Friday, July 13, 2012


র‍্যাব মিডিয়া পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল শুক্রবার সন্ধ্যায়   অন্যদৃষ্টি কে বললেন, এই প্রতিবেদন জনকন্ঠে প্রকাশিত সর্বশেষ গাঁজাখুরি সংবাদ

তদন্তে নতুন মোড়
সাগর রুনী হত্যাকান্ড
রবিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সুড়ঙ্গপথে তৈরি গোপন পাইপলাইন সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কি হত্যার কারণ? ্রস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মাহফুজসহ যেই জড়িত হোক না সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে

শংকর কুমার দে ॥ সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকা-ের জন্য ‘হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের গোপন সুড়ঙ্গ পথে বিকল্প পাইপ লাইন স্থাপনের ভিডিও ফুটেজসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন’ তৈরি করাই কি কারণ? র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার তদন্তকারী প্রতিনিধি দল হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের গোপন সুড়ঙ্গ পথ পরিদর্শন করেছেন। এরপরই এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সার্ভারে থাকা বিবিয়ানার বিভিন্ন অনিয়ম এবং রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্তের ভিডিও ফুটেজগুলো অতিসম্প্রতি চুরি হয়ে গেছে বলে দাবি করে তেজগাঁও থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়েছে। এ দুটি জিডির ব্যাপারেও তদন্ত করা হচ্ছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনী তাঁর স্বামী মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার খুন হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনে। বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শনকালে মেহেরুন রুনীকে হেলমেট পরিহিত অবস্থাতে দেখা গেছে। হেলমেট পরিহিত অবস্থায় সেখান থেকে একটি প্রতিবেদন প্রচার করতে দেখা গেছে মেহেরুন রুনীকে। হঠাৎ করেই প্রতিবেদনটি প্রচারের মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের প্রতিবেদনটি তৈরিকে কেন্দ্র করে রুনীকে শাসানো হয়।
মেহেরুন রুনী হবিগঞ্জে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন। ভিডিও ফুটেজসহ কয়েকটি প্রতিবেদন পাঠানো হলেও আর প্রচার করেনি বেসরকারী টিভি চ্যানেলটি। এখানেই লুকিয়ে আছে অন্তর্নিহিত রহস্য। ঢাকায় ফেরার পর চ্যানেলটির মালিক বিবিয়ানা বিষয়ে রিপোর্ট করায় রুনীকে গালমন্দ করেন। এই ঘটনায় রুনীর তখন ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়। এরপর রুনীর কাছ থেকে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড সম্পর্কিত সকল তথ্য-উপাত্ত এবং ভিডিও ফুটেজ হাতিয়ে নেয়া হয়। চ্যানেলে প্রচারের জন্য রুনী কয়েকটি প্রতিবেদন দাখিল করলেও মূল ডকুমেন্ট রেখে দেন নিজ ল্যাপটপে। খুনের পর লুট হয়ে গেছে রুনীর সেই ডকুমেন্টসহ ল্যাপটপটিও। ডকুমেন্টসহ ল্যাপটপ লুট হওয়ার সঙ্গে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সার্ভারে থাকা বিবিয়ানার বিভিন্ন অনিয়ম এবং রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্তের ভিডিও ফুটেজগুলো অতিসম্প্রতি চুরি হওয়ার ঘটনার সঙ্গে কোন যোগসূত্র আছে কি না, সেটাই এখন তদন্তকারীদের কাছে প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠেছে, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের গোপন সুড়ঙ্গ পথে বিকল্প পাইপ লাইন স্থাপনের ভিডিও ফুটেজসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিকে কেন্দ্র করে স্বামীসহ রুনী বিশেষ মহলের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন কিনা? র‌্যাবের তদন্তে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পথ প্রশস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি দল বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড পরিদর্শন করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছেন। সাংবাদিক দম্পতির হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের ব্যাপারে অন্যান্য কারণের সঙ্গে র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তাদের সন্দেহের তীর এখন বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের দিকেই।
