Wednesday, October 15, 2014

স্মৃতির মিনার রক্ষায় ১৪ কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো ! -সুমি খান

 কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের ভাষায় বলি, স্মৃতির মিনার ভেঙ্গেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু ? খাড়া রয়েছি তো আট কোটি পরিবার! বায়ান্ন একাত্তরের কুলাঙ্গারদের ঠেকাতে সেই আটকোটি পরিবার এখন ১৪ কোটি পরিবার। একাত্তরের শকুনদের নিয়ত ব্যবচ্ছেদের পর ও বাংলা মায়ের সন্তান এই ১৪ কোটি পরিবার জেগে আছে ! কুলাঙ্গার জারজদের প্রতিরোধ করবে তারা প্রাণ দিয়ে। আর তাই শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় চেতনার অগ্নিমশাল জ্বেলে জেগে আছে যারা তাদের অভিবাদন।
শুভবুদ্ধির উদয় যে মাঝে মাঝে হয়, এটা তারই প্রমাণ । পিয়াস করিমের লাশ আর শহীদমিনারে নিলো না তার পরিবার। তবে বনানীতে শেষ স্থান হলো এই রাজাকারপুত্র এবং রাজাকার ত্রাতার! কী দুর্ভাগ্য আমাদের!  এই লেখাটি ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে লিখেছি। মনের ভার হাল্কা করা আর চেতনা শানিত করার ধারাবাহিকতায়।
 এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির এ রাষ্ট্রকাঠামোর বিরুদ্ধে যে আধাঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে, সেটাকে তার প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা যখন এমনকি শহীদ মিনারও পুড়িয়ে দিয়েছে সেটাকেও সমর্থন করে গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক  উপাচার্য (ভিসি) ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শহীদ মিনার প্রতিবাদের প্রতীক। পিয়াস করিমের মতো ব্যক্তির লাশ যদি শহীদ মিনারে রাখতে না দেওয়া হয় তবে শহীদ মিনারের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।  হাস্যকর বটে! শহীদ মিনারের ইতিহাস যারা জানে, যারা শ্রদ্ধা করে , তাদের আগ্রহ চিরঞ্জীব । যাদের শুধু রাজনীতি করার জন্যে শহীদ মিনারকে দরকার, তাদের আগ্রহ কমাই মঙ্গল!

