Sunday, May 18, 2014

দুই দেশের নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থেই ছিটমহল বিনিময় ॥ ভারতের গণমাধ্যমও সোচ্চার -সুমি খান


  ১৯ ডিসেম্বর , ২০১৩ ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বুধবার তৃণমূল কংগ্রেস এবং আসাম গণপরিষদের সদস্যদের তীব্র বিরোধিতার মুখে সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত একটি বিল রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছে।
এ বিলটি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্তবর্তী ছিটমহল বিনিময় সহজ হবে।তবে বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘বাংলাদেশ ল্যান্ড সোয়াপ বিল টেবলড ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহায্য করতেই দ্রুত এ বিল পাসে তৎপর হয়েছে ভারতের জোট সরকার।
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনে বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিলটি উত্থাপন করতে গিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়েন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ।তিনি বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নিতেই ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বীরেন্দ্র প্রসাদ বৈশ্যর নেতৃত্বে আসাম গণপরিষদের সদস্যরা সমস্বরে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের হাত থেকে বিলের কপি ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে বীরেন্দ্র বৈশ্যসহ কয়েকজন সালমান খুরশিদের দিকে তেড়ে যান। ফলে ব্যাপক হট্টগোলের  মধ্যে অধিবেশন ২০ মিনিটের জন্য মুলতবি করা হয়। ২০ মিনিট পর অধিবেশন শুরু হলে সালমান খুরশিদ ভারতের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের এই বিল উত্থাপন করেন। তবে তখনো তৃণমূল ও অসম গণপরিষদের সদস্যরা হৈ চৈ চালিয়ে যাচ্ছিল। বিলটি উত্থাপনের পরপরই রাজ্যসভার চলতি অধিবেশন শেষ হয়ে যায়। ফলে পরবর্তী অধিবেশনে তা নিয়ে আলোচনা হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগেও গত মে ও আগস্ট মাসে দুই দফা এই বিলটি উত্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসসহ কয়েকটি দলের বিরোধিতা কারণে তিনি সফল হননি।
বুধবার বিক্ষুব্ধ রাজ্যসভার সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি তা রক্ষা করেননি। তাদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই বিলটি উত্থাপন করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনে সহায়তা করতেই এ বিল পাশে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে আবারো সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দল। ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ দলটির ফের ক্ষমতায় আসাটা দিল্লির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আর হাসিনা সরকারের দাবি এ চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে তার পক্ষে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা সম্ভব হবে।হাসিনার বারবার তাগাদার মুখেই সরকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিলের সঙ্গে এ চুক্তিটি জুড়ে রাজ্যসভায় উত্থাপন করে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়। কংগ্রেস নেতারা আশা করছেন বিলটি পাস হলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তারা সহজেই মুসলমান ভোটারদের সমর্থন পাবে।
কিন্তু বুধবার স্থল সীমান্ত চুক্তি বিলটি রাজ্যসভায় উত্থাপনের সময় তৃণমূল কংগ্রেস, আসাম গণপরিষদ ও বিজেপির বিরোধিতার কারণে বিপাকে পড়ে ক্ষমতাসীনরা। রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর এটি লোকসভায় তোলা হবে।
 সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট ৭ হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

বিজেপি ও আসাম গণপরিষদ শুরু থেকে এই বিলের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের আশঙ্কা ছিটমহল বিনিময় হলে ভারত প্রায় ৭ হাজার একরের বেশি জমি হারাবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসও এর বিরোধিতা করছে। মমতা বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।

৫১ হাজার ৫৪৯ জন ‘নাই’-দেশের নাগরিক ছিটমহলবাসী। এরা প্রত্যেকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে বিশ্ববাসী এক। মঙ্গলবার রাতে এনডিটিভিতে একটি টকশোতে উঠে আসে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির বাস্তবায়ন এবং তিস্তা চুক্তি। প্রশ্ন তোলা হয়, রাজনৈতিক হঠকারিতার কাছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু কি-না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে হত্যা করার কারণে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়কার আদর্শ থেকে সরে গিয়েছিল। এই ব্যবস্থা অনেকদিন চলেছে। ছিটমহলে পাকিস্তান আমলে ১৯৫১ ও ১৯৬১ সালে জনগণনা করা হয়েছিল। এর দীর্ঘদিন পর মনমোহন-হাসিনার ২০১১ সালের চুক্তি ছিটবাসীদের আশাবাদী করেছে।

এই নিরীহ মানুষগুলোর জন্যেও কথা বলতে হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের সচেতন নাগরিকদের। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা প্রশ্নে এদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং নিরাপত্তাহীনতা ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশকেই চরম হুমকির মুখে রেখেছে। এই বাস্তবতা দুই দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।

ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিক হলেও বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। নেই তাঁদের ভোটার পরিচয়পত্র। একই চিত্র বাংলাদেশে থাকা ভারতের ছিটমহলেও। ছিটমহলবাসীর পরগাছা হিসেবে নিজেদের নাম-পরিচয় লুকিয়ে বাস করতে হচ্ছে ।
 
ভারতীয় ছিটমহল বা বাংলাদেশের ছিটমহলের প্রকৃত বসবাসকারীরা এখন আর নেই। বাংলাদেশী ছিটমহলে ভারতীয় আর ভারতীয় ছিটমহলে বাংলাদেশীরাই বর্তমানে বসবাস করেন। এটি একটি জটিল সমস্যা। ছিটমহল বিনিময় হলে ভারতের ১০ হাজার একর জমি বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে হবে। ভারতের সংবিধান অনুসারে জমি নেয়া যেতে পারে কিন্তু দেয়া যায় না। এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখানেই তৃণমূল নেত্রী মমতা এবং ভারতীয় উগ্র মৌলবাদী সংগঠন বিজেপির আপত্তি।
বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে এবং ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার ভারত ভূখণ্ডে রয়েছে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। এর মধ্যে ৪৮টি কোচবিহার জেলায়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রয়েছে ভারতের ১১১টি ছিটমহল। ১৯১১ সালের ১৪ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উভয় দেশের যৌথ আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে রয়েছে ১৪ হাজার ২১৫ জন নাগরিক বাস করছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ১১১টি ছিটমহলে রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ভারতীয় নাগরিক (নাগরিকত্ব না থাকলেও জন্মসূত্রে নাগরিক)। আইন মোতাবেক ভারতের ভূখণ্ডে বসবাসকারী ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা বাংলাদেশী আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১১১টি ছিটমহলে বসবাসকারীরা ভারতীয়। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের নিরাপত্তা এবং জনস্বার্থেই ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব দেবার সময় এসেছে। 
ছিটমহলের ‘নাইদেশের নাগরিক’দের মানবেতর জীবনের জন্যে দায়ী রাজনীতিকদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সময় এসে গেছে। ছিটমহল বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক অধিকারকে সুরক্ষিত করা এবং তাঁদের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবিতে বিশিষ্ট আইনজীবী অনির্বাণ দাস কলকাতা হাইকোর্টে গত সোমবার ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন।বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার ছিটমহল বিনিময়ের জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে রাজি থাকলেও বাদ সাধেন ভারতের অসম রাজ্যের দুই বিজেপি সাংসদ আর পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল নেত্রী মমতার দাবি, এই চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ক্ষুণœ হবে। ‘নিজেদের স্বার্থ’ বিসর্জন (?) দিয়ে কোন বিনিময় চুক্তি হতে দেবেন না তিনি। মুখ থুবড়ে পড়ে ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছিটমহলজুড়ে। ছিটমহল বিনিময়ের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। 
মমতা কদিন আগে হঠাৎ বলেন, ‘ছিটমহলবাসী চাইলে ছিটমহল বিনিময় হবে।’ অথচ ১৯৯৪ সাল থেকে ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলবাসী অবস্থান ধর্মঘট ও অনশনসহ নানান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। মমতা এসব না জানার ভান করলেন। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত আমাকে বলেছেন, ‘ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে দুই দেশেই আন্দোলন করছি। আমরা চাইছি, ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিটমহল বিনিময় হোক। এতে ছিটমহলের বাসিন্দারা একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিক হয়ে বাস করতে পারবে। এটা তাদের মৌলিক অধিকার।’ 
সম্প্রতি ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেশ করতে দেয়া হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির আসামের দুই সাংসদ আপত্তি করেছে। বিলটি লোকসভায় উত্থাপন করা যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয় ছিটমহলবাসী। জ্বলছে তাঁদের মনে ক্ষোভের আগুন। তাঁরা ক্ষুব্ধ হন মমতার বিরুদ্ধে। 
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহসম্পাদকের বরাতে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী বিল যদি সংসদে না ওঠে, তবে তাঁরা মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনী লড়াইয়ের পথে যাবেন। মামলা করবেন উচ্চ আদালতে।
নাগরিকত্ব না থাকার কারণে কোনো সন্তানসম্ভবা মা তার সন্তানের জন্ম দেয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন না। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচী নেই। এ কারণে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে এই বাসিন্দারা যা এড়াতে পারে না দু’দেশ।
এই ছিটমহল বিনিময় না হওয়ার ফলে দুদেশের সরকার রাজস্ব বা বিভিন্ন প্রকারের কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সুযোগে একদল অসাধু লোক ছিটের বাইরের লোকদের সাহায্যে ভয় দেখিয়ে জোর করে নামমাত্র মূল্যে ছিটমহলের নামে স্ট্যাম্প পেপার তৈরি করে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রি করাচ্ছে। এই খবর প্রথম বাংলানিউজে প্রকাশ হবার পর ছিটমহলের নিরীহ বাসিন্দাদের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয়।
আগেই বলেছি, নাগরিকত্বের কোন প্রমাণ নেই বলে বাংলাদেশের নাগরিকেরা থাকছেন ভারতের ছিটমহলে। পরদেশে পরগাছা হিসেবে বাস করছেন তারা। ছিটমহলের ঠিকানা বদলিয়ে তারা ভারতের কোন ঠিকানা ব্যবহার করে ছেলেমেয়েদের ভারতীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি করছেন, ভারতের এলাকায় ভুয়া ঠিকানা দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 
এমনই মানবেতর জীবনযাপন করছে ছিটমহলের নিরীহ মানুষগুলো। এই মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি চান তাঁরা। বাস করতে চান একটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে। সুযোগ-সুবিধাও চান সেই দেশের। তাই তাঁরা ছিটমহল বিনিময়ের দাবি তুলেছেন। 
ছিটমহল বিনিময়ের অযৌক্তিক বিরোধিতা ছিটমহলবাসীর জটিল সঙ্কট নিরসনের প্রতিবন্ধক। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঠেকিয়ে দেবার কারণে মমতা-বিজেপি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই ছিটমহলবাসী ক্ষুব্ধ। 
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছিটমহল বিনিময়ে দুই দেশ রাজি হলে ছিটমহল বিনিময়ের কয়েক দশকের আন্দোলন সফলতার পথ উন্মুক্ত হয়। সেই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয় উভয় দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবার আমন্ত্রণ জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সফরের তিনদিন আগে মমতা হঠাৎ বাংলাদেশ সফর বাতিল করেন। আপত্তি তোলেন ছিটমহল বিনিময়ের বিরুদ্ধে। স্থগিত হয়ে যায় ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া। 
সম্প্রতি একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, দৈর্ঘ্যে তিন কিলোমিটার আর প্রস্থে পৌনে তিন কিলোমিটার ভারতের বাত্রিগাছ ছিটমহল। এখানে বাংলাদেশের অন্তত ৫০০টি পরিবার বাস করে। ছিটমহলবাসী আজাদ হোসেন, জয়নাল মিয়া, মোহাম্মদ আলী, বকুল মিয়া ও কল্পনাথ রায় হতাশ, ক্ষুব্ধ স্বরে সাংবাদিকদের বলেছেন, “লুকোচুরি খেলে তো জীবনটা শেষ হয়ে গেল। এভাবে আর বাঁচা যায় না। এবার ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে তাঁদের বেঁচে থাকার জন্য দিতে হবে ছিটমহল বিনিময়ের সুযোগ”। এবার এই মানবেতর জীবনযাপন থেকে মুক্তি চাইছেন তাঁরা। আকুল আবেদন করেছেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে। তারা যেন ছিটমহল বিনিময়ের দাবির পাশে এসে দাঁড়ান।
তিনবিঘা করিডরে চুক্তির সময় বলা হয়েছিল এবার ছিটমহল বিনিময় হবে। আইনী জটিলতার কারণে কখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ সালে ভারতের জনগণনার সময় কোচবিহারের জেলাশাসক বলেছিলেন আমার জেলায় গণনা করতে গেলে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য লাগবে। কারণ বাংলাদেশী ছিটমহল এই জেলায় রয়েছে। তাদের প্রশ্ন তাহলে এই এলাকায় ভারতের সার্বভৌমত্ব কোথায় আছে? ছিটমহলবাসী প্রশ্ন তোলেন, গোয়া, সিকিম যদি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তাহলে কেন ছিটমহল বিনিময় হচ্ছে না? 
বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারকে বিস্তারিত সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সঠিকভাবে জানতে হবে ছিটমহলের বাসিন্দারা কে কোথায় যেতে চান।
বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে ৩৭ হাজার ৩২৯ জন বাস করেন। ছিটমহল বিনিময়ের পরে তার মধ্যে মাত্র ৭৪৩ জন ভারতে আসতে চান-এটা জরিপের তথ্য। ২০১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিটমহল সংক্রান্ত এক আলোচনাসভায় মনসুর আলি মিঞা বলেন, ‘আমি আজ যেভাবে এখানে এসেছি, তা রাষ্ট্রের ভাষায় অবৈধ। কারণ আমি খাতা-কলমে বাংলাদেশের বাসিন্দা। কিন্তু আমার বাংলাদেশের কোন পরিচয়পত্র নেই। আমার জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। বাংলাদেশে গিয়ে আমি শরণার্থী হতে চাই না। আমি জন্মেছি ভারতে। ভারতেই মরতে চাই। একইভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ছিটের বাসিন্দারাও তাই চান। 
৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে এনডিটিভিতে সম্প্রচারিত এক মুক্ত আলোচনায় বিজেপির মুখপাত্র তরুণ বিজয় স্বীকার করেন, ভারতের ‘জাতীয় স্বার্থেই’ বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে ভারতীয় পার্লামেন্টের বিরোধী দল বিজেপি তাদের শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে মনে হচ্ছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস ও অসম গণপরিষদ এখনও বিরোধিতা করে যাচ্ছে।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু এর জন্য পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হলে রাজ্যসভা ও লোকসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, যা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ তিন দফা বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও দুইবার বিজেপি ও আসাম গণপরিষদ এবং একবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। 
মমতার ভূমিকা জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভ্রান্তি হিসেবে উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করা হয় এই টক শোতে।টিভি টকশোতে বিজয় বলেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রশমনে সাড়া দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষকে ‘সঠিক বার্তাটি’ পৌঁছে দিতে’ ভারতেরও উচিত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে সই করা।
পশ্চিমবঙ্গ ও অসম বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বরুণ গান্ধীও গত মাসে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন।
তবে এনডিটিভির টকশোতে বিজয় আবারও বলেছেন, মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের উচিত ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি করার আগে বিরোধী দলের মতামত নেয়া। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ চুক্তির বিষয়ে যে উদ্বেগের কথা বলে আসছেন, তাও কেন্দ্র সরকারের আমলে নেয়া উচিত বলে মনে করেন এই বিজেপি নেতা। 
কংগ্রেসের মন্ত্রী শশী থারুর ও বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রি এ চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতে জনমত গড়ে তোলার পক্ষে জোরালো মত দেন। শশী থারুর বলেন, ‘ঢাকা আমাদের বড় বন্ধু। এখন আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার রাখতে না পারলে তা হবে একটি বিপর্যয়।’
বীণা সিক্রি বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী। ভারত যদি বিশ্বের কাছে গুরুত্ব আশা করে, তাহলে কোন দেশের সঙ্গে করা চুক্তি বাস্তবায়নের সামর্থ্য তার থাকা উচিত।’ স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ভূমি হারাবে বলে যে অভিযোগ তৃণমূল ও আসাম গণপরিষদ করে আসছে, তাও নাকচ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
শশী থারুর ও বীণা সিক্রির সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রবীণ সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলেন, পররাষ্ট্রনীতি যদি পাকিস্তানের মতো রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়Ñ সেটা ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। ভারতের ভবিষ্যত এর পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা ও প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের ওপর অনেকটা জড়িত। আর এ দুটো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তার মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়েই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে। আর সম্পর্ক উল্টে গেলে ক্ষতিও হবে একই মাত্রার। বাংলাদেশে হাসিনার শাসন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের জন্যে নিরাপদ। কারণ, শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আলোচনার এই পর্যায়ে বিজেপি নেতা তরুণ বিজয় বলেন, ‘আমি সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে একমত।’ 
আলোচকদের অধিকাংশই চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে মত দেয়ায় একপ্রকার কোণঠাসা স্বাগত রায় ‘কূটনৈতিক কৌশলের’ আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী হিসেবে শশী থারুরের এমন কিছু বলা উচিত নয়, যাতে মনে হয় যে দিল্লী­ ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জবাবে স্বভাবসুলভ রসিকতার সুরে শশী বলেন, ‘কার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হবে মিস্টার রায় এবং তার নেত্রী (মমতা) কি তা নিয়ন্ত্রণ করতে চান? তারা কি ভাবছেন যে, কে আমার বন্ধু আর কে তা নয়- এটা বোঝার মতো বুদ্ধিও আমার নেই?’
এই টকশো দেখে ছিটমহলবাসীর মনে অন্তত আশা জাগবে তাদের দাবি এবার নীতিনির্ধারকদের নজরে আসবে। উচ্চ আদালত অথবা গণমাধ্যম সকল প্রচেষ্টা সফল করে ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব এবং মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে ভারত সরকার সচেষ্ট হবে এমন আশা করছে ৫১ হাজার ৫৪৯ জন ‘নাই’ দেশের নাগরিক ছিটমহলবাসী।
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ২২ ভাদ্র ১৪২০, দৈনিক জনকণ্ঠ



