Saturday, December 29, 2018

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির জয় অর্জনের মাধ্যমে রচিত হোক নতুন ইতিহাস-সুমি খান


আজ ৩০ ডিসেম্বর, রোববার আমাদের সামনে  অসামান্য এক সকাল এসেছে- নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ নির্ধারণ করবে কারা পরবর্তী বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান।
১০ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে আজ ক্ষমতা। আজ আমরাই বাংলাদেশ। আমরা ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের নেতা নির্বাচন করব। দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ রোববার সকাল আটটায় শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এবারের ভোটে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত নভেম্বর। এরপর একবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এর ফলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।
৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ (নৌকা) বিএনপির (ধানের শীষ) মধ্যে। ভোটে আওয়ামী লীগ মহাজোট ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।  বিএনপি ২০ দলের নেতৃত্বে . কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক  
এবারও কী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতছে না কি, তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জিতবেএমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে আজই। বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর শুরু হবে ভোট গণনা। এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট হবে ঢাকা-, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-, রংপুর-, খুলনা- সাতক্ষীরা- আসনে। এসব আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে ব্যালটে ভোট হওয়া আসনগুলোর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, সে সম্পর্কে জানতে পারবে সাধারণ মানুষ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে একটি আসন (গাইবান্ধা-) ছাড়া বাকি ২৯৯টি আসনে আজ ভোট গ্রহণ হচ্ছে। গাইবান্ধা- (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান . টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী ২১ ডিসেম্বর ভোরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইন অনুযায়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে এই আসনের নির্বাচন বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন।এই আসনে ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী নিজের ভোট দিয়ে বেরিয়ে বিজয়ের চিহ্ণ দেখিয়ে বলেছেন, নৌকাই বিজয়ী হবে। একই সাথে তিনি বলেছেন, জনগণের রায় তিনি মাথা পেতে নেবেন। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা . কামাল হোসেন বলেছেন, ভোটে কারচুপি না হলে তাঁরাই জিতবেন। তিনি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে লাখ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। সারা দেশে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার এর মধ্যে পুরুষ ভোটার কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন ,মহিলা ভোটার কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন ।নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি ।মোট প্রার্থী হাজার ৮৬১ জন, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হাজার ৭৩৩ জন ,স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন
এই বাস্তবতায় ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ কাদের নিয়ন্ত্রণে দেবেন তারা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , তিরিশ লাখ শহীদের আত্মদানে আমরা দেশ পেয়েছি। আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের পতাকা, আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে যারা আত্মদান করেছেন , তাঁদের রক্তের স্রোতধারায় স্বাধিকার আদায়ের জন্য  দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের রক্তাক্ত পটভূমি তৈরি করে দিয়েছেন তিরিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ বীরাঙ্গনা। তাঁদের মহান আত্মদান যেন আমরা ভুলে না যাই। একই সাথে এই মহান আত্মদান নিয়ে যারা বারবার প্রশ্র তুলেছে, তাদের চিনতে যেন আমরা ভুল না করি।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরে কী ভূমিকা পালন করেছেন, কম বেশী অনেকেই তা জানেন। কারণেই হয়তো তিনি এবং তার অনুসারীরা প্রশ্ন তুলেন তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় এসে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি দিবসে ঢাকায় আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া একাত্তরের মহান শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষদের আনুষ্ঠানিক যে সংখ্যা সেটি নিয়ে বিতর্কের কথা তুলে তিনি বলেন, মক্তিযুদ্ধের সময় কতো মানুষ নিহত হয়েছিলো তা নিয়ে বিতর্ক আছে।সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দীনআহমেদ। (বিবিসি,২১শে ডিসেম্বর,২০১৫)
(https://www.bbc.com/bengali/news/2015/12/151221_bangladesh_khaleda_zia_1971)

   খালেদা জিয়ানিজামী জোটের ২০০১-২০০৫ শাসনামল, ভয়াবহ সংখ্যালঘু নিধনের ধারাবাহিকতা, হাওয়া ভবনের পার্সেন্টেজ এবং গ্রেনেড হামলার বর্বোরোচিত কালো অধ্যায় গত ১০ বছরে অনেকে ভুলে গেলেও ইতিহাসের কাছে বারবার আমাদের ফিরে যেতে হবে। নাহয় সেই বর্বর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেউ রোধ করতে পারবে না।
প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থাই আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আজ আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন বা ধারাবাহিকতা রক্ষার সবচেয়ে বড় উৎসব, নির্বাচনে অংশ নেব। আজ আমরা ভোট দিয়ে আমাদের অধিকার বুঝে নেব। আর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে- মুক্তিযুদ্ধের উদার গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমরা সমুন্নত রাখবো। আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ যেন কোন ভাবেই ভূলুন্ঠিত না হয়।
একটি উদার, মুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থাই আমাদের কাম্য।

স্মরণ করতে হবে ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত শাসন ব্যবস্থার কথা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নিয়মরক্ষার নির্বাচন আর সেই নির্বাচন প্রতিরোধের নামে আগুন-সন্ত্রাসের বিভীষিকা ভুলে গেলে  নিজেদের সাথে জাতির সাথে চরম হঠকারী হবে। আর সেই বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনটি জাতির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যাদের নিবন্ধন নেই, তারাও একাকার হয়ে গেছে বড় দুই জোটে। বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, জনসমর্থনে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থ আর পেশিশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করছে তারা। ধর্মীয় দলগুলোও যার যার মতো করে তাদের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। একাত্তরের চিহ্নিত স্বঘোষিত ঘাতকদের আবারো তিরিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত আমাদের পবিত্র জাতীয় পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে জাতীয় সংসদে যাবার সুযোগ করে দিয়ে যেন ইতিহাস কলঙ্কিত হতে না দিই। 

বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতার ভয়াবহতায় বারবার আক্রান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনের দিন নির্বাচনপরবর্তী- তিন ক্ষেত্রেই সহিংসতা ছড়ানো হয়। এসব সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন নারীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিশু কিশোরী প্রবীণ দেরও ধর্ষণ করা, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার দৃষ্টান্ত চাক্ষুষ করেছি আমরা ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল অবধি।। সেই বর্বরতা আবার ফিরে আসুক নিশ্চয়ই কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চান না। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শনিবার বলেছেন, ’সারাদেশের সংখ্যালঘু এলাকাগুলোয় সেনাবাহিনী গিয়ে আশ্বস্ত করছে, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে এবং যার যার ভোট প্রদান করতে পারে। এজন্য সেসব এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী টহল আজকেও যাচ্ছে, নির্বাচনের পরেও যাবে।' তিনি বলেন, 'সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের অত্যন্ত চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সেনাপ্রধান হিসেবে বলছি, আমিও এই দেশের নাগরিক। গত এক সপ্তাহ সারাদেশ ঘুরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিগত ৪৭ বছরে এরকম শান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমি দেখিনি।'
 এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিগত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে কোনোটির চেয়ে সহিংসতার মাত্রা কম।আজ ভোটের দিন, যাতে একটিও সহিংসতা না ঘটে, এটাই সাধারণ দেশের মানুষ চায়।
যে দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন বিজিত দল তাদের মেনে নেবেন এই আশা করা হয়তো বেশি চাওয়া। তবু জনগণের কাছে সেটাই কাঙ্খিত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় কার্যকর বিরোধী দল অপরিহার্য। যদিও আমরা গত ১০ বছরে সত্যিকার অর্থে কোন রাজনৈতিক দলকেই বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করতে দেখিনি। তবু প্রত্যাশা থাকে । সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের যারা এবার নিবন্ধিত হয়েছেন নির্বাচনের জন্যে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক নীতিনিষ্ঠতা থাকলে , তাঁরা নির্বাচনে বিজয়ী না হলেও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হিসেবে দেশের এবং দশের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করবেন, তা না হলে আগামীতে কখনো ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থীতা দাবি করার কোন যোগ্যতা তাঁরা রাখেন কিনা, সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে।
এ কারণেই যারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা কোন ধ্বংসাত্মক পথে না গিয়ে গঠনমূলক রাজনীতি করবেন। বিরোধী দলের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। যারা বিজয়ী হবেন, তারা সরকার গঠন করবেন, তাই বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে দেশের নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভিটে মাটি দখল করার জন্যে তাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নির‌্যাতন, বা বিরোধী দলকে গ্রেনেড বিষ্ফোরণে নিশ্চিহ্ণ করা বা  প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে লালন করে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মতো ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কান্ডের ধারাবাহিকতা জনগণ দেখতে চায় না।
 গত ১০ বছরে রাজনীতিতে ইতিবাচক, নেতিবাচক দু’ধরণের পরিবর্তন মানুষ দেখতে পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে।  বোমা হামলার ধারাবাহিকতা এবং আগুন সন্ত্রাসের ভয়াবহতা প্রায়  বন্ধ করা গেছে বলা যায়। তবে এর পাশাপাশি ভোটের রাজনীতির কাছে হার মেনে  আওয়ামী লীগ সরকারের অদূরদর্শী পদক্ষেপে সভ্যতার জন্যে চরম হুমকি জঙ্গী সংগঠন হেফাজতে ইসলামী এবং কওমী মাদ্রাসার ধারক বাহকদের ব্যাপক উথ্থান কাউকে গ্রাস করেছে, আবার কাউকে সন্ত্রস্ত, উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত করেছে। বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ রক্ষা করতে হলে এই নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠতেই হবে আওয়ামী লীগকে। সেটা দুরূহ হলেও একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই তা সম্ভব। এ কারণে সাধারণ মানুষের অনেক বেশি নির্ভরতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর। তারা রাজনীতিতে ইতিবাচক এবং গুণগত পরিবর্তন আশা করে। আর তার প্রমাণ দিতে হবে আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির প্রতীকে ভোট দানের মাধ্যমে ।

   পরিশেষে ,সার্বিক ভাবে জনগণের কাছে কাঙ্খিত গণতন্ত্র বজায় রাখতে হলে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে আজকের ভোটারদের।  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রগতিশীল শক্তিকে বিজয়ী করতে সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করে যাবো এই শপথে একাত্ম হতে হবে আমাদের। সকল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিজয়ের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করুক আজকের এই দিন।
Sumikhan29bdj@gmail.com


Thursday, December 13, 2018

বধ্যভূমির ভোরে -সুমি খান


ভোর অাসবার অাগেই
হানা দিয়েছিলো
জলপাই রঙ্গা জীপ-
পথ দেখিয়েছিলো
বাঙ্গালী হন্তারক নকশাকারী
অাশরাফ অার মঈনুদ্দিনের ছক-
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর হাতে পায়ে ধরে
ডা.অালীম চৌধুরীর বাড়িতে অাশ্রয় নিয়ে
বুদ্ধিজীবী হত্যার ছক সফল করলো ঘাতক মান্নান
পরাজয় নিশ্চিত জেনে হত্যাযজ্ঞে মত্ত হলো রাজাকার অালবদর ঘাতকের উন্মত্ত দল!
চোখ বেঁধে নেয়া হলো
ডা.ফজলে রাব্বী, অালীম চৌধুরী,
সেলিনা পারভীন সহ
শত শত চিকিৎসক,সাংবাদিক, শিক্ষক,বুদ্ধিজীবীদের-
ঘাতকের দল বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে
উপড়ে নিলো
বুদ্ধিদীপ্ত চোখগুলো!
উপড়ে নিলো
দেশ এবং মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ
হৃৎপিন্ড গুলো!
তবু সেই রক্তাক্ত জনপথ বেয়ে
জাতীয় পতাকা উড়েছিলো!
পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিলো
লাখো বাঙ্গালীর অাত্মদান!
ঘরে ঘরে নব প্রাণে জাগে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান!

