Wednesday, October 22, 2014

অভ্র সেরে উঠবে বলে আত্মবশ্বিাসী দেশের শীর্ষ চার চিকিৎসক -সুমি খান



 ২২ সেপ্টেম্বর ,২০১৪ বুধবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিট।  আমি যেন হাওয়ায় উড়ছি। অভ্র’র কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিলাম । অভ্র এখন অনেক ভালো ।   আরো অনেকটা সেরে উঠবে- আমায় আত্মবিশ্বাসী করে দিলো মেডিক্যাল বোর্ড ।

মেধাবী ক্রীড়াবিদ অভ্র’র হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস এবং টিউবারকিউলোসিস (টিবি) বা যক্ষা জটিল হয়ে গেছে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ক্রনিক লিভার ডিজিজ এর কারণে লিভার এনলার্জ হয়ে গেছে। লিভারের এই পরিবর্তন অনেকটা স্থায়ী হয়ে গেছে বললেন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সেলিমুর রহমান।  লিভার এর জটিলতার কারণে ফুসফুসে পানি আসতে পারে এমন সন্দেহ অধ্যাপক এ বিএম আব্দুল্লাহর । এর সাথে একমত হয়েছেন বোর্ডের অন্য তিন সদস্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ।  চট্টগ্রাম এবং কোলকাতায় টিবি ‘র ওষুধ দেয়া হয়েছে, কোলোনোস্কপি করা হয়েছে। সেসব ওষুধ  এতোদিন কাজ করছিলো না।  হেপাটাইটিস বি’ আক্রান্ত লিভারের জন্যে সেসব ওষুধ ক্ষতির কারণ হতে পারে আশঙ্কায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিবি’র ওষুধ বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে অভ্র’র শরীরে  টিবি কোন্ অবস্থায় আছে ,সেটা পরীক্ষা করা হবে । এর পর  টিবি’র জন্যে কোন  ওষুধ দেয়া হবে কিনা ভাবতে হবে।  কারণ, লিভারের সমস্যার কারণে  অভ্র সব রকমের ওষুধ সইতে পারবে না। তার সহনশীলতা অনুযায়ী ভেবে চিন্তে ওষুধ নির্দারণ করতে হচ্ছে । গত কয়েকদিন আগে প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত অভ্র‘র জ্বর কমানোর জন্যে প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহ ম্যালেরিয়ার ওষুধ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে ডা. সেলিমুর রহমান বলেন , তিনি অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক। তিনি ছাড়া কেউ এই ওষুধ দেবার কথা ভাবতে পারতেন না। তাঁর পরামর্শে ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেয়াতে অভ্র এখন অনেক সু¯থ বললেন অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান  । সেরেব্রাল থ্রম্বসিস সারাতে কার্ডিনেক্স গ্রুপের ওষুধ দেয়া হয়েছে।  এই ওষুধ চলবে। এতে  অভ্র’র ব্রেনে জমাট বাঁধা রক্ত তরল হয়ে যাবে ধীরে ধীরে ।   যথাযথ ওষুধ এবং চিকিৎসা পেলে  সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অভ্র সুস্থ অনুভব করবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসবে বলে প্রচন্ড আশাবাদী মেডিক্যাল বোর্ড ।

অভ্রজ্যোতি মজুমদার কে সিসিইউ থেকে বের করে দেবার জন্যে চরম দুর্ব্যাবহার করতে থাকেন সিসিইউ’র চিকিৎসক, নার্স সবাই। অতীষ্ঠ এবং অসহায় হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রান্ত থেকে এ প্রান্ত ছুটতে থাকি। ভাইস চ্যান্সেলর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মিটিংয়ে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাঁর দেকা পেলাম না। তাঁর পিএস সালাউদ্দিন বাইকে ঘিরে ধরেছেন অনেক লোক। সবার কথা শুনতে হবে। একের পর এক ফোন করে তিনি তাদের রোগীদের ব্যবস্থা করছেন। এক ফাঁকে আমার সাথেও কথা বললেন । বললাম কেবিনে নেবার কথা। সালাউদ্দিন ভাই বললেন , কেবিন কালি না থাকলে নিয়ম অনুযাযী যেখানে আছে সেখানেই থাকবে অভ্র। বললাম, কিন্তু সিসিইউ’র ডাক্তার –নার্স কেউ তো অভ্যকে এক মুহ’র্তের জন্যেও রাখতে চাইছে না। একটু কথা বলেন কেবিনের জন্যে, প্লীজ। “ কেবিনের দায়িত্বে থাকা ডা. আফরোজার সাথে সালাউদ্দিন ভাই বিনয়ের সাথে বললেন অভ্য’র জন্যে একটি কেবিনের ব্যবস্থা করতে । এর আগের দিন সকাল থেকে আমি আফরোজা আপার সাথে অনেকবার কথা বলেছি অভ্র’র কেবিনের জন্যে। তিনি আমাকে  কথা দিয়েছেন খালি হলেই ব্যবস্থা করবেন। এর আগের দিন একটি ভিআইপি কেবিন খালি ছিল। একজন বিচারকের স্ত্রী’র জন্যে সেটা কনফার্ম করা হয়ে গেছে।  কিন্তু সিসিইউ’র ডা. তোফাজ্জল এবং কয়েকজন নার্স বয়ংকর দুব্যাবহার করছেন অভ্র এবং তার মা মমতা মজুমদারের সাথে। ডা. তোফায়েল বললেন ,“ আপনি কারো বাসায় বেড়াতে গেলে , তারা অপছন্দ করলে কী করবেন?” অভ্র’র মা নিরীহ ভাবে জবাব দিলেন ,“চলে আসবো ।” ডা. তোফায়েল বললেন, এখানেও আপনাদের কেউ পছন্দ করছে না। চলে যান। “ মমতা ‘দি অসহায় ভাবে আমাকে বারবকার বললেন যেন ব্যবস্থা করি। কিন্তু  হাসপাতালের কোথাও তো বেড নেই, কেবিন ও খালি হয়নি। আমি কোথায় নেবো? কোথায় যাবো অভ্রকে নিয়ে? দুপুরে অভ্র’র ফাইল নিয়ে ছুটে যাই পরিচালকের কক্ষে। বিস্তারিত আগেই বলেছিলাম তাকে। তিনি বললেন “টিবি রোগীকে কী করে সিসিইউ তে রাখবো আমরা? এটা একটা এথিক্যাল ক্রাইম।” আমি মরিয়া হয়ে বললাম, “আমি  আপনাদের অনুনয় বিনয় করে ভর্তি করেছি দেশের মেধাবী সন্তান  অভ্রকে বাঁচাতে । এই ‘ক্রাইম’ এর দায় আমি  মাথা পেতে নিলাম। কিন্তু , স্যার, মানবিক দৃষ্টিতে বলেন, আপনারা কি তাহলে অভ্রকে রাস্তায় ছঁড়ে ফেলবেন? ফাইল টা একটু দেখে তার শারীরিক অবস্থা জেনে বলেন ।“  পরিচালক বললেন,“ আসলে তাকে আইসোলেটেড কক্ষে রাখা উচিত।  তবে যেদিন ভর্তি হয়েছে, তার পরদিন ই তার জন্যে  সিসিইউ থেকেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা উচিত ছিল। এটা আপনার উদ্যোগ নেয়ার কথা না। ” আরো অনেক গল্প  জমা রয়েছে।

