Sunday, February 16, 2014

খালেদা জিয়া ও সন্ত্রাসী সংস্কৃতি- বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর


আমাদের নৈতিক ও বুদ্ধিবাদী সংস্কৃতির ভেতর সন্ত্রাসী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য হচ্ছে সন্ত্রাস সফল করতে পারলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রস্ব করা যাবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে যে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে সে-রাষ্ট্রের ভিত্তি সাধারণ মানুষের অধিকার। এই অধিকারই সংবিধানে উচ্চারিত। বিএনপি-জামায়াতের ক্রোধ এই সংবিধানের বিরুদ্ধে। খালেদা জিয়ার ইচ্ছা ও স্বপ্ন হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী শক্তি দিয়ে সংবিধান ছিন্ন ভিন্ন করা। সংবিধান তছনছ করার খালেদা জিয়ার প্রজেক্টের ভবিষ্যত নির্ভর করছে কতদূর পর্যন্ত সন্ত্রাসী সফলতা তার পক্ষে আসবে। খালেদা জিয়ার পক্ষে কতসংখ্যক লোকজন ভায়োলেন্স ব্যবহার করে লড়াই করবে, এটা ভাববার বিষয়। সেজন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সাধারণ মানুষের কাছে হাজির হয় না রাজনৈতিক কর্মসূচীর আবেদন নিয়ে, বরং তার নেতৃত্বের ভিত্তি তিনি এবং তাঁর দল যথেষ্ট মানুষকে খুন করতে পারঙ্গম। এখানেই তাঁর এবং দলের ভিন্নতা অন্যদের সঙ্গে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি নিজেকে লালন করেছেন একটি সন্ত্রাসী সাংস্কৃতিক আবহাওয়ার মধ্যে, তিনি ভাবেন ভায়োলেন্সের সফলতা হচ্ছে ভায়োলেন্সের শেষ হিসাব নিকাশ।
সন্ত্রাস করে বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্বাস করাতে হবে যে সন্ত্রাসী রাজনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদকে আলোচনার টেবিলে (অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি) বসতে বাধ্য করা যাবে কিংবা সন্ত্রাসী রাজনীতির জয় ঘোষণা সম্ভব হবে। খালেদা জিয়া এবং তাঁর দুই দল : বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতির মাপকাঠি হচ্ছে : ভায়োলেন্সের সফলতা। ভায়োলেন্সকে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে যেখানে মানুষকে খুন করা হবে গণতন্ত্র ও মানব অধিকারের সাক্ষ্য প্রমাণ : বিএনপি ও জামায়াত পলপট স্টাইল রাষ্ট্র চালনার দক্ষতায় উপনীত হয়েছে।
খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন সিভিলিয়ান জনসংখ্যা হত্যা করে চলেছে। এই আন্দোলন সশস্ত্র এবং বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র মিলিশিয়া অথবা ক্যাডাররা দেশব্যাপী তা-ব করে বেড়াচ্ছে। ইনোসেন্ট সিভিলিয়ানদের, নিরপরাধ সিভিলিয়ানদের হত্যা করার মধ্যে আনন্দ আছে, সেই আনন্দে মশগুল হয়ে আছেন খালেদা জিয়া। সাধারণ মানুষকে হত্যা গণতন্ত্রের চিন্তা, প্রতিষ্ঠান এবং স্বার্থকে ক্ষুদ্র করে তুলেছে। মানুষ হত্যা করে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়? খালেদা জিয়ার জবাব : যায়। তিনি টেররিস্ট কমান্ডার তৈরি করেছেন, মনে হয় তাদের কোন শান্তি নেই। টেররিস্ট কালচারের হলমার্ক হচ্ছে, যেখানে প্রাথমিক যৌক্তিকতা নেই, নেই সততা, নেই ডিসেনসি : এই কালচারের লালন করে চলেছেন।
খালেদা জিয়া এই সংস্কৃতির শীর্ষে পৌঁছেছেন। সাধারণ মানুষের অধিকার তাঁর রাজনীতির বিষয় নয়, তাঁর রাজনীতির বিষয় : ক্ষমতা, তাঁর ক্ষমতার স্বার্থে সাধারণ মানুষকে জবাই করা যদি দরকার হয় তাহলে তাদের বাঁচার কোন অধিকার নেই। খালেদা জিয়ার রাজনীতি বর্বর ও ব্লাডি, তাঁর রাজনীতি মানব অধিকার লঙ্ঘন করে দিনে এবং রাত্রে। ডেথ স্কোয়াড তিনি তৈরি করেছেন, এই স্কোয়াডগুলো হরতালের সময়ে শহরে বন্দরে গ্রামে মার্চ করে ঘুরে বেড়ায়, খুন করে বাসের যাত্রীকে, অগ্নিদগ্ধ করে বাসকে, পুড়িয়ে মারে, নারী ও পুরুষ ও কিশোরকে, কৃষকের পণ্যে আগুন জ্বালায়, ছোট ব্যবসায়ীরা ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে থাকে, কখন পেট্রোল বোমা ছুঁড়বে এ সব ডেথ স্কোয়াড।
খালেদা জিয়া এমন একটি রাজনীতির চূড়ায় বসে আছেন, যে রাজনীতি ধারাবাহিকভাবে মানব অধিকার লঙ্ঘন করে। এই রাজনীতি থেকে পপুলার আন্দোলন কখনও তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। রেললাইন উপড়ে ফেলে, রেলগাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে গণতান্ত্রিক গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। তিনি একটা সন্ত্রাসবাদী সংস্কৃতি শক্তিশালী করছেন। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব।

লেখক : শিক্ষাবিদ

No comments:

Post a Comment