 বাংলানিউজে চ্যানেল আইয়ের বার্তাসম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ জুয়েল লিখেছেন, একাত্তরে কামানের গোলা দিয়ে শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়া, হত্যা-গণহত্যা-ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ আর ওই অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নাশকতা এবং টেলিভিশনের পর্দায় বক্তৃতা একই চেতনা থেকে উৎসারিত।এখন সেই অপচেতনার মানুষকে কেনো শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে হবে?পিয়াস করিমকে শহীদ মিনারে নেওয়া হবে.তখনি প্রতিবাদ শুরু হলো।ঘোষণার উদ্দেশ্যই ছিলো গোলমাল পাকানো। এবং সেই উত্তেজনাটা তারা এরইমধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এর মধ্যে সরকার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়ানোর একটা চেষ্টাও হচ্ছে। সরকারকে জড়ানোর চেষ্টার কারণ, সরকারের জন্য বিব্রতকর এবং বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এর মধ্যে টেনে আনার কারণ যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় সেই চেতনার উত্তরাধিকার যে চেতনার পথ ধরে শহীদ মিনার আর যে চেতনার বিরোধী পিয়াস করিম।
  জুয়েল ভাইয়ের সাথে আমি শতভাগ একমত। আমারো প্রশ্ন , কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা সৃজনশীল  কিছু কি তার ছিল? শুধুই টক-শো করে আলোচিত পিয়াস করিমকে টক-শো করা অন্যদের কেউ কেউ এখন এমন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, যেনো তার নাম বলতে হবে পিয়াসটটল কিংবা পিয়াসটিস-চমৎকার লিখেছেন জাহিদ নেওয়াজ জুয়েল। জামাতপন্থীরা  নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই বিষয়টাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছুর মূলে কিন্তু গর্ত থেকে জামায়াতকে বের করে আনার ফন্দিফিকির,যেটা জীবনের শেষ পাঁচ বছর ভালোভাবেই করে গেছেন পিয়াস করিম।
এ দেশের সাধারণ মানুষের একজন আমি সুমি খান  খুনপিয়াসী জামাতের মুখপাত্র পিয়াস করিমদের মিথ্যাচারের স্বাধীনতা ঠেকাতেই লড়াই করি উত্তরাধিকার সূত্রে। কারণ আমার ধমণীতে শহীদের রক্ত। এ রক্ত কোনদিনো পরাভব মানে নি, কখনো মানবে ও না।একই সাথে জামাতের নব্য দোসর বামদলের একাংশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের অবস্থান তুলে ধরতেই আমার এ লেখার অবতারণা।
এদেশে বামদল শতধা বিভক্ত। তবে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের লাশ নিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় আবারো প্রমাণ হলো মুক্তিযুদ্ধের বেসাতিতে জামায়াত বিএনপির সাথে বামদল গুলোর একটি অংশ চেতনাগতভাবে সম্পৃক্ত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাষ্ট্রক্ষমতায় যে সরকার তাদের জবাবদিহিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আমারো। কিন্তু তাই বলে সরকার বিরোধিতার নামে যুদ্ধাপরাধী শক্তির সাথে  একাত্মতা ?? এই চিত্র সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অন্ধকারের শক্তির কালোটাকার স্রোতে ভেসে যাওয়ায় তারা নির্লজ্জ।
ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সাবেক নেতা তৌহিদ টিপু লিখেছেন. পিয়াস করিমের লেখা ও বক্তব্যের সাথে আমি চূড়ান্তভাবে ভিন্নমত পোষণ করি। কিন্তু আমি তাঁর লাশটিকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য শহীদ মিনারে জায়গা দিতে চাই। সসম্মানে। যদি তাঁর সেটিই ইচ্ছা হয়ে থাকে। কারণ আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই আমি পিয়াস করিমদেরও বলার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। আমার শত্রুকে দেখার দৃষ্টি জামায়াত কিংবা হেফাজত কিংবা আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপির মতো না। আমার শিক্ষায় এটাই কমিউনিজম।  কমিউনিজমের কী হাস্যকর আর বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা!!এরা কোন রাজনীতির ধারক? যারা নিজেদের আত্মপরিচয় রক্ষা করতেই চরম ভাবে ব্যর্থ!
 
এ প্রসঙ্গে অতিবামদের গুরু ফরহাদ মজহারের একটি উক্তি উল্লেখ করতে হয়।ফরহাদ মজহার তার মোকাবেলা বইয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশে  কমিউনিজমের ব্যর্থতার কারণ তথাকথিত বামপন্থীরা, যারা এখনো বুঝেন না মার্কসবাদের অ, আ, ক, খ.... যারা মার্কসবাদ ও কমিউনিজমের মুখোশ পড়ে পুঁজির পাহাড় গড়ে তুলছেন সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দিয়ে...!! মেহনতী মানুষের ঘাম আর শ্রমের সাথে একাত্ম হয়ে কার্ল মার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এবং মহামতি লেনিন যে মহান মতাদর্শের প্রবর্তন করেছিলেন। লেনিন তাঁর জীবদ্দশাতেই  কমিউনিষ্টদের হঠকারী এবং স্ববিরোধী ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে গেছেন। সেসব পরবর্তীতে লিখবার ইচ্ছে রইলো। তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, বাংলাদেশে তার ঝান্ডাবাহীরা হঠকারী ভূমিকা পালন করছেন। এদের হঠকারী ভূমিকা কয়েকটি প্রজন্মকে কলুষিত করছে। এর পরিণতি নি:সন্দেহে ভয়াবহ্ এবং দুর্ভাগ্যজনক।