তদন্তকারীরা যে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন তা হচ্ছে, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঘনিষ্ঠ সমর্থক কি না? তাঁর ছোট ভাই ঐ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা? এই টিভি চ্যানেলটির তিন সিনিয়র সাংবাদিক বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী কিনা? টিভি চ্যানেলটির মালিককে র‌্যাব কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে যাওয়ার পর তাদের টিভি চ্যানেলের সুরক্ষিত অফিস থেকে ভিডিও ফুটেজ চুরি হয়ে যায় কিভাবে? তদন্তে এসব প্রশ্ন সামনে চলে আসছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের একটি গোপন সুড়ঙ্গ পথ থেকে পেট্রোবাংলা কিংবা সরকারী কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ঠিকাদাররা বিকল্প একটি পাইপলাইন স্থাপন করছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে কোথায় কিভাবে গ্যাস নেয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ধরনের রহস্যময় বিকল্প পাইপ লাইন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, এখন তাও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিবিয়ানাকে কেন্দ্র করে দুটি কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেছিল রুনী। এর জের হিসেবেই স্বামীসহ রুনী প্রভাবশালী মহলের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন কি না, এখন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, সাগর-রুনী হত্যাকা-ের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখন তদন্তকারীদের হাতে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, শুধু মাহফুজ নয়, ঘটনার সঙ্গে যে কেউ জড়িত থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম তদারক করছে। সব কিছু মিলিয়ে সাগর-রুনীর হত্যারহস্যের সন্দেহের তীর এখন বিবিয়ানার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দিকেই।
এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের সার্ভারে থাকা বিবিয়ানার বিভিন্ন অনিয়ম এবং রাষ্ট্রবিরোধী কিছু কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্তের ভিডিও ফুটেজগুলো অতিসম্প্রতি চুরি গেছে বলে দাবি করে চ্যানেল কর্মকর্তারা তেজগাঁও থানায় পৃথক দুটি জিডি করেছেন। এ দুটি জিডির পরই র‌্যাব তদন্তকারীদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে হঠাৎ কেন সুরক্ষিত টিভি চ্যানেলের অফিস থেকে ভিডিও ফুটেজ চুরি হয়ে যাবে?
র‌্যাবের তদন্তে খুবই গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিয়ে খোঁজা হচ্ছে আরেকটি প্রশ্নের। এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি ‘পরকীয়ার বলি’। পরকীয়ার বলি হলে পরকীয়া প্রেমিক কে? এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান এও বলেছেন, সাগর সরোয়ার চাকরি নিয়ে জার্মানিতে চলে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী মেহেরুন রুনীর সঙ্গে এক বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ হতো। সাংবাদিক দম্পতির পরকীয়া প্রেমিক খুঁজে বের করার জন্য এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে। সাংবাদিক দম্পতির মনোমালিন্যের বিষয়েও তাঁর কাছে তথ্য চাইবে র‌্যাব।
র‌্যাবের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র পুত্র মেঘের প্রথম সাক্ষাতকারের ভিডিও ফুটেজটি। মেঘের প্রথম সাক্ষাতকারটির বিষয়বস্তু অন্য কোন টিভি চ্যানেল পেল না কেন বা প্রচারিত হলো না কেন? তাহলে কি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেঘকে দিয়ে একটি সাক্ষাতকার দেয়ার ঘটনা ঘটিয়ে তাতে ভিডিও করা হয়েছে? এটিএন বাংলার চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মেঘের প্রথম সাক্ষাতকারের যে ভিডিও ফুটেজটি দেয়া হয়েছে তাতে মেঘ বলেছে, প্রথমে আমার আব্বু (সাগর) আমার আম্মুকে (রুনী) খুন করে। পরে দুইটি গু-া আমার আব্বুকে খুন করে। এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের এই ধরনের বক্তব্যের পর মেঘের বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মেঘকে মনস্তত্ত্ববিদদের কাছে নেয়া হচ্ছে। এটিও একটা তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ফ্ল্যাটের বেডরুম থেকে মাছারাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনীর ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন রুনীর ভাই। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আড়াই মাস তদন্ত শেষে তদন্তে নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করায় উচ্চআদালত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেন র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব)। র‌্যাবের এএসপি জাফর উল্লাহ তদন্তকারী এবং সদর দফতরের তিন পরিচালক এই মামলার তদন্তের তদারক করে যাচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment