Thursday, May 15, 2014

অভিমত ॥ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের একি কাণ্ড! মোঃ সায়েম আহ্মেদ


মাদারীপুর জেলার মুকসুদপুর উপজেলার এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। পেশায় শিক্ষক হলেও প্রভাবশালীদের ছায়ায় থেকে এলাকার বহু অপকর্মের নায়ক। ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সক্রিয় নেতা ছিল। বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার বিরুদ্ধে খুন থেকে শুরু করে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকা-, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ লুট, অসভ্যতাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 

যার বদৌলতে তিনি সামান্য অধ্যক্ষ থেকে ৪তলা বাড়ির মালিক। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। আর এই অর্থের উৎস নাকি মাদ্রাসার পাসকৃত দাখিল পরীক্ষার্থীদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট আটকিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়। এমনকি পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামেও অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা রয়েছে তার। এমন কথাও শোনা যায়, মাদ্রাসার কোন কোন শিক্ষকের কাছ থেকে বেতনের অংশের ভাগ কেটে নেন। শিক্ষকরা চাকরি হারাবার ভয়ে মুখ খোলেন না। এমনকি সরকারের দেওয়া কম্পিউটার নিজের বাসায় ব্যবহার করা, সরকারী বরাদ্দের টাকা কাজ না করে আত্মসাত-এভাবেই চলতে থাকে তার সীমাহীন দুর্নীতি। 

মাদ্রাসার জনৈক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ট্যাম্পে জাল সই দিয়ে বিল বন্ধের আবেদন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। স্ট্যাম্পে জাল সই করিয়ে জমি ক্রয় করেন এবং এই জমি প্রতারণা মামলায় এই অধ্যক্ষ কিছুদিন জেল হাজতেও ছিল। এভাবে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে সে ধোঁকাবাজি-শঠতা-হটকারিতা করেছে। শুধু তাই নয়, রয়েছে নারী ভোগের আকাক্সক্ষাও। একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও তার এহেন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষ লজ্জিত, ক্ষুব্ধ। পরে সহকারী শিক্ষক এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩-এর ৫/৮ ও ৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

গত বছর কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সে মাদ্রাসার ১টি মেহগনি, ২টি শিশু ও ৩টি চাম্বলসহ মোট ৫টি গাছ কেটে বিক্রি করে। যার মূল্য-১,৬০,০০০/- টাকা। এ অর্থ অধ্যক্ষ আত্মসাত করে। দায়িত্ববান মানুষ হয়ে গাছ কাটার মতো গর্হিত অপরাধ সহ্য করতে না পেরে উক্ত মাদ্রাসার গবর্নিং বডির সদস্য এক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবাদ করেন। বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত মামলা হলেও আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে আগাম জামিন করিয়ে নেয় এই অধ্যক্ষ। এখানেই থেমে নেই, প্রতিশোধে মরিয়া অধ্যক্ষ পরে ওই মুক্তিযোদ্ধা ও তার এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলা দায়ের করে এবং এই স্বাধীনতা দিবসের দিন সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করায়। দুঃখ এখানে যারা এই দেশের স্বাধীনতা আনল আজ এই স্বাধীনতা দিবসে এমন একজন মুক্তিযোদ্ধাকেই গ্রেফতার করা হলো, যিনি সারাদিন লাখোকণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতসহ স্বাধীনতা দিবসের নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার পর বিষয়টি গোপালগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারকে জানালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সহায়তায় সেদিন তিনি ছাড়া পান। 

ভাবি, এটা কি দেশপ্রেমের প্রতিদান? বৃদ্ধ বয়সে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলায় মুক্তিযোদ্ধাকে জেলে যেতে হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও এখন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কোথাও কোন সহযোগিতা বা সহানুভূতি পাচ্ছে না। যেখানে যায় সেখানেই শুধু টাকার খেলা, টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। ওদের প্রচুর টাকা, ওরা টাকা দিয়ে সব করতে পারে। ওদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কেন, দেশ, দেশের মানুষ এমনকি প্রশাসনও জিম্মি। সারা দেশে যখন স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনগণের সুদৃঢ় অবস্থান সেই মুহূর্তে মুকসুদপুরে স্বাধীনতা বিরোধী উত্তরসূরিদের এই আস্ফালন সত্যিই আমাদের অবাক করে।


এতক্ষণ যে মুক্তিযোদ্ধার করুণ অবস্থার কথা বললাম তিনি আমার বাবা। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি। তার কাছে করুণ আর্তি, ওই জামায়াতী মাওলানার হাত থেকে একটি মাদ্রাসা, মাদ্রাসার শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ এলাকার সাধারণ জনগণকে রক্ষা করুন। আমাদের বিশ্বাস তিনি আমাদের এই দুর্দশার কথা বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং ষড়যন্ত্রকারী অধ্যক্ষের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করবেন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

No comments:

Post a Comment