সম্প্রতি
আফগানিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদা প্রধান বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড টপ টেরর জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায়
বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী
ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের নামে তান্ডবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষ শক্তির পতনের স্বপ্ন দেখেছিলো
যুদ্ধাপরাধী শক্তি। তাতে ব্যর্থ হয়ে ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার গল্পকথা ফেঁদে
বিশ্বজুড়ে জঙ্গী জনগোষ্ঠীকে একাট্টা করতে
মাঠে সোচ্চার অন্ধকারের শক্তি আল-কায়দা-জামাত । জাওয়াহিরির এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ
আনা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। আর
বাংলাদেশ সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার’ হিসাবে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা
দিয়েছে জাওয়াহিরি। মিশরীয় এই জঙ্গী সংগঠক তার অনুসারী জামাত হেফাজতিদের বিপন্নতা
সইবে কী করে! যারা গত কয়েক দশক থেকে তাদের অর্থ এবং মানুষ যোগান দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক লবিস্ট টোবি ক্যাডম্যান ও আল-কায়েদা নেতা
আয়মান আল-জাওয়াহিরি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে বর্তমান সরকারকে হুমকি দেবার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সন্ত্রাসীদের আওয়ামী লীগকে ভয় করা উচিত । গত রোববার ফেইসবুকে এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, “বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আয়মান আল-জাওয়াহিরি আমাদের সরকারকে
হুমকি দিচ্ছে তার সন্ত্রাসী ভাইদের দমন করায় যাদের ক্যাডম্যান রক্ষা করার চেষ্টা
চালিয়ে আসছে। আমার কাছে বিষয়টা খুব মজার মনে হয়েছে টোবি ক্যাডম্যান এবং আল-কায়েদা উভয়ই জামায়াতের
পক্ষ থেকে আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছে।আমরা একজন ভাড়াটে আইনজীবী ও দালাল পেয়েছি ,
যিনি তাদের পক্ষে , যারা পথচারীদের ওপর
নির্বিচারে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বাংলাদেশ সরকারের
বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ
আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্যাডম্যানের অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা
প্রধানের জিহাদের ডাক বাংলাদেশ সরকারের জন্য ভালো হয়েছে মনে করেন জয়। জামায়াতের
সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও তাদের আইনি প্রতিনিধিদের সাহায্যের আবেদন
জানাচ্ছে, এটা তাই প্রমাণ করে যে, আমরা ভালো লোক। আমি অতিশয় আনন্দিত যে সন্ত্রাসীরা আমাদের একই সাথে ঘৃণা
এবং ভয় করে! তাদের উচিৎ আওয়ামী লীগকে ভয় করা, অনেক ভয়। ” জয় বলেন, সরকার ও তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার
শুধু অধিকার নয়, তাদের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব নাগরিকদের
জীবন রক্ষা করা।যদি কোনো সন্ত্রাসী মানুষের গায়ে আগুন দিতে চায় বা বোমার বিস্ফোরণ
ঘটাতে চায়, পুলিশের দায়িত্ব তাদের থামাতে যে কোনো এবং সব
ধরনের প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করা। যখন একজন নিরীহ নাগরিক এবং একটা সন্ত্রাসীর মাঝ
থেকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে তখন আমরা অবশ্যই বেছে নিবো কীভাবে নাগরিকদের রক্ষা
করা যায়।” কথাটি এক অর্থে ঠিক বলেছেন তিনি,
রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া
শুরু হয়, যদি কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গী সংগঠন এদেশের মাটিকে ব্যবহার করে
প্রশ্রয় না পায় , তবে আওয়ামী লীগ তাদের ত্রাস বটে; তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন
সরকার কে ক্ষমতাচ্যুত করার সব ধরণের ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে জেনে বা না জেনে যখন সেই ষড়যন্ত্রের সহায়ক
শক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীর সংশ্লিষ্টতা থাকে
– তা ভয়ংকর বিপজ্জনক! এ কারণে সরকার এবং
দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে।
গত বছরের হেফাজতকাণ্ডের সূত্র ধরে আল-কায়েদার ওই
বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারের
বিরুদ্ধে। মূলত: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার নিয়ে ক্ষোভ স্পষ্ট হয়েছে এ বার্তায়।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ১৭ ফেব্রুয়ারী কুতুবদিয়ায় নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া দেখার পর জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, “বাংলাদেশে আল কায়দা আগে যে ফেসিলিটিজ পেতো, তা এখন পায় না বলেই
হুমকি দিচ্ছে । তাই আল কায়দার হুমকি সবসময় আছে , তা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত । প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই বলেছেন, এদের বের করে দাও। অনেককে বের করে দেয়া হয়েছে। আগে অনেক সরকারি সংস্থাও
তাদের সুবিধা দিয়েছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর জীবনের ঝুঁকি অনেক আগে থেকেই আছে।” ( বিডি নিউজ ২৪ , ১৭ ফেব্রুয়ারী)
। প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা
জেনারেল তারেকের এ বক্তব্য বাস্তব সত্য
বলেই আমরা বারবার জেনেছি। তবে তার আরেকটি
বক্তব্য নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। তারিক
সিদ্দিক কী করে বললেন, “আগে আল কায়েদার একটা পলিসি ছিল।
আমরা তোমাদের এখানে আসবো-থাকবো; তোমাদের ক্ষতি করব না। এখন আর সে পলিসি নেই”? বিস্মিত হলাম এ বক্তব্যে। কখনো কোন কালে কি কারো ক্ষতি না করার পলিসি আল কায়দার ছিল, তিনি জানেন? কোথায় ছিল? সত্যি,যদি তা হয়ে থাকে - সকলের জানা প্রয়োজন।
আর যদি তা না হয়ে থাকে, রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের এমন বক্তব্য
উদ্বেগজনক। বেসিক কনসেপশানের জায়গায় আমাদের হয়তো এখনো অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে ।
সারা বিশ্বে ‘আল কায়দা’ বা ‘মুসলিম ব্রাদার হুড’ ভয়ংকর সন্ত্রাসে নেতৃত্ব দিচ্ছে , তার জবাব ও
পাচ্ছে। মুরসির ফাঁসি নিশ্চিত-বলছে আমার মিশরীয় অনেক বন্ধু। মানবতার চরম অবমাননার
শাস্তি একদিন পেতেই হয়- এ তার প্রমাণ । এ বাস্তবতায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল- কায়দা বা মুসলিম
ব্রাদারহুডের জঙ্গীবাদ এবং সভ্যতার প্রতি তারা কতো বড়ো হুমকি-সে সম্পর্কে
স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ ধারণা থাকা
জরুরী। নাহয় এদেশে তাদের দোসর হেফাজত জামাত বিএনপির তান্ডব
মোকাবেলা কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।
আল কায়দার
হুমকি বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছুই নয়।
জাওয়াহিরির মরিয়া বক্তব্যের এ বার্তা জামাত বিএনপি প্রেমী দের একাত্মতা নতুন করে মনে
করিয়ে দিলো কেবল।
এক্ষেত্রে আমাদের মিডিয়াকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাদের
করনীয়। আর কতোদিন তারা তথাকথিত ‘গণতন্ত্রে’ র নামে জামাত বিএনপি হেফাজতিদের সংবাদ
প্রকাশ করে যাবে? রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পজেটিভ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, বিশ্বজুড়ে
তার স্বীকৃতি থাকলেও নিজের দেশের গণমাধ্যমে তার বিপরীত চিত্র আমরা দেখতে পাই।
এর কারণ কী?
কালো টাকার কাছে বন্দী গণমাধ্যমে দলীয় বিবেচনায় পদায়ন নিয়মিত চিত্র। যে
কারণে পেশাদারীত্ব রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণ
নেই কারো। এ পরিস্থিতিতে একুশে পদক আলোচনা- সমালোচনায় আসবে এটাই স্বাভাবিক।
জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক স্বদেশ রায় ১৩ ফেব্রুয়ারী
জনকন্ঠে প্রকাশিত তার লেখায় সত্যিই সাহসের সাথে সত্য উচ্চারণ করেছেন । এ তার স্বভাবজাত। । শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক
মুনতাসির মামুন তার ‘রাজাকারের আত্মজীবনী ‘ লেখাটিতেও এ বিষযটি তুলে ধরেছেন।
আমি অতি সাধারণ এক সংবাদকর্মী। হিসেব করে চলতে পারি না,
তাই হিসেব করার চেষ্টা ও করিনি কখনো। তবে দেশের সুশীল সমাজ আর ‘কৃতি’ সাংবাদিক
নেতাদের এমন দোদুল্যমান বা সন্ত্রাসের পক্ষে অবস্থান আমার মনে অসংখ্য
প্রশ্নের জন্ম দেয়।
বাংলাদেশের জামাত বিএনপির প্রোপাগান্ডা
থামবে না। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের অনেক গণমাধ্যম এখনো জামাত আল- কায়দা নিয়ন্ত্রিত
সন্ত্রাসের প্রকৃত তথ্য প্রকাশে নিঃশঙ্ক চিত্ত।
আমরা কেন তা হারাতে বসেছি?
জাওয়াহিরির বক্তব্যের সাথে সাথে
পত্রিকা, টেলিভিশনে গুরুত্বের সাথে হেফাজতের সংবাদ, তাদের দোসর বিএনপি জামাতের
বক্তব্য প্রচার করলো সবাই । তাদের জবাবদিহিতায় আনার চেষ্টা করলো না কেউ?
ভারতের বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে, জামাতে ইসলাম
আর ভারতের আম-আদমী পার্টি একাট্টা হয়েছে । এই ঠগবাজ দের সাধারণ মানুষ আস্তাকুঁড়ে
ছুঁড়ে ফেলে ও তাদের দুই কান কাটা। তাই তাদের যেন লজ্জা ও লাগে না।বাংলাদেশ , ভারত আর পাকিস্তানের
জামাতে ইসলামী আল-কায়দার সাথে কাজ করছে বরাবরই। ভারতের আম আদমী পার্টির
প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীতে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন জামাতে
ইসলামী তাদের সাথেই আছে।১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন’স ডেতে বিশাল অনুষ্ঠান করে
ভারতের জামাতে ইসলাম। জামাতে ইসলাম হিন্দ
এর কেন্দ্রীয় কমিটি মারকাজে মজলিশে শুরার প্রভাবশালী সদস্য হাসান রাজা ইসলামিক একাডেমি সহ
জামাত নিয়ন্ত্রিত অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার সভাপতিত্বে দিল্লীতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তারা আম আদমী
পার্টিকে আমন্ত্রন জানায়। অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিল জামাতের সহযোগী সংগঠন ইউনাইটেড মিল্লি ফোরাম। ছবি সহ এই সংবাদ
প্রকাশ করে জামাতের সহযোগী এ সংগঠনগুলোকে
কাগুজে বাঘের সাথে তুলনা করেছে নর্দার্ন ভয়েজ অনলাইন। জামাত আয়োজিত এ
অনুষ্ঠানের অতিথি আম আদমী পার্টির শীর্ষ
সংগঠক সঞ্জয় সিং জামাতের সাথে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেছেন আম আদমী পার্টি
ধর্ম বর্ণ গোত্র ভেদাভেদ করে না, তাই তারা জামাতের সাথে একাত্ম। আসামের
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার মুখপাত্র টাইমস অফ আসাম ১৮ ফেব্রুয়ারী লীড প্রধান সংবাদে প্রচার
করেছে, ৫ জানুয়ারীর ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্ব
থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্র’ করেছে ভারত।
অন্যদিকে পাকিস্তানের কোন কোন গণমাধ্যম
বাংলাদেশের সাফল্যের সংবাদ গর্বের সাথে প্রচার করছে। ২৩ অক্টোবর,২০১৩
পাকিস্তানের সাংবাদিক মুতাজা হায়দার ডন
পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন, ১৯৭১ সালে যে
বাংলাদেশ কে জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘শুয়োরের দেশ’ (শুকরের দেশ) বলেছিলো , পশ্চিম পাকিস্তানীরা ‘
ভুখা –নাঙ্গা’ বলে যে বাঙ্গালীদের বকা ঝকা করতো, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন
করে সেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান, এমনকি ভারতকেও ছাড়িয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায়।তাই
বাংলাদেশ আর দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুধাপীড়িত দেশ নেই ।গ্লোব্যাল হাঙ্গার ইনডেক্স এর
জরীপ তুলে ধরে ডন লিখেছে, পাকিস্তান এখনো ক্ষুধাপীড়িত নাগরিক দের মুখে অন্ন জোগানোর চেষ্টায়
ছুটাচ্ছে, আর বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের ঘোড়ায় লাগাম ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
দোর্দন্ড প্রতাপে।
সাধারন মানুষের জীবন বিপন্ন করে জঙ্গী গোষ্ঠী সর্বত্র হত্যা, সন্ত্রাস আর আপহরণের তান্ডব
চালাচ্ছে। আল আদল ইরান ও ইরানের ঘনিষ্ঠ
মিত্র সিরিয়ায় বন্দি ৩শ’ সুন্নির সঙ্গে তাদের বিনিময় করার
দাবি করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে । দশদিন আগে পাকিস্তানি সুন্নি জঙ্গিরা পাঁচ
ইরানি সীমান্তরক্ষীকে বন্দী করেছে। সুন্নি
জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল আদল বলেছে, ইরানি রক্ষীদের আটকের
পেছনে তাদের হাত রয়েছে।অজ্ঞাত একটি জায়গায় কয়েকজনকে বেঁধে রাখা হয়েছে, এমন একটি ছবি পোস্ট করে তা ইরানি রক্ষীদের বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। শুক্রবার
আল আরাবিয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে, আটককৃত
ইরানি রক্ষীদের মধ্যে একজন সার্জেন্ট জামশেদ দানাইফার্দ ভিডিও তে বলেছেন- তারা “নিরাপদ ও ভালো” আছেন। এদের মুক্ত করতে যথাযথ
