদি মার্চ করে ইমরানের পিটিআই। ইমরানের উদ্যোগে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান জাভেদ হাশ্মির গণমাধ্যমকে বলেছেন আন্দোলনটি আইএসআইয়ের নির্দেশনায় হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উগ্র- সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যকার নিবিড় যোগাযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার মাধ্যমেই হয়েছে মনে করছেন গোয়েন্দারা।  সারদার মাধ্যমে জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তাই প্রমাণ করে।
পাকি¯তানি হাইকমিশনারের কলকাতা সফর ও মমতার সাথে সাক্ষাতের পেছনে মুনমুন সেন ও ইমরান খানের  আগ্রহ এবং ঘনিষ্ঠতা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। চির বৈরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হতেই পারে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎটি যখন আইএসআইপন্থি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আগ্রহে অনুষ্ঠিত হয়, তখন এর পেছনের উদ্দেশ্য বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।সাক্ষাতের পরপরই কলকাতার একটি সাংবাদিক দলকে পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতায় পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের পাকিস্তান যাওয়ার ভিসা পদ্ধতি  সহজ করার অনুরোধের অভিযোগও রয়েছে মমতার বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুসলিম বাস করেন। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদেও কেউ পাকিস্তানী ভিসা সহজ করার অনুরোধ করেন নি। মমতা যদি সারা ভারতের মুসলিমদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলতেন, কারো তেমন কিছু বলার থাকত না।  সাম্প্রতিক ভারত সফরে গিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন এসব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উত্তপ্ত -বললেন  স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ।
বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পক্ষে কাজ করেছিল। বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর (৬০-৮০%), মুর্শিদাবাদ জেলাতে (৯০%)সহ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তৃনমূলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।ভারতের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে  সারদা ১৩০ কোটি টাকা তৃণমূলের নির্বাচনে অর্থায়ন করেছিল, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জামায়াতকে  দিয়েছিল। তিস্তা পানি চুক্তিতে আপত্তির পেছনেও অন্যতম কারণ মমতা তিস্তা তীরে বসবাসকারী ৮০ শতাংশ  ভারতীয় মুসলমানকে রাজলনৈতিক খোলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
ভারতের গোয়েন্দা তথ্যে আরও প্রকাশ, তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল। গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অর্থের আদান প্রদান বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণ কমিশনের সাথে কথা বলার অনুরোধ জানালেও মমতার সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসার আশঙ্কায়  মমতা সরকারের নির্দেশে গঠিত কল্যাণ কমিশন কুনালকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন এবার এনআইএ’র তদন্তে বেরিয়ে আসবে  জামায়াতে সারদা গ্রুপের আর্থিক বিকিয়োগ এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্যে বড়ো ধরণের হুমকি জঙ্গীবাদে ভারতের তৃণমূল নেত্রী মমতা সহ অন্যান্য রাজনীতিকদের সম্পৃক্ততা। 

সারদা কেলেঙ্কারিতে তার তৃণমূল সংসদের জঙ্গি-বান্ধব রাজনীতিবিদ ইমরান থেকে শুরু করে মুনমুন সেনের মত অনেক সেলিব্রেটি জড়িত। যদি ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াত টাকা নিয়ে ২০১১ সালের বিধান সভা ও ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচন করেছে এমন প্রশ্ন উঠেছে।
সিরিয়া ফ্রন্টে আল-কায়দা, আইএস এবং সিরিয়ার সশস্ত্র সন্ত্রাসী জিহাদে মুজাহিদ সংগ্রহের জন্যে বাংলাদেশে আসে আইএস এবং জাভাত -আল-নুসরা জঙ্গী ব্রিটিশ নাগরিক  সামিয়ুন রহমান ওরফে ইবনে হামদান।  চরম উগ্রবাদী এই জঙ্গীরা যাদের কে ‘ইনফিদেল’  বা ইসলামের শত্রু মনে করে , তাদের হত্যাা এবং নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সামিয়ুন রহমান এবং তার সহযোগীরা। আল-কায়দা, আইএস এবং সিরিয়ার  আত্মঘাতী জঙ্গী সংগঠন জাভাত -আল-নুসরা ফ্রন্টের সক্রিয় জঙ্গী সদস্য সামিয়ুন রহমানের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে আল কায়দা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির ঘোষিত ‘একিআইএস’ বা আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট এর জন্য বাংলাদেশ ও মায়ানমারে জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম  একথা জানিয়ে জনকন্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত করা হবে ।
২৫ সেপ্টেম্বর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে ‘আইএস বাংলাদেশ’ প্রধান হিসেবে দাবিদার হিফজুর রহমানকে আটক করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান , বাংলাদেশ এবং মায়ানমারে আইএস দক্ষিণ এশিয়া শাখা সংগঠিত করছিলো হিফজুর ।সিলেটের সরকারি তিব্বিয়া কলেজের ছাত্র জেএমবি সদস্য হিফজুর রহমান ইন্টারনেট বিষয়ে পারদর্শী। ‘আইএস বাংলাদেশ’ নামে ফেসবুক ফ্যান পেজ খুলে আইএস বাংলাদেশ প্রধান বলে নিজেকে দাবি করে। সেই পেজের মাধ্যমে সিরিয়া ও ইরাকে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ কওে তরুণদের। দেশে ও প্রবাসে থাকা জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জঙ্গীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করে। এর  আগে বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে মো. আসিফ আদনান (২৬) ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল (২৪) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে  তথ্য নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা রা।আদনান ও তানজিল উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারউল্লাহ বাংলাটিম’ এর সদস্য। এদের মধ্যে আদনান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতির ছেলে এবং তানজিলের মা একজন যুগ্ম সচিব (ওএসডি ) বলে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা  জনকন্ঠকে জানিয়েছেন। ২০ সেপ্টেম্বর নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) একাংশের ভারপ্রাপ্ত আমির তাসনিমসহ সাত জঙ্গিকে গ্রেফতার কওে মহানগর গোয়েন্দা দল। তাসনিম সহ এই সাত জঙ্গী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশে তাদের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করেছিল।
 জঙ্গীবাদ বিষয়ে অনুসন্ধানী কাজে অভিজ্ঞ গোয়েন্দা কর্মকর্তা  মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে বলেন, কিছুদিন থেকে চরম উগ্রবাদী জঙ্গীরা দেশে বেশ তৎপর। এরা আল-কায়দার অনুসারী বলেও নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। এদের সাথে জামায়াতের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। তবে জঙ্গীদের অর্থের উৎস সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধানের এখতিয়ার তাদের নেই বলে জানান মনিরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী জনকন্ঠকে বলেন.সম্প্রতি আমি সৌদী আরব সফরে গিয়ে দেখেছি জামায়াত- শিবির সৌদী আরবের প্রবাসী বাংলাদেশীদের থেকে বড়ো অংকের ফান্ড পায়। ভারতের সারদা গ্রুপের ফান্ড পেয়েছে জামায়াত, এটাও আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আরো গভীর তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত কথা বলা হয়নি, আমি আইজির সাথে কথা বলবো । যতো দ্রুত সম্ভব এদের বিরুদ্ধে জোর তদন্তে নামতে হবে আমাদের গোয়েন্দা দলের।” আন্তর্জাতিক জঙ্গী তৎপরতার হুমকি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে জঙ্গী দলগুলোর অর্থের উৎস সনাক্ত করা এবং আল-কায়দা দলের অনুসারীদের দমনে কাউন্টার টেররিজম টীম গঠন জরুরী হলেও সমন্য়হীনতার কারণে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে বলে স্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী ।    ### ০১.১০.২০১৪

Monday, September 22, 2014

এ কে খন্দকারের বই সম্পর্কে কিছু কথা : প্রফেসর সালাহ্উদ্দীন আহ্মদ

বদরুদ্দীন উমর আমার দীর্ঘকালের বন্ধু, অতি আপনজন। কোনো কোনো বিষয়ে বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি। তবে এ নিয়ে উমরের সঙ্গে আমি কখনও আলোচনা ও তর্ক করতে চাইনি। বদরুদ্দীন উমরের মতো আমার প্রিয় বন্ধু মঈদুল হাসান। তারা দু'জনেই পণ্ডিত মানুষ, প্রচুর পড়াশোনা করেছেন এবং করেন। আমি তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনি কিন্তু তাদের সব কথা মেনে না নিলেও উত্তর দেই না বা তাদের সঙ্গে তর্ক বা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ি না। আমি শান্তি ও সৌহার্দ্যে বিশ্বাস করি। এই দুই বন্ধুকে হারাতে চাই না। বন্ধুরা হয়তো মনে করতে পারেন আমি পণ্ডিতের খোলস পরে বসে আছি; কিন্তু আমি আসলে একটা মূর্খ ও নির্বোধ জীব, কোনো কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এতে আমার কিছু আসে যায় না। আমার এই লেখা পড়ে এই বন্ধুরা যদি আমার ওপর রাগ করে আমাকে ত্যাগ করতে চান, আমি কিন্তু তাদের ছাড়ছি না। মতবিরোধ যতই থাকুক, মনের মিল তো কোনোদিন নষ্ট হওয়ার নয়।