তবে আশার কথা হলো ,অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভুইয়া।   এই বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহ, ডীন, মেডিসিন বিভাগ
সদস্য ১. অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান  হেপাটোলজি বিভাগ, ২. অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুর রহমান রেসপারেটরি মেডিসিন বিভাগ, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নিউরোলজি বিভাগ ।

Tuesday, October 21, 2014

মৃত্যুর পরেও রয়ে যায় জীবন:জার্মান গবেষকদের দাবি

মৃত্যুর পরেও রয়ে যায় জীবনের কিছু পর্যায়! জার্মানির কিছু মনোবৈজ্ঞানিক ও ডাক্তার ডঃ অ্যাকেরম্যান ও তাঁর দলদের একটি দল এমনটাই দাবি করেছেন। বার্লিনের Technische বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদের দাবি ক্লিনিকাল বিবিধ পরীক্ষার মাধ্যমেই নাকি তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
'প্রায়-মৃত্যুর অভিজ্ঞতা' এই নতুন মেডিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন গবেষকরা। এই পরীক্ষায় প্রায় ২০ মিনিট কোনও রোগীকে ক্লিনিকালি মৃত অবস্থায় রেখে ফের জীবদ্দশায় ফিরিয়ে আনা যায়।
গত চার বছর ধরে ৯৪৪ জন বিতর্কিত এই পদ্ধটি নিজেদের উপর প্রয়োগ করতে রাজি হয়েছেন। তাঁদের উপরই পরীক্ষা চালিয়েছেন জার্মান গবেষকরা। epinephrine ও dimethyltryptamine একটি মিশ্রণ প্রয়োগ করে রোগীদের ক্লিনিকাল মৃত অবস্থায় নিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। যদিও এর পর ফের জীবদ্দশায় ফিরে এসে পরীক্ষাধীন ব্যক্তিদের শরীরে কোনও ক্ষতিই হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অটোপালস নামক cardiopulmonary recitation (CPR) মেশিনের সহয়তায় পরীক্ষাধীন ক্লিনিকালি মৃত ব্যক্তিদের পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।
এর আগে প্রায়-মৃত্যু অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত বহু হাইপোথিসিস প্রকাশ পেয়েছে বিবিধ মেডিক্যাল জার্নালে।কিন্তু ডঃ অ্যাকেরম্যান ও তাঁর দল মৃত্যুর পরের জীবনের অস্তিত্বকে মন ও শরীরের মধ্যেকার দ্বৈতবাদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
এই গবেষণায় পরীক্ষাধীন ব্যক্তিদের ক্লিনিকাল ডেথ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সামান্য ক্ষেত্রেই সেই অভিজ্ঞতায় মিল পাওয়া গিয়েছে। অনেকে জানিয়েছেন তাঁদের মনে হয়েছে শরীর থেকে তারা ভিন্ন হয়ে গেছেন। নিজেদেরকে হালকা, নিরাপদ মনে করেছেন অনেকে। কেউ কেউ জানিয়েছেন প্রশান্ত এক আলোর সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।

Saturday, October 18, 2014

দাসত্বের শিকার বাংলাদেশিদের জেলে পাঠাতে চায় থাইল্যান্ড


থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রির জন্য আটকে রাখা হয়েছিল যে বাংলাদেশিদেরতাদের নিয়ে কি করা হবে তা নিয়ে থাই সরকারের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়েছে
আন্দামান উপকুলের কাছে থাইল্যান্ডের জঙ্গল থেকে স্থানীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি এদের উদ্ধার করেন
ব্যাংকক থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথান হেড জানানথাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পুলিশ কর্মকর্তারা এখন এদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে কারাগারে পাঠাতে চাইছে
গহীন জঙ্গলের বন্দীদশা থেকে যে ১৭০ জনকে থাই কর্মকর্তারা উদ্ধার করেনতাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। এদেরকে ভালো বেতনের চাকুরিতে বিদেশে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর তাদের মাদক খাইয়ে হাত-পা বেঁধে নৌকায় তোলা হয়। এরপর থাইল্যান্ডে নিয়ে তাদেরকে পাচারকারীরা জঙ্গলে তিন সপ্তাহ আটকে রাখে। সেখানে বন্দী অবস্থায় অনেককে মারধোর করা হয়অনাহারে রাখা হয়
বিবিসির জোনাথান হেড জানানউদ্ধার পাওয়া বাংলাদেশিদের অনেকেই শারীরিক  মানসিকভাবে প্রায় ভেঙ্গে পড়েছেন। তাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় অনেককে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়। এরা এখন যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চাইছেন
থাইল্যান্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা সেখানকার জঙ্গলে দাস বেচা-কেনা করছে। এদেরকেও সেই উদ্দেশ্যেই ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। তারা এই পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন
বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথান হেড জানানস্থানীয় কর্মকর্তারা যাই বলুনথাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। যারা এই পাচারকারী চক্রের হোতাতাদের অনেকেই প্রভাবশালী এবং উচ্চ পর্যায়ে তাদের ভালো যোগাযোগ আছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে পুলিশের 
মধ্যে অনীহা আছেঅতীতে  ধরণের পাচার চক্রের শিকার হয়েছিলেন যারাতাদের উদ্ধারের পর অবৈধ অভিবাসী হিসেবে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এদের আবার পাচারকারীদের কাছেই বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল
উদ্ধার পাওয়া এই বাংলাদেশিদের ভাগ্যে এখন তাই ঘটতে চলেছে কিনাসেটাই এখন প্রশ্ন
প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ
এদিকে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেনতারা ইতোমধ্যে এই বাংলাদেশিদের ব্যাপারে থাইল্যান্ডের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই বাংলাদেশিদের আপাতত থাংরা প্রদেশে রাখা হয়েছেতিনি আরও জানানযে ১৩২ জনকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়তাদের মধ্যে ১২২ জনই বাংলাদেশি বলে থাই কর্তৃপক্ষ একটা প্রাথমিক ধারণা দিয়েছেন। বাকীরা মিয়ানমারের নাগরিক হতে পারেনযারা সচরাচর রোহিঙ্গা নামে পরিচিত
শহীদুল হক বলেন ধরণের মানব পাচারের ঘটনা আগেও ঘটেছে। থাইল্যান্ডমালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশকে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয়। এরা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের নাগরিকদের থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় পাচারের চেষ্টা করেবাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা যাতে উদ্ধারপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জাতীয়তা যাচাই করতে পারে সেজন্যে থাই কর্তৃপক্ষের কাছে তারা অনুমতি চেয়েছেন
শহীদুল হক বলেনযদি যাচাই করে দেখা যায় যে এরা বাংলাদেশিতখন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেনথাই কর্তৃপক্ষ এদেরকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবে না বলেই তিনি আশা করেনআন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মেনেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক উদ্যেগ নেয়া হবেবিবিসি জানতে পেরেছে যে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে একটি চক্র রয়েছে - যারা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশীদের বিভিন্ন খামারে বা মাছধরার ব্যবসায় ক্রীতদাসের মতো কাজ করাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এমন ১৩০ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে সেখানকরা কর্তৃপক্ষ।
বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন হেড থাইল্যান্ডে এমন একটি জায়গা ঘুরে দেখেছেন, যেখানে অন্তত ১৩০ জন বাংলাদেশী পুরুষকে উন্নত চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরা সবাই মানব পাচারের শিকার।
বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাদেরকে ওষুধ খাইয়ে, হাত-পা বেঁধে নৌকায় করে থাইল্যোন্ড নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রায় ৩০০ বন্দী ছিল।
এর পর তাদেরকে থাইল্যান্ডের উপকুলে জঙ্গলের মধ্যে লুকানো কিছু ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং দাস-শ্রমিক হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়।
উদ্ধার পাবার পর আবদুর রহিম নামের একজন বাংলাদেশী বলছিলেন, তাদের জঙ্গলে নিয়ে রাখা হয়েছিল, কোন খাবার দেয়া হয় নি। ১০ দিন তারা শুধু পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন। তিনি বলেন, থাই দালালরা তাকে এমন মারধর করেছে যে এখনো তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন।
বিবিসি জানতে পেরেছে যে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে একটি চক্র রয়েছে - যারা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশীদের বিভিন্ন খামারে বা মাছধরার ব্যবসায় ক্রীতদাসের মতো কাজ করাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে এমন ১৩০ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে সেখানকরা কর্তৃপক্ষ।
বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন হেড থাইল্যান্ডে এমন একটি জায়গা ঘুরে দেখেছেন, যেখানে অন্তত ১৩০ জন বাংলাদেশী পুরুষকে উন্নত চাকরির লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এরা সবাই মানব পাচারের শিকার।
বাংলাদেশ ছাড়ার পর তাদেরকে ওষুধ খাইয়ে, হাত-পা বেঁধে নৌকায় করে থাইল্যোন্ড নিয়ে যাওয়া হয়। ওই নৌকায় প্রায় ৩০০ বন্দী ছিল।
এর পর তাদেরকে থাইল্যান্ডের উপকুলে জঙ্গলের মধ্যে লুকানো কিছু ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং দাস-শ্রমিক হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়।
উদ্ধার পাবার পর আবদুর রহিম নামের একজন বাংলাদেশী বলছিলেন, তাদের জঙ্গলে নিয়ে রাখা হয়েছিল, কোন খাবার দেয়া হয় নি। ১০ দিন তারা শুধু পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলেন। তিনি বলেন, থাই দালালরা তাকে এমন মারধর করেছে যে এখনো তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন।
পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েকজন
সম্ভবত এদের ক্ষেত-খামারে বা মাছধরার নৌকায় কাজ দাসশ্রমিক হিসেবে করানো হয়।
তিন সপ্তাহ বন্দী থাকার পর একজন স্থানীয় জেলা প্রশাসন কর্মকর্তা - যিনি মানবপাচার রোধের জন্য কাজ করছেন - তাদের উদ্ধার করেন।
তবে অ্ন্য আরো ৬০ জন এখন নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরেই মানবপাচার একটি বড় সমস্যা।মাছ ধরার নৌকাগুলোতে দাস শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ ওঠায় ইউরোপে সি-ফুড জাতীয় খাদ্যের বাজার হারাচ্ছে থাইল্যান্ড। এ ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বছরই মানবপাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল থাই সরকার।
কিন্তু পাচার হওয়া বাংলাদেশী উদ্ধারের ঘটনার পর ধারণা করা হচ্ছে যে, দেশটিতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে।