http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-09-06&ni=147841

Thursday, May 15, 2014

অভিমত ॥ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের একি কাণ্ড! মোঃ সায়েম আহ্মেদ


মাদারীপুর জেলার মুকসুদপুর উপজেলার এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। পেশায় শিক্ষক হলেও প্রভাবশালীদের ছায়ায় থেকে এলাকার বহু অপকর্মের নায়ক। ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সক্রিয় নেতা ছিল। বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বিরুদ্ধে খুন থেকে শুরু করে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকা-, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ লুট, অসভ্যতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 

যার বদৌলতে তিনি সামান্য অধ্যক্ষ থেকে ৪তলা বাড়ির মালিক। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। আর এই অর্থের উৎস নাকি মাদ্রাসার পাসকৃত দাখিল পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট আটকিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়। এমনকি পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামেও অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা রয়েছে তার। এমন কথাও শোনা যায়, মাদ্রাসার কোন কোন শিক্ষকের কাছ থেকে বেতনের অংশের ভাগ কেটে নেন। শিক্ষকরা চাকরি হারাবার ভয়ে মুখ খোলেন না। এমনকি সরকারের দেওয়া কম্পিউটার নিজের বাসায় ব্যবহার করা, সরকারী বরাদ্দের টাকা কাজ না করে আত্মসাত-এভাবেই চলতে থাকে তার সীমাহীন দুর্নীতি। 

মাদ্রাসার জনৈক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে জাল সই দিয়ে বিল বন্ধের আবেদন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। স্ট্যাম্পে জাল সই করিয়ে জমি ক্রয় করেন এবং এই জমি প্রতারণা মামলায় এই অধ্যক্ষ কিছুদিন জেল হাজতেও ছিল। এভাবে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে সে ধোঁকাবাজি-শঠতা-হটকারিতা করেছে। শুধু তাই নয়, রয়েছে নারী ভোগের আকাক্সক্ষাও। একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও তার এহেন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষ লজ্জিত, ক্ষুব্ধ। পরে সহকারী শিক্ষক এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩-এর ৫/৮ ও ৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

গত বছর কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সে মাদ্রাসার ১টি মেহগনি, ২টি শিশু ও ৩টি চাম্বলসহ মোট ৫টি গাছ কেটে বিক্রি করে। যার মূল্য-১,৬০,০০০/- টাকা। এ অর্থ অধ্যক্ষ আত্মসাত করে। দায়িত্ববান মানুষ হয়ে গাছ কাটার মতো গর্হিত অপরাধ সহ্য করতে না পেরে উক্ত মাদ্রাসার গবর্নিং বডির সদস্য এক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত মামলা হলেও আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে আগাম জামিন করিয়ে নেয় এই অধ্যক্ষ। এখানেই থেমে নেই, প্রতিশোধে মরিয়া অধ্যক্ষ পরে ওই মুক্তিযোদ্ধা ও তার এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলা দায়ের করে এবং এই স্বাধীনতা দিবসের দিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করায়। দুঃখ এখানে যারা এই দেশের স্বাধীনতা আনল আজ এই স্বাধীনতা দিবসে এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাকেই গ্রেফতার করা হলো, যিনি সারাদিন লাখোকণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতসহ স্বাধীনতা দিবসের নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারকে জানালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহায়তায় সেদিন তিনি ছাড়া পান। 