আমার বয়স হয়েছে, নব্বই পার হয়ে গেছে; আজকাল লেখালেখি করতে খুব কষ্ট হয়। তবু এই লেখাটি লিখতে বসেছি বলতে পারেন নেহাত বিবেকের তাগিদে। গত ১২ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় বদরুদ্দীন উমর 'খন্দকারের বই ১৯৭১ : ভেতরে বাইরে' শীর্ষক একটি অগি্নগর্ভ প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রবন্ধটি পড়ে তৎক্ষণাৎ আমার যে প্রতিক্রিয়া হলো সেটাই আমার এ লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করছি।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ শুরু হয়নি। এটা ছিল দীর্ঘকালের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অমোঘ ফলশ্রুতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের প্রথম দিকে পাকিস্তান আন্দোলন সমর্থন করেছিলেন এই ভেবে যে, এতে এ অঞ্চলের মুসলমানরা, যারা ছিল সর্বক্ষেত্রে অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ_ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের কাউন্সিলে শেরেবাংলা ফজলুল হকের উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব এই দুই অঞ্চলে যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ_ এই দুই অঞ্চলে দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র (ওহফবঢ়বহফবহঃ ধহফ ঝড়াবৎবরমহ ঝঃধঃবং) প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে দিলি্লতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ কনভেনশনে জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের অবাঙালি নেতারা স্রেফ ছলচাতুরীর মাধ্যমে লাহোর প্রস্তাবকে পরিবর্তন করে দুই রাষ্ট্রের বদলে এক রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। বদরুদ্দীন উমরের পিতা আবুল হাশিম, যিনি বাংলা প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছিলেন_ এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে বদলানো যায় না। কিন্তু আবুল হাশিমের প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে দুই পাকিস্তানের জায়গায় একটি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। শেখ মুজিব তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তখন থেকেই তার মনে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন জাগতে শুরু করল।
মুসলিম লীগের অবাঙালি নেতাদের বাঙালিবিরোধী চক্রান্ত সম্পর্কে শেখ সাহেব সজাগ হতে শুরু করেছিলেন। উল্লেখ্য, এই সময় অনেক বাঙালি মুসলিম নেতা ও বুদ্ধিজীবীর মনেও এই চিন্তাভাবনা জাগ্রত হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পরই যখন কেন্দ্রীয় সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা এবং আরবি হরফে বাংলা লেখার পরিকল্পনা গ্রহণ করল, তখনই শুরু হয়ে গেল আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশে এক নতুন ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটল। 'আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি_' মনীষী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এই অমর উক্তির মধ্যে নিহিত ছিল এই নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদের মর্মবাণী। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধতে বেশ কিছুদিন সময় লাগল। কারণ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম দিক পর্যন্ত বাঙালি মুসলমানরা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক হাবিবুল্লাহর ভাষায় 'পাকিস্তান জ্বরে আক্রান্ত', 'লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান' ও ইসলামী জোশ-এর উন্মাদনা তখনও কাটেনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়লেই বোঝা যায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ভাবছিলেন কীভাবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। স্বাধীনতা কথাটি উচ্চারণ করাই তখন অসম্ভব ছিল। শেখ মুজিব প্রথম থেকেই ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ববাংলার মানুষের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। পাকিস্তান সরকার তাদের প্রধান শত্রুকে চিনতে ভুল করেনি। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বশংবদ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ঘোষণা করেছিলেন, যতদিন তিনি গভর্নর পদে থাকবেন, শেখ মুজিবকে জেলে থাকতে হবে।
বস্তুত ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক বাহিনীর লোকেরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর কিংবা হয়তো কিছুকাল আগে থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল এবং ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গোপনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নভাবে কর্মতৎপরতার কথা জানা যায়। এমনকি সুদূর লন্ডনে ১৯৫৮ সালের মার্শাল ল' জারির বেশ আগে থেকেই ব্রিটেনে বসবাসরত কিছু বাঙালি বুদ্ধিজীবী গোপনীয় কিন্তু পরিকল্পিতভাবে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার সপক্ষে কাজ শুরু করেছিলেন। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে পেঁৗছাই ৩০ সেপ্টেম্বর (১৯৫৮)। তার ৭-৮ দিন পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা মার্শাল ল' জারি করে। লন্ডন যাওয়ার কয়েক মাস পর হঠাৎ আমীর-উল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে দেখা হলো ঝঙঅঝ-এর লাউঞ্জে। এই যুবক এবং ব্যারিস্টারি পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছেন। তিনি নিম্নস্বরে বললেন, পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি আলাপ করতে চান। তিনি আমাকে হাতে কবিরউদ্দীন আহমদের লেখা একটি পুস্তিকা দেন_ যার শিরোনাম ছিল 'টহযধঢ়ঢ়ু ঊধংঃ চধশরংঃধহ'. এটিতে পূর্ব পাকিস্তানকে কীভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বঞ্চিত ও শোষণ করা হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থে, তার বিস্তৃত বিবরণ পরিসংখ্যানসহ দেওয়া ছিল। আমীর আমাকে বললেন, এটা গোপন দলিল, আমি যেন বাসায় নিয়ে পড়ি। তিনি উত্তর লন্ডনের ক্ল্যাপহাম অঞ্চলের একটা ঠিকানা দিয়ে বললেন, আমি যেন নির্দিষ্ট দিনে ওখানে যাই। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে এসেছি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য কাজ করতে। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওহফরধ ঙভভরপব খরনৎধৎু-তে কাজ করি। তবু এক সন্ধ্যায় আমীর সাহেবের বাসায় গেলাম। সেখানে দেখি ১০-১২ জন বাঙালি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তরিকুল আলম, জাকারিয়া চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন। কয়েকদিন আগে ব্র্যাকের স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে দেখা হলে জানালেন, তিনিও ওই বৈঠকে যোগ দিতেন। ১৯৬০ সালের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে আমার পুরনো বন্ধু কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সহপাঠী সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী ইৎরঃরংয ঈড়ঁহপরষ-এর ংযড়ৎঃ ঃবৎস ঋবষষড়ংিযরঢ় নিয়ে লন্ডনে এলো। জহুর আসায় আমাদের বৈঠক প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ব বাংলার জনগণের যে কত বড় ক্ষতি হয়েছে সে কথা জহুর বারবার বলল। সে বলত, পাকিস্তান সৃষ্টি করে আমরা যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে। পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করা ছাড়া বাঁচার আর কোনো পথ নেই_ এ কথার ওপর জোর দিত।
১৯৬০ সালের শেষ দিকে বদরুদ্দীন উমরও অক্সফোর্ডে এসেছিল। আমি ওকে আমাদের বৈঠকে নিয়ে গেলাম। উমর আসায় আমাদের বৈঠক আরও সজীব হয়ে উঠল। তার বক্তব্য ছিল পরিষ্কার এবং বাচনভঙ্গি ছিল চমৎকার। উমর এবং আমার পড়াশোনা ও গবেষণার চাপে আমীরের গোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। তবে জহুর থাকতেই এই ভাবনা হয়েছিল যে, আমাদের জীবদ্দশায় বোধহয় পাকিস্তানের কবল থেকে দেশ স্বাধীন হবে না। তবুও আমরা স্বাধীনতার পথে পূর্বসূরির কাজ করে গেলাম। আমার প্রস্তাব অনুযায়ী এই গোষ্ঠীর নাম নেওয়া হলো 'পূর্বসূরি'। এত কথা বললাম এই জন্য, সুদূর লন্ডনে বসে সেই ১৯৪৮-৬০ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য আমরা যে কল্পনা করতে শুরু করেছিলাম এবং পরে জানতে পেরেছি আমাদের দেশের মধ্যেও এ ধরনের চিন্তাভাবনা অনেকেই গোপনে করে যাচ্ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কীভাবে ধাপে ধাপে তিনি দেশকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের ইস্যুতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে সমঝোতা সম্ভব নয়। সম্প্রতি শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কূটনীতিবিদ, যাকে বাংলাদেশ সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য সম্মাননা দিয়েছে, তার একটি বই প্রকাশ হয়েছে। এই বইয়ে তিনি বলেছেন, ১৯৬৩-৬৪ সালে যখন তিনি ঢাকার ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনে জুনিয়র কর্মকর্তা, তখন গোপনে ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিব তার সঙ্গে দেখা করেন। শেখ মুজিব জানতে চান যে, পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হলে ভারত সরকার সাহায্য করবে কি-না কিংবা কতটা সাহায্য করবে। শশাঙ্ক বাবু শেখ মুজিবের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গোপন পথে আগরতলা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। শেখ মুজিব সেখানে পেঁৗছালে তাকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়, নেহরু সরকার এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দিতে পারবে না। শেখ সাহেব বিফল মনোরথ হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। সে সময় ভারত সরকারের পক্ষে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সাহায্য করা সম্ভব ছিল না স্রেফ নিজস্ব নিরাপত্তার কারণে। ১৯৬২ সালে সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের যুদ্ধ হয়ে গেছে এবং সে যুদ্ধে ভারত ভীষণভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে। চীনের কাছে এই লজ্জাকর পরাজয় নেহরুকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। এর মাত্র দুই বছরের মাথায় আধুনিক ভারতের রূপকার এবং জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জওয়াহেরলাল নেহরু মৃত্যুবরণ করেন।
ইতিমধ্যে মওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো অনেক বাঙালি নেতা মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেছেন। পরে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল হিসেবে গঠিত হয়। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রধান নেতায় পরিণত হন। নিজের পরিকল্পনামতো আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির আদর্শ অনুসরণ করে পূর্ব বাংলার সব সম্প্রদায়ের মানুষ_ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে নিয়ে এক ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিতে পরিণত করতে সক্ষম হলেন। শেখ সাহেবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তিনি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি অনুসরণ করে বিভক্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, যা তার আগে কোনো নেতা পারেননি। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় থেকে জনসচেতনতা বাড়তে লাগল। জনমনে প্রশ্ন জাগল, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে আমাদের কী লাভ? এই চিন্তাধারাকে শেখ মুজিব রূপায়িত করলেন তার ঐতিহাসিক 'ছয় দফায়'। সেখানে বলা হলো, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি ছাড়া সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকবে পূর্ব পাকিস্তানের হাতে। আলাদা মুদ্রার ও প্যারামিলিটারি ফোর্স গঠন করার প্রস্তাবও করা হলো। বস্তুত বলা যেতে পারে, ছয় দফা দাবির মধ্যে ছিল স্বাধীনতার পূর্বাভাস। সামরিক শাসক আইয়ুব খান সেটা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তীব্রভাবে দমননীতি শুরু করে। তারা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। কিন্তু ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের ফলে সরকার মামলা প্রত্যাহার করে শেখ সাহেবকে মুক্তি দিল। ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করলেন যে, 'এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বলে অভিহিত করা হবে।' এটা ছিল বলিষ্ঠ ঐতিহাসিক ঘোষণা। পূর্ণ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর আইডিয়া ছিল আমাদের স্বাধীন হতে হবে। কিন্তু যেতে হবে ধাপে ধাপে। জনগণের কাছে সেটি গৃহীত হতে হবে, পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে পরিষ্কারভাবে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। 'আমরা স্বাধীন হলাম'_ এ কথা না বলে পাক সামরিক শাসকদের নাকের ডগায় বসে তিনি বলেছিলেন, 'যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের ওপর আমার অনুরোধ রইল : প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এবং ... রাস্তাঘাট যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা [শত্রুদের] ভাতে মারব, পানিতে মারব।' ওই ভাষণে তিনি পাক সৈন্যদের ব্যারাকে গিয়ে থাকতে বললেন এবং যদি তারা না যায় এবং বাঙালিদের ওপর আক্রমণ করে, তা হলে তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বললেন, 'তোমরা আমার ভাই_ তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা কর না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।' বঙ্গবন্ধু তার ওই ভাষণের শেষের দিকে বললেন, '... যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝেশুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রাম, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব_ এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।'
আমি এবং আমার মতো অগণিত লোক যারা রেসকোর্স ময়দানে সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শেখ সাহেবের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনছিলাম, তারা শুনলাম, বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শেষ করলেন 'জয় বাংলা' বলে। ওই সময় লোকজন বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছিল, সেই হট্টগোলের মধ্যে তিনি জয় বাংলার পর 'জয় পাকিস্তান' কিংবা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ'ও বলেছিলেন কি-না আমি শুনতে পাইনি। আমি বলব, যদি বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বা পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেও থাকেন, তাহলে কোনো দোষ ছিল না। স্বাধীনতার পক্ষে এত কথা বলার পর জয় পাকিস্তান বলে পাকিস্তানি শাসকদের স্রেফ বিভ্রান্ত করতে নেহাত কৌশলগত কারণে তিনি এ কথা বলতে পারেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসকের নাগের ডগায় বসে স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করা ছিল দুঃসাহসিক কাজ।
বন্ধুবর বদরুদ্দীন উমর এ কে খন্দকারের বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন : ''তিনি (শেখ মুজিব) যদি জনগণের ওপর নির্ভরশীল হতেন এবং সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন তা হলে ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানের বক্তৃতার শেষে দেশের লোককে ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরির আহ্বান না জানিয়ে এবং বক্তৃতার শেষে 'জয় পাকিস্তান' না বলে ওই মহাসমাবেশেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সমবেত লাখ লাখ মানুষকে ক্যান্টনমেন্টের দিকে পরিচালিত করতেন এবং বাঙালি সামরিক লোকদের ক্যান্টনমেন্টের দখল নেওয়ার আহ্বান জানাতেন। বিমানবন্দর দখল সহজ হতো এবং তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যদের সংখ্যা কম থাকায় জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে বাঙালি সামরিক সদস্যরা ক্যান্টনমেন্ট দখল করতেন। সেই সংঘর্ষে হাজার হাজার লোক নিহত হতে পারত কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে ওইদিনই পাকিস্তান সরকারের পতন হতো।" উমরের এই বক্তব্য পড়ে আমি হতবাক হয়ে গেছি। তিনি তো ফরাসি বিপ্লব ও তার পরবর্তীকালের ইতিহাস ভালো করে পড়েছেন। তিনি কি ভুলে গেছেন ১৮৭১ সালে ফরাসি-জার্মান যুদ্ধে লুই ফিলিপ, যিনি নিজেকে সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ন হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, তার পতনের পর নতুন ফরাসি সরকারের আমলে প্যারিস কম্যুনের বিপ্লবকে কী নৃশংসভাবে ফরাসি সৈন্যবাহিনী দমন করেছিল? প্যারিসের বিপ্লবী জনতার ওপর সৈন্যবাহিনী কামানের গোলা চালিয়ে হাজার হাজার ফরাসিকে হত্যা করে কম্যুনকে ধ্বংস করেছিল। শেখ মুজিব যদি উমরের কথামতো লাখো জনতা নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট দখল করার চেষ্টা করতেন, তাহলে অবাঙালি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকেরা সংখ্যায় যতই কম হোক তাদের হাতে প্রচুর ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ ছিল, তারা নির্বিচারে কামান দেগে শেখ মুজিবসহ লাখো বাঙালিকে হত্যা করত। বাইরের কোনো শক্তি আমাদের রক্ষা করতে আসত না। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতো। আমরা চিরদিনের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের গোলাম হয়ে থাকতাম।
এবার খন্দকার সাহেব ও বাঙালি সামরিক অফিসারদের কথা বলি। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে একাধিকবার শেখ সাহেবের কাছে পরামর্শ ও নির্দেশের জন্য গেছেন; কিন্তু শেখ সাহেব তাদের আশ্বাস দিতে পারেননি। এ জন্য খন্দকার সাহেবরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। শেখ সাহেব কেন বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি তার কারণ ছিল। আমাদের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের হাতে কি বড় যুদ্ধ করার মতো ভারী অস্ত্র ছিল? অস্ত্র পাওয়া যেত একমাত্র ভারতের কাছ থেকে। কিন্তু ওই সময় ভারত কেন অস্ত্র দিতে যাবে? ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বাঙালিদের কোনো কার্যক্রমে বড় আকারের সাহায্য করতে ওই সময় প্রস্তুত ছিল না। যদি ভারত সে রকম করত, তখনই পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করত এই অজুহাতে যে, ভারত পাকিস্তানের অখণ্ডতাকে বিনষ্ট করতে চায়। সে সুযোগে চীন ১৯৬২ সালের মতো ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য আক্রমণ করে বসত, সে আক্রমণকে প্রতিহত করার ক্ষমতা ভারতের ছিল না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও আমরা সমর্থন পেতাম না। খন্দকার সাহেব ও অন্যান্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার অনুমতি দিতেন তাহলে ক্ষিপ্রগতিতে নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাকবাহিনী আমাদের শেষ করে দিত। আমাদের অবস্থা নাইজেরিয়ার বায়াফ্রার মতো হতো।
সে সময় পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে যত কমই থাকুক, তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ছিল। এই উপলব্ধি আমাদের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের ছিল না মোটেই, যদিও তারা স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। অনেকেই অভিযোগ করেন যে, শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কোনো কন্টিনজেন্ট প্ল্যান ছিল না। আমার ধারণা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর একটা গোপনীয় সমঝোতা হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত ভারত অপেক্ষা করবে।
বস্তুত মার্চ-এপ্রিল ১৯৭১ আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আমাদের অনুকূলে ছিল না। বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল, তখন আমরা এর শিকার হয়েছিলাম। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপরীতে আমেরিকা; আবার কমিউনিস্ট চীনের সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে আমেরিকা চীনের কাছে আসার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে চীন ও আমেরিকার পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু এই দুই পরাশক্তি নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্ব তথা মুসলিম উম্মাহ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপক্ষে। একদিকে জাতিসংঘের পক্ষেও আমাদের স্বাধীনতাকে সমর্থন করার সম্ভাবনা ছিল না প্রধানত এই কারণে যে, জাতিসংঘের সনদে রয়েছে কোনো সদস্য রাষ্ট্রকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ তারা কখনও সমর্থন করবে না। সে পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে গেলে টিকতেই পারত না। সুতরাং বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, ধাপে ধাপে সাবধানে আমাদের এগোতে হবে। এ কে খন্দকার সাহেব তার বইয়ে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লিখেছেন, ভারত সরকার আমাদের মুক্তিবাহিনীকে যথেষ্টভাবে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছিল না। তখন ভারত চায়নি মুক্তিবাহিনী ভারতের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানের বাহিনীর সঙ্গে কোনো বড় রকম সংঘর্ষে লিপ্ত হোক। তা হলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। ভারত সময় চাচ্ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে। তাছাড়া ভারত শীতের আগে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চায়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ যখন উত্তর-পশ্চিম হিমালয় বরফে ঢেকে যাবে সে সময় চীনের পক্ষে ওই অঞ্চল থেকে সৈন্য নামিয়ে ভারত আক্রমণ করতে পারবে না। এপ্রিল থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় এক কোটি অসহায় মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং এর ফলে ভারতের অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সারাবিশ্ব চষে বেড়িয়েছেন বিশ্ববাসীকে সচেতন করে দিতে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরস্পরকে সাহায্য করার বন্ধুত্ব চুক্তি সই হয়ে গেছে। ভারতের রণকৌশল ছিল, আমাদের মুক্তিবাহিনী গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকসেনাদের ব্যতিব্যস্ত রাখবে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণ-সাধারণ মানুষ ভারত সৈন্যবাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
একটা প্রশ্ন অনেকেই করেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাক সেনাবাহিনীর হাতে ধরা দিলেন কেন? পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর যে ছবিটি প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, তিনি অত্যন্ত শান্ত, অবিচলিত ও আত্মমর্যাদাসহ করাচি বিমানবন্দরের লাউঞ্জের একটি সোফায় বসে আছেন। তার চেহারায় ভয়ের লেশমাত্র নেই; বরং একটা প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাসের ছাপ সুস্পষ্ট। বস্তুত তিনি জীবনের বাজি রেখে নির্ভীক ও শান্তভাবে মৃত্যুভয়কে জয় করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানিরা তাকে হয়তো মেরে ফেলতে পারে কিন্তু বাংলাদেশ যে স্বাধীন হবেই_ এ বিশ্বাস তার অটুট ছিল। ২৫ মার্চ রাতে যখন তাজউদ্দীন ও আমীর-উল ইসলাম শেখ সাহেবকে তাদের সঙ্গে চলে যেতে বারবার অনুরোধ করছিলেন, তখন শেখ সাহেব তাদের চলে যেতে বলেন। 'তোমরা চলে যাও, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।' এ কথা তাজউদ্দীনকন্যা রিমি লিখেছেন তার বইয়ে।
পরিশেষে এ কে খন্দকার সাহেব সম্পর্কে আমি একটা কথা বলতে চাই। তার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। তরুণ বয়সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। গভীর স্বদেশপ্রেমের দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। কিন্তু ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে তার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আমি বলব আমাদের অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা সম্পর্কে এ কথা বলা যায়। স্নেহভাজন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তার একটা বইয়ে পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাদের ওপর কাকুল মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। এ কে খন্দকার সাহেবের মতো আমাদের বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা গভীর স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছেন, অনেকে শহীদও হয়েছেন। তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে আমরা যেন কোনো কার্পণ্য না করি। খন্দকার সাহেব তার সীমিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে যা মনে হয়েছে লিখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার শ্রদ্ধার অভাব ছিল না। বলতে হয় অত্যন্ত সীমিত প্রেক্ষাপটে, সীমিত দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি উনিশশ' একাত্তরের জটিল পরিস্থিতিকে নিরীক্ষণ করেছেন, যার প্রকাশ তার বইয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।
যারা খন্দকার সাহেবের বইয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে তার সম্পর্কে অশালীন উক্তি করেছেন তাদের আমি সমর্থন করি না। খন্দকার সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন। সেই ব্যাপারটাকে সম্মান জানানো দরকার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কোনো কোনো বিষয় সম্পর্কে মতপার্থক্য হলেও তাদের অবদানের কথা মনে করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আমাদের কর্তব্য। তেমন যদি আমরা না করতে পারি, তাহলে নিজেদেরই অসম্মান করব।


জাতীয় অধ্যাপক; প্রাক্তন অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ
রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


Friday, September 19, 2014

দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ:জয়শ্রী জামানের ৫০ বন্ধু ও সহকর্মী

দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ:জয়শ্রী জামানের ৫০ বন্ধু ও সহকর্মী