৯ জ্ঞানপাপী শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত

শহীদ মিনারে এক সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ ৯ জনকে  কয়েকটি সংগঠন অবাঞ্ছিত ঘোষণা দেয়। অবাঞ্ছিতদের তালিকায় রয়েছেন- কলামিস্ট ও টিভি টকশোর পরিচিত মুখ ড. মাহফুজ উল্লাহ, বিশিষ্ট কলামিস্ট কবি ফরহাদ মজহার, ইংরেজি দৈনিক নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, প্রফেসর ড. আমেনা মহসিন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সাপ্তাহিক-২০০০ পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তজা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. তুহিন মালিক। 
দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। সমাবেশ থেকে ওইসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশদ্রোহী পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে আনার কথা বলায় এসব জ্ঞানপাপীদের শহীদ মিনারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।  
যুদ্ধের সময় রাজাকাররা প্রকাশ্যে আমাদের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এসব জ্ঞানপাপীরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন টেলিভিশন ও তাদের লেখনিতে দেশের বিরোধিতা করে আসছে।
 ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শহীদমিনারের সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহ্বায়ক কামাল পাশা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুল ইসলাম সুমন, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী সাজু, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক তানভীর রুশমত, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মিঠু, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, স্লোগান ৭১, প্রাণের ৭১, সিপি গ্যাং ও চারুশিল্পীরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও লালনকারী সকল সংগঠনসমূহকে নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্ভট অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভাসহ ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সভা ও সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। 

Friday, October 17, 2014

কম বয়সে বিয়ে নারীর উন্নয়নে বাধা

সম্প্রতি লন্ডনে কন্যাশিশু সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজের অঙ্গীকারের কথা দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। ওই বৈঠকে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ছেলেদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ এবং মেয়েদের ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করা যায় কিনা, তা পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ (অনুশাসন) দেয়া হয়। অর্থাৎ ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ এবং ১৮ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে ১৮ এবং ১৬ করা যায় কিনা এই বিষয়ে মতামত জানতে চান। বাংলাদেশে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের বয়েস কমানো নিঃসন্দেহে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেই দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন মহলে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইতিমধ্যেই বিয়ের বয়স কমানোর এই প্রস্তাবকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ হবে বলে মনে করছে।

এছাড়া এর ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে নির্দিষ্ট বিয়ের বয়সের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার থেকে সরে আসবে। এমনিতেই অধিক জনসংখ্যার দেশ হিসেবে বাল্যবিয়ের হারের দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর বাল্যবিবাহের জেরে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হারের পরিমাণও অত্যধিক উল্লেখযোগ্য।
 প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশের মেয়েদের বিয়ে এবং সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজস্ব মতের কোন মূল্য নেই। কথাটি মোটেই অসত্য নয়। এতদিন এটি আমাদের কালচার ছিল। এই দেশে কন্যার জন্য পাত্র বাছাই করে তাদের পিতা-মাতা বা অভিভাবক শ্রেণী। ভারতীয় উপমহাদেশে কন্যাসন্তান জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই পিতা-মাতা এবং পরিবার একটি অদ্ভুত অদৃশ্য দায়ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে। অহর্নিশ এই চিন্তা পিতা-মাতার রাতের ঘুম দিনের শান্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। কবে এই কন্যাসন্তানটিকে ভাল ঘরে ভাল বরে পাত্রস্থ করা হবে। বাংলদেশের পিতা-মাতাও এই দায়বদ্ধতা থেকে যত দ্রুত সম্ভব তাদের কন্যাসন্তানটিকে বিয়ে দিয়ে কন্যার একটি নিশ্চিত নিরাপদ ঘর দিতে চায়। এটি খুব খারাপ ব্যবস্থা তা কিন্তু নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাদের এই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা কন্যা দায় থেকে নিজেরা ভারমুক্ত হতে পারে ঠিক। কিন্তু তাদের কন্যাসন্তানটি যে অকালে পরিবার, সমাজ, সংসার এবং সন্তান জন্মদানের এক ভারবাহী যন্ত্রতে পরিণত হয়ে পড়ে তা তারা বেশ ভাবেই জানে বোঝে।


 বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের দেশ (কিছু নগর-রাষ্ট্র বাদে), এবং উচ্চ জনসংখ্যার চাপে আমাদের জীবনযাত্রা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ট্রাফিক জ্যাম, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস, পরিবেশ সব কিছুই মারাত্মক হুমকির মুখে। সে ক্ষেত্রে কন্যাসন্তানটিকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজের অবস্থানে দৃঢ় হতে শিক্ষা না দিয়ে বরং পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে বোঝা করে তোলা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের নারীবান্ধবনীতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অনেক নারীই আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। এমনকি স্বল্পশিক্ষিত কর্মজীবী নারীরাও বিয়ে করার ক্ষেত্রে সময় নিয়ে ভাবছে। তারা নিজেদের জীবনে যে কোন অকাল দুর্ঘটনাকে পরাস্ত করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মানসিক, শারীরিক, আর্থিক দিক চিন্তা করেই তবে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ভাবছে। বড় কথা হলো গত কয়েক বছরে নারী উন্নয়ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। পরিবার, শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে বাঙালী নারীরা শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে অসামান্য দক্ষতা ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। তারাও ছেলে সন্তানের মতো পিতা-মাতার পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে। সহযোগী বন্ধু হিসেবে স্বামীর পাশে থাকছে। যদিও এই সংখ্যাটি এখনও সমান নয়। কিন্তু একবারে হিসেবের বাইরেও নয়। নারীর ক্ষমতায়নের সঠিক সফল উন্নয়নের জন্য বিশ্বের কাছে অন্য মাত্রার ভূয়সী প্রশংসা এবং সাধুবাদ পেয়ে আসছে বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে এই প্রস্তাব একটি বিরাট খারাপ এবং ভুল প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


 বিয়ে ঠিক কোন বয়সে করলে মানুষ্য জাতির জন্য ভাল হবে আজ পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞানীরা তা নির্ধারণ করতে পারেননি। বিয়ের উপযুক্ত সঠিক বয়স কত ছিল বা কত হলে ভাল হয় এ নিয়ে নানা দেশে নানা সমাজে এবং নানা ধর্মে নানারকম মতামত রয়েছে।
 বিবাহিত জীবনেও অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রয়োজন সৌন্দর্য, সুস্থতা এবং যৌনতার। যৌনতা একটি মৌলিক বিষয়। পুরুষ এবং নারীর সমান আগ্রহ চাহিদা এবং অধিকার রয়েছে এই বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে চর্চা বা উপভোগ করার। বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের যৌন শিক্ষা নেই বললেই চলে। কম বয়সে বিয়ে হওয়া কিশোরী প্রায় অশিক্ষিত, ভীরু, পরমুখাপেক্ষী এক নারী মাত্র। স্বামীর অবর্তমানে অন্যের গলগ্রহ। আমরা কি এ রকম স্ত্রী, কন্যা চাই? পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে আছে যারা। যদি আমরা বিয়ের বয়স হিসেবে মেনে নিই এক্ষেত্রেও বঞ্চিত হবে কিশোরীটি। মানসিক অভিঘাত তৈরি হবে তার মধ্যে। অসুস্থতা, মন খারাপ, এরমধ্যে কিশোরীর অনভিজ্ঞতার সুযোগে জন্মাবে একাধিক সন্তান। শরীর ভেঙে যাবে। সৌন্দর্য বিলীন হবে। পুরুষটি মুখ পাল্টাতে বেছে নেবে পরকীয়া বা অন্য পথ। কিংবা না পাওয়ার বেদনায় অকালে নারী হওয়া মেয়েটি বেছে নেবে পরকীয়া। বাংলাদেশের সমাজে এ ঘটনা অহরহ ঘটছে। তারপরও এই দেশের কিশোরীরা তাদের অভিভাকের অবিমৃষ্য সিদ্ধান্তের কারণে বাল্যবিয়ের বলি হতে বাধ্য হচ্ছে। ১৮ বছরের আইনকেই সরকার পারছে না সফল ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে। সেক্ষেত্রে বিয়ের বয়স ১৬ করার অর্থ হচ্ছে একজন কন্যাসন্তানের নারীত্বকে অত্যন্ত হীন প্রক্রিয়ায় জলাঞ্জলি দেয়া। মানুষ হিসেবে কন্যাসন্তানকে চরম অবমূল্যায়ন করা। 


 কিছুদিন আগে বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং এনজিওর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়নে চলমান এইচপিএনসডিপি কর্মসূচির মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতিকে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বলে উল্লেখ করেন। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কন্যাশিশুদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে জোর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ঘর ছেড়ে পালানোর’ প্রবণতা বন্ধ করতেই মেয়েদের বিয়ের আইনসিদ্ধ বয়স কমিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।
 যেখানে একজন সাত বাড়ি খেটে খাওয়া বুয়া তার চার মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছে মুখে রক্ত তুলে, একজন পিতা রিকশা চালিয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ মেটাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল ভুল তাই নয় এই সিদ্ধান্তের ফঁাঁক গলে অনেক কুপ্রথা, কুসংস্কার, সুযোগসন্ধানী, বিকৃত মানসিকতার মানুষ, ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে ধ্বংস করে দেবে। গত কয়েকদিনে বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলে দেখা গেছে, অভিভাবকের ভেতর এখনই এক ধরনের হতাশা কাজ করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে কন্যাশিশুদের অভিভাবকরা মানসিকভাবে মোটেই খুশি নন সরকারের এই বিয়ের বয়স কমানোর প্রস্তাবে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং কন্যাশিশুদের জন্য বর্তমান সরকারের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী নিম্নবিত্ত, প্রান্তিক মানুষেরা কন্যার বিয়ে ছাড়াও আজকাল অন্য রকম স্বপ্ন দেখছিল। অনেকের ভেতরই সামাজিক সচেতনতা কাজ করতে শুরু করেছিল। তারা তাদের কন্যাটিকে ছেলের সমান মর্যাদা দিয়ে বড় করে তুলছিল। অনেক পোশাক কন্যা উদয়স্ত পরিশ্রম করে গ্রামে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামীর পরিবারকে টেনে তুলেছে। কন্যাসন্তান এখন বোঝা নয় এই কথাটি বাস্তবেও পিতা-মাতা, সমাজ অনুধাবন করছিল। সুতরাং এই অভিভাবকরা মনে করে যে, এই আইনের একেবারেই কোন যৌক্তিকতা নেই। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক শঙ্কা এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। কেননা তারা দেখেছে তাদের মায়েদের অধিকাংশই পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ের শিকার হয়ে অকালে সন্তানের মা হয়ে অসুখী জীবনযাপন করছে। অনেক মা মাত্র ৩২-৩৫ বছর বয়েসে বুড়ি হয়ে গেছেন। তাদের বক্তব্য, যে আইনটি রয়েছে সরকার সেটিকেই কঠোর হাতে বাস্তবায়ন করুক। নারীর মূল্যায়ন, উন্নয়ন, অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকার, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু দেশে নারী হত্যা, খুন, ধর্ষণ, কমানোর জন্য এ ধরনের অপরিপক্ব , পশ্চাত আশ্রয়ী, আইন দেশের নারী সমাজকে কখনই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করতে দেবে না। ফলে দেশের অর্ধেক জনগণ রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবেই থেকে যাবে।
 ইতিমধ্যে এই বক্তব্যের বিপক্ষে প্রতিবাদ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষরা জানাচ্ছে বিয়ের বয়স কমানো হবে একটি অত্যন্ত খারাপ সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং কন্যাশিশুদের ভবিষ্যত প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। বিয়ের সঙ্গে অনেক গভীর দায়দায়িত্বের ব্যাপার জড়িয়ে আছে বা থাকে। যেখানে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মোকাবেলা করতে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হিমসিম খাচ্ছে, জীবন থেকে ছেঁটে দিচ্ছে অনেক কিছু, একা বাঁচাই যেখানে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে, অনেক ছেলেমেয়ে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বিয়ে করতে নারাজ হচ্ছে সেখানে এই আইন কতটা দরকার?
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, ‘মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা নিঃসন্দেহে একটি পরস্পরবিরোধী চিন্তা। একদিকে সরকার নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছে আবার বিয়ের বয়স কমানোর বিধান করতে চাইছে, যা দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেবে। বাল্যবিয়ে নিরোধ করতে পারছি না বলে আমরা পিছিয়ে যাব, এটা মোটেই কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
 পুরানাপল্টনের মুক্তি ভবনে সিপিবির নারী সেলের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটা করা হলে নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
 সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমালে তা হবে ‘খুবই ভুল’ পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, ‘এটা নিয়ে যদি শুধু আলোচনাও হয় তবুও দেশে ও বিশ্বজুড়ে ভুল বার্তা যাবে।’ ইশতিয়াক মান্নানের মতে, বাল্যবিয়েতে স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও ‘বড় ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা’ তৈরি হয়। কম বয়সে বিয়ে হলে ছেলে-মেয়েরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে না। ফলে পরিবারে অসন্তোষ তৈরি হয়ে সহিংসতা ও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।
‘এটা কীভাবে আলোচনার টেবিলে আসে তা ভেবেই আমি বিস্মিত হই। মাতৃমৃত্যু ও প্রতিবন্ধীতার ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ ধরনের বিয়েতে অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান হয় এবং মা এবং শিশু সারাজীবন অপুষ্টিতে ভোগে।’
এক্ষেত্রে সরকারের কাছে আবেদন, বাল্যবিয়ের হার কমানো, পালিয়ে বিয়ে রোধ, ফ্রি মিক্সিং, ফ্রি সেক্স, ধর্ষণ, ইভটিজিং কমানোর জন্য সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে হবে। গ্রাম তো বাংলাদেশের বাইরে নয়। প্রতিটি গ্রামে প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের নিবিড় চেষ্টায় গ্রামের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। স্কুল-কলেজকে এ ধরনের সচেতন কর্মকান্ডের আওতায় আনতে পারলে গ্রামের জনগণের মধ্যে নতুন করে ভাবনা চিন্তার স্ফুরণ ঘটবে।

