Monday, November 4, 2013

পাকিনেতা ইসহাক খান খাকওয়ানী বললেন -বিএনপি পাকিস্তান প্রেমী , সাকা নিরপরাধ : সুমি খান


“বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষ পাকিস্তান ভালোবাসে । বিএনপি তার মধ্যে প্রধান। একাত্তরে সালে সাকা চৌধুরী লাহোরে ছিলেন, কোন অপরাধ করেন নি” - গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান ডেইলি নিউজে প্রকাশিত লেখাটিতে এভাবেই ঘাতকদের পক্ষে সাফাই গাইলেন একাত্তরের ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বন্ধু ইসহাক খান খাকওয়ানী। তিনি পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী হেভিওয়েট রাজনীতিক।
‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ ‘এর প্রতিষ্ঠা করেছেন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান । জনশ্রুতি আছে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএস আই য়ের নির্দেশনায় তিনি দলটি গঠন করেছেন। এই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান খাকওয়ানী সম্প্রতি বাংলাদেশের পাকিপ্রেমীদের ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আত্মকথন লিখেছেন। বিপুল সম্পদশালী জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক খান খাকওয়ানী পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং রেলওয়ে মন্ত্রী ছিলেন। আফগানিস্তানের নানগড় এলাকার উপজাতি খোগওয়ানি গোত্রভুক্ত ‘খাকওয়ানি’ জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক পেশায় ইঞ্জিনীয়ার। মীর মর্তুজা ভুট্টোর সাথে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দেবার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার অভিষেক। ২০০২ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন। ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল পোলোর আ্যাম্বেসেডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রশ্ন আসতে পারে, এই সম্পদশালী ব্যক্তিটি রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ় করার জন্যেই কি আইএসইইয়ের বার্তাবাহকের কাজ করছেন?
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা , ধর্ষণ , বুদ্ধিজীবিহত্যা এবং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যারা অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের প্রতি ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন,পাকি সরকারের বেতনভুক্ত সেই ঘাতকদের বিচারপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই গাত্রদাহের সৃষ্টি করেছে পাকিদের। এর বাইরে থাকতে পারেন নি খাকওয়ানী । নিরপেক্ষতা দেখাতে লেখায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সম্মান করার ভান করেছেন তার লেখার একটি লাইনে, যা হাস্যকর বটে!
তিনি এক দিকে স্বীকার করেছেন বালুচিস্তানসহ ৫টি প্রদেশের পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অপশাসনে বিদ্রোহ করছে স্খানীয় জনগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতি এ দেশের মানুষের প্রতি স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বাধিকার আন্দোলনের নৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করলেন ইসহাক খান খাগওয়ানী। স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একাত্তর পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে তুলনা করেছেন পরাধীন জাতির সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার । একে ‘পাকি ঔদ্ধত্য’ না বলে পারা যায় না!
একাত্তরের ঘাতকদের প্রত্যক্ষ ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি একাত্তরের গণহত্যা , ধর্ষন সহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির সাথে তার একাত্মতা প্রমাণ করে ঘাতকদের পক্ষে তাদের এক এবং অভিন্ন শক্ত অবস্থান!
পারিবারিক বন্ধু সাকা চৌধুরীকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে গিয়ে ইসহাক খান তার লেখার শেষ দিকে এসে স্বীকার করলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সংগঠক।তবে ইসহাক খানের দাবিমতে বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ই চান নি! তিনি একদিকে একাত্তরে সাকা চৌধুরীর অপরাধ অস্বীকার করলেন, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চাওয়ায় বঙ্গবন্ধুর উদারতা বলে উল্লেখ করলেন! স্ববিরোধিতা একেই বলে।
ইসহাক খান বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সম্পাদকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আক্ষেপ করেছেন ডেইলী ষ্টারের সম্পাদকের কাছে পাঠানোর পর ও তার লেখা এখনো প্রকাশ হয়নি বলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালৈর প্রতিটি রায়ের সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম পাকিস্তান কে ধুয়ে ফেলে- এটাও তার ক্ষোভের কারণ। এর পর ও তার আশাবাদ মুদ্রার অন্যপিঠ দেখে। তার গভীর পর্যবেক্ষণ বলে, মুদ্রার অন্যপিঠ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং সাধারন অনেক মানুষ মানসিক ভাবে এখনো পাকিস্তানের পক্ষেই অবস্থান করছে। তার আশাবাদ , তার পারিবারিক বন্ধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি আওয়ামী লীগ এবং তার অনুসারীরা অনুকম্পা দেখাবে। এবং এটা বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দল এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ‘পাকিপ্রেম’ ভালো লাগার নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত ।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সশরীরে উপস্থিত থেকে বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করেছেন অনেক নিরীহ মানুষ কে । সা কা চৌধুরীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে দানবীর শিক্ষানুরাগী সমাজহিতৈষী নূতন চন্দ্র সিংহ কে। প্রত্যক্ষদর্শী সালাহউদ্দিন আহমেদ সা কা চৌধুরীর টর্চার সেলে বন্দী ছিলেন। তার অত্যাচারেরর শিকার। প্রাণে বেঁচে গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক ১৮ বছর বয়সে ফকা-সাকার বর্বর নির্যাতনে নিহত হন একাত্তরে। প্রত্যক্ষদর্শী তার বোন জোহরা বেগম। তিনি জাতীয় আর্টির সাবেক সাংসদ হারুণ অর রশীদের স্ত্রী। জ্যোৎস্নাবালা র সামনে সাকা চৌ দাঁড়িয়ে থেকে নির্দেশ দিয়ে জ্রোৎস্নাবালার স্বামী, ভাশুর সহ তার পরিবারের ২৮ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছে । জ্যোৎস্নাবালা কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুঁজো হয়ে বেঁচে ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত। তার ইন্টারভিউ আছে। আদালতে অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। আপনি এই নিরীহ সাধারণ মানুষ গুলোর চোখের জল , স্বজন হারানোর বেদনা, গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রনা,সাকা চৌধুরীর বর্বর নির্যাতনে নিহত দের স্বজন অথবা আহত দের কান্না এবং তথ্য প্রমাণ সহ আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান ইসহাক খানের কানে পৌঁছেনি । যারা হত্যাকারীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাদের কানে কোন মানবিক বাণী পৌঁছাবে না – এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই সাকা চৌধুরীর সহপাঠী কোন এক বিচারপতি শামীমের দাবি ই তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছে। এ যেন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী! এরকম ভয়ংকর খুনির পক্ষ নিলে ধর্মেও সইবে না।পাকিদের আবারো জানিয়ে দেবে এদেশের মানুষ -বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তিরিশ লাখ বাঙ্গালীর ঘাতক জারজদের কখনো ক্ষমা করবে না।
Sumikhan29bdj@gmail.com

Sunday, November 3, 2013

টেলিসংলাপ নিয়ে ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ কৌশলে নেমেছে বিএনপি:আবেদ খান


আমি সেই গল্পটির সারাংশ দিয়েই শুরু করি, যে গল্পটি সম্ভবত প্রায় সবাই জানেন, কিন্তু সবাই মানেন-এমনটি বলতে পারব না। এ প্রসঙ্গে একটি ছোট্ট কথা বলে রাখি। আমার একটি লেখার শুরুতে ব্যবহার করা রূপকথার সারাংশ নিয়ে কোন এক মহলের কেউ কেউ অগ্নিশর্মা হয়ে বলেছেন, আমি নাকি ওই রূপক রূপকথায় এক শীর্ষ রাজনীতিককে সরাসরি কটাক্ষ করেছি! রবীন্দ্রনাথ তাঁর অচলায়তন কাব্যনাট্যে বলেছেন, ‘কথা বলি আমরা, আর মানে তো করে ওঁরা।’ কেউ যদি ক্রোধ বা হতাশার বশে সবকিছু নিজের ঝাঁপিতে ভরেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে এমন অজ্ঞতার জন্য অনুকম্পা ছাড়া আর কি করতে পারি? এটাও এক রাজার গল্প। রাজা তাঁর পাচককে তাঁর জন্য বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যবস্তু রন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাচক শত পদের সুস্বাদু খাদ্য রন্ধন করল বটে, কিন্তু শত ব্যঞ্জনের প্রতিটির প্রধান উপাদান ছিল-জিহ্বা। রাজা পরম তৃপ্তি ভরে ভোজন সম্পন্ন করে পাচককে উপযুক্ত পারিতোষিক দিয়ে বললেন, ‘বেশ! আগামীকাল তুমি বিশ্বের নিকৃষ্টতম বস্তু রন্ধন করে আমাকে মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করো।’
পর দিনও অন্যভাবে শত ব্যঞ্জন রন্ধন করা হলো, এবং সেই শত ব্যঞ্জনের মূল উপাদানও ছিল-জিহ্বা। রাজা বিস্মিত হয়ে পাচককে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এইরূপ রন্ধনের কারণ কি?’ পাচক উত্তর দিলো-‘মহারাজ! জিহ্বা এমন একটি বস্তু যা সুন্দররূপে ব্যবহার করলে মানুষ ধন্য ধন্য করে, এবং কদর্যভাবে ব্যবহার করলে মানুষ নিন্দা করে। জিহ্বা বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করে, আবার শত্রুকে বন্ধুকে রূপান্তরিত করে। কেবল জিহ্বার সঠিক ব্যবহার দ্বারাই অনেক অসাধ্য কর্মসম্পাদন সম্ভব, আবার এই জিহ্বার অপব্যবহার দ্বারাই অনেক সুন্দর পরিবেশ বিষবৎ হয়ে উঠতে পারে। মহাত্মন! জিহ্বার অসুন্দর ব্যবহার মহাযুদ্ধের কারণ ঘটায়, আবার সুচারু ব্যবহার মহাযুদ্ধের অবসান ঘটায়। আর এই উপাদানটির সুব্যবহারের জন্য কোন প্রকার অর্থনাশের আশঙ্কা নেই।’
রাজা পাচকের কথায় এবং যুক্তিতে মোহিত হয়ে তাকে সহ¯্র স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করলেন।
২.
দুই নেত্রীর সাম্প্রতিক ফোনালাপে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠেছে। এমন কি দেশের বাইরেও গিয়ে পড়েছে এই ঝড়ের ঝাপটা। শুধু দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরাই নন, বিভিন্ন কূটনীতিক মহলেও এই ৩৭ মিনিটের ফোনালাপ নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে। সবচাইতে বিস্ময়কর ব্যাপার হলোÑ ক) এই দুই জনই হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্মকা-ের প্রধান ব্যক্তি। একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং অপরজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। একজন এই রাষ্ট্রীয় প্রধান নির্বাহীর পদে দ্বিতীয়বার উপবেশ করেছেন এবং অন্যজন দু’বার পূর্ণমেয়াদে ও একবার অতি স্বল্প মেয়াদে এই শীর্ষ প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
খ) দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কার্যরত বিভিন্ন বিদেশী কূটনীতিক এমন একটা প্রচারণা চালিয়েছিলেন যে, দুই নেত্রীর বাক্যবিনিময় ঘটলেই বুঝি-বা সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নাগরিক সমাজের একাংশ এই নিয়ে প্রবল রব তুলেছিলেন বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে, টকশোতে এবং পত্রপত্রিকায়Ñযার ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের মনে প্রচ- কৌতূহল দানা বেঁধেছিল যে, দুই নেত্রীর মধ্যে কি ধরনের কথাবার্তা হয়! কাজেই তিন-চার দিন ধরে ক্রমাগত মিডিয়ায় এই দুই নেত্রীর ফোনালাপের প্রচার মানুষের প্রত্যাশাকে শ্বাসরুদ্ধকর পর্যায়ে উন্নীত করে ফেলেছিল।
গ) আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছিল হরতাল-কেন্দ্রিক সহিংসতার কারণে। অর্থনৈতিক প্রবাহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল বলে সাধারণ মানুষের আশা ছিল যদি আলোচনায় একটা কিছু বেরিয়ে আসে, তাহলে হয়ত পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
ঘ) মানুষের আরও আগ্রহ ছিল আরেকটি বিষয়ের দিকে, তা হলোÑমুখোমুখি অবস্থানে থাকা দুই প্রধান জোট, বিশেষ করে দুই নেত্রী অনড় অবস্থানে রয়েছেন। যদি দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয় এবং আলোচনার সূত্র ধরে কোন পক্ষ যদি নিজে কিঞ্চিৎ নমনীয় হয়ে অপর পক্ষকে নমনীয় হতে সাহায্য করেন, তাহলে হয়ত বা রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটতে পারে।
কিন্তু এই বাক্যবিনিময়ের ফল বরং উল্টোটাই হলো। দুই পক্ষের অনমনীয়তা বৃদ্ধির ফলে, বৃদ্ধি পেল মানুষের হতাশা এবং অনিশ্চয়তার আশঙ্কা। দুই নেত্রীর বলয় থেকে আপন-আপন দৃষ্টিকোণের আলোকে এই ফোনালাপের ব্যাখ্যা দেয়া হতে থাকল। দুই শিবিরের অনুসারী বুদ্ধিজীবীরা নিজ নিজ নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা এবং অপর পক্ষের নিন্দাভাষণে মুখর হয়ে মিডিয়ার মাইক্রোফোন এবং পত্রপত্রিকার পৃষ্ঠা উত্তপ্ত করে ফেললেন। আর মানুষের নিরাশা ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক নিরাসক্তির দিকে ধাবিত হতে থাকল। কূটনীতি পাড়ার কূটনীতিকরা বিস্ময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করলেন এবং পরিমাপ করতে শুরু করলেন আমাদের দেশের শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিকদের রুচিবোধ এবং শিষ্ঠাচারের মাত্রা।
৩.
কথা উঠেছে, মিডিয়ার এই সংলাপ প্রকাশের বিষয়টি বিধিসম্মত অথবা শিষ্ঠাচারবর্জিত হয়েছে কিনা। এই নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে রীতিমতো আক্রমণাত্মক যুক্তিপ্রদর্শন করা হচ্ছে। ‘অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অতিশয় আত্মরক্ষামূলক, যা মাঝেমধ্যে আত্মসমর্পণমূলক বলে মনে হয়, তেমনভাবে বিএনপির অভিযোগের জবাব দেয়া হচ্ছে। একমাত্র তথ্যমন্ত্রী বাদে আর কাউকে যথাযথ যুক্তি দিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এর স্পষ্ট উত্তর আছে এবং উত্তরটি পরিষ্কার। প্রথমত, কেন বলা হচ্ছে যে, এটা প্রধানমন্ত্রী করেছেন? যে দু’জন ফোনে কথা বলছিলেনÑতাঁরা দু’জনেই বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই পৃথকভাবে হলেও তাঁদের প্রতিটি ফোনালাপ, তা তাঁরা যেখানেই কথা বলুক না কেন, মনিটরিং নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এটা জানেন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রীর এটা বিলক্ষণ জানার কথা। বিরোধীদলের নেতারা এবং তাঁদের শুভাকাক্সিক্ষগণ যখন প্রশান্তির হাসি হেসে বলেন, তাঁদের নেত্রী সব সাফ সাফ বলে দিয়েছেন এবং দারুণভাবে জিতে গেছেন তখন তো বলতেই হয় তিনি জানতেন এই সংলাপ মনিটরিং করা হচ্ছে এবং এটা বাজারে ছড়ানো হবে। কাজেই তিনি তো তাঁর মতো করে সবকিছু পাখির বুলির মতো বলে গেছেন। তাঁদের প্রতিপক্ষ মহল যদি অভিযোগ করেন, এটা বাজারে ছাড়ার ব্যাপারেও তাঁদের অদৃশ্য হাত আছে, তা তাঁরা অস্বীকার করবেন কি করে? হ্যাঁ, ওঁরা বলতে পারেন, যে সব এজেন্সি এ কাজ করে থাকে সে সব এজেন্সির কার্যক্রম তো সরকারের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেয় সব কিছু নির্ভর করে। অতি উত্তম। তাহলে বিডিআর বিদ্রোহের সময় যেসব ভিডিও টেপ ছড়িয়ে গেল সর্বত্র, এমন কি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানের ক্যান্টনমেন্টের দরবার হলে সেনা অফিসারদের সঙ্গে কথোপকথন যে অডিও প্রচারিত হলোÑসেটা কারা করেছিল? কেন করেছিল? এ ব্যাপারে তো বিরোধীদলের নেতারা জানতে চায়নি কিভাবে এটা প্রকাশিত ও প্রচারিত হলো ইন্টারনেটে। বরং তাঁরা এই বিষয়টিকে ধরেই তাঁদের রাজনৈতিক শত্রুতা চালিয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, দুই নেত্রীর সংলাপ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল কোথায়? সরকারের কঠোর সমালোচক দেশের সর্বাধিক পঠিত প্রভাবশালী দৈনিকে। ওই দৈনিকটি এমনভাবে কাটছাঁট করে সংলাপের আংশিক বিবরণ প্রকাশ করেছিল, যা বিরোধীদলীয় নেত্রীর পক্ষে যায়। এতে কি বিরোধীদলের নেতারা চাপা হাসি হাসেননি? পরে যখন একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল পুরো কথোপকথনটি প্রচার করে বসল এবং তাতে সংলাপের পরিবর্তে রূঢ় বাক্যানল বর্ষণের ব্যাপারটি দর্শকশ্রোতাদের স্তম্ভিত করল, তখন তাঁরা অফেন্সিভ পলিসি গ্রহণ করে পুরো দায়টি উল্টো দিকে ঠেলে দিল। আর আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার একটা বদঅভ্যাস আছেÑঅন্যের কৃতিত্ব দখল করা এবং নিজেকে জাহির করার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় কথা বলা। দু-একটা টিভি চ্যানেল যখন স্বপ্রণোদিতভাবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংলাপের অডিও টেপ সংগ্রহ করে প্রচার করে দিল, তখন তো উচিত ছিল তাঁদের চুপ করে পরিস্থিতি অনুধাবন করে সেটা দলীয়ভাবে বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তা না করে এর দায়িত্বটা তথ্য মন্ত্রণালয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের ঘাড়ে নিল। এর ফলে নির্বুদ্ধিতার যত প্রকার কুফল হয়, সবই তাঁকে ভোগ করতে হলো।
তৃতীয়ত, এই সংলাপের ব্যাপারে বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষনেতাই অবগত ছিলেন না। তাঁদের এমন অনেকের সঙ্গে আমার দেখা কিংবা কথা হয়েছে যাঁরা এতে শুধু হতাশ বা বিব্রতই নয়, রীতিমতো রুষ্ট এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁদের কারও কারও ধারণা দেশনেত্রী আর তাঁদের পরামর্শের তোয়াক্কা করেন না। সবল পরামর্শদাতার প্যানেল নিয়মিত তাঁকে পরিচালনা করছে। মূলত তিনি তাদেরই হাতে বন্দী। তারা যা বলবে, তাই করতে হবে। তারা যদি সংলাপ না চায়, তবে সংলাপ হবে না। তাঁরা যদি বলে হরতাল দিতে হবে, তবে হরতাল দেয়া হবে। তারা যদি বলে তাদের লোকজনের মুক্তির দাবি করতে হবে, তবে তাই করা হবে। একজন বিএনপি নেতা তো বলেই ফেললেন, আমরা পুতুলের সংসারের সদস্য ছাড়া আর কিছু নই। মাঝেমধ্যে যখন আমাদের নেতাদের সঙ্গে বসা হয়, তখন শুধু ওই প্যানেলের পাঠানো সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
চতুর্থত, যাঁরা স্বকর্ণে শুনেছেন কিংবা বিস্তারিত পাঠ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝেছেন ১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট সম্পর্কে কি ধরনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞ পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, জামায়াত দীর্ঘদিন যাবৎ ১৪ ডিসেম্বর তারিখে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করত শুধু এটা দেখানোর জন্য যে, এটা তাদের কাজ নয়, আওয়ামী লীগের কাজ। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এবং বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রাণদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর ব্যঙ্গোক্তি ছিলÑপার্থ নামের ওই হিন্দুটাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেই বেরিয়ে যাবে কারা এবং কাদের পরিকল্পনায় গ্রেনেড হামলা হয়েছে। অথচ এই নিজামীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্তি প্রমাণিত হয়েছে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র দিয়ে। এসব থেকেই তো বোঝা যায় ফোনালাপে উচ্চারিত নিষ্ঠুর মন্তব্যের মুসাবেদা কোন মহল থেকে করা হয়েছিল।
পঞ্চমত, সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। অনেকে এর প্রকাশ করা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যও করেছেন। একজন উচ্চপর্যায়ের নেতা বলেছেন, এটা প্রচারের ব্যাপারটি যদি আমাদের জানা থাকত তাহলে তো ম্যাডাম এভাবে কথা বলতেন না। কি দাঁড়ায় এর অর্থ? তিনি রূঢ় কথা বলবেন টেলিফোনেÑএটাই তাহলে পূর্ব নির্ধারিত ছিল? তিনি কথা বলতে দেবেন না এবং গড়গড় করে বলে যাবেনÑএটাই কি ঠিক করা ছিল? লাল টেলিফোনকে কালক্ষেপণের এবং বিষয়বস্তুকে গৌণ করার জন্য ব্যবহার করা হবেÑএটাই কি পূর্বপরিকল্পিত ছিল?
৪.
তার পরও আমার ধারণা সংলাপ হবে, আলোচনা হবে এবং ফল একটা আসবেই। জামায়াত সবকিছু মিসমার করার জন্য যত চেষ্টাই করুক না কেন, যেহেতু বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল এবং মাঠপর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীরা যেহেতু সম্ভাব্য বিজয়ের প্রত্যাশায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু তারা দীর্ঘসময়ের জন্য নির্বাচনী এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাইবে না। কারণ তাঁদের অনেকের পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেয়ার শক্তি থাকবে না। আর আমার সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে সেই বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তিÑ‘তুমি অধমÑতাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?’ সংলাপের দরজাটা উন্মুক্ত হোক। সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপ যদি শুরু হয় তো হোক না। আলোচনা সিঁড়ি বেয়ে উঠুক না ওপরের দিকে। ব্লেইম গেমের কূটকৌশলটা এবার বন্ধ হোক না। মানুষকে কষ্ট দেয়ার, মানুষ মারার, গাড়ি পোড়ানোর, বৃক্ষবিনাশের এবং শিক্ষাঙ্গনগুলো অচল করার সর্বনাশা হরতাল, কলকারখানা, হাটবাজার বন্ধ করার হরতালকে বিদায় দেয়া যায় না দু’পক্ষের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে? প্রধানমন্ত্রী না হয় আরেকবার ডাকলেনই চায়ের কিংবা নৈশভোজের আমন্ত্রণে। সেখানে তো তিনি অনায়াসে দেশ-জাতি এবং গণতন্ত্রের স্বার্থের বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারবেনই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, বৃহৎ যে হয় সে পায় মহত্বের অধিকার।
যেই জিহ্বা নিয়ে এই লেখা শুরু করেছিলাম সেই জিহ্বাতেই প্রত্যাবর্তন করি। আগেই বলেছি এই জিহ্বাই অনেক সুন্দরকে অসুন্দর করে, আবার শত্রুকে মিত্রে পরিণত করে। সুবচন নির্বাসনে না দিয়ে সুবচনের অধিষ্ঠান ঘটানো হোক রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। তাহলে রাজনীতিও বাঁচবে, রাজনীতিকও বাঁচবেন।