 সম্প্রতি দুই সন্তানহারা সাংবাদিক জয়শ্রী জামানকে নিয়ে কিছু গণমাধ্যম দায়িত্বহীনভাবে কুৎসা রটনা করছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে শোকবিধ্বস্ত জয়শ্রী জামানের প্রতি সমবেদনামূলক এবং দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশের জন্যে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জয়শ্রী জামানের  ৫০ জন বন্ধু ও সহকর্মী । বৃহস্পতিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তারা সদ্য সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার অন্তরের অন্ত:স্থলে ধারণ করে সহকর্মীর চরম দু:সময়ে সাংবাদিকতায় পেশাদারীত্ব প্রত্যাশা করেন। শুক্রবার দিনব্যাপী চ্যানেল আইতে এই আবেদন প্রচার করা হয়। বিভিন্ন অনলাইনেও এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিটি এখানে তুলে ধরা হলো।

    দু’ দিন ধরে দুঃসহ সময় পার করছি আমরা। সাংবাদিক জয়শ্রী জামান ও আলীমুল হকের দুই সন্তান চিরশ্রী জামান মনমন (১৭) ও মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫) গত সোমবার আত্মহত্যা করলে শুধু সাংবাদিক সমাজই না গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। জয়শ্রী ও আলীমুলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে বেশ ক’বছর আগে। তাদের দুই সন্তানের একসঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনাটি বাবা-মায়ের বন্ধন অটুট না থাকলে যে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, সেই নির্মম সত্যটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। অথচ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়ার বদলে আমরা মেতে উঠেছি কুৎসিত সাংবাদিকতায়। নারীর চরিত্র হননে মত্ত হয়েছে আমাদের গণমাধ্যমের একটি অংশ। কয়েকটি পত্রিকায় এই ঘটনায় আঙ্গুল তোলা হয়েছে জয়শ্রী জামানের দিকে, যা আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।

একইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। সাংবাদিকতার নীতির বাইরে গিয়ে কল্পিত গল্পগাথা যে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে সে কথাটাও আমরা ভুলে গেছি। ২০১১ সালে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের কথা আমরা এখনো ভুলে যাইনি। রোমানার স্বামী হাসান সাইদ মারা যাবার পর পুরো পরিস্থিতিই বদলে গেল। রোমানা ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা সমাজ, গণমাধ্যম ভুলে গেল। তখন প্রকাশিত হতে থাকলো কথিত “ইরানি বন্ধুর” সঙ্গে রুমানা মঞ্জুরের ছবি আর সূত্রবিহীন মেইল। অথচ রুমানা দেশের বাইরে পড়াাশুনা করছিলেন। তখন যে কারো সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এজন্য তো তার ওপরে করা অত্যাচার জায়েয হয়ে যায় না।

আমরা ভুলে যাই নি ২০১০ সালে জুরাইনে দুই সন্তান নিয়ে মায়ের আত্মহত্যার কথা। সেখানেও একজন নারী সাংবাদিককে নিয়ে বিস্তর  লিখেছে গণমাধ্যম। কয়েকটা দিন পার হওয়ার পর দেখলাম, মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেদারসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লিখা হচ্ছে সেই নারী সাংবাদিককে নিয়ে। আত্মহত্যার মূল ঘটনাটি লিখতে মজা না পেয়ে নারী সহকর্মীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতাতেই বিকৃত আনন্দ ছিলো অনেকের। সমুদ্র সৈকতে কিংবা ঘরের ভেতরে তোলা টিশার্ট পরা ছবি দিয়ে সেই ঘটনার আপডেট জানানো হয়েছে বহুদিন।

ঐশীর ঘটনাটিও আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটাই যেন একমাত্র কারণ ছিলো কিংবা জিন্স-টিশার্ট। ঘটনার মূলে যাওয়ার চেয়ে ঐশীকে নিয়ে লেখালেখিই আনন্দের বিষয় ছিলো অনেকের। লক্ষ্য ছিল জিন্স-টিশার্ট পরা টিনএজ একটি মেয়ের ছবি দিয়ে নিউজ করে পত্রিকার পাঠক আর অনলাইনগুলোর হিট বাড়ানো।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আমাদের প্রিয় বন্ধু-সহকর্মী রুনির মৃত্যুর পর কতো কথা শুনেছি। হ্যাঁ...সব কথাই হয়েছে রুনিকে নিয়ে(প্রিয় বন্ধু সাগরকে নিয়ে বললেও সেটা সুখকর হতো না আমাদের কাছে)। রিপোর্টের লাইনে লাইনে রুনির চরিত্র হনন করা হয়েছে নানা ভাবে। যার কারণে এখনো আমরা সাগর-রুনি হত্যারহস্য জানতে পারি নি। তবে রুনির বেলায় আমরা রুনির বন্ধু-সহকর্মী ও স্বজনেরা প্রতিবাদ করেছিলাম। জয়শ্রী জামানকে নিয়ে লেখা সংবাদগুলোর বেলায়ও আমরা একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জয়শ্রীর দুই সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনা তো প্রত্যেক অভিভাবকের বিবেককে জাগিয়ে তোলার কথা। নিজের সন্তানের নিরাপদ জীবনের জন্য সচেতন হয়ে উঠার কথা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাচ্চা দুটি ছিল জয়শ্রী জামানের প্রাণ। এই দুই সন্তানের জন্যই জয়শ্রী জামানকে ছুটে বেড়াতে হতো রাজধানীর এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মনমন আর আলীমকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিল জয়শ্রী। আজ যখন ওরাও চলে গেলো তখন তার আর তো হারাবার কিছু নেই। তবুও সব হারানো নি:স্ব জয়শ্রীকে আমরা বাঁচতে দিচ্ছি না। একজন সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না। আমরা মানবিকতার হাত প্রসারিত করে তার পাশে দাঁড়াইনি। বরং কিভাবে তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ‘সম্মানটুকু’ ধুলিসাৎ করা যায় সেজন্য যেনো কেউ কেউ আদাজল খেয়ে লেগেছে। যার সব হারিয়েছে তাকে চরম অনৈতিক ,অশালীন এবং অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে । হায়রে সাংবাদিকতা!

অত্যন্ত মেধাবী  চীরশ্রী জামান মনমন ও আলীমকে নিয়েই দু‘চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিল জয়শ্রীর। মনমন চারটি স্টার মাকর্সসহ ‘এ’ পেয়েছিল ‘ও’ লেভেলে। গিটার বাজাতো। জাপানী ভাষা জানতো। মনমনও মায়ের মতোই বিনয়ী ও ভদ্র ছিল। অথচ ওই দুটি বাচ্চাকে ‘মাদকাসক্ত’  বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। বুধবার কিছু পত্রিকা লিখেছে,“বাবা তাদের জীবন থেকে আগেই চলে গেছেন। মাও সে পথেই হাঁটছেন।” মা' যে সে পথে হাটঁছেন এটা কিসের ভিত্তিতে বলছে পত্রিকাগুলো?
অথচ কম্যুনিটির প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দূরে সরে না থেকে আমরা যদি জয়শ্রী-আলীমুলের সাজানো সংসারটি ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারতাম তা হলে হয়তো আজ দুটি মেধাবী শিশুকে অকালে ঝরে যেতে হতো না। আমরা যদি জয়শ্রীর চাকরী টি স্থায়ী করতে সহযোগিতা করতে পারতাম, অথবা  মেধাবী মেয়ে চীরশ্রীর জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারতাম তা হলে হয়তো সন্তান দু‘টিকে নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে থাকতে পারতো জয়শ্রী। এই সন্তানদেও মনে ও কোন হতাশা জন্মাতো না।
ডনজেদেও বিচ্ছিন্নতা এবং ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনুতাপ তো নেই-ই, কেউ কেউ দু:খজনক বিষয়টিকে মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ‘সংবাদ পণ্য’ করার চেষ্টা করছেন। সমাজের বিবেক, সমাজের দর্পণ হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারা কি দয়া করে একবার ভেবে দেখবেন বিষয়গুলো? আমাদের বিবেক জাগ্রত হোক॥

আমরা জয়শ্রী জামানের বন্ধু ও সহকর্মীরা:- দিল মনোয়ারা মনু, ইখতিয়ারউদ্দিন, ফরিদা ইয়াসমিন, মাহমুদ হাফিজ, কাওসার রহমান, সুপ্রীতি ধর, পারভীন সুলতানা ঝুমা, ফজলুল বারী, জাহিদ নেওয়াজ খান, শারমীন রিনভী, প্রভাষ আমিন, ইলিয়াস খান, মানস ঘোষ, রানা হাসান, অঞ্জন রায়, মেনন মাহমুদ, শাহনাজ গাজী, ফাতেমা জোহরা হক কাকলী, সুমি খান, গোধূলী খান, জুলহাস আলম, রোজিনা ইসলাম, জাহানারা পারভীন, নাদিরা কিরণ, জাকিয়া আহমেদ, ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, তানবীর সিদ্দিকী, শাহেদা ফেরদৌসী, ফারহানা লাকি, মুনমুন শারমীন শামস্, জেসমিন পাপঁড়ি, সাজু রহমান, লীনা পারভীন, মোরসালিন মিজান, তাসকিনা ইয়াসমিন, লাবনী গুহ রায়, দৌলত আক্তার মালা, শামীম আরা শিউলি, সুলতানা রহমান, ফারহানা মিলি, সেবিকা দেবনাথ, রুখসানা ইয়াসমিন, সাবরিনা করিম মোর্শেদ, আঙ্গুর নাহার মন্টি ,ঝর্ণামনি, আগুন সহমিকা, আলফা আরজু। ### ১৯.০৯.২০১৪

Thursday, September 18, 2014

মিডিয়াকে বলছি, দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ

মিডিয়াকে বলছি, দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ

দুই সন্তানহারা মা জয়শ্রী’র নামে কুৎসা লিখবেন না প্লিজ


দু’ দিন ধরে দুঃসহ সময় পার করছি আমরা। সাংবাদিক জয়শ্রী জামান ও আলীমুল হকের দুই সন্তান চিরশ্রী জামান মনমন (১৭) ও মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫) গত সোমবার আত্মহত্যা করলে শুধু সাংবাদিক সমাজই না গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। জয়শ্রী ও আলীমুলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে বেশ ক’বছর আগে। তাদের দুই সন্তানের একসঙ্গে আত্মহত্যার ঘটনাটি বাবা-মায়ের বন্ধন অটুট না থাকলে যে ভয়...াবহ পরিণতি হতে পারে, সেই নির্মম সত্যটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। অথচ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়ার বদলে আমরা মেতে উঠেছি কুৎসিত সাংবাদিকতায়। নারীর চরিত্র হননে মত্ত হয়েছে আমাদের গণমাধ্যমের একটি অংশ। কয়েকটি পত্রিকায় এই ঘটনায় আঙ্গুল তোলা হয়েছে জয়শ্রী জামানের দিকে, যা আমাদের ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে।

একইরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। সাংবাদিকতার নীতির বাইরে গিয়ে কল্পিত গল্পগাথা যে সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে সে কথাটাও আমরা ভুলে গেছি। ২০১১ সালে স্বামীর নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোমানা মঞ্জুরের কথা আমরা এখনো ভুলে যাইনি। রোমানার স্বামী হাসান সাইদ মারা যাবার পর পুরো পরিস্থিতিই বদলে গেল। রোমানা ওপর হওয়া অত্যাচারের কথা সমাজ, গণমাধ্যম ভুলে গেল। তখন প্রকাশিত হতে থাকলো কথিত “ইরানি বন্ধুর” সঙ্গে রুমানা মঞ্জুরের ছবি আর সূত্রবিহীন মেইল। অথচ রুমানা দেশের বাইরে পড়াশুনা করছিলেন। তখন যে কারো সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে। এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এজন্য তো তার ওপরে করা অত্যাচার জায়েয হয়ে যায় না।

আমরা ভুলে যাই নি ২০১০ সালে জুরাইনে দুই সন্তান নিয়ে মায়ের আত্মহত্যার কথা। সেখানেও একজন নারী সাংবাদিককে নিয়ে বিস্তর লিখেছে গণমাধ্যম। কয়েকটা দিন যাওয়ার পর দেখলাম, মূল ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে দেদারসে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লিখা হচ্ছে সেই নারী সাংবাদিককে নিয়ে। আত্মহত্যার মূল ঘটনাটি লিখতে মজা না পেয়ে নারী সহকর্মীকে নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতাতেই বিকৃত আনন্দ ছিলো অনেকের। সমুদ্র সৈকতে কিংবা ঘরের ভেতরে তোলা টিশার্ট পরা ছবি দিয়ে সেই ঘটনার আপডেট জানানো হয়েছে বহুদিন।

ঐশীর ঘটনাটিও আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াটাই যেন একমাত্র কারণ ছিলো কিংবা জিন্স-টিশার্ট। ঘটনার মূলে যাওয়ার চেয়ে ঐশীকে নিয়ে লেখালেখিই আনন্দের বিষয় ছিলো অনেকের। লক্ষ্য ছিল জিন্স-টিশার্ট পরা টিনএজ একটি মেয়ের ছবি দিয়ে নিউজ করে পত্রিকার পাঠক আর অনলাইনগুলোর হিট বাড়ানো।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আমাদের প্রিয় বন্ধু-সহকর্মী রুনির মৃত্যুর পর কতো কথা শুনেছি। হ্যা...সব কথাই হয়েছে রুনিকে নিয়ে (প্রিয় বন্ধু সাগরকে নিয়ে বললেও সেটা সুখকর হতো না আমাদের কাছে)। রিপোর্টের লাইনে লাইনে রুনির চরিত্র হনন করা হয়েছে নানা ভাবে। যার কারণে এখনো আমরা সাগর-রুনি হত্যারহস্য জানতে পারি নি। তবে রুনির বেলায় আমরা রুনির বন্ধু-সহকর্মী ও স্বজনেরা প্রতিবাদ করেছিলাম। জয়শ্রী জামানকে নিয়ে লেখা সংবাদগুলোর বেলায়ও আমরা একযোগে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জয়শ্রীর দুই সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনা তো প্রত্যেক অভিভাবকের বিবেককে জাগিয়ে তোলার কথা। নিজের সন্তানের নিরাপদ জীবনের জন্য সচেতন হয়ে উঠার কথা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাচ্চা দুটি ছিল জয়শ্রী জামানের প্রাণ। এই দুই সন্তানের জন্যই জয়শ্রী জামানকে ছুটে বেড়াতে হতো রাজধানীর এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মনমন আর আলীমকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চেয়েছিল জয়শ্রী। আজ যখন ওরাও চলে গেলো তখন তার আর তো হারাবার কিছু নেই। তবুও সব হারানো নি:স্ব জয়শ্রীকে আমরা বাঁচতে দিচ্ছি না। একজন সন্তানহারা মায়ের আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না। আমরা মানবিকতার হাত প্রসারিত করে তার পাশে দাঁড়াইনি। বরং কিভাবে তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল ‘সম্মানটুকু’ ধুলিসাৎ করা যায় সেজন্য যেনো কেউ কেউ আদাজল খেয়ে লেগেছে। যার সব হারিয়েছে তাকেই দায়ী করা হচ্ছে কারণ হিসেবে। হায়রে সাংবাদিকতা!