দিগন্তে নব সূর্যোদয়
নব অানন্দে জাগে বাঙালী
রক্তে প্রলয়ের দোল
বিজয়ের উল্লাস!
অাবারো ঘাতকেরা জোট বাঁধে-
অমানিশার কালো রাতে
উল্লাসে মাতে
পিতার হন্তারক!
পনেরো অাগস্ট থেকে জেল হত্যা
পিতার বুক তো নয়-
ঝাঁঝরা হয়ে গেলো
বুলেটবিদ্ধ জাতির হৃদয়!
ঘাতকের গুলি বোমা গ্রেনেডে
রমনার বটমূল
উদীচীর সমাবেশ
২১শে অাগষ্টের সমাবেশ
বারবার রক্তে ভেসেছে!
জনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ
বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে
নতুন শপথে জাগে অারবার!7
ঘাতকের ভীতি যেন-
মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা
দিনে দিনে এক হয় জনতা
রাজপথে জনতা
রাজপথে একতা
রক্তের ঋণশোধে
একাত্ম জনতা!
জনতার জাগরণে
ফাঁসির দড়িতে ঝুলে ঘাতকের দল!
বধ্যভূমির মাটি থেকে ভেসে অাসে
নব অাহ্বান-
নব প্রত্যয়!
রক্তঋণের দায়ে
প্রজন্ম
বদ্ধ হাত
অাকাশে উঁচিয়ে বলে,
'জয় বাংলা'!!
বেলা ১০টা ৩০ মিনিট, শুক্রবার ১৪ ডিসেম্বর,২০১৮
sumikhan29bdj@gmail.com

Thursday, November 29, 2018

সত্য ভাষণ দিক মানে না- সুমি খান


 বিন্দু বিন্দু ভুলকে নিয়ে
সিন্ধুসাগর কালপেরিয়ে
পাখির পালক আর হাসেনা
জীবন জয়ী র মৃত্যুবাণে
দৃপ্ত জীবন আর ডাকে না
সত্য ভাষণ দিক মানে না

  সকাল ৮.৫৬
১০ নভেম্বর ২০১৮, বসুন্ধরা আবাসিক


Wednesday, October 31, 2018

সেদিন অামি বলিনি - সুমি খান


অামার যেদিন বাঁচার ছিল
সেদিন অামি বাঁচি নি
অামার যেদিন বলার ছিল
সেদিন অামি বলিনি!
অামার পথে চলার ছিল,
সে পথে তো চলো নি!
তোমরা খুবই ব্যস্ত ছিলে
শূন্য অামায় বোঝো নি!
নিজের করে না পাওয়াতে
তোমাদের তো বলি নি!
নিজের ভালো নিজের মন্দ
কবে কখন বুঝেছি?
সবার ভালো সবার মন্দ
সবসময়ে খুঁজেছি!
---- -----------+------------

কবে তুমি বুঝবে বলো
জীবন ভরে বুঝলে না,
পুত্র তুমি,পূর্ণ জীবন
মা হয়ে ও পুঁছলে না!


রাত ১টা ২৮ মি ৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার



Monday, October 22, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান

বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও। সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে। তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো 'হিসেবি' হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।

সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শো তেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন,  জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
সুমি খান, সম্পাদক, সূর‌্যবার্তা নিউজডটকম
http://surjobartanews.com/http:/surjobartanews.com/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%B8/

Sunday, October 21, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান


বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও।সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! 
প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে।
তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো ‘হিসেবি’ হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শোতেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন; জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বিষয়টিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করা হয়,বা তাঁরা সম্পৃক্ত হন। ’চরিত্র ‘ শব্দটি  যেন কখনো নারী কে অাক্রমনের হাতিয়ার না হয়,সেই দাবিতে উচ্চকিত হয়েছেন অনেকে। নিউজরুমে বা বাইরে নারী সাংবাদিকদের ‘এবিউজ’ বা নিপীড়ন করেছেন এমন নীতিনির্ধারক ও নারীর ‘চরিত্র’ সুরক্ষায় সোচ্চার হলেন নারী সাংবাদিক নেত্রীদের সাথে একাত্ম হয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীর সন্তানও নারী সাংবাদিকদের সাথে একাত্ম হলেন, এক্ষেত্রে জামাত প্রশ্ন তুললেন না কেউ।
তবে এই প্রতিবাদে যদি সবাই সততার সাথে অার অন্তর থেকে একাত্ম হয়ে থাকেন,সেটা গণমাধ্যমের জন্যে অবশ্যই শুভ লক্ষ্মণ। যদি তা না ও হয়,তবু অন্তত  নারীর সম্মানের প্রশ্নে নীতিনির্ধারকদের  বিবৃতি অবশ্যই সমাজে একটা ভালো প্রভাব ফেলবে মনে হয়েছিলো অামার।
হঠাৎ তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুকে মাসুদা  ভাট্টি ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হলেন অাবার! লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অনেক লেখার সাথে অামি একমত নই ;চরম বিরোধিতাও করি কখনো কখনো। কিন্তু এদেশের বিরোধিতা করে যুদ্ধাপরাধীরা যদি দেশের পবিত্র মাটিতে থেকে দেশের শ্রেষ্ঠসন্তানদের হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে, একজন লেখিকা তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরও মাতৃভূমির মাটিতে পা দিতে পারবেন না, এ কেমন বিচার?মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে কি তবে  মাথা নত করেছে রাজনৈতিক শক্তি? রাজনীতির হঠকারিতায় তসলিমা তার মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত থাকবেন চিরদিন? কেন কোন প্রতিবাদ অাসেনা তসলিমাকে দেশের মাটিতে ফেরানোর দাবিতে?