ভাবি, এটা কি দেশপ্রেমের প্রতিদান? বৃদ্ধ বয়সে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলায় মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে যেতে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও এখন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কোথাও কোন সহযোগিতা বা সহানুভূতি পাচ্ছে না। যেখানে যায় সেখানেই শুধু টাকার খেলা, টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। ওদের প্রচুর টাকা, ওরা টাকা দিয়ে সব করতে পারে। ওদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কেন, দেশ, দেশের মানুষ এমনকি প্রশাসনও জিম্মি। সারা দেশে যখন স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনগণের সুদৃঢ় অবস্থান সেই মুহূর্তে মুকসুদপুরে স্বাধীনতা বিরোধী উত্তরসূরিদের এই আস্ফালন সত্যিই আমাদের অবাক করে।


এতক্ষণ যে মুক্তিযোদ্ধার করুণ অবস্থার কথা বললাম তিনি আমার বাবা। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। তার কাছে করুণ আর্তি, ওই জামায়াতী মাওলানার হাত থেকে একটি মাদ্রাসা, মাদ্রাসার শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ এলাকার সাধারণ জনগণকে রক্ষা করুন। আমাদের বিশ্বাস তিনি আমাদের এই দুর্দশার কথা বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং ষড়যন্ত্রকারী অধ্যক্ষের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করবেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

Tuesday, May 13, 2014

মাতৃ দিবসে সিধ শর্মার নিবেদন

মূলহীন, শিকড়হীন, 
গাঙের কচুরীপানার মত ভিত্তিহীন 
ভেসে যাওয়া জীবনে উন্নাসিক মূল্যবোধে 
প্রারব্ধ বোধের আবর্তনে উচ্চারিত হয় বারবার শব্দে 
আমার গালে হাত বুলিয়ে মায়ের কথা ক'টি
"খোকা ভালো থাকিস - নেই ছুটি!" 
দীন, হীন, ভাগ্যহীন।
অসম্পূর্ণ ইতিহাস - 
ছেলে ভোলানো রূপকথা 
চৌহদ্দি সীমারেখায় থাকে আঁকা 
ছদ্ম পৃথিবীতে অনুভবে লুকোনো ব্যথা
অসহায় পীড়িত চিৎকার কান্নাভেজা চুপকথা
অসাধারণ বৈপরিত্য আনে কখনো ক্ষয়িষ্ণু জীবনে
"সোনা ভালো রাখিস সকলকে সৎ শুদ্ধমনে" 
মা দিবসে ভালবাসার পুনর্নবীকরণে 
সন্তান ভালোবেসে মনে প্রাণে 
অবধানে অনবধানে /কষ্টের উচ্ছ্বাস।  

মা দিবসে ভালবাসা বোধের পুনর্নবীকরণ ঘটে বলেই আমার বিশ্বাস। শত বছর আগে ১৯০৫ সালে যুক্ত্ররাষ্ট্রের এক মা- আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি প্রথম "মাতৃ দিবস হিসেবে পালন করেছিলেন - ভালই লাগে এই দিনটা শুধুই "মম" - আমার মায়ের কথা ভাবতে - যদিও আমাকে পার্থিব জীবনে ছেড়ে চলে যাবার মুহূর্ত থেকেই মা আরও বেশি করে সকল মুহুর্তেই আমার সাথে রয়েছেন। আমার যেন কেন মনে হয় - আমাকে সব সময় দেখবার জন্যেই উনি চলে গিয়েছেন পার্থিব জীবন থেকে - কারণ বেঁচে থাকলে তো অনেক দূরে থাকতে হোতো ওনাকে বাস্তবে। উনি জানতেন ঘরে থাকার ছেলে নয় সিধ - সে ঘুরে বেড়াবে দেশে বিদেশে - ওর সাথে সাথে থাকবো আমি. মম - মা গো তুমি সকল সময়েই রয়েছো আমার প্রাণের গভীরে, অন্তরে।  পৃথিবীর সকল মা আমার ভালবাসার, শ্রদ্ধার আসনে আছেন। সকলকে আমার হৃদয়ের ঐকান্তিক প্রনাম। মা হারানো সকল মানুষ আমার নিজের মানুষ কারণ সহমর্মী হৃদয় খোঁজে আত্মার সান্নিধ্য।

Saturday, May 10, 2014

মৃত্যু তোর হোক্ দূরে নিশীথে নির্জনে: ফারিহার জন্যে শোকগাথা- সুমি খান



জন্ম হয়েছিল তোর সকলের কোলে        আনন্দকল্লোলে।


নীলাকাশ, আলো, ফুল, পাখি,        জননীর আঁখি,শ্রাবণের বৃষ্টিধারা, 

শরতের শিশিরের কণা,  
প্রাণের প্রথম অভ্যর্থনা।  

      জন্ম সেই  এক নিমেষেই 

       অন্তহীন দান,
জন্ম সে যে গৃহমাঝে গৃহীরে আহ্বান।  

  মৃত্যু তোর হোক দূরে নিশীথে নির্জনে,

হোক সেই পথে যেথা সমুদ্রের তরঙ্গগর্জনে           
 গৃহহীন পথিকেরই    নৃত্যছন্দে
 নিত্যকাল বাজিতেছে ভেরী;

অজানা অরণ্যে যেথা উঠিতেছে উদাস মর্মর,   

 বিদেশের বিবাগী নির্ঝরবিদায়-
গানের তালে হাসিয়া বাজায় করতালি; 

 যেথায় অপরিচিত নক্ষত্রের আরতির থালি        চলিয়াছে অনন্তের মন্দির-সন্ধানে,পিছু ফিরে চাহিবার কিছু যেথা নাই কোনোখানে।


দুয়ার রহিবে খোলা; ধরিত্রীর সমুদ্র-পর্বতকেহ ডাকিবে না কাছে, সকলেই দেখাইবে পথ।    


    শিয়রে নিশীথরাত্রি রহিবে নির্বাক, 
            মৃত্যু সে যে পথিকের ডাক।
( 'মৃত্যুর আহ্বান'- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)  



বসন্তের বাতাসটুকুর মতো চঞ্চলা কিশোরী ফারিহা ঢেউয়ের মতোন ভেসে - হাসিটুকু রেখে গেছে!!  শত শত ফুল ফুটিয়ে অনন্তলোকের নক্ষত্র হয়ে গেলো সবার আদরের ফারিহা  ! 


কবিগুরু যতোই বলে যান ,"পিছু ফিরে চাহিবার কিছু যেথা নাই কোনোখানে। " ফারিহার পিছু ফিরে চাহিবার সবকিছু রয়ে গেছে ! মা, বাবা, দাদীমা, আদরের ছোটবোন...খেলার সাথী সবাই তো আছে- শুধু চলে গেলো ফারিহা!সে কোন্ অনন্তের নক্ষত্রলোকে!


