Wednesday, September 10, 2014

জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন- সুমি খান (বাগমারা থেকে ফিরে)

Arup Biswas Posted in Facebook

জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন ১ -সুমি খান (বাগমারা থেকে ফিরে) ॥
এবার গ্রেনেড হামলা
০ মহিলা জঙ্গীরা বোরকার ভেতরে বহন করবে গ্রেনেড
০ জেলখানার অনেক বিডিআর সদস্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে বলে তাদের দাবি
০ প্রথম সফলতা হিসেবে দাবি করছে ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাই

সরেজমিন তদন্তের ভিত্তিতে বাস্তবোচিত রিপোর্ট তৈরীতে সুমি খানের এই রিপোর্টটার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের চলমান ঘটনা প্রবাহের আলোকে সাংবাদিক সুমি খানের উপস্থাপিত তথ্য গুলো যেন মিলে যায় অনেকটাই। সিরিজ ইনভেষ্টিগেটিভ রিপোর্টটি চার পর্বে ছাপা হয়েছে দৈনিক জনকন্ঠে বৃহষ্পতিবার ২৮ আগষ্ট ২০১৪ থেকে। আজ ছাপা হয়েছে শেষ পর্ব । পুরো রিপোর্টে সুমি খান তার পর্যবেক্ষন এবং জে এম বি সংশ্লিষ্টদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপ চারিতার ভিত্তিতে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন যার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে গত ক'দিনে ঢাকা শহরে ঘটে যাওয়া পর পর দুটি হত্যাকান্ড তেমন ঈঙ্গিতই দেয় ।  বড় পরিসরের রিপোর্টটি কারো কারো বিরক্তির কারন হবে জেনেও সবটা এক সঙ্গে পোষ্ট করছি।
=========================================================
বৃহস্পতিবার, ২৮ আগষ্ট ২০১৪, ১৩ ভাদ্র ১৪২১
জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন ১ ॥ এবার গ্রেনেড হামলা
০ মহিলা জঙ্গীরা বোরকার ভেতরে বহন করবে গ্রেনেড
০ জেলখানার অনেক বিডিআর সদস্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে বলে তাদের দাবি
০ প্রথম সফলতা হিসেবে দাবি করছে ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাই
সুমি খান (বাগমারা থেকে ফিরে) ॥ ২০০৪ সালে জেএমবি এবং বাংলা ভাইয়ের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসে রাজশাহীর যে জনপদ প্রায় জনশূন্য হতে বসেছিল দশ বছর পর সেই জনপদ আবার আতঙ্কের অন্ধকার ভেদ করে আগের মতোই শান্ত-সুন্দর একটি গ্রাম। অন্যদিকে প্রশাসনের দাবি, তাদের নজরদারি এড়াতে জঙ্গীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায়। তবে বাংলা ভাইয়ের বর্বর নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হয়েছিল যারা তাদের স্বজনদের এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলো। আর কখনও কোন মায়ের বুক যেন খালি না হয় এমনই প্রত্যাশা নির্যাতিতদের। অন্যদিকে জেএমবির দাবি-তারা আবারও সংগঠিত এবং শক্তিশালী। যে কোন সময় বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে তারা প্রস্তুত।
বাগমারার খোদেজা বেগম অশীতিপর বৃদ্ধা। এখনও দু’চোখ তার জলে ভেসে যায়। কেন তার নিরীহ সন্তানকে এভাবে হত্যা করা হলো, সেই প্রশ্œ তাড়িয়ে ফেরে। এই প্রতিবেদকের কাছে বললেন সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাস। ইয়াকুব প্রামাণিক এবং খোদেজা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র মুকুল প্রামাণিক। ২৫ বছরের তরুণ। মুরগির খামারের ব্যবসা করত। হঠাৎ তাকে খামার থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাথা নিচে দিয়ে পা দুটো গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে বর্বর নির্যাতন করে বাংলা ভাই এবং তার সহযোগীরা। মুকুলের মা শুনলেন তার ছেলেকে ‘সর্বহারা’ নিধনের নামে ধরে নেয়া হয়েছে। মাইকে শোনানো হলো মুকুলের গগনবিদারী আর্তনাদ। সেই আর্তনাদ এখনও তাড়া করে ফেরে খোদেজা বেগমকে। এলাকায় কোন ভীতি নেই। জেএমবির কোন তৎপরতাও নেই। তবু সেই মৃত্যুভীতি তাড়া করে ফেরে এখনও তাকে। বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হলেও এখনও কেন যেন ভয় কাটেনি খোদেজা বেগমের। বার বার শিউরে ওঠেন, আবার যদি বাংলা ভাইয়ের আর কোন সহযোগী পরিবারের অন্যদের ওপর ও রকম হামলা করে?