লেখক : সাংবাদিক

Friday, November 1, 2013

আরবের বিপুল লগ্নি বাংলাদেশে, উদ্বিগ্ন ভারত:অগ্নি রায়


নয়াদিল্লি
বাংলাদেশ জুড়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে বিপুল বিনিয়োগ করছে আরব দেশের ১৮টি ইসলামি ব্যাঙ্ক। সে দেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তাদের সক্রিয়তাও তত বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট হাতে আসার পরে নয়াদিল্লির কপালের ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে। গোটা ঘটনাটির পিছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ভূমিকাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিজেদের আশঙ্কার কথা হাসিনা সরকারকেও ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছে ভারত।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জামাতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন খাতে ঢালাও ঋণ দিচ্ছে ইসলামি ব্যাঙ্কগুলি। গোয়েন্দারা অনুমান করছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে এই পুঁজি লাগানো হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক মদত দেওয়া ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাঙ্কের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। রিপোর্টে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামি ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাঙ্ককে (এসআইবিএল)।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক দেখে অবাক হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দু’টি ব্যাঙ্কে। সৌদি আরবের আল রাঝি ব্যাঙ্কও বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএল-এর ৩৭ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে আল রাঝি-র হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র মাথা শায়ক আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই-ও এক সময়ে পুঁজির জন্য এই ব্যাঙ্কটির উপর নির্ভরশীল ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এবং বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কই প্রথম কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের সন্দেহজনক কাজকর্ম লক্ষ করে। সন্দেহভাজন গ্রাহকদের লেনদেন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে তারা বেশ কিছু ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দেয়।আইন ভেঙে জঙ্গি সংগঠনকে টাকা দেওয়ার জন্য এই আইবিবিএল-কে তিন-তিন বার জরিমানা করা হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক লক্ষ করেছে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইসলামি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লাজনাত আল-বির আল-ইসলাম’, যারা আল কায়দার অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশে বর্তমান হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সাউথ ব্লক। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনার সঙ্গেও সম্প্রতি দিল্লিতে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের। তবে আমেরিকার বিশ্লেষণে একমত হতে পারেনি দিল্লি।
সরকারি সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও প্রকাশ্য-গোপনে ভারত-বিরোধী প্রচার যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে দিল্লিকে। ভোট পর্যন্ত এই অরাজক পরিস্থিতি চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে দিল্লির অবস্থান, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সরকার বদলায় কিন্তু বিদেশনীতির অভিমুখ একই থাকে। কিন্তু দিল্লির আশঙ্কা, মৌলবাদী রাজনীতির বাড়বাড়ন্তে ভোটের আগে ও পরে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসতে পারেন।
তা ছাড়া চলতি অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে হুজি এবং জেএমবি-র মতো জঙ্গি সংগঠনের উত্থানও নয়াদিল্লির মাথা ব্যথার বিষয়। বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতি এবং অস্থিরতা বাড়লে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আইএসআই যে পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারে।

Monday, October 28, 2013

আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি। - হাসিনা Hasina-Khaleda Phone Conversation 26 Oct 2013 5pm









দুই নেত্রীর ফোনালাপ প্রসঙ্গই এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই নেত্রীর মধ্যে প্রায় চল্লিশ মিনিটের ফোনালাপটি সম্প্রচার করেছে একটি টিভি চ্যানেল। অন্যান্য প্রচার মাধ্যমেও আংশিক প্রকাশিত হয়েছে দুই নেত্রীর কথোপকথন। পরে তা ইন্টারনেটে সকল সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং আলোচনার ঝড় ওঠে। এই ফোনালাপ প্রকাশ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে সমর্থকরা। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার ফোনালাপ প্রকাশ করা যৌক্তিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুই নেত্রীর ফোনালাপ কোন ব্যক্তিগত ফোনালাপ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ফোনালাপ। এটি দেশ, জাতি, সংবিধান, রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে ফোনালাপ। এটি রাষ্ট্রীয় সংলাপ, জনগণের সম্পত্তি, জনগণের তা জানার অধিকার আছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এটি প্রকাশ করা হয়নি। যারা প্রকাশ করেছে তারাই বলতে পারবেন কার কাছ থেকে নিয়েছেন। একই দিন সকালে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারের সমালোচনা করে বলেন, একটি টিভি চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার টেলিফোনের কথাবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ নীতিবর্হিভূত ও রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সরকার জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশেই ওই কথোপকথন গণমাধ্যমে সম্প্রচার করিয়েছে।
দুই নেত্রীর ফোনালাপের বিস্তারিত-
এডিসি : সমালাইকুম
শিমুল : জী এডিসি সাহেব
এডিসি : শিমুল দা, আপনি তো ফোন দিলেন না। পিএম তো মিটিং এ ঢুকে যাবে।
শিমুল : আমরা তো বসে আছি। ৬টা থেকে ম্যাডাম অপেক্ষা করছেন।
এডিসি : না না আপনাদের তো কল করার কথা।
শিমুল : না না এ রকম কোন কথা আপনাদের সঙ্গে আমার হয়নি। আপনি ৬টায় টেলিফোন দেবেন ম্যাডামকে...
এডিসি : আমি এ রকম কোন কথা দেইনি যে আমি কল দিব। বিকজ আমরা এক্সপেক্ট করছিলাম।
শিমুল : না এ রকম কথা হয়নি। আমি ম্যাডামকে বলেছি...।
এডিসি : আমিও তো বলিনি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কল দিবেন।
শিমুল : এটা তো আপনাদের ডিউটি, আপনার প্রাইওরিটি আপনি দেন, এখনি দেন। আমি ম্যাডামকে দিচ্ছি
এডিসি : আছেন ওখানে আপনারা?
শিমুল : জি ম্যাডাম এখানে আছেন
খালেদা জিয়া : হ্যালো, হ্যালো...
শেখ হাসিনা : হ্যালো...
খালেদা জিয়া : সøামালাইকুম, কেমন আছেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কেমন আছেন? আমি ফোন করেছিলাম। দুঃখিত আমি ফোন করেছিলাম, দুপুরে আপনাকে পাইনি।
খালেদা জিয়া : দেখেন এই কথাটা যে বলছেন তা সম্পূর্ণ সঠিক নয়...।
না ফাস্ট আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। আপনি যে বলেছেন দুপুরে ফোন করেছেন, কিন্তু দুপুরে কোন ফোন আসেনি। কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। দুপুরে কোন ফোন আসেনি আমার এখানে।
শেখ হাসিনা : আমি লাল ফোনে ফোন করেছিলাম
খালেদা জিয়া : লাল ফোন তো আমার অনেক দিন, বছর ধরে ডেড পড়ে আছে। আপনি গবর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গবর্নমেন্ট চালান, এ খবরটুকু রাখেন না, বিরোধীদলের নেতার ফোন ঠিক আছে কি না? আর আপনি যদি ফোন করবেনই তাহলে তো আপনার লোক এসে ফোন চেক করে যাওয়া উচিত ছিল বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কিনা।
শেখ হাসিনা : লাল ফোন সব সময় ঠিক থাকে।
খালেদা জিয়া : ঠিক নাই তো। আপনারা লোক পাঠান। আপনি এখনি লোক পাঠান। লোক পাঠিয়ে দেখে যান।
শেখ হাসিনা : আপনি তো ভাল জানেন দুই বার পিএম ছিলেন। আপনি তো জানেন লাল ফোন সব সময় ভাল থাকে।
খালেদা জিয়া : ভাল থাকে তো। আমার টাতো ভাল নাই।
শেখ হাসিনা : ভাল আছে। আমি যখন ফোন করেছিলাম তখন রিং বেজেছে।
খালেদা জিয়া : কোন রিং বাজেনি। আমি সেদিনও চেক করেছি। আপনারা যদি সত্য না বলেন তাহলে তো চলবে না। লাল ফোন ঠিক আছে এটা আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই।
শেখ হাসিনা : সত্য কথা না বলার আমার কিছু নেই। আমি লাল ফোনে বার-বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : দীর্ঘদিন ধরে আমার লাল ফোন ডেড। এখন কী ডেড ফোন জেগে উঠবে? আপনার ফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড ফোন জেগে উঠবে?
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে। যে কোন কারণে হোক আপনি ধরতে পারেননি। যাই হোক...
খালেদা জিয়া : না আমি ধরতে পারি নাই। আমি এখানে বসা। এর মধ্যেই ঘুরি। ছোট্ট জায়গা। ছোট্ট জায়গার মধ্যে ফোন বাজলে আমি না ধরার কোন কারণ থাকতে পারে না। কোন ডেড ফোন বাজতে পারে না, বুঝছেন। এটাই হলো সত্য কথা।
শেখ হাসিনা : দেখেন ডেড ছিল না ডেড করে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়া : ডেড ছিল...আমার সঙ্গে তো লাল ফোনে কথা বলার কেউ নেই। আমি কার সঙ্গে কথা বলব।
শেখ হাসিনা : আমি আগামীকাল দেখব কেন আপনার ফোন এ রকম ডেড ছিল।
খালেদা জিয়া : সেটা দেখবেন ভাল কথা।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে ফোন করলাম যে, আগামী ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় গণভবনে আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি জানেন যে আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে। আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি গণভবনে আসার জন্য। আপনি...
খালেদা জিয়া : কী বিষয়ে দাওয়াত দিচ্ছেন, সেটা তো আপনি বলবেন...
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি আপনি আমার সঙ্গে বসে রাতে একটু খাবার খাবেন।
খালেদা জিয়া : না, আমি খাবার খেতে রাজি আছি। কিন্তু ২৮ তারিখ আমি যেতে পারব না। আমাদের হরতাল আছে। ২৯ তারিখ ৬টায় আমাদের হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করেন!
খালেদা জিয়া : না, আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আমি অনেকদিন ধরে আপনাদের রিকোয়েস্ট করেছি আপনারা আসুন, আলোচনায় আসেন। আপনারা আসেননি। কাজেই আমাদের হরতালের সময় পার হওয়া পর্যন্ত। আপনারা দেখবেন...। ৬টা পর্যন্ত আমি বের হতে পারব না।
শেখ হাসিনা : ... আপনি নিজেই কালকেই বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে আলোচনা ...
খালেদা জিয়া : আলোচনা চলবে। আপনার যদি আন্তরিরকতা থেকে থাকে আমার যেতে কোন আপত্তি নেই। আমি শুধু একা যাব না। আমার সঙ্গে আরও অনেকে থাকবে।
শেখ হাসিনা : নিশ্চয়ই। আপনি যতজন খুশি নিয়ে আসতে পারেন।
খালেদা জিয়া : না আমি দলবল নিয়ে যেতে চাই না। যাদের প্রয়োজন মনে করব তাদের নিয়ে যাব। এটা হতে পারে ২৮ তারিখের পরে। ২৯ তারিখ আমার হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে আনুরোধ করব জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে... হরতাল প্রত্যাহার করে নেন। হরতাল করে মানুষ খুন করা, গানপাউডার দিয়ে মানুষ পোড়ানো ...
খালেদা জিয়া : মানুষ খুন আপনাদের অভ্যাস। আপনার ভাই বলেছে, সে গানপাউডার দিয়ে বাসে আগুন দেয় আপনার নির্দেশে। এসব অভ্যাস আপনাদের আছে। আমাদের এ অভ্যাস নেই...। আপনারা লগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ মারেন। এগুলো সব রেকর্ডে আছে। আপনার নির্দেশে এই সব হয়েছে। কাজেই আপনি এগুলো অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি বলছি সে জন্য হরতাল চলবে। ২৯ তারিখ শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : দয়া করে জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করেন...।
খালেদা জিয়া : জনগণের স্বার্থেই আমি হরতাল দিয়েছি। যেহেতু আপনারা কোন আলোচনায় আসতে রাজি নন সেহেতু আমাদের হরতাল...।
আপনার মন্ত্রীরা বলেছে- কোন আলোচনা হবে না। এ বললে তো হবে না। আপনি নিজে বলেছেন- আমাদের প্রস্তাব রিজেক্ট করে দিয়েছেন। এখন আবার আলোচনার কথা বলছেন, তো সেই আলোচনা আমাদের হরতালের পর হতে পারে।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করেন। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি।
খালেদা জিয়া : আপনি এই জিনিসটা যদি আর একদিন আগে নিতেন সুযোগটা ছিল। আপনি সেটা করেননি।
শেখ হাসিনা : এটা একদিন আগের বিষয় না। আপনি জানেন আমি বিভিন্ন জনের সঙ্গে মিটিং বসছি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি আপনি ব্যস্ত। কিন্তু আমাদেরও এত বেশি ব্যস্ততা না থাকলেও যথেষ্ট ব্যস্ততা আছে। কিন্তু ইচ্ছা করলে উপায় বের করা যায়। কিন্তু আপনি সেটা করেননি। আপনারা তো মিন মাইন্ডের পরিচয় দেন। কালকে যে আমাদের পারমিশন দিলেন এত দেরিতে দিলেন কেন? কতদিন আগে পারমিশন চেয়েছি, মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন নাই। মানুষ আমাদের জনসভায় আসে আমাদের কথা শোনার জন্য। আপনারা মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন নাই। মানুষ দাঁড়িয়ে আমাদের আপনারা মিটিং করতে দেবেন মাইক ব্যবহার করতে দেবেন না। এত শেষ সময়ে পারমিশন দেন যখন আবার ডায়াসটা ও আবার বানাতে পারবে না। আপনি আগে মিটিং করেননি। এগুলো তো আগে লাগে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্রের নমুনা। আমার মিটিংয়ে কেন মাইক দেয়া হলো না? দেশে কী ইমার্জেন্সি? ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যে যুদ্ধাবস্তা শুরু করে দিলেন আপনারা। এটা কী?
শেখ হাসিনা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে। গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন- গ্রেনেড হামলা আমরা করি না। এর পেছেনের লোক কারা? ...হ্যাঁ, সেদিন রাত ১১টায় আপনারা পারমিশন দিয়েছিলেন। আমাদের মনে আছে। আমি এসব বলতে চাই না। এ ধরনের কথা আপনার মুখে শোভা পায় না।
খালেদা জিয়া : আপনারা জনসভার ভেন্যু চেঞ্জ করে আপনাদের অফিসের সামনে নিয়ে গেছেন সেটা ও আমাদের জানাননি। এসব পুরনো কথা তুলে কোন লাভ নেই।
শেখ হাসিনা : আপনার মুক্তাঙ্গনে পারমিশন দেননি!
খালেদা জিয়া : আমরা পারমিশন দিয়েছি। এগুলো খুঁজে বের করেন। রেকর্ড আছে। আমরা পারমিশন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : আমি এখন আপনাকে বলছি যদি সত্যিকার আলোচনা করতে আন্তরিক হন তাহলে আমাদের কর্মসূচীর পরে।

শেখ হাসিনা : আমি ঝগড়া করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : আপনি তো ঝগড়া করছিলেননি।
শেখ হাসিনা : আপনি তো একতরফা বলেই যাচ্ছেন। আমাকে তো বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া : আমি একতরফা কথা বলব কেন? আপনি কথা বলছেন আমি তার কাউন্টার জবাব দিচ্ছি শুধু।
শেখ হাসিনা : আমি কথা বলারই আপনার কাছে সুযোগ পাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : না আপনি বার বার বলছেন হরতাল, হরতাল প্রত্যাহার এখন হবে না। আমাদের কর্মসূচী শেষ হলে তারপরও যদি ...
শেখ হাসিনা : হরতাল করে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন?
খালেদা জিয়া : আমি মানুষ খুন করছি না। আপনারা মানুষ খুন করছেন। কালকেও ৯ জন মানুষ হত্যা করেছেন আপনারা। আপনারা খুন করছেন। আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে না? আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগকে আমরা অস্ত্রসহ ছবি দেখাতে পারব। আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিভাবে খুন করে নিরীহ মানুষকে।
শেখ হাসিনা : বললাম তো খুনের রাজনীতি আমরা করি না। আমি ভিকটিম...
খালেদা জিয়া : আপনাদের তো এটা মজ্জাগত অভ্যাস। পুরনো অভ্যাস সেই আপনারা স্বাধীনতার পর থেকে ৭১ এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনও তো এই হত্যা করেছেন। এত মানুষ হত্যা করেছেন এগুলো ভুলে গেছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : ৭১ এ আমরা হত্যা করেছি?
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, অবশ্যই ৭১ এর পরে আপনারা সরকার গঠন করে...
শেখ হাসিনা : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য ...
খালেদা জিয়া : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা আমরা করছি না। আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি ঠিকমত করতেন আমরা পূর্ণ সমর্থন দিতাম। কিন্তু আপনারা সেই ট্রাইব্যুনাল করেননি। না করে একতরফা করেছেন এবং আপনার দলে যে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের একটাও ধরেননি। সেগুলোকে কেন একটাও ধরেননি? আপনি নিরপেক্ষ প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন, আপনি তো দলের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারেননি। নিরপেক্ষতার উর্ধে আপনি যেতে পারেননি। তবে.... না হলে আমার সঙ্গে এই আচরণ আপনি করতেন না। যা করেছেন আপনারা, আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, সেই দিন আমরা পার্টি অফিসে যে আচরণ করলেন এর পরে আর বলতে হবে? বিরোধী দলের নেতাকে পর্যন্ত আপনারা সম্মান দিতে জানেন না, কিসের গণতন্ত্রের কথা বলেন আপনি?
শেখ হাসিনা : আপনার কথার জবাব দিতে গেলে তো আমাকে ২০০১ এর থেকে অনেক কথাই বলতে হয়।
খালেদা জিয়া : সেটার জবাব আমিও দিতে পারি। আপনি দেবেন আমিও দেব।
শেখ হাসিনা : ’৯৬ সালে আমার দলের এরশাদ, ৭-৮ দলের সঙ্গে কি কি করেছিলেন আর ২০০১ সালে...
খালেদা জিয়া : ’৭১ সালে আমরা কিছুই করিনি, এরশাদের সময় যত করেছিলেন আপনারা। এরশাদ যখন একটা নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল। তার পরে যখন আপনি বললেন ‘আই এম নট আনহ্যাপি’ আপনি যখন বিবিসিকে বললেন তার পরে আর কি থাকে?
শেখ হাসিনা : আমি এটা কখনও বলি নাই।
খালেদা জিয়া : একটা নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল আর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন কোন সাংবিধানিকই ছিল বলেন তো?
শেখ হাসিনা : আপনার চয়েস ছিল, আমার না।
খালেদা জিয়া : ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন আমার চয়েস ছিল না। আপনার চয়েস ছিল। আপনি নিজে বলেছেন আমার আন্দোলনের ফসল। ওথ্ সেরেমনিতে আমি যাইনি, আপনি গিয়েছিলেন এগুলো ভুলে যান কেন? এসব অপকর্ম করে ভুলে যেতে চান? কিন্তু মানুষ তো ভুলেন সেগুলো।
শেখ হাসিনা : ৯ জন অফিসার ডিঙ্গিয়ে মঈনুদ্দিনকে আপনি আর্মি চীফ বানিয়েছেন, আমি বানাইনি।
খালেদা জিয়া : সেটা আপনি করতে পারেন। আপনি এরকম অনেক অফিসারেকে বাড়ি পাঠিয়েছেন। ৯ জন কি ৭ জন সেগুলো বড় কথা না, আপনি অনেককে ডিঙ্গিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন। মঈনুদ্দিন যেই থাকুক না কেন- যখন এটা করল আপনারা সেই ইয়েতে গেলেন কেন আপনি? সেটা সংবিধান সম্মত হয়নি। সংবিধান সম্মত ছিল না। সেই ওথ টেকিংয়ে কেন গেলেন আপনি? সেই দিন তো আপনি একবারও মনে করেন নাই আমরা দুই দলই তখন ক্ষমতার বাইরে। তখন তো একবারও মনে করলেন না আমরা আলোচনা করি। ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না এবং সংবিধান সম্মত নয় আপনি তো সেটা মন করলেন না। আপনি তো চলে গেলেন ওথ টেকিংয়ে, আপনি খুব খুশি হয়ে। হাসি মুখে প্রেসকে বললেন- আমার আন্দোলনের ফসল।
শেখ হাসিনা : আমি সব সময় হাসিখুসি। আমি জাহান্নামের আগুনে বসেও হাসি। আমার বাবা, মা, ভাই...
খালেদা জিয়া : এখন অতীত ছেড়ে আমি বলতে চাই যে, অতীত বাদ দিয়ে, আমি বলত চাই সামনের দিকে কি করে আগাবেন। অতীত ধরে থাকলে আমরা সামনে এগুতে পারব না। আপনার যদি সত্যিই সৎ উদ্দেশ্য থাকে সামনের দিকে আমরা কী করে এগুব?
শেখ হাসিনা : আপনি তো অনেক অভিযোগ করলেন। আমি তো অতো অভিযোগ করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : সেটাই...
শেখ হাসিনা : ছোট রাসেলের...
খালেদা জিয়া : নির্দিষ্ট প্রস্তাব কি? সেইটা বলেন।
শেখ হাসিনা : ২১ আগস্ট যখন গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল...
খালেদা জিয়া : আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি। আপনি যত থাকবেন তত আমাদের জন্য ভাল।
শেখ হাসিনা : রাসেল হত্যাকারীদের?
খালেদা জিয়া : আপনি যত থাকবেন তত আমাদের জন্য ভাল। যত অশ্লীল ভাষায় কথা বলবেন তত আমাদের জন্য ভাল। আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
শেখ হাসিনা : ১৫ আগস্ট আপনি যখন কেক কাটেন...
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমার জন্মদিন, আমি কেক কাটবই...
শেখ হাসিনা : খুনীদের উৎসাহিত করার জন্য আপনি যখন কেক কাটেন। আমার বুকে এসে বিঁধে।
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমি কেক কাটবই, ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোন মানুষের জন্ম হবে না? কোন মানুষ উৎসব পালন করবে না? এগুলো বাদ দেন।
শেখ হাসিনা : ............
খালেদা জিয়া : কথায় কথায় আপনারা বলেন। এগুলো বাদ দেন। জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবনদান করেছে। এগুলো কথা বইলেন না, বুঝেছেন? আপনারা তো বাকশাল ছিলেন। আপনারা আওয়ামী লীগ হলেন, জিয়াউর রহমানের জন্য। জিয়াউর রহমানের বদৌলতে আওয়ামী লীগ হতে পেরেছেন। না হলে আওয়ামী লীগ হতে পারতেন না।
শেখ হাসিনা : ছোট রাসেলকে তো আপনি এ বাসায় ঘুরতেও দেখেছেন।
খালেদা জিয়া : আমি সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমরা এগুলোকে সমর্থন করি না।
শেখ হাসিনা : জন্মদিন পালন....
খালেদা জিয়া : দুঃখিত। আপনারা এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেন আমি আমার বক্তব্যে সেদিন বলেছি এগুলো ভুলে যাই আমরা। এই কালচার বাদ দিয়ে এখন নতুন করে শুরু করি। নতুন করে শুরু করি। যদি সেটাতে আপনি রাজি থাকেন তো আসেন আমরা সুন্দর আলোচনা করি। আমার আলোচনা করতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেই ডেট হতে হবে আমার হরতাল শেষ হবার পর।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতাল প্রত্যাহার করবেন না?
খালেদা জিয়া : না আমি হরতাল প্রত্যাহার করব না।
শেখ হাসিনা : এদেশের গরিব মানুষগুলো...
খালেদা জিয়া : এটা তো আমার ডিসিশন না। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি কি করে একলা করব? আমি কিভাবে একলা করব?
শেখ হাসিনা : ১৮ দলকে ডেকে নিয়ে।
খালেদা জিয়া : তাদের নিয়ে.... এখন সময় নাই। আপনি যে তাড়া করতেছেন সবাইকে তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনি তো সব পুলিশ লাগাইয়া রাখছেন সবার পেছনে। কি করে মানুষ পাওয়া যাবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আমরা পুলিশ লাগিয়ে রাখব কেন?
খালেদা জিয়া : আপনি রাখবেন না তো কে রাখবে? পুলিশ কার কথায় চলে? আমার কথায় চলে? পুলিশ কি আমার কথায় চলে? আপনি তো সবার বাসায় বাসায় রেড করেছেন। বস্তি থেকে পর্যন্ত আপনি লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা : যেখানে বোমা ব্রাস্ট হবে সেখানে তো...
খালেদা জিয়া : বোমা ব্রাস্ট আপনারাও করেন। আর নাম দেন আমাদের। এটা তো
শেখ হাসিনা : আপনার মতো দায়িত্বশীল মানুষের কাছ থেকে এই কথা আশা করি না। আপনাদের পুরাতন ঐতিহ্য। কাজেই এগুলো কথায় আবার ফিরে আইসেন না।
খালেদা জিয়া : আমি বলতে চাই আপনারা যদি ২৯ তারিখের পরে করেন আমি রাজি আছি। ২৯ তারিখের পরে আমি নিশ্চয়ই কথা বলতে রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আলটিমেটাম দিলেন দুই দিনের, আমি দুইদিনের মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম। অথচ হরতালও করবেন আবার বলবেন ২৯ তারিখের পরে। কালকে কি বক্তৃতা দিলেন আর আজকে কি বলছেন তা ভেবে দেখেন তো?
খালেদা জিয়া : আমি তো বলেছি আলোচনাও চলবে, কর্মসূচীও চলবে।
শেখ হাসিনা : কিন্তু আপনি নিজেই বলেছিলেন দুইদিনের মধ্যে যদি আলোচনা...
খালেদা জিয়া : আপনারা তো জানেনই হরতাল। আপনি তো জানেন আমরা যখন আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ...শোনেন আপনি আমার কথাটা আগে। আপনি যখন বলছেন যে, দেখেছেন যে আমার একটা...
শেখ হাসিনা : সামনে ক্যামেরা নিয়ে কথা বলছেন!
খালেদা জিয়া : আপনি ক্যামেরা নিয়ে বসে আছেন।
শেখ হাসিনা : আমার এখানে কোন ক্যামেরা নাই।
খালেদা জিয়া : ...কেউ নেই। আমি নিজেই কথা বলছি। আমি বাসা থেকে কথা বলছি। অফিস হলে আমার জন্য সুবিধা হতো। ক্যামেরা ট্যামেরা থাকলে সুবিধা হতো। কিন্তু সেগুলো তো এখানে নেই। আমি এত হীন কাজ করতে চাই না। নিচু কাজ করতে চাই না। তার পরে টেলিভিশনে দেখব আপনারাই ক্যামেরা দেখাচ্ছেন। আমাদের এখানে ক্যামেরা কিছু নেই। তাহলে কেন আপনার এই যে, গুলশানে তাকে আপনি স্যাক করেন। যে বলেছে টেলিভিশন স্ক্রলে গিয়েছে যে উনার রেড টেলিফোন ঠিক আছে। আমি এটা দেখতে চাই।
শেখ হাসিনা : আমি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে খবর নিলাম যে টেলিফোন ঠিক আছে।
খালেদা জিয়া : ফোন ঠিক নাই। সব ভুল।
শেখ হাসিনা : ১০-১২ বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : আমরা তাহলে কালা হয়ে গেছি? বলতে চান যে কানে শুনছি না কেউ। আমরা কানে কেউ শুনি না? ফোন বাজলে আমরা শুনি না আপনি শোনেন?
শেখ হাসিনা : আমি কানে শুনব কি করে? জানেনই তো যে আমার এক কান এমনিই নষ্ট।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, সেটা তো আপনি শুনছেন তার পরও আপনি বলছেন টেলিফোন বাজছে। আমরা বলছি ফোন বাজছে না। ফোন ডেড।
শেখ হাসিনা : আমার শোনার বিষয় না। ফোন আমি নিজে করেছি।
খালেদা জিয়া : বাজেনি তো। আপনি নিজে করলে কি হবে? একটা যে ডেড ফোনকে আপনি বলছেন যে আপনি ফোন করেছেন?
শেখ হাসিনা : রিং হচ্ছিল...
খালেদা জিয়া : আপনি মানসিকভাবে ঠিক আছেন?
শেখ হাসিনা : ফোন রিং হচ্ছিল...
খালেদা জিয়া : না রিং হবে কি করে। যে ফোন ডেড সে ফোন রিং কি করে হবে? এটা তো মন মানসিকতার পরিচয় যে আপনি সত্যি কথা বলছেন কিনা?
শেখ হাসিনা : আমি সত্যি কথা বলছি। মিথ্যা বলার কিছু নেই।
খালেদা জিয়া : আমি কালকে পর্যন্ত চেক করেছি যে আপনি ফোন করতে পারেন এগুলো রিউমার ছড়াচ্ছে। আমি ফোন চেক করেছি। রিপোর্ট করেছি। আপনাদের লোকজন কেউ আসেওনি। তারা আমাদের মানুষ বলেই মনে করে না। কাজেই আসেও না। টেলিফোন ঠিক করার গরজ মনে করেন না। কিছুই করে না। যদি ইচ্ছে ছিল কেন রেড টেলিফোন কেন আমাদের তো মোবাইল, টেলিফোন ছিল...
শেখ হাসিনা : ..........
খালেদা জিয়া : মোবাইলে হয়। টিএনটিতে হয়...
শেখ হাসিনা : না আপনি রেড টেলিফোনের দোষ দিয়ে খামোখা মিথ্যা বলার দরকার নাই।
খালেদা জিয়া : মিথ্যা বলব কেন? যে টেলিফোন ডেড।
শেখ হাসিনা : .... আমার মনে ছিল না আপনার নাম্বার। ১৬০২
খালেদা জিয়া : আপনার মুখস্ত না থাকতে পারে। আপনার সামনে লেখা থাকতে পারে।
শেখ হাসিনা : এখানে একবার ক্যামেরাম্যান এসেছিল ফটো তুলতে ছিল। আমি বিদায় করে দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : এটা সত্য কথা আপনি এইটা বলব হবে না, এই টেলিফোন বিজি ছিল। এটা বললে বিশ্বাস করব না।
শেখ হাসিনা : না ঠিক আছে। এক্সচেঞ্জে এটা কালকে খবর নেয়া যাবে।
খালেদা জিয়া : না আপনার এক্সচেঞ্জ থেকে বলেছে যে গুলশান এক্সচেঞ্জ বলেছে তার বিরুদ্ধে রীতিমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ সে সত্য কথা বলেনি।
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোন কিন্তু আলাদা এক্সচেঞ্জ। আরও ভাল করে জানবেন।
খালেদা জিয়া : আলাদা এক্সচেঞ্জই। টেলিভিশন স্ক্রল দিছে। আপনি নিজে সামনে থাকলে দেখতেন।
শেখ হাসিনা : আমি গণভবনের অফিসে বসে আছি। আমার অফিসে কোন টেলিভিশন নেই।
খালেদা জিয়া : তাহলে কেন বলা হচ্ছে, টেলিফোন ঠিক আছে। এ কথা সত্য নয়। আপনার লোককে মিথ্যা কথা বলতে বলে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা : আপনার শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : আপনার সঙ্গে কথাই ছিল যে এই টেলিফোনে কথা হবে আমাদের। আমি তো বসে আছি এখানে। আধা ঘণ্টা বসে আছি যে আপনার টেলিফোন আসবে। আমরা তো গোপন কিছু বলব না। এক সময় আমরা অনেক কথা বলেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এক সঙ্গে কাজ করেছি। কেন কথা বলব না। এখনও বলতে চাই, কাজ করতে চাই। আসুন দেশের...
শেখ হাসিনা : আগামী ২৮ তারিখ আসেন। আমরা আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না। আপনি যদি সত্যি আন্তরিক হন, ২৯ তারিখের পর ডেট দেন। আমি আসব।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে বললেন...
খালেদা জিয়া : না, আমি কর্মসূচী দিয়ে ফেলেছি। এখন সম্ভব না।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনার জন্য না ডাকলে হরতাল দেবেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল দিয়ে ফেলেছি। তার আগে বলা উচিত ছিল।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার বক্তব্যটা আবার শুনেন।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, এখন আমি নিজে শুনলেও কর্মসূচী দিয়ে ফেলেছি। সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি, কর্মসূচীও চলবে, আলোচনাও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি যেহেতু বললেন দুই দিনের মধ্যে...
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি। কর্মসূচী-সংলাপ এক সঙ্গে চলবে।
শেখ হাসিনা : এর আগেই আমি ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, হরতাল চলবে। কর্মসূচী ঠিক হয়ে গেছে। ১৮ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ দল পাব কোথায় এখন? এখন কেউ নেই।
শেখ হাসিনা : ১৮ দল আপনি পাবেন, ডাকলেই পাবেন। আপনি ডাকলে হবে না, এটা কোন কথা হলো নাকি। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
খালেদা জিয়া : বিশ্বাস করবে না ঠিক আছে। আমি ডাকলে হতো। কিন্তু এখন হবে না, এই কারণে...
শেখ হাসিনা : আপনি বললেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনা না করলে আপনি হরতাল দেবেন। এ সময়ের মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, আপনি যদি কাল রাতেও যদি আপনি ফোন করতেন, তাহলে কর্মসূচী বিবেচনা করা যেত। পুরো রাত চলে গেছে। সকালে অফিসে চলে গেছি। এখন আনেক দেরি করে ফেলেছেন।
শেখ হাসিনা : রাতে ফোন না দিলে তো আপনার হয় না। আমি রাত জাগি না।
খালেদা জিয়া : আপনি কি সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়েন?
শেখ হাসিনা : আমি নামাজ পড়ি, কোরান পড়ি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি। আপনি নামাজ পড়েন, কোরান পড়েন... করেন। ... তাদের গুলি করে হত্যাও করেন। সবই জানি। এটা তো নতুন কিছু নয়।
শেখ হাসিনা : আমি প্রতিদিন কোরান শরীফ পড়ি এটা তো সবাই জানে। আপনারা তো কোরান পুড়িয়েছেন।
খালেদা জিয়া : আমরা কোরান পুড়াইনি, আপনারা পুড়িয়েছেন। কারণ আপনারা এটা বিশ্বাস করেন না। আপনারা ২৯ তারিখের পর যদি চান আলোচনা করতে আমরা রাজি আছি। হরতাল কর্মসূচী আমার প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ নেই।
শেখ হাসিনা : আপনি যে সময়ের মাঝে বলেছেন আমি ঠিক সেই সময়ের মাঝেই ফোন করেছি আলোচনার জন্য। এখন আপনি যদি বক্তৃতা থেকে সরে যান তাহলে জনগণের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
খালেদা জিয়া : আমার সঙ্গে এখন কোন নেতা নেই। এখন স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতাদের পাব না, ১৮ দলের নেতাদের পাব না। কার সঙ্গে কথা বলে আমি প্রত্যাহার করব বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কাউকে পাবেন না এটা কোন কথা হল? আপনি হুকুম দিলেই তো সব হবে। আপনি দেশ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন আর আপনি এইটুকু পারবেন না, এটা কোন কথা হল? আপনি আপনার নেতাদের ডেকে এক করতে পারবেন না, এটা হয় নাকি?
খালেদা জিয়া : আপনার ডিবি, এসবি সব আমার বাড়ি ঘেরাও করে বসে থাকে। আমার নেতারা কি করে আসবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনার নেতারা দা-কুড়াল দিয়ে মানুষকে আক্রমন করতে বলবে, জ্বালাও পুড়াও করতে চাইবে আর পুলিশ কিছু করবে না?
খালেদা জিয়া : দা দিয়ে বিশ্বজিৎকে আপনার লোকজন হত্যা করল না?
শেখ হাসিনা : ওরা আমার লোকজন না। যারা করেছে পুলিশ তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছে এবং গ্রেফতার করার পরই জানা গেছে তারা ছাত্রলীগের নামধাম করলেও তাদের বাবা মা জামায়াত করে অথবা বিএনপি করে।
খালেদা জিয়া : সব নিরীহ মানুষকে ধরা হয়েছে। যারা মেরেছে তারা ছাত্রলীগই করে এবং ছাত্রলীগই করে। কাজেই আমি বলব, আপনি ২৯ তারিখের পর যে কোন সময় দেন আমি আলোচনায় রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার কথাতেই থাকেন। জনগণের সামনে যে কথা আপনি দিয়েছেন সেই কথাটাই রাখেন।
খালেদা জিয়া : না আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এর পর যাতে আর কোন কর্মসূচী দিতে না হয় সে জন্য ২৯ তারিখের পর আলোচনায় বসেন।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেটার কথা রাখবেন না?
খালেদা জিয়া : আমি এখন বলে দিয়েছি যে এই কর্মসূচী থেকে বেড়নোর কোন পথ নেই। আপনি ৩০ তারিখে করেন আমার কোন আপত্তি নেই।
শেখ হাসিনা : আমার একটা মিটিং আছে, আমি দুঃখিত আমাকে যেতে হবে। আমি আবারও বলব আপনি পাবলিকের সামনে যে কথা দিয়েছেন তা মানেন।
খালেদা জিয়া : আমি আবারও পাবলিকের কাছে বলব যে ৩০ তারিখের পর আমাদের আলোচনায় বসতে কোন সমস্যা নেই।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেন, বাকিদের সঙ্গে কথা বলেন। জাতির সামনে যে কথা দিয়েছিলেন সেটা অনুসরণ করেন। আলোচনায় আসেন।
খালেদা জিয়া : আপনি যদি কাল রাতে ফোন দিতেন তাহলে আমি কাল রাতেই মিটিং ডাকতাম। টাইম ওভার হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা : আমি তো বলেছিই আমি রাত জাগি না। আমার এখানে আগত সবাইকে আমি দশটার মাঝে বিদায় করে দেই।
খালেদা জিয়া : দশটা কেন? আমি তো সেই সাতটার সময় আমার অফিসে চলে গিয়েছি। আমার নেতারা সাতটা থেকে বসা। আপনি বিএনপি অফিসে ফোন করেলেই তো আমাকে পেয়ে যেতেন।
শেখ হাসিনা : আমি রাতে কাউকে ফোন দেই না।
খালেদা জিয়া : সাতটা তো রাত নয়, সাতটা তো সন্ধ্যা।
শেখ হাসিনা : আমার তো নেতাদের সঙ্গে একটু আলোচনা করে নিতে হবে।
খালেদা জিয়া : আমারও তো আলোচনা করতে হবে। আপনি যদি তখন ফোন দিতেন তখন আমি সবাইকে ডেকে, ১৮ দলকে ডেকে আলোচনা করতে পারতাম।
শেখ হাসিনা : আপনি তো আলোচনা এখনও করতে পারেন। আপনি তো দুইদিন সময় দিয়েছিলেন। এর মাঝেই তো ফোন করা হলো।
খালেদা জিয়া : না, আপনি কি মনে করছেন এই তিনদিনই হরতাল শেষ হয়ে যাবে। এটা তো না।
শেখ হাসিনা : আপনি তো আরও হরতাল দিবেন। আপনি ’৯৬ থেকে ২০০১ সালে আপনি ৩৩০ দিন হরতাল দিয়েছিলেন সেটাও আমার মনে আছে।
খালেদা জিয়া : আপনারাও তো দিয়েছিলেন। ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। ’৯১-এ আপনারা আমরা মিলে এক সঙ্গে আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম। আমরা সরকারে গেলাম, আপনি বিরোধী দলে গেলেন। আমরা এক সঙ্গে মিলে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি তো তখন বলেছিলেন আপনি একদিনের জন্য আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না।
শেখ হাসিনা : না এটা আমি বলিনি।
খালেদা জিয়া : আর কেয়ারটেকার সরকার। এই সরকার জামায়াতের আন্দোলনের ফসল। আপনি তখন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া মানবেনই না।
শেখ হাসিনা : মাগুরার ইলেকশনের পর যে অবস্থা হয়েছিল তখন সেটা ছাড়া উপায় ছিল না।
খালেদা জিয়া : দেশের মানুষও এখন চায়, আপনার ডিসি ভোট চাইছে এ কথা পত্রিকায় এসেছে। আপনি যদি ৩০ তারিখে করতে চান তাহলে আমি রাজি আছি। এটা ফাইনাল এর বাইরে আমি যেতে পারি না।
শেখ হাসিনা : পত্রিকায় কি এসেছে সেটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নাই। আমার পার্টি যথেষ্ট স্ট্রং। ভোট দেয়ার লোকের আমার অভাব নাই। আমার দল এদেশে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জন্ম নিয়েছে। অতএব আমাদের ভয়ের কিছু নেই।
খালেদা জিয়া : আমার দলও সংগ্রাম করেই ক্ষমতায় এসেছে। এসব কথা বলে লাভ নাই। কথার পিঠে কথা আসবে।
শেখ হাসিনার : আমি আপনাকে আবারও অনুরোধ করছি, আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করেন। যে কথা জনগণকে দিয়েছেন সেটা রাখেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না, আপনি সময় মতো ফোন করেননি। সে জন্য আমি দুঃখিত। আপনি যদি কালকে ফোন দিতেন তাহলে পরিবেশ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
শেখ হাসিনা : আপনি তো কালকেই আল্টিমেটাম দিলেন। আর আমি আজ দুপুরেই ফোন দিলাম। আপনি ফোন ধরলেন না। শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে বার বার আমার সহকারীর কথা হয়েছে। এখন সন্ধ্যায় কথা হচ্ছে।
খালেদা জিয়া : আপনি তো আমাকে সময়ই দিলেন না। আমি নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পেলাম না। আপনি নয়টার সময় ফোন দিলে নেতারা আমার পাশে থাকত, তখন একটা ডিসিশান দেয় যেত। অথচ আপনারা বললেন সন্ধ্যা ছয়টা। ৬টা। ৬টা।
শেখ হাসিনা : আমার রাতে একটা জরুরী মিটিং আছে। আপনি জানেন কোন মিটিং এ আমি দেরি করতে পছন্দ করি না।
খালেদা জিয়া : আপনি যদি ভাবতেন মিটিং ইম্পরট্যান্ট না এটা ইম্পরট্যান্ট তাহলে আপনি সময় বের করতে পারতেন। আপনি মিটিং থেকে বের হয়ে এসেও কথা বলতে পারতেন। তখন নেতারা উপস্থিত থাকত, এটা সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকত। এখন সে সুযোগ নাই।
শেখ হাসিনা : সব মিটিংই ইম্পরট্যান্ট। এখন তো কথা হলো, আপনি আপনার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে হরতাল উইথড্র করে নিলেই পারেন। আপনি আপনার নেতাদের বলেন যে আমি আপনাকে অনুরোধ করেছি হরতাল তুলে নিতে।
খালেদা জিয়া : তাহলে আপনি বলেন আমি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, তাহলে হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : এটা নিয়েই তো আলোচনা হবে। এটা মেনে নিলে আর আলোচনার কি থাকল?
খালেদা জিয়া : নো, আলোচনার আরও অনেক বিষয় আছে। আপনি বলেন যে আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : আমার নব্বই ভাগ সিট থাকা সত্ত্বেও আমি সর্বদলীয় সরকারে আপনাদের আহ্বান করেছি। আপনি নিজের লোকদের বিশ্বাস না করে।
খালেদা জিয়া : না সর্বদলীয় সরকার হয় না। আমরা এসবে কখনও অংশগ্রহণ করিনি।
শেখ হাসিনা : আপনি তো তাহলে আপনার নিজের দলের লোকদেরই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
খালেদা জিয়া : দেখুন আপনি যদি বলেন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেবেন তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেব।
শেখ হাসিনা : দেখুন যারা মাইনাস টু ফর্মুলা আনতে চেয়েছিল তাদের আবারও সুযোগ দিতে চান কেন?
খালেদা জিয়া : না সেটা আমি দিতে চাই না, আপনি দিতে চান। আপনি যে ভাষায় কথা বলছেন...
শেখ হাসিনা : না, আপনি তো খুব মধুর ভাষায় কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া : আপনি পাবলিক মিটিংয়ে যে ভাষায় কথা বলেন সেটা আমরা শুনি। শুনি না।
শেখ হাসিনা : দেখুন আমরা পার্লামেন্টে আছি। কখনও আপনি সরকারে, কখনও আমরা সরকারে। আমরা যা করব পার্লামেন্ট অনুযায়ীই হোক।
খালেদা জিয়া : আপনার মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। আপনার মিটিংয়ের সময় নষ্ট করতে চাই না। টেলিফোনে সব কথা হয় না। আপনি বলেছেন আমাকে, আমি আমার সব নেতাদের ডাকব। তাদের সঙ্গে কথা বলব।
শেখ হাসিনা : আপনি হরতালটা উইথড্র করে নেন।
খালেদা জিয়া : আপনি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেন। তাহলে আমি হরতাল তুলে নেব।
শেখ হাসিনা : সেটা নিয়েই তো আলোচনা হবে। যখন কথা হবে তখন বুঝা যাবে।
খালেদা জিয়া : আলোচনা করার আরও অনেক কিছু আছে। কে নিরপেক্ষ হবে, কে হবে ন

Hasina-Khaleda Phone Conversation

হাসিনা – খালেদা ফোনালাপ ২৬ অক্টোবর ২০১৩



শেখ হাসিনা ঃ আমি নিজে ফোন করেছি। কিন্তু আপনি ধরেন নি।
খালেদা জিয়া ঃ রেডফোন তো অনেকদিন ধরে বিকল। আমার অফিস থেকে চিঠি দেয়ার পরেও এই ফোন ঠিক করা হয়নি।
শেখ হাসিনা ঃ কেন আমি তো রিংয়ের শব্দ শুনেছি। আপনি শুনেন নি।
খালেদা জিয়া ঃ না না কোন রিং হয়নি। আমিতো বাসায়ই ছিলাম। রিং হবে কিভাবে ? ওই ফোনতো নষ্ট দু’বছর ধরে।
শেখ হাসিনা ঃ ফোন নষ্ট ছিল, না নষ্ট করে রেখেছেন ?
খালেদা জিয়া ঃ কেমন কথা বলছেন। আপনার লোকদের জিজ্ঞাস করেন। লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। টিএ্যান্ডটির কর্মকর্তা বলেছেন ফোন নাকি ঠিক আছে। কিন্তু এটা মিথ্যা কথা।
শেখ হাসিনা ঃ কিন্তু আমিতো রিং এর শব্দ শুনেছি। অনেকক্ষন রিং হয়েছে। কেউ ধরে নি। আপনি মিথ্যা বলছেন কেন ? আপনার হয়তো কানে সমস্যা আছে।
খালেদা জিয়া ঃ আমার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস নেই। এসব অভ্যাস আপনার আছে।
শেখ হাসিনা ঃ আচ্ছা বিষয়টি আমি দেখবো। যদি নষ্ট হয়ে থাকে আগামীকাল ১১টার মধ্যে ওটা ঠিক হয়ে যাবে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে গণভবনে এসে কথা বলার জন্য আমি ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় আপনাকে দাওয়াত করছি। আপনি জানেন আমি ইতিমধ্যে অন্যদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আমার সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনি কি র্নিদলীয় সরকার নিয়ে আলাপ করার জন্য আমাকে ডেকেছেন ? যদি এটি নিয়ে ডাকেন তাহলে আমি আসব।
শেখ হাসিনা ঃ আমিতো সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওটা নিয়ে যদি আপনার কোন সাজেশন থাকে, আমরা সেটা শুনব।
খালেদা জিয়া ঃ এটা আপনার প্রস্তাব। জনগনের এই প্রস্তাবে সায় নেই। এতে তো সমস্যার সমাধান হাবে না। আপনি র্নিদলীয় সরকারের প্রস্তাব নীতিগতভাবে মেনে নেন।
শেখ হাসিনা ঃ আমি যে প্রস্তাব দিয়েছি। তাতে তো আপনার দলের লোকও থাকবে। রাজনীতিবিদরা মিলে এই সরকার হবে। রাজনীতিবিদদের প্রতি আপনার আস্থা নেই কেন ? আপনি র্নিদলীয় সরকার দেখেন নি ? তারা কি করেছে আপনার মনে নেই ?
খালেদা জিয়া ঃ সেটা ভিন্ন বিষয় ছিল। এখন র্নিদলীয় সরকারের দাবি আমার একার না। এটা দেশের সব মানুষের দাবি।
শেখ হাসিনা ঃ আপনি আগে আসেন। আপনার দলের যতজন খুশী সব নিয়ে আসেন। তালিকাটা আগে পাঠিয়ে দেবেন। তবে আসার আগে দেশের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে আসবেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনার বাসায় আসতে আমার কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু হরতাল এথন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। আপনি যদি আমাকে একদিন আগে বলতেন বা আজ সকালেও বলতেন, তাহলেও আমি চেষ্টা করে দেখতাম। হরতাল তো আমি একা ডাকেনি। ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের পুলিশ তাড়া করছে। তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আলোচনা করার জন্য এখন তাদেরতো পাবো না।
শেখ হাসিনা ঃ দেখেন আমি আন্তরিকতা নিয়ে ফোন করেছি। আপনিতো আমারে গ্রেনেড হামলা করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। আরো কতকিছু করেছেন। তারপরেও তো আমি ফোন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া ঃ কে কি করেছে তা আপনিও জানেন, আমিও জানি, দেশের মানুষও জানে। এগুলো বাদ দেন। অতীত নিয়ে বসে থাকলে আমরা সামনে অগ্রসর হতে পারব না। আজো আমার ৮ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা : দেখেন আপনি তো ১৫ আগস্ট জš§দিন পালন করেন। কিন্তু ওটা তো আপনার জš§দিন নয়। আপনি আমাদের বাসায় বহুবার এসেছিলেন। আমার ছোট ভাই রাসেলকে দেখেছেন। ছোট্ট এই শিশুটিকে হত্যার দিনে আপনি কি করে কেক কেটে জš§দিন পালন করেন ?
খালেদা জিয়া : দেখেন ১৫ আগস্ট কারো মৃত্যুদিন যেমন হতে পারে,তেমনি অনেকেরই জš§দিনও হতে পারে। ১৫ আগস্ট কারো জš§দিন হলে সে কি দিনটি পালন করবে না ? আমার জš§দিনে আমি পালন করবো, এটা তো আমার নিজস্ব ব্যাপার। আমি তো আপনার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করি না।
শেখ হাসিনা ঃ যাই হোক, এখন আলোচনার জন্য আমার আন্তরিকতা আছে। তাই ফোন করেছি। আপনি আসেন। আমরা আলাপ-আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া ঃ আপনার আন্তরিকতা থাকলে, আরো আগেই ফোন দিতেন। এখনো যদি নীতিগতভাবে র্নিদলীয় সরকারের দাবি মেনে নেন, তাহলে হরতালসহ সব কর্মসূচি বন্ধ করার দায়িত্ব আমি নেবো। সমাধান হয়ে গেলে তো আর কোন কর্মসূচির দরকার হবে না।
শেখ হাসিনা ঃ আপা আপনি আগে আসেন। হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন।
খালেদা জিয়া ঃ ২৯ তারিখ পর্যন্ত তো আমার কর্মসূচি আছে। ২৯ তারিখের পর যেকোন দিন যেকোন স্থানে আপনি ডাকলে আমি আসবো।
শেখ হাসিনা ঃ হরতাল প্রত্যাহার করে আসেন। আমরা বসলে একটা সমাধান হবে।
খালেদা জিয়া ঃ না না না আগে আপনি ঘোষণা দেন। তাহলে আমার বসতে কোন অসুবিধা হবে না।
শেখ হাসিনা ঃ আপনি আপনার দলের নির্বাচিতদের নাম দেন। বাইরের লোকদের নাম প্রস্তাব করছেন কেন। দেশ চালাবো আমরা। বাইরের লোকের দরকার কি ? আমাদের উপর আস্থা রাখছেন না কেন।
খালেদা জিয়া ঃ আপনিও তো আমার উপর আস্থা রাখেন নি। সে কারণেই এখন দলের বাইরের লোক লাগবে। দেশের মানুষ র্নিদলীয় সরকার চায়। আপনি এ দাবি মেনে নিলেই সমস্যা শেষ হয়ে যাবে। আপনি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পছন্দ নাই করেন,তাহলে কেন ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন ? ২০০৭ সালে কেন ওই সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এটা আপনাদের আন্দোলনের ফসল। এরপর সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বলছেন অন্য কথা।
শেখ হাসিনা ঃ দেখেন আপা, অভিজ্ঞতা যেমন আমার আছে, তেমনি আপনারও আছে। আমরা তো আপনাদের লোক নিয়েই অন্তবর্তী সরকার করতে চাচ্ছি। আপনি এখন চিন্তা করে দেখেন।
খালেদা জিয়া ঃ এখানে চিন্তার কিছু নেই। আপনি দাবি মেনে নিন। দেশের মানুষকে শান্তি দিন। এই দেশটা আপনারও না, আমারও না, ১৬ কোটি মানুষের। তাদের শান্তির কথা, স্বার্থের কথা চিন্তা করেন। আমি তো সেসময়ে আপনার দাবি মেনে ছিলাম। আমি তো এখন আমার দলের সরকার চাই না। আমার নিজের সরকারও চাই না। চাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় লোকদের সরকার। সেটা মানতে আপনার আপত্তি কেন বুঝতে পারছি না।

Friday, October 25, 2013

খালেদা-পুত্রের সহযোগী আইএসআই, উদ্বিগ্ন দিল্লি :আনন্দবাজার পত্রিকা


শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি

৯ কার্তিক ১৪২০ শনিবার ২৬ অক্টোবর ২০১
বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার গড়া নিয়ে শুরু হয়েছে সংঘাত। শুক্রবার ঢাকার সোহরাবর্দি উদ্যানে জনসভা করে রবিবার থেকে টানা তিন দিন হরতালের ডাক দিয়েছেন বিরোধী বিএনপি-নেত্রী খালেদা জিয়া। দেশের বিভিন্ন শহরে সরকার ও বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এ দিনই মারা গিয়েছেন সাত জন। আহত শতাধিক। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাঠানো বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়ে দিল্লির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের কার্যকলাপ।



ঢাকার পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই পুরোদস্তুর সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছে লন্ডনের এডমন্টনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা তারেক ও তার দলবলকে। একই সঙ্গে উপমহাদেশে সক্রিয় মৌলবাদী ও জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিএনপি-র এই নেতা। গোয়েন্দা সমন্বয়ের মাধ্যমে দিল্লির হাতে আসা এই সব তথ্যের ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে। লন্ডন থেকে ঢাকা, সিঙ্গাপুর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় করা তারেকের যাবতীয় ফোন কলের রেকর্ডও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা দিল্লিকে দিয়েছেন। সেই ‘কল লিস্ট’-ও এখন খতিয়ে দেখছেন দিল্লির কূটনৈতিক কর্তারা।
বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেখানে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, বাংলাদেশের মানুষই তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করবেন। কোনও বিশেষ দলের প্রতি নয়াদিল্লির পক্ষপাতের প্রশ্ন নেই। বিরোধী নেত্রী হিসেবে দিল্লি সফরে আসা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং তৎকালীন কেন্দ্রের শীর্ষ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। শাসক দল আওয়ামি লিগ নেতৃত্বের তাতে গোঁসা হলেও দিল্লি আমল দেয়নি।
কিন্তু ভারতের উদ্বেগের কারণটা অন্য। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের পাঠানো তথ্যে স্পষ্ট, বাংলাদেশে ক্ষমতায় ফিরতে আইএসআই ও মৌলবাদী শক্তির সাহায্য নিচ্ছেন বিএনপি-র উদীয়মান নেতা তারেক রহমান। বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, আগের বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ কার্যত মৌলবাদীদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত শুধু বাংলাদেশের প্রশাসনকেই চ্যালেঞ্জ জানায়নি, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে তুলেছিল। ভারত-বিরোধী নানা জঙ্গি গোষ্ঠীকেও বাংলাদেশের মাটিতে ঘাঁটি গাড়তে দিয়েছিল বিএনপি-জামাত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের ওই অফিসার বলেন, খালেদা জিয়া দিল্লিতে এসে অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন, ফের ক্ষমতায় এলে অতীতের সে-সব ভুল তাঁর দল আর করবে না। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, তারেকের কার্যকলাপ মোটেই তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বিএনপি-র মুখপাত্র তথা কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম অবশ্য মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ধারাবাহিক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামি লিগ সরকার। মির্জা বলেন, “তারেকের জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়েই এই সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসায় নেমেছেন। তিনি মেরুদণ্ডের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। পড়াশোনাও করছেন। আইএসআই বা জঙ্গি শক্তির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই।”
কিন্তু বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের থেকে তারেকের আইএসআই-সংস্রব ও মৌলবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়ার পর আশু ও দীর্ঘমেয়াদি দু’ধরনের বিপদই দেখছে দিল্লি।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সংঘাত যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। বিএনপি-র সহযোগিতায় মৌলবাদীরা এই সুযোগে সক্রিয় হলে সেই অশান্তি যত বাড়বে, সংখ্যালঘুদের জীবন-জীবিকাও বিপন্ন হয়ে পড়বে। অশান্ত আবহাওয়ার সুযোগে ফের সেনা-অভ্যুত্থানের মতো অবাঞ্ছিত ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যায়। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এটা আশু বিপদ। দীর্ঘমেয়াদি বিপদটির প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী।
কী সেই দীর্ঘমেয়াদি বিপদ?
ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, কংগ্রেসের মতোই নেতৃত্ব পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া চলছে বিএনপিতে। কংগ্রেসে যেমন সনিয়া গাঁধীর পরের প্রজন্মের নেতা হিসেবে রাহুলকে তুলে আনা হচ্ছে, ৬৮ বছরের খালেদা জিয়াও তেমনই বিএনপি-র দায়িত্ব ধীরে ধীরে তুলে দিচ্ছেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন ৪৬ বছরের তারেকের হাতে। বস্তুত ২০০১ সাল থেকেই রাজনৈতিক ভাবে অতিসক্রিয় তারেক রহমান। সেই সময়ে ঢাকায় খালেদার বাড়ি ‘হাওয়া ভবন’-এ বসে নির্বাচন পরিচালনায় বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের জমানায় তিনি ছিলেন ক্ষমতার দ্বিতীয় কেন্দ্র। পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সরকার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার ঠিক আগে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে লন্ডনে চলে যান তারেক। কিন্তু বিএনপি-র শীর্ষ নেতারা মাঝেমধ্যেই লন্ডন গিয়ে তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে বিএনপি-র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সাত দিন ধরে নানা অনুষ্ঠানে তারেকের জন্মদিন পালন করে। খালেদা জিয়া নিজেও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের এমন এক ভাবী নেতার সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগাযোগ নিশ্চিত ভাবেই ভারতের পক্ষে সুসংবাদ নয়। কারণ ভবিষ্যতে বিএনপি-র নীতি-নির্ধারণেও এই পাক ও মৌলবাদী-ঘেঁষা স্বর শোনা যেতে পারে। বাংলাদেশ ফের জঙ্গিদের ঘাঁটি হয়ে উঠুক এটা কখনওই দিল্লির কাম্য নয়।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, পুরো বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে ঢাকার সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসারের কথায় তবে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্পর্শকাতরতার বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখেই দিল্লি যা পদক্ষেপ করার করবে। Daily Anandabazar

নষ্ট গিয়াস কামালের চোখে : একুশে টিভি, ড. হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা -তার কন্যার প্রেমিক রিক্সাচালকের হামলা এবং সালীম সামাদ তথ্যসন্ত্রাসী

ড. হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন -
আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক
সব সংঘ-পরিষদ; চলে যাবে, অত্যন্ত উল্লাসে-চ’লে যাবে এই সমাজ-সভ্যতা-সমস্ত দলিল
নষ্টদের অধিকারে ধুয়েমুছে, যে-রকম রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রযন্ত্র দিকে দিকে চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে। চ’লে যাবে শহর বন্দর ধানক্ষেত কালো মেঘ লাল শাড়ি শাদা চাঁদ পাখির পালক
মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ পবিত্র প্যাগোডা।

কবিতাটা মনে পড়লো এক নষ্ট লোকের মৃত্যুর খবর শুনে।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একুশে টেলিভিশন এক যুগান্তকারী অধ্যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে দেয়ার প্রত্যয়ে মানবতার কল্যাণে সায়মন ড্রিংয়ের নেতৃত্বে এই টেলিভিশন গণমানুষের অধিকারের কথা বলতো। জাতীয়তাবাদী-জামায়াত চক্রের সাংবাদিকদের শীর্ষ সর্দার গিয়াস কামাল চৌধুরী একুশে টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য হাইকোর্টে ১৯৯৯ সালে 'জনস্বার্থে' একটি মামলা দায়ের করেন। বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয়তাবাদী সরকার বন্ধ করে দেয় এই টেলিভিমন। এর নাট বল্টু খুলে নিয়ে এনটিভি -আর টিভি শুরু করেন বেগমের উপদেষ্টা ফালু সাহেব। এই ইতিহাস সবার ই জানা। আরো জানা আছে সেই একুশে টিভি এখন জাতীয়তাবাদী-জামায়াতী শক্তির মিথ্যাচারের শক্ত হাতিয়ার। সত্যি সেলুকাস! মঙ্গলযাত্রা কী আর মঙ্গলেই থাকে? অমঙ্গলেই যাত্রা হলো তার!এখনো তবু আমরা স্বপ্ন দেখি -শুভ শক্তির জয় হবেই একদিন!!
হুমায়ুন আজাদ স্যারের উপর হামলার পর কোন একদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে দৈনিক খবরপত্র হেডলাইন পড়ে চমকে উঠি। গিয়াস কামাল চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকাটির রিপোর্টের ভাষা এবং তথ্য এতোটাই নোংরা এতোটাই ঘৃণ্য , যা সভ্য সমাজের কলংক। তবু এই ঘৃন্য ব্যক্তিদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্যেই তুলে ধরলাম তার মূল অংশ।
"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের কন্যার সাথে এক রিক্সাচালকের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন নি হুমায়ুন আজাদ। তার কারণে সেই রিক্সাচালকের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। এর প্রতিশোধ নিতেই সেই রিক্সাচালক তার সঙ্গীদের নিয়ে হুমায়ুন আজাদের উপর রাতের অন্ধকারে এই হামলা করে। " খবরপত্রের পুরনো সংখ্যা সংগ্রহ করে বিশাল লীড রিপোর্টে রগরগে বর্ণনার এই মিথ্যা গল্প পড়ে পাঠক বুঝে নিতে পারেন গিয়াস কামাল চৌধুরীর চরিত্র।
সাংবাদিক সালীম সামাদ কে 'তথ্য সন্ত্রাসী ' হিসেবে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি বিএসএস থেকে। এর পর ই সালীম সামাদ কে গ্রেফতার করা হয়। একুশে টেলিভিশন
একাত্তরে নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। তার মা নাকি কবি ছিলেন । ধিক্ এমন জন্ম কে! যে সন্তান মাতৃহন্তা,যে সন্তান মাতৃভূমির প্রতি, জাতীয় পতাকার প্রতি কলংক লেপন করে দেয়-এমন সন্তান কে ধিক্কার জানাই।

খন্দকার মোশতাকের অনুসারী এই প্রবঞ্চক মিথ্যাবাদী এবং তার সমর্থকদের প্রতি যাদের এখনো শ্রদ্ধা আছে- তাদের বাস্তববাদী হয়ে আরেকবার ভেবে দেখবার অনুরোধ রইলো আমার। হুমায়ুন আজাদ স্যারের কবিতার ভাষায় আবার বলতে হয়,

অর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমন্ডলি, জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ,মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন ক’রে আমাকে পীড়ন কোরো না;
আমি তা মুহূর্তেও সহ্য করতে পারি না, – তার অনেক কারণ রয়েছে ।

তোমাকে মিনতি করি কখনো আমাকে তুমি বাঙলাদেশের কথা তুলে কষ্ট দিয়ো না।
জানতে চেয়ো না তুমি নষ্ট ভ্রষ্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের কথা: তার রাজনীতিঅর্থনীতি, ধর্ম, পাপ, মিথ্যাচার, পালে পালে মনুষ্যমলিন জীবনযাপন, হত্যা, ধর্ষণ
মধ্যযুগের দিকে অন্ধের মতোন যাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করে আমাকে পীড়ন কোরো না!!

আরো বলে যাই-
আমি আমার নিজস্ব ভঙ্গিতে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,আমি পোশাক পরতে চেয়েছিলাম একান্ত আপন রীতিতে,
আমি চুল আঁচড়াতে চেয়েছিলাম নিজের রীতিতে,আমি উচ্চারন করতে চেয়েছিলাম আন্তর মৌলিক মাতৃভাষা-আমি নিতে চেয়েছিলাম নিজের নিশ্বাস।
আমি আহার করতে চেয়েছিলাম আমার একান্ত মৌলিক খাদ্য,আমি পান করতে চেয়েছিলাম আমার মৌলিক পানীয়।
আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম। আমার সময় তখনো আসে নি।আমি ভুল বৃক্ষে ফুটেছিলাম। আমার বৃক্ষ তখনো অঙ্কুরিত হয় নি।
আমি ভুল নদীতে স্রোত হয়ে বয়েছিলাম। আমার মেঘ তখনো আকাশে জমে নি।আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
আমি গান গাইতে চেয়েছিলাম আপন সুরে,ওরা আমার কন্ঠে পুরে দিতে চেয়েছিলো ওদের শ্যাওলা-পড়া সুর।
আমি আমার মতো স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওদের মতো ময়লা-ধরা স্বপ্ন দেখতে।
আমি আমার মতো দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলো ওদের মতো মাথা নিচু করে দাঁড়াতে।
আমি আমার মতো কথা বলতে চেয়েছিলাম,ওরা আমার মুখে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলো ওদের শব্দ ও বাক্যের আবর্জনা।
আমি খুব ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিলাম,ওরা আমাকে ওদের মতো করেই দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলো বাইরে।
ওরা মুখে এক টুকরো বাসি মাংস পাওয়াকে বলতো সাফল্য,ওরা নতজানু হওয়াকে ভাবত গৌরব,
ওরা পিঠের কুঁজকে মনে করতো পদক,ওরা গলার শেকলকে মনে করতো অমূল্য অলংকার।
আমি মাংসের টুকরা থেকে দূরে ছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি নতজানু হওয়ার বদলে নিগ্রহকে বরণ করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।
আমি পিঠ কুঁজের বদলে বুকে ছুরিকাকে সাদর করেছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।আমি গলার বদলে হাতেপায়ে শেকল পড়েছিলাম। এটা ওদের সহ্য হয় নি।.....