এসব কোনভাবেই  আমার একার কথা নয়। সাধারণ মানুষের সাথে মিশলে কমিউনিষ্ট নেতারা নিজেদের এ হতাশাজনক চিত্র অনুধাবন করতে পারতেন। তাদের জনবিচ্ছিন্নতার আরেকটি প্রমাণ , নিজেদের বাস্তবতা সম্পর্কে তারা অন্ধকারেই আছেন। শুধুমাত্র যাদুর বাক্স আর চাটুকার ঘিরে থাকলে যা হয়। ছাত্রইউনিয়নের ছাত্রনেতারা ফেসবুকে যেসব কথা পোস্ট করেন- এতে প্রকাশ হয়, দেশের পরবর্তী প্রজন্মের একটি অংশ (ক্ষুদ্র হলেও মেধাবী অংশ) সরকার বিরোধিতার নামে নিজেদের অজান্তে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সাথে একাত্ম হচ্ছে। তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত এবং লক্ষ লক্ষ নির্যাতিতের বেদনা আর লাঞ্ছনায় গড়া এই দুর্ভাগা দেশটির জন্যে নি:সন্দেহে  তা অশনি সংকেত।
 যাকে গুরু বলে এই প্রজন্মের সাংবাদিকেরা মানেন,মেধাবী কৃতি সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন আমাদের প্রজন্মকে।আর তাই  আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় আভূমি নত হই। একটি পোস্টে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে  জাফর ওয়াজেদ লিখেছেন, "আমাদের বুদ্ধিজীবিদের দায়িত্ব ছিল,স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের জীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো যে গণতান্ত্রিক,প্রগতিশীল ও সর্বাংশে গণমুখী সরকার গঠিত হয়েছিল তার বাণী,তার তাৎপর্যবাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছেঁ দেওযা। সে দায়িত্ব পালনে তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যে কোন কারণেই হোক, শিক্ষিত সুবিধাবাদী শ্রেণীর একাংশ, বিশেষতঃ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবি মহলের একটি বড়ো অংশ ১৯৭২এর শেষভাগ থেকে শুরু করে সাধ্যমত বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিষোদগার করেছেন।একটা সদ্য স্বাধীন দেশের বুদ্ধিজীবিদের পক্ষে এমন আচরণ স্বাধীনতার পিঠে ছুরিকাঘাতের মতোই নিকৃষ্ট কাজ।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পরেও আমাদের দেশের ব্যাপক সংখ্যক সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিরা বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতির তাৎপর্য ও বাংলাদেশের বিকাশের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পদ্ধতির তাৎপর্য অনুধাবন করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না।"
 এ প্রসঙ্গে একটি ইতিহাস উল্লেখ করা প্রয়োজন।১৯৭৪ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী লন্ডনে প্রথম থাকতে গিয়ে সেই সময় দেশের প্রথম সারির চারজনের অন্যতম কৃতি চাটার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট ওসমান কায়সার চৌধুরীর  বাসায় ছিলেন। সম্পর্কে তিনি আমার মামা । দেশের বুদ্ধিজীবি এবং সাংবাদিকদের হঠকারীতায় মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির তান্ডব এবং ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে মামা  আমাকে সেই সময়ের একটি গল্প বললেন। গাফফার চৌধুরী ১৯৭৫ সালের শুরুর দিকে কোন এক সময়ে খবর পেলেন  সালভাদর আলেন্দের স্ত্রী হোর্তেনসিয়া বুসি কোলকাতায় যাচ্ছেন। সাথে সাথে কোলকাতা গেলেন তিনি। আলেন্দের স্ত্রী গাফফার চৌধুরীকে বললেন,‍‍ ‍‍ দ্যাখো, তোমাদের দেশের যে অবস্থা আমি বাইরে থেকে দেখতে পাচ্ছি, সব আমাদের দেশের চিত্রের পুনরাবৃত্তি।মুজিব এবং তার পরিবার নিয়ে এই যে প্রোপাগান্ডা  সবই সিআইএর কাজ। তোমরা সাবধান হো , মুজিবকে হত্যা করা হবে।  মায়ের কাছে শুনেছি, এর আগেই বঙ্গবন্ধুকে হুমকি দেয়া হয়েছিলো, তোমাকে আলেন্দের মতো করে হত্যা করা হবে।‍ যা বলছিলাম, আবদুল গাফফার চৌধুরী নাকি আলেন্দের স্ত্রী হোর্তেনসিয়া বুসির এ  আশঙ্কার কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, মাদাম, আপনি জানেন না, বঙ্গবন্ধু হেঁটে গেলে বুলেট ও থমকে যায়। বাংলাদেশের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধুকে খুন করার সাহস কেউ  করবে না। ১৫ই আগষ্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর আবদুল গাফফার চৌধুরী নাকি এ গল্প ওসমান কায়সার চৌধুরীকে বলেছিলেন। সেক্টর কমান্ডার ও যখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে মিথ্যাচার করে, সেই লেখা গণমাধ্যম গুরুত্বের সাথে প্রচার করে , মামা উদ্বেগের সাথে আমাকে এই ইতিহাস বললেন। মামার আশংকার সত্যতা দৃশ্যমান।
 