"সে চাঁদের চোখে বুলিয়ে গেল ঘুমের ঘোর ,
সে প্রাণের কোথায় দুলিয়ে গেল ফুলের ডোর,কুসুমবনের উপর দিয়ে কী কথা সে বলে গেল...."


আকাশের এক  ধ্রুবতারার নাম ফারিহা জাহান !মাত্র সতেরো বছর বয়সে স্বজন পরিবার বন্ধুদের  শোকের সাগরে ভাসিয়ে আকাশে হারিয়ে গেলো গত ৩ মে, ২০১৪ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়!


কথায় বলে, পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী  বস্তু  'পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ'! বিশ্বকবির চিত্তের জোর ছিল,তাই তাঁর মাতা , স্ত্রী , তিন   সন্তান হারানোর শোক সয়ে ও জ্ঞানের সাধনা করে গেছেন  সেই কৈশোর থেকে একাশি বছর বয়স পর্যন্ত।  সেই  মানসিক জোর আজ  বড়ো প্রয়োজন  সদ্য সন্তানহারা  সৈয়দ আবু শাকের পাপ্পু এবং ফারাহ দিবার।   


  সদ্য প্রয়াত  কিশোরী ফারিহার মা  ফারাহ দিবা একজন ব্যস্ত ব্যাংক কর্মকর্তা! সব ব্যস্ততা আজ থমকে গেছে!


প্রথম  সন্তান- অনেক স্বপ্নের , অনেক আকাঙ্খার ! প্রথম মা হতে গেলে অনেক জটিলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একজন মা'কে। একেবারে  যেন মৃত্যুর দুয়ার পার হয়ে আসা! ফারিহাকে জন্ম দেবার সেই কষ্ট নতুন করে যেন মায়ের বুকে বাজছে আজ!

 ১৭ বছরের প্রাণোচ্ছ্বল কন্যারত্নটি এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে 

গেলে, কী  থাকে আর মায়ের স্বান্তনা?

 ফারিহার 
জন্ম ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর । ১৯৯৭ সালে  চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহী যাবার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দিবার বাবা-মা একসাথে প্রাণ হারান।ফারিহা তখন ৬ মাসের; দিবা তার বাবা-মাকে একসাথে হারালেন। এর কিছুদিন পরই দিবা তার অতি প্রিয় মেজো ভাই কে হারান। প্রিয়জন বিচ্ছেদের ঝড় এসে  আবার লুটে নিলো দিবার প্রাণের চেয়ে প্রিয় বড়ো সন্তান ফারিহা জাহানকে!

ফারিহা যখন কথা বলতে শিখলো, দাদীমার ভাষাই যেন তার ভাষা। দাদীমার ভাই-বোন ভগ্নীপতি , যাদের যে নামে তিনি ডাকতেন, ছোট্ট ফারিহা ও একই সম্বোধন বা নাম ধরে ডাকতো তাদের সবাইকে।  শওকত আরা জাফরের একমাত্র বড়ো বোন রওশন আরা হাসনাত দম্পতি কে 'বড়ো আপা' আর 'দুলাভাই' সম্বোধনেই কথা বলতো ফারিহা।  দাদীমার ভাই দের ডাকতো সাদবাস, খোশবাস! দাদীমার ছোটবোন- ভগ্নিপতি  আল্লাদি- সাইফুদ্দিন ও ফারিহার কাছে 'আল্লাদি-সাইফুদ্দিন' ! তৃতীয় প্রজন্মের কেউ নাম ধরে  ডাকছে-এতে সবাই যেন অন্যরকম ভালোবাসা আর আন্তরিকতার ছোঁয়া পেতেন; একই সাথে  মজাও পেতেন! ফারিহার শেষ নিঃশ্বাসটুকুর সাথে তাকে ঘিরে সকলের সব স্বপ্ন আর ভালোবাসা যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।

৩ মে  ২০১৪,  শনিবার বিকেল ৫ টার দিকে হঠাৎ  আকাশ কাঁপিয়ে ঝড় উঠলো! 
দু'দিন ধরে এজমার টানে কষ্ট পাচ্ছিলো, সেদিন শ্বাসের কষ্টটা একটু কম মনে হওয়াতে ছুটে বেড়াচ্ছিলো কিশোরী মেয়েটা।দুরন্ত কৈশোরের উন্মাদনায় ভুলে যায় নিজের অসুস্থতার কথা! পাশের বাড়ির খেলার সাথীকে নিয়ে ছাদে ছুটে যায় ফারিহা। 

 সেদিন দিবার ব্যাংক বন্ধ।  ছুটির দিনে সন্তানদের সাথেই সময় কাটাতে চায় মা! মায়ের মন যেন 'কু'  ডাকে কোথাও!  দিবা বারণ করলেন কন্যাকে বাইরে যেতে! 


দুরন্ত কৈশোর কী আর মায়ের বারণ মানে!  ফারিহা জবাব দেয়,     " ছাদ থেকে কাপড় নিয়েই চলে আসবো আম্মু, একটু যাই? "      মা'কে দেয়া কথা রেখেছিলৌ ফারিহা । কাপড় তুলতে যেটুকু সময়, ততোটুকুই । বেশিক্ষণ ছাদে থাকে নি; ঘরে ফিরে আসে ফারিহা! 


তবু  আকাশ -বাতাস কাঁপানো সেই  ধুলিঝড়ে  এই পরিবারটির সব সুখের বার্তা যেন উড়িয়ে নিয়ে গেলো !! ফারিহার নির্মল কৈশোরের অনাবিল আনন্দের বানের তোড়ে মৃত্যুবাণ ছিল কি সেই ঝড়? 



এরপর আবার বাড়ীতে ঢুকে কী মনে করে ময়দা দিয়ে ঝাল পিঠা

 বানিয়ে বাবা- মা,দাদী, ছোট বোন ফাইরুজ - সবাইকে খাওয়ালো।

কেউ বুঝতে পারলো না দ্বিতীয় বারের মতো ডাষ্ট ইনহেইল করে

 সর্বনাশ ডেকে আনলো মেয়েটা! প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ছটফট করলো -  ইনহেলার, নেবুলাইজার- কোনটাই  কোন কাজই করলো না, শ্বাসনালীতে পানি জমে গেছে ইতিমধ্যে।


  নিঃশ্বাসের প্রবল কষ্ট থেকে একটু বাঁচার আকুতিতে অসহায় ফারিহা চিৎকার করে বাড়ির এই 
কামরা থেকে ঐ কামরা... ..ডাইনিং থেকে ড্রইং রুমের এপ্রান্ত -ওপ্রান্ত আছড়ে পড়লো,"আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না,  আমি কি বাঁচবো না? আমি বাঁচতে চাই..."!



খবর পেয়ে গলির মুখ থেকে ছুটে ঘরে ফিরে এলো অসহায় পিতা!


  পিতা মাতা , আদরের ছোটবোন, দাদীমা, খেলার সাথী-  সবার সামনেই  মৃত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে ঘরের দরজায় পড়ে গেলো ফারিহা।


আবার উঠে প্রিয়তম বাবার বুকে ঝঁপিয়ে পড়ে বললো, "আব্বু আমাকে বাঁচাও, আব্বু আমি বাঁচতে চাই, আব্বু, আমি বাঁচতে চাই!!" ফারিহার হাত ধরে তার পাশেই
 ছিল তাদের চার দশকের প্রতিবেশী শাহীন, তার ভাই হাসনাতসহ তাদের পরিবারের সবাই- যারা এই পরিবারের  রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের চেয়েও অনেক বেশি আপন, অনেক নিকটজন।  নেবুলাইজার ইনহেলার কাজ করছে না, হাসনাত স্যান্ডেল ছাড়াই ছুটে যায় নতুন ইনহেলার আনতে । রুদ্ধশ্বাসে ইনহেলার নিয়ে ফিরেও আসে হাসনাত। না , কিছুতেই কিছু কাজ করলো না শেষ মুহুর্তে!

অসহায় পিতা সৈয়দ আবু শাকের পাপ্পুর ডাকে নিমেষে ছুটে এলো বন্ধু ডাক্তার মঈনুদ্দীন। চিকিৎসক হয়েও অসহায় ভাবে কন্যাসমা ফারিহার মৃত্যু মেনে নিতে হলো তাকে।আপ্রাণ চেষ্টা করেও প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসা দেবার জন্যে কিছুই পাওয়া যায়নি সেদিন। গলি পেরুতেই সদরঘাট পোষ্ট অফিস। গাড়ি স্টার্ট দিতেই বড়ো একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো প্রাণোচ্ছল কিশোরী মেয়েটি। 

চট্টগ্রামের সদরঘাট কালিবাড়ি মোড়ে জনসাধারণের চিকিৎসার জন্যে সম্প্রতি মেমন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ! কোন স্বাস্থ্যসেবাই নেই এখানে। সবই মিথ্যা ! ফারিহা কে কোলে নিয়ে অক্সিজেনের জন্যে এই হাসপাতালের তিনতলা পর্যন্ত ছুটে যেতে হয়েছে  পাপ্পু এবং অন্যদের ।  সেদিন পাওয়া যায়নি অক্সিজেন। এর পর গোলপাহাড়ের মোড়ে রয়েল হাসপাতালে চুটে গেলো তারা। ফারিহার খালু  ডা. লিয়াকত এই হাসপাতালের পরিচালক । পাপ্পু এই হাসপাতালেই দুইটি দোকান পরিচালনা করেন। কিন্তু না, এখানেও  ফারিহা কে  জরুরী চিকিৎসা দেয়া গেলো না। ডাক্তার মঈনুদ্দিনের মনে হলো,সামান্য জরুরী চিকিৎসা দেবার মতো কোন হাসপাতাল ও যেন চট্টগ্রামে নেই!

 ফারিহার দাদীমা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা  শওকত আরা জাফরের চোখের দৃষ্টিই ছিল পৌত্রী  ফারিহা। ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তিনি । রাতে  দাদিমার গায়ে কাঁথা তুলে দেয়া , সকালে তাকে  পত্রিকা পড়ে শোনানো,খাওয়ার সময় বা কোথাও বেড়াতে গেলে  নজরদারী করা -সবকিছু ফারিহা আগ বাড়িয়েই করতো। আজ এ শূন্যতা বড়ো কঠিন হয়ে বাজে শওকত আরা জাফরের  বুকে! চোখের জলে লাগলো জোয়ার, দুখের পারাবারে , ও চাঁদ!!





ফাইরুজের  নিদ্রাহারা রাতের প্রহর কাটে না !! ফারিহার আদরের ছোট বোন  ফাইরুজ ষষ্ঠ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। পড়ালেখা ছাড়া বাইরের জগত তার খুব চেনা নেই ! সারা দিন খুনসুটি করা একমাত্র বোনের আকস্মিক প্রয়াণে নির্বাক নিস্তব্ধ ফাইরুজ!  ৩ মে দুপুরে ও একই রকমের টপ্স পরে ছবি তুলেছে ফারিহা। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সব শূন্য করে চলে গেলো বোন টি!!  খেতে বসলে মুরগীর মাংস দেখলেই বুকে মোচড় দেয়, আদরের বোনটি মুরগীর মাংস ছাড়া খেতেই চাইতো না। ফারিহার স্মৃতিতাড়িত ফাইরুজ আর খেতে পারে না! কী করে চলে গেলো আদরের বোন টি!! কী করে খাবো আমি!


 অবিরল অশ্রুধারায়  ভেসে মায়ের মনে পড়ে  আদরের কন্যাটি দু'দিন আগে ৩০এপ্রিল মায়ের জন্মদিন পালন করেছে ! রাত প্রথম প্রহর -১২ টা ১ মিনিটে ফারিহা 'হ্যাপী বার্থডে টু ইউ' গানটা ছেড়ে মাকে জন্মদিনের শুভকামনা জানালো। দুপুরে   শওকত আরা জাফর অনেক কিছু রান্না করলেন একমাত্র পুত্রবধুর জন্মদিন উপলক্ষে । ।ফারিহা বললো, " দাদী, আজকে তোমার রান্না অনেক মজা হয়েছে! আম্মু,  দ্যাখো, দাদি তোমার জন্মদিনে কী মজা করে রান্না করেছে!" এসব বলে অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে সন্তান হারা মা দিবা! ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার শুরুতেই  ফারিহার নামে একটা ডিপিএস করেছিলো দিবা। সেটা ম্যাচিউরড হয়েছে ১২ বছরে। দিবার স্বপ্ন ছিল, ফারিহার  একদিন বিয়ে হবে, সেই সময়ে তার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এই টাকায় করবে!!দিবা তার  সেভিংসের ও  নমিনি করেছিলো ফারিহাকে; প্রথম সন্তান, সবাইকে দেখে শুনে রাখবে-এমন স্বপ্নে !


 সব  যেন আজ ধুলায় হয়েছে ধুলি!! 

কী স্বান্তনা আছে সন্তানহারা এই মায়ের??


 দাদীমার শখ , তাই বড়োফুপুর মতো বাড়িতে বসেই গান শিখতো

  ফারিহা। রবীন্দ্রসঙ্গীতে হাতে খড়ি হয় দাদীমার ইচ্ছেতেই।  দাদী 
বললেই হারমোনিয়াম নিয়ে বসে যেতো গাইতে!

রবীন্দ্রনাথের ভাষায় , যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে মুক্ত করো হে

 বন্ধ- এই বানী চিরন্তন হয়ে গেঁথে ছিলো ফারিহার মনে। আর তাই এইটুকু বয়সেই সবার একজন করে ফারিহা  গড়ে 
তুলেছিলো নিজেকে!


 শুধু কি পরিবারে? প্রতিবেশী , শিক্ষক সবার কাছেই ফারিহা ছিল একান্ত স্বজন! 


ফ্ল্যাট সংস্কৃতির এই বন্ধ্যা সময়ে  ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিবেশীদের

 অন্তর দিয়ে র্হাদিক বন্ধনে আত্মার আত্মীয় করে নেবার অসাধারণ

বিশালত্ব ছিল ' ফারিহা' নামের ক্ষণজন্মা কিশোরীটির অন্তরে!!যা   আত্মকেন্দ্রীকতার এই নষ্ট সময়ে সত্যিই বিরল! 

চট্টগ্রামের সদরঘাট পোষ্ট অফিস গলি সনাতন ধর্মবলম্বীদের আদি এলাকা। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়েও এই পাড়ার মানুষগুলো ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলো। সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মাঝে এই এলাকায় অসাম্প্রদায়িক বন্ধন ধরে রেখেছিলো যারা ,তাদের মধ্যে ফারিহা ছিল সবার আগে। 


প্রতিটা পূজা পার্বনে ফারিহার সরব উপস্থিতি মাতিয়ে রাখতো প্রতিবেশীদের!! তাদের আত্মার আত্মীয় ছিল যেন  চঞ্চলা হরিনী এই কিশোরী।কলা পাতায় রাখা পূজার প্রসাদ তার ভীষণ প্রিয় ছিল।

 রক্ষণশীল মা দিবার সংস্কারমনস্ক মন কোনভাবেই মেনে নিতে পারতো না  জনারন্যে ফারিহার এমন সহজ মিশে যাওয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে মায়ের বারণ বদলাতে পারেনি ফারিহার মুক্ত অসাম্প্রদায়িক  মানবিক জীবনাচার!! 

 ফারিহার এ মানবিক আচরণ সকলের অন্তরের একজন করে তুলেছিলো ফারিহাকে। যে কারণে ফারিহার আকস্মিক প্রয়াণ প্রতিবেশীদের মধ্যে বিশাল এক শূন্যতার সৃষ্টি করেছে! 

প্রতিবেশীদের আকুল কান্নার জল  অতলে ভাসিয়ে দেয় ফারিহার বাবা-মায়ের বেদনার্ত হৃদয়! তাদের অন্তরের শূণ্যতাকে যেন আরো শূন্য করে দেয়! 


পাঁচিলের ওপারে সঙ্গীতা বিশ্বাস পলিরা সপরিবারে থাকে। এই

 দুই পরিবার গত চার দশকের ও বেশি একসাথে আছেন। হিন্দু-মুসলিম অকৃত্রিম অসাম্প্রদায়িক বন্ধনের চার দশকে এসেও অটুট

 থাকার প্রধান সূত্র ছিল ফারিহা। 

ফারিহা তার বাবার সহপাঠী পলিকে  পাঁচিলের এপার থেকে চিৎকার করে  ডেকে বলতো, "পলি ফুপু, নিরামিষ রেঁধেছো? আমাকে দিও কিন্তু!" 

পলি কয়েকদিন আগে এ্র্যাক্সিডেন্ট করে বেশ ব্যথা পায়। চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপী নিতে হয়। আর পলির   ফিজিওথেরাপিষ্ট ছিল ফারিহা। পলিকে প্রতিদিন ফারিহার কাছে চলে আসতে হতো। ফারিহার টেবিলে বসে ফারিহার হাতে ফিজিওথেরাপী নিতে হতো পলিকে । 

একদিন ফারিহার মা দিবা বললো, আজকে আমি পলিকে থেরাপী দিই, ফারিহা?" সেদিন  পলিকে থেরাপী দেবার পর দিবার অনভ্যস্ত হাতে প্রচন্ড ব্যথা হয় । মায়ের মন,!! ফারিহা কে  দিবা বলে, "একদিন থেরাপী দিয়েই আমার হাতে কী প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, ফারিহা,, তুমি প্রতিদিন এভাবে পলিকে  থেরাপি দিওনা।, তোমার অনেক কষ্ট হয়, ব্যথা বেড়ে যাবে !"  

ফারিহা হেসে জবাব দেয়, " না, আম্মু, পলি ফুপুর হাতে অনেক ব্যথা। আমি থেরাপি দিলে ব্যথাটা ভালো হয়ে যাবে! " এমনই মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন চপলা কিশোরী ফারিহার মৃত্যু কী  করে  মেনে নেবে তার পলি ফুপু?!

এলাকার আরেক আদি বাসিন্দা 'হাজী সাহেব' এবং তার পরিবার।

 তাদের বড়ো বউ ফারিহার প্রিয় মিলি আন্টি। শেষ দিন টিতেই 
তার কাছে চুটে গিয়ে ফারিহা বলেছিলো, " মিলি আন্টি, তুমি কবে
 আমাকে চিকের বিরিয়ানী খাওয়াবা?"  জবাবে ফারিহার মিলি 
আন্টি দুষ্টুমি করে  বলেছিলেন," তুই আগে আমাকে পিৎজা 
খাওয়াবি কবে? তারপর তোকে বিরিয়ানী খাওয়াবো।" না, আর 
কখনো চিকেন বিরিয়ানী খেতে আসবে না ফারিহা! ফারিহার 
আকস্মিক প্রয়াণে শোক বিহ্বল  হলেও ,মিলি আন্টি  চিকেন 
বিরিয়ানি রান্না করে পাঠালেন। ফারিহার ছোট ফুপু ইসরাত
 জাহান কণা  তাৎক্ষণিকভাবে সেই চিকেন বিরিয়ানি ডেকচি সহ
 এতিম খানায় পাঠিয়ে দিলেন। অনাথ শিশুরা যদি খেয়ে খুশি হয়,
 নিশ্চয়ই ফারিহার আত্মা শান্তি পাবে!

এভাবেই আত্মার আত্মীয় হয়ে প্রতিবেশীদের সাথে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানো চঞ্চলা- চপলা  কিশোরী ফারিহা চোখের পলকে প্রাণহীন নীরব শবদেহে পরিণত হলো! 


রূঢ় এ  বাস্তবতা  এলাকার  আত্মার আত্মীয় - শিশু থেকে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ কেউ  মেনে নিতে পারছেন না!! ফারিহা আর কখনো খেলতে আসবে না, পূজা দেখতে আসবে না!  প্রতিবেশীদের কাছে পূজার প্রসাদ বা তার প্রিয় নিরামিষ খাবার খেতে আসবে না!!

 সদরঘাট পোষ্ট অফিসের সামনে গলির ভেতরে বাইরে  কালো ব্যানার আর  ফারিহার জন্যে শোকের বাণীতে ছেয়ে গেছে।  যে কারো  চোখ জলে ভিজে যায়!


  মনে করিয়ে দেয়,  প্রাণের পরে চলে গেলো ,বসন্তের বাতাস টুকুর মতো ...সে যে চঞ্চলা কিশোরী ফারিহা!   

 ২৮ এপ্রিল ২০১৪ তার জীবনের শেষবারের মতো একাদশ শ্রেনীর ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেয় ফারিহা। এর পরের পরীক্ষার দিনগুলোতে তার নামের পাশে 'অনুপস্থিত' লেখা হলো, যা চিরস্থায়ী হয়ে গেলো। আর কোনদিন ফারিহা পরীক্ষার কেন্দ্রে বসে পরীক্ষা দেবে না!  ৫ মে তার একাদশ শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলো। কথা ছিলো  পরীক্ষা শেষ করে ফারিহা চিরাচরিত নিয়মে আনন্দে মেতে উঠবে, আর  ২য় বর্ষে ক্লাস শুরু করার মানসিক প্রস্ততি নেবে।

এসবের কিছুই হলো না।পরীক্ষার কক্ষে তার আসনটি শূণ্যই পড়ে রইলো।ফারিহার সহপাঠীরা  কলেজ ক্যাম্পাসে ঝুলালো কালো ব্যানার। 


মৃত্যু অমোঘ! তার কাছে সত্যিই  মানুষ বড়ো অসহায়!!