এই প্রতিবেদককে খোদেজা বেগম বললেন, “এলাকার অনেক মানুষকে বাংলা ভাই খুন করেছে। আমাদের কোনপাড়া বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় মুকুলকে। হামিরকুর্শে জেএমবির ক্যাম্প ছিল। সেই ক্যাম্পে রাত ৮টা পর্যন্ত মিটিং করেছে জেএমবির জঙ্গীরা। এর পর মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমার ছেলেকে যেভাবে পিটিয়েছে, চোরকেও কেউ এমন করে পেটায় না। মাথা নিচে পা উপরে বেঁধে ঝুলিয়ে এত মেরেছে যে মুকুলের ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে গেছে। হাসপাতালে নেবার পর ডাক্তার বলে, ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে গেছে, তাকে আর বাঁচানো যাবে না। আমার ছেলেকে এমন করে খুন করল যারা তাদের বিচার আল্লাহই করবে। বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে যারা মাইকে ঘোষণা দিয়েছিল তারা এখনও এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। আমার তাই ভয় কাটে না। এরা আবার কোন আক্রমণ করবে না কে বলে?”
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, জেএমবির কোন আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে না। তাদের নজরদারি এড়িয়ে কোন জঙ্গী ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয়। প্রতিসপ্তাহে পুলিশের রিপোর্ট যাচ্ছে এলাকায়, কোন জেএমবি নেই। কোথাও তাদের তৎপরতা সন্দেহজনক মনে হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। জেএমবির সর্বশেষ দুটি মামলা বিচারাধীন ছিল, ২০১৩ সালে সেই দুটি মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানালেন রাজশাহীর এসপি।
জেএমবি এখন অনেক সংগঠিত এমন দাবি করছে জেএমবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সংগঠক। জেএমবির গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।
এই জঙ্গী সংগঠক বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি একটা হরতাল ডাকার জন্য। হরতাল ডাকলেই আমরা মাঠে নামব। হরতাল হলেই গ্রেনেড আক্রমণ হবে। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে প্রচুর শক্তিশালী অস্ত্র আছে। তবে তুলনামূলকভাবে গ্রেনেড আমাদের জন্য সুবিধাজনক । আমাদের মেয়েদের বোরকার ভেতরে করে গ্রেনেড নিলে অনেকটা নিরাপদেই অপারেশন সফল করা সম্ভব হয়।
এই মুহূর্তে কয়েক হাজার নারী সদস্য কাজ করছে বলে দাবি করলেন জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদীন বা জেএমবির এই সংগঠক। তিনি বলেন, তাদের এহসারদের স্ত্রীদেরও ‘দাওয়াতী’ হতে হয়। ‘দাওয়াতী’রা নির্দ্বিধায় দলের নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকে।
এই মুহূর্তে গায়েরী এহসারের সংখ্যা অনেক। এহসারও আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানালেন জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এই সংগঠক। প্রতিটি বিভাগে ১০ জন করে গায়েরী এহসার কাজ করছে।
নিয়মিত কোন মোবাইল ব্যবহার করে না জেএমবি শূরা সদস্য বা গায়েরী এহসাররা। পুলিশ বা গোয়েন্দা নজরদারি এড়াতে তারা প্রতিদিনই সিম পাল্টায়।