বর্তমান প্রেক্ষিতে  আবার বলতে হয়,পিয়াস করিম একজন শিক্ষক মাত্র। তার রাজনীতি তার দুর্মর স্বভাবের কথা একপাশে সরিয়ে দেখলেও তাকে কি এমন কিছু ভাবা যায়- যার লাশ শহীদ মিনারে নিতে হবে ? কোন্ যুক্তিতে ?কেন?
 এবার আসা যাক শহীদ মিনার প্রশ্নে। শহীদ মিনার বাঙ্গালীর আত্মপরিচয়ের ভিত। সেই ভিত যাদের কারণে বারবার হুমকির মুখে , যারা বারবার শহীদ মিনার ভেঙ্গে দিয়েছে, যারা বায়ান্ন একাত্তরের আত্মদানকে চরম অশ্রদ্ধার চোখে দেখে এসেছে-সেই কুলাঙ্গারদের শহীদ মিনারে যেতে হবে কেন? তাদের ঠেকাতেই ১৪ কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো !
 
বুধবার রাতে একটি টকশোতে দেখলাম  ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু বললেন, পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে না নেবার জন্যে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দাবি জানিয়েছেন ।  এ কথা বলার সাথে সাথে পিয়াস করিমের সহচর তথাকথিত বুদ্ধিজীবি সুশীলদের একজন ডা, জাফরুল্লাহ বললেন, তাহলে তো বুঝতে পারছি , পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নেবার অনুমতি না দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই নোংরা খেলা খেলছেন ।"  রুহুল কবির রিজভী বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নাকি ছাত্রসমাজকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে ! রুহীন হোসেন প্রিন্স বললেন, নীতিহীন রাজনৈতিক দল গুলো লাশ নিয়ে রাজনীতি করছেন। পিয়াস করিম মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজাকার ছিলেন না। দেশটা কোথায় চলে যাচ্ছে বলে খুব আফসোস করলেন! প্রিন্স ভাই এবং ডা. জাফরুল্লাহর সাথে রিজভীর কথা একই সুতোয় গাঁথা এবং খুবই হাস্যকর ।
 