অন্যদিকে এখন ক্ষমতাসীন দলের সাথে রাজনৈতিক সখ্য বলেই কি একসময় পাকিস্তানী স্বামীর সাথে সংসার করলেও, তৎকালীন রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে ভূমিকাহীন ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া মাসুদা ভাট্টির সাথে একে একে প্রতিবাদী  হলেন সংস্কৃতিসেবী এবং গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকেরা?  বেদনা অার হতাশা থেকেই হয়তো তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন -কখনো বোবা,কখনো বিপ্লবী কেমন এ খেলা !
মূলত: একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে লেখিকা মাসুদা ভাট্টি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন কে তার জামাত সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে অাখ্যায়িত করেন। এ চরম অন্যায় অাচরণ। পরবর্তীতে অনেকেই মাসুদা ভাট্টির পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। এ ঘটনার পর চরম ক্ষুব্ধ প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে  মাসুদা ভাট্টির কঠোর সমালোচনা করলেন।  এতোটাই ক্ষুব্ধ হলেন তিনি, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাসুদা ভাট্টিকে তিনি ‘চরিত্রহীন ‘ আখ্যা দিলেন!২১ অক্টোবর রোববার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। তসলিমা নাসরিনের লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তাঁর চরিত্র, কী তাঁর আদর্শ আমি জানি না, তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ মহিলা। ‘চরিত্রহীন’ বলতে আমি কোনওদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। ‘চরিত্রহীন’ বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ,অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।
মহিলাটির জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিল। পাকিস্তানির সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো ওকে। ওর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে একটা চিঠি লিখে দাও। লিখে দাও মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশে তোমার পাব্লিশার ছিল, তোমার জন্য আন্দোলন করেছে। ও যদি এখন দেশে ফিরে যায়, ওকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা’।আমি বললাম, ‘মহিলাকে আমি চিনিই না। আর আপনি বলছেন ও আমার পাবলিশার ছিল? আমি মিথ্যে বলি না। আমি মিথ্যে কথা বলতে পারবো না।’ এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাবো জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।
তারপর কী হলো? তারপর ২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘ক’ যখন বাংলাদেশে বেরোলো,আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদি গোষ্ঠি উন্মাদ হয়ে উঠলো আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য, আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালি তো দিতেই লাগলো, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করলো, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।
আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ প্রচুর কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনওদিন করেনি। ক বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে শরীরে ঘিনঘিনে ঘা ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন।
মাসুদাভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?
আজ দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে লড়ছেন কারণ কেউ তাকে চরিত্রহীন বলেছে। যত অশ্লীল শব্দ বাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে নব্বই দশকের শুরু থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনও বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনও সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে কোনওদিন দেখিনি।আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হলো, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হলো, আমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে দিনের পর দিন মিছিল হলো, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করলো, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনও সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দ করেনি। এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনও বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?
তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাসের জবাব দিলেন মাসুদা ভাট্টি । মাসুদা ভাট্টির জবাব তুুুুলে ধরা হলো-
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তসলিমা নাসরিনের দেওয়া স্ট্যাটাসের জবাবে মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন, তসলিমা নাসরিনকে আমি ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি এরকম একটি মোক্ষম সময়কে বেছে নিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভকে প্রকাশ করে ২০ বছর আগে দেয়া আমার একটি বক্তব্যের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।যে সকল ঘটনার উল্লেখ তিনি করেছেন তা ২০০০ সালের এবং তিনি সত্যিই আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন কারণ তখন আমাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। একটি আলোচিত সাক্ষাতকার গ্রহণের পর থেকে আমার সে দেশে টিকে থাকা মুস্কিল হয়ে পড়েছিল এবং তখনও অনেক সাংবাদিক আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন যেমন দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তসলিমা নাসরিন কখনোই আমাকে তার পাবলিশার হিসেবে চিঠি দেননি, দিয়েছিলেন তার একজন ফ্যান বা সমর্থক হিসেবে বর্ণনা করে। খুঁজলে সে চিঠি আমি নিশ্চয়ই পাবো।
যখন তার প্রথম আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘ক’ বের হলো তখন এই বই নিয়ে প্রচারণার অংশ হিসেবেই আমি একটি পুস্তক সমালোচনা লিখি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমার তখন নারীবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা, উদারনৈতিক ও সমতাভিত্তিক সমাজব্যাবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি একাডেমিক লেখাপড়া ছিল না। আমি সমালোচনায় বইটি সম্পর্কে এই কথাই বলতে চেয়েছিলাম যে, একজন ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছা-সম্পর্কের দায় দুপক্ষের সমান এবং তা প্রকাশের আগে অন্যপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন পড়ে – ক বইটি পাঠে আমার তা মনে হয়নি। প্রায় কুড়ি বছর আগের লেখা এবং সেখানে আমি তসলিমা নাসরিনকে কোনো ভাবেই ব্যক্তিগত কোনো আক্রমণ করিনি। করতে পারি না কারণ আমি সবসময় একথাই বলে এসেছি যে, আজকে যে আমরা মেয়েরা অনায়াস-লেখা লিখতে পারছি তার মূলপথ আমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন। অথচ গত কুড়ি বছর যাবত তসলিমা নাসরিন অন্ততঃ কুড়িবারেও বেশি এই প্রসঙ্গে আমাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন তার প্রকাশিত বইতে, লেখায় এবং তার ও আমার জানাশোনা ব্যক্তিবর্গের কাছে।
২০০০ সালের পরে অসংখ্য লেখায় আমি তসলিমা নাসরিনের প্রশংসা করেছি এবং সে কারণে আমাকে সমালোচকরা নতুন তসলিমা নাসরিন আখ্যা দিয়ে আমার বিচার, অপমান এবং ফাঁসিও চেয়েছে। তসলিমা নাসরিন এসব কথা কখনও উল্লেখ করেননি, তিনি সব সময় গত কুড়ি বছর ধরে বহুবার, বহু জায়গায় আমার এই পুস্তক-সমালোচনার কথা উল্লেখ করে আমাকে চরম আঘাত করেছেন। আমি বিরত থেকেছি জনসমক্ষে কিছু বলা থেকে কিন্তু তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে আমি বহুবার একথা বলেছি যে, তার বইয়ের সমালোচনায় আমি যা বলেছি সেটা একেবারেই তার বইয়ে সন্নিবেশিত তথ্যের সমালোচনা, তার ব্যক্তি-সমালোচনা নয়। আমি একথা ২০০৩ সালেই প্রকাশ্যেও লিখেছি, এমনকি যখন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তখন আমি প্রতিবাদ করেছি, লেখকের বিরুদ্ধে মামলা বা বই নিষিদ্ধের দাবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি। আমার সেসব প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সব ভেসে গেছে, থেকে গেছে কেবল সমালোচনাটুকু।এমনকি এই সেদিনও বাংলা একাডেমীতে আয়োজিত লিট ফেস্ট ২০১৭ তে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছি যে, তিনি আমাদের পুরোধা লেখক যিনি পথ দেখিয়েছেন, অনেক শব্দকে ছাপার অক্ষরে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, তিনি মুক্ত করে দিয়েছেন।
তসলিমা নাসরিনের প্রতি আমার কোনো ধরনের বিদ্বেষ, রাগ কখনোই ছিল না। বরং আমার দুঃসময়ে তিনি পাশে ছিলেন সেটা আমি ভুলিনি। তাই বলে তার প্রকাশিত বইয়ের সমালোচনা আমি করতে পারবো না সেটাতো হতে পারে না। হতে পারে তিনি মনে করেছেন যে, আমার সমালোচনাটি কুৎসিৎ ব্যক্তি আক্রমণ, কিন্তু আমি নিজে জানি যে, তখনও আমি সেটা করিনি আর এখনতো আরও করবো না। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে কবার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
তসলিমা নাসরিন তার মতামত দিয়েছেন আমার সম্পর্কে। আমি সে সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা দিতে পারি মাত্র, এর বেশি আর কীই বা করতে পারি? তবে এমন একটি সময়কে ২০ বছর আগে লেখা সমালোচনার (যার জন্য বহুবার তিনি প্রকাশ্যে আমায় গাল দিয়েছেন) জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন যখন আমি কেবল আক্রান্তই নই, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্নটিও তিনি আমলে আনেননি, আমার চেয়ে তার এই নিরাপত্তা-সংকটের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি বোঝার কথা ছিল। আজকে তার দেওয়া চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিয়ে যারা আমাকে তুলোধনুা করছেন তারাই প্রতিদিন তার মাথা চায়, নোংরা আক্রমনে জর্জরিত করে, কখনও বা তাকে দেশছাড়া করতে চায়। কিন্তু আজ আমার বিরুদ্ধে তারই দেওয়া ভীষণ চরিত্রহীন তকমার করাত দিয়ে আমাকে টুকরো টুকেরো করছে। জানি না, এতে কার লাভ কী হলো? কিন্তু কিছু একটা হলো নিশ্চয়ই।এরকম একটি চরম সংকটকালে যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কবলে থেকে একদল মানুষ ন্যয়ের জন্য লড়ছে, তখন মইনুল হোসেনের দেওয়া তকমা ‘চরিত্রহীন’ কে একটি ভীষণ শব্দ জুড়ে দিয়ে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট-কে আরো শক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন – আমি এ জন্যও তার কাছে কৃতজ্ঞ। অগ্রজ লেখক হিসেবে হয়তো এটুকুই আমার প্রাপ্য তার কাছে।
পরিশেষে দু’জনের বক্তব্যের পর সন্দেহ থাকেনা তসলিমার দাবির সত্যতা নিয়ে; তার ক্ষোভের কারণ অাছে বটে। তবে মাসুদা ভাট্টি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন তসলিমার কাছে ; হতাশা ও ব্যক্ত করেছেন।
তবে ঘন কালো মেঘের ছায়া ঢেকে অাছে গণমাধ্যমের অাকাশ! যে অাকাশে নারায়নগঞ্জের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত অাইভিকে একাত্তর টিভির লাইভ শো তে শামীম ওসমান চরম অশ্লীল গালাগাল করে যান উপস্থাপক শাকিল অাহমেদ এর নীরব উস্কানিতে। লাইভ টক শো তে অাইভির চরম অপমানে কেউ সেদিন এগিয়ে অাসে নি তো! গণমাধ্যমের এমন স্বেচ্ছাচারিতাতে প্রশ্ন ওঠে বৈকি, কখনো বোবা অার কখনো বিপ্লবী কেন হবে এ সমাজ  ?  তার মানে এই নয়, মাসুদা ভাট্টির অপমান নীরবে হজম করে যেতে হবে।
একটি সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবাদে মুখর হতে হবে নারীর প্রতিটি অসম্মানে! প্রতিবাদী হতে হবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ।
আমি মনে করি,  গনমাধ্যমে নারীর সম্মানজনক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে হলে চিহ্নিত করতে হবে প্রকৃত সংকট।অাজকের দিনে গণমাধ্যম ক্ষমতার রাজনীতি অার সিন্ডিকেটবাজদের কাছে জিম্মি! ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার হীন প্রতিযোগিতায় মত্ত সাংবাদিক নেতাদের অনেকে সচেতন ভাবে গণমাধ্যমের নারীদের মূলধারা থেকে সরিয়ে রেখেছেন। সমাজের অন্যদের প্রতি তাদের অবজ্ঞা এবং দায়িত্বহীনতা প্রকট;যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! এর থেকে বেরিয়ে অাসার কোন পথ তারা খুঁজে পান না,পেতে ও চান না হয়তো!
এ এক অমানিশার কাল অামরা অতিক্রম করছি, যে বাস্তবতা পেশাদারীত্বকে পায়ে দ’লে হীনতা অার নীচতার প্রতিযোগিতার নগ্ন লড়াইয়ে মগ্ন! জানিনা কবে কাটবে গনমাধ্যমের এ ক্রান্তিকাল!
গণমাধ্যমে নারীর অবস্থান এখনো শক্তিশালী নয়। নারী সাংবাদিকদের অনেকে এখনো নিউজরুমে নানারকম হেনস্থার শিকার হচ্ছে। কোন কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত হচ্ছে সৎ, মেধাবী নারী সাংবাদিকেরা। কেউ তাদের পাশে নেই। কেউ কখনো চাকরিচ্যুত নারী সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায় না।কর্মচ্যূত নারী সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা ও কেউ করেনি; করে না। মেধা ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এতো নেতা নেত্রীদের কেউ কখনো একবারের জন্যেও নারী সাংবাদিকদের কাজের মূল্যায়নের প্রশ্নে সোচ্চার নন।
নারীর পেশাদারীত্ব এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা না করলে নারীর প্রকৃত  মর্যাদা প্রতিষ্ঠা দুরূহ হয়ে যাবে। নারী সাংবাদিকের মেধা, নিরলস শ্রম, সততা এবং নিষ্ঠা এখনো এই পেশায় যথাযথভাবে  মূল্যায়িত হয়নি। নারীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে  নিজেদের ইগো থেকে বেরিয়ে সকলে একাত্ম হয়ে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে অানা জরুরী।বাহিরে অন্তরে সৎ হতে হবে লক্ষ্য অর্জনে।
সাংবাদিকতার দর্শনের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকলে পরিণতি কাউকে ক্ষমা করবেনা।রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা থাকতে পারে সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা রক্ষায় একাত্মতা জরুরী, যা অাজ সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হয়েছে।বাহ্যিক দর্শনের অাধুনিকতা চিন্তা চেতনার পশ্চাদপদতাকে লুকাতে পারে কি??

Wednesday, October 17, 2018

চরিত্র কি ধোয়া তুলসী পাতা?- সুমি খান

চরিত্র কি ধোয়া তুলসী পাতা? মাসুদা ভাট্টি বা কারো চরিত্র বিচারের ভার কি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে দিয়েছে কেউ?
১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনের টক শো তে রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা চলছিলো। সেখানে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি যে প্রশ্ন করেছেন, তার সঠিক জবাব দিতেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, তার সৎ সাহস থাকলে । তিনি শিবিরের সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন এবং জামাতের প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্যজোটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন -সেই বিষয়ে তিনি আলোচনা না করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন মাসুদা ভাট্টিকে।
মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করতে না পারলে , নিজের অসম্মান ডেকে আনা হয়।
নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পৌরুষে আঘাত লাগে যাদের, তারা ‘মানুষ’ হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। লাইভ অনুষ্ঠানে একজন নারীকে ’চরিত্রহীন’ বলে নিজের হীনতা , দীনতা প্রমাণ করলেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পুত্র তিনি- এমন বাবা মায়ের সন্তান হয়ে তিনি জীবনভর নারীবিদ্বেষ ই করে গেলেন? এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এবং আশা করছি দেশ জুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, এবার অন্তত এ ধরণের অন্যায় অপরাধের উপযুক্ত বিচার পাওয়া যাবে।

Saturday, September 15, 2018

মাতৃত্বের প্রতি অাহ্বান- সুমি খান


কোথায় হারিয়ে যায়
সম্পর্কের সুতোগুলো পলে পলে
কখনো হয়নি বলা
 নিজেদের অানন্দ বেদনার গল্প
যখনি বলতে গেছি,
হয় নি সময় তোমাদের!
 জটিলতার জালে জড়িয়ে গেছে
সংকটের জাল
শূণ্যতায় ভরে দেয় চারদিক
মা - বাবা, ভাই বোনের
 নির্মল অানন্দে পূর্ণ করে তোলা
 নিজেদের কথাগুলো
ভুলে গেছি বলতে
সেই কবে থেকে -
অনেক দিন!
অভিমানের পলেস্তারা জমতে জমতে
 প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসে
পরিবার, সন্তান অাগলে রাখতে
শুধু কি তবে নিঃস্ব করেছি নিজেকে?
তাই বুঝি অামি ব্রাত্য !