আদালতে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে হুমায়ুন আজাদ স্যারকে যারা হামলা করেছিলো , তারা জেএমবির জঙ্গী। পুলিশ হেফাজতে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে- জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ওয়াজে নির্দেশ দেবার পর তারা এই হামলা করে। জেএমবি জামাত খুনি জারজ ঘাতকদের সহযোগী গিয়াস কামাল চৌধুরী যে তথ্য তুলে ধরেছিলেন তার 'খবরপত্রের' লীড নিউজে আদালতে সেই তথ্য তুলে ধরার সৎসাহস ছিল না তো! পারেন নি, পারবেন ও না। কারণ, মিথ্যুকেরা কোন সৎসাহস ধারণ করে না। তবু এই মিথ্যাবাদী - ধর্মেও যার স্থান নেই- তিনি এই নষ্ট সমাজের সমাজপতিদের দ্বারা বিশেষ'সম্মানিত' হবেন- নরঘাতক কুমিরদের চোখে জল ও ঝরবে বটে তার জন্যে!!অবাক হই,তার দীর্ঘ জীবদ্দশায় তার অপরাধের কোন বিচার কেউ চাইলো না । এ কারণেই তার অনুসারীদের এতো দাপট! আবারো ধিক্কার জাতির এই কুলাঙ্গার সন্তানের প্রতি!!

রানা প্লাজা ধ্বসে দুই পা হারানো রেহানা আবার হাঁটতে পারছেন:১০৭ জন ফিরে পেলেন হাঁটবার ক্ষমতা


সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর থাই সরকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃত্রিম পা লাগানোয় সহযোগিতার প্রস্তাব করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১০৭ জন পেলেন কৃত্রিম পা। রোগী বাছাইয়ের কাজ করেছে পঙ্গু হাসপাতাল আর পুরো কর্মসূচিটিতে সমন্বয়কের কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক জুলফিকার আলী।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর বিমের তলায় আটকা পড়েছিলেন সপ্তম তলায় কর্মরত শ্রমিক রেহানা আক্তার (২০)।
পরদিন ভোরবেলায় উদ্ধার হলেও হারিয়েছেন দুই পা। সেই রেহানা নতুন এক জোড়া পা পেয়েছেন। নতুন পায়ে সবার সামনে কারও সাহায্য ছাড়া হেঁটেছেনও। রেহানাসহ রানা প্লাজা ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পা হারানো ১০৭ জনকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ডের প্রোসথেসিস ফাউন্ডেশন অব এইচআরএইচ দ্য প্রিন্সেস মাদার। ১০৭ জনের মধ্যে পাঁচজন রানা প্লাজার ধসে পা হারিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের ৬৩ জন চিকিৎসক ও কারিগরি কর্মী রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) একটি ভ্রাম্যমাণ কারখানা বসিয়ে টানা এক সপ্তাহ কাজ করে এসব কৃত্রিম পা তৈরি করেন। স্বল্পমূল্যে কৃত্রিম পা বানানো বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি এটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতা করা। বাংলাদেশে আসা ৬৩ সদস্যের দলটির নেতৃত্ব দেন ফাউন্ডেশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ভাজারা রুজিওয়েতপংসতোরা।


নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাপজোক নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের পা হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজনকে পা পরিয়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম পা পরে হাঁটার জন্য অনুশীলন করতে হয়। যাঁরা এখনো হাঁটার চর্চা করেননি, তাঁরা পা না পরে বাড়ি নিয়ে গেছেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিয়োজিত থাই রাষ্ট্রদূত মাদুরোপোসানা ইত্তারং বলেছেন, বাংলাদেশের পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের জন্য থাই সরকার সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তিনি এ দফার কর্মসূচিকে বলেছেন প্রথম পর্বের কাজ। পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক খন্দকার আবদুল আউয়াল রিজভী থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদলকে ধন্যবাদ জানান। যাঁরা কৃত্রিম পা লাগিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘দৃঢ় মনোবল দরকার। তাহলেই আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। কৃত্রিম পা নিয়ে অনেকে খেলাধুলাও করেছেন। আপনারাও পারবেন।’

রেহানা আক্তার বলেন, ‘দুই দিন প্র্যাকটিস কইরাই আইজকা হাঁটছি। খুবই ভয় পাইছি, যদি পইড়া যাইতাম। তবু মেলা দিন পরে একা একা হাঁটলাম।’ রেহানা এখনো সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) চিকিৎসাধীন। হাঁটুর ওপর থেকে বাঁ পা হারিয়েছিলেন রানা প্লাজার শ্রমিক শিল্পী বেগম। গতকাল তিনিও পেলেন কৃত্রিম একটি পা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন সেটা পরে। কিন্তু মুখে ছিল হাসির আভা। বললেন, ‘নতুন পা লাগানোর পর থেকে মেয়ের সাথে দেখা হয়নি। সে স্কুলে ছিল। দেখলে যে কী খুশি হবে।’ পা পেয়েছে পাঁচ বছরের ছোট্ট ইতিমণিও। যাত্রাবাড়ীতে ট্রাকের তলায় পড়ে পা হারিয়েছে সে। ধুঁকে ধুঁকে কাটছিল ছটফটে শিশুটির জীবন। গতকাল এক চিকিৎসক যখন তাকে পা’টা পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন তার চোখে-মুখে হাসি। যেন পা’টা একবার ঠিকঠাকমতো লেগে গেলেই দেবে এক ছুট।

মাত্র চার বছর বয়সে গ্যাংগ্রিনে দুই পা-ই হারায় ১৬ বছরের তানিয়া আক্তার। এত দিন হাঁটুতে ভর দিয়ে বাসার ভেতরে হাঁটলেও এখন নতুন দুই পা পেয়েছে সে। তবে এখনো নতুন পায়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের লউর ফতেহপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে তানিয়া। তার মা মাজেদা বেগম বলেন, ছোটবেলায় পা কাটা পড়ার পর থেকেই ছোট মেয়েটিকে নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ফুটফুটে একটা মেয়ে, কিন্তু দুই পা-ই নেই। টাঙ্গাইলের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া আরেফিন রায়হান গত বছর মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে যমুনা সেতুর ওপর দুর্ঘটনায় ডান পা হারায়। অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল আরেফিন। নতুন পা পেয়ে গতকাল থেকেই হাঁটা শুরু করেছে। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেনি। এবার ভালো প্রস্তুতি নিয়েই পরীক্ষা দেবে বলে জানায়। রানা প্লাজা ধসে হাত-পা হারানো আরও ২০ জন সাভারের দুটি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নয়জনকে সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিডিডি) কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করে দিয়েছে। আর দুই পা হারানো পাখি বেগম সিডিডিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া সিআরপিতে চলছে অঙ্গ হারানো ১০ জনের চিকিৎসা।

Wednesday, October 23, 2013

তিনি ক্ষমা করার কে- ক্ষমা তো তাঁকেই চাইতে হবে-মুনতাসীর মামুন


শাহরিয়ার কবির কয়েকদিন আগে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক হিন্দুপ্রীতি নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠে। খালেদার এই সদিচ্ছাকে ‘ভূতের মুখে রামনাম’ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, এটিকে তিনি এক ধরনের ভাঁওতাবাজি বলে মনে করছেন। খালেদা এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য খড়কুটো যা পাচ্ছেন তাই আঁকড়ে ধরছেন এবং সেটি স্বাভাবিক। এ অবস্থায় এতটা কড়া মন্তব্য না করলেও তিনি পারতেন। বরং এভাবে বললে বোধ হয় ভাল হতো যে, সব রাজনীতিবিদই এক আধটু ভাঁওতাবাজিতে অভ্যস্ত। কম আর বেশি। খালেদাও রাজনীতিবিদ, ফেরেশতা নন। আসলে, খালেদার প্রতি তার একটা ক্রোধ আছে। সেটিও স্বাভাবিক। দু’দুবার খালেদা তাঁকে জেলে পুরেছেন, অত্যাচার করেছেন তার ‘হিন্দুপ্রীতি’ ছাড়াবার জন্য। না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সেই খালেদাই হিন্দুপ্রীতিতে গলগল, এটি খানিকটা গোলমেলে তো বটেই। শাহরিয়ার কবিরের বোঝা দরকার, সিচ্যুয়েশন প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। এখানে সবাই দাবার ঘুঁটি। আবার সবাই কিস্তিমাতের জন্য চাল দেয়ার সুযোগ খুঁজছে। শাহরিয়ারের মধ্যে এখনও শিশুসুলভ ইনোসেন্স বিরাজ করছে। এই যে ডেভিড বার্গম্যান, যিনি প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে ডকুমেন্টারি করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন, আমরা তার কত না ভক্ত ছিলাম। শাহরিয়ার তো তাকে নিয়ে হৈ চৈ শুরু করে দিলেন। সেই ডেভিড এখন বাংলাদেশে বসে নিয়মিত যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নিয়ে চর্চা করছেন। আচ্ছা, আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. কামাল হোসেনের কথাই ধরুন। খালেদা-নিজামীর আমলে তিনি বলেছিলেন, ‘যে সংবিধানের কারণে আজ বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী, সে সংবিধানের ওপর হামলা করায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি, যেখানে কোন আইনের শাসন নেই।... এ দেশে সাংবিধানিক শাসন নেই, আইনের শাসনও নেই। জনগণের নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলে জোট সরকার ক্ষমতায় বসেছে, অথচ সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা রাস্তায় চলাচল করার উপায়ও রাখছে না।’ এখানেই থেমে থাকেননি, বলেছেন, ‘তারা [বিএনপি জোট] নাকি সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সমঅধিকারের আন্দোলন করছে। ওই সকল ক্রিমিনালের সঙ্গে আমাদের সমঅধিকার হতে পারে না।’ [জনকণ্ঠ ২৪.০২.২০০৪] আর আজ ড. কামাল হোসেন কি বিএনপি-জামায়াত জোটের হয়ে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিচ্ছেন না? আসলে, শাহরিয়ার অর্থ বা ক্ষমতার স্বাদ কোনদিন পায়নি।
আমার তো বেগম জিয়ার বক্তব্য শুনতে বেশ লাগে। বক্তব্য দেয়ার আগে পরিপাটি সুসজ্জিত হয়ে আসেন। তারপর সুন্দর সাজানো একটি রোবোটের মতো বলে যান। তাঁর গলা অবশ্য খানিকটা গনগনে, পরিপাটি সাজের সঙ্গে মেলে না, কিন্তু তাঁর অন্য একটি এ্যাফেক্ট আছে, কেমন যেন ক্রর, ক্রর। আর বক্তব্য তো এন্টারটেইনিং। কোন বক্তব্যের সঙ্গে পূর্ববর্তী কাজের মিল নেই। বর্তমান কাজের সঙ্গে তার অনুভবের মিল নেই। থিয়েটারের কি বলে যেন, বীভৎস রসের স্বাদ পাওয়া যায়, নাটকের দর্শকরা কি তা উপভোগ করেন না?
যাক, ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেল। কী করব, বাঙালীর টিপিক্যাল স্বভাব আর গেল না। ফিরে আসি পূর্ব প্রসঙ্গে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় যে খালেদা আগে কখনও করেননি তা নয়, করেছেন। কিন্তু বিজয়ার শুভেচ্ছা বোধহয় এই প্রথম। প্রশ্ন, হঠাৎ তিনি বিএনপির মৌলিক আদর্শ থেকে পিছিয়ে এলেন কেন? তারপরের প্রশ্ন, বিএনপির মৌলিক আদর্শ কী? দু’টি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দেয়া যায়। মৌলিক আদর্শ হলো, বাবু কালচারের বাবুদের বাংলায় বলা যায়, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ। সামনে ঘোমটাটা হচ্ছে ইসলাম, ঐ আফিম দিয়ে বা ঐ নামে জিকির তুলে মানুষকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ করা ও আওয়ামী এবং হিন্দুদের নিকেশ করা। পাকিস্তানীদের মতো আওয়ামী লীগার ও হিন্দুদের তারা একই মনে করেন। পাকিস্তানীদের মতো ভুল বললাম, এদের দেহ বাংলাদেশী, দিল পাকিস্তানী। এ কারণে তারা ব্যবহার করে দা, কুড়াল, বর্শা। খোকা বাবু এসব নিয়ে সম্প্রতি এই সব পাকিস্তানীদের তৈরি থাকতে বলেছিলেন। সুতরাং, তার এই হিন্দুপ্রীতি শাহরিয়ার কেন, সবাইকে চমকে দিয়েছে। এর কারণ, অনুমান করছি, আসন্ন নির্বাচনে, খালেদার হয়ত ধারণা, যদি হয়, তাহলে বহুল পরিমাণে অন্যান্য সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট দরকার। নির্বাচনে শুধু জয়ী হওয়ার জন্য নয়, এটাও প্রমাণ করা যে, তিনি শুধু রাজাকারদের বা পাকিস্তানীমনাদের নেতা নন, তিনি হিন্দু বা ‘ভারতীয়মনা’দেরও নেতা। এই ভঙ্গি করা বিশেষ জরুরী হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জামায়াত পিতা মওদুদীর পুত্র সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসে বলে গেছেন, খালেদার পার্টনার জামায়াত নেতারা অবৈধ। জারজ শব্দটা তিনি বলেছেন, আমি আর সেটা উল্লেখ করলাম না। হিন্দু চাকরবাকর দু’একজন আছে অবশ্য খালেদার কিন্তু তাদের সবাইকে হিন্দু রাজাকার হিসেবেই জানে। যা হোক খালেদা যে শুধু পাকিস্তানীমনা জারজদের নয়, বাঙালীদেরও নেতা এই ইমেজটা আন্তর্জাতিক পটভূমিকায়ও খুব জরুরী হয়ে উঠেছে। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রমাণিত যে তিনি, দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসীদের নেতা, এও পাকিস্তানীদের নেতা, পুরনো পাকি বা যুদ্ধাপরাধীদের নেতা। আরও আছে, তিনি জঙ্গীদের নেতা, তিনি মৌলবাদী জঙ্গীদের নেতা, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাতা।
বিজয়ার অনুষ্ঠানে যারা গিয়েছিলেন তাদের একজন এসে বিস্ফোরিত চোখে জানালেন, ভাই একি কা-! খালেদা জিয়া হলে ঢুকলেন আর হিন্দু রমণীরা উলুধ্বনি দিয়ে উঠলেন। এই উলুধ্বনিকে হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া একসময় তুলনা করে চিৎকার করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এখন তিনি যে অবগাহন করলেন উলুধ্বনিতে তার কী হবে? তাঁর কাছে কি এই উলুধ্বনি আযানের চেয়ে মধুর শুনিয়েছে? পরে কি তিনি শুদ্ধ হওয়ার জন্য কয়েকবার স্নান করেছেন? উলুধ্বনি বিষয়ে তার ব্যাখ্যা জরুরী। নাহলে প্রকাশ্যে তিনি আমাদের বলতে বাধ্য করবেন যে, তিনি একজন ভাঁওতাবাজ। মিথ্যাবাদী। অন্য রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাঁর কোন তফাত নেই। শাহরিয়ার লিখেছেন, এই উলুধ্বনি খালেদার কানে নিশ্চয় গরম সিসা ঢেলে দিয়েছে। হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি দিয়ে খালেদার হিন্দু নিধনের জবাব দিয়েছেন। শাহরিয়ারের জ্ঞাতার্থে বলি, ধর্মমতে, মুনাফেকদের কানে গরম সিসা আগে থেকেই ঢালা আছে।
খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু নারী ধর্ষিত হয়েছেন, সেটি ১৯৪৭ সালের পর বিভিন্ন দাঙ্গায়ও হয়নি। এই ধর্ষিতাদের প্রতীক পূর্ণিমা, সীমা আরও অনেকে। খালেদা-নিজামীর আমলে যত হিন্দু দেশ ত্যাগ করেছেন, ১৯৪৭ সালের পর এত হিন্দু কখনও ভিটেমাটি ত্যাগ করেননি। আপনারা মফস্বলের খবর রাখেন কিনা জানি না। সাদেক হোসেন ধোঁকার দা কুড়াল বর্শার থিওরির পর বরিশালের প্রচুর হিন্দু ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। জনকণ্ঠের মফস্বলের পাতায়ই সে খবর বেরিয়েছে। যে সব হিন্দু বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন তারা যেন এসব তথ্য মনে রাখেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি খালেদার একটি বিখ্যাত উক্তি আমি ক্ষমা করে দিলামের কথা মনে হলো। নির্বাচন বিষয়ে সরকারের প্রস্তাবের বিপরীতে, না, না, না, বলার সময় তিনি হঠাৎ ঘোষণা করেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে যারা আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতীতে নানারকম অন্যায়-অবিচার করেছেন, ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন, আমি তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করছি। আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। সরকারে গেলেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেব না।
আমি কথা দিচ্ছি, আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল ও অধিক নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করার কাজে। প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার মতো কোন ইচ্ছা ও সময় আমার নেই। [কালের কণ্ঠ, ২২.১০.১৩]
এ প্রসঙ্গটি ছিল সেই সংবাদ সম্মেলনে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। এই ক্ষমাতত্ত্ব এত জরুরী মনে হলো কেন? তার একটি কারণ, তিনি জানেন, তিনি যত পরিপাটি হয়েই বক্তৃতা মঞ্চে আসুন না কেন, তাঁর ক্ররতার যে জবাব নেই তা মানুষজন জানেন। জেনারেল জিয়া যে রকম ক্রর ছিলেন, তিনিও তার চেয়ে কম নন। জেনারেলের যোগ্য স্ত্রী। তাঁর ২০০১-০৬ সালের শাসন যে মানুষ ভোলেনি এটি আর কেউ না হলেও তিনি ভাল জানেন। অপরাধী সবসময় আগ্রাসী হয়। কেন তিনি হঠাৎ এমন বলছেন সেটি জিজ্ঞাসার দায়িত্ব ছিল ক্ষমতাবান সাংবাদিকদের। কিন্তু তারা হচ্ছেন এমবেডেড জার্নালিস্ট। খালেদা বা বিএনপির নেতারা কোন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন না। সাংবাদিকরা সেটা জেনেও যান। প্রেস রিলিজটা নিয়ে আসার জন্য। কারণ, খোকার দা কুড়াল যে সত্যি তা তারা জানেন। আরও জানেন, বিএনপি নেতারা অর্থ খরচে কার্পণ্য করেন না।
খালেদার ক্ষমাতত্ত্বে অনেকে উদ্বেলিত হয়েছেন। তার বদান্যতায় তারা আপ্লুত। সব নবীই তো ক্ষমা করে গেছেন মূর্খদের। খালেদাও করলেন। উদ্বেল অবস্থা কেটে গেলে তার বক্তব্যটি পর্যালোচনা করে দেখুন। এমন স্বার্থপর ক্ষমা প্রদর্শন আগে কেউ করেছেন কী না সন্দেহ। তিনি তাঁর ও তাঁর দুই পুত্রের যারা সমালোচনা করেছেন তাদের ক্ষমা করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন সরকারকেও। কারণ, তারা তাঁর এক পুত্রের চুরি ধরে টাকা ফেরত দিয়েছে সরকারকে। সংখ্যাগরিষ্ঠরা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের টাকা খাওয়া ভবন, যা হাওয়া ভবন নামে পরিচিত, তার সমালোচনা করেছেন, তাদের তিনি ক্ষমা করলেন। কিন্তু এগুলো কি ছিল ব্যক্তিগত আক্রমণ? না, সত্য তথ্য। সত্য তথ্যকে অবলীলাক্রমে তিনি অপবাদ আখ্যা দিলেন! তাঁর পুত্রদের প্রতি কে অন্যায় অবিচার করেছে? আমরা বা আওয়ামী লীগ? না জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল ও আদালত। তিনি প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চান না? তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাসই হচ্ছে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইতিহাস। এখনও তিনি বলছেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন [জনকণ্ঠ, ২১.১০.১৩]। অর্থাৎ এখনও মিথ্যা বলছেন। তিনি আমলাতন্ত্রকে ইঙ্গিত করে বলছেন, তাদেরও তিনি ক্ষমা করলেন।
অথচ একতরফা ক্ষমা ঘোষণার দু’তিন দিন আগে বলছেন, কোর্ট চলছে সরকারী নির্দেশে। সরাসরি অবমাননা। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল জারী করলেও বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে চুপ। খোকার দা কুড়াল যে কথার কথা নয় বিচারকরাও তা জানেন। সোহরাব হাসানের ভাষায় বলতে হয় ‘তিনি ক্ষমা করলেন, ক্ষমা চাইলেন না।’
না, বেগম জিয়া ক্ষমা চাইতে পারেন না। তিনি জেনারেল পত্নী, আত্মগর্বে বলীয়ান। তাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতে হয়। এবং একমাত্র সাধারণ মানুষই পারে নির্বাচনে যথাযথভাবে পরাজিত করে তাঁকে ক্ষমা চাওয়াতে। এই পরাজয় হবে, তাঁর কৃতকর্মকে ক্ষমা না করা। অন্য অর্থে, তাঁর ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমতাগর্বী এই মহিলা ঘোষণা করেছেন, তাঁর ভবিষ্যত সরকার [তিনি ধরেই নিয়েছেন তিনি জয়ী হবেন] হবে সব নাগরিকের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার। অর্থাৎ রাজাকার জামায়াতী, হেফাজত বা এক কথায় হেজাবি ও ধর্মব্যবসায়ীদের সরকার। আসলে, তিনি কোন ক্ষেত্রে কোন ছাড় দিতে রাজি নন। ছাড় অন্যদের দিতে হবে। না হয় সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক কেউ স্থান পাবে না। অর্থাৎ হেজাবিদের তিনি ছাড়বেন না।
আমি বরং বেগম জিয়াকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে [তাঁর ভাষা ধার করে বলতে হয় তখন তাঁর নির্দেশে কোর্ট চলত] জেলে পুরে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। তাঁকে তো জেলে নেয়ার নাম করে বিলাসবহুল অট্টালিকায়ই রাখা হয়েছে। রিমান্ডেও নেয়া হয়নি। তার থেকে ক্ষমা করার অধিকার আমার বেশি। আমি ব্যক্তি হিসেবে তাকে ক্ষমা করলাম। প্রশ্ন হচ্ছে, অন্যরা তাকে ক্ষমা করছে কিনা? বা অন্য কথায় তিনি ক্ষমা করার কে? এই ক্ষমার অধিকার তিনি পেলেন কীভাবে? সেটি কি ঈশ্বর প্রদত্ত না খোকা বা ধোঁকার রাম দা, চাইনিজ কুড়াল আর তীক্ষè বর্শার জোর?
সমষ্টিগতভাবে খালেদা জিয়া ও তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে দল বা বাহিনীকে ক্ষমা করা যায় না অন্তত কয়েকটি কারণে-
১. তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে মিথ্যা বলছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষক এটি মানতে তিনি রাজি নন। তিনি ইতিহাস বিকৃত করছেন। অতএব বাঙালী জাতির কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ হওয়ার তারিখটি নিজের জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে ৬০/৬৫ পাউন্ডের কেক কাটছেন। এটি জাতির জনকের শুধু অবমাননা নয়, তাঁর লেফটেন্যান্ট মওদুদের ভাষায় রুচি বিগর্হিত। আমরা বলব ধৃষ্টতা।
৩. তিনি যুদ্ধাপরাধী বা আলবদর রাজাকারদের ক্ষমতায় এনেছেন। তারা যখন রাষ্ট্রীয় পতাকা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন তখন তা ছিল ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতি ও ৬ লাখ বীরাঙ্গনার বুকে লাথির মতো। রাজাকারদের আলবদরদের নেতাকে আর যাই হোক ক্ষমা করা যায় না।
৪. ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বলা যা ধর্মদ্রোহিতার সমান। যেমন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে।
অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা যাবে কিনা তা বিবেচনা করা যেতে পারে-
১. তার আমলে হিন্দু মুসলমান নারী। বিশেষ করে নির্যাতিতা হিন্দু নারীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. যে সব খ্রীস্টানের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. তাঁর নির্দেশে তাঁর ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীর নেতাদের অত্যাচারে যে সব হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছেন, দেশ ত্যাগ করেছেন তাদের লুণ্ঠিত টাকা, মালামাল ফেরত ও ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. তাঁর ও রাজাকারদের আমলে যে ৩২০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে ও আওয়ামী লীগার ও সমর্থকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাঁদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. জঙ্গী মৌলবাদী ও হেফাজতীদের সাহায্যে মানুষ হত্যা, দমন-নিপীড়ন, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা, কোরান পোড়ানোতে সাহায্য করার জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. তাঁর দুই পুত্রের অপকর্মের জন্য সরকার ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অপকর্মের সাজা দিয়ে তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতাগ্রাসী প্রবণতাকে বন্ধ করতে হবে এবং এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৭. যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
না, ক্লান্ত লাগছে। বাংলাদেশে আর কোন মহিলা দেশ জাতি মানুষের এত ক্ষতি করেননি। এত দুষ্কর্মও করেননি। তাঁর ক্ষমা চাওয়ার ফিরিস্তি দিতে গেলে বড়সড় একটি বই লিখতে হবে। আমি তো মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করলাম। তিনি ক্ষমা করার কে? আমরা তাকে ক্ষমা করব কিনা সেটাই বিবেচ্য।