তিনি বলেন,গত দুই বছর থেকে আমরা নতুন কৌশল নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে বিডিআর জওয়ানরা যুক্ত হয়েছে কারাগারের ভেতর থেকেই। তাই আমরা এখন দক্ষ সংগঠক পেয়েছি। এই টিমের প্রথম সফলতা ত্রিশালে পুলিশভ্যান থেকে জঙ্গী ছিনতাইয়ের সফল অভিযান।
ত্রিশালে আমাদের ‘দাওয়াতী‘ বন্দীদের কারামুক্ত করে অপহরণ করার পরিকল্পনা কত সফলভাবে করেছি আমরা। এতে অন্তত রাষ্ট্র এবং সমাজের কাছে আমাদের শক্তি প্রমাণিত হলো । এই কাজে সফল হয়েছি। কারণ জেলখানার ভেতর বিডিআর- এর অনেক জওয়ান এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন আমাদের এহসার (জেএমবি) হয়ে গেছে। তারা খুব দক্ষতার সঙ্গে অপারেশন সফল করে দেয়। আগামীতেও আমরা এভাবে কিছু সফল অভিযান করব, নিশ্চিত।
নিকট ভবিষ্যতে আত্মঘাতী হামলার কোন পরিকল্পনা নেই বললেন জেএমবির এই নেতা।
২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা প্রসঙ্গে জেএমবির এই সংগঠক বলেন, ২১ আগস্টের অভিযান ব্যর্থ হওয়াতে হাসিনা বেঁচে গেলেন, আমাদেরও ফাঁসিয়ে দিলেন। তিনি সরকার গঠন করলেন । এই আশঙ্কা ছিল আমাদের । হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাদের প্রচ- চাপে রেখেছে। তবু আমরা অনেক সংগঠিত।
২০০৫ সালে এহসার ধরিয়ে দিলে ২ লাখ টাকা, আর ‘বাংলা ভাইকে ধরিয়ে দিলে ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা করে খালেদা জিয়া। এ কারণে তার বিরুদ্ধে জেএমবির এহসারদের ক্ষোভ রয়েছে বলে জানান এই জঙ্গী নেতা।
হাসিনার অনেক প্রোটেকশন, তাকে এখন হত্যা করা কঠিন। তবে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের টার্গেট। যাকে মারলে এই ‘তাগুতি সরকার’ প্রধান হাসিনাকে বিপদে ফেলা যাবে। বড় রকমের বিশৃঙ্খলা করা যাবে।
ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে তাদের ভাল যোগাযোগ রয়েছে। বিদেশী দাতা এবং দেশে জামায়াত-বিএনপির কিছু নেতা ও সংগঠনের কাছ থেকে নিয়মিত ডোনেশন পাচ্ছে জেএমবি। এই মুহূর্তে জেএমবির কোন ফান্ড সঙ্কট নেই বলে জানায় এই সংগঠক।
শুক্রবার, ২৯ আগষ্ট ২০১৪, ১৪ ভাদ্র ১৪২১
জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন ২ ॥ আগস্টেই বড় কিছু করার টার্গেট জেএমবির -
২০০১ থেকে ২০০৫ সময়ে বিএনপির প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত জনপদের নিরক্ষর এবং দরিদ্র-প্রান্তিক মানুষকে জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। জঙ্গী সংগঠন জেএমবির নীতি অনুযায়ী ধর্মের ব্যাখা বা হারাম-হালালের সংজ্ঞায় যা বলা হয়েছে তাই এই জঙ্গীদের কাছে ধ্রুব সত্য। স্পষ্ট উচ্চারণ তাদের-ওসামা বিন লাদেন তাদের দীক্ষাগুরু। তালেবানী শিক্ষাই তাদের শিক্ষা। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বা এই শাসন ব্যবস্থার রক্ষাকবচ বা প্রধান ভিত সেনাবাহিনী, বিজিবি বা পুলিশের দায়িত্বে যারা আছেন তারা সবাই ‘জাহান্নামে যাবে’ এমন অপপ্রচারে স্থিরবিশ্বাস জঙ্গীদের। আত্মগোপনে থাকা জেএমবির এক প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একান্ত সাক্ষাতকারের বিবরণ-
জনকণ্ঠ : জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হলেন কেন? কে কে ছিলেন আপনাদের সঙ্গে?
জেএমবি : সর্বহারাদের দমন করার জন্য আতিক ভাই, যারে ‘বাংলা ভাই’ নামে চিনেন সবাই-সেই আতিক ভাই-ই আমারে জামা’তুল মুজাহেদীনে যুক্ত করে। সেই সময়ে আতিক ভাই-ই বাগমারায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিএনপি সরকারের এক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আমাদের সঙ্গে। আরও প্রভাবশালী লোক ছিলেন আমাদের সঙ্গে। পুলিশের এসপি ছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। তিনি দাবি করেন- বিএনপির তৎকালীন এমপি নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, ব্যারিস্টার আমিনুল হক তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন, নির্দেশনা দিতেন। সর্বহারাদের দমন করাই আমাদের কাজ ছিল। ঐ যে বাদশা, যারে মাথা নিচে দিয়ে ঝুলিয়ে মারছে বাংলা ভাই। সেই বাদশা অনেক মানুষকে হত্যা করেছে।
জনকণ্ঠ : বাদশা অপরাধ করলে আইনী পথে বিচার হতো। আপনারা আইন হাতে তুলে নিলেন। তা কি সরকারের মন্ত্রীদের নির্দেশে? আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আপনারা নিরীহ মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছেন। সেটা আদালতে প্রমাণও হয়েছে। আপনাদের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, সাজাও কার্যকর হয়েছে। আপনাদের সদস্যসংখ্যা কত?
জেএমবি: অভিযোগ সত্য না। আমরা আল্লাহর নির্দেশ কায়েম করছি। বাগমারাতে সর্বহারাদেরই মেরেছি। আর জামা’তুল মুজাহেদীনের কয়েক হাজার সদস্য সারা দেশে আছে। সবাই তো সক্রিয় না, তাই সঠিক হিসেব করা মুশকিল। তবে একটা বড় কাম করতে বেশি লোকের দরকার হয় না। সরকার মনে করছে কয়জনই বা আছে এদের দলে? যখন মরবেন তখন সব বুঝবেন। যেমন মনে করেন, আপনাকে যদি একটা মশা কামড় দেয়-গোটা মাথা, গোটা শরীর যন্ত্রণা করে, তাই না? কাম করতে বেশি মানুষ লাগে না। কিছু বিডিআর সদস্য এক শ’ সেনাবাহিনীর অফিসারকে মেরে ফেলল।
জনকণ্ঠ : বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে কি আপনারা জড়িত ছিলেন?
জেএমবি : না, কোনভাবেই না। জামা’তুল মুজাহেদীনের লোক কখনও সরকারের কোন প্রহরী হবে না। গণতন্ত্রের প্রহরী হওয়া ‘হারাম’। যে পাহারা দেবে, আজকেও যারা পাহারা দিচ্ছে, তারা সব জাহান্নামে যাবে। হাসিনারে যে পাহারা দেবে, সেও জাহান্নামে যাবে। খালেদারে যে পাহারা দেবে, সেও জাহান্নামে যাবে। সেটা স্পষ্ট দলিলে লেখা আছে।
গণতন্ত্রের পক্ষে যারা থাকবে, যারা চাকরি করবে তারা জাহান্নামে যাবে। অত বেশি বুঝি না, তবে অল্প যেটা বুঝি, সেটা নিয়ে গবেষণা করেছি। সেই গবেষণায় বুঝি, একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে মারলে দেশে বিশৃঙ্খলা হবে। আমরা এখন সেটাই করতে চাই।
জনকণ্ঠ : রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মতো তাদের সন্তানদেরও কি টার্গেট করেছেন আপনারা ?