সাঁইত্রিশ বছর পরে -সৈয়দা রাজিয়া বেগম




তুমি বেঁচে থাকলে আজ সত্তর বছর পূর্ণ হতো তোমার। আমি, চন্দ্রা, চয়ন, নীলিম, কাজলী আর ওদের ছেলেমেয়ে কুঞ্জ, কবরী, মেঘা আর রৌদ্র উৎসবের সুরভিতে জন্মদিনের আয়োজন করে তোমাকে না জানিয়ে সারপ্রাইজ দিতাম। কিন্তু তা হলো না। মনের কোটরে শতসহস্র জলকণা প্রপাতের মতো অনর্গল ঝরছে চোখ বেয়ে। তুমি নেই। কিন্তু নিঃশব্দ স্মৃতিরা আছে চারপাশে। এই যে সব স্মৃতিমুখর। তার অর্থ কী এই যে তুমি আছ? কী জানি! শরীরটার অনুপস্থিতি বিশাল দেয়ালের মধ্যে আড়াল পড়ে গেছে যেন। চোখে ভাসে তোমার হাসি, কথা, সম্পূর্ণ তুমি। কেবল একটা কাঠামো। আর সেই অবয়ব সাঁইত্রিশ বছর ধরে আমাকে কাঁদাচ্ছে। একেবারে নিভৃতে, সবার অলক্ষ্যে, রাতের বিছানায়।
 সেই ভয়াবহ রাতটি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তোমাকে যখন পাকিস্তানী সৈন্যরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল তখন আমরা রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। রাত তখন ন’টা। এমন কিছু রাত নয়। কিন্তু ওই দিনগুলোতে সকাল-দুপুর-বিকেল সব সময়ই রাতের নিস্তব্ধতা। বিভীষিকা সর্বক্ষণ মনকে নিঃসাড় করে রাখত। তাই রাত ন’টায় যখন দরজার বেল বেজে উঠল। আমরা দ’জনই ভয়ে আতঙ্কে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। অনবরত বেজে চলেছে বেল । তুমি দরজা খোলার জন্য এগিয়ে গেলে আমি তোমার হাত চেপে ধরে পথ আগলে দাঁড়িয়েছিলাম। খুব নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলেছিলাম, ‘এত রাতে আর কে আসবে? নিশ্চয়ই আর্মিরা এসেছে। তুমি দরজা খুলতে পারবে না।’ তুমি বলেছিলে ‘তাতে কী? আমরা তো কোন অন্যায় করেনি। যদি আর্মিই এসে থাকে। শুনি কী বলতে চায়।’ আমার কোন অনুরোধ- নিষেধ তুমি শুনলে না। এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলে।
 আমার কথাই ঠিক হলো। বন্দুক হাতে কয়েকজন সৈন্য। ওদের সঙ্গে তিনতলার ভাড়াটে ফজলু হাওলাদার। কিছুদিন ধরেই ফজুল হাওলাদারের কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখেছিলাম। তিনতলার ব্যালকনিতে একটা পাকিস্তানী পতাকা টাঙিয়ে রেখেছিল। একতলার ভাড়াটে হুমায়ূন ভাই এবং আমাদের পরামর্শ দিয়েছিল পাকিস্তানী পতাকা ওড়াতে । বলেছিল ‘এ দেশটা পাকিস্তানই থাকবে। আলাদা করার সাধ্য কারো নেই।’ সঙ্গে সঙ্গে আমরা তার কথার প্রতিবাদ করেছিলাম, বলেছিলাম ‘সাতই মার্চের দিন থেকে পাকিস্তানকে আমরা পরিত্যাগ করেছি। আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন দেশ স্বাধীন হবেই হবে।’
আমাদের কথায় তার চোখে ফুটে উঠেছিল হিংস্র বিরক্তি। তারপর খুব থেমে থেমে বলেছিল ‘একটা ভুল অনেক ভুলের জন্ম দেয়। একটা কথা অনেক কথার সাক্ষী হয়। আপনারা নিজেরাই নিজেদের বিপদের গর্ত খুঁড়লেন। এই কথাগুলো বলে সেদিন ফজুল হাওলাদার ভীষণ তেজী পায়ের চাপে মাটি আন্দোলিত করে চলে গিয়েছিল। আমরা ফজুল হাওলাদারের সেদিনকার কথাকে ঔদ্ধত্য বলে মনে করিনি। একবারও ভাবিনি ভয়ঙ্কর রাজাকারের তালিকায় নাম লিখিয়ে পাকিস্তান আর্মিদের দোসর হয়েছে। ওদের হাতে হাত রেখে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মানুষদের ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে। হায়েনারে পথ চিনিয়ে ঠিকানা হাতে তুলে দিয়ে হত্যা করেছে গৌরবে ভাস্বর জ্ঞানী-গুণী, মেধাবী সম্পদদের। জেনেছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবার পরে। ফজুল হাওলাদার বলেছিল ‘ক্যাপ্টেন আসলাম এই সৈন্যদের পাঠিয়েছেন। আপনাকে উনি সালাম দিয়েছেন।। ওরা বাসা চেনে না বলে সৈন্যদের আমি নিয়ে এসেছি।’
তখনও তোমার হাতে ভাত মাখানো তরকারির ঝোল লেগে আছে। একবার তুমি বলেছিল ‘খাবার রেখে উঠে এসেছি। খেয়ে নিয়ে আমি নিজেই ক্যাম্পে চলে যাব। জানতে পারি কেন ওনার আমাকে প্রয়োজন হলো? হাওলাদার বলেছিল তেমন কিছু না। আপনার মতো কীর্তিমান মানুষের সঙ্গে কাপ্টেন আসলামের পরিচিত হবার ইচ্ছা। হাতাটা ধুয়ে নিয়ে চলুন। ফিরে এসে খেয়ে নেবেন। মাত্র তো কিছুক্ষণের আলাপ।
 ঘটনার পরম্পরা তুমি ঠিকই অনুমান করেছিল। ভেতরে গিয়ে হাত ধোবার সময় আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল ‘আজ রাতের মধ্যে আমি না ফিরে এলে কাল সকালেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেও।’ তারপর ঘুমন্ত চন্দ্রা আর চয়নকে বুকে জড়িয়ে আদর করলে আমার পিঠে হাত রেখে বলেছিলে ‘ওদের সব দায়িত্ব তোমার। ওদের মানুষ করবে দেশপ্রেমের জাগৃতি মনে গেঁথে দিয়ে। তোমাদের আমি আল্লাহ্র প্রযতেœ রেখে গেলাম।’ হৃদয় নিংড়ানো কষ্টে ভেঙ্চেুরে আমি অস্ফুট স্বরে বলেছিলাম ‘ওদের সঙ্গে গেলে তোমাকে আর আমি ফেরত পাব না পেছনের পাঁচিল টপকে তুমি পালিয়ে যাও।’ আমার কথায় তুমি হাসলে। বললে ‘তিনতলা থেকে তো নামতে হবে। তারপর না পাঁচিল টপকানো।’ ততক্ষণে আমার শরীর অবশ হয়ে গেছে যেন। কোন শক্তি ছিল না। না মনে না শরীরে। এক রকম চৈতন্যহীন স্থবির পাথর তখন আমি।’
ঘরে ঘরে ছিনতাই হাচ্ছিল মানুষ। একবার ধরে নিয়ে গেলে কেউই আর ফেরত আসেনি। তুমিও আসোনি। এলে না আর। সেই গুমোট অসহায় রাতটিতে তুমি বলেছিলে ‘রাতে না ফিরে এলে পরদিন সকালেই চন্দ্রা আর চয়নকে নিয়ে আমি যেন এ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই খুঁজে নিই। তুমি তো জান না ততক্ষণে অরক্ষতি হয়ে উঠেছে ঢাকাসহ সর্বত্র। আমি নিঝঝুম স্তব্ধতায়, জৈতন্যে ঘোরলাগা অবসাদ নিয়ে তোমার প্রতীক্ষায় বসে রইলাম। সকাল ফুটলে টেলিফোন করেছিলাম বড় আপা ছোট আপাকে। ওরা দুলাভাইদের নিয়ে চলে এসেছিল। সব কিছু শুনে দুলাভাইরা তোমাকে খুঁজতে বেড়িয়েছিল। একনাগাড়ে দশদিন ওরা চষে বেড়িয়েছে সমস্ত ঢাকা শহর। কোন সন্ধান পায়নি তোমার। সকালে এও শুনেছিলাম হুমায়ূন ভাইকেও ওই রাতে পাশ-রা ধরে নিয়ে গেছে। বুঝলাম, হিংস্র হায়েনা হাওলাদার সেদিনকার কথার প্রতিশোধ ঠিকই নিয়ে ছাড়ল।
 দশদিন এক পৃথিবী শোকের কাঁথায়মুড়ে যখন চেতনা বিলুপ্ত হচ্ছিল বার বার তখন জোর করে দরজায় তালা লাগিয়ে ছোটো আপার বাসায় আমাদের নিয়ে গেল। আমরা দিনরাত একাকার হয়ে থেকেছে। চন্দ্রা আর চয়ন বার বার তোমার কথা জানতে চায়। কোন উত্তরই ফোটেনি আমার ঠোঁটে। ছোটো আপা ওদের আদর করে কাছে বসিয়ে বলেছে ‘দেশ স্বাধীন হলে নিশ্চয়ই তোমাদের বাবা ফিরে আসবে।’ এত কঠিন কথার অর্থ সেদিন ওরা বোঝেনি। বুঝেছিল অনেক পরে।


 দেশ স্বাধীন হলো। বিজয়ের কলরোলে অনেক দুঃখের গাথাও আনন্দের মিছিলে জড়ো হলো। মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে এসেছিল বিজয়ীর হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে। কিন্তু ওদের হাসি আনন্দের আলোময় মুখ নিভে গেল। ওরা দেখল পিশাচ ঘাতকরা হত্যা করেছে ওদের আপনজনদের, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ঝলসে দিয়েছে বাড়িঘর। বিরান শূন্যতায় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর বেয়ে নেমেছে কান্নার ধারা। যারা নিরপরাধ তাদের কেন নৃশংস নিপীড়নে মেরে ফেলল? কার কাছে চাইব এর উত্তর? কতিপয় দোসর, যারা এই নির্মম মৃত্যুর পতাকা উড়িয়েছে। তাদের শাস্তির দাবি ওঠে। আপনজন, বাড়িঘর সর্বস্ব খুইয়ে নির্বাক তখন মুক্তিযোদ্ধারা।


 আমার মন অসহিষ্ণু দুশ্চিন্তায় কেঁপে কেঁপে উঠত। জোর করে মন থেকে সরিয়ে দিতাম অজগর দুঃস্বপ্ন এক মন ভাবত অবশ্যই একদিন তুমি ফিরে আসবে। অন্য মন অস্বস্তিকর ভাবনার ঢেউয়ে হাবুডুবু খেত। বুকের খাঁচায় নিঃশ্বাস আটকে যেত। মনে হতো তুমি নেই। কখনও, কোনদিনও ফিরবে না তোমার সুখী গৃহকোণে। শেষের শ্বাসরুদ্ধ ভাবনাই সঠিক হলো। তুমি ফিরে এলে না কিংবা কেউ তোমাকে ফিরেয়েও দিয়ে গেল না। তুমি হলে চিরকালের জন্য নিরুদ্দেশ।


 মাস দুই পরে মিরপুর বধ্যভূমি থেকে আরও অনেকের সঙ্গে তোমাকেও শনাক্ত করা গেল। নিশ্চিত মৃত্যুর সঠিক সংবাদ। তুমি ছবি হয়ে শোকের ঠিকানায় বসতি করলে। অন্য সবার মতো তোমাকেও কবরস্থ করা হলো। তোমার নামের সূচনায় যোগ হলো শহীদ। তিরিশ লাখ শহীদের কাতারে তুমি ঠাঁই করে নিলে। আর আমরা হয়ে গেলাম শহীদ পরিবার। স্বাধীনতা, দেশবিজয়ে তোমার অংশীদারিত্ব এ তো আমাদের বড় অর্জন।
 যাদের সঙ্গে ছিল তোমার অবসরের আড্ডা দেয়ার সখ্য। তাদের সঙ্গে আমারও ছিল একই রকম বন্ধুত্ব। তুমিই আমাকে জোর করে তোমাদের আড্ডায় নিয়ে যেতে। তুমি চলে যাবার পর ওই আড্ডা আমাকে আর মনোযোগী করেনি। ব্যস্ততা বেড়ে গেল। রবং বলা ভাল ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিলাম।


সাংবাদিকতা পেশা আমার। সঙ্গে ছিল লেখালেখির চুম্বক আকর্ষণ। তুমি নেই। আমাদের তিনজনের জীবন তো সচল। চন্দ্রা আর চয়ন অবুঝ দু’টি শিশু। ওদের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন সবটা দেখভাল করার দায়িত্ব তো তখন একলা আমার। উপার্জনের সিংহভাগ তো রাতারাতি বিয়োগ হয়ে গেল। সব কিছু মিলিয়ে আমি তখন উদ্বেগের কাঁটায় এফোঁড়-ওফোঁড় হচ্ছি। আড্ডার কোন কোন বন্ধু সেই সময় চন্দ্রা, চয়ন আর আমার দায়িত্ব নেবার আগ্রহ দেখিয়েছিল। না, অবশ্য তা তারা করেনি। আমার সিদ্ধান্তটুকুই শুধু জানতে চেয়েছিল। আমিও নীরব থাকা যুক্তিযুক্ত মনে করে ধীরে ধীরে দূরত্ব টেনে দিয়েছি। বন্ধ করেছি বন্ধুত্বের আগল। ওরা অবশ্য পরে আমার কাছে মার্জনা চেয়েছে। আমি অবশ্য কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। শুধু সাময়িক যোগাযোগের দোরটা আলগা করেছি।

 কিন্তু তারপরেও বন্ধুত্বের নির্মল সুবাসটুকু আর নেই। কখন যে তা হারাল তা মনেও করতে পারি না। তবে ওরা যে যার মতো ঘরনী খুঁজে নিয়েছে।


 সাঁইত্রিশ বছর তুমি ছাড়া আমার দিন মাস বছর কেটেছে। চন্দ্রা আর চয়নকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি। ওদের দু’জনের জীবন ঘিরে যারা আছে তাদের নিয়েই আমার অফুরন্ত উদ্বেল সময় কেটে যায়। এতসব কিছুর পরেও তোমার অভাব অনুপস্থিতি ঘরের চারপাশে। রাস্তায় বেরুলে। কোন আনন্দ অনুষ্ঠানে গেলে অনেক বেশি দুঃখময়তা ছুঁয়ে যায়।তুমি একজন মাত্র মানুষ। সেই কবে নেই হয়ে গেছ কিন্তু আজও আছ যেন তাজা সজীব প্রাণ নিয়ে আমার মনে। আমার ভাবনায়। আচ্ছা বল তো এত দীপ্ত হয়ে থাকলে কী করে?
এই এত বছর যুগ অতিক্রম করে এসে, আমিও যখন ষাটোর্ধ বয়সের সোপানে তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে। আমি জানি না ডিসেম্বরের চৌদ্দ তারিখ, স্পষ্ট হয়ে থাকা একাত্তর। এর পর থেকে দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর। কোন্ মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে তুমি হাড়া আমি একলা হাতে সব গোছাতে পারলাম! কোথাও কোন অনিয়ম কিংবা প্রতিবন্ধকতা যে আসেনি তা তো নয়। কেমন করে যে তার হাল ধরেছিলাম আজ আর তা বলতে পারব না। বোধকরি বেহুঁশ ছিলাম আমি। তোমার শেষ কথাগুলোই যেন আমার শক্তি আর প্রেরণা হয়েছিল।


একাত্তরে আমি ছিলাম তেইশ বছরের একজন তরুণী আর ছিল অবুঝ দুটি সন্তান। কত আগ্রহ-ইচ্ছা-অনুরোধ চারপাশ থেকে এসেছে কেমন করে যেন সব অবজ্ঞা করেছি। ঠেলে দিয়েছি কচুরিপানা সরাবার মতো করে। কখনই অনুভব করিনি আমার একজন সঙ্গী চাই। আমার এই অনমনীয় একরোখা সিদ্ধান্তের তামাশা দেখে অনেকে আশ্চর্য হয়েছে। আবার অনেকে আমাকে নির্বোধও মনে করেছে। আবার অনেকের চোখে-মুখে দেখেছি প্রগাঢ় শ্রদ্ধার আলোময়তা। আমার কেবলই মনে হয়েছে, আমার কোন অপূর্ণতা নেই। কিংবা কখনই ভাবিনি আমি সঙ্গীহীন একা। তবু কারো কারো পরামর্শে বিনীতকণ্ঠে রেখেছি। বলেছি যেদিন আমি বুঝব ক্লান্তি নেমেছে মনে শরীরে। কিংবা তোমার স্মৃতি আবছা হয়ে উঠছে। সেদিন আমি ভাবব। কোন দ্বিতীয় চিন্তা।