Tuesday, October 22, 2013

বেগম জিয়ার উচিত জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া -আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী


হাসব, না কাঁদব? আজ লিখতে বসেই চতুরঙ্গের সহৃদয় পাঠকদের কাছে এই প্রশ্নটা করছি। সোমবার (২১-অক্টোবর) ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য শুনে হাসব, না কাঁদব, তখনও স্থির করতে পারিনি, এখনও স্থির করতে পারছি না। নবপ্রযুক্তির কল্যাণে লন্ডনে বসে স্বকর্ণে তাঁর বক্তব্যটি শুনেছি।
বেগম জিয়া বলেছেন, তাঁর পরিবার পরিজনদের ওপর যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন, তাদের সকলের জন্য তিনি ক্ষমা ঘোষণা করছেন। অর্থাৎ তাঁর পরিবারের সদস্যদের (নিশ্চয়ই দুই পুত্রসহ) ওপর যারা অত্যাচার-নির্যাতন করেছেন তাঁদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হলো। এই ঘোষণাটি শুনেই ধান্ধায় পড়ে গেছি। ‘এ কি কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে?’ এটা তো ব্যাঙদের জাতশত্রু সাপের ঘোষণার মতোÑ হে ভেককুল, আমাদের ওপর নির্যাতনের জন্য তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। এ সাপেরাই ব্যাঙ নিধন ও ভক্ষণ করে থাকে।
বেগম জিয়ার ঘোষণাটি স্বকর্ণে শুনে প্রথমে হাসব ভেবেছিলাম। কারণ বিশ্ব-রাজনীতির ইতিহাসে পীড়ক-পীড়িত সেজে ক্ষমা করার ঘোষণা দেয় আগে কোনদিন শুনিনি। প্রথমে ভেবেছি, এই ঘোষণা শুনে হাসি। তারপর ভেবেছি কাঁদি। কারণ, যে বিএনপি সরকারের হাতে দেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ধর্ষিতা নারী এবং রিক্সাচালক ও রাজপথের নিরীহ পথিকের নৃশংস হত্যার রক্ত লেগে আছে, ২৪ অক্টোবরের (২০০৪) ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার রক্ত যখন ঢাকার মাটি থেকে শুকায়নি, সেই দলের নেত্রী যদি এমনভাবে সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা না চেয়ে নিরপরাধীদের ক্ষমা করার ঘোষণা দিতে পারেন, তার নির্লজ্জতা দেখে আমার মতো কেউ কাঁদতে চাইলে অন্যায় হবে কি?
মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, যাঁরা গুরুতর অপরাধ করেন, তাঁদের অনেকে এই অপরাধের জন্য প্রকাশ্য শাস্তি এড়াতে পারলেও অপ্রকাশ্য মানসিক শাস্তি এড়াতে পারেন না। তাঁরা অপরাধ কবুল করেন না। কিন্তু এমন সব স্ববিরোধী কথাবার্তা বলেন, যাতে তাঁদের মানসিক অবস্থার কথা বোঝা যায়। এদের মধ্যে যারা নিষ্ঠুর এবং বিবেকবিহীন, তারা নিজের অপরাধ অন্যের ওপর চাপিয়ে মনের জ্বালা নিবারণের চেষ্টা করেন।
বিএনপি নেত্রীর বর্তমান মানসিক অবস্থা যদি কোন মনস্তত্ত্ববিদের দ্বারা পরীক্ষা করানো হয়, তাহলে হয়ত দেখা যাবে, তার মনে অপরাধবোধ দু’টি বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এক, নিজেদের অপরাধ যে জনসাধারণের কাছে ধরা পড়ে গেছে এবং গোপন করার চেষ্টা চালিয়ে কোন লাভ নেই, সেটা বুঝতে পেরে নির্বাচনের আগে দেশের মানুষকে নতুন করে ধোঁকা দেয়ার জন্য বার বার বলছেন, ‘আমরা আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না।’ অর্থাৎ এতকাল যে তিনি এবং তাঁর দল প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছেন তার এক ধরনের প্রকাশ্য স্বীকৃতি। এটা হয়ত তিনি বুঝতে পারছেন না। তাঁর এই বক্তব্য হচ্ছে, ‘ঠাকুর ঘরে কে, আমি কলা খাই না’ গোছের উক্তির মতো।
তার মনের দ্বিতীয় এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় বসে দিনের পর দিন যে নৃশংস ও ভয়াবহ অপরাধগুলো করেছেন, তার দায় অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের ‘ভিকটিম’ সাজিয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি অর্জনের (ভোটের জন্য) চেষ্টা। এটাকে বলা হয়, ভিকটিম সিনড্রোম। এ ক্ষেত্রে অপরাধী ভাবে, তার অপরাধের কথা মানুষ ভুলে গেছে এবং নিজেকেই এই অপরাধের ভিকটিম বা শিকার সাজাতে পারলে মানুষকে প্রতারণা করা যাবে। এটা আত্মপ্রতারণাও।
নাৎসি জার্মানির কোন নেতা আজ যদি কবর থেকে উঠে এসে ইহুদি জাতিকে বলে, ‘তোমরা এতকাল আমাদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করেছ, যে হলোকাস্ট ঘটিয়েছ, সেজন্য তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করলাম’ তাহলে কেমন হয়? বিশ্বের তাবৎ মানুষ তা শুনে হাসবে, না কাঁদবে? বাংলাদেশের মানুষও আজ বেগম খালেদা জিয়ার ‘ক্ষমা ঘোষণা’ শুনে ভাবছে তারা হাসবে, না কাঁদবে? তাদের কাছে এই ধৃষ্ট উক্তির হয়ত একটিমাত্র জবাবই রয়েছে, বেগম খালেদা জিয়াকে তার এবং তার দুই আমলের সরকারের গণনির্যাতন এবং ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে কোলাবরেসনের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
বেগম জিয়া কোন্ মুখে বলছেন, তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের ওপর নির্যাতন চলেছে? তিনি তিন তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ক্যান্টনমেন্টে বসে রানীর হালতে রাজত্ব চালিয়েছেন। তাঁর গায়ে বা তাঁর পরিবারের সদস্য বা দুই পুত্রের গায়ে ফুলের টোকাটি পড়েনি। বরং হাওয়া ভবনে বসে তাঁর ‘যুবরাজপুত্র’ দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। তাঁর দুই পুত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের মামলা আওয়ামী লীগ করেনি। করেছে সেনা তাঁবেদার এবং খালেদা জিয়ার পছন্দসই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই। তারপরও গুরুতর সব অপরাধে তাদের দ- দেয়ার বদলে অসুস্থতার ছুঁতোয় প্যারোলে বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
এক এগারোর সময় লোক দেখানোভাবে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করে সুরম্য সাবজেলে রেখে দুই বেলা পঞ্চব্যঞ্জন খাওয়ানো হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে একটার পর একটা মামলা দিয়ে হয়রানি, বিদেশে পাঠিয়ে দেশে ফিরতে না দেয়া, তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি ইত্যাদি হেন হয়রানি নেই যা করা হয়নি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন তো ছিলই।
খালেদা জিয়ার শাসনামলেই শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ ছয়বার ছোট বড় হামলা হয়েছে। এই হামলার সঙ্গে বিএনপি সরকারের কোন কোন শীর্ষ ব্যক্তি এমনকি তারেক রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বেগম জিয়ার অসংখ্য জনসভার কোনটিতে কোনদিন একটা পটকাও ফোটেনি। তাঁর গায়ে একটি ফুলের আঁচড়ও লাগেনি। তবু তিনি প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতন-নিপীড়নের ভিকটিম সেজে মায়াকান্না জুড়েছেন; তাঁর কল্পিত নির্যাতকদের জন্য ক্ষমা ঘোষণার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
আমাকে এক বন্ধু বলেছেন, বেগম জিয়ার এই ‘ক্ষমা ঘোষণা’র মধ্যেও দারুণ চালাকি থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে জেলে নেয়নি। নিয়েছিল এক এগারোর ক্যান্টনমেন্ট পরিচালিত সরকার। তারেক রহমানকে জেলে থাকার সময় নির্যাতনের খবরটি যদি সঠিক হয়ে থাকে, সেই নির্যাতনও চলেছে এক শ্রেণীর সেনা অফিসারের দ্বারাই। খালেদা জিয়া কি এখন সেই সেনা অফিসারদের জন্যই কৌশলে ক্ষমতা ঘোষণা দ্বারা আবার ক্যান্টনমেন্টের সমর্থন ও সহানুভূতি ফিরে পেতে চাইছেন? তবে এখন তা চাইলেও পাবেন কি?
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দেশে যত শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক, সাংবাদিক, কৃষক হত্যা ঘটেছে, বীভৎস নারী নির্যাতন হয়েছে, তার একটিও আওয়ামী লীগ আমলে ঘটলে বিএনপির গর্জনে এখন কান পাতা দায় হতো। এক ইলিয়াস আলীর অপহরণ অথবা গুম-হত্যার অভিযোগ নিয়ে তাদের কত নর্তনকুর্দন। অথচ তাদের আমলে আহসানউল্লাহ মাস্টার, এএমএস কিবরিয়া, হুমায়ুন আজাদসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক হত্যার কোন তদন্ত ও বিচার হয়নি। সার চাইতে আসা ১৮ জন কৃষক-হত্যার কোন প্রতিকার করা হয়নি। আইয়ুব ইয়াহিয়ার আমলেও যা ঘটেনি, ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে পুলিশ ঢুকিয়ে সাংবাদিকদের বেধড়ক মারধরের ঘটনায় খালেদা জিয়া নিশ্চুপ ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলে মাঝরাতে পুলিশ ঢুকিয়ে ছাত্রীদের বিবস্ত্র করা, লাঠিপেটার ঘটনা সভ্যজগতে ঘটে না। বিএনপির আমলে বাংলাদেশে ঘটেছে। সর্বোপরি ২০০১ সালে ক্ষমতায় বসার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণিমা শীলসহ অসংখ্য নাবালিকা তরুণীর ওপর বিএনপির ক্যাডাররা যে বর্বর গণধর্ষণ ঘটিয়েছিল, তাদের কাছে বেগম জিয়া ক্ষমা চাইবেন, না, তাদেরই অপরাধী সাজিয়ে তাদের জন্য ক্ষমা ঘোষণার চরম নির্লজ্জতা দেখাবেন? মানবতাবিরোধী অসংখ্য অপরাধের জন্য আজ সর্বাগ্রে জাতির কাছে বেগম জিয়ার মাথা নত করে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
দেশের মানুষ দেখছেন, বর্তমান সরকার তাদের অনেক ভুলভ্রুটি সত্ত্বেও উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন, যা গত ৪০ বছরে কোন সরকারের আমলে হয়নি। কিন্তু খালেদা জিয়ার চোখে তা পড়ছে না। তার চোখে পড়েছে হলমার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদি দুর্নীতির ব্যাপার। এই দুর্নীতির সূচনা তার সরকারের আমলেই। তিনি এদের ধরার ব্যবস্থা করেননি, তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থাও করেননি। আওয়ামী লীগ আমলেই এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে এবং রাঘববোয়ালদের বিচারের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই বিচার বিলম্বিত হচ্ছে একথা সত্য। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও সত্য যে, এই বিচার নানা বাধাবিপত্তি এড়িয়ে ধীরে হলেও চলবে এবং রাঘববোয়ালদের অনেকেই দ- হতে রেহাই পাবেন না। বিএনপির আমল হলে এদের দ- দূরের কথা বিচারই শুরু হতো না। সা.কা. চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধী ও গণনিপীড়ক যে দলের অন্যতম নেতা, তারা কি করে নিজেদের নির্যাতিত সাজিয়ে মায়াকান্না কাঁদে তা এক আজব ঘটনা।
আগামী নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা ইতিবাচক বলে সকল মহলে অভিনন্দিত হয়েছে। সেই প্রস্তাবের পাল্টা যে প্রস্তাব বেগম জিয়া সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, তা শুধু হাস্যকর নয়, ‘ডেইলি স্টারের’ মতো বিএনপি সমর্থক ইংরেজী দৈনিকটি পর্যন্ত বলেছে ‘অবাস্তব।’
বিএনপির এই প্রস্তাব যে গ্রহণযোগ্য নয় এবং অবাস্তব তা খালেদা জিয়াসহ তার দলের শীর্ষ নেতারাও জানেন। তবু একটি সূক্ষ্ম চাল চালার জন্য এই প্রস্তাবটি দিয়েছেন এবং এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। তিনি সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে বলেছেন, তিনি সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানাবেন। আজ (বুধবার) আওয়ামী লীগ যে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সম্ভবত তাতে দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির প্রস্তাব সম্পর্কে তার দলের মতামত জানাবেন।
আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে কি বলবে তা অনুমান করতে কারোই অসুবিধা নেই। কারণ, সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত বেগম জিয়ার প্রস্তাবটি একমাত্র তার নিজের দল ছাড়া আর কোন মহলেই বাস্তব প্রস্তাব বলে স্বীকৃত হয়নি। তথাপি এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ তাদের সংবাদ সম্মেলনে কি বলে তা জানার পরই এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত। আমিও তা করব। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের জবাবে বেগম জিয়ার পাল্টা প্রস্তাব পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো। দেখা যাক এই মূষিকের ভাগ্যে কি আছে?

