Saturday, March 8, 2014

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক- সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর

Robi

8 March 2014 18:30:00 PM Saturday BdST
0
 

নারী দিবসে দিই নারী-পুরুষের সমতার ডাক

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফন্টের আকারDecrease fontEnlarge font
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। 'ইনস্পায়ারিং চেঞ্জ' বা 'পরিবর্তনকে উত্সাহিত করো’ -এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হবে দিবসটি। বাংলাদেশ সরকার দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে 'অগ্রযাত্রার মূল কথা নারী-পুরুষের সমতা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে 'রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, নারীর সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করি' প্রতিপাদ্য করে দিবসটি পালন করছে। সমাজকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনীতি এবং ধর্মকে আলাদা করতেই হবে।সমাজপ্রগতির সংগ্রামে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এর সফলতা সম্ভব নয়। 
আন্তর্জাতিক নারী দিবস (আদি নাম আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস) প্রতি বছর মার্চের ৮ তারিখে পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী নারীরা সমাজ প্রগতির ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এবং  প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন।এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াকু এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। সমাজপ্রগতির এই ইতিহাস অনেকের জানা। তবু এ সমাজের নীতিনির্ধারক এবং মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বশীলেরা অনেকে এ বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই যেন ভুলে থাকেন। তাই মগজে শান দিয়ে  মরচে সরানো এবং চিরপ্রণম্য ক্লারা জেটকিন ও তার সতীর্থ সহযোদ্ধাদের প্রতি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর  মানসে ইতিহাসের দ্বারস্থ হলাম।

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের নারী সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের  পক্ষে আয়োজিত নারী সমাবেশে  জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির  অন্যতম স্থপতি সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ক্লারা  জেটকিন নারীর শ্রমঅধিকারের আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চকে মানবসমাজের বিজয়ের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্যে প্রতি বছর ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।  সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমানাধিকার দিবস হিসেবে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগলো। বাংলাদেশেও  স্বাধীনতার লাভের আগেই  ১৯৭১  সাল থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। 
আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান,বেলারুশ,বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,  ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান,  লাওস, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া,মন্টিনেগ্রো, রাশিয়া,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,  উগান্ডা, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান,  ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়াতে। এছাড়া, চীন,মেসিদোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরা সরকারী ছুটির দিন ভোগ করেন। 

দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে আট ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে  ১৮৫৭ সালে  নিউইয়র্কে কতো নারী আটক হন, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে কারাগারে ও নির্যাতিত হন অনেক নারী শ্রমিক। তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় 'নারী শ্রমিক ইউনিয়ন'। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় হলো দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার অধিকার। সারাবিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। 

এরও বহু আগে ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করলে ৬০ বছর আগের পটভূমির বিজয় অর্জিত হয়। তবে যে দাবিতে এই আন্দোলন সমতাভিত্তিক  এবং বৈষম্যহীন কাজের পরিবেশ এখনো আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। তাই সেই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এখনো।

 সমাজ প্রগতির সংগ্রামে  ৮ মার্চ রক্তাক্ত ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল দিন। এমন দিনে মুক্তির মন্দির সোপানতলে যারা প্রাণ দিয়েছে, তাদের স্মরণ করা আমাদের প্রতিটি নারী-পুরুষের ই দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। 

যারা ৮ মার্চ কে  নারীকে ‘সুবিধা দেয়ার জন্যে’  বা ‘নারীকে করুণা’ করে ‘বিশেষ কোন দিবস'’ পালন করা হচ্ছে মনে করেন- এখনই তাদের ভুল ভাঙ্গা প্রয়োজন। সে নারী বা পুরুষ যেই হোন-তাদের বিনীত অনুরোধ করি, নারীদিবসের ইতিহাস পড়ুন। অনুধাবন করুন বাস্তব ইতিহাস। যে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারী দিবস প্রবর্তন, তার প্রতি  অশ্রদ্ধা পুষে রেখে নারীর প্রতি কোনো বিরূপ চিন্তা সমাজের জন্যে ক্ষতিকর। 

এ কথা গুলোর অবতারণা করছি যৌক্তিক কারণে। নারী  দিবস নিয়ে  সাক্ষাৎকার এবং আলোচনায়  অনেকেই এই দিবস পালনের চরম বিরোধিতা করেন বিভিন্ন সময়ে। এমন কি দেশের সাংবাদিকতায় সুপ্রতিষ্ঠিত অনেক নারীও বলেন, নারীদের জন্যে তারা আলাদা কোন দিবস চান না। এই নারীদের প্রতি বলতে হয় প্রথমতঃ অনেক নারীর  প্রতি নিপীড়ন , রক্তপাত,  তাদের ক্লান্তিহীন  শ্রম,মেধা আর রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনের ফসল  সফল নারীদের আজকের এই রমরমা অবস্থা!

‘শুধু নারীর জন্য কোনো একটি দিন’ (?) পালন করে পুরুষের অধিকার খর্ব  (?) করা হচ্ছে মনে করলে ইতিহাস বিকৃতি হবে। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের জাতিসংঘের স্বীকৃতি পর্যন্ত যাদের আত্মদানের ফসল এই মহান নারী দিবস- এই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের প্রতি বিন্দুমাত্র অশ্রদ্ধা বা অজ্ঞতা প্রায় দু’শো বছর আগের এই দিনে  অধিকার আদায়ের সংগ্রামে রাজপথে প্রাণ দিতে প্রস্তুত  অকুতোভয় বীর নারী এবং যোদ্ধাদের মহান আত্মদানের প্রতি চরম অবমাননা করা হবে !! 

সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে এই দিনে  চেনা অচেনা প্রতিটি নারীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুরুষেরা।  নারীরা সরকারী ছুটি উপভোগ করে প্রিয়জন এবং সন্তানদের সময় দেন। বিজয়ের আনন্দে নারী –পুরুষ একসাথে উদ্ভাসিত হন। আমাদের সমাজে তার কোনো ছায়া নেই। বর্তমান বাম নেতা-কর্মীদেরও সেই চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হতে দেখি না। এ-এক ক্রান্তিকাল যাচ্ছে আমাদের। ইতিহাসের দিকে পিঠ ফিরে থাকা প্রজন্ম যেন কোনো এক কালো দিনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে; দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আলোর নিশানা।

সবচেয়ে কষ্ট হয় যখন দেখি  কোনো দল বা মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে ফেসবুকে চরম অশ্লীলভাবে আক্রমণ করা হয় নারীদের। মতের বিরোধিতা থাকতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে , তাই বলে কোনো নারীর প্রতি অশালীন বা বিরূপ মন্তব্য করা যে কারোর চরম মানসিক বিকারের পরিচয়-- এই সাধারণ সত্যটা এ সমাজে প্রতিষ্ঠা হতে আর কতো সময় লাগবে?

বর্তমান সরকার নারীর জাগরণে এবং উন্নয়নে অনেক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  তবে অনেক পিছিয়ে থাকা মানসিকতা থেকে নিজেদের বের করে আনতে গোড়া থেকে  কাজ করতে হবে। 

 নারীর বিজয় মানবতার বিজয়। এই ইতিহাসের সঠিক প্রচার এবং প্রকাশ  নারীর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রতিষ্ঠায় জরুরি। রাজধানী  থেকে প্রত্যন্ত জনপদ পর্যন্ত  পথে প্রান্তরে   নারী জাগরণের এবং সমাজ প্রগতির প্রতিটি ইতিহাস পর্যালোচনা এবং প্রচার একটু একটু করে বদলে দেবে নারীর প্রতি সমাজের রক্ষণশীলতাকে।

 পরিশেষে উদাত্ত আহ্বান জানাই , নারী দিবস নিয়ে যারা এখনো ভুল ধারণা পোষণ করে আছেন –তারা অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করুন শ্রমজীবী নারীদের আত্মদানের এই দিনটিকে। আপনার পাশের নারীটি আপনার বন্ধু , সহযোদ্ধা । আপনার সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং সম্মান  তার প্রাপ্য; করুণা বা অশ্রদ্ধা নয়।  তবেই নারী তার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অনুপ্রেরণা নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবে।তেমনি নারীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, প্রেরণা আর শক্তিতে পুরুষ এগিয়ে নেবে সমাজকে। আলোকের ঝর্নাধারায় ধুয়ে যাক্ যতো কলুষ, যতো ফাঁকি, যতো  গ্লানি !

 নারী-পুরুষ একসাথে  অনন্ত গৌরবে এগিয়ে যাক্ সমাজপ্রগতির পথে!  নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক্!!  Sumikhan29bdj@gmail.com
৮ মার্চ ২০১৪

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F/273184-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95.html#sthash.uHN8XJGd.dpuf

Friday, March 7, 2014

মোস্টওয়ান্টেড টপটেরর জাওয়াহিরির হুমকি এবং এদেশের গণমাধ্যম

20 February 2014 20:50:00 PM Thursday BdST

সম্প্রতি আফগানিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আলকায়েদা প্রধান বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড টপটেরর জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানো হয়। 

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের নামে তাণ্ডবের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির পতনের স্বপ্ন দেখেছিলো যুদ্ধাপরাধী শক্তি। তাতে ব্যর্থ হয়ে ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার গল্পকথা ফেঁদে বিশ্বজুড়ে জঙ্গি জনগোষ্ঠীকে একাট্টা করতে মাঠে সোচ্চার অন্ধকারের শক্তি আলকায়েদা-জামায়াত। 

জাওয়াহিরির এই বার্তায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ আনা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশ সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার হিসাবে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছেন জাওয়াহিরি। মিশরীয় এই জঙ্গি সংগঠক তার অনুসারী জামায়াত-হেফাজতিদের বিপন্নতা সইবে কী করে! যারা গত কয়েক দশক থেকে তাদের অর্থ এবং মানুষ যোগান দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক লবিস্ট টোবি ক্যাডম্যান ও আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে বর্তমান সরকারকে হুমকি দেবার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সন্ত্রাসীদের আওয়ামী লীগকে ভয় করা উচিত। 

গত রোববার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আয়মান আল-জাওয়াহিরি আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন তার সন্ত্রাসী ভাইদের দমন করায়, যাদের ক্যাডম্যান রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। 
গত রোববার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জয় লিখেছেন, বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আয়মান আল-জাওয়াহিরি আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছেন তার সন্ত্রাসী ভাইদের দমন করায়, যাদের ক্যাডম্যান রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। 

আমার কাছে বিষয়টা খুব মজার মনে হয়েছে, টোবি ক্যাডম্যান এবং আল-কায়েদা উভয়ই জামায়াতের পক্ষ থেকে আমাদের সরকারকে হুমকি দিচ্ছে।

আমরা একজন ভাড়াটে আইনজীবী ও দালাল পেয়েছি, যিনি  তাদের পক্ষে, যারা পথচারীদের ওপর নির্বিচারে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। সেই বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। 

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্যাডম্যানের অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদা প্রধানের জিহাদের ডাক বাংলাদেশ সরকারের জন্য ভালো হয়েছে মনে করেন জয়। জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও তাদের আইনি প্রতিনিধিদের সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছে, এটা তাই প্রমাণ করে যে, আমরা ভালো লোক। 

আমি অতিশয় আনন্দিত যে, সন্ত্রাসীরা আমাদের একই সঙ্গে ঘৃণা এবং ভয় করে! তাদের উচিৎ আওয়ামী লীগকে ভয় করা, অনেক ভয়।  

জয় বলেন, সরকার ও তার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শুধু অধিকার নয়, তাদের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন রক্ষা করা। যদি কোনো সন্ত্রাসী মানুষের গায়ে আগুন দিতে চায় বা বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে চায়, পুলিশের দায়িত্ব তাদের থামাতে যে কোনো এবং সব ধরনের প্রয়োজনীয় বল প্রয়োগ করা। 
যখন একজন নিরীহ নাগরিক এবং একটা সন্ত্রাসীর মাঝ থেকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে তখন আমরা অবশ্যই বেছে নেব কীভাবে নাগরিকদের রক্ষা করা যায়। 

কথাটি এক অর্থে ঠিক বলেছেন তিনি, রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদি কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গি সংগঠন এদেশের মাটিকে ব্যবহার করে প্রশ্রয় না পান, তবে আওয়ামী লীগ তাদের ত্রাস বটে, তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র করবে এটাই স্বাভাবিক। 

তবে জেনে বা না জেনে যখন সেই ষড়যন্ত্রের সহায়ক শক্তি  হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীর সংশ্লিষ্টতা থাকে – তা ভয়ংকর বিপজ্জনক!  এ কারণে সরকার এবং দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে।

গত বছরের হেফাজতের সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পতনে ব্যর্থ হয় জামায়াত-বিএনপি। তার ঝাল মেটাতে হাজার হাজার 'তৌহিদী' জনতা হত্যা'র গুজব ছড়ানো পুরনো প্যাচাল নতুন করে আল-কায়েদার বার্তায় প্রচার করে যুদ্ধাপরাধীদের নির্লজ্জ সমর্থন করা হলো। 

একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে  আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির ক্ষোভ স্পষ্ট হয়েছে এ বার্তায়। ঘাতকের প্রতি ঘাতকের, ধর্মব্যবসায়ীর প্রতি ধর্মব্যবসায়ীর টান থাকবেই। তবে এক গোয়ালের গরুর লক্ষ্য এক। সেটা আদায়ে ষড়যন্ত্র, দায়িত্ব আর যন্ত্রণা যে একই, এই সহজ কিন্তু ভয়ংকর বাস্তবতা বুঝতে বা মেনে নিতে আমাদের সমস্যা কোথায়? প্রতিরোধের প্রস্তুতি কতোটা আমাদের? কেবলই মতভেদ আর বিচ্ছিন্নতা। আর কতো? দেয়াল সন্নিকটে। পিঠ ঠেকে গেছে। আর বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক ১৭ ফেব্রুয়ারি কুতুবদিয়ায় নৌবাহিনীর বার্ষিক মহড়া দেখার পর জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্পষ্টভাবে বলেছেন, বাংলাদেশে আল কায়দা  আগে যে ফেসিলিটিজ পেতো, তা এখন পায় না বলেই হুমকি দিচ্ছে। 

তাই আল কায়দার হুমকি সবসময় আছে , তা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  ক্ষমতায় এসেই বলেছেন, এদের বের করে দাও। অনেককে বের করে দেয়া হয়েছে। আগে অনেক সরকারি সংস্থাও তাদের সুবিধা দিয়েছিল। তাই প্রধানমন্ত্রীর  জীবনের ঝুঁকি অনেক আগে থেকেই আছে। 

প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল তারেকের এ বক্তব্য বাস্তব সত্য বলেই আমরা বারবার জেনেছি। 

সারা বিশ্বে আল কায়দা বা মুসলিম ব্রাদার হুড ভয়ংকর সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার জবাবও পাচ্ছে। মুরসির ফাঁসি নিশ্চিত বলে বলছে আমার মিশরীয় অনেক বন্ধু। মানবতার চরম অবমাননার শাস্তি একদিন পেতেই হয়-এ তার প্রমাণ। এ বাস্তবতায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আল কায়েদা বা মুসলিম ব্রাদারহুডের জঙ্গিবাদ এবং সভ্যতার প্রতি তারা কতো বড়ো হুমকি সে সম্পর্কে  স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। 

আল কায়দার হুমকি বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছুই নয়। জাওয়াহিরির মরিয়া বক্তব্যের এ বার্তা জামায়াত-বিএনপি প্রেমীদের একাত্মতা নতুন করে মনে করিয়ে দিলো কেবল।

ভারতের বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলাম আর ভারতের আম আদমি পার্টি একাট্টা হয়েছে । বাংলাদেশ, ভারত আর পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই আল কায়েদার সঙ্গে কাজ করছে।ভারতের আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লীতে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের সঙ্গেই আছে।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের জামায়াতে ইসলাম হিন্দ এর কেন্দ্রীয় কমিটি মারকাজে মজলিশে শুরার  প্রভাবশালী সদস্য হাসান রাজা ইসলামিক একাডেমিসহ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তার সভাপতিত্বে দিল্লিতে আয়োজিত এক বিশাল অনুষ্ঠানে তারা আম আদমি পার্টিকে আমন্ত্রণ জানায়। 

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ছিল জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ইউনাইটেড মিল্লি ফোরাম। ছবিসহ এই সংবাদ প্রকাশ করে জামায়াতের সহযোগী এ সংগঠনগুলোকে  কাগুজে বাঘের সঙ্গে তুলনা করেছে নর্দান ভয়েজ অনলাইন। জামায়াত আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের অতিথি আম আদমি পার্টির শীর্ষ সংগঠক সঞ্জয় সিং জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে বলেছেন, আম আদমি পার্টি ধর্ম বর্ণ গোত্র ভেদাভেদ করে না। তাই তারা জামায়াতের সঙ্গে একাত্ম।

পাকিস্তানের কোন কোন গণমাধ্যম বাংলাদেশের সাফল্যের সংবাদ গর্বের সঙ্গে প্রচার করছে। ২৩ অক্টোবর ২০১৩ পাকিস্তানের সাংবাদিক মুতাজা হায়দার ডন পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন, ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশকে জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘শুয়োরের দেশ’  (শুকরের দেশ) বলেছিলো,  পশ্চিম পাকিস্তানিরা ‘ভুখা নাঙ্গা’ বলে যে বাঙালিদের বকা ঝকা করতো, একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করে সেই বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান, এমনকি ভারতকেও ছাড়িয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায়।

তাই বাংলাদেশ আর দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুধাপীড়িত দেশ নেই । গ্লোব্যাল হাঙ্গার ইনডেক্স এর জরিপ তুলে ধরে ডন লিখেছে, পাকিস্তান এখনো ক্ষুধাপীড়িত নাগরিকদের মুখে অন্ন জোগানোর চেষ্টায় ছুটাচ্ছে, আর বাংলাদেশ মানব উন্নয়নের ঘোড়ায় লাগাম ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। 
সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে জঙ্গি গোষ্ঠী সর্বত্র হত্যা, সন্ত্রাস আর পহরণের তাণ্ডব চালাচ্ছে। 

পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন  জইশ আল আদল ইরান ও ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়ায় বন্দি ৩শ’ সুন্নির সঙ্গে তাদের বিনিময় করার দাবি করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষের কাছে । সুন্নি এ জঙ্গিগোষ্ঠী বলেছে, ইরানি রক্ষীদের আটকের পেছনে তাদের হাত রয়েছে। অজ্ঞাত জায়গায় ৫ জনকে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমন একটি ছবি পোস্ট করে তা ইরানি রক্ষীদের বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি। 

শুক্রবার আল আরাবিয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে, আটককৃত ইরানি রক্ষী সার্জেন্ট জামশেদ দানাইফার্দ ভিডিওতে বলেছেন, তারা নিরাপদ ও ভালো আছেন। এদের মুক্ত করতে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে দেশটিতে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলরেজা রহমানি ফাজলি।

বিবিসি বলেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ওই রক্ষীদের ইরানের সিসতান বেলুচিস্তান অঞ্চল থেকে আটক করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। কঠোরতার সঙ্গে বিষয়টি দেখার ও বন্দিদের মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসলামাবাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন ইরানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাজলি।  

ইরানি রক্ষীদের যে দিন আটক করা হয়, সেই দিনই ইরানে নিযুক্ত পাকিস্তানি শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে পাঠায় ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই বিষয়ে ইসলামাবাদ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির নেতাদের ও সদস্যদের (যারা পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে) বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে দাবি জানায়।

১৭ ফেব্রুয়ারি একই দাবির পুনারাবৃত্তি করে ফাজলি বলেছেন, অন্যথায়  আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের অবশ্যই ইরানকে কাজ করার অনুমতি দিতে হবে।

আবারো পাকিস্তানের ডন পত্রিকার একটি সংবাদ তুলে ধরতে হয়। 

২০১৩  সালের ৩ সেপ্টেম্বর মোস্ট ওয়ান্টেড এক্সট্রিমিস্ট লিডার আবু জারারা আল ইয়েমিনিকে পাকিস্তানের মুরিরি এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্যাকেশন স্পটের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সৌদি আরবের বিশেষ বাহিনী। ৪টি হেলিকপ্টারে করে এই বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানের  পাঞ্জাবের রাওয়িন্ড এলাকায় অবতরণ করে। 

সেখান থেকে উটে চড়ে মুরুরি এলাকায় গিয়ে ঘাড়ে ধরে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জারারাকে । জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান এবং অন্যরা ঘটনার বর্ণনা শুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে, এই  গ্রেফতার অভিযান মার্কিন বাহিনীর। জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তান এবং জামিয়াত উলামায়ে ইসলাম বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রাস্তায়।  

পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে বারবার এমন মার্কিনি হামলা বরদাশত করা হবে না। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশের জন্যে দাবি তোলে। এমনও বলে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে যদি জারারাও হয়, পাকিস্তান সরকারের লজ্জিত হওয়া উচিত! কারণ, সে একজন মুক্তিযোদ্ধা; আমেরিকার বিরুদ্ধে সে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছে!  কিন্তু  জারারাকে গ্রেফতার করেছে সৌদি আরব বাহিনী –এ তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতি  ঠগবাজ নেতাদের এতোক্ষণের ক্ষুব্ধ মনোভাব আর কুঁচকানো ভুরু বদলে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে।  নিজেদের দেশে   ‘বাপের দেশ’ সৌদি আরবের অভিযানে যেন চরম উল্লসিত তারা। ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়ে পাকিস্তানের জনগণ এবং সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানায় পাকিস্তানের জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফল করা এবং এতে সহযোগিতা করার জন্যে। এবার জামায়াত কার পক্ষে বলবে?

যথারীতি এখানেও একই হঠকারী ভণ্ড আচরণ জামায়াতের। চট্টগ্রামের লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজাহার এর মাদ্রাসায় ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর হ্যান্ড গ্রেনেড তৈরির সময়ে শক্তিশালী বিষ্ফোরণে তিন মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। ঘটনার পরপর হেফাজতে ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে মুফতি ইজাহারের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে হাস্যকরভাবে বলে, এ ঘটনা সামান্য কম্পিউটার বিষ্ফোরণ এবং পুরোটাই পুলিশের সাজানো । এ মামলায় ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের সামরিক শাখার প্রধান হারুণ ইজাহারের বিরুদ্ধে  চার্জশিট দেয় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, ইজাহার এবং তার পুত্র হেফাজতের কেউ নয়! চমৎকার!

সুমি খান: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, sumikhan29bdj@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪ - See more at: http://www.banglanews24.com/
- See more at: http://www.banglanews24.com/new/%
http://www.banglanews24.com/new/%E0%A6%

Wednesday, March 5, 2014

একজন শ্লোগানকন্যা যখন তারকা

লাকি আক্তার তরুণ নেতৃত্বের একজন। তার ফেসবুক পোষ্টে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা উঠে এসেছে।সেটা মানতে পারি আমি গণতন্ত্রের স্বার্থে। কিন্তু রাজাকার পুনর্বাসন কারী -হেফাজতের রক্ষক এবং শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্যকারী বেগম খালেদা জিয়ার জন্যে লাকীর কান্নাকাটির পর তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক মানতে আর মন চাইছে না, দুঃখিত!! আর প্রথম আলোতে প্রকাশিত তিনটি গল্পে শাহবাগ এবং শ্লোগানের কোন এক অগ্নিকন্যাকে চরম অশ্লীল ভাবে উপস্থাপনের পরও প্রথম আলো তে তার লেখা প্রকাশ করা তার আত্মঘাতী প্রচারমুখীনতার প্রকাশ মাত্র! কী ভয়াবহ রাজনীতি!! এ প্রসঙ্গে আমার আরো কিছু কথা আছে। ইসলামী ব্যাংক যতোক্ষণ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে না- ততোক্ষণ জামায়াত নিয়ন্ত্রিত এই ব্যাংকটির দান অনুদান গ্রহণ নিয়ে সমালোচনা থাকাই স্বাভাবিক। তবে জনপ্রিয় উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার ও দাবি করেন ইসলামী ব্যাংকের কোনকিছুতেই জামাতের কারো মালিকানা নেই! তাকে উপস্থাপনা করতে ডাকলে তিনি কেন যাবেন না?  মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! অন্ধ হলে কী আর প্রলয় বন্ধ থাকে? লাকী আক্তারের ফেসবুক পোষ্ট তুলে ধরলাম। এর পর আমার মন্তব্য-
Lucky Akter -"একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছেন, আবার ইসলামী ব্যাংকের চেক বিতরণ করছেন।আপনাদের একাধিক নেতা জবির একাধিক হল দখল করে আছে আবার আপনাদের ছাত্র সংগঠন শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে হল উদ্ধারে, হলের জমি পুন:রুদ্ধারে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 
খালেদা জিয়া তার বাসভবন ছাড়তে হয়েছিল, র‍্যাংগস ভবন ভেঙে ফেলতে হয়েছিল। আর হাজী সেলিম পার পেয়ে যাবে কেন??
এসব নাটক বন্ধ করেন। সর্প হয়ে দংশন করা আর ওঝা হয়ে ঝাড়ার কৌশল ত্যাগ করেন।"
----------------------------আমি সুমি খান ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্রশ্ন করি আপনাকে, লাকী আক্তার- ২ পয়সা মূল্যে বেআইনী ভাবে দুইটি রাজসিক বাড়ী যুগ যুগান্তর দখলে রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া- যার জন্যে এতো মন পুড়ছে লাকির-তাকে বলি,এক বিলাসী রাজরাণীর একটি বাড়ি এখন কতো পরিবারের আশ্রয়, জানেন, লাকি?সেই বাড়ি হারিয়ে আকুল নয়নে কান্না করা একজন 'অসহায় বিধবা' খালেদা এখন কতো মিলিয়ন ডলারের মালিক , জানেন আপনি, লাকি? তিনি শাহবাগ আন্দোলন আর আপনাদের সম্পর্কে এতো অশ্লীল মন্তব্য করার পর ও তার প্রতি এতো মায়া আপনার,লাকি?" বর্তমান বাম রাজনীতিকদের কি তাহলে বিএনপি প্রীতি ই যথেষ্ট? একাত্তরের ঘাতকদের পুনর্বাসন কারী কে সমর্থন করে মুক্তিযুদ্ধের অান্দোলন করছেন লাকি? হিপোক্রেসি আর কাকে বলে??ঘাতকদের বিচার করছেন শেখ হাসিনা। তাকে হত্যা করার এতো প্রচেষ্টা,তার একমাত্র উদ্দেশ্য একাত্তরের ঘাতকদের বাঁচিয়ে দেয়া-এই সাধারণ বিষয় যারা বোঝেন না, বা বুঝতে চান না-তারা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নন।বাম রাজনীতিকদের ন্যূনতম রাজনৈতিক জ্ঞান ও লাগে না দেখছি আজকাল?

Saturday, March 1, 2014

এটা একটা তারবার্তা ছিল না, জনাব রাষ্ট্রদূত - মোজাম্মেল খান


সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি ২০০৮ সালে তারেক রহমানকে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থ’ী হিসেবে উল্লেখ করে ওয়াশিংটনে যে বার্তা পাঠান তার বিশদ বিষয়বস্তু (যেটা উইকিলিকস ২০১১ সালে প্রকাশ করেছিল) প্রকাশ করে। তারবার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারেক রহমানের ঢুকতে না দিতে ওয়াশিংটনে সুপারিশ করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি শ্রেণীবদ্ধ নথি সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নিয়ে মন্তব্য করব না। আপনারা যদি অনেক তারবার্তার একটি নিয়ে কথা বলেন তাহলে সেটাতে ভুল সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হতে পারে। যেহেতু প্রতিদিন অনেক তারবার্তা যাওয়া-আসা করছে, কোন এক বিশেষ তারবার্তা কোন একটা মুহূর্তের চিন্তাকেই প্রতিফলিত করে।’ 
না, জনাব রাষ্ট্রদূত, এটা একটা তারবার্তা ছিল না। এটা ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল অবধি যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশনপ্রধানদের কয়েকটা তারবার্তা, যার সবই তারেক রহমানের কুকীর্তির বিশদ বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং এর সব ক’টি একে অপরের সম্পূরক, সাংঘর্ষিক তো নয়ই এবং সেদিক দিয়ে কোনটাই প্রসঙ্গের বাইরে নয়। নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদগুলোতে কালানুক্রমিকভাবে ঐ তারবার্তাগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো, যার সবই ৩০ আগস্ট, ২০১১ সালে উইকিলিকস প্রকাশ করে। 
এই তারবার্তাটির শিরোনাম ছিল ‘খালেদা দুর্নীতিগ্রস্ত পুত্রকে রক্ষা করে ব্যর্থ হয়েছেন’ এবং পাঠান রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ২০০৫-এর মার্চ মাসে। এ তারবার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী বাংলাদেশে তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে কি বলেন তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে। তাঁর ভাষায়, খালেদার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল তার দুর্নীতিগ্রস্ত ছেলে তারেক রহমানকে রক্ষা করা। তিনি [ সিদ্দিকী ] বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে তার দুর্নীতিস্ত পুত্রকে প্রশ্রয় এবং রক্ষা করেছেন।
২০০৫ সালের ১৩ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কামালুদ্দিন সিদ্দিকীর ৪০ মিনিটের একটি বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে ওয়াশিংটনে জ্যেষ্ঠ মার্কিন সরকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারেকের বৈঠকের অনুরোধ প্রটোকল ও অন্যান্য কারণে সম্ভব নয় বলে রাষ্ট্রদূত সিদ্দিকীকে জানান। সিদ্দিকী এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, উত্তরাধিকারের রাজনীতি একটি উঠতি গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। 
মার্কিন দূতের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্দিকী আরও বলেন, মার্কিন চাপ এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রথম বিশ্বব্যাংকের বৈঠক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার খাতিরে খালেদা জিয়া অবশেষে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির সাংসদ, মন্ত্রী এবং জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ‘গ্যাংস্টার’দের রক্ষা করা বন্ধের নীতি গ্রহন করেন। সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি সরকারের সমস্যা হলো এরা শুধু চাপের মুখে কাজ করে। যার ফলে যে কাজ আগেই করা উচিত; সেটা করেও তার কৃতিত্ব তারা দাবি করতে পারে না। 
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন যার নাম সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ্্ এএমএস কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা করার অভিযোগে মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত জিজ্ঞাসা করলে সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেন। সিদ্দিকী জানান, তৎকালীন সিভিল এ্যাভিয়েশন প্রতিমন্ত্রী মীর নাসির উদ্দিন বিমানের জন্য বোয়িং বা এ্যায়ারবাস কিনবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিতেও ঘুষ চেয়েছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর ঘুষের ইচ্ছার জন্যই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। 
দ্বিতীয় তারবার্তাটিও পাঠিয়েছিলেন হ্যারি কে টমাস ১১ মে, ২০০৫ সালে। এটাতে বলা হয়েছিল, বিশ্বস্ততা, ঘনিষ্ঠতা এবং পারিবারিক সম্পর্ক ছিল তার দ্বিতীয় মেয়াদে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রধান প্রভাব, কোন প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের কোন মূল্যায়ণ তিনি করেননি। তারবার্তায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার কাছে আনুগত্য দ্বিমুখী রাস্তা। এটা হলো আদান-প্রদানের ব্যাপার। ১৭ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার ওপর সর্বোচ্চ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসাবে। এদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল- ভেতরের, মাঝের এবং বাইরের। এদের অনেকের সঙ্গেই তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। 
ঐ তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে আরও বলা হয়, ‘হাওয়া ভবন’ নামে এক ‘ছায়া সরকার’ তিনি চালিয়েছেন, বিশেষ করে সরকারী নিয়োগ এবং ঠিকাদারি কাজ দেয়ার ব্যাপারে ঐ ভবনের কথাই ছিল শেষ কথা। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে গঠিত ৬০ জনের মন্ত্রিসভার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তিনিই বিক্রি করেছিলেন। তিনি নৃশংস, সীমাহীন দুর্নীতিবাজ, রাজনীতিতে এবং ব্যবসায় অনভিজ্ঞ, অশিক্ষিত, বাস্তব জ্ঞানবিবর্জিত এবং অমানবিক। 
অন্যান্য ১৫ জনের মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়- খালেদা জিয়ার সংসদীয় এবং জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এ ব্যক্তিটি এক বহুমুখী প্লেয়ার, যাকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং হত্যাকারী, ধর্ষক এবং অস্ত্র চোরাচালানকারীসহ এমন কোন অপরাধ নেই; যার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। ওআইসি মহাসচিব পদে হেরে যাবার পরও তার প্রভাব বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হয়নি। শেখ হাসিনাকে তিনি অনেকবার অভদ্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন এবং চট্টগ্রাম অস্ত্র চোরাচালানোর সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথাও শোনা যাচ্ছে।
পরবর্তী তারবার্তাটি, যার শিরোনাম ছিল, ‘অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি‘, ২৪ আগস্ট ২০০৬ সালে পাঠান প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার তার মেয়াদের শেষদিকে দুর্নীতির একটি দৃশ্যত নজিরবিহীন পর্যায়ে জড়িত ছিল। তারবার্তায় বলা হয়, লোভ এবং আসন্ন রাজনৈতিক প্রচারণায় অর্থ যোগানোর প্রয়োজন দুর্নীতি উর্ধগতিপ্রাপ্ত হয়। এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হতো যে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির দায়মুক্তি নিম্ন কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং এটাতে সব পর্যায়ে ছোটখাটো দুর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে। উদাহরণ দিয়ে কয়েক শ’ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং পুলিশের রেডিও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চুক্তি। আমেরিকান কোম্পানি মটোরোলার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি কিভাবে তারেক এবং আরাফাত রহমান কোকোর প্রভাবে বাতিল করে সিঙ্গাপুর টেকনোলজি কোম্পানিকে দেয়া হয়- তার বিবরণও দেয়া হয়েছে তারবার্তায়।
পরবর্তী তারবার্তাটি পাঠান রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ২০০৮ সালের ৩ নবেম্বরে। ওই তারবার্তায় তারেক রহমানকে, লোভ-লালসা-চোরামি আর দুর্নীতিবান সরকারের এবং হিংস্র রাজনীতির প্রতিবিম্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তাকে যেন যুক্তরাষ্টে ঢোকার অনুমতি না দেয়া হয় সে সুপারিশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বিশ্বাস করে, তারেক রহমান ‘কুখ্যাত রাজনৈতিক দুর্নীতির দোষে দোষী’ এবং এ ব্যাপারে দূতাবাস তারেকের কিছু বড় ধরনের দুর্নীতির বিবরণ ঐ তারবার্তায় তুলে ধরে। 
এসব তারবার্তা পাঠানোর ৬ মাস পর ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গীতা পাশি ওয়াশিংটনে আরও একটি তারবার্তা পাঠান। ঐ তারবার্তায় বলা হয়, স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণার আওতায় তারেক রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে। ঐ বার্তায় বলা হয়, তার অপকর্ম সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করেছে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থায়িত্বকে খর্ব করেছে। তার কোটি কোটি ডলারের চুরি এ মধ্যপন্থী মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থায়িত্ব এবং ভিতকে দুর্বল করেছে এবং যার প্রেক্ষিতে এ দেশে একটা শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যয় ও প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। 
তারেকের দুর্নীতি চর্চা মার্কিন স্বার্থের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে বলে মরিয়ার্টি লিখেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বাংলাদেশে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাত এবং ঘুষের যে সংস্কৃতি চালু করেছে সেটাতে মার্কিন ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং অনেক অপূরণীয়ভাবে সুযোগ হারিয়ে গেছে, মরিয়ার্টি উল্লেখ করেন ওই তারবার্তায়। সংক্ষেপে, বাংলাদেশের যা কিছু দুর্দশা তার সিংহভাগের জন্য দায়ী তারেক এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। 
এসব কারণে রাষ্ট্রপতি প্রক্ল্যামেশন ৭৭৫০-এর মাধমে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে এন্ট্রি ব্লক করার সুপারিশ করেন। 
তারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ, অর্থ আত্মসাৎ এবং করফাঁকির অভিযোগে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও জামিনে তারেকের মুক্তি পাওয়া সম্পর্কে মরিয়ার্টি লেখেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক তার জামিনের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গভীর রাজনৈতিক বন্ধন, যেটা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পৌঁছাতে পারে, সেটা দ্বারা বিচার প্রক্রিয়াকে নিপুণভাবে মানিপুলেটের মাধ্যমে তিনি জামিন পেতে সমর্থ হন।
এসব তারবার্তার বিষয়বস্তু কোনটার সঙ্গে কোনটা সম্পর্কহীন বা কোনটাতে কি কোন অপ্রাসঙ্গিকতা ধরা পড়েছে বা কোন অংশকে কি সম্পূর্ণ তারবার্তাসমূহের বিষয়বস্তুর বাইরে নিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে, জনাব রাষ্ট্রদূত?

লেখক : কানাডা প্রবাসী অধ্যাপক এবং সিনেটের ডেপুটি স্পীকার

জঙ্গীবাদের বিশ্বায়ন, সরকার এবং বাংলাদেশে : আবদুল মান্নান


বাংলায় প্রবাদ আছে-সর্ষে দিয়ে নাকি ভূত তাড়ায়। তারপরের প্রশ্ন হচ্ছে সর্ষেই যদি ভূত থাকে তাহলে সেই সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো সম্ভব কিনা। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেশীয় মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে বা হচ্ছে, যার অন্যতম হচ্ছে, কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে একেবারে ফিল্মি স্টাইলে তিন ভয়ঙ্কর জঙ্গীবাদী জেএমবি’র সন্ত্রাসীকে মাঝপথে মিনিট তিন হতে চারের মধ্যে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় ছিনতাইকারীদের গুলিতে এক পুলিশ সদস্যও নিহত হন। এমন ঘটনা বাংলাদেশে তো নয়ই উপমহাদেশে এর আগে কখনও ঘটেছে বলে শোনা যায়নি, এমনকি জঙ্গীবাদী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য পাকিস্তানেও না। বাংলায় আরও একটি প্রবাদ আছে, যেটিতে বলা হয় ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।’ এখন এই ঘটনা নিয়ে সরকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপের কাজ চলছে। এর মধ্যে একজন জঙ্গী রাকিব, পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে সে নিহত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। রাকিবের বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। কারণ তা হলে তার কাছ থেকে এই অপারেশন সম্পর্কে হয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যেত। এসব প্রসঙ্গে পরে আসছি। এখন আসি সর্ষের মধ্যে ভূতের প্রসঙ্গে। এই ভূত হচ্ছে সরকারের মধ্যে ভূত এবং এই ভূত সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, ঠিক তাই করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরও সত্য। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতি দেশের মানুষকে ঠিক আড়াআড়ি মাঝখান দিয়ে দু’ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর দীর্ঘ একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। এই সময়ে সরকারের মধ্যে এমন অনেক মানুষ ঢুকে পড়েছে যাদের অনেকেই বাংলাদেশের মৌলিক কাঠামোকে বিশ্বাস করেন না। পারলে কালকেই বাংলাদেশকে একাত্তর পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ বিরতির পর এসব কর্মচারী আর কর্মকর্তাকে নিয়েই যাত্রা শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এরপর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনও আওয়ামী লীগ তার মিত্র কারা আর শত্রু কারা তা বুঝতে পারেনি অথবা বুঝতে পারলেও তার গুরুত্ব দেয় না। এই ভুলটি বঙ্গবন্ধুও করেছিলেন এবং এর ফলে শুধু তাঁকে সপরিবারে নিহতই হতে হয়নি জাতিকেও অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে; বঙ্গবন্ধু কন্যাও মাঝে মাঝে একই ভুল করেন। বাবা এবং কন্যার মধ্যে তফাৎ এই যে, বাবা সময় থাকতে বুঝতে পারেননি তাঁকে একদল ঘাতক নীরবে তাড়া করছে। কিন্তু সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় কন্যার তো বোঝা উচিত একটি বুলেট তাঁকে সর্বক্ষণ তাড়া করছে। শুধু একটি ঘটনার কথা পাঠকদের জানার জন্য বলি তাহলে পাঠক বুঝতে পারবেন, কখনও কখনও পরিস্থিতি কত নাজুক হয়ে উঠতে পারে। 
১৭ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শো’র প্রদর্শনী উদ্বোধন হবে। এমন প্রদর্শনী ভারতের অনেক ঐতিহাসিক শহরে অনুষ্ঠিত হয়। শুধু আলো, শব্দ আর ধারা বর্ণনায় জীবন্ত করে আনা হয় ওই অঞ্চলের ইতিহাসকে। লালবাগ দুর্গের এমন এক স্থায়ী প্রদর্শনীর আয়োজক সংস্কৃৃতি মন্ত্রণালয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সাতটার একটু আগেই মূল প্রদর্শনী শুরু হবে। আধ ঘণ্টারও কম সময়ের অনুষ্ঠান সাড়ে সাতটার এশার আযানের আগেই শেষ হতে হবে। আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা শ’দুয়েক হবে। সেই মতোই সব কিছুর প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী মাগরিবের নামাজের পর পরই চলে এলেন। তাঁর গাড়ি কেল্লার ভেতরে ঢুকলো। প্রধানমন্ত্রী গাড়ি হতে নেমেই দু-কদম না দিতেই কেল্লার সব বাতি নিভে গেল। কেল্লার বাইরের সব বাতি কিন্তু তখন জ্বলছিল। আর আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের কারো হাতে কোন টর্চ লাইট দেখা যায়নি। ভরসা সব টিভি ক্যামেরার সঙ্গে থাকা লাইট। সেই আলোয় প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসলেন। তারপর আবার আলো জ্বলে ওঠে। প্রথমত প্রধানমন্ত্রীর রাতের বেলায় পুরনো ঢাকায়, যেখানে রাস্তাঘাট খুব সরু, সেখানে যাওয়াটা তাঁর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে খুব বেশি সমীচীন হয়েছে বলা যাবে না। দ্বিতীয়ত এই এলাকায় আওয়ামী লীগের ভেতরের দলীয় কোন্দল বহু পুরনো। কোন একটি এলাকায় দলীয় কোন্দল থাকলে তার কি পরিণতি হতে পারে তা আমার একবার দেখার দুর্ভাগ্য, হয়েছিল চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায়। সেটি সম্ভবত ১৯৮৪ সাল। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। জনসভা চলাকালীন সভাস্থলে শুরু হলো দুই উপদলের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ। শেখ হাসিনাসহ মঞ্চে উপবিষ্ট সকলে তখন বেশ অসহায় হয়ে পড়েন। দলীয় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে বহু কষ্টে পুলিশ পাহারায় রক্ষা করেন। তৃতীয়ত, এলাকাটিতে বিডিআর হত্যা মামলায় আটক নাসির উদ্দিন পিন্টুর কর্মীরা বেশ সক্রিয়। তারাও যে কোন সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটাতে সক্ষম। সেদিন সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হলেও মূল অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে দুবার ছন্দপতন ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি প্রাণহীন হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমন একটি ঘটনা অভূতপূর্ব এবং সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত। তবে ওই রাতেই বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত বারো কর্মচারী আর কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ঘটনার তদন্তের পদক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই যাবত মানুষ জানতে পারেনি তদন্তের ফলাফল কি হলো। 
তবে সাম্প্রতিককালে সব চেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে দ-প্রাপ্ত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি’র তিন সদস্য ছিনতাই যার কথা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি এই ছিনতাইকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে অবহিত করলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এমন একটি উক্তি দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ছিনতাইয়ের জন্য ছিনতাইকারী জেএমবি’র সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং তারা তা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করেছে। ছিনতাইকৃতদের একজন পালিয়ে গিয়ে আবার ধরা পড়ার পর পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা গেলেও আরও দুজন ভয়াবহ জঙ্গী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। তাদের এই সফল অপারেশনের পর নিশ্চিতভাবে তাদের মনোবল আরও চাঙ্গা হবে এবং হয়ত পরবর্তী আরও এমন একটি ভয়াবহ অপারেশনের জন্য ইতোমধ্যে সকলের অজ্ঞাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এই ঘটনার পর যেটি দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে, একে অন্যকে দোষারোপ করা। কোন কোন সংবাদ মাধ্যম খবর দিচ্ছে তারা পলাতক এবং পরে নিহত রাকিব ও গাড়ির চালক জেএমবি সদস্য জাকারিয়ার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই যাবত বাকি দু’জন জঙ্গী এখনও পলাতক আছে। এই অপারেশনে সহায়তা করেছে কারাগারের কিছু পুলিশ। তারা নিয়মিত অর্থের বিনিময়ে জঙ্গীদের মোবাইল ফোনে তাদের বাইরের সঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলতে দিত। কারা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে কারাগার হতে মোবাইলে কথা বলা সম্ভব নয়। কারণ কারাগারে মোবাইল জ্যামার বসানো আছে। যেটি তারা বলে না তা হচ্ছে জ্যামারকে বন্ধ করে রাখা কোন ব্যাপারই নয়। এটি হচ্ছে এ রকম যে, একটি মার্কেটে রাতেরবেলায় ডাকাতি হলো। জানা গেল সেই মার্কেটে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল কিন্তু তা রাতেরবেলায় বন্ধ ছিল। পুলিশের জানা উচিত বাংলাদেশে অশিক্ষিত-মূর্খরা জঙ্গী হয় না, তারা বড় জোর সন্ত্রাসী হয়। যারা জঙ্গী হয় তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। অনেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত গিয়েছে। আয়মান আল জাওহিরি, যার বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে এত হৈচৈ তিনি একজন পিএইচডিপ্রাপ্ত জঙ্গী গুরু। বাংলাদেশে যে হিজবুত তাহরীর এত সক্রিয় তারা প্রায় সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এদের গুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। ব্লগার রাজিবকে যারা হত্যা করেছিল তারা সকলে বনেদী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথের ছাত্র। পুলিশ প্রশাসন যদি একজন সন্ত্রাসী আর একজন জঙ্গীর মধ্যে তফাৎ বুঝতে না পারেন তা হলে বুঝতে হবে তাদের প্রশিক্ষণে যথেষ্ট ঘাটতি আছে। সম্প্রতি ছাত্র শিবিরকে যখন আইএচএস জেনস টেররিজম এ্যান্ড ইনসারজেন্সি সেন্টার বিশ্বের তৃতীয় ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করলো ঠিক তখন বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে অনেকে তার সমালোচনা করে বললেনÑ এই স্থানটি তো পাওয়া উচিত ছাত্রলীগের। কারণ তাদের হাতেই একে-৪৭ রাইফেল দেখা যায়। যারা এই ধরনের মন্তব্য করে তারা বুঝতে পারে না এরা হচ্ছে স্রেফ সন্ত্রাসী। এরা টেন্ডারবাজি, দলবাজি, অথবা চাঁদাবাজির জন্য সন্ত্রাস করে ছাত্র শিবিরের মতো কোন মতবাদকে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার জন্য নয়। ছাত্রলীগ বা এমনকি ছাত্রদলও জঙ্গীবাদের আশ্রয় নিয়ে কোন মতবাদ প্রচার করে না যা ছাত্র শিবির করে। 
পুলিশ যখন একজন আসামিকে আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে যায় সে সময় বিরাট একটি অর্থের লেনদেন হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার সময় অর্থের বিনিময়ে একাধিকবার তার দলীয় কর্মীরা পথের মধ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছে। চট্টগ্রামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার নাসিরকে অর্থের বিনিময়ে আদালত হতে কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার সময় চট্টগ্রামের চকবাজারের সবুজ হোটেলে বিরানি খাওয়ারও সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। নাসির অর্থের বিনিময়ে কারাগারে ফোন ব্যবহার করে বিদেশে অবস্থানরত তার সাঙ্গোপাঙ্গদের সঙ্গেও নিয়মিত কথা বলে আর তারা নিয়মিত বাইরে চাঁদাবাজি করে। এই যে তিনজন ভয়াবহ জঙ্গীকে একই ভ্যানে তিনজন গাদা বন্দুকধারী পুলিশ দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয় তা হয় উদ্দেশ্যমূলক না হয় চরম আহাম্মকি। কোনটি ঠিক; তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা যদিও অনেক দুরূহ রহস্যের সমাধান পূর্বে করেছেন অথবা করছেন তবুও তাদের আনাড়িপনাও মাঝে মধ্যে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পড়ে। একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রথম পূর্বশর্ত হচ্ছে তার গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করা। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ একবারই হয়েছিল। এরপর হয়ত চেষ্টা করা হয়েছিল একাধিকবার। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার আগাম ব্যবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি। জঙ্গীবাদের বিশ্বায়নের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেক ঝুঁকির মধ্যে আছে। 
আমরা সব জঙ্গীবাদ উচ্ছেদ করে ফেলেছি অথবা জঙ্গীরা এখন আগের চেয়ে অনেক দুর্বল তেমন কথা বলে যদি ঢেঁকুর তুলি তাহলে সেটি হতে পারে একটি ভয়াবহ আত্মঘাতী ভুল। বাংলাদেশ গত চল্লিশ বছরে অনেক ভুল করেছে। জাতি আর কোন ভুলের খেসারত দিতে প্রস্তুত নয়। আশা করব বঙ্গবন্ধু কন্যা কাকে দিয়ে কি কাজ হবে তা বুঝতে পারবেন এবং সেই মতে তাকে কাজে লাগাবেন।

লেখক: শিক্ষবিদ ও বিশ্লেষক

Friday, February 28, 2014

নারীমুক্তির সংকট:বর্তমান প্রেক্ষাপট - নূরজাহান খান


  'নারী ছাড়া কোনো গণআন্দোলন হতে পারে না।' মহান বিপ্লবী ক্লারা জেৎকিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছিলেন মহামতি লেনিন। পিছিয়ে থাকা নারীদের এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি বলেছিলেন, নারীদের বোঝাতে হবে সন্তান ধারণ ও সন্তানকে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা এবং জীবনচর্চায় তাদের পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে।  আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪তে থিম করা হয়েছে পরিবর্তনের অনুপ্রেরণাকে। আমরা  নারীর প্রতি দায়বদ্ধ  এবং জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে আসছি ১৯৭০ সাল থেকে। গত চার দশকে  এর সফলতা অনেক ; তবে ব্যর্থতা ও কম নয় ।সেই ব্যর্থতা কাটাতে  সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরী ।
আমার সাম্প্রতিক  অভিজ্ঞতায়  বর্তমান সমাজবাস্তবতার কিছু সফলতা -ব্যর্থতার চিত্র  এ লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

 রাজপথ থেকে প্রশাসন সর্বত্র নারীর দৃপ্ত পদ পদচারনা। নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই এদেশে প্রকৃত মানবমুক্তি আসবে। আমরা বলি, পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে।নারীর শিক্ষার মান বেড়েছে। নারীর সমতা বিধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার নারীবান্ধব পরিবেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। নারীর নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা নারীমুক্তির অগ্রযাত্রার সহায়ক বলে মনে করছে বর্তমান সরকার। এ কাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষেরও এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৭৬-৮৫ সালে জাতিসংঘের ঘোষণা ছিল নারীর সমতা, উন্নয়ন ও শান্তি। জাতিসংঘ নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য ঘোষণা দেয় কাজ, শিক্ষা, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে। কোনো কোনো দেশের সংবিধানে আছে নারীরা গৃহকাজের বাইরে অন্য কাজে যেতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে এখনো ভোটাধিকারের দাবিতে লড়াই করতে হচ্ছে নারীকে।

আমাদের খালাম্মা বেগম সুফিয়া কামাল বলতেন, মঞ্চে কিছু মানুষ নির্ধারিত বক্তব্য বলে যায়, "দর্শকরা শুনে যান। এর খুব একটা প্রভাব সমাজে পড়ে না। নারীর প্রতি আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দায়িত্বশীলতার কথা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বলতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের মাঠে নামতে হবে মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষকে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ আমাদের নিজেদেরই কাজ। "

সচেতনতার অভাবে  ফতোয়া, পর্দা, হিজাব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। সমাজ গবেষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল  স্বাভাবিকভাবেই এর বিরুদ্ধে তার হতাশা এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যে কোনো সচেতন ব্যক্তিমাত্রই এতে শঙ্কিত হবেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীকে আবার পর্দার ভেতরে বন্দি করার সংঘবদ্ধ যে অপচেষ্টা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের।  এতে সাড়া দেবার কেউ আছেন কি?

 মুক্ত হাওয়ায় নারীর নিঃশ্বাস নিতেও বাধা?  হিজাব তার ই প্রকাশ। তবে সমাজের উচ্চশ্রেণীর  কিছু  নারী স্বেচ্ছায় এ শৃঙ্খলে বন্দি হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হিজাবে ফ্যাশনের বেশ বাহার দেখান।

 তাদের প্রতি আমার আবেদন, নজরুলের সেই জনপ্রিয় আহ্বান ভুলে যাবেন না, 'মাথার ঘোমটা খুলে ফেলো নারী, ছিঁড়ে ফেলো ও শিকল- যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ।' সৃষ্টিশীল মনকে শৃঙ্খলিত করার মতো স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অধিকার নিজেরও নেই। এ সমাজে জন্ম, শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিটি মানুষের অবদান আছে। সেই মানুষগুলোর প্রতি, এ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধ থাকতে হবে। পর্দাপ্রথা প্রত্যাখ্যান সমাজ সচেতনতার প্রকাশ। এর সাথে ধর্মের কোন দ্বন্দ্ব নেই। আধুনিক কালে  ধর্মের এমন অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার হীন প্রচেষ্টা করা হচ্ছে; যা ঠেকানো জরুরী বলে আমার মনে হয়।

নারীকে কূপমন্ডকতার  দিকে ঠেলে দেয়ার এ হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করে এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধে  উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ।

ফতোয়া, পর্দা, হিজাব আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সমাজ গবেষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল হতাশা এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যে কোনো সচেতন ব্যক্তিমাত্রই এতে শঙ্কিত হবেন। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নারীকে আবার পর্দার ভেতরে বন্দি করার সংঘবদ্ধ যে অপচেষ্টা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কেউ আছেন কি?

 মুক্ত হাওয়ায় নারীর নিঃশ্বাস নিতেও বাধা? তবে সমাজের উচ্চশ্রেণীর  কিছু  নারী স্বেচ্ছায় এ শৃঙ্খলে বন্দি হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার হিজাবে ফ্যাশনের বেশ বাহার দেখান।

 তাদের প্রতি আমার আবেদন, নজরুলের সেই জনপ্রিয় আহ্বান ভুলে যাবেন না, 'মাথার ঘোমটা খুলে ফেলো নারী, ছিঁড়ে ফেলো ও শিকল- যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ।' সৃষ্টিশীল মনকে শৃঙ্খলিত করার মতো স্বেচ্ছাচারিতার কোনো অধিকার নিজেরও নেই। এ সমাজে জন্ম, শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিটি মানুষের অবদান আছে। সেই মানুষগুলোর প্রতি, এ সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধ থাকতে হবে। পর্দাপ্রথা প্রত্যাখ্যান সমাজ সচেতনতার প্রকাশ। এর সাথে ধর্মের কোন দ্বন্দ্ব নেই। আধুনিক কালে  ধর্মের এমন অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীকে আবার অবরোধবাসিনী করার হীন প্রচেষ্টা করা হচ্ছে; যা ঠেকানো জরুরী বলে আমার মনে হয়।

  স্বাবলম্বী হবার প্রয়াসে অথবা সংসারে সচ্ছলতা আনতে  গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে যে নারীরা তাদের  কথা এবার বলতে হয়।  ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে পা দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। ঋণের ভার বইতে না পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। তবু প্রত্যন্ত জনপদে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের হার কম নয়।  পোষাক কারখানায় কর্মজীবি মেয়েরা শহরে ছোট রুম ভাড়া করে কষ্ট করে থাকে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান  কোম্পানি নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থায় গ্রাম থেকেও কর্মীদের নিয়ে আসছে। গ্রামের প্রতিটি ঘরে ব্যস্ততা। স্বামী সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করে নিজের খাবার সাথে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে উদ্যমী নারী। এমনও দেখা যায়, বিয়ের ১৮-১৯ বছর পরও স্বামীর একার রোজগারে সংসার চলে না। ৩৭-৩৮ বছরের নারীও গার্মেন্টসে চাকরি নিচ্ছে। তবে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয় , যখন দেখতে পাই দুর্জনেরা কিছু গার্মেন্টস কর্মীদের ফাঁদে ফেলে পঙ্কিলতার অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে তাদের জীবন। গ্রামের কর্মজীবী নারীর পরিবার এবং সন্তানের নিরাপত্তায় মায়ের অবর্তমানে প্রতিবেশীরা যেন সহনশীলতার সঙ্গে সহযোগিতা করে। সুখের ব্যাপার, কোনো কোনো গার্মেন্টে ডে-কেয়ার সেন্টার আছে, যেখানে গার্মেন্টসকর্মীরা তাদের শিশু-সন্তানকে রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে।
বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন আজ সত্য। লেডি কেরানি থেকে বিচারপতি সব পদে নারী দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। বিচারিক কাজে নারীর সিদ্ধান্ত খুব কমই ভুল হয়। ব্যতিক্রম থাকতে পারে, তবে তা খুবই নগণ্য। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বারবার উঠে এসেছে বাস্তবে নারী তার কর্মক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচারে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি সৎ এবং পরিশ্রমী।

কন্যা শিশুর বিপন্নতা সমাজের আরেক ভয়াবহ বাস্তবতা। পরিণত বয়স্ক পুরুষ দ্বারাও অনেক সময়ে নির্যাতিত হয়ে তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়। বিকৃত রুচির মানুষগুলো আইনের কঠোর সাজার তোয়াক্কা কেন করেন না- সেই  বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারেন অপরাধবিশেষজ্ঞ বা সমাজ গবেষকরা। তবে  নিরীহ শিশু বা তরুণীদের জিম্মি করে পর্নোগ্রাফি তৈরি এবং প্রচারের মতো জঘন্য অপরাধ কন্যা শিশুদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। এ এক  সঙ্কটকাল অতিক্রম করছি আমরা।

 আশার কথা,  তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধীদের শাস্তির বিধান জারি করে আইন পাস হয়েছে সংসদে। অপরাধীদের অন্তত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জরুরী; যার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

অনেক ক্ষেত্রে একটি কিশোরী বা তরুণীর ছবির সঙ্গে অন্য কোনো ছবি জুড়ে অশ্লীল, অশালীন বক্তব্যদানকারী  ধরা পড়ার পর তাদের বাঁচানোর জন্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমাজের প্রভাবশালীরা তৎপর হন।

 রেল স্টেশন বা বাজারে পথশিশুরা পলিথিন মুখে দিয়ে মাদকে বুঁদ হয়ে  রাস্তায় পড়ে থাকে- তাদের বাঁচানোর উদ্যোগ না নিলে অন্ধকারের গহ্বরে তারা তলিয়ে যাবে। যারা সমাজকে মাদকের অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে দিতে চায়, সেসব গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে।একই ভাবে বলতে হয়,   মানবপাচার এখন সারা বিশ্বের বড় সমস্যা। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অনেক সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছে। অথচ মূল পাচারকারী শাস্তির বাইরেই থেকে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে কারো সদিচ্ছা আছে বলে মনে হয় না।

দু' বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে এসিড পান করে। এক বছর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুর কাছে হার মানে সেই তরুণী।  মামলার আসামি ইভ টিজার তরুণের আইনজীবীর  আর্জি মতো ছাত্রটির শিক্ষাজীবন বাঁচাতে মহামান্য আদালত তার জামিন দেন।

এখানে পেশাগত দায়িত্ব প্রধান; মানবতাবোধ বিন্দুমাত্রও তাড়িত করেনি  আসামীপক্ষের  আইনজীবীকে। পরিতাপের বিষয়, এ ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, সারাদেশে মানববন্ধন, আন্দোলন, সভা সমিতি হয়। তাও একসময়ে গতানুগতিক নিয়মে ভাটা পড়ে। সেই নিরীহ শিশু, কিশোরী-তরুণীর পাশে কেউ থাকে না।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মাদ্রাসা শিক্ষক আবদুস সাত্তার ২০০৪ সালে চার বছরের একটি কন্যা শিশুকে (বালকেরাও মাদ্রাসা শিক্ষকদের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়) নির্যাতন করার পর তার পক্ষে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। আদালতে বললেন, মামলার অভিযোগে উলি্লখিত ঘটনার সময়ে সাত্তার (ধর্ষক) নাকি সাতকানিয়া সমাজসেবা অফিসে ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তৎকালীন মন্ত্রী, এমপিও এ ধর্ষকের চরিত্র 'ফুলের মতো পবিত্র' এমন সনদপত্র দেন। অনেক আইনজীবী আদালতে দাঁড়ান ধর্ষণকারী সাত্তারের পক্ষে, আর নির্যাতিত শিশুটির পাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখলাম কেউ নেই। আরো অনেক মামলার মতো এ মামলাটি নিয়েও ৪টি বছর লড়াই করলাম। পাশে পেয়েছিলাম প্রথিতযশা আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তকে (বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর)।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের তৎকালীন পিপি আখতার হোসেনের নেতৃত্বে মামলা পরিচালনাকালে  আসামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলো। ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হলো ধর্ষক আবদুস সাত্তার।

তবে  খ্যাতনামা এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ নিজের ব্যবসা, চাকরির সফলতার জন্য নিজের স্ত্রী বা কন্যাকে ক্ষমতাবান কোনো পুরুষের হাতে সমর্পণ করেন এমন অভিযোগ ও রয়েছে। অভিযোগের বিপরীতে  অভিযুক্ত ব্যক্তির  আত্মপক্ষ সমর্থন করে কোন বক্তব্য থাকে না।  তাদের কোনো অপরাধবোধও থাকে না। যা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় এবং সমাজের জন্যে ভয়ংকর!

সমাজপতিদের কাছে নারী পুরুষের শারীরিক কাঠামোগত বৈষম্য ই গুরুত্বপূর্ণ।  নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজপতিদের চরম অনিচ্ছা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে অনেক খানি।

নারী পুরুষের সমানাধিকার, নারীর স্বনির্ভরতা, শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। জাতিসংঘ নারীর বৈষম্য দূর করার যে প্রস্তাব রেখেছে, নিজেদের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে। এতে পরিবার এবং সমাজ লাভবান হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না,  নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার দূরদৃষ্টি নিয়ে বেগম রোকেয়া  'সুলতানার স্বপ্ন'  দেখিয়েছেন । বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার উত্তরসূরি বেগম সুফিয়া কামাল আমাদের হাত ধরে রাজপথে নামিয়েছেন। আজ সর্বক্ষেত্রে নারীর সদর্প পদচারণা, সমাজে নারীর যে অগ্রগতি তা তারই সুফল। আর বিভেদ নয়, আর অসাম্য নয়। নারী-পুরুষ পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। একসাথে এগিয়ে যাবো আমরা। বর্তমানে সরকার নারীমুক্তির যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, তা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে আসতে হবে সমাজকেই।

 সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে একদিন  আরো বহুদূরএগিয়ে যাবে নারী।   সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নারীকে কূপমন্ডকতার  দিকে ঠেলে দেয়ার সব রকমের  হীন প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে।  এগিয়ে নিতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সব সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধে  উঠে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, মানবিক মন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে এ সমাজ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৪ সফল হোক্।

নূরজাহান খান:  মানবাধিকার সংগঠক/ প্রধান নির্বাহী , লিরো

নারী- কাজী নজরুল ইসলাম

সাম্যের গান গাই-
   আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
   বিশ্বে যা-কিছু মহান্‌ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
   অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
   বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
   অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
   নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা’ করে নারী হেয়-জ্ঞান?
   তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান।
   অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
   ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে।
   এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
   নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
   তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখেছো কি তার প্রাণ?
   অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
   জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,
   সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি’।
   পুরুষ এনেছে যামিনী-শানি-, সমীরণ, বারিবাহি!
   দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশীতে হ’য়েছে বধূ,
   পুরুষ এসেছে মরুতৃষা ল’য়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
   শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল, পুরুষ চালাল হল,
   নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
   নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
   ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।

       স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
   নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হ’য়েছে অলঙ্কার।
   নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
   যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।

   নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
   জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে!
   জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান,
   মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান্‌।
   কোন্‌ রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,
   কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।
   কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি’ কত বোন দিল সেবা,
   বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
   কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,
   প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।
   রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী,
   রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।

    পুরুষ হৃদয়-হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ।
ধরায় যাঁদের যশ ধরে না’ক অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব,
খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা,-
লব-কুশে বনে ত্যজিয়াছে রাম, পালন ক’রেছে সীতা।
নারী সে শিখা’ল শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরা’ল কাজল বেদনার ঘন ছায়া।
অদ্ভুতরূপে পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে ক’রে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ!
    তিনি নর-অবতার-
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি’ কুঠার।
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর-
নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।
    সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী!
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও , উঠিছে ডঙ্কা বাজি’।
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!
     যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।

    শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্‌ সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায় মল,
মাথার ঘোম্‌টা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও-শিকল!
যে ঘোমটা তোমা’ করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ,
দূর ক’রে দাও দাসীর চিহ্ন, যেথা যত আভরণ!

        ধরার দুলালী মেয়ে,
ফির না তো আর গিরিদরীবনে পাখী-সনে গান গেয়ে।
কখন আসিল ‘প্নুটো’ যমরাজা নিশীথ-পাখায় উড়ে,
ধরিয়া তোমায় পুরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই হ’তে আছ মরি’
মরণের পুরে; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী।
ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মতো আয় মা পাতাল ফুঁড়ি’!
আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি!
পুরুষ-যমের  ক্ষুধার কুকুর মুক্ত ও পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে ও চরণ-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদনি শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে।
   সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!