রুহীন হোসেন প্রিন্স আমাদের নেতা ছিলেন একসময়। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি,  রুহীন হোসেন প্রিন্স ভাই, নিজের দিকে তাকাবেন?নিজেরা কোথায় নামছেন খেয়াল করেছেন? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনার ইস্যুতে পিয়াস করিম ইস্যু নয়?  এটা যদি মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে রাজনীতি হয়, কারা করছে ? সেটাই যদি না বুঝতে পারেন , আপনার রাজনৈতিক দূরদর্শীতা সত্যি্ই সন্দেহ জাগায়। পিয়াস করিম বরাবরই মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে চরম অবমাননামূলক কথা বলে গেছেন।  তার অবস্থান নিয়ে কোন আপত্তি নেই আপনাদের? ডা.জাফরুল্লাহ হতাশা প্রকাশ করলেন গণজাগরণ মঞ্চকে সঠিক পথ দেখানো উচিত ছিল বলে।গণজাগরণ মঞ্চকে ডা.জাফরুল্লাহ দেখাবেন সঠিক পথ? যিনি বরাবরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে এসেছেন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হযে ক্ষমাও চাইতে বাধ্য হয়েছেন। আরেকটি টকশোতে উপস্থাপক আফসোস করলেন    আজকাল নাকি মানুষের সহনশীলতার খুব  অভাব। চরমপন্থী অতিবাম এই উপস্থাপক ভুলে গেছেন, হাওয়া ভবনের আশীর্বাদে তাদের মতো যারা চোখের পলকে  সাধারণ এক ছা-পোষা সংবাদকর্মী থেকে মিলিয়নীয়ারে পরিণত হয়েছেন, মানুষের সহনশীলতা আছে বলেই তাদের সেই যাদুর বাক্স থেকে এখনো টেনে নামানো হচ্ছে না। এই উপস্থাপক  এবং প্রিন্স বাম রাজনীতির পরস্পর বিরোধী শক্তির ধারক হলেও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রশ্নে এই উপস্থাপক এবং রুহিন হোসেন প্রিন্স পরাজিত শক্তি!
‍‍একাত্তরের চেতনা পরাজিত হয়নি হবে না-যতোক্ষণ চেতনার অগ্নিমশাল উজ্জ্বল থাকবে- মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে আপোষ নেই - সত্যি বলেছেন বাপ্পাদিত্য বসু।
 বাংলানিউজে চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ জুয়েলের অসাধারণ  লেখনিটি পড়লাম আজ ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, চেতনা আর ন্যায়ের প্রশ্নে  আমাদের কী ভূমিকা আমাদের হওয়া উচিত। নৈতিকতা এবঙ চেতনার বিকাশে এই লেখার ব্যাপক প্রচার জরুরী।  অভিবাদন জুয়েল ভাইকে। তার লেখার কিছু উদ্ধৃতি এ লেখার শুরুতে দিয়েছি। আরো কিছু তুলে ধরছি।
৮৬ বছর বয়সী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে যে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ড. পিয়াস করিমের বাবা অ্যাডভোকেট এম এ করিম তুলে দিয়েছিলেন, সে কারণে নিশ্চয়ই তখনকার কিশোর পিয়াস করিমকে দায়ী করা যায় না।
একাত্তরের এপ্রিলে ৮৬ বছর বয়সী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই যে তার দু'
হাত এবং পরে হাঁটু ভেঙ্গে দেওয়া হলো
, সেজন্য নিশ্চয়ই পিয়াস করিমকে দোষী করা যায় না। তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিতে সমস্যা কোথায়?

চেতনাগত এবং দর্শনগত জায়গায়। নানা মতাদর্শের পথ মাড়িয়ে পিয়াস করিম শেষ পর্যন্ত যে দর্শন ফেরি করে গেছেন সেটা ওই শহীদ মিনারের মতাদর্শের পরিপন্থী।


নানা ঘাটের জল খেলেও পিয়াস করিম তার বয়সের বিবেচনায় অপূর্ণ জীবনের শেষদিকে এসে তার প্রয়াত পিতার মতোই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিরোধিতা করে গেছেন। পাকিস্তানি মতাদর্শের ভিত্তিমূলে আঘাত করার কারণে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত  পিয়াসের পিতা এম করিমের শত্রু হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন সেই পাকিস্তানি আদর্শকেই বুকে ধারণ করেছেন পিয়াস করিম।এখন পাকিস্তানি মতাদর্শকে লালন করা পিয়াস করিমের শেষ শ্রদ্ধার জায়গা কিভাবে হতে পারে শহীদ মিনার?তবে পিয়াস করিমের মরদেহ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলে ফুলে ঢেকে দেওয়ার আয়োজনের বিরোধিতাকে কোনো কোনো সুশীল পরমতসহিষ্ণুতার অভাব বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা কি পরমতসহিষ্ণুতার অভাব? নাকি চেতনাগত অবস্থান? পরমত ছিলো সেটা যেটা তিনি দিনের পর দিন টেলিভিশনে বলে গেছেন।

 সেখানে বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু তার কণ্ঠ কি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে? না। তাই তার মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার বিরোধিতাকে যারা পরমতসহিষ্ণুতার অভাব বলার চেষ্টা করছেন, হয় তারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অথবা এটা তাদের ইচ্ছা করে এক শয়তানি।

আসলে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণার মধ্যেই একটা শয়তানি আছে। যেটা তিনি শুরু করেছিলেন শাহবাগে গণজাগরণের পর। এবং তখনই প্রমাণ হয় যে, তিনি তার প্রয়াত পিতার শুধু রক্তেরই না; চেতনারও উত্তরাধিকার।সেই চেতনা হচ্ছে শহীদ মিনারের বিরুদ্ধে, সেই চেতনা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। তা হলে তাকে কেনো শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা?