Sunday, October 20, 2013

সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত :২০০১ থেকে ২০০৫ তার পেটোয়া বাহিনীকে ঠেকান নি কেন খালেদা ? -সুমি খান



সংখ্যালঘুদের সমাবেশে খালেদা আশ্বাস দিলেন তিনি সংখ্যালঘুদের উপর আঘাত প্রতিহত করবেন। বা: বা: !! এ কী কথা শুনি আজ মন্থরার মুখে!! ২০০১ থেকে ৫ বছর আপনার পেটোয়া বাহিনীকে ঠেকান নি কেন ? তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আপনাকেই তো দায় নিতে হবে। এই ৫ বছর ভয়াবহ নির্যাতন আর জীবন্ত দগ্ধ করে যাদের হত্যা করেছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন কি? যেদিন মন থেকে এই অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন- সেদিন বলবেন 'এ দেশ সকলের- এখানে কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নেই!' ৫০ বছরে ৫২% থেকে মাত্র ৮% য়ে নমে আসা নিরীহ জনগোষ্ঠী দের নিয়ে আর তামাশা করবেন না মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা!!

চট্টগ্রাম শহরের জামালখানে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ঞ মুহুরীর মাথায় গুলি করে হত্যা , বাঁশখালীর দিনমজুর আরতি বালার তিন প্রজন্মকে একসাথে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা,বাঁশখালীর একই পরিবারের চারজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা,সাধনপুরের শীল পরিবারের ১১ জনকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা র দায় আপনার ই ম্যাডাম। ১১ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আমিন চেয়ারম্যান এখনো দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। কারণ তার বটবৃক্ষ বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এখনো সাংসদ!! থানা এখনো তাদের কথা তেই চলে। এখানে ২০০১ বিএনপি শাসনামলের আরো কয়েকটি বর্বরতার ঘটনা তুলে ধরছি।
সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভোলাবাসীর আতঙ্ক কাটছে না !
(প্রথম আলো ৩.১০.০১)

২০ জেলায় আওয়ামি লিগের সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, সংঘর্ষ : নিহত ৯
(প্রথম আলো ৫.১০.০১)

অব্যাহত হামলার মুখে উত্তরের অনেক জেলা থেকে সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছেন
(প্রথম আলো ১০.১০.০১)

গলাচিপায় অর্ধশতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি
(প্রথম আলো ১০.১০.০১)

গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার চিত্র ধানের শীষে ভোট দিয়েও সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে
(যুগান্তর ১০.১০.০১)

সংখ্যলঘুদের জন্য চনপাড়া এখন আতঙ্কের জনপদ, বিএনপির সন্ত্রাসীদের ভয়ে ঘরছাড়া তরুণরা, মেয়েদের "তুলে নিয়ে" যাওয়ার হুমকি
(আজকের কাগজ ১০.১০.০১)

আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘুরা বাড়ি ফিরতে চায়
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নড়াইলের কালিয়া ও নড়াগাতীতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত: গোপালগন্জ্ঞের আশ্রিতরা বাড়িঘরে ফিরতে পারছে না
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নগরকান্দায় এক সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলা '৭১-এর ঘটনাকেও হার মানিয়েছে
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

ভাঙ্গায় মায়ের সামনেই কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণ ।
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

শুধু উৎকুলই নয়, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বাগেরহাটের সকল গ্রামই কার্যত এখন অবরূদ্ধ, তীব্র আতঙ্ক
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস : চোখের সামনে বাবা-মাকে মারধর করায় শিশুরাও আতঙ্কিত ।
সংখ্যালঘু নারীধর্ষণের উন্মাদনায় মেতেছে সন্ত্রাসীরা ।
বিএনপি ক্যাডারদের অত্যাচারে কালীগন্জ্ঞের ১১ হাজার মানুষ ঘরছাড়া : পৌর চেয়ারম্যান মান্নানের অভিযোগ
(জনকণ্ঠ ১৫.১০.০১)

আমি কিসের বিচার চাইবো -বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন শেফালীরানী
(সংবাদ ১৫.১০.০১)

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা লুটপাট অব্যাহত
( সংবাদ ১৫.১০.০১)

মিরসরাইয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন অব্যাহত । পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
(সংবাদ ১৫.১০.০১)

নাজিরপুরে বিএনপি সন্ত্রাসীদের তান্ডব : হামলার ভয়ে বরগুনা ও যশোর শহরে সংখ্যালঘুদের আশ্রয় গ্রহণ
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

সংখ্যালঘু নির্যাতন : পরিবারের তিন নারীর সম্ভ্রমহানি
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

মতলব ও শাহরাস্তিতে প্রতিমা ভাংচুর !
(প্রথম আলো ১৫.১০.০১)

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনেই কমলারানী তার বাড়িতে হামলার বিবরণ দিলেন
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

এই দুর্বৃত্তদের বিচার করবে কে? রামশীলের আশ্রয়কেন্দ্রে অসংখ্য নির্যাতিত মুখ
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

গৌরনদীতে সংখ্যলঘু দুই ভাইকে বেঁধে রেখে তাদের গণধর্ষণ করেছে বিএনপির ক্যাডাররা
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

চাটখিলে আওয়ামি লিগ নেতা অপহৃত :ঈশ্বরগন্জ্ঞে ৯ টি মূর্তি ভাঙচুর
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

সংখ্যলঘু ও আওয়ামি লিগের ওপর চলছে সহিংস নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ ও দেশ ছাড়ার হুমকি
(সংবাদ ১৬.১০.০১)

গৌরনদী আগৈলঝাড়ার বাস্তুচ্যুত মানুষের কান্না : ' ৫ বছর চলেছে হাসানাতের সন্ত্রাস এখন চলছে স্বপনের সন্ত্রাস
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

সংখ্যালঘু ও আদিবাসীরা আতঙ্কিত : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি-মধুপুরে সহিংসতা অব্যাহত
ঝালকাঠির পূর্বফুলহার গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন : বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাসীরা
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

জামালপুর, রংপুর ও নাটোরে প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

নির্বাচন-উত্তর সন্ত্রাসে স্বরূপকাঠির সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ নেতা কর্মীরা এলাকাছাড়া
(সংবাদ ১৭.১০.০১)

সংখ্যালঘুর কিশোরীর সম্ভ্রমহানি : ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেন ভাঙ্গা বিএনপি সভাপতি
(প্রথম আলো ১৭.১০.০১)

কালীগণ্জ্ঞের তিল্লা গ্রামে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা : রেহাই পায়নি অন্ধ বিবেককুমারও
(প্রথম আলো ১৭.১০.০১)

বগুড়ার কাহালুতে প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক।। অনাড়ম্বর পূজার সিদ্ধান্ত
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

রায়পুরে পূজামন্ডপে মূর্তি ভাঙচুর
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

কালিয়াকৈর উপজেলার সংখ্যালঘু পরিবারগুলো এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারে নি
(সংবাদ ১৯.১০.০১)

সংখ্যালঘুর নির্যাতন : পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে কূটনীতিকদের উদ্বেগ প্রকাশ
(যুগান্তর ১৯.১০.০১)

সংখ্যালঘুর ওপর হামলা : ঘটনাগুলো অস্বীকার করার জন্য প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপ
(প্রথম আলো ১৯.১০.০১)

দুর্বৃত্তদের কাণ্ড : পূজামণ্ডপে গরুর হাড়
(সংবাদ ২০.১০.০১)

নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাসের সঙ্গে বিজয়ী দলের কর্মীরা জড়িত : ফেমার প্রতিবেদন প্রকাশ
(সংবাদ ২০.১০.০১)

মিঠামইনে অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি : সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে অকথিত অত্যাচার
(সংবাদ ২০.১০.০১)

পালিয়ে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরতেও সংখ্যালঘুদের টাকা দিতে হচ্ছে (প্রথম আলো ২০.১০.০১)
নীলফামারীতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা : তদন্ত করে অবশেষে মামলা গ্রহণ
(প্রথম আলো ২০.১০.০১)

নাটোরে সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ । মির্জাপুরে পূজামণ্ডপে ভাঙচুর । (২০.১০.০১)
রাজশাহী জেলা জুড়ে আওয়ামি লিগ নেতাকর্মী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন
(সংবাদ ২১.১০.০১)

দেবীদ্বারে আওয়ামি লিগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন । প্রশাসন নীরব
(সংবাদ ২১.১০.০১)

ফরিদপুরে ও কিশোরগণ্জ্ঞে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর : ৬ জন গ্রেপ্তার
(প্রথম আলো ২১.১০.০১)

আমার মতো কেউ যেন অত্যাচারের শিকার না হয় : পূর্ণিমা
(সংবাদ ২১.১০.০১)

রামশীলের দুঃখী মানুষের কথা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না যাওয়ার নেপথ্যে
(সংবাদ ২১.১০.০১)

কচুয়ায় মানুষ আতঙ্কে কাঁপছে : সন্ত্রাসীদের নির্যাতন সেখানে সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে
(জনকণ্ঠ ২২.১০.০১)

রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা । অনেকেই পালিয়েছেন ।
(প্রথম আলো ২২.১০.০১)

নির্বাচন বিজয়ের বেদিমূলে সংখ্যালঘু বলি
(জনকণ্ঠ ২২.১০.০১)

সিলেটে সংখ্যালঘু লোকজন আতঙ্কে আছেন
(জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

মোড়লগণ্জ্ঞে সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, লুটপাট চাঁদাবাজি । অভিযোগে ফল হচ্ছে না ।
(জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

হিজলায় সংখ্যালঘুর বাড়ি নিশ্চিহু : গৃহবধূ নির্যাতিত
(ইত্তেফাক ২৩.১০.০১)

ক্ষুদিরামের 'স্বাভাবিক মৃত্যু' ও প্রিয়বালার ক্ষেত্রে 'অপরাধজনিত নরহত্যা' (প্রথম আলো ২৩.১০.০১)

নৌকার ভোটার আর সংখ্যালঘুদের জন্য কালিয়াকৈর জিম্মি জনপদ (জনকণ্ঠ ২৩.১০.০১)

ভোলার নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের আজাহারি : প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, আমরা ভোট দিইনি আগামীতেও দেবো না, শুধু এদেশে থাকতে চাই
(সংবাদ ২৩.১০.০১)

কাপাসিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ
(সংবাদ ২৩.১০.০১)

ভেগুরবাড়িতে এক বিভীষিকার রাত, ধর্ষণের মামলা একটি
(প্রথম আলো ২৪.১০.০১)

ঘটনাস্থল মিরসরাই, বাউফল, না'গণ্জ্ঞ, কালিয়াকৈর ও সৈয়দপুরের সোনাখুলি : সবখানে সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগের নেতা কর্মীদের ওপর চলছে চরম নির্যাতন । চাঁদাদাবি না হলে দেশ ছাড়ার হুমকি
(সংবাদ ০১.১১.০১)

মাকে সন্তুষ্ট করতে নয়, বিএনপিকে সন্তুষ্ট করতেই এই পূজা
(সংবাদ ০৩.১১.০১)

সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে, আওয়ামি লিগ নেতা কর্মীরা ঘরে ফিরতে পারছে না (সংবাদ ০৪.১১.০১)
মাধবপুরে আতঙ্কজনক পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন । প্রতিমা ভাঙচুর ও পূজামণ্ডপে পাটকেল ছোড়া হয়েছে
(সংবাদ ০৪.১১.০১)

বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু ও আওয়ামি লিগ কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা অব্যাহত
(সংবাদ ০৪.১১.০১)

নরসিংদীতে সংখ্যালঘুদের ওপর সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতন
(জনকণ্ঠ ০৫.১১.০১)

নাটোরে সংখ্যালঘু নির্যাতন কমলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হয়নি
(সংবাদ ০৬.১১.০১)

সামাজিক আন্দোলনের নেতারা- কালিয়াকৈরে নির্যাতনে হাত-পা ভাঙা হিন্দুরা এসে বিবরণ দিলেন
(প্রথম আলো ০৬.১১.০১)

মানিকগণ্জ্ঞে পরেশ হালদারকে হুমকি চাঁদা ২০ হাজার, নইলে মাথা (জনকণ্ঠ ০৬.১১.০১)
ঘটনাস্থ নীলফমারীর ডোমরা : হিন্দু বিধবার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নেয়ার পাঁয়তারা
(সংবাদ ০৬.১১.০১)

বাগেরহাটে রামকৃষ্ণ আশ্রমে সন্ত্রাসী হামলা । গ্রেফ্তার ২ জন
(ভোরের কাগজ ০৬.১১.০১)

গলাচিপার হরিপদ শীলকে দিগম্বর করে বাজার ঘোরানো হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামির ছোট ভাইয়ের নির্দেশে
(জনকণ্ঠ ০৭.১১.০১)

মিরসরাইয়ের দাসপাড়ায় মধ্যরাতে বিএনপি সন্ত্রাসীদের হামলা সেবাইত খুন, আহত ৩০
(জনকণ্ঠ ০৭.১১.০১)

সন্ত্রাসীদের ভয়ে নরসিংদীর রাজনগরে সংখ্যালঘুরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে
(যুগান্তর ০৮.১১.০১)

গলাচিপাড় হরিদেবপুর : মহিউদ্দিন বাহিনীর হাত থেকে মেয়েদের সম্ভ্রম বাঁচাতে দুই হিন্দু পরিবারের এলাকাছাড়া
(জনকণ্ঠ ০৮.১১.০১)

সরেজমিন রাউজানের সরকারপাড়া : সন্ত্রাসীরা ঘোষবাড়িটি পুড়িয়ে দিলেও সাহায্য নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি
(সংবাদ ০৮.১১.০১)

কলাপাড়ায় এক সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন, ছেলেকে অপহরণ । দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি, পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন একজন বিএনপি নেতা
(সংবাদ ০৯.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ১ : অন্নদাপ্রসাদ গ্রামে এক বিভীষিকার রাত (প্রথম আালো ০৯.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ২ : ক্ষেতমজুর প্রাণকৃষ্ণও স্ত্রী কন্যা নিয়ে ভারতে চলে যাবেন
(প্রথম আলো ১০.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা - ৩ : পঙ্গু শেফালীর 'নাকফুল কেড়ে নেয়ার' কাহিনী
(প্রথম আলো ১১.১১.০১)

নির্বাচনের পরে ভোলা : জয়ন্তীর সংগ্রামের কাহিনী
(প্রথম আলো ১২.১১.০১)

রাউজানে সা.কা. বাহিনীর নির্যাতন : ৭ ইউনিয়নের ৫ হাজার সংখ্যালঘু নাগরিক ঘরবাড়ি ছাড়া
(সংবাদ ১৩.১১.০১)

ধর্ষিত সংখ্যালঘুর সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে (জনকণ্ঠ ১৫.১১.০১)

কিশোরগঞ্জে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা, লুটপাট, আহত ৭ (যুগান্তর ১৫.১১.০১)