কালের যাত্রায় তবু প্রার্থনা নিরন্তর-
তোমাদের পূর্ণতা পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হোক-
সময়ের অাহ্বান নিয়ে যাক
যতো দূর থেকে দূরে
হৃদয়ের অাহ্বান
 ঢাকেনি কোন কালো!
শুধু জানি কোন এক ভোরে
নিঃসীম অাকাশের পার হতে
ভেসে অাসা অালো
তোমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল ছুঁয়ে
 না বলা বাণীর কথকতা
ভেঙ্গে দেবে একদিন যতো নীরবতা!
08.58 am
160918

Saturday, July 28, 2018

নাশকতার উদ্দেশে সংগঠিত হচ্ছিলো জামায়াতের নারী সদস্যরা

 প্রকাশঃ ০৩-০২-২০১৭, ৪:১২ অপরাহ্ণ | সম্পাদনাঃ ০৩-০২-২০১৭, ৪:১২ অপরাহ্ণ   ভোরের কাগজ
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: অবৈধভাবে সরকার উৎখাত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন নাশকতার ছক কষছিলেন জামায়াতের নারী শাখার সদস্যরা। এজন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তারা গোপন বৈঠকও করেছেন।
শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাশকতার এমন পরিকল্পনার তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় গোপন বৈঠকের সময় জামায়াতের নারী শাখার ২৮ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
আটকরা হলেন- জামায়াতের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি শাহনাজ বেগম (৫৬), রোকন পর্যায়ের নেত্রী নাঈমা আক্তার (৫৫), উম্মে খালেদা (৪০), জোহরা বেগম (৩৫), সৈয়দা শাহীন আক্তার (৪০), উম্মে কুলসুম (৪২), জেসমিন খান (৪৩), খোদেজা আক্তার (৩২), সালমা হক (৪৫), সাকিয়া তাসনিম (৪৭), সেলিমা সুলতানা সুইটি (৪৮), হাফসা (৫৫), আকলিমা ফেরদৌস (৩৭), রোকসানা বেগম (৫১), আফসানা মীম (২৫), শরীফা আক্তার (৫৩), রুবিনা আক্তার (৩৮), তাসলিমা (৫২), আসমা খাতুন (৩৫), সুফিয়া (৪১), আনোয়ারা বেগম (৪৬), ইয়াসমিন আক্তার (৪১), সাদিয়া (৪৫), ফাতেমা বেগম (৫১), উম্মে আতিয়া (৪৬), রুমা আক্তার (৩২), রাজিয়া আক্তার (৪২), রাহিমা খাতুনন (৩০)।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল, জামায়াতের নারীকর্মীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাসায় গোপন বৈঠক করছিল। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাজমহল রোডের ১১/৭ নং বাসার দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
‘যখন আমরা ওই বাসায় যাই তখন তারা ভেতর থেকে দরজা আটকে দেয়। অনেকবার দরজা খুলতে অনুরোধ জানালে সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে আমরা দরজা ভাঙতে চাইলে পরে দরজা খুলে দেয়। পরে সেখান থেকে জামায়াতের ওই ২৮ নারী সদস্যকে আটক করা হয়।’
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ‍জানান, বাসাটি থেকে যুদ্ধাপরাধী নিজামীর লেখা ও মওদুদীবাদের বিভিন্ন বই ও সাংগঠনিক বিভিন্ন নথি উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক কাগজ ছিঁড়ে টয়লেটে ফেলে দেয় তারা, যেগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
আটকরা এখনো নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত। এদের মধ্যে ডাক্তার ও শিক্ষকও রয়েছেন। সমাজের অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকদের সহধর্মিনী রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তারা তাদের পরিচয় গোপনের চেষ্টা করছে।
‘এদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর স্ত্রী রয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি’।
তিনি আরও বলেন, তাদের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের কাছে তাদের সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো বিস্তারিত পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ডিসি বলেন, তাদের কাছ থেকে যেসব বই উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো উগ্রবাদী বই হিসেবে পরিচিত। তাদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো। তাদের সঙ্গে জঙ্গিবাদের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও থাকতে পারে।

Thursday, June 28, 2018

‘খাঁন সাহেব’ সাম্যবাদী ভাবনায় লড়েছেন আমৃত্যু -কমরেড অশোক সাহা

 ‘খাঁন সাহেব’ বটে, কিন্তু সাম্যবাদী ভাবনায় লড়েছেন আমৃত্যু : ( স্মরন, প্রয়ান দিবসে) :
এপার ওপার বাংলায় ইতিহাস খনন করলে পাওয়া যাবে, জমিদার তনয় বা বনেদী পরিবারের অনেক ব্যাতিক্রমী সন্তানেরা স্বদেশ এবং শোষিত কষ্টদগ্ধ সাধারন মানুষের জন্য নিজের জীবনটি উৎসর্গ করে রেখেছিলেন কুন্ঠাহীন চিত্তে। তালিকা ছোট নয় কিন্তু।
সততা, নিষ্ঠা,সত্যবাদীতা, দেশপ্রেমে টগবগে বায়ান্নের স্থিতধী মানুষটি জনাব সাইফুদ্দিন খাঁন, তেমনই উজ্জ্বল একজন। সময়ে প্রকাশ্যে, সময়ে আত্মগোপনে সারাটা জীবন অনন্য দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নির্মমভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন।
বেশ কাছে থেকে এই ভাল মানুষটিকে দেখার চেনার সুযোগ আমার হয়েছে। আমাকে ' সাহা সাব ' ডাকতেন।
তাঁর স্নিগ্ধ সুন্দর সন্তানেরা আমাকে বুক ভরে  ‘মামা’ ডাকে। আমার ভালো লাগে। এখনকার রাজনীতিতে সৎ সত্যবাদী নিষ্ঠ ন্যায়নুগ নয়, লাখো লাখো ভোট পাওয়া ' মাননীয় সম্মানিত জনপ্রতিনিধি ' কোটি কোটি পতি অনেক পাওয়া যাবে কালো গ্লাসের অন্তরালে নিশান পাজেরোর ভেতরে। এরাই বর্তমান সমাজের কুর্নিশ পায়। লুটেরা ধনিক, ভূমি দস্যু, আকন্ঠ ঘুষখোর, টেন্ডারবাজ, আন্তর্জাতিক অস্ত্রচোরাচালানী, রাজনৈতিক দুবৃত্ত, সাম্প্রদায়িক রগকাটা পদ্মগোখরোদের এখন রমরমা দিন। এটাই নাকি এখন  ‘রাজনীতির জমানা।’
 কমরেড মনিসিংহ, কমরেড মোজাফ্ফর আহম্মদের জীবন ত্যাগী রাজনৈতিক কর্মধারা অনেক সুধির এখন বড়ই অপছন্দ। নরম চেয়ারই নাকি সর্বশেষ স্বপ্ন। ও ছাড়া জীবনের কিইবা মানে। সুতারাং মিশে যাও, ঢুকে যাও,একাকার হয়ে যাও। স্মারকগ্রন্থে পড়ুননা সাইফুদ্দিন খাঁনের জীবনচিত্রটি। সার্বক্ষনিক না হয়েও ব্যাঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ সততা সহ জীবনের শেষ অব্দি কেমন করে দেশের জন্য, সাধারনের জন্য অনেক বেশী সময় দেয়া যায়। বৃদ্ধ বয়সেও ব্যানার লাগাতে, বা পোষ্টার লাগাতে যাঁর ইজ্জত নষ্ট হতোনা। আত্মগোপন কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড খুব বেশী নেই এখন দুনিয়ায়। তাঁদের জন্য সাইফুদ্দিন খাঁন এবং তাঁর পুরো পরিবার স্বজন( ডা. কামাল এ খান সহ) বর্গ জীবনের ঝুকি নিয়ে নি:স্বার্থে কি না করেছেন।

পরিবারের কাউকে প্রতিক্রিয়াশীল শঠ -প্রবঞ্চক হতে দেননি। সবই জীবনের পাঠ।
 তাঁর জীবন  সঙ্গিনী  নুরজাহান খাঁন, চট্টগ্রামের একজন সাহসী লড়াকু নারী নেত্রী। মহিলা পরিষদের প্রাক্তন জেলা সভাপতি। বেশ কাছে থেকে জানি, চিনি।
আসুন, আমরা সবাই কাজ করি, সক্রিয়তায় থাকি, সব দিক থেকে নিষ্ঠাবান,সৎ থাকি;আত্ম প্রবঞ্চক না হই, আত্ম প্রতারক না হই, সংকীর্নতার বিষে নিজেকে দগ্ধ না করি।
ভাল থাকা আজীবনের আত্মসংগ্রাম।
নষ্ট হওয়া মূহুর্তের ব্যাপার।
পংকিল সমাজটাকে পরিবর্তনের জন্য তিলে তিলে কাজ করবো, কিন্তু পংকিলতার কাছে মাথা নোয়াবো না। এটাইতো আমাদের সাইফুদ্দিন খাঁন সাহেবদের জীবন পাঠ। জীবনের সংগ্রাম। জীবনগাথা।
আমরা তাঁর অনুসারীরা, সহযোদ্ধারা, আত্মীয়বর্গ, গুনগ্রাহীরা, পরিবার, স্বজন, আত্মজ, আত্মজা তাঁর জীবন থেকে নানা কিছুই জানতে পারি।
 ক্ষতি হবেনা, নিশ্চিত লাভই হবে।
কমরেড অশোক সাহা-সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা

Wednesday, June 27, 2018


৮.১০ রাত ২৬ জুন, ২০১৮
দূরের মানুষ
কাছের মানুষ
লাল বা সাদায় রাঙ্গা মানুষ
কূটকচালি
ভোট পাঁচালি
সবকিছুতেই
ছলচাতুরি-
কোথায় অালো
রাত পেরুলো-
চলছে সমাজ
চলছে অাগুন
কিম্বা ফাগুন
কোন বা পথে
দৃষ্টি দিয়ে
পথ এগিয়ে
হাত বাড়িয়ে
পা চালিয়ে
স্তব্ধ দুপুর
থমকে নূপুর
দিনের অাগেই
রাত পেরিয়ে
ভোর সরিয়ে
কালো অাকাশ
নিকষ কালো
কোথায় অালো -
কোথায় অালো?
--++-------+---------

Tuesday, May 15, 2018

”প্রসিকিউটর হিসাবে তুরিন যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ আনএথিক্যাল “- ওয়াহিদুল হক

 একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার দায়ে গ্রেফতার ওয়াহিদুল হক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কমিটিকে বলেছেন, ”আকস্মিক ভাবে তুরিন আফরোজ ফোন করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব দেন এবং পরবর্তীতে প্রসিকিউটর হিসাবে যেসব কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ আনএথিক্যাল ।”

তার মোবাইল ফোনে থাকা দুই অডিও রেকর্ডের কারণে ফেঁসে গেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।আইনমন্ত্রী দেশে ফিরলেই পরবর্তী পদক্ষেপ ।

রাজধানীর গুলশান থেকে গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করে গুলশান পুলিশ। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করার পর সেটি পরীক্ষা করতে গিয়ে দুটি অডিও রেকর্ড পাওয়া যায়। অডিওতে তার সঙ্গে তুরিনের যোগাযোগের তথ্য ছিল। অডিও রেকর্ড আইনমন্ত্রী  শুনেছেন। আইনমন্ত্রী দেশে ফিরলেই পরবর্তী পদক্ষেপ  নেয়া হবে বলে জানা যায় ।

তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে তদন্ত হচ্ছে ৷  আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠক, মামলার নথি তার কাছে হস্তান্তর ও মামলার মেরিট নিয়ে কথা বলা৷
অভিযোগের প্রমাণ ও অডিও রেকর্ড এরই মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু৷ প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তুরিন আফরোজকে ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷

গুলশান থানার ওসি অডিও রেকর্ড দুটি কপি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেন৷ পরে সংস্থা তা ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে দিলে তুরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন,আমরা এ ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছি।আমাদের জন্যে এ ধরণের আচরণ একেবারেই অপ্রত্যাশিত । তিনি বলেন , তুরিন আফরোজ নিজেই আগ্রহী হবার পর  ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটরের নির্দেশ ক্রমে এই মামলাটি তাকে দেয়া হয় গত নভেম্বরে । কিন্তু এ পর‌্যন্ত তিনি কোন কাগজপত্র ফেরত ও দেন নি তার দায়িত্বের ব্যাপারে কোন অগ্রগতি ও তদন্ত কমিটিকে জানান নি।

তিনি আরো জানান , দুটি অডিওর মধ্যে একটি টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড৷ এটি চার মিনিটের মতো৷ অন্য অডিওটি ওই গোপন বৈঠকের, প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার মতো৷
গোলাম আরিফ টিপু বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে৷ তিনি দোষী হলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে৷

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বুধবার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছেন৷ আসামি ওয়াহিদুল হকের মামলার প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান৷ গত বছর তদন্ত শুরু হওয়ার পর ১১ নভেম্বর তুরিন আফরোজকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়৷

অভিযোগ উঠেছে, ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতারের আগে গত নভেম্বরে তুরিন আফরোজ প্রথমে তাকে টেলিফোন করে দেখা করার সময় চান৷ এর পর একটি হোটেলে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন তিনি৷

তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, তাদের টেলিফোনে কথা হয় গত বছরের ১৮ নভেম্বর। আর পর দিন ঢাকার গুলশানের  অলিভ গার্ডেন নামে একটি রেস্তোরাঁর গোপন কক্ষে বৈঠকটি হয়। সেখানে তুরিন আফরোজ, তার সহকারী ফারাবি, আসামি ওয়াহিদুল হকসহ মোট পাঁচজন ছিলেন৷
তিনি জানান, টেলিফোন রেকর্ডে তুরিন আফরোজ জানিয়েছেন যে তিনি বোরকা পরে ওই হোটেলে যাবেন৷ তার সঙ্গে থাকবে সহকারী ফারাবি, যাকে তিনি নিজের স্বামী পরিচয়ে সেখানে নিয়ে যাবেন৷
বৈঠকের অডিও রেকর্ডে কী আছে জানতে চাইলে সানাউল হক বলেন, যা বলা সম্ভব তাই বলছি৷ বৈঠকে তুরিন আফরোজ মামলার মেরিট নিয়ে আসামির সঙ্গে দীর্ঘ কথা বলেন এবং মামলার পুরো ডকুমেন্টের এক সেট ফটোকপি আসামিকে হস্তান্তর করেন৷

আরেক প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবি বারবার ওয়াহিদুল হকের কাছে তার আর্থিক অবস্থার কথা জানতে চান৷ ওয়াহিদুল হককে বলেন, “আপনি তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে চাকরি করেছেন৷ আপনার তো অনেক টাকা-পয়সা থাকার কথা৷”

তুরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সানাউল হক বলেন, এখানে আসলে তিনটি বিষয় বিবেচ্য৷ আসামির সঙ্গে গোপনে ছদ্মবেশে দেখা করা, তাকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হস্তান্তর করা এবং মামলার মেরিট নিয়ে আসামির সঙ্গে আলোচনা করা৷ এর কোনোটিই তিনি করতে পারেন না৷ আইন মন্ত্রণালয় এখন পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে৷ আসামি মামলার ডকুমেন্ট পাবে আদালতের নির্দেশে৷ প্রসিকিউটর ব্যক্তিগতভাবে আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারেন না৷ এমনকি মামলার মেরিট নিয়েও আসামির সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না প্রসিকিউটর৷

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য তুরিন আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি । তবে তিনি একটি ফেসবুক পোস্টে ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেছেন, আমি তদন্তের জন্য যে কোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারি৷ আর আমি যা করেছি, আমার ঊর্ধ্বতনদের জানিয়ে করেছি৷ আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে৷

সানাউল হক বলেন, তুরিন আফরোজ মামলার তদন্তকারী নন৷ তদন্ত করছেন উপপরিচালক মতিউর রহমান৷ সুতরাং তুরিন আফরোজের তদন্তের প্রশ্নই ওঠে না৷ তা ছাড়া তিনি আসামির সঙ্গে গোপন বৈঠক করবেন বা দেখা করবেন– এটি আমাদের বা চিফ প্রসিকিউটরকে জানাননি৷ জানালেও অনুমতি পেতেন না৷ কারণ এটি বেআইনি৷ মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেকজন প্রসিকউটর রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তুরিন আফরোজকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷

তবে প্রসিকিউটরদের নিয়োগ দেয় সরকার৷ তাই তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে আইন মন্ত্রণালয়৷
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে যদি তুরিন আফরোজ চূড়ান্তভাবে দোষী প্রমাণিত হন,প্রসিকিউশনে কোনো প্রভাব পড়বে না৷

ফিরলো না মেয়েটি - সুমি খান

৭.৪৮ সকাল,  মঙ্গলবার ১৫ মে ২০১৮

হার্মোনিকা ঠোঁটে আলপথ ধরে এঁকে বেঁকে চলে গেলো মেয়েটি
কেউ তাকে মনে রাখেনি-
বিশুদ্ধতায় ডুবে যাওয়া
চলিত রীতির অচলায়তন ভাঙ্গা মেয়েটি কে কোথাও খুঁজে পেলো না কেউ-
আশালতার আত্মদান  নিভৃতে হারিয়ে যায়
নন্দী  ডাক্তার দের দেশত্যাগের ইতিহাস যার বুকে রক্ত ঝরাতো-

নিউজরুমে খবরের খোল নলচে পাল্টে মিথ্যার বেসাতি
যাকে দুমরে মুচড়ে দিতো-
মেয়েটি হারিয়ে গেলো -

লু হাওয়া কদমবুচি দিয়ে যায়
জননীর চরণে- কে ও?
তবে কি ও এসেছিলো?

পৌরুষের সংস্কারে আপাদমস্তক সুরক্ষিত সমাজ

মায়ের চাদর সুরক্ষিত করে নিপীড়ককে

বাবার ভাঙ্গা চশমারর কাঁচে জলের ফোঁটা
কাজল স্যারের চশমার ফাঁক গলে নেমে আসা
ফার্স্ট ব্র্যাকেট আর লাফিয়ে পড়া থার্ড ব্র্যাকেট এর গলাগলি-
যোগ বিয়োগের সাথে গুণ ভাগের দলাদলি
এসেছিলো-সীমন্তিনী
নীরব সমর্পনে অন্য জীবনে
আকাশসীমার শেষে দিগন্তবিস্তৃত
ময়রাপাড়ার মাঠ পেরিয়ে চলে গেলো না ফেরার দেশে
হার্মোনিকার সুর ছড়িয়ে চলে যাবার পথে আর পিছু তাকায় নি

সীমন্তিনীদের ফিরতে নেই
 তাই বুঝি  আর ফেরে নি সেই মেয়েটি

Monday, May 14, 2018

কালো বোরকার তালগাছে উন্মত্ত মাতঙ্গিনী -সুমি খান

রাজভোগের ভাগ নিতে
ঘাতকের দুয়ারে
কালো নেকাব!
আহা,  পাকিসেনার সাথে এমন খাস মোলাকাত!
বেরসিক কালবোশেখি ঝড়!

 বিশ্বাস আর ঘাতকের মিলিত  বিষাক্ত শ্বাস
 তবু তালগাছ-আর তালগাছ
মূলে নির্মূলে  মিলে যায় ঘাতকের অট্টহাসি-
ভেসে যায় মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝরা শত শত প্রাণ-

তিরিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার এতো জোর?

স্যুপের বাটিতে ওঠা ঢেউ ছলকে পড়ে
ওয়েটারের পোষাকেরআড়ালে
সিধু কানুর বুকের কাছটায় !
নীরব চোখের জলে ভেসে যায়
শত শত সাঁওতাল শহীদের রক্তাক্ত আত্মা!

কোটি টাকার হিসেব কষে বেভুল কালো কোট
অন্তর্ভেদী বিষাক্ত হাওয়ার তোড়ে
মেতে ওঠে মিথ্যার ওজরেরা -

দু'পাতার কাগজটি নির্বিকার হস্তান্তর-
সিধু কানুর নীরব রক্তাক্ত চোখে আগুন ঝরে -
মেশিন গানের গুলিতে ঝাঁঝড়া বুকের রক্তে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে!

কালো বোরকার পকেট কি ফাঁকাই রয়ে গেলো?
নাকি জমেছে যতোটা -
তারো চেয়ে বেশি জমবে গ্লানি আর ক্লেদ
কিছু নাই তবু খেদ-
নিন্দার ভার ঝেড়ে ফেলে
কান কানা রমজান !
শুধু জাগে সংশপ্তকের নির্ঘুম প্রহর!

ধর্মের কলে কালবোশেখি ঝড়-
মাতৃমুক্তি পণ করে সত্যনিষ্ঠ
উন্মত্ত মাতঙ্গীনি মাতে সমররঙ্গে
ভয় কী মরণে!

সকাল ৮টা ৩৫
১৫ মে ২০১৮

Wednesday, May 2, 2018

একজন সাহিত্যিক অশোক মিত্র - শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য


অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি পেলেও, ডক্টর অশোক মিত্র মনেপ্রাণে সাহিত্যের মানুষ ছিলেন। একান্ত আলাপে বারবার বলেছেন যে উনি একজন ইকোনমিস্ট বাই মিসটেক। আরেক রকম পত্রিকায় সম্পাদনার সূত্রে ওনার সাহিত্যপ্রীতির কয়েকটা উদাহরণ পেয়েছিলাম। 


আরেক রকমে মার্ক্স ও সোভিয়েত নিয়ে আমার কয়েকটা লেখা ২০১৭ সালে কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। সেই নিয়ে একদিন অশোক বাবু স্নেহ-মিশ্রিত শাসন করেছিলেন। মূলত প্রগলভতার কারণেই। তারপর বললেন,
​​
"আপনাকে একটা অন্য কাজ দিচ্ছি। অনেক তো মার্ক্স নিয়ে লিখলেন। এবারে সাহিত্যে আসুন। দীনেশ দাশের 'এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে' কবিতাটার শিরোনাম  নিয়ে বুদ্ধদেব বসু তাঁর কবিতা পত্রিকাতে দুই বিপরীত মতাদর্শের কবি, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও বিষ্ণু দেকে লিখতে বলেছিলেন।  ১৩৪৭ সনের কার্তিক সংখ্যাতে পিঠোপিঠি কবিতা দুইখানা বেরিয়েছিল। ওটা নিয়ে এখনকার পাঠক কী ভাবছে, সেটা আমি জানতে চাই। এখনো সোশালিস্ট রিয়ালিজম জিনিসটার সত্যিই কতখানি আবেদন আছে, বোঝা দরকার। আপনি কবিতা দুখানা নিয়ে লিখুন"। (উনি সকলকেই 'আপনি' বলতেন) 

দুইখানা ভুলে যাওয়া কবিতাকে আবার রিভাইভ করিয়ে পাঠকের অন্দরে নিয়ে আসা, এটা সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিল ডক্টর মিত্র-র সাহিত্যবোধ কতখানি আধুনিক। ওনার কাছ থেকে সেই সূত্রে এবং তার পরেও শব্দচয়ন সংক্রান্ত প্রচুর খুঁটিনাটি শেখা হয়েছিল। এর পরেও নানা লেখা লিখিয়েছেন। অন্নদাশংকর রায়ের কবিতা থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকার বামপন্থা, তাঁর আগ্রহ ছিল সজাগ। মাঝে মাঝেই ফোন করে বলতেন, "এটা নিয়ে লিখুন"। 

আরেক রকম সম্পাদনার সময়ে ওনার সঙ্গে একদিন বাড়িতে একটা হালকা বিতর্ক হয়েছিল। যে কবিতা লিখবে , সে কি রাজনীতি করবে না ? নাকি স্লোগান সর্বস্ব কবিতা লেখাটাই তার জীবনের নিয়তি? অশোক বাবুর মতামত ছিল, সুকান্ত ভট্টাচার্য্য বেঁচে থাকলে যদি সক্রিয় রাজনীতি করতেন, তাঁর কবিতা ঝুলে যাবার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, রাজনীতির ঘোর প্যাচ প্রকৃত শিল্পকে নষ্ট করে দেয়। এই দোষে আমাদের কমিউনিস্ট আন্দোলনের লিটারেচার ডুবেছে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাহলে মায়াকভস্কি? অথবা অক্টাভিও পাজ? উনি উত্তর দিয়েছিলেন, মায়াকভস্কি সক্রিয় রাজনীতি করেন নি। বুঝতেনও না। তারপর আঁদ্রে মালরোর উদাহরণ টানলেন। কনভিন্সড হতে পারিনি। সেই তর্কটার আর মুলতুবি হল না, জীবনের আর সবকিছুর মতই। 

শেষ দিন পর্যন্ত জীবনচর্যায়  ছিলেন আদ্যোপান্ত কমিউনিস্ট। বিশ্বাস করতেন এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে মাথা তুলে দাঁড়াতে গেলে বুর্জোয়া পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করে সেটা সম্ভব নয়। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অম্ল-মধুর, ঘনিষ্ট সহযোগিতা এবং মতভেদে পূর্ণ । কিন্তু তাঁর দৃঢ় মতামত ছিল যে  ভারতবর্ষে বামপন্থী আন্দোলনকে বিকশিত করতে গেলে সিপিআই(এম)-এর কোনও বিকল্প নেই। আন্তঃপার্টি মতাদর্শগত বিতর্কগুলি যখন বাইরে আসত, তাঁর অবস্থান  কখনো বাম দিক থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত হয়নি। 

শেষ এডিট মিটিং ওনার বাড়িতে হয়েছিল, মার্চ মাসে। মিটিং-এর শেষে বলেছিলেন, "আমার বাড়িতে এটাই শেষ সম্পাদকীয় বৈঠক। সামনের সপ্তাহ থেকে আমি নার্সিং হোমে চলে যাচ্ছি। ফিরব কি না জানি না। আপনাদের সকলকে নমস্কার জানাচ্ছি"। 

আমরা এক এক করে বেরিয়ে আসছিলাম বইতে ঠাসা ঘর থেকে। শেষে ছিলাম আমি। একবার পেছন ফিরে দেখলাম, একটা রোগা বৃদ্ধ শরীর নিঝুম হয়ে বসে আছে। একলা। পৃথিবীর শেষ কমিউনিস্ট। একটা বদলে যাওয়া আপোসকামী  পৃথিবীতে নিঃসঙ্গ, নন-কনফরমিস্ট অবস্থানে অনড় থাকতে থাকতে যিনি হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাঁদের মত দানবদের যুগ আজ শেষ। এবার আসছে বামনদের রাজত্ব। ছায়া ক্রমে আসিতেছে। মৃত নগরীর অন্ধ রাজা অয়দিপাউসের এখন ধীরে ধীরে মঞ্চ থেকে প্রস্থান করবার সময় আগত।

Sunday, April 1, 2018

শঠতার পরাকাষ্ঠা- সুমি খান

আপন সবাই
পর হলো সেই
শেয়াল কুমির শঠতায়-
দেখনদারী কব্জাধারী
ভুলায় হঠকারীতায়!


পরের ধনে পোদ্দারী-
পরকে নিয়ে সর্দারী!
পরকে ‘আপন’ দাবি করে
শঠতা- খবরদারি!
কৃতঘ্নতার পরাকাষ্ঠা
হারালো গুণবিচারী!
♥ সুমি খান
বেলা ১১টা, পয়লা এপ্রিল, ২০১৮

Sunday, February 11, 2018

জামায়াতের সংবিধানবিরোধী অবস্থান ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য রীট পিটিশন ও অন্যান্য


কী যে হলো, হঠাৎ একদল হুজুর সংবাদ সম্মেলন করে ‘ফতোয়া’ জারি করে বসলেন।
 এর আগে কোন মৌলানা দলকে তো কখনই ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যাকারী, বাঙালী নারীর ধর্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা বা ডাক্তার, প্রকৌশলী, সেনা, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের হোতাদের বিরুদ্ধে ‘তারা কাফের, তারা জেনাকারী, হত্যাকারী হিসেবে যে স্বাধীনতার তারা বিরুদ্ধাচারণ করেছে, সেই স্বাধীন দেশে তাদের ঠাঁই হবে না,’ বলে এমন কোন ফতোয়া দিতে শুনিনি। তারা তো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বা মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় অপরাধী। ফতোয়া যদি কেউ দিতে উদ্বুদ্ধ হতেন, তবে এদের ফতোয়া দিয়ে রাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি করতেন। মাঝখান থেকে তসলিমা নাসরিন বা দাউদ হায়দারকে তালেবানপন্থী একদল কট্টর জঙ্গীবাদী মোল্লা দেশছাড়া করেছিল ,যে দেশের স্বাধীনতায অর্জনে সেই ঘাতক ফতোয়াবাজ মোল্লাদলের কোন অবদান ছিল না।
তরিকত ফাউন্ডেশন যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের সংবিধানবিরোধী অবস্থান ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম নিষিদ্ধের জন্য রীট পিটিশন করে হাইকোর্টের কাছ থেকে একটি কাঙ্খক্ষত ঐতিহাসিক রায় জনগণকে উপহার দিয়েছে, এজন্য তাঁরা ধন্যবাদার্হ।
কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, মুসলিম দেশগুলোতে বা ভারতেও মুসলিম নারীরাই মুসলিম পুরুষের অন্যায় ফতোয়ার শিকার হয়েছে। আশ্চর্য হলেও সত্য এই যে, এই মৌলানারা কোন নারীর সন্তান, কোন নারীর কাছ থেকে তাঁরা বিবাহিত জীবনের আনন্দ লাভ করেছেন, কেউ বা প্রেম লাভ করেছেন, তাঁদের সবারই আছে পুত্র ও কন্যা, বোন, খালা, চাচি, ফুফু। নয় কি? 

তারপরও দেখা গেল, শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিতা নারীটি তার স্বামীর (স্বামীর মতে) সঙ্গে থাকতে চাইলেও ফতোয়াবাজ মৌলানারা শ্বশুরের সঙ্গে থাকার আদেশ দেয়। রাজিব গান্ধীর উদ্যোগে মুসলিম নারীদের সমঅধিকারের আইনটি দিল্লীভিত্তিক মুসলিম মৌলানাদের দলের প্রবল বাধার কারণে সংসদে পাস হতে পারেনি। শ্বশুর দ্বারা পুত্রবধূ ধর্ষণের চেষ্টা বা ধর্ষণ, এমনকি এ কাজে শাশুড়ি বাধ্য হয়ে স্বামীর হুকুম পালনে সহায়তা করেছেÑএমন অসংখ্য উদাহরণ পর্দার অন্তরালে সঞ্চিত আছে-এ কথা মৌলানারাসহ জনগণ ভালভাবেই জানেন।
 
এ গেল এক ধরনের নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ফতোয়ার ব্যবহার। ফতোয়ার দ্বিতীয় অপব্যবহার অতি উচ্চমাত্রায় হচ্ছেÑএটি হলো, ‘হিল্লা বিয়ে’ ও ‘তালাক’ হওয়া সম্পর্কিত। এ আলোচনায় যাওয়ার আগে আমি দেশের সব বড় আলেম-মৌলানাদের কাছে একটি প্রশ্ন করব, এই একবিংশ শতাব্দীতে যেখানে খ্রিস্টান, ভারতে হিন্দু নারীরা ‘তালাক’-এর ক্ষেত্রে কোন রকম ‘হিল্লা বিয়ে’ নামের সম্পূর্ণ অমানবিক ঘৃণ্য নারীর জন্য দ্বিতীয় প্রকৃতির ধর্ষণের ব্যবস্থা করে যেসব মৌলানা, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কখনও ফতোয়া দিয়েছেন কি? অথবা তাদেরকে বিচারে সোপর্দ করেছেন কি
 জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন নাহার ফতোয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন, যেটি খুব সম্ভব আপীল বিভাগে এখনও আটকে আছে। মৌলানাদের নিজ কন্যাদের ও বোনদের ’আইয়ামে জাহিলিয়া’ যুগের পুরুষের ইচ্ছায় বিবাহিতা নারীকেও অন্য পুরুষের কাছে ‘আইনী’ভাবে ধর্ষিতা হবার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত অপরাধমূলক ফাক-ফোঁকরগুলো বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে। এটা বলাবাহুল্য। গ্রামেগঞ্জে এই ‘তালাক’ নিয়ে ‘হিল্লা’ বিয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ হচ্ছে, তা বন্ধ করা মৌলবী-মোল্লাদের একটি অন্যতম দায়িত্ব। তাঁরা সে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন এবং অন্তত, কন্যা ও বোনদের নারী নির্যাতক ফতোয়াবাজদের হাত থেকে রক্ষা করবেন, অন্যকিছু করার আগে এটাই তাঁদের জন্য কর্তব্য হিসেবে অগ্রগণ্য।
এছাড়াও মৌলানাদের একটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের সংখ্যালঘুদের সংখ্যাগুরুর দ্বারা নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ এর শিকার হওয়া, তাদের বসত-জমি-জীবিকা দখল হওয়া থেকে রক্ষা এবং সর্বোপরি তাদের প্রাণের নিরাপত্তা প্রদান যে সংখ্যাগুরুর দায়িত্ব, এই তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা, পাড়া-মহল্লায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। ইসলামের নবী সঠিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সংখ্যাগুরুর হাতে ‘আল্লাহর আমানত’ হিসেবে গণ্য করতে বলেছেন। তাদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সংখ্যাগুরুর হাতেই, এ কথা মৌলানাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং একই সাথে ইসলাম ধর্মের এ মহৎ সুশিক্ষার পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। মৌলানা সাহেবরা দেশের সংখ্যালঘুর, হিন্দু আদিবাসী ভূমিগ্রাসকারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া নয়, সামাজিক বয়কট, তাদের বিচারে সোপর্দ করতে এগিয়ে আসবেন, এটিই জনগণের প্রত্যাশা।
মৌলানা সাহেবরা  আমেরিকায় বাংলাদেশের একজন ব্যক্তি ওই দেশের একটি অঙ্গরাষ্ট্রের আইনী অধিকার সমকামী বিবাহ সম্পর্কে তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশ করেছেন বলে তাঁকে ‘দেশ ছাড়া’ করবার ফতোয়া দেন, যা দেবার প্রয়োজন ছিল না।
 মানবাধিকারে ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে উচ্চ স্থান দেয়া হয়। একটা কথা না বললে এ বিষয়টা পরিষ্কার হবে না। পশ্চিমা দেশগুলোতে ধর্ম ব্যক্তির চর্চার বিষয় কিন্তু রাষ্ট্র সব ধর্মের এবং আস্তিক-নাস্তিক সবার জন্য অধিকার রক্ষার জন্য আইন তৈরি করে।
যদিও আমেরিকা বা ইউরোপের দেশগুলোতে সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র কোন ধারা যুক্ত নেই। সত্যি বলতে, ওদের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকার চর্চার ব্যাপক বিস্তৃতির সুযোগে আমাদের দেশের বা এশিয়া, আফ্রিকার সন্ত্রাসী, খুনী, জঙ্গী জেহাদীরা পশ্চিমা দেশেই ঠাঁই গেড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী, তাদের সন্তানরা ’৭১-এ অনেক যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানেরা তো পশ্চিমা দেশেই বসবাস করছে। জঙ্গী জেহাদীরা মালয়েশিয়াতেও বসবাস করছে যাদের অনেকেরই টার্গেট ওখান থেকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয়া। এই জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ বেশি জরুরী।
আমাদের তদানীন্তন শাসকদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ময়মনসিংহে সে সময়ে সিনেমা হলে জঙ্গীদের বোমা হামলা, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের ওপর হাওয়াভবনে পরিকল্পিত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত গ্রেনেড হামলাকে পর্যন্ত অবিশ্বাস্য জেনেও আওয়ামী লীগের দ্বারাই সেসব সংঘটিত বলে যে মিথ্যা ভিত্তিহীন অপরাজনীতি, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি করেছিল- সেই মিথ্যা পশ্চিমারা বলে না।
কিন্তু তাদের কোন মিত্রকে যদি কখনোও আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভরশীল, নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে দেখে, তাহলে যুদ্ধাস্ত্র যাদের ব্যবসার প্রথম পণ্য, সেই পশ্চিমারা তাকে কিভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ সাদ্দাম ও গাদ্দাফী।
এমন কি আফগানিস্তানে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো ধ্বংস করার জন্য তারা জন্ম দিয়েছিল ও বিকশিত করেছিল সস্ত্রাস, জঙ্গী দল আল কায়েদা, তালেবান ও লাদেনকে! সে অবমুক্ত দৈত্যকে আবার পরে তাদেরই হত্যা করতে হয়েছে ও হচ্ছে! দুনিয়ার তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ-সব কিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পশ্চিমারা এক পুতুল খেলায় রত, যে খেলায় কোন একভাবে দরিদ্র দেশগুলোকেও খেলতে হচ্ছে!
তবে পশ্চিমা সাধারণ নাগরিকরা যুদ্ধ ও এসবের বিরুদ্ধবাদী এবং ওদের ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রীতি এসবের প্রতি গভীর আস্থা না থাকলে আজ আমাদের লেখক তসলিমা নাসরিন, দাউদ হায়দার, সালমান রুশদীরা প্রাণে বাঁচতে পারত না। খেয়াল করে দেখুন, এই মুরতাদ, কাফের নাম দিয়ে মুসলমান উগ্র জেহাদী মৌলানারাই তাদের কতল করবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে-যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ! মসুলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় সারা দুনিয়ায় কোন কবি লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীকে কত্্ল্যোগ্য দাবি করেনি! এমন কি এখনকার জঙ্গী, ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষিত তরুণরাও মুক্তিযুদ্ধপন্থী এখন প্রগতিশীল ব্লগারদের কতল্যোগ্য ঘোষণা করছে, কতলও করছে!
’৭১-সালের রাজাকার গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীদের উত্তরসূরী বর্তমান যুগের ইংরেজী মাধ্যমে শিক্ষিতদের মধ্যেও যদি জঙ্গী খুনী জন্ম নিতে পারে, মাদ্রাসায় তো কিছু সংখ্যক জন্ম নিচ্ছেই-তাহলে মৌলানারা এই জল্লাদ-সৃষ্টিকারী মসুলিম মৌলানাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও সংশোধনমূলক প্রচার কর্মকা- শুরু করবেন।- এটাই অনেক বেশি কাক্সিক্ষত ও প্রয়োজনীয়। পশ্চিমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সম্মান করার ফলে একজন শিশুকে মা-বাবা জন্মদান করে তবে মালিক হতে পারে না, সে নির্যাতিত হলে পুলিশ ঐ মা, বাবা রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক সন্তানের দেখভালের উপযুক্ত নয় গণ্য করে শিশুকে নিজেদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যায়!
সবশেষে ছোট্ট করে বলতে চাই- সমকামিতা-দোষে দুষ্ট পৃথিবীর সব দেশের সব সমাজ। আমাদের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এসবের হোস্টেল, আরও নানা স্থানকে সমকামিতার কেন্দ্রস্থল বলে চুপিসারে মানুষ সমালোচনা করে। পশ্চিমারা ওটাকে ব্যক্তির নিজস্ব অভিরুচি হিসেবে মান্য করে, সেটাকে গোপন বিষয়ে পরিণত না করতে বিবাহের আইন পাস করেছে আমেরিকার কোন কোন অঙ্গরাষ্ট্র। কে কোথায় এ বিষয়ে একমত পোষণ করল তাতে আপনাদের–আমাদের কোন ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনারা সত্যিই ধর্ষক, সমকামী, বহু বিবাহকারী, যৌতুকদাবিকারী, নারী হত্যাকারী এবং প্রগতিশীল তরুণ-তরুণী হত্যাকারীদের দেশছাড়া করার ঘোষণা দিয়ে দাবি আদায়ের আইনসম্মত কর্মসূচী গ্রহণ করেন, তাহলে সত্যিই দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও উন্নয়নে আপনাদের মৌলানাদের বিপুল ভূমিকা শ্রদ্ধা অর্জন করবে।

Monday, February 5, 2018

আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পিতামহ -আবদুল গাফফার চৗধুরী