অত্যন্ত মেধাবী মনমন ও আলীমকে নিয়েই দু চোখে রঙিন স্বপ্ন ছিল জয়শ্রীর। মনমন চারটি স্টার মাকর্সসহ ‘এ’ পেয়েছিল ‘ও’ লেভেলে। গিটার বাজাতো। জাপানী ভাষা জানতো। মনমনও মায়ের মতোই বিনয়ী ও ভদ্র ছিল। অথচ ওই দুটি বাচ্চাকেও মাদকাসক্ত বানানোর অপচেষ্টা হয়েছে। গতকাল কয়েকটি পত্রিকা লিখেছে,“বাবা তাদের জীবন থেকে আগেই চলে গেছেন। মাও সে পথেই হাঁটছেন।” মা' যে সে পথে হাটঁছেন এটা কিসের ভিত্তিতে বলছে পত্রিকাগুলো? অথচ কম্যুনিটির প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে এবং ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে দূরে সরে না থেকে আমরা যদি জয়শ্রী-আলীমুলের সাজানো সংসারটি ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারতাম তা হলে হয়তো আজ দুটি মেধাবী শিশুকে অকালে ঝড়ে যেতে হতো না। আমরা যদি মেধাবী মেয়েটির জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারতাম তা হলে হয় তো সন্তান দুটিকে নিয়ে আরেকটু ভালোভাবে থাকতে পারতো জয়শ্রী। আমাদের মধ্যে অনুতাপ তো নেই-ই, কেউ কেউ দু:খজনক বিষয়টিকেও মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ‘সংবাদ পণ্য’ করার চেষ্টা করছেন। সমাজের বিবেক, সমাজের দর্পণ হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারা কি দয়া করে একবার ভেবে দেখবেন বিষয়গুলো?

আমরা জয়শ্রী জামানের বন্ধু ও সহকর্মীরা:-
দিল মনোয়ারা মনু, ইখতিয়ারউদ্দিন, ফরিদা ইয়াসমিন, মাহমুদ হাফিজ, সুপ্রীতি ধর, পারভীন সুলতানা ঝুমা, ফজলুল বারী, জাহিদ নেওয়াজ খান, শারমীন রিনভী, প্রভাষ আমিন, ইলিয়াস খান, মানস ঘোষ, রানা হাসান, অঞ্জন রায়, মেনন মাহমুদ, শাহনাজ গাজী, ফাতেমা জোহরা হক কাকলী, সুমি খান, গোধূলী খান, জুলহাস আলম, রোজিনা ইসলাম, জাহানারা পারভীন, নাদিরা কিরণ, জাকিয়া আহমেদ, ইশরাত জাহান ঊর্মি, সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, তানবীর সিদ্দিকী, শাহেদা ফেরদৌসী, ফারহানা লাকি, মুনমুন শারমীন শামস্, জেসমিন পাপঁড়ি, সাজু রহমান, লীনা পারভীন, মোরসালিন মিজান, তাসকিনা ইয়াসমিন, লাবনী গুহ রায়, দৌলত আক্তার মালা, শামীম আরা শিউলি, সুলতানা রহমান, ফারহানা মিলি, সেবিকা দেবনাথ, রুখসানা ইয়াসমিন, সাবরিনা করিম মোর্শেদ, আঙ্গুর নাহার মন্টি ও ঝর্ণামনি।

জীবন পিয়াসী তৃষ্ঞার আশে- সুমি খান

 (তন্বী জয়ন্তীদের জন্যে)
তৃষাতুর প্রাণ জোছনার ছায়া
আলোর হল্কা মরীচিকা মায়া
পরাজিত রাতে হার মেনে নেয়া

মিথ্যে প্রবোধে 
এতো ভুল আর এতো ক্ষরণে
 এতো প্রাণ জাগে তৃষ্ঞা হরণে
সবুজাভ সাধ তৃষিত প্রাণে
কেবলি বেসুর 
বেতাল অগ্নিবানে
ছুঁয়েছো অধর নিবিড় আলিঙ্গনে !!!!
-------------+++++------
কোন্ অকরুণ
চিতার চাবুকে
নীল কশাঘাতে
বিষজল সুখে
চোখ ছলছলকাঁপিত অধর
নীল অভিমানে
প্রাণ জর্জর!!

জানোনি তো তুমি
চাওনি জানতে!!

 লোভাতুর  সুখে
  টেনেছিলে বুকে
  ফেলে গেছো মিছে
  মরীচিকা পিছে
  অর্ন্তজ্বালা    
মুক্তিপিয়াসী
আমি ভেসে গেছি-
জীবন পিয়াসী তৃষ্ঞার আশে।

-----------------------
ও জীবন তুমি
কিছু তো দিয়েছো
কিছু ভালোবাসা
কিছু কাছে আসা
কিছু টা পিয়াসী
প্রাণের জোযারে

হয়তো  ভুলে
বা মিথ্যে প্রবোধে
তুমি তো ভাসালে
আঁখির জোয়ারে
ও জীবন তুমি
চুম্বনে ভাসো
মেঘহীন দূর
নীলিমায় এসো
হোক ভুল, হোক্ মিথ্যে প্রবোধে-

তিল তিল গড়া বালির প্রাচীরে
ভাঙ্গনের ঢলে তীব্র জোয়ারে
যতোই ভাসাও অকূলে,
ও জীবন তুমি ভরা জোছনায়
আজ বুঝি নেমে এলে!!
9.00 pm 
18.09.2014
Daily Janakantha Office

সুবিধাবাদী মমতার জামায়াত কানেকশন - ড. বিজন সরকার

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় অভিযোগটি যে গুরুতর, তা প্রমাণ করে। বিষয়টি বন্ধু-প্রতিম ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। তেমন গুরুতর না হলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়।

আহমেদ হাসান ইমরান ২০০১ সালে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, সিমি বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। সিমির প্রাক্তন অনেক নেতা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইমরানের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে একই ধরনের রিপোর্ট করেছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নলিয়াখালিতে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের সক্রিয় সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়ার পরেও কেন মনোনয়ন দিয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মমতাই দিতে পারবেন।তৃণমূলের আরেক এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের মধ্যে এখনো নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থার দাবি। পাকিস্তানের আইএসআই’র সাথে মুনমুন সেন সরাসরি জড়িত, সেই সন্দেহও রয়েছে কিছু কিছু মহলের। গোয়েন্দারা বলছেন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফের ক্ষমতায় শরিক পাকিস্তানি জামায়াত। প্রদেশটি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অতি সম্প্রীতি নওয়াজ শরীফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আইএসআই’র প্রেসক্রিপশনে আজাদি মার্চ করে ইমরানের পিটিআই। আন্দোলনটি যে আইএসআইয়ের নির্দেশনায় হয়েছে, তা ইমরানের উদ্যোগে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান জাভেদ হাশ্মিরই গণমাধ্যমকে বলেছেন।যে প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব জানতেন কি না?’। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উগ্র-গোষ্ঠীর মধ্যকার নিবিড় যোগাযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার গোচরেই হয়েছে বলে মনে হয়। যদিও তাঁর দল অস্বীকার করছে। বলছে, এটি বিজেপির রাজনীতি।কিন্তু তাদের দাবি তেমন গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। সারদার মাধ্যমে জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তাই প্রমাণ করে।
রথমতঃ পাকিস্তানি হাইকমিশনারের কলকাতা সফর ও মমতার সাথে সাক্ষাতের পেছনে মুনমুন সেন ও ইমরান খানের  আগ্রহ এবং ঘনিষ্ঠতা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। চির বৈরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হতেই পারে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎটি যখন আইএসআইপন্থি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আগ্রহে অনুষ্ঠিত হয়, তখন এর পেছনের উদ্দেশ্য বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, সাক্ষাতের পরপরই কলকাতার একটি সাংবাদিক দলকে পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থা করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তেমন প্যারা-ডিপ্লোমেসি স্থান পায় না। কেন্দ্রকে আড়ালে রেখে পাকিস্তানের সাথে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্যারা-ডিপ্লোমেসি চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্যান্য পাকিস্তানপ্রেমি কর্মকাণ্ডগুলি মিলে যায়। খোদ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণই বিশ্বাস করে যে, মমতা সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপে এই অঞ্চলের উগ্রপন্থিদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিন হচ্ছে।

তৃতীয়ত:  কলকাতায় পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে রাজ্যের মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা প্রসেস সহজ করার অনুরোধের অভিযোগও রয়েছে মমতার বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুসলিম বাস করেন। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা পাকিস্তানি ভিসা সহজ করার অনুরোধ করেন নি। আজ যদি মমতা সারা ভারতের মুসলিমদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলতেন, কারো তেমন কিছু বলার থাকত না।

চতুর্থতঃ উর্দুভাষী মানুষের আনাগোনা কলকাতায় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, মমতার উগ্র রাজনীতি প্রীতির জন্যই রাজ্যের ভেতর অন্য দেশের মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় মমতার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরাও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে গরু চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় সারদা কেলেঙ্কারির টাকার একটি বিরাট অংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা।

গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল। গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যায়। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অর্থের আদান প্রদান বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেও মমতা সরকারের নির্দেশে গঠিত কল্যাণ কমিশন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কল্যাণ নিজে থেকেই কমিশনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।

বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পক্ষে কাজ করেছিল। বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর (৬০-৮০%), মুর্শিদাবাদ জেলাতে (৯০%)সহ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তৃনমূলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।

ভারতের জাতীয়, আঞ্চলিকও স্থানীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটির ইলেকটোরাল বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করলে মমতার বিতর্কিত রাজনৈতিক পদ্দক্ষেপগুলোর কারণ বোঝা যায়।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় না) প্রবল। বিশেষ করে সিপিএম ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা প্রায়ই হত এবং সংখ্যালঘু মুসলমানরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনানিপাত করত। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর তেমন দাঙ্গা হয়নি এবং ফলে সংখ্যালঘু ২৭ শতাংশ ভোট সিপিএমের কোষাগারে যায়। সিপিএম মুসলমানদের মধ্যে ভূমি বিতরণ করেও মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছিল। একই সাদৃশ্য দেখা যায় বিহারে। ১৯৯০ সালে লালু প্রসাদ যাদব ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে লালু ক্ষমতায় থাকেন। একই পদ্ধতিতে উত্তর প্রদেশে মুলায়েম সিং যাদব ক্ষমতায় আসেন।এখন নিরাপত্তা সংখ্যালঘু মুসলমানের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। তাদের সচেতনতা বেড়েছে। তারা শিক্ষা, চাকরি ও দারিদ্র অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে এসেছে।সেসব ইস্যুকে গুরত্ব না দেওয়ার জন্য লালু প্রসাদ যাদবের ক্ষমতা চলে যায় নিতিশের হাতে। ঠিক একই কারণে মুলায়েম সিং ইউপিতে মায়াবতীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।


পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানরাও আগের মত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নন। সিপিএমের জমানায় সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে থাকার কারণেই বামফ্রন্টের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। যেখানে সারা ভারতে স্বাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ২৭ শতাংশ ভোটের মালিক সংখ্যালঘু মুসলমানদের হার ৫৭.৫। এমনকি বাম শাসিত কেরালায় সংখ্যালঘুদের স্বাক্ষরতার হার ৮৯.৪ শতাংশ। একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেরালায় মুসলমানদের দারিদ্র ১৫ বছরে (১৯৮৭-২০০৪) ৫৬ থেকে ৩১ এ নেমে এলেও পশ্চিমবঙ্গে নেমেছে ৫৩ থেকে ৪৪ শতাংশে।মুসলমানদের প্রতি অবহেলার কারণেই সিপিএম ২০১১ সালে ক্ষমতা হারায়। মমতা ২৯৪ তে ২২৫ আসন পেয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় যান। রাজ্যসভার মত লোকসভার নির্বাচনেও সিপিএমের শোচনীয় পরাজয় হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় নির্ধারণই ভোটের মালিক সংখ্যালঘুরা। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪ আসন পায়, যেখানে ২০০৯ সালে ১৯ এবং ২০০৪ সালে একমাত্র নিজের আসনটিতে জিতে আসেন মমতা।পাশাপাশি মমতার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত আচার আচরণ নির্মোহ-ভাবে বিশ্লেষণ করলে অসহনশীলতা, নীতিহীনতা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা মমতার রাজনৈতিক বিকাশ ধারায় প্রবলভাবেই পাওয়া যায়।

জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করলেও, কংগ্রেসের রাজনীতি দিয়েই মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। মমতা ১৯৮৪ সালে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলে দেন। এরপর সারা ভারতের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে লোকসভায় আবার নির্বাচিত হয়ে নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় মানব সম্পদ ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে স্থান পান মমতা।কিন্তু পরে কলকাতায় ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ এনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালের দিকে নিজ দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমকে সহযোগিতার অভিযোগ আনেন এবং পরিচ্ছন্ন কংগ্রেসের দাবি জানিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।

১৯৯৬ সালে পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংহের জামার কলার ধরে টানা-হেঁচড়া করেন মমতা। রেলের প্রতি অবহেলার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে সংসদে তৎকালীন রেল-মন্ত্রী রাম বিলাসের দিকে নিজের শাল ছুঁড়ে মারেন। ১৯৯৮ সালে লোকসভায় নারী সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির এমপি দারোগা প্রসাদ সরোজকে জামার কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেস খুব অল্প সময়ে বামফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রকাশ পায়। তৃণমূল ১৯৯৯ সালে বিজেপির নেতৃত্বের সরকারে সামিল হলে রেলের দায়িত্ব পান মমতা। কিন্তু রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে সরকার থেকে বের হয়ে যায় তৃণমূল।
২০০১ সালের শেষের দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা কংগ্রেসের সাথে নির্বাচনী জোট করেন। তারপরেও নির্বাচনে বামফ্রন্ট জয় লাভ করে। ২০০৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনেও বড়োসড়ো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মমতার তৃণমূল।

মমতা ২০০৪ সালে আবার ফিরে যান বিজেপির কোয়ালিশন সরকারে। তখন কয়লা এবং খনির দায়িত্বে ছিলেন। এটিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাথে মমতার শেষ কোয়ালিশন। কারণ বর্তমান ভোটের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজেপির সাথে জোট করা আর মমতার পক্ষে সম্ভব নয়।

২০০৬ সালে সিপিএম সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা এবং ২০০৭ সালের নন্দী গ্রামের গণহত্যার প্রতিবাদের ফলে মমতার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

২০০৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৯টি জয় করে তৃণমূল। নিজেদের উত্থানের ঘণ্টা বাজায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকারে আবারও রেলের দায়িত্ব পান মমতা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৫ বছরে ক্ষমতায় থাকা সিপিএমকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, সারদা ১৩০ কোটি টাকা তৃণমূলের নির্বাচনে অর্থায়ন করেছিল, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জামায়াতকে  দিয়েছিল।

সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংকটিই মমতার ক্ষমতার প্রাণশক্তি। নির্বাচনের আগে জামা মসজিদ শাহির ইমাম বুখারি এবং টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বারখাতি তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

মমতার মত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ জানেন, কেন লালু প্রসাদ যাদবকে সরিয়ে নীতিশ, মুলায়েম সিংকে সরিয়ে মায়াবতী ক্ষমতায় ছিল। এমনকি খোদ পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের কাছ থেকে সিপিএম, এবং সিপিএমের কাজ থেকে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এবং লোকসভায় দ্বিতীয় বিরোধী দল।
মমতা এমন কিছু করতে চাইবে না যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তার বিপক্ষে চলে যায়। ক্ষমতায় আসার পরেই ৩০০০০ হাজার ইমামকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা প্রদান হাইকোর্ট দ্বারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলেও মমতার প্রতি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। তিস্তা পানি চুক্তি না করার পেছনেও অন্যতম কারণ হল- তিস্তার তীরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ধর্মীয় সংখ্যালঘু। মমতা জানেন ভারতের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট নয়। আগে প্রোগ্রেসিভ অল্টারনেটিভ তেমন ছিল না, এখন অনেক আছে।

মমতার নিজেও জানেন, ইমরানের মত সিমির অনেক প্রাক্তণ নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি? সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে ইমরান খানের মত সিমির নেতারা ভারতের ভেতরে ও বাইরে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তা খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গোয়েন্দারই সন্দেহ করে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তার নিজ দলের জঙ্গি-বান্ধব রাজনীতিবিদ ইমরান থেকে শুরু করে মুনমুন সেনের মত অনেক সেলিব্রেটি জড়িত। যদি ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াত টাকা নিয়ে ২০১১ সালের বিধান সভা ও ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচন করা যায়, প্রশ্ন থেকে যায় কোন নৈতিক ক্ষমতার জোরে সারদার টাকা জামায়াতকে দিতে না করবেন মমতা?

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, দেশের ভেতর জঙ্গি উত্থান ঘটল কিনা, তাও মমতার কাছে মুখ্য নয়।  মুখ্য সংখ্যালঘু ভোটের কিছু সুবিধাবাদী প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ, অনেক দূরের বিষয়।

মমতা এমন এক রাজনীতিবিদ, যার কাছে নিজ দলের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। নিজের স্বার্থের জন্য প্রথমে বিজেপি, পরে কংগ্রেস, আবার বিজেপি, আবার কংগ্রেস জোটে গিয়েছিল। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে বিজেপি থেকে কোয়ালিশনের জন্য ইঙ্গিত দিলেও মমতার সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ বিজেপির বিপক্ষে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি হারাতে হবে এই ভয়ে।
ড: বিজন সরকার: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথ কোরিয়া, 
bipoly3001@yahoo.com  বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৪:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যুদ্ধাপরাধী এবং ঘৃণ্য ঘাতক সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের কোন বিকল্প নেই: দায় একা শেখ হাসিনার নয় - সুমি খান

 আর্টিকেল ৪৯ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কাউকেই ক্ষমা করতে পারেন। এই বিষয়টি আমরা আমজনতা ভুলে যেতে পারি, নীতিনির্ধারকেরা কেন ভুলে যান?  অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের অনুসারী জামাত শিবিরের ক্যাডার বাহিনী কখনো কোন দুর্বলতম মুহুর্তেও তাদের নিধন যজ্ঞে দেরি করে না। এসবে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। সবাই যদি ভাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একলার দায় সব, সেটা কি ঠিক ? নিজেরা কেন একটু নিজেদেও দিকে দেখি না?

একাত্তরে নারী ধর্ষণ, হত্যাসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড  দিলেও আপিলের রায়ে সুপ্রীম কোর্ট তার  সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ড  দিয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালী হত্যায় মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পেলেও জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ ও নারী অপহরণ করে ধর্ষণে সহায়তার দায়ে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া’ পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে জামায়াতের নায়েবে আমির ঘাতক  দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে।

এই রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী তার  নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি একজন ব্যক্তি, সরকারের সদস্য ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনো আদেশ ও রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করি, সেটা না হওয়ায় আমি মর্মাহত।” দুর্ভাগ্য আমাদের, আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি শুনেছেন সাঈদী পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন।  আদালতে সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০ টি অভিযোগ এনে  তথ্য প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ তম অভিযোগ পিরোজপুর থানার পাশে বিপদ সাহার কন্যা ভানু সাহাকে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে জোর করে ধর্ষন  দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে তিনি এসব তথ্য জানবার কথা । একই সাথে অনুদ্ঘাটিত তথ্য তার নির্দেশে উদ্ঘাটিত হবে –এমটাই প্রত্যাশা জনগণের। এ প্রেক্ষিতে জনগণের প্রত্যাশা - আইনমন্ত্রী বলতে পারতেন তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে –সাঈদী  পাকিস্তান সরকারের গেজেটভুক্ত জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর গোলাম আযমের নেতৃত্বে গঠিত শান্তি কমিটি বা পিস কমিটির সদস্য ছিলেন ।
আপিল বিভাগের এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, “আগামীতে রিভিউ করতে পারা যাবে কি না তা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার আগ পর্যন্ত  বলা যাচ্ছে না। কারণ আব্দুল কাদের মোল্লার রায় রিভিউ করার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করেছিল। তার পুরো রায় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।” তবে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আমাকে বলেছেন, রিভিউর কোন সুযোগ নেই।

সকালে রায় ঘোষণার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চ। তাদের অভিযোগ, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আঁতাত করে সরকার এই রায় দিয়েছে।এ অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “প্রশ্নই আসে না। সমঝোতার ‘স’ ও হয়নি। মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত শিবিরের টেরোরিস্টদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো অবকাশ নেই।” এদেশের আপামর জনগণ সেটাই বিশ্বাস করতে চায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদীকে। পরের বছর ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াত নেতাদের মধ্যে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধেই সবার আগে অভিযোগ গঠন হয়। একাত্তরে ৩ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুর ও ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ২০টি ঘটনায় ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন এবং আসামিপক্ষে ১৭ জনের সাক্ষ্য শুনে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে প্রমাণিত হলেও সাজা না হওয়া ছয় অভিযোগে এই জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।দুই পক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৬ এপ্রিল তা রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে আপিল বিভাগ। তার পাঁচ মাস পর বুধবার এই ঘোষণা করা হলো। ৭৪ বছর বয়সী সাঈদী বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে কারাবন্দি তিনি। তবে এর মধ্যে মা ও ছেলের মৃত্যুর পর দুই দফায় কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন পিরোজপুর থেকে দুই বার নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর  একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর একে একে তদন্ত শুরু হয়। এর ভিত্তিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেও ও  গ্রেপ্তার করা হয়। বিচার চলাকালীন  দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত মিছিল নিয়ে নামে এবং সেই মিছিল থেকে সহিংসতা ছড়ায়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদন্ড দেবার পর পর ই জামায়াত শিবিরের  সহিংসতায় সারাদেশে ৩৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ চারজন, আওয়ামী লীগ ছাত্র লীগের দুই কর্মী।চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবাইকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে জামায়াত।গাইবান্ধায় তিন পুলিশসহ ৬ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ জন, রংপুরে ৫ জন, সাতক্ষীরায় ৪ জন, চট্টগ্রামে এক পুলিশসহ ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ২ জন, নোয়াখালীতে ২ জন এবং ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, বগুড়া, মৌলভীবাজার, নাটোর ও রাজশাহীতে একজন করে নিহত হয়েছেন।দেশব্যাপী সংঘাতে আহত হয়েছে দুই শতাধিক। জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বহু গাড়ি ও দোকান পাট ভাংচুর করেছে। কয়েকটি স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ও মন্দিরেও হামলা হয়েছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তির

এই রায়ের পর খালেদা জিয়া জামায়াত-আওয়ামী লীগের আঁতাত হয়েছে বিশ্বাস করে মনোক্ষুন্ন হবেন কি? জানিনা  আওয়ামী লীগের সাথে কোনভাবেই এখন তিনি পেরে উঠছিলেন না। তবে তার ভরসার জায়গা জামায়াত তাকে আশ্বস্ত করবে তাদের মতো করে কৌশুলী কথা বলে । তবে হ্যাঁ , সাদা চোখে মনে হচ্ছে  আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ক্ষতি বেশি হয়েছেবিএনপির কর্মীদেও মধ্যে অধিকাংশই শিবির বিদ্বেষী। খোদ খালেদা জিয়ার  সমাবেশে তার উপস্থিতিতেই শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রদলের ছেলেদেও আক্রমণ করেছে বিভিন্ন সময়ে।

সাঈদীর আপিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক  আইনমন্ত্রী  ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, “সর্বোচ্চ আদালত সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেয়। আদালত সেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। রায় পছন্দ হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু সব রায়ই আমাদের গ্রহণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হবে।” মনে পড়ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদকে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর সংকট, অবকাঠামোগত সংকট । প্রসিকিউটর দের ফাইল রাখবার কোন জায়গা ছিলনা প্রায় দু’বছর। গোপনীয় নথি বগলদাবা করে প্রসিকিউটর রা   রাতের বেলা বাড়ি নিয়ে যেতেন ।  সকালে  এনে আবার কাজ করতেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে  একাধিক বার  আমাদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন,“ ট্রাইব্যুনালের পেছনে আমরা অনেক খরচ করেছি, আর খরচ করা সম্ভব না। ৃ” তিনি শুধু নন এই ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে সংশ্লিষ¦ট মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্মানিত নীতিনির্ধারকেরা কখনো কি একাত্ব হয়ে সমস্যা এবং সংকট নিরসনে সিরিয়াসলি ভেবেছেন?

এ মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতা ছিল কিনা প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। তিনি বলেছেন , “আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ।”মন্ত্রী বলেন, “ট্রাইব্যুনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেক্ষমান আছে। প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।” মাননীয় আইনমন্ত্রী একা নন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী , স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী , অর্থমন্ত্রী সহ এই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট দেও জরুরী ভাবে বৈঠক করে ট্রাইব্যুনালের  সকল জটিলতা অবসান প্রয়োজন। আমি এই ট্রাইব্যুনালের প্রথম দিন থেকে এর সাথে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে  শিরায় শিরায় যেন টান অনুভব করি। পিতার রক্তঋণ শুধবার দায় থেকে হয়তো।  মনে মনে ভাবি -যদি একাত্তরের ঘাতকদের  বিরুদ্ধে  জাতি ন্যায়বিচার পায়- শহীদ এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কিছুটা হলেও দায় শোধ হতো নিশ্চয়ই।  বাবা দেখে যেতে পারেন নি এই ঘাতকদেও বিচার । এক কাদেও মোল্লার ফাঁসি আমাদেও আত্মবিশ্বাসী করেছে বটে। তবু ভয় হয় -আমরা কি মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারবো অবশিষ্ট শীর্ষঘাতকদের ফাঁসির কাঠে ঝুলানো কার্যকর হয়েছে?
sumikhan29bdj@gmail.com