 অমরত্বের প্রত্যাশা কারো নেই । তবু এমন অকাল আর এমন আকস্মিক মৃত্যু কাঙ্খিত নয় কারো! প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে সময়মতো জরুরী চিকিৎসার অভাবে অকালে প্রাণ হারাতে হলো এই কিশোরীকে। যা মেনে নেয়া অসম্ভব ! 


  ফারিহার মা দিবা এবং বাবা সৈয়দ আবু শাকের পাপ্পুর বুকে পাথর সমান এ ভার বয়ে বেড়াতে হবে আমৃত্যু । ফারিহার প্রাণ ছিল তার দাদীমা শওকত আরা জাফর । অবসরপ্রাপ্ত এ  ব্যাংক কর্মকর্তা  কোন ভাবেই ভুলতে পারেন না প্রিয়তম নাতনীর বাঁচবার আকুল মিনতি !, নুসরাত জাহান রুমা এবং ইসরাত জাহান কণাও প্রাণপ্রিয়  ভ্রাতুষ্পুত্রীর আকস্মিক প্রয়াণে মানসিক ভাবে  ভীষণ বিপর্যস্ত! 

ফারিহার বালিশ, জামা কাপড় নিয়ে  অবিরল অশ্রুধারায় নির্ঘুম প্রহর কাটছে তার মা  দিবার। কী স্বান্তনা আছে , যা দিয়ে মায়ের শূন্য বুকে ফিরিয়ে আনা যায়, এমন প্রানবন্ত সন্তানকে?

  ফারিহার ছোট ফুপা কাজী আদনান শিশুদের সাথে মিশে যান শিশুদের মতো হয়ে। ফারিহা- ফাইরুজ শৈশব থেকেই ফুপার কোলে পিঠে বড়ো হয়েছে পুপাতো বোন আইমান আতুশার সাথে সাথে। আরো ছিলো আইমান আতুশার ফুপাতো বোন শামা-ইয়ানা এবং সমবয়সী অন্যান্যরা। নিজের কন্যা না হয়েও কন্যা সমতুল্য ফারিহার এমন আকস্মিক মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কাজী আদনান। 


আর প্রিয়তম পিতা -যাকে চোখে হারাতো ফারিহা? সেই পিতার বুকেই বারবার আছড়ে পড়েছে বাঁচবার আকুতি তে। সবার সাথে খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে সদ্য সন্তান হারা পিতা সৈয়দ আবু শাকের পাপ্পু । শূন্যতার  জগদ্দল পাথর বুকে নিয়েও  
সবসময়ের মতোহাল্কা রসিকতা - তার বুকের ভেতরের ফাঁকা জায়গাটা কখনোই পূরণ হবার নয়! তবু জীবন বয়ে যায় নিত্য, অনন্ত ধারায়!!

রবীন্দ্রনাথ  অমৃতের সন্তান ছিলেন- মৃত্যুশোককে  সহজে মেনে নেবার অসীম ক্ষমতা ছিল তার!  কৈশোর থেকে মাতৃমৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়  কবিগুরুর মৃত্যুশোক!  

ফারিহার  স্বজন- প্রিয়জনদের বেদনার ঝড় কাটাতে শরণাপন্ন হলাম রবীন্দ্রনাথের। 

রবীন্দ্রনাথের বয়স যখন তেরো বছর দশ মাস, তখন তিনি  তাঁর মা'কে হারান।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করার চার মাস পর ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন  জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী কাদম্বরী দেবী ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আট বছর বয়স থেকে যিনি তাঁর খেলার সাথী ছিলেন।

 মৃত্যুশোকের  এই ধারাবাহিকতায়  রবীন্দ্রনাথের বিচ্ছেদশোকের অশ্রুমালায়  যুক্ত হলেন কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী৷   প্রথম সন্তান প্রসবের সময় মৃনালিনীর বয়স কম ছিল বলে কবি যেন ভরসা পেতেন না ।তাই সন্তানের দেখা শোনা অনেকাংশেই রবীন্দ্রনাথ করতেন। তিনি পিতা হয়েও কন্যাকে লালন পালন করতেন মাতৃরূপে। শিশুকে খাওয়ানো, কাপড় পড়ানো, বিছানা বদলানো এসবই তিনি করতেন নিজ হাতে।

১৩০৯ সালে ৭ই অগ্রহায়ণ, ইংরেজী ১৯০২ সালের ২৩শে নভেম্বর, রবিবার  কবিপত্মী মৃনালিনী দেবী  মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর  মৃত্যু শয্যায় নিজ হাতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সেবা-যত্ন করতেন। প্রায় দু'মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন, ভাড়া করা নার্সদের হাতে পত্মীর সুস্থ্তার ভার তিনি একদিনের জন্যও দেননি।  সেই সময়ে প্রচলিত অর্থে স্বামীর সেবা পাওয়া সৌভাগ্যের বিষয়! মৃনালিনী দেবী সেটা পেয়েছিলেন ভাগ্যগুনে। তখনকার দিনে ইলেকট্রিক ফ্যান আসেনি । হাত পাখা দিয়ে দিনের পর দিন তিনি বাতাস করেছেন স্ত্রীকে। এক মুহুর্তের জন্যেও হাতের পাখা ফেলেননি।অকালে চলে গেলেন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ঊনত্রিশ৷ 

 এভাবে রবীন্দ্রনাথের জীবনে পরপর  তিন সন্তান সহ ১৩ প্রিয়জন কে হারাতে হয় !  কবিগুরুর জীবনের সবচেয়ে বড়ো অধ্যায়, শোকবিধুর সেই অধ্যায় স্মরণ করছি আজ ।যাঁকে প্রিয়জন হারানোর শোকে আক্রান্ত হতে হয়েছে বারবার। 

 দেড়শ' বছরের ও বেশি সময় পর আজকের দিনেও সদ্য সন্তানহারা শোক বিধ্বস্ত  মা ফারাহ দিবা এবং  সৈয়দ আবু শাকের পাপ্পুসহ ফারিহার স্বজনদের মানসিক শক্তি ধরে রাখার প্রেরণা দেবে রবীন্দ্রনাথ!   

 সব শেষে রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি। তাতে কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘‘সাহস যেন থাকে, অবসাদ যেন না আসে, কোন খানে কোন সূত্র যেন ছিন্ন হয়ে না যায়৷ যা ঘটে তাকে যেন সহজে স্বীকার করি৷'' রবীন্দ্রনাথ সকল মৃত্যুশোককে এভাবেই সহজ করে বরণ করে নিয়েছিলেন৷ অনায়াসে তাই বলতে পেরেছিলেন, ‘‘ঈশ্বর যাহা দিয়াছেন তা গ্রহণ করিয়াছি৷ আরো দুঃখ যদি দেন তো তাহাও শিরোধার্য করিয়া লইব৷ আমি পরাভূত হইব না!"
এভাবেই ফারিহার পরিবার এবং বান্ধবদের শক্তি দিক্ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
১০ মে ২০১৪, শনিবার, রাত প্রথম প্রহর,  চট্টগ্রাম
রাত ২টা ৩৮ মি.