প্রবীণ এক বাম নেতার এই সাক্ষাতকারটি প্রথমে আমার চোখে পড়েনি। কোন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাতকারটি বেরোয়নি। একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে বেরিয়েছে, যেটি সচরাচর আমার চোখে পড়ে না। বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে শুনে সাক্ষাতকারটি পড়লাম। দৈনিকটির ৫ অক্টোবরের সংখ্যায় তা বেরিয়েছে। ছোট সাক্ষাতকার। তবু আমার জন্য খুবই আগ্রহোদ্দীপক। কারণ, তিনি আমার কলেজ জীবনের খুবই প্রিয় শিক্ষক। পরবর্তীকালে তিনি হন দেশের এক সময়ের বৃহত্তম বাম গণতান্ত্রিক সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এখন বিরানব্বই বছর বয়স। তাঁকে এখন বলা চলে আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পিতামহ। তাঁকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি।
ন্যাপের সেই সুদিন এখন আর নেই। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এখনও দলের সভাপতি আছেন বটে, বয়সাধিক্যে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবু এই বয়সেও তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনা ও পরামর্শ দ্বারা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। তাঁর কথা কেউ শুনছে কী শুনছে না, তার পরোয়া করছেন না। তিনি এখনও আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি বাতিঘর। ৫ অক্টোবর ঢাকার বহুল প্রচারিত দৈনিকটিতে আলাপচারিতা বিভাগে প্রকাশিত তাঁর দেয়া সাক্ষাতকারটিতেও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে তাঁর প্রকৃত সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ জন্যই সাক্ষাতকারটি আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে পড়েছি।
এই সাক্ষাতকারটি পড়তে গিয়ে আমি এমন একটি তথ্যের মুখোমুখি হয়েছি, যা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো নব্বই-উর্ধ প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকে বের না হলে আমার পক্ষেও বিশ্বাস করা সহজ হতো না। এ কথা অস্বীকার করব না, আমি ড. কামাল হোসেন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কঠোর সমালোচক। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের। কারণ, তিনি এক সময় বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুই তাঁকে হাত ধরে টেনে এনে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন। পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতির অবশ্যই সমালোচনা, এমনকি বিরোধিতাও করতে পারেন। কিন্তু হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিদ্বেষে অন্ধ হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী চক্রান্তের শিবিরে গিয়ে সরাসরি যোগ দিতে পারেন, এটা আমার কাছেও ছিল অকল্পনীয়।
ঢাকার দৈনিকটির ৫ অক্টোবরের সংখ্যায় প্রকাশিত ‘আলাপচারিতায়’ দেশের বয়োবৃদ্ধ প্রবীণতম নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, ‘আমি যে রাজনীতি করি, তা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়। এটি সরল রাজনীতি। আমি ষড়যন্ত্রের মধ্যে নেই। ড. কামাল হোসেন এসেছিলেন আমার কাছে জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে। আমার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্যে নেই। আমি রাজি হইনি। আমার রাজনীতির অর্থ হচ্ছে সত্য কথা বলা, সড়ক দিয়ে হাঁটা এবং ডাল দিয়ে খাবার খাওয়া। ড. কামাল হোসেন ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক। সে কারণে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।’
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের ‘আলাপচারিতায়’ এই বক্তব্যটি দেশের অনেক মানুষের কাছে ড. কামাল ও ড. ইউনূস জুটির বর্তমান কার্যকলাপ ও আচার-আচরণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেবে। আমি নিজেও দীর্ঘদিন যাবত এই জুটির কার্যকলাপ ও বক্তৃতা-বিবৃতির সমালোচনা করলেও সবসময় ভেবেছি, এরা শেখ হাসিনার প্রতি প্রচ- বিরাগবশত দেশের গণতান্ত্রিক শিবিরের যে ক্ষতি করছেন, তা হয়ত নিজেরাও উপলব্ধি করছেন না। কিন্তু তাঁরা যে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত গোঁ চরিতার্থ করার জন্য সরাসরি ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং এতটা নিচে নেমে যেতে পারেন, তা কল্পনাও করিনি। আওয়ামী লীগ রাজনীতির একটা বড় দুর্ভাগ্য, এই রাজনীতিতে এক মোশতাকের তিরোভাব না ঘটতেই আরেক মোশতাকের আবির্ভাব হয়।
একটি তথাকথিত ‘জাতীয় সরকারের রূপরেখা’ পকেটে নিয়ে ড. কামাল হোসেন দেশে যা করে বেড়াচ্ছেন, তা যে ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ এটা বুঝতে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো রাজনীতির বটবৃক্ষের কিছুমাত্র অসুবিধা হয়নি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ড. কামাল হোসেনকে বলে দিয়েছেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের মধ্যে নেই’ এবং তাদের ষড়যন্ত্রে দোয়া (সমর্থন) দিতেও রাজি নন। শুধু অধ্যাপক মোজাফ্ফর নন, ড. কামাল হোসেন নাকি তাঁর জাতীয় সরকারের রূপরেখা (যে সরকারে তিনি কিংবা ড. ইউনূস প্রধান হবেন) নিয়ে দেশের আরও কয়েকটি ডান এবং বাম গণতান্ত্রিক দলের নেতার দরজায় গিয়ে দোয়া লাভের জন্য ধর্ণা দিয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই একবাক্যে না বলে দিয়েছেন।
শেষপর্যন্ত তিনি সম্ভবতঃ তাঁরই মতো জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত কয়েকজন নেতাকে তাঁর বিতর্কিত রাজনীতিতে সঙ্গী করতে পেরেছেন। এরা হলেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। এদের অধিকাংশই সচরাচর নির্বাচনে জেতেন না। কারও কারও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু একবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদে জিতিয়ে এনেছিলেন। তারপর আর কোনও নির্বাচনে জেতেননি। শেখ হাসিনা তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন। সেখানেও বিএনপির বিচারপতি সাত্তারের কাছে হেরেছেন। গত নির্বাচনে তাঁর গণফোরামের প্রার্থীদের কারও জামানত রক্ষা পায়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রেকর্ড তো অনুরূপ উজ্জ্বল। তেজারতিতে তিনি দক্ষ। তবুও রাজনীতিতে ঢোকার খুব শখ। কিন্তু রাজনৈতিক মূলধন কিছুই নেই। ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনের ত্রিসীমানায় তিনি ছিলেন না। গরিবের নামে ব্যবসা করে নিজে বিরাট ধনী হয়েছেন। গরিবের বাড়িতে ভুলেও যান না। তাঁর জেট সেট লাইফ। রাজারাজরাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের তিনি বিশ্বস্ত অনুচর।
ফলে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের প্রভুরা তাঁকে খুশি হয়ে অর্ধেক নোবেল পুরস্কার দিয়েছে এবং এখনও বড় বড় পুরস্কার দিচ্ছে। অর্ধেক নোবেলজয়ী হওয়ার পর আনন্দের এভারেস্ট চূড়ায় উঠে ওই নোবেল পুরস্কারকে মূলধন করে তিনি নূতন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। এই দল গঠনের এক মাসের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর দল শেষপর্যন্ত ‘কাকতাড়ুয়ার দল’ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি রাজনীতি করার আগেই জনগণ কর্র্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাজনীতি ছাড়েন।
রাজনীতির সদর দরজা দিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারেন না, তাঁরা পেছনের দরজা দিয়ে সেই ক্ষমতায় যেতে চাইবেন, তা আর এমন কী বিস্ময়ের ব্যাপার। তবে কামাল হোসেনদের ক্ষেত্রে বিস্ময়ের কথা এই যে, তাঁরা গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছ রাজনীতি এ সবের কথা বড় বেশি বলেন। গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছ রাজনীতির পথ তো হচ্ছে জনগণের কাছে যাওয়া, স্বচ্ছ, বাস্তব ও সুস্থ কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার ম্যান্ডেট চাওয়া। সে জন্যে নির্বাচনে যাওয়া।
ড. কামাল হোসেনরা গণতন্ত্রের এই সদর দরজা দিয়ে না হেঁটে কেন পেছনের দরজা খুঁজছেন এবং তথাকথিত জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখা (যেটি আসলে ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা) পকেটে নিয়ে একশ্রেণীর প্রবীণ-নবীন রাজনীতিক নেতার বাড়িতে ধর্ণা দিয়ে তাদের দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছেন? জনগণ কর্তৃক বার বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই জাতীয় সরকার নামক একটি অনির্বাচিত সরকার গঠন দ্বারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ভূতটি ড. কামাল হোসেনদের মাথায় চেপেছে।
মজার ব্যাপার এই যে, মাত্র গত ২৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বরিশালে এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘...এবার দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে ছাড়ব।’ এটা খুবই ভাল কথা। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে যদি কামাল হোসেন সাহেবরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারেন, তাহলে তো বলব, তাঁরা গণতন্ত্রের পথেই হাঁটছেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জাতীয় সরকার তো এক কথা নয়।
ড. কামাল হোসেনরা কোনটি চান? যদি সত্যিই তাঁরা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করেন, তাহলে এই দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি চলতি মাসেই যে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে, সে আন্দোলনে যোগ দিন। তা না করে পর্দার আড়ালে আবার জাতীয় সরকারের খেলা খেলছেন কেন? জনগণের কাছে না গিয়ে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো প্রবীণ নেতাদের দরজায় গিয়ে গোপন ধর্ণা দিচ্ছেন কেন? আবার জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে নিজে কিংবা ড. ইউনূসের সেই অনির্বাচিত জাতীয় সরকারের প্রধান হওয়ার আগাম ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন কেন?
ড. কামাল হোসেন ও ড. ইউনূসের জুটির নেতৃত্বে চালিত তথাকথিত সুশীল সমাজের মনস্তত্ত্বটা বুঝতে কারোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। জনগণের আস্থা তাদের ওপর নেই, জনগণ কখনই তাদের ভোট দেবে না এবং নির্বাচন এলে যত খারাপ বা মন্দ হোক আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকেই তারা ভোট দেবে। দেশের মানুষ এই দল দুটিকে বোঝে। এই দুই দলের নেতারা যত অপরিশীলিত ভাষায় বক্তৃতা দেন, তার অর্থ তারা বোঝে। আর ড. কামাল হোসেন বা ড. ইউনূস সাহেবরা গণতন্ত্রের অভিধান থেকে যে সব ভাল ভাল কথা বেছে নিয়ে জনগণের নাগালের বাইরের এভারেস্ট চূড়া থেকে কথা বলেন, তার অর্থ তারা বোঝে না। সে সব কথায় আস্থা স্থাপনও করে না।
অনির্বাচিত জাতীয় সরকার গঠন ড. কামাল হোসেনের বহুদিনের একটি পেট থিয়োরি। বার বার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়ে এবং জনগণকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রবল রাজনৈতিক হতাশা থেকে সম্ভবতঃ তাঁর মনে এই থিয়োরিটির জন্ম। বহুকাল আগে তিনি তাঁর ‘সুশীল সমাজ’ দ্বারা এই থিয়োরিটি একবার জনসমক্ষে এনেছিলেন। দেশের মানুষ এই গণঅধিকার বর্জিত সরকারের থিয়োরি গ্রহণ করেনি। তখন এক বাম রাজনীতিক প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘গু মড়াবৎহসবহঃ, মড়ড়ফ ড়ৎ নধফ, রং নবঃঃবৎ ঃযধহ ঁহবষবপঃবফ মড়ড়ফ মড়াবৎহসবহঃ’ (আমার সরকার, ভালোমন্দ যা-ই হোক, অনির্বাচিত ভালো সরকারের চাইতে ভালো)।
নিজের পছন্দের, নিজের ভোটাধিকার দ্বারা গঠিত সরকার মন্দ হলেও জনগণ সেই সরকারই চায়। অন্যের পছন্দের এবং অন্যদের ইচ্ছায় গঠিত সরকার ভালো হলেও জনগণ তা পছন্দ করে না। এটা গণতন্ত্রের ইতিহাসের আদি সত্য।
ড. কামাল হোসেনদের অনেক বিদ্যাবুদ্ধি। কিন্তু এই সত্যটা তাঁরা বোঝেন না। আর বোঝেন না বলে জনগণের কাছে পৌঁছতেও পারেন না। এদিকে, ক্ষমতায় যাওয়ার অদম্য লিপ্সা তাদের তাড়িত করে বেড়ায়। তখন ক্ষমতার লোভে বিদেশী সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে তাঁরা দেশ এবং গণতন্ত্রের সমূহ সর্বনাশ করেন। আমার আশঙ্কা, ড. কামাল হোসেনদের বর্তমান ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দেশের জন্য এক অকল্যাণকর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
ঢাকার বহুল প্রচারিত দৈনিকটিতে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের আলাপচারিতার বক্তব্য পাঠের আগেই আমার এক লেখায় ড. কামাল হোসেন ও ড. ইউনূসের বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্কে আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করেছিলাম। লিখেছিলাম, বাংলাদেশে কারজাই অথবা জারদারি মার্কা একটি সরকার অনির্বাচিত জাতীয় সরকার হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য যে তৎপরতা চলছে, সেটি সফল করার লক্ষ্যে এই সুশীল চক্রের এক নেতা ইউরোপ-আমেরিকার রাষ্ট্র নেতাদের দরবারে তাদের সাহায্য ও সমর্থনের আশায় ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে, অন্য নেতা দেশের ভেতরে সেই জাতীয় সরকারের নীলনক্সায় রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাইরে তাঁরা দেখাচ্ছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সমর্থন দানের জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা করছেন।
এরা হয়ত ভাবতে পারেননি, দেশের বাম রাজনীতির এক বটবৃক্ষ নেতা এমন সোজা সরল ভাষায় তাদের গোপন তৎপরতার কথা ফাঁস করে দেবেন এবং তাকে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আখ্যা দেবেন। ড. কামাল হোসেন জানেন কিনা জানি না, তিনি রাজনীতির রেসের মাঠে পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত ঘোড়ায় পরিণত হয়েছেন। বিদেশীরা তাঁকে নিয়ে খেলতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় বসাবে না। তিনি এখন তাদের বাতিল ও ব্যর্থ নেতাদের তালিকায় আছেন। তিনি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী থেকে কাদের সিদ্দিকী পর্যন্ত যাদের সঙ্গে জুটিয়েছেন তাঁরাও এই তালিকাভুক্ত নেতা। এই দলে নতুন মুখ ড. ইউনূসের। কিন্তু মাটিতে তাঁর পা নেই। তিনি শাখামৃগের মতন। শাখামৃগের ওপর কেউ নির্ভর করে না। তাকে কলা দেখিয়ে ব্যবহার করে মাত্র।

লন্ডন, ৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০১৩ ॥