Wednesday, October 22, 2014

অভ্র সেরে উঠবে বলে আত্মবশ্বিাসী দেশের শীর্ষ চার চিকিৎসক -সুমি খান



 ২২ সেপ্টেম্বর ,২০১৪ বুধবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিট।  আমি যেন হাওয়ায় উড়ছি। অভ্র’র কপালে একটা ছোট্ট চুমু দিলাম । অভ্র এখন অনেক ভালো ।   আরো অনেকটা সেরে উঠবে- আমায় আত্মবিশ্বাসী করে দিলো মেডিক্যাল বোর্ড ।

মেধাবী ক্রীড়াবিদ অভ্র’র হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস এবং টিউবারকিউলোসিস (টিবি) বা যক্ষা জটিল হয়ে গেছে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস ক্রনিক লিভার ডিজিজ এর কারণে লিভার এনলার্জ হয়ে গেছে। লিভারের এই পরিবর্তন অনেকটা স্থায়ী হয়ে গেছে বললেন লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সেলিমুর রহমান।  লিভার এর জটিলতার কারণে ফুসফুসে পানি আসতে পারে এমন সন্দেহ অধ্যাপক এ বিএম আব্দুল্লাহর । এর সাথে একমত হয়েছেন বোর্ডের অন্য তিন সদস্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা ।  চট্টগ্রাম এবং কোলকাতায় টিবি ‘র ওষুধ দেয়া হয়েছে, কোলোনোস্কপি করা হয়েছে। সেসব ওষুধ  এতোদিন কাজ করছিলো না।  হেপাটাইটিস বি’ আক্রান্ত লিভারের জন্যে সেসব ওষুধ ক্ষতির কারণ হতে পারে আশঙ্কায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিবি’র ওষুধ বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে অভ্র’র শরীরে  টিবি কোন্ অবস্থায় আছে ,সেটা পরীক্ষা করা হবে । এর পর  টিবি’র জন্যে কোন  ওষুধ দেয়া হবে কিনা ভাবতে হবে।  কারণ, লিভারের সমস্যার কারণে  অভ্র সব রকমের ওষুধ সইতে পারবে না। তার সহনশীলতা অনুযায়ী ভেবে চিন্তে ওষুধ নির্দারণ করতে হচ্ছে । গত কয়েকদিন আগে প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত অভ্র‘র জ্বর কমানোর জন্যে প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহ ম্যালেরিয়ার ওষুধ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে ডা. সেলিমুর রহমান বলেন , তিনি অত্যন্ত মেধাবী চিকিৎসক। তিনি ছাড়া কেউ এই ওষুধ দেবার কথা ভাবতে পারতেন না। তাঁর পরামর্শে ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেয়াতে অভ্র এখন অনেক সু¯থ বললেন অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান  । সেরেব্রাল থ্রম্বসিস সারাতে কার্ডিনেক্স গ্রুপের ওষুধ দেয়া হয়েছে।  এই ওষুধ চলবে। এতে  অভ্র’র ব্রেনে জমাট বাঁধা রক্ত তরল হয়ে যাবে ধীরে ধীরে ।   যথাযথ ওষুধ এবং চিকিৎসা পেলে  সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অভ্র সুস্থ অনুভব করবে এবং স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে আসবে বলে প্রচন্ড আশাবাদী মেডিক্যাল বোর্ড ।