সেটা আসলে এজন্য যে গণজাগরণের পর মিথ্যা প্রচারে যেভাবে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, হেফাজতকে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার পথ করে দেওয়া হয়েছে; এখন একইভাবে তাকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। তাকে শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা যে বাধা দেখবে, এটা জেনেই এর উদ্যোক্তারা এরকম একটা ঘোষণা দিয়েছেন।

 
 ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে ব্যালেন্স করার নামে গণমাধ্যমে  রাজাকার পুনর্বাসন নীতি নিয়ে। নাহিদ এনাম  তার পোস্টে লিখেছেন ,যতদিন এদেশের টিভি চ্যানেলগুলো রাজাকার আর ধর্ম ইস্যু নিয়ে টক শো বন্ধ না করবে ততদিন এরা সরাসরি বাংলাদেশের সমাজ শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত এরা অনুষ্ঠান জমিয়ে তোলার তাগিদে রাজাকার সমর্থক এবং ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দ্বারা সমাজের সাধারন মানুষের মনের ভেতর বিষ ছড়িয়ে দিতে সবথেকে বেশি ভয়ংকর ভুমিকা রাখছে।
নাজমুল আহসান রাসেল ফেসবুকে  লিখেছেন পিয়াস করিমরা যাদের পক্ষে বলে গেছেন তাদের বলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে  আমরা লড়াই করি । সক্ষম হলে শক্তি হলে ওদের টুটি টিপে ধরা হবে  হাবিব উল্লাহ লিখেছেন পিয়াস করিম পারিবারিক ভাবেই স্বাধিনতা বিরোধী বলয়ে বড় হয়েছেন। বাবা এমএ করিম ও নানা জহিরুল হক (লিল মিয়া) ছিল কুমিল্লায় শান্তি কমিটির নেতা। দালালি গুরুতর পর্যায়ে যাওয়ায় একাত্তর সালে লিল মিয়া এবং এমএ করিমের বাসায় গ্রেনেড হামলা করে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের পর এমএ করিমকে দালালির অপরাধে দালাল আইনে গ্রেফতার করা হয় এবং অনেকদিন সে কুমিল্লা কারাগারে বন্দী থাকে। এসময় ধূর্ত পিয়াস করিম তার বাবাকে বাঁচাতে ছাত্রলীগে যোগ দেয়। পরবর্তিতে যোগ দেয় বাম রাজনীতিতে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর একসময় তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন। মুলত আনু মোহাম্মদের এই তেল-গ্যাস কমিটির ছায়াতলেই টকশো করার সুযোগ পান। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন চ্যানেলের টকশোর পরিচিত মূখ হয়ে ওঠেন, পরে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কথা ভুলেগিয়ে বিএনপি-জামাত তোষন শুরু করেন।তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কি ভন্ডের দলে পরিণত হয়ে গেছে...।। তাই এই লেখা লিখলেন...। নাজমুল আহসান লিখেছেন , ভিন্নমত নিয়ে , মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে দুই দিন ধরে বেশআলাপ হচ্ছে এবং সেটা হচ্ছে পিয়াস করিমকে ঘিরে। নির্দিষ্ট ভাবে যদি বলি এই ক্ষেত্রে একটা মহল বেশ চতুরটার সাথে এই দুইটা শব্দ পিয়াস করিমকে নিয়ে আলোচনার শুরুতেই ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে । যারা ঢুকিয়েছে তারা কিছুটা সফল । যারা ঢুকিয়েছে তাদের সাথে পিয়াস করিমের ব্যাক্তিগত সম্পর্ক যেমনি রয়েছে তেমনি রাজনৈতিক দুই একটি এজেন্ডায়ও মিল রয়েছে । একটু খেয়েল করলেই এরা কারা বুঝতে পারবে । পিয়াস করিমের মত বন্ধুকে হারানোর বেদনা , সম্মান