আজ পর্যন্ত কোন ক্লান্তি, বিরক্তি, অর্পূণতার ছোঁয়া লাগেনি। আমার মনে কিংবা শরীরে। তবে আর কি প্রয়োজন? আমি যদি আমার জীবনের কোন কষ্ট, দুঃখকে প্রশ্রয় না দিই। তার দায়দায়িত্ব তো আমারই। আমি যদি মনে করি আমি ভাল আছি। বেশ আছি। তবে অন্যের অস্বস্তি কেন? কিন্তু না, আমার ভাবনা আমার থাকে না। আমার আমিত্বকে কেড়ে নিয়ে আবর্জনায় ছুড়ে দেবার লোকেরও অভাব হয় না। তাই তো জীবনের একটা স্বস্তির বয়সে এসে শুনতে হয় দাগ দেয়া কথার অশালীন কথোপকথন। আমি নাকি আমার চরিত্রকে দূষিত করেছি। বিভিন্ন পুরুষের সংস্রবে সময় উদ্যাপন করেছি। আমি কি এতটাই হীন ছিলাম? তুমিই বলো, এসব কথা বলা মানে কি আমার অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জ করা হয় না?
আমি যদি চাইতাম কিংবা যদি ইচ্ছা হতো তাহলে তো সেই সুনীল বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা আবহ তৈরি করতে পারতাম। তখন তো কারোই কিছু বলার থাকত না। দোষেরও কিছু থাকত না। আমি আমার মতো জীবন গুছিয়ে নিতাম।কিন্তু তা আমি করিনি। করিনি এজন্য যে, আমি তাগিদ অনুভব করিনি। আর তাই চাবুকের আগায় মন বিদ্ধ করে পার করেছি অসম সময়। আমি ভীষণ এক গর্ববোধে উজ্জ্বল থেকেছি একজন শহীদের স্ত্রী হিসেবে। এত সম্মান, এত শ্রদ্ধা, এত অনুরাগ পাবার চেয়ে কি দ্বিতীয় চিন্তায় নিজেকে জড়ানোটা অনেক সুখের হতো? নাকি বিয়ে নামক একটি বন্ধন আমাকে সুখী মানুষ করে তুলতে পারত? চন্দ্রা আর চয়ন যখন বড় হলো তখন ওরাও বন্ধুর মতো আমাকে বলেছিল তুমি কেন আমাদের কথা ভেবে তোমার জীবনকে অনাড়ম্বর রাখলে? ওদের জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম ‘তোমরা দুজন আমার সন্তান। আমি জীবনে কাউকে গ্রহণ করলে তোমরা আমার সন্তানই থাকতে। তখন থেকে তোমাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের বিচ্যুতি ঘটত না। তবে তোমাদের কথা ভেবেই যে আমি নতুন কোন সঙ্গী নিইনি এও যেমন সত্যি ঠিক তেমনি তোমার বাবার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক কিংবা তার প্রতি আমার যে ভালবাসা সেখানে কোন রকম ইটের গাঁথুনি তুলতে চাইনি। আমার কথায় চন্দ্রা আর চয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদের ঠোঁটে আর কোন কথা জোগায়নি। শুধু চন্দ্রা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদেছিল। চয়ন চলে গিয়েছিলো ওর ঘরে।


 আমি চন্দ্রা-চয়নকে নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের জগতে দিবারাত্রি কাটিয়েছি। কোন সময় কখনই দীর্ঘশ্বাস পড়েনি আমার। সেই আমি আকস্মিক বাজ পড়ার আদিগন্ত ঝলসানো মানুষ হয়ে গেলাম সেদিন। আমার এক সহকর্মী বন্ধু এক অদ্ভুত গা ঘিন্ঘিন্ খবরটি শোনাল । দেখলাম ওর চোখে-মুখে আগুনের জ্বলন্ত আভা। ও আমার বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকা মুখের রেখা দেখে কেঁদে ফেলে বলেছিল “যারা এসব কথা ভাবে এবং বলে তাদের আমি স্পষ্ট জবাব দিয়ে এসেছি। ওরা বুঝেছে সব কথা সব কুৎসিত ভাবনা সবার জন্য নয়। ওরা অবশ্য কথাগুলো বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু আমার অবাক লাগে, আমার ভাবতেও কষ্ট হয়, মানুষ এত হীন চিন্তা করে কিভাবে? মানুষের জীবন থেকে কি মূল্যবোধের একেবারেই পচন ধরেছে?”


সাঁইত্রিশ বছরে যে চোখের পানি চন্দ্রা আর চয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে ঝরতে দিইনি। ওই কথা শোনার পর ক’দিন ঝরেছে আষাঢ় শ্রাবণের ধারা। কেবল মনে হয়েছে ছিঃছিঃ! আমার সব অর্জন কি তাহলে মিথ্যা হয়ে গেল? আমার চুম্বক সময়গুলোকে থেঁতলে যে আমি সদর্পে সড়ক অতিক্রম করেছি, সেই আমাকে কেন এত নোরাং আবর্জনায় ছুড়ে ফেলা হচ্ছে? কারা করছে এসব? যারা আমার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারাই কি এ রকম জঘন্য প্রচারণা করছে? আমি তো অনায়াসে একজন পুরুষকে আমার সঙ্গী করতে পারতাম। পারতাম তাকে সমাজের চত্বরে দাঁড় করিয়েও দিতে। অপরিচয়ের দূরত্বের আবরণে নয়, সর্বসম্মুখে পরিচয়ের সুতায় গ্রন্থিবন্ধ করেই। কিন্তু সে রকম কোন প্রত্যাশা, আকাঙক্ষা, ইচ্ছা আমার ছিল না। একেবারেই আমি আমার মতো করে সময় পার করেছি। কোন অনাচারের পথে আমি পা রাখিনি বা হাঁটিনি । এখন তুমিই বলো, এ অপমান আমি সইব কি করে? এক মিথ্যা শত মুখে আছাড় খেয়ে তো সত্যিই হয়ে যায়। কতজনকে আমি জবাবদিহির জবাব দেব! আবার বেশিরভাগ তো কোন প্রশ্ন করবে না। কিংবা জানার আগ্রহও দেখাবে না। কিন্তু মনে মনে স্থির সিদ্ধান্ত তৈরি করে নেবে। বলো, সাঁইত্রিশ বছর পরে কেন আমি এভাবে হোঁচট খাচ্ছি?


একজন নারীর চরিত্রকে পুঁজি করার দিন কবে আমাদের সমাজ থেকে দূর হবে? কত অনায়াসে একজন নারীকে আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে দেয়া হয়। তবে তোমাকে বলে রাখছি, আমিও লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড়াব। আমিও দেখব সত্যকে মিথ্যা ঠেকাতে পারে কিনা?
আজ তোমার জন্মতিথি। একজন শহীদের জন্মতারিখ। আমার একান্ত একজন মানুষের পৃথিবীতে আসবার দিন। এই তারিখটিই আমি মনে রাখতে চাই। ভুলে যেতে চাই ডিসেম্বরের চৌদ্দ তারিখটিকে। বার বার মনে পড়ছে তোমার সঙ্গে পরিচয়ের দিনটি। ওই তারিখটি আমার জীবনে অনন্য, অসামান্য। এত বছর সাথী হয়ে থেকেছে। জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত থাকবে আলোর ঠিকানা হয়ে।


 তোমার চলে যাবার পর থেকে প্রতিবছর এসেছে তোমার জন্মদিনটি। পৃথিবী যতদিন পূর্ণাঙ্গ থাকবে তোমার জন্মতারিখটিও আসবে নিয়মমতো। আমার মনের নিবিড় স্পর্শ নিয়ে তারিখটি আমাকেই আবার সাহস জোগাবে। তাই তো তোমার জন্মদিনটিতে আমার মানসিক আঘাতের ক্ষতচিহ্নগুলো ভরাট করার জন্যই তোমাকে সব কথা বলতে ইচ্ছা হলো। তোমাকে ছাড়া আমি কার কাছে বলব বলো? শুধু তোমাকেই আমি আমার আনন্দ-দুঃখ-ব্যথা-বেদনা-অপমান-সফলতা- সম্মানের কথা বলি আপনমনে। আজও বললাম। তুমি যত দূরেই থাক না কেন। আমার আগামীদিনগুলোর জন্য তো তুমিই দিশা হয়ে থাকবে। দেবে আমাকে সাহসে শক্তির প্রেরণা। কারণ তুমিই তো আমার মনোবলের হাতিয়ার। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মনে যদি সূক্ষ্ম এতটুকু সন্দেহের আঁচড় থেকেও থাকে, তুমি তাকে অবজ্ঞা করে আমার সহায় হবে। আমার মাথা উঁচু করে বিস্তৃত আকাশ দেখার অধিকার এখানেই।