আলিমুল হক

18.09.2014   2PM CHINA
\ Supriti Dhar দিদি, আমি ভেবেছিলাম, বরাবরের মতোই আমি চুপ থাকবো। ফেসবুকে তো কিছু লিখবোই না। কিন্তু আজ অনেকদিন বাদে ফেসবুক খুলেই (আমার ভাগনি জানালো আমার অ্যাকাউটন্ট নাকি হ্যাক হয়েছে। সেটা চেক করার জন্যই আসলে ফেসবুক খোলা) আপনার স্ট্যাটাস চোখে পড়লো। জানিনা, আমার নাম উল্লেখ করে আপনি প্রশ্ন না-করলে আমি কিছু লিখতাম কি না। হয়তো কিছুই লিখতাম না। কিন্তু আপনি অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছেন আমার অনুভূতির কথা। যদিও একজন বাবার কাছে তার দুটি সন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর তার অনুভূতি জানতে চাওয়াটা কতোটা মানবিক আমি জানি না। কিন্তু আপনার প্রশ্নটাকে আমি স্বাভাবিক ও মানবিক হিসেবেই নিচ্ছি। কারণ, আমার সম্পর্কে ২০০৮ সালে একবার এবং সম্প্রতি আরেকবার মিডিয়াতে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে, তাতে আমাকে আপনি যে ঘৃণায় ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বাদ দেননি, তাতেই আমি অবাক হয়েছি। আমার অনুভূতির কথা আপনাকে জানাবো (আমি ভেবেছিলাম ইনবক্সে জানাবো; কিন্তু আপনি ওপেন প্রশ্ন করেছেন বলে ওপেন উত্তরই দিচ্ছি), তবে তার আগে কয়েকটি কথা বলে নিই। ভাববেন না নিজের সাফাই গাইছি। তাহলে ২০০৮ সালেই গাইতে পারতাম। তখন গাইনি, কারণ আমার বাচ্চা দুটো তখন বেঁচে ছিল। ওদের সম্মানের কথা ভেবে আমি মুখ খুলিনি। এখন ওরা নেই; তাই মুখ খুলতেও আমার সমস্যা নেই। দিদি, আপনি 'উইমেন চ্যাপ্টারের' জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন এবং আমি সে জন্য আপনাকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলাম। সেই উইমেন চ্যাপ্টারে আমার হতভাগ্য বাচ্চা দুটোর মা জয়শী জামানের একটি খোলা চিঠি ছাপা হয়েছে। চিঠিটি লেখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে। সেই চিঠির সঙ্গে সম্ভবত আপনার একটি নোট প্রকাশিত হয়েছে। নোটে আপনি লিখেছেন: "ব্যক্তিগতভাবে জয়শ্রী জামানের আগের স্বামী আলীমুল হককে যতটা জানি, সে আরেকটা নতুন সংসার গড়ে নিয়েছে। থাকে বিদেশে। অনেকদিন তারও চাকরি ছিল না। নতুন প্রেমের কারণে দিগন্ত টিভি থেকে তার চাকরি চলে যায়। খুবই হতাশ ছিলেন তিনিও। কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে নিতে হয়নি, তাই জয়শ্রীর মতোন অতটা অতল গহ্বরে তাকে পড়তে হয়নি।" আপনি 'ব্যক্তিগত' শব্দটা লিখেছেন। আপনি আমার সরাসরি শিক্ষক সুব্রত ধর স্যারের বোন এবং আমাদের খুকু আপার প্রিয় বান্ধবি। ফিলিপ দাদার সেড-এর আপনার সঙ্গে আমি কিছুদিন কাজও করেছি। আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবেই চেনেন। কিন্তু মিডিয়াতে আমার সম্পর্কে ওই লাইন কটি লিখবার আগে কি আপনি আমাকে এর সত্যতা সম্পর্কে জিঙ্গেস করতে পারতেন না? আপনি কি খুকু আপা বা ফিলিপ দাদার সাথে কথা বলেছিলেন? আপনি লিখেছেন অনেকদিন আমার চাকরি ছিল না। কথাটা সত্য নয়। কারণ, দিগন্ত থেকে চাকরি চলে যাওয়ার আগেই ফিলিপ দাদার সেড-এ আমি জয়েন করেছিলাম। আপনি লিখেছেন 'প্রেমের কারণে' দিগন্ত থেকে আমার চাকরি চলে গেছে। এটাও ঠিক নয়। 'প্রেমের কারণে' নয়, বিয়ে করার কারণে দিগন্ত থেকে আমার এবং আমার স্ত্রী মাহবুবার চাকরি চলে গিয়েছিল। (এবং এ অন্যায়টা দিগন্ত কর্তৃপক্ষ যে করেছিল সেটা তারা দেরিতে হলেও উপলব্ধি করেছিল এবং পরে তারা আমাকে নিউজ কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল এবং মাহবুবাকেও পুনঃনিয়োগ দিযেছিল। আপনারা সেটা জানেন কি না আমি জানি না।) আপনি লিখেছেন, 'খুবই হতাশ ছিলেন তিনি।' এ কথাটাও সত্য নয়। আমি হতাশ হইনি, ভেঙেও পড়িনি। বিশ্বাসী মানুষ হতাশ হয় না। আপনি ফিলিপ দার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। আপনি লিখেছেন: 'কিন্তু যেহেতু সন্তান লালন-পালনের কোনো দায়িত্ব তাকে (মানে আমাকে) নিতে হয়নি.....'। আসল সত্য হচ্ছে: জয়শ্রীর সঙ্গে আমার ছাড়াছাড়ি হবার দিনই (৬ মার্চ ২০০৮০; ছাড়াছাড়ির কারণ পরে লিখছি) সে জোর করে আমার মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে তার বোন তিলোত্তমার বাসায় ওঠে। আমার মেয়ে সারারাত কেঁদেছে, ঘুমায়নি...বলেছে, আমাকে আব্বুর কাছে দিয়ে আস। পরের দিন সকালে জয়শ্রী বাধ্য হয়ে মেয়েকে দিয়ে গেছে, আমি মেয়েকে নুডুলস রান্না করে খাইয়েছি, সে গোসল করে ঘুমিয়েছে। একমাস পর জয়শ্রী ছিলেটাকেও আমার কাছে দিয়ে গেছে। তারপর আটটি মাস ছেলেমেয়ে দুটো আমার কাছে ছিল। একটি কাজের বুয়া দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ওদের সঙ্গে থাকতো, রান্না করতো, তারপর আমি রাতে অফিস থেকে এলে চলে যেতো। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় আমরা থাকতাম। বাড়িওয়ালা এখনো বেঁচে আছেন। ওই আটমাস প্রায় সময়ই জয়শ্রী আমাকে এসএমএস করে আবার বিয়ে করার তাগিদ দিত, বলতো আমার বাচ্চা দুটো কাজের বুয়ার কাছে থাকে, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। আমি রাজি হইনি। এভাবে প্রায় ৬ মাস অতিক্রান্ত হবার পর মাহবুবা অনেক সাহস করে আমাকে প্রপোজ করে এবং যথারীতি আমি না করে দিই। কিন্তু পরে আমার মেয়ে মনমনের সঙ্গে আলাপ করলে সে বলেছিল: আব্বু সকল স্টেপ মাদার খারাপ হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি বিয়েতে রাজি হই। এ নিয়ে মাহবুবার পরিবারে ঝামেলা হয় (সে প্রসঙ্গে নাইবা গেলাম) এবং বাধ্য হয়ে (সিনিয়র হিসেবে এ কাজের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি) আমরা বগবাজার কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। বিয়ের পরপরই দুটো ঘটনা ঘটে। আমাকে অবাক করে দিয়ে জয়শ্রী আমার ছেলেটাকে নিয়ে যায়। আর দিগন্ত কর্তৃপক্ষ মাহবুবাকে আর আমাকে চাকরিচ্যুত করে কোনো কারণ না-দর্শিয়েই। তখন আমার অবস্থা কেমন হতে পারে নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। তখন অনেক ঝড় আমার ওপর দিয়ে গেছে....উত্তরার বড় বাসা আমাকে ছেড়ে শেওড়াপাড়ার একরুমের একটি বাসা নিয়ে হয়েছে। তখন আমি জয়শ্রীকে বললাম সেড-এর কাছ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে মুহাম্মাদের খরচ আলাদাভাবে বহন করা সম্ভব নয়। মনমন-মুহাম্মাদ দু'জন আমাদের সঙ্গে থাকলে কোনোরকমে কষ্ট করে কাটিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু সে ছেলেকে দিতে রাজি হলো না। সে আলাদা বাসা নিল এবং মেয়েও তখন মায়ের সঙ্গে থাকতে চাইল। আমি বেতনের অর্ধেক জয়শ্রিকে প্রতিমাসে দিতে থকলাম।....এরপর এমন একটি মাস যায়নি যেমাসে ওদের আমি টাকা দিইনি (সে অংক দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি কখনো)...ওদের সঙ্গে নিয়মিত আমার যোগাযোগ ছিল....বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রয়োজনও আমি আমার সাধ্য অনুসারে মেটানোর চেষ্টা করেছি। জয়শ্রী জীবনাচরণ কেমন ছিল তা আপনারা পত্র-পত্রিকায় পড়েছেন। ওসব কথা আমি বলিনি। রিপোর্টাররা নিজেরাই অনুসন্ধান করে বের করছে। এসবের বাইরেও আরো সত্য আছে। আমি সেগুলো এখানে বলতে চাই না। মোদ্দা কথা, বাচ্চা দুটো মায়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করতো। সেই বিরক্তি শেষ পর্যন্ত ঘৃণায় রূপ নেয়। আমি ওদের সবসময় বলতাম, খারাপ স্ত্রী বা স্বামী হয়, কিন্তু খারাপ মা বা বাবা হয় না।মনমন আমাকে বলতো: আব্বু, আম্মু বিয়ে করলে আমরা তোমার কাছে চলে আসবো। আমি ইতিবাচকভাবে ওদের বোঝানো চেষ্টা করে গেছি। শেষ দিকে বলতাম: মা, এ লেভেলটা শেষ করলেই চীনে তোর স্কলারশিপ হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর।....কথা এখানে আর বাড়াবো না। শুধু বলবো আপনি দায়-দায়িত্বের যে কথা আপনি বলছেন তা পিতা হিসেবে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করেছি। কিন্তু সমস্যা ছিল, ওরা আমার কাছে এসে থাকতে চাইত না। .....যে চিঠিটি জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছে সেখানে আমার সম্পর্কে যে কথাগুলো লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সে 'ভণ্ড' বলেছে। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করবো না। কিন্তু 'রাজাকার মনোবৃত্তি' আর 'পরকীয়া প্রেমের' যে অভিযোগ সে আমার বিরুদ্ধে এনেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি দিগন্তে কাজ করেছি পেশাদার হিসেবে; আমি কখনোই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না, এখনো নেই। আমি ইত্তেফাকে দশ বছর কাজ করেছি....সিএসবি নিউজে কাজ করেছি (সিএসবি নিউজ সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরির। তো, এর জন্য যদি আমি রাজাকার হয়ে থাকি, তাহলে সময় টিভির মালিক আহমেদ জোবায়ের ভাই, নিয়াজ ভাই, তুষার আবদু্ল্লাহ, দানেস ভাই, প্রভাস দাসহ আরো শতাধিক সঙবাদকর্মী কী? উনারাওতো সেখানে কাজ করেছেন!) আমি চ্যানেল আইয়ে কাজ করেছি, আইইউবিতে কাজ করেছি। আর পরকীয়া প্রেমের কারনেই জয়শ্রীর সঙ্গে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে এ কথা সত্য। কিন্তু সেটা আমার পরকীয়া নয়, ওর নিজের পরকীয়া। ঘরে স্বামী থাকতে এবং দুটো ফুটফুটে চাঁদের মতো দুটি সন্তান থাকতে ১৪ বছর বিবাহিত জীবনের পর যদি কোনো স্ত্রী অন্য পুরুষকে প্রেমপত্র লেখে, তাহলে তার সঙ্গে কি বাস করা যায়?! একটি চিঠি প্রমাণ হিসেবে আমি রেখে দিয়েছি। ভেবেছিলাম, বড় হয়ে ছেলে যদি কৈফিয়ত চায় (মেয়ে চাইবে না, কারণ সে নিজেই তার স্বাক্ষী ছিল) তবে, তাকে ওই চিঠি দেখাবো। কিন্তু ছেলে আমার চলে গেছে। তাকে আর তা দেখাতে হবে না। .....জয়শ্রী প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে লিখেছে: '১৪ জুলাই ২০০৮ সালে' নাকি আমি মাহবুবাকে বিয়ে করেছি। এটা ঢাহা মিথ্যা কথা। তখন পর্যন্ত মাহবুবা আমাকে প্রপোজই করেনি। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৭ নভেম্বর ২০০৮-এ। সে লিখেছে: আমার মেয়ে ছেঁড়া কাপড় পরেই 'ও' লেভেল পরীক্ষায় চারটি স্টারসহ আট/আটটি 'এ' পেয়েছে। এখানে ওই 'ছেঁড়া কাপড়' শব্দটা প্রতিকী অর্থেও সত্য নয়। ওর 'ও' লেভেলের ফাইনাল পরীক্ষার ফি হিসেবে আমাকে দিতে হয়েছে ৫৬,০০০ টাকা। যে ৫৬ হাজার টাকা দিতে পারে, সে তার মেয়েকে কাপড় কিনে দিতে পারে না, এটা কোন পাগলে বিশ্বাস করবে?!....এবার আমার অনুভূতির কথা বলছি। বেইজিংয় সময় রাত ২টায় যখন আমি বাচ্চাদুটোর মৃত্যুর কথা শুনলাম তখন প্রথমে আমার বিশ্বাস হয়নি। আমি সারারাত ছটফট করেছি আর মনে মনে আশা করেছি একটি এসমএমএস আসবে মনমনের কাছ থেকে: আব্বু, আম্মুকে ভয় দেখিয়েছি। ...পরের দিন বেরা এগারোটা পর্যন্ত আমি কোনো ফোন ধরতে পারিনি, ভয়ে। শুধু দেখেছি কোনো এসএমএস আসে কিনা। আসেনি। বেলা এগারোটায় আমার অফিস কলগিরা সবাই যখন দল বেধে এলো, তখন বুঝলাম সব শেষ। পরবর্তী দু'টি দিন আমার কিভাবে কেটেছে আমি বলতে পারবো না। আমি এমনটি আমার বাবার ফোনও ধরিনি। (পরে শুনেছি, এটা নিয়েও প্রথম আলোতে রিপোট হয়েছে! হায়রে, সাংবাদিকতা!!) আমার বার বার মনে হচ্ছিল, আমি আমার বাচ্চা দুটোকে বাঁচাতে পারিনি...চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছি। সারাক্ষণ ভেবেছি, কোথায় কোথায় ভুল করেছি আমি....এখনো ভাবি, কোথায় ভুলটা হলো....সবচে বড় কথা, দু'দিন আগেও মুহাম্মাদের বই কেনার জন্য আমার ভাতিজা আবদুল্লাহ ওদেরকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছে (আবদুল্লাহর হাতেই আমি ওদের প্রতি মাসে টাকা পাঠাতাম বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে টাকা লাগলে পাঠাতাম)। তখনও কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না ওদের মধ্যে। কয়েকদিন আগে মুহাম্মাদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। তাকে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে জিঙ্গেস কলেই বললো, আম্মু জানে। আমার ছেলেটা কম কথা বলতো।......দিদি, আমার এ কথা গুলো আপনারা কেউ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এগুলো সত্য। আরো অনেক অনেক কথা আছে। কিন্তু এখানে বলার প্রয়োজন মনে করি না। আমি হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্বীকার করছি। কিন্তু সেসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষ্রেত্রেও বাচ্চাদের কথা আমি সবার আগে ভেবেছি। কিন্তু সে সব সিদ্ধান্ত সবক্ষেত্রে ক্লিক করেনি। কারণ, এখানে অনেক ফ্যাক্টারস জড়িত। চীনে আসার ব্যাপারে পত্রিকাগুলো অনেক মিথ্যাচার করেছে। আমি নতুন বৌ নিয়ে মোটেই এখানে মজা করছি না। আমাকে এখানে প্রচণ্ড খাটাখাটনি করতে হয়। চীন বেতারের বাংলা বিভাগের পরিচালক ম্যাডাম ইয়ুকে আপনি জিঙ্গেস করে দেখুন। আমাদের এখানে কাজ বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি। এখানে বাঙলাদেশের তুলনায় খানিকটা বেতন বেশি। তাই বাচ্চাগুলো বেশি টাকা পাঠাতে পারছিলাম। চীনে না এলে গত মে মাসে মেয়ের এ লেভেলের ফাইনাল এক্সামের ফি বাবদ ৭৫ হাজার টাকা আমি হয়তো দিতে পারতাম না। চীনে এসেছি দু'বছরের ওপর। একমাত্র মহাপ্রাচীর আর ফরবিডেন সিটি ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ বা সময় আমি পাইনি। আমার মেয়ে একটা এসএমএস পাঠিয়ে বলতো: কল মি নাও। এমন হয়নি যে আমি সাথে সাথে ফোন করিনি। সেটা রাত দুটো তিনটে হলেও।...আমি মহামানুষ নই। কিন্তু এতোটা খারাপ্ও নই, যতটা পত্র-পত্রিকাগুলো গত কয়েকদিন ধরে লিখেছে। আপনাদের কী মনে হয়: আমি আমার বাকি জীবন এক মুহূর্তের জন্যও বাচ্চা দুটোকে ভুলে থাকতে পারবো? আরেকটি কথা: আপনি আপনার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আমার বাচ্চা দুটো আত্মহত্যা করেছে। কী করে নিশ্চিত হলেন? এখনো, যতদূর জানি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসেনি। ব্যাপারটাতো হত্যাকাণ্ডও হতে পারে! প্রথম আলোর রিপোর্টে নাকি এ ধরনের সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। আমি কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। আপনারা যারা এতক্ষণ আমার কথাগুলো পড়েছেন, তারা সবাই বিশ্বাস করবেন এমনটা আমি মনে করি না। কিন্তু আমি জানি, এই নিস্পাপ বাচ্চা দুটোর জন্য আপনাদের মনে ভালোবাসা আর মমতা আছে। আপনারা ওদের জন্য দোয়া করবেন। মেয়েটা আমার ইউরোপীয় মেয়েদের মতো সুন্দর হতে চাইত। বলতো, আব্বু, বেহেশতে গেলে কি আমি ওদের মতো সুন্দর হতে পারবো? আমি বলতাম: তারচে কোটিগুণ বেশি সুন্দর হয়েই তুমি বেহেশতে যাবে। আল্লাহ যেন তার মনে আশা পুরণ করেন। পুনশ্চঃ আমি দিদি প্রশ্নের উত্তরে এতো কথা লিখলাম ব্যক্তি আলিমুল হক হিসেবে নয়, পিতা আলিমুল হক হিসেবে। কোনো শিশু যেন মনে না করে যে, পিতা আলিমুল হক জঘন্য। এটা ভেবে যদি একটি শিশুর মনেও তার নিজের পিতার সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মায়, তাহলে সেটা হবে আমার কাছে খুবই কষ্টের একটা বিষয়।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা-মহিউদ্দিন আহমেদ:


সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
Dr. Mohiuddin Ahmedবাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রতি বছর সংবাদপত্র ও সাময়িকীর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা। এই প্রতিবেদনটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব দৈনিক, সাপ্তাহিক অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক এবং ত্রৈমাসিক পত্রপত্রিকা বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়, তার তালিকা থাকে। পত্রিকার আরও কিছু বর্ণনার মধ্যে থাকে, পত্রিকার নাম, কী ভাষায় প্রকাশিত হয়, প্রথম প্রকাশের তারিখ, সম্পাদকের নাম, প্রকাশকের নাম ঠিকানা, কোথায় মুদ্রিত হয়, সেই ছাপাখানার নাম ও ঠিকানা, পত্রিকার আকার– ‘ব্রডশিট’ নাকি ‘ট্যাবলয়েড’ এবং প্রতি কপির মূল্য।
এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রতি বছর প্রকাশ করা সম্ভব হয় না, এই প্রকাশনার কাজটি সহজও নয়। তারপরও আমি ২০০৮, ২০১০ ও ২০১১ সালের প্রতিবেদন তিনটি জোগাড় করতে সফল হয়েছি। ২০১১ সালের সর্ব সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটির শুরুতে, ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ১৯৭২ এ সারা দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৩০, সব ধরনের পত্রিকা এবং সাময়িকীর সংখ্যা ৩০০। আর ২০১১ সালে সারা দেশে দৈনিক পত্রিকার এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৮এ; আর সব ধরনের সাময়িকীর সংখ্যা হচ্ছে ৯৪৩।
২০১১ সালের ১১৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটিতে জেলাওয়ারি পত্রপত্রিকার বর্ণনাও আছে। আছে আগের বছরগুলোর বর্ণনাও। তবে আমার আজকের আলোচনার জন্য শুধু ঢাকা জেলার দৈনিক পত্রিকার সংখ্যাটিই বেশি প্রাসঙ্গিক। ঢাকা জেলা, মানে ঢাকা মহানগর থেকেই, দেখতে পাচ্ছি প্রায় সবগুলো দৈনিক প্রকাশিত হচ্ছে। এই সংখ্যাটি হচ্ছে ২৩০। আর একটি সূত্র থেকে জেনেছি এই সংখ্যাটি এখন ৩০০ এরও উপর। তবে আমি ২৩০ সংখ্যাটি নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
এই তালিকার এক নম্বরে আছে কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার। এই পত্রিকাটির পরে নাম আছে দৈনিক ‘সংবাদ’, ২ নম্বরে এবং তারপর ইত্তেফাক। দৈনিক ‘সংবাদ’ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো আছে প্রতিবেদনটির ১২ পৃষ্ঠায়: পত্রিকাটির ভাষা: বাংলা; প্রথম প্রকাশের তারিখ ১৯৫১ এর ১৭ মে। সম্পাদকের নাম আলতামাস কবির; প্রকাশক, আলতামাস কবির, ৮৭, বিজয়নগর, ঢাকা; মুদ্রণ: দি সংবাদ লিমিটেড, ৩৬ পুরানা পল্টন, ঢাকা; আকার ৫৬/৩৫ এবং দাম প্রতিকপি ৮ টাকা।
২৩০টি দৈনিক পত্রিকার এই তালিকার ১৭ নম্বরে আছে ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’, ২৭ নম্বরে দৈনিক ‘ভোরের কাগজ’, ৬৭এ ট্যাবলয়েড দৈনিক ‘মানবজমিন’, ৬৯এ দৈনিক প্রথম আলো, ৭৪এ যুগান্তর এবং সবশেষে, ২৩০ নম্বরে আছে ‘পূর্ব আলো’ নামের একটি পত্রিকা। এই পত্রিকাটির সম্পাদকের নামের কলামে লেখা আছে ‘‘বেস্টওয়ে মিডিয়া এন্ড কম্যুনিকেশন লি: পক্ষে: মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, বসতি কন্ডোমিনিয়াম, লেভেল নং: ৭, বাড়ি নং: ১৫, সড়ক নং ১৭, বনানী-বা/এ, ঢাকা– ১২১৩’’।
পত্রিকার কত রকমের অদ্ভূত ও উদ্ভট নাম হতে পারে, তা এই প্রতিবেদনেও দেখা যায়। এমন একটি পত্রিকার নাম ‘ক খ গ’; তালিকার ১৫৭ নম্বরে। পত্রিকাটির বর্ণনায় ২০১১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটির ২৭ পৃষ্ঠায় এই কথাগুলো আছে: ভাষা: বাংলা; প্রথম প্রকাশ ০৯-০১-২০০৮; সম্পাদক শওকত মাহমুদ, ফোন: ০১৭১৫-১৬৭০৯২; প্রকাশক শওকত মাহমুদ, ৭০ পাইওনিয়ার রোড, নয়াপল্টন ঢাকা-১০০০। মুদ্রণ: টিউলিপ প্রিন্টার্স, ৩৪, সোনারগাঁও রোড, হাতিরপুল, ঢাকা। পত্রিকার আকার ৫৬/৪০, দাম প্রতি কপি ৪.০০ টাকা।
বাংলাদেশের বিএনপি জামায়াতপন্থী, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিকদের নেতা শওকত মাহমুদ ঠিক কোন্ পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন, আমার জানার আগ্রহ অনেকদিনের। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না। এখন এই প্রতিবেদনে দেখলাম।
২.
বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরন ঘটছে, আর বিস্ফোরন ঘটছে আমাদের পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর প্রকাশনায়ও। এই বিস্ফোরনটা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরে। এক ঢাকা শহরে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত আছে ২৩০টি ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক!! ঢাকা শহরের বিপরীতে দুনিয়ার আর কোনো দেশের আর কোনো শহরে কি এতগুলো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়? আমার জানামতে লন্ডনের মত এত বড় বিখ্যাত ও বড় শহরে ‘ব্রডশীট’ ও ‘ট্যাবলয়েড’ মিলিয়ে আছে গোটা ১৫ দৈনিক; নিউইয়র্কে আছে মাত্র দুটো দুনিয়াজোড়া বিখ্যাত দৈনিক– ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। ওয়াশিংটনে আছে মাত্র একটি, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’। ওয়াশিংটন শহরে ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ নামের আর একটি দৈনিক আছে; কিন্তু এই দৈনিক ‘ওয়াশিংটন টাইমস’ অন্য দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর ধারে কাছেও নেই নামে এবং প্রভাবে।
তো ঢাকা শহরে এতগুলো দৈনিক কেন আছে, কেন প্রকাশিত হয়, তার ব্যাখ্যা আমাদের পত্রিকা মালিকদের সমিতি– ‘নিউজ পেপার্স্ অওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’, নোয়াব, বা সম্পাদকের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ কখনও স্পষ্টভাবে দেয় না। এমন ব্যাখ্যা দিলে যে তাদের অনেক গোমর, পত্রিকা জগতের অনেক অ-জানা কথা, কেলেংকারি এবং দুর্নীতি, অনিয়ম বেনিয়মও বেরিয়ে আসবে।
আমাদের মিডিয়া জগতের মানুষজন অন্যের কেলেংকারি সন্ত্রাস দুর্নীতি, প্রকাশ করতে যেমন ফুলটাইম, ওভারটাইম আগ্রহী, তার হাজার ভাগের এক ভাগও নয় নিজেদের অন্যায় অবৈধ কাজকর্ম তুলে ধরতে।
আমাদের দেশের সম্পাদক সাংবাদিকরা কঠোরভাবে একটি নীতি মেনে চলার চেষ্টা করেন: কাকের মাংস কাকে খায় না। বাংলাদেশে সম্পাদক সাংবাদিকরা নিজেদের কাকের সঙ্গে প্রায়ই তুলনা করতে ভালোবাসেন এবং যেহেতু কাক কাকের মাংস খায় না, তারাও একে অন্যের মাংস খাবেন না। মানে, একে অন্যের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ঘুষ এবং অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ– তার কোনো খবর তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করবেন না, করা যাবে না।
বাংলাদেশের এই সব সম্পাদক-সাংবাদিক যারা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন তারা লক্ষ্য করেননি যে কাক কোনো প্রিয় প্রাণি, পাখি নয়, তার আওয়াজটা কর্কশ, কাককুল কোনো বাড়ির আশে পাশে ডাকতে থাকলে, মানুষজন দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তবে কাকের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মিল দেখতে পাই– কাক যেমন কর্কশ আমাদের কিছু কিছু সাংবাদিকও কর্কশ চরিত্রের, কথায় কথায় হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন। তারা যে পত্রিকার মালিকের বেতনভূক্ত সাংবাদিক তা তাদের কথাবার্তায় চাপা পড়ে যায় তাদের দাম্ভিক আচরণে। তারা প্রায়ই হুমকি দেন অমুকের খবর কাভার করব না, অমকুকে বর্জন করব, অমুককে সাংবাদিকদের কাছে মাফ চাইতে হবে, ইত্যাদি। কিন্তু পত্রপত্রিকার কাজ তো সংবাদ ‘কভার’ করা, সেজন্য সাংবাদিককে তো বেতন ভাতা দেওয়া হয়। সংবাদ জোগাড় না করতে পারলে, তা তো সংশ্লিষ্ট সংবাদিক বা সাংবাদিকদের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা। তাহলে তাকে কেন পত্রিকার মালিক বেতন ভাতা দেবেন?
এই প্রসঙ্গে আমার খুবই মনে পড়ছে সাত আট বছর আগে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের এক নেতা, ফটোসাংবাদিক হিসেবে বেশি পরিচিত মরহুম হাজী জহির পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং ফটোসাংবাদিকরা প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থায় কর্মরত গোধূলী নামের আর এক ফটোসাংবাদিক এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তার দায়িত্ব ঠিকই নিয়মিতভাবে পালন করতে থাকলেন। বিষয়টা হল, গোধুলী যদি ‘স্ট্রাইক’ করতে থাকেন, তাকে হয়ত চাকুরীচ্যুত হতে হত। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বলে তার বেতনভাতাও নিশ্চয়ই বেশি ছিল। সুতরাং গোধূলী কিছুতেই তার চাকুরী হারাতে চাইলেন না। তার উপর উন্নত দেশগুলোতে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোতে প্রতিবাদে ধর্মঘটে যাওয়া বা কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া তারা চিন্তাও করতে পাওে না।
৩.
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক থেকে একটি বই জোগাড় করেছি। বইটির নাম FLAT EARTH NEWS; লিখেছেন নিক ডেভিস (Nick Davies) নামের এক সাংবাদিক। চাট্টো এন্ড উইন্ডাস (Chatto & Windus) প্রকাশিত ৪০৮ পৃষ্ঠার এই বইতে এককালের লন্ডন ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকার সাংবাদিক এই নিক ডেভিস তার এই পত্রিকাটিকেও বিভিন্ন ব্যর্থতা অনিয়ম বেনিয়েম এবং ধান্দাবাজীর জন্য কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত ইংরাজি সাপ্তাহিক ‘দি সানডে টাইমস’এর উপর তার এই বইটিতে প্রায় ৪৫ পৃষ্ঠায় যে ‘অধ্যায়টি’ আছে তার শিরোনাম ‘ইনসাইট ইনটু দি সানডে টাইমস’ (Insight into the Sunday Times)। (এই পত্রিকাটিতেই ১৯৭১ এর ১৩ জুন এন্থনী ম্যাসকারেনহাসের সেই সাড়াজাগানো প্রায় ১০ হাজার শব্দের রিপোর্টটি পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠাসহ ভিতরের আরও কয়েকটি পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর। তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই দীর্ঘ বিবরণ সারা দুনিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরে এই বিবরণ The Rape of Bangladesh নামের বইতে আরও বিস্তারিত বর্ণনাসহ প্রকাশিত হয়েছিল।)
নিক ডেভিসের এই হার্ডকভার বইটির মলাট উল্টালেই ফ্ল্যাপে ফ্ল্যাপে ঘনকালো বড় হরফে এই কথাগুলো আছে: Finally I was forced to admit that I work in a corrupted profession.
পশ্চিমা দেশের এক সাংবাদিক, এই নিক ডেভিস বলছেন তিনি সাংবাদিকতার যে পেশায় আছেন সেটি দুর্নীতিগ্রস্ত। তো এইসব উন্নত দেশে গণমাধ্যমের দুর্নীতি নিয়ে এটি প্রথম বা শেষ বই নয়। এমন প্রকাশনা, এমন আত্মস্বীকৃতি হাজার হাজার আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ‘কাকের মাংস কাক খায় না’ এমন এক উদ্ভট যুক্তিতে আমাদের সম্পাদক সাংবাদিকরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অন্ধকার জগতকে আর কতদিন আড়াল করে রাখবেন?
৪.
২০১১ এর প্রতিবেদনের হিসাব মতে বাংলাদেশে এখন ৭১২টি পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার জন্য এই সংখ্যাটি হয়ত মোটেও বেশি মনে হবে না। কিন্তু দেশের শিক্ষার হার এবং আর্থিক সঙ্গতি, কয়জন মানুষ প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে একটি পত্রিকা কিনতে পারে, এই প্রশ্নগুলো বিবেচনায় নিলে পত্রপত্রিকার এই সংখ্যাটি অবশ্যই বিশাল। আমাদের কোন কোন জেলা শহরেও এখন দৈনিক পত্রিকার বিস্ফোরণ ঘটছে। এগুলোতে কি সৎ সাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে? এই পত্রিকাগুলোর সাংবাদিক-সম্পাদক কর্মচারীরা কি নিয়োগপত্র, নিয়মিত বেতন-ভাতা, সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন? তাহলে কেন এতগুলো পত্রপত্রিকা?
কবি আবু হাসান শাহরিয়ার বাংলাদেশে পত্রপাত্রিকার এমন বিস্ফোরনের একটা কারণ দিয়েছেন। আবু হাসান শাহরিয়ার তার ‘অর্ধসত্য’ (প্রকাশক: সাহিত্য বিকাশ) বইটিতে ‘‘কৃপণের মুঠিধরা হিসেবের গোপন চালাকি’’ শিরোনামের একটি লেখায়, বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর কোন কোনটির চরিত্র এবং অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে এই কথাগুলো লিখেছেন: ‘‘সম্পদ পাহারায় বড়লোকরা আগে কুকুর পুষত, এখন পোষে দৈনিক। একুশ শতকের দৈনিক হচ্ছে বড় লোকের বাড়ীর পোষা কুকুর।’’
ভূমিদস্যুরা যেভাবে তাদের মালিকানার পত্রিকাগুলোর অপব্যবহার করে চলেছে, আবু হাসান শাহরিয়ারের একটু আগের উদ্ধৃতির কথাগুলোতে তার যথার্থ প্রমাণ এবং সত্যতা পাওয়া যায়। ভূমিদস্যুরা যেমন একপক্ষকে হামলা করে, আবার প্রতিপক্ষও তার পত্রিকাকে হামলা মোকাবেলায় ব্যবহার করে এমন অপব্যবহারে এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটির প্রতি মানুষজনের আস্থা-বিশ্বাসই যে সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এদিকে ‘নোয়াব’ বা ‘সম্পাদক পরিষদ’ বা সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোরও কোনো দায়-দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের পত্রিকাগুলো ছাড়া গত পনের বিশ বছরে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অগ্রযাত্রাও লক্ষ্যণীয়। ইতোমধ্যে ২৭টির মতো প্রাইভেট চ্যানেল প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচারে আছে। আছে পনের বিশটির মত এফএম রেডিও চ্যানেল। আছে অনলাইন নিউজ চ্যানেলও অনেকগুলো। এগুলোর সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।
এই যে এত বিশাল একটি গণমাধ্যম বাংলাদেশের মানুষজনকে দিন দুনিয়া সম্পর্কে অবহিত রাখার সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই চেষ্টাগুলো কতটুকু সফল, কোথায় কোথায় তাদের ব্যর্থতা, কোথায় মালিক-সম্পাদকদের ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য ধরনের ধান্দাবাজি তার মনিটরিং এর জন্য নিয়মিত কোনো ব্যবস্থা আমাদের কোনো পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলে নেই। বিবিসি বাংলায় প্রতি সপ্তাহে, সাধারণত মঙ্গলবার ভোর ৬-৩০এর ‘প্রভাতী’তে, ‘প্রীতিভাজনেষু’ নামের প্রায় পনের মিনিটের একটি অনুষ্ঠানে বিবিসি বাংলায় প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর উপর শ্রোতাদের মন্তব্য, পরামর্শ, উপদেশ এবং সমালোচনাও প্রচারিত হয়। এসব মন্তব্য সমালোচনার জবাবও দেওয়া হয় বিবিস বাংলার পক্ষ থেকে। কোনো কোনো সমালোচনা গ্রহণ করা হয়, শ্রোতাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয় ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
‘আলজাজিরা’ টিভি চ্যানেলে প্রতি শনিবার দুপুর ২-৩০ এ, রোববার রাত ৮-৩০ এ এবং সোমবার ১০-৩০-এ লিসেনিং পোস্ট (Listening Post) নামের আধঘন্টার একটি অনুষ্ঠান আমার খুব প্রিয়। এই অনুষ্ঠানে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে কোনো বিশেষ ইস্যুকে কেমন ‘কভারেজ’ দেওয়া হয়েছে, ‘কভারেজ’ পক্ষপাতিমূলক না নিরপেক্ষ তার উপর আলোচনা হয়। গাজায় ইসরায়েল প্রায় দুই মাস যেমন হামলা চালিয়েছে তাতে পশ্চিমা গণমাধ্যম যে নিরপেক্ষ ছিল না তা এই অনুষ্ঠানে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। গত সপ্তাহে দেখলাম পাকিস্তানে ইমরান খান এবং তাহেরুল কাদরীর বিক্ষোভকে ‘জিও নিউজ’ আর ‘এ আর ওয়াই’ চ্যানেল দুটির পারস্পরিক বিরোধী অবস্থান নিয়ে আলোচনা। জিও নিউজ সমর্থন দিয়েছে নেওয়াজ শরীফের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে; আর এ আর ওয়াই সমর্থন দিয়েছে ইমরান খান এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণকে। এই বিষয়টির উপর চমৎকার বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় কথাবার্তা ছিল।
আমাদের দেশে এমন অনুষ্ঠান জরুরি হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে গুরুত্ব চাইবে, ক্ষমতা প্রয়োগ করবে; কিন্তু কারও কাছে দায়বদ্ধ থাকবে না তা তো হতে পারে না। আমাদের গণমাধ্যমে কতটুকু সাংবাদিকতা থাকছে আর কতটুকু মালিকের বিভিন্ন কিসিমের স্বার্থের পক্ষে প্রতিপক্ষকে হামলা হুমকি চলছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি মালিকের স্বাধীনতা এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা এখন ফরজ। আগামী দিনগুলোতে এই কলামে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
আমাদের অকার্যকর জাতীয় সংসদের বিপরীতে আমাদের গণমাধ্যম জনমানুষের পক্ষে বিশেষ করে যারা অবহেলিত নির্যাতিত, যারা এই দেশের সংখ্যালঘু, প্রবল ভূমিকা রাখছে। আমার এই কলামে তাদের নন্দিত ভূমিকার কথাও উদাহরণসহ অবশ্যই থাকবে।
মহিউদ্দিন আহমেদ:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব, কলাম লেখক।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বাংলাদেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী জামায়াতকে দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল এমপি আহমেদ হাসান ইমরানের মাধ্যমে  অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সারদার কেলেঙ্কারির টাকা বাংলাদেশে জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় অভিযোগটি যে গুরুতর, তা প্রমাণ করে। বিষয়টি বন্ধু-প্রতিম ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই সংবেদনশীল। তেমন গুরুতর না হলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মাথাব্যথা হওয়ার কথা নয়।