প্রকাশ করার জন্যে এই মুহূর্তে পিয়াস করিম এই দুইটি শব্দই রেখে গেছে স্বভাবতই আমাদের এই দুইটা শব্দের প্রতি দুর্বলতা থাকাটাই স্বাভাবিক । কিন্তু আমি প্রশ্ন রাখতে চাই ,জামাত ইসলামী ৭১'র বিরোধিতা করছিলো তার আদর্শের জায়গা থেকে , এখনও সেইটার জন্য তারা ফাইট দিচ্ছে । আপনারা কি এইটাকে ভিন্নমত হিসেবে কিছুটা মার্জনার চোখে দেখবেন ? বা যারা আজ পিয়াস করিমের বক্তব্যকে ভিন্নমত , মতের স্বাধীনতা বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে তারা একটু পরিষ্কার করবে পিয়াস করিমের কোন বক্তব্যগুলিকে ভিন্নমত হিসেবে সম্মান দেখাচ্ছেন ? খালি দুইটা শব্দ বলে দিলেইতো হলনা । টিপুর কাছে প্রশ্ন সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার ইতিহাস এই ভিন্নমত চর্চার ক্ষেত্রে কি সাক্ষ্য দেয় ? কী শিক্ষা দেয় ? আমার ব্যাক্তিগত মত হল, ভিন্নমত হবে বটম লাইন ধরে , বটম লাইন মিস করে যে কোন চক্রান্তমূলক , ষড়যন্ত্র মূলক , স্বাধীনতা বিরোধী , শত্রুর হয়ে দালালী ..................... শক্ত হাতে দমন করতে হবে । এখানে ভাবাবেগের কোন জায়গা নাই । আরেকটা বিষয় আমাকে রীতিমত বিনোদন দিচ্ছে সেটা হল বস্তুবাদীদেরও বলতে শুনছি মৃত্যুর পর মানুষ সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে যায় ... প্রশ্ন ... পিয়াস করিম কি মরে গিয়েও সব কিছুর উর্ধ্বে উঠতে পারছেন ? মাহাফুজুল্লাহরাও এখন লাশ নিয়ে হুংকার দিচ্ছেন । আমার একটা জিনিস খটকা লাগছে হেফাজতের সমর্থকদের আবার শহীদ মিনারে যাওয়ার ইচ্ছা হয় কিভাবে ? এইখানে কোন রাজনীতি নাইতো ?  আমাদের সমস্যা হল আমারা কোন না কোন ভাবে দ্বিদলীয় ফাঁদে পাড়া দিবই । পিয়াস করিম নিজেই নিজেকে শহীদ মিনারের অযোগ্য অপ্রাসাংগিক করে গেছে , এই দায় দায়িত্ব তার । শেষে আরেকটা কথা বলে যাই পিয়াস করিম যদি সত্যি সত্যি তার মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে নেয়ার ইচ্ছার কথা বলে যান তাহলে আরও বেশী করে তার বক্তব্যগুলি যে ভিন্নমত ছিলোনা কমপ্লিটলি ইন্টেনশনালি ব্যাক্তি স্বার্থে , ক্ষমতা , লোভ ,যশ এর স্বার্থে বলছেন সেটাই প্রমানিত হয় । আসলে আমরা অতিমাত্রায় শান্তিপূর্ণ পথে আগাচ্ছিতো তাই একটু ভাবাবেগে পেয়ে বসে । আমাদের মনটা অনেক নরম হয়ে গেছে । কমিউনিজম এই ব্যাপারে কি বলে টিপু ?  
 
নাজমুল হাসানের  এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রত্যেকেরই ।

 চোখে কলুর বলদের যে ঠুলি রুহিস হোসেন  প্রিন্স পরেছেন বা তরুণদের পরাচ্ছেন এর পরিণতি ভয়াবহ।

এই দেশকে যারা বরাবরই  মৃত্যুউপত্যকায় পরিণত করতে চেয়েছে,


সেই অন্ধকারের শক্তির সাথে হাত মিলিয়েছেন আপনারা গুটিকয়েক ব্যক্তি বা দল।

 এর দায় আপনাদেরই বইতে হবে। তবে মনে রাখবেন, সেই পরিণতি ঠেকাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষ একাত্ম। 

 শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে ১৪ কোটি মানুষের স্মৃতির মিনার আমার অস্তিত্বের প্রতীক আমার চেতনার অগ্নিমশাল শহীদমিনার  খুনি, ধর্ষক রাজাকারের তালুক হতে দেবোনা কখনো!  এ ব্যাপারে গণমাধ্যম নিশ্চয়ই তাদের ভূমিকা অনেক জবাবদিহিমূলক করবে।

 
sumikhan29bdj@gmail.com



No comments:

Post a Comment