পদক্ষেপ না নিলে দেশটিতে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরানি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলরেজা রহমানি ফাজলি ।বিবিসি বলেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ওই রক্ষীদের ইরানের সিসতান বেলুচিস্তান অঞ্চল থেকে আটক
করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।“কঠোরতার”
সঙ্গে বিষয়টি দেখার ও বন্দিদের মুক্ত করতে “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ” নেয়ার জন্য ইসলামাবাদের
কাছে দাবি জানিয়েছেন ইরানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাজলি। ইরানি রক্ষীদের যে দিন আটক করা হয়, সেই দিনই ইরানে নিযুক্ত পাকিস্তানি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে পাঠায়
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বিষয়ে ইসলামাবাদ “সন্ত্রাসী
গোষ্ঠীটির নেতাদের ও সদস্যদের (যারা পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে) বিরুদ্ধে কঠোর
পদক্ষেপ গ্রহণ করবে” বলে দাবি জানায়।
১৭ ফেব্রুয়ারী একই দাবির পুনারাবৃত্তি করে ফাজলি বলেছেন, অন্যথায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
পাকিস্তানের অবশ্যই ইরানকে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।
আবারো পাকিস্তানের ডন পত্রিকার একটি সংবাদ তুলে ধরতে
হয়। ২০১৩
সালের ৩ সেপ্টেম্বর মোষ্ট ওয়ান্টেড এক্সট্রিমিস্ট লিডার আবু জারারা আল
ইয়েমিনিকে পাকিস্তানের মুরিরি এলাকার
সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্যাকেশন স্পটের একটি হোটেল থেকে
গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সৌদি বিশেষ
বাহিনী। ৪টি হেলিকপ্টারে করে এই বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের রাওয়িন্ড এলাকায় অবতরণ করে। সেখান
থেকে উটে চড়ে মুরুরি এলাকায় গিয়ে ঘাড়ে ধরে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী
জারারা কে । জামাতে ইসলাম পাকিস্তান এবং
অন্যেরা ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করে এই গ্রেফতার অভিযান মার্কিন বাহিনীর। জামাতে ইসলাম
পাকিস্তান এবং জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায়। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে বারবার এমন মার্কিনি হামলা বরদাশত করা হবে না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশের জন্যে দাবি
তোলে। এমন ও বলে, “ যাকে গ্রেফতার করা
হয়েছে, সে যদি জারারাও হয়,পাকিস্তান সরকারের লজ্জিত হওয়া উচিত!কারণ, সে একজন
মুক্তিযোদ্ধা; আমেরিকার বিরুদ্ধে সে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছে!” কিন্তু
জারারা কে গ্রেফতার করেছে সৌদী বাহিনী – এ তথ্য জানার সাথে সাথে জামাতি ঠগবাজ নেতাদের
এতোক্ষণের ক্ষুব্ধ মনোভাব আর কুঁচকানো ভুরু বদলে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় উদ্ভাসিত
হয়ে উঠে। নিজেদের দেশে ‘বাপের দেশ’ সৌদী
অভিযানে যেন চরম উল্লসিত তারা। জামাতি
জঙ্গীরা চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘জাজ্জাকাল্লাহ’
! আরবী ভাষায় যার অর্থ , আল্লাহ তোমায় পুরস্কৃত করুন! আরো বললো,
“মাশাল্লাহ! মাশাল্লাহ! ইসলামী দুনিয়ার জন্যে আজ সবচেয়ে গৌরবের দিন!!” সেই
সমাবেশেই তারা চিৎকার করে বলে ওঠে, “ না,
জারারা পাকিস্তানের কোন বন্ধুই হতে পারে
না। এমন কি সে মুসলমান ই নয়!” “এই
এক্সট্রিমিস্ট রা পাকিস্তানের চরম শত্রু, এদের হত্যাই একমাত্র শাস্তি!” এমন
বক্তব্য দিয়ে জামাতে ইসলাম পাকিস্তান এবং জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম সহ তাদের অন্যান্য
সহযোগী সংগঠন এক যৌথ বিবৃতি দেয়। পরবর্তীতে পাকি মিলিটারী স্পোকসম্যান সংবাদ
সম্মেলন করে সৌদি বাহিনীর টপ টেরর গ্রেফতার
অভিযান ব্যাখ্যা করে। এতেই শেষ নয়, ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয়
টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়ে পাকিস্তানের জনগণ এবং সৌদী সরকারকে ধন্যবাদ জানায় পাকিস্তানের
জঙ্গীবিরোধী অভিযান সফল করা এবং এতে সহযোগিতা করার জন্যে। এবার জামাত কার পক্ষে
বলবে?