আহমেদ হাসান ইমরান ২০০১ সালে ভারতে নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করে, সিমি বহুগুণে শক্তিশালী হয়ে ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। সিমির প্রাক্তন অনেক নেতা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগও ইমরানের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে একই ধরনের রিপোর্ট করেছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নলিয়াখালিতে জঙ্গি-গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইমরানের সক্রিয় সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়ার পরেও কেন মনোনয়ন দিয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হল, সেই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মমতাই দিতে পারবেন।

ahmed_hasan_imranইমরানের সাথে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গোলাম আজমের ছেলে মামুন আল আজমের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ইমরান ভারতের জামায়াতে ইসলাম-ই হিন্দ-এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। আল আজম আইডিবি ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর থাকা অবস্থায় ভারতের পূর্বাঞ্চলে ব্যাংকটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ইমরান। সেই থেকে ইমরান আর আল আজমের সম্পর্ক।

যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ায় কলকাতার ধর্মতলায় কিছু ইসলামিক সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। পরে জানা যায়, বাংলাদেশের জামায়াত ও সিমির মদদেই মিছিলগুলি হয়। আহমেদ হাসান ইমরান এই মিছিলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কেন্ত্রীয় সরকারকে তা নিশ্চিত করে।

তৃণমূলের আরেক এমপি অভিনেত্রী মুনমুন সেন ও পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ নেতা ইমরান খানের মধ্যে এখনো নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে বলে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার সংস্থার দাবি। পাকিস্তানের আইএসআই’র সাথে মুনমুন সেন সরাসরি জড়িত, সেই সন্দেহও রয়েছে কিছু কিছু মহলের। গোয়েন্দারা বলছেন, ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।

ধর্মীয় উগ্রবাদী-অধ্যুষিত প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়াতে ইমরানের তেহরিক-ই ইনসাফের ক্ষমতায় শরিক পাকিস্তানি জামায়াত। প্রদেশটি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অতি সম্প্রীতি নওয়াজ শরীফ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আইএসআই’র প্রেসক্রিপশনে আজাদি মার্চ করে ইমরানের পিটিআই। আন্দোলনটি যে আইএসআইয়ের নির্দেশনায় হয়েছে, তা ইমরানের উদ্যোগে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত তেহরিক-ই ইনসাফের চেয়ারম্যান জাভেদ হাশ্মিরই গণমাধ্যমকে বলেছেন।

যে প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব জানতেন কি না?’। তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের উগ্র-গোষ্ঠীর মধ্যকার নিবিড় যোগাযোগ মুখ্যমন্ত্রী মমতার গোচরেই হয়েছে বলে মনে হয়। যদিও তাঁর দল অস্বীকার করছে। বলছে, এটি বিজেপির রাজনীতি।

কিন্তু তাদের দাবি তেমন গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। সারদার মাধ্যমে জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নেওয়া দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা তাই প্রমাণ করে।

imranপ্রথমতঃ পাকিস্তানি হাইকমিশনারের কলকাতা সফর ও মমতার সাথে সাক্ষাতের পেছনে মুনমুন সেন ও ইমরান খানের  আগ্রহ এবং ঘনিষ্ঠতা ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছে। চির বৈরি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হতেই পারে। কিন্তু সেই সাক্ষাৎটি যখন আইএসআইপন্থি পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আগ্রহে অনুষ্ঠিত হয়, তখন এর পেছনের উদ্দেশ্য বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, সাক্ষাতের পরপরই কলকাতার একটি সাংবাদিক দলকে পাকিস্তান সফরের ব্যবস্থা করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তেমন প্যারা-ডিপ্লোমেসি স্থান পায় না। কেন্দ্রকে আড়ালে রেখে পাকিস্তানের সাথে স্বপ্রণোদিত হয়ে প্যারা-ডিপ্লোমেসি চালিয়ে যাওয়ার সাথে অন্যান্য পাকিস্তানপ্রেমি কর্মকাণ্ডগুলি মিলে যায়। খোদ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণই বিশ্বাস করে যে, মমতা সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপে এই অঞ্চলের উগ্রপন্থিদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিন হচ্ছে।

তৃতীয়ত:  কলকাতায় পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে রাজ্যের মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা প্রসেস সহজ করার অনুরোধের অভিযোগও রয়েছে মমতার বিরুদ্ধে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও মুসলিম বাস করেন। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা পাকিস্তানি ভিসা সহজ করার অনুরোধ করেন নি। আজ যদি মমতা সারা ভারতের মুসলিমদের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার কথা বলতেন, কারো তেমন কিছু বলার থাকত না।

চতুর্থতঃ উর্দুভাষী মানুষের আনাগোনা কলকাতায় উল্লেখ্যযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সন্দেহকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, মমতার উগ্র রাজনীতি প্রীতির জন্যই রাজ্যের ভেতর অন্য দেশের মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

পশ্চিমবঙ্গ আমাদের প্রতিবেশী হওয়ায় মমতার এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমরাও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমান্তে গরু চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় সারদা কেলেঙ্কারির টাকার একটি বিরাট অংশ বিনিয়োগ হয়েছে। বিনিয়োগের লভ্যাংশ দেশের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ব্যয় হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করা। 

গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিল। গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত বলা যায়। সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত কুণাল ঘোষ অর্থের আদান প্রদান বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলেও মমতা সরকারের নির্দেশে গঠিত কল্যাণ কমিশন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। কল্যাণ নিজে থেকেই কমিশনের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন।

বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পক্ষে কাজ করেছিল। বিশেষ করে মালদা, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর (৬০-৮০%), মুর্শিদাবাদ জেলাতে (৯০%)সহ বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তৃনমূলের পক্ষে গণসংযোগ করেন।

ভারতের জাতীয়, আঞ্চলিকও স্থানীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটির ইলেকটোরাল বিহেভিয়ার পর্যালোচনা করলে মমতার বিতর্কিত রাজনৈতিক পদ্দক্ষেপগুলোর কারণ বোঝা যায়।

ঐতিহাসিকভাবে ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা (বাংলাদেশের মত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয় না) প্রবল। বিশেষ করে সিপিএম ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা প্রায়ই হত এবং সংখ্যালঘু মুসলমানরা নিরাপত্তাহীনতায় দিনানিপাত করত। সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর তেমন দাঙ্গা হয়নি এবং ফলে সংখ্যালঘু ২৭ শতাংশ ভোট সিপিএমের কোষাগারে যায়। সিপিএম মুসলমানদের মধ্যে ভূমি বিতরণ করেও মুসলমান সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করেছিল। একই সাদৃশ্য দেখা যায় বিহারে। ১৯৯০ সালে লালু প্রসাদ যাদব ক্ষমতায় আসার পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। দীর্ঘ ১৫ বছর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে লালু ক্ষমতায় থাকেন। একই পদ্ধতিতে উত্তর প্রদেশে মুলায়েম সিং যাদব ক্ষমতায় আসেন।

এখন নিরাপত্তা সংখ্যালঘু মুসলমানের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। তাদের সচেতনতা বেড়েছে। তারা শিক্ষা, চাকরি ও দারিদ্র অগ্রাধিকার তালিকায় নিয়ে এসেছে।

সেসব ইস্যুকে গুরত্ব না দেওয়ার জন্য লালু প্রসাদ যাদবের ক্ষমতা চলে যায় নিতিশের হাতে। ঠিক একই কারণে মুলায়েম সিং ইউপিতে মায়াবতীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। 

পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলমানরাও আগের মত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নন। সিপিএমের জমানায় সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পিছিয়ে থাকার কারণেই বামফ্রন্টের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। যেখানে সারা ভারতে স্বাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ২৭ শতাংশ ভোটের মালিক সংখ্যালঘু মুসলমানদের হার ৫৭.৫। এমনকি বাম শাসিত কেরালায় সংখ্যালঘুদের স্বাক্ষরতার হার ৮৯.৪ শতাংশ। একটি গবেষণায় দেখা যায়, কেরালায় মুসলমানদের দারিদ্র ১৫ বছরে (১৯৮৭-২০০৪) ৫৬ থেকে ৩১ এ নেমে এলেও পশ্চিমবঙ্গে নেমেছে ৫৩ থেকে ৪৪ শতাংশে।

Mamataমুসলমানদের প্রতি অবহেলার কারণেই সিপিএম ২০১১ সালে ক্ষমতা হারায়। মমতা ২৯৪ তে ২২৫ আসন পেয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় যান। রাজ্যসভার মত লোকসভার নির্বাচনেও সিপিএমের শোচনীয় পরাজয় হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২০টিতে জয় নির্ধারণই ভোটের মালিক সংখ্যালঘুরা। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৩৪ আসন পায়, যেখানে ২০০৯ সালে ১৯ এবং ২০০৪ সালে একমাত্র নিজের আসনটিতে জিতে আসেন মমতা।

পাশাপাশি মমতার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিগত আচার আচরণ নির্মোহ-ভাবে বিশ্লেষণ করলে অসহনশীলতা, নীতিহীনতা, রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা মমতার রাজনৈতিক বিকাশ ধারায় প্রবলভাবেই পাওয়া যায়।

জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি শুরু করলেও, কংগ্রেসের রাজনীতি দিয়েই মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। মমতা ১৯৮৪ সালে বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাড়া ফেলে দেন। এরপর সারা ভারতের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালে লোকসভায় আবার নির্বাচিত হয়ে নরসিমা রাওয়ের মন্ত্রিসভায় মানব সম্পদ ও ক্রীড়ামন্ত্রী হিসাবে স্থান পান মমতা।কিন্তু পরে কলকাতায় ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ এনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ১৯৯৬ সালের দিকে নিজ দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএমকে সহযোগিতার অভিযোগ আনেন এবং পরিচ্ছন্ন কংগ্রেসের দাবি জানিয়ে প্রকাশ্য জনসভায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।

১৯৯৬ সালে পেট্রোলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মমতা সমাজবাদী পার্টির নেতা অমর সিংহের জামার কলার ধরে টানা-হেঁচড়া করেন মমতা। রেলের প্রতি অবহেলার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে সংসদে তৎকালীন রেল-মন্ত্রী রাম বিলাসের দিকে নিজের শাল ছুঁড়ে মারেন। ১৯৯৮ সালে লোকসভায় নারী সংরক্ষণ বিলের বিরোধিতা করতে গিয়ে সমাজবাদী পার্টির এমপি দারোগা প্রসাদ সরোজকে জামার কলার ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করে। তৃণমূল কংগ্রেস খুব অল্প সময়ে বামফ্রন্টের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে প্রকাশ পায়।

তৃণমূল ১৯৯৯ সালে বিজেপির নেতৃত্বের সরকারে সামিল হলে রেলের দায়িত্ব পান মমতা। কিন্তু রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে সরকার থেকে বের হয়ে যায় তৃণমূল।

২০০১ সালের শেষের দিকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা কংগ্রেসের সাথে নির্বাচনী জোট করেন। তারপরেও নির্বাচনে বামফ্রন্ট জয় লাভ করে। ২০০৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনেও বড়োসড়ো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে মমতার তৃণমূল।

মমতা ২০০৪ সালে আবার ফিরে যান বিজেপির কোয়ালিশন সরকারে। তখন কয়লা এবং খনির দায়িত্বে ছিলেন। এটিই হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাথে মমতার শেষ কোয়ালিশন। কারণ বর্তমান ভোটের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজেপির সাথে জোট করা আর মমতার পক্ষে সম্ভব নয়।

২০০৬ সালে সিপিএম সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা এবং ২০০৭ সালের নন্দী গ্রামের গণহত্যার প্রতিবাদের ফলে মমতার জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের একটি বৃহৎ অংশ বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়। বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

২০০৯ সালে লোকসভার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৯টি জয় করে তৃণমূল। নিজেদের উত্থানের ঘণ্টা বাজায়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকারে আবারও রেলের দায়িত্ব পান মমতা। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৫ বছরে ক্ষমতায় থাকা সিপিএমকে হারিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসে। অভিযোগ রয়েছে, সারদা ১৩০ কোটি টাকা তৃণমূলের নির্বাচনে অর্থায়ন করেছিল, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশের জামায়াতকে  দিয়েছিল।

সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাংকটিই মমতার ক্ষমতার প্রাণশক্তি। নির্বাচনের আগে জামা মসজিদ শাহির ইমাম বুখারি এবং টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম বারখাতি তৃণমূলের পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান।

মমতার মত পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ জানেন, কেন লালু প্রসাদ যাদবকে সরিয়ে নীতিশ, মুলায়েম সিংকে সরিয়ে মায়াবতী ক্ষমতায় ছিল। এমনকি খোদ পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেসের কাছ থেকে সিপিএম, এবং সিপিএমের কাজ থেকে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এবং লোকসভায় দ্বিতীয় বিরোধী দল।

মমতা এমন কিছু করতে চাইবে না যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তার বিপক্ষে চলে যায়। ক্ষমতায় আসার পরেই ৩০০০০ হাজার ইমামকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা প্রদান হাইকোর্ট দ্বারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলেও মমতার প্রতি সংখ্যালঘুদের বিশ্বাস বেড়ে যায়। তিস্তা পানি চুক্তি না করার পেছনেও অন্যতম কারণ হল- তিস্তার তীরে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ধর্মীয় সংখ্যালঘু। মমতা জানেন ভারতের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি কোনো দলের জন্য নির্দিষ্ট নয়। আগে প্রোগ্রেসিভ অল্টারনেটিভ তেমন ছিল না, এখন অনেক আছে।

মমতার নিজেও জানেন, ইমরানের মত সিমির অনেক প্রাক্তণ নেতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি? সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি ব্যবহার করে ইমরান খানের মত সিমির নেতারা ভারতের ভেতরে ও বাইরে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তা খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গোয়েন্দারই সন্দেহ করে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে তার নিজ দলের জঙ্গি-বান্ধব রাজনীতিবিদ ইমরান থেকে শুরু করে মুনমুন সেনের মত অনেক সেলিব্রেটি জড়িত। যদি ইমরানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াত টাকা নিয়ে ২০১১ সালের বিধান সভা ও ২০১৪ সালে লোকসভার নির্বাচন করা যায়, প্রশ্ন থেকে যায় কোন নৈতিক ক্ষমতার জোরে সারদার টাকা জামায়াতকে দিতে না করবেন মমতা?

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, দেশের ভেতর জঙ্গি উত্থান ঘটল কিনা, তাও মমতার কাছে মুখ্য নয়।  মুখ্য সংখ্যালঘু ভোটের কিছু সুবিধাবাদী প্রতিনিধিকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকা। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশ, অনেক দূরের বিষয়।

মমতা এমন এক রাজনীতিবিদ, যার কাছে নিজ দলের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। নিজের স্বার্থের জন্য প্রথমে বিজেপি, পরে কংগ্রেস, আবার বিজেপি, আবার কংগ্রেস জোটে গিয়েছিল। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগে বিজেপি থেকে কোয়ালিশনের জন্য ইঙ্গিত দিলেও মমতার সাড়া পাওয়া যায়নি। কারণ বিজেপির বিপক্ষে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকটি হারাতে হবে এই ভয়ে। 

ড: বিজন সরকার: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাউথ কোরিয়া, bipoly3001@yahoo.com - See more at: http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/324435.html#sthash.ve6ugkh2.dpuf