অভ্রজ্যোতি মজুমদার কে সিসিইউ থেকে বের করে দেবার জন্যে চরম দুর্ব্যাবহার করতে থাকেন সিসিইউ’র চিকিৎসক, নার্স সবাই। অতীষ্ঠ এবং অসহায় হয়ে ২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রান্ত থেকে এ প্রান্ত ছুটতে থাকি। ভাইস চ্যান্সেলর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত মিটিংয়ে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাঁর দেকা পেলাম না। তাঁর পিএস সালাউদ্দিন বাইকে ঘিরে ধরেছেন অনেক লোক। সবার কথা শুনতে হবে। একের পর এক ফোন করে তিনি তাদের রোগীদের ব্যবস্থা করছেন। এক ফাঁকে আমার সাথেও কথা বললেন । বললাম কেবিনে নেবার কথা। সালাউদ্দিন ভাই বললেন , কেবিন কালি না থাকলে নিয়ম অনুযাযী যেখানে আছে সেখানেই থাকবে অভ্র। বললাম, কিন্তু সিসিইউ’র ডাক্তার –নার্স কেউ তো অভ্যকে এক মুহ’র্তের জন্যেও রাখতে চাইছে না। একটু কথা বলেন কেবিনের জন্যে, প্লীজ। “ কেবিনের দায়িত্বে থাকা ডা. আফরোজার সাথে সালাউদ্দিন ভাই বিনয়ের সাথে বললেন অভ্য’র জন্যে একটি কেবিনের ব্যবস্থা করতে । এর আগের দিন সকাল থেকে আমি আফরোজা আপার সাথে অনেকবার কথা বলেছি অভ্র’র কেবিনের জন্যে। তিনি আমাকে  কথা দিয়েছেন খালি হলেই ব্যবস্থা করবেন। এর আগের দিন একটি ভিআইপি কেবিন খালি ছিল। একজন বিচারকের স্ত্রী’র জন্যে সেটা কনফার্ম করা হয়ে গেছে।  কিন্তু সিসিইউ’র ডা. তোফাজ্জল এবং কয়েকজন নার্স বয়ংকর দুব্যাবহার করছেন অভ্র এবং তার মা মমতা মজুমদারের সাথে। ডা. তোফায়েল বললেন ,“ আপনি কারো বাসায় বেড়াতে গেলে , তারা অপছন্দ করলে কী করবেন?” অভ্র’র মা নিরীহ ভাবে জবাব দিলেন ,“চলে আসবো ।” ডা. তোফায়েল বললেন, এখানেও আপনাদের কেউ পছন্দ করছে না। চলে যান। “ মমতা ‘দি অসহায় ভাবে আমাকে বারবকার বললেন যেন ব্যবস্থা করি। কিন্তু  হাসপাতালের কোথাও তো বেড নেই, কেবিন ও খালি হয়নি। আমি কোথায় নেবো? কোথায় যাবো অভ্রকে নিয়ে? দুপুরে অভ্র’র ফাইল নিয়ে ছুটে যাই পরিচালকের কক্ষে। বিস্তারিত আগেই বলেছিলাম তাকে। তিনি বললেন “টিবি রোগীকে কী করে সিসিইউ তে রাখবো আমরা? এটা একটা এথিক্যাল ক্রাইম।” আমি মরিয়া হয়ে বললাম, “আমি  আপনাদের অনুনয় বিনয় করে ভর্তি করেছি দেশের মেধাবী সন্তান  অভ্রকে বাঁচাতে । এই ‘ক্রাইম’ এর দায় আমি  মাথা পেতে নিলাম। কিন্তু , স্যার, মানবিক দৃষ্টিতে বলেন, আপনারা কি তাহলে অভ্রকে রাস্তায় ছঁড়ে ফেলবেন? ফাইল টা একটু দেখে তার শারীরিক অবস্থা জেনে বলেন ।“  পরিচালক বললেন,“ আসলে তাকে আইসোলেটেড কক্ষে রাখা উচিত।  তবে যেদিন ভর্তি হয়েছে, তার পরদিন ই তার জন্যে  সিসিইউ থেকেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা উচিত ছিল। এটা আপনার উদ্যোগ নেয়ার কথা না। ” আরো অনেক গল্প  জমা রয়েছে।

তবে আশার কথা হলো ,অবশেষে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছেন হাসপাতালের পরিচালক আবদুল মজিদ ভুইয়া।   এই বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রফেসর এ বি এম আব্দুল্লাহ, ডীন, মেডিসিন বিভাগ
সদস্য ১. অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান  হেপাটোলজি বিভাগ, ২. অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুর রহমান রেসপারেটরি মেডিসিন বিভাগ, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নিউরোলজি বিভাগ ।

No comments:

Post a Comment