যথারীতি এখানে
ও একই হঠকারী ভন্ড আচরণ জামাতের। চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক
মুফতি ইজাহার এর মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ৮
অক্টোবর হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির সময়ে শক্তিশালী বিষ্ফোরণে তিন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। ঘটনার পরপর হেফাজতে ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে
মুফতি ইজাহারের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে হাস্যকর ভাবে বলে, এ ঘটনা সামান্য কম্পিউটার বিষ্ফোরণ
এবং পুরোটাই পুলিশের সাজানো । এ মামলায় ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের সামরিক শাখার প্রধান হারুণ ইজাহারের বিরুদ্ধে
চার্জশীট দেয় পুলিশ। সাথে সাথে হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে
বলেছে , ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের কেউ নয়! চমৎকার!
পরিশেষে উল্লেখ করতে হয় গত বিশ বছর ধরে এই অন্ধকার তালেবান জঙ্গী গোষ্ঠীর হত্যা , সন্ত্রাস আর
ষড়যন্ত্রের চিত্র তুলে ধরেছি তৃণমূল থেকে। তার খেসারত হিসেবে মৃত্যু পরোয়ানা,
আক্রমন, হামলা, গ্রেফতার সবই পোহাতে
হয়েছে। এখন পোহাতে হচ্ছে ‘আওয়ামী লীগের
দালাল’ অপবাদে কর্মহীন জীবনের গ্লানি। ২৮
নভেম্বর ২০০৪ সালে গ্রেফতার করে বিএনপি
সরকার। বারবার ইন্টারোগেশান সেলের মুখোমুখি হই প্রশ্ন ছিল তালেবান কে, কোথায়? আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনারা জানেন না,
কারা রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল করে বলে,আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান!” মনে পড়ছে প্রিসিলা রাজ , সালিম সামাদের কথা ।
যারা অনেক নির্যাতিত হয়েছিলেন। আমার ছোট্ট শিশুটির গায়ে সেদিন অনেক জ্বর । কখন যেন রাস্তায় বেরিয়ে
পুলিশের গাড়ির পেছন পেছন চলে গিয়েছিলো কিছু পথ।সেসব অনেক কথা, পরে জানতে পেরেছি। আবারো হয়তো দুর্দিন এলে আমাদের কলম থেমে থাকবে
না কখনো।
তবে সেদিন যারা বিএনপির সন্ত্রাস নারী নির্যাতন বা
জঙ্গী পোষণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলো, গত ৫ বছরে তাদের রম্য হর্ম্য মাঝে রমরমা অবস্থা
দেখে বুঝে গেছি, এ সমাজ সবসময়ে অপরাধীদের পক্ষে । তাই তো স্বদেশ রায় , মুনতাসীর
মামুন বা শাহরিয়ার কবিরের কলম থামে না। এই
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আতিকুল্লাহ খান মাসুদ বা তোয়াব খান ছাড়া দুঃসময়ে সত্য
প্রকাশের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাউকে পাওয়া যাবে না। তাই সম্মানিত এই সম্পাদক
প্রকাশকদের জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয়
স্বীকৃতি না ও পেতে পারেন। তাতে কী বা এলো
গেলো । সমাজ বদলের সংগ্রামে এবং দেশ মাতৃকার কল্যাণে একজন সংবাদকর্মী নিবেদিত থাকলে তার পাঠক বা দর্শক ই তার সর্বোচ্চ
বিচারক। তাদের বিচারে যদি সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা গণ্য হয়, আমার বিশ্বাস কলম সৈনিক দের সেটাই পাথেয়! sumikhan29bdj@gmail.com
No comments:
Post a Comment