জেএমবি : না। সন্তানদের মারবার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে সেই সন্তানদের মধ্যে যে প্রভাবশালী-যাকে মারলে বড় রকমের বিপদে পড়বে হাসিনা সরকার, তাকে পেলে জামা’তুল মুজাহেদীন মেরে দিত। এমন দেশে সে আছে, যেখানে জামা’তুল মুজাহেদীদের আবির্ভাব কম। তবে ভারতে আমাদের অবস্থান খুব শক্ত। আমাদের ছেলেরা তাকে ভারতেও যদি পেত, ঠিক মেরে দিত।
জনকণ্ঠ : এতক্ষণ যাদের কথা বললেন, যারা আপনাদের সমর্থন দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে, তাদের নেতাদের হত্যা করবেন আপনারা?
জেএমবি : হাসিনাকে বিপদে ফেলার জন্য আমরা সব করতে পারি। গণতান্ত্রিক সরকার তাগুতি সরকার। এই সরকারের বিরুদ্ধে হামলা করতে হবে, এটা আল্লাহর নির্দেশ। দলিলে আছে।
জনকণ্ঠ: কোন্ দলিলে লেখা আছে এমন কথা? আপনি নিজে দেখেছেন?
জেএমবি: আমি পড়ালেখা জানি না। হাদিস-কোরান পড়ি নাই। অত বুঝি না; অল্পই বুঝি। তবে এটা জানি যে, আমি যা বলতেছি , সবই দলিলে লেখা আছে।
জনকণ্ঠ: কিন্তু ইসলাম তো শান্তির ধর্ম। সেই ধর্মের প্রকৃত বাণী না জেনে তার বিপরীত ক্জা করছেন আপনারা,সেটা জানেন আপনি? আপনি কি জানেন, আমাদের নবীজী খুব পরোপকারী ছিলেন? শান্তির জন্য, মানবতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে বলেছেন তিনি। নবীজীর চলার পথে যে বৃদ্ধা কাঁটা রাখত, একদিন সে অসুস্থ ছিল, কাঁটা দিতে পারে নাই। সেদিন তার বাড়ি খুঁজে নিয়ে নবীজী সেই বুড়িকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। বলেছিলেন, আবার আমার পথে কাঁটা দাও, তবু তুমি সুস্থ থাক-এই গল্প আমার শৈশবে পড়েছি। আপনি শুনেছেন এই গল্প?
জেএমবি: (এই প্রতিবেদককে থামিয়ে দিয়ে) এসব জাল দলিল আপা। আপনারা যা জানেন-সব জাল দলিলের কথা জানেন। দলিলে আছে আল্লাহর নির্দেশে লাদেন যুদ্ধ করেছে। আমরা তার অনুসারী। তার পথেই আমরা যুদ্ধ করছি।
জনকণ্ঠ : আপনাদের টার্গেটে আর কারা আছেন?
জেএমবি: আওয়ামী লীগের জেলা নেতাদের প্রথম টার্গেট করেছিলাম আমরা। ৬৪ জেলার সভাপতি সাধারণ-সম্পাদককে ১৭ আগস্টের মতো একই দিনে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলাম, যাতে হাসিনার মনে একটা ভীতি কাজ করে। কিন্তু সম্প্রতি আমরা এই পরিকল্পনা স্থগিত করেছি।
জনকণ্ঠ: কেন?
জেএমবি: কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আওয়ামী লীগ যত বেশি সময় ক্ষমতায় থাকছে তত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। এরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। বরং শীর্ষ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে মারলে হাসিনার ওপর দোষ আসবে। দেশে বড় রকমের বিশৃঙ্খলা হবে। বিরোধী দলও মাঠে নামবে। দুই দলে কামড়াকামড়ি লাগবে। সেই সুযোগে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীকে শেষ করে দেব। তখন দোষ পুরোটাই বিএনপির ঘাড়ে আসবে। আওয়ামী লীগের নেতারা মরবে। বিএনপির নেতাকর্মী কিছু এ্যারেস্ট হবে, মারবে, গুলি চলবে। দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জামা‘তুল মুজাহেদীন বসে দেখবে। আমাদের শত্রু এরা দুই পক্ষই। কারণ, এরা গণতন্ত্রপন্থী। তাই এদের আমরা ‘তাগুতি পন্থী’ বলি। এজন্য কৌশল করা হয়েছে, এদের শেষ করতেই হবে।
জনকণ্ঠ: এই পরিকল্পনা কতদিনের?
জেএমবি: ছয় মাস আগে এই পরিকল্পনা করেছি আমরা। আগস্ট মাসে একটা বড় কিছু করার টার্গেট আমাদের।
জনকণ্ঠ : আপনাদের টার্গেটে আর কে আছে?
জেএমবি: ঐ যে ইমরান সরকার আছে না, তাকেও মারবার টার্গেট ছিল। কিন্তু তখন ইমরান সরকারের সামনে এত ছোট ছোট বাচ্চা বসে থাকত, তাকে মারতে গেলে এই বাচ্চাগুলো মারা পড়ত।
জনকণ্ঠ: আপনারা বাচ্চা মারতে চান না?
জেএমবি : (হেসে) না, বাচ্চা মারতে চাই না আমরা। আপনারা বলেন না, আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যত? আমরা তো মনে করি এই শিশুরাও একদিন জেএমবি হবে। আমাদের ভবিষ্যত মেরে ফেললে হবে কী করে? তবে আপনাকে যে কথাগুলো বলছি, তা যদি সত্য না লিখেন, আপনার বিপদ আছে। অসুবিধা হবে। ঐ যে সুলতানা কামাল আছেন, তারে এত সহযোগিতা করলাম, অথচ তিনি ঢাকা ফিরে সব মিথ্যা কথা লিখেছেন আমাদের নামে।
জনকণ্ঠ: কী সহযোগিতা করেছেন?
জেএমবি : তিনি জানতে চেয়েছিলেন বাংলা ভাই সম্পর্কে। আমরা লোক ঠিক করে দিয়েছিলাম তার সঙ্গে এলাকা ঘুরে সব দেখাতে। বাংলা ভাই কাদের, কেন মেরেছে সব বলা হয়েছে তাকে। সব সঠিক কথা জেনেও বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনের মিথ্যা কথা লিখেছে। এসব বললে বহুত ব্যাপার। আমরা পরিবার ছেড়ে পালিয়ে থেকেছি, গ্রেফতার হয়েছি।
জনকণ্ঠ: আপনাদের এসব পরিকল্পনা কতদিনের মধ্যে বাস্তবায়নের টার্গেট?
জেএমবি : সর্বশেষ পরিকল্পনাটা মনে হয় ভেস্তে গেল এবারের মতো। যিনি টার্গেট, তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। সেদিন বিভিন্নভাবে মহিলা-পুরুষ মিলে কমপক্ষে ৫০ এহসার পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। মহিলারা ছিল ‘সাপ্লাইম্যান’। আর পুরুষ ছিল-যারা ব্যবহারকারী।
জনকণ্ঠ: কী অস্ত্র নেয়া হয়েছিল? গ্রেনেড? যদি গ্রেনেডগুলো সময়ের আগেই বিস্ফোরণ ঘটে যেত, এই মহিলারা কি আত্মঘাতী হতো?
জেএমবি : আত্মঘাতী পরিকল্পনা এখন আমাদের নাই। গ্রেনেড সাপ্লাইকারী মহিলারা জানে কিভাবে হ্যান্ড গ্রেনেড সাবধানে রাখতে হয়। এখন প্রশাসন এত সতর্ক, গ্রেনেড না হলে সম্ভব না। প্রশাসনের তদারকি থাকে। সিসিক্যামেরা ফিট করা আছে চারদিকে। বড় জিনিস বহন করা কঠিন। গ্রেনেড সিসিক্যামেরায় ধরা পড়ে না। বড় রাজনৈতিক সমাবেশে হাজার হাজার লোকের মিছিল। ঢল নেমে মানুষ সমাবেশে ঢোকে, তখন তো আর চেক করাও সম্ভব না। সেটা যে দলেরই হোক না কেন। কিছু মহিলা হয়ত কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বসে থাকে একপাশে। সুযোগমতো হাতে দিল, নিয়ে ছুড়ে দিল। যে ছুড়ে মারবে সে হিসেব করেই রাখে- হয় মারবে, নয় ধরা পড়বে, নয় মরবে। একজন বা দু’জন মারল, অন্যরা সরে গেল নিরাপদে, ঝামেলা শেষ।
জনকণ্ঠ: শেষ পরিকল্পনা ভেস্তে গেল বলে কি হতাশ আপনারা?
জেএমবি: না, জামা‘তুল মুজাহেদীন কোন কাজে হতাশ না। হয়নি তো হয়নি। আল্লাহর ইচ্ছা নাই হয়ত। পরে হবে। ১৫ দিন থেকে আমাদের নেটওয়ার্ক খুব পরিকল্পিতভাবে সেট করা ছিল। প্রশাসন টাকা দিয়ে বিভিন্নভাবে সোর্স নিয়োগ করে তো। আমার মনে হয়, জেএমবির এই পরিকল্পনা হয়ত গোয়েন্দারা জেনে গেছে। তাদের নির্দেশে হয়ত আমাদের টার্গেট আর সমাবেশে আসেনি।
জনকণ্ঠ : তাহলে আপনাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কি ? কারা আপনাদের শত্রু?
জেএমবি: বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনা করছে তাদেরই আমরা শত্রু মনে করি। প্রশাসন তো গবর্নমেন্টই চালাচ্ছে। গবর্নমেন্টের দায়িত্ব আমরা নিতে পারলে প্রশাসন আমরাই চালাব। আমরা যেভাবে বলব প্রশাসন অস্ত্র সেদিকেই ঘুরাবে।
জনকণ্ঠ : তাহলে কি আপনারা র্যা ব-পুলিশকে টার্গেট করেছেন? এত পুলিশ মারা হলো-এরা কি আপনাদের লোক?
জেএমবি: না, আমরা র্যাযব-পুলিশকে টার্গেট করি নাই। পুলিশে গরিব মানুষের ছেলেমেয়ে আছে। এরা বেতন পেলে চলে। এদেরও পরিবার সন্তান আছে। পুলিশ হত্যা করেছে জামায়াত-শিবির। জামায়াত এলোমেলা হত্যা করেছে। পুলিশ তো সরকারের কমান্ডে চলে। এদেরকে হটাতে হলে সরকারকে হটাতে হবে। তাগুতি সরকার হঠিয়ে আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। তবে আমাদের কোন কাজের খবর পেয়ে গোয়েন্দারা যদি আমাদের এ্যাটাক করে তখন জামাআ’তুল মুজাহেদীন মারবে। এরা (জেএমবি) বলছে রাষ্ট্রের দায়িত্বে যারা আছে তাদের মারতে হবে। যাতে এরা কোন নির্বাচন করতে না পারে। যেন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে না পারে।
জনকণ্ঠ: আপনারা কি নির্বাচনের বিরুদ্ধে?
জেএমবি: হ্যাঁ। আমরা নির্বাচনের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আমরা মানি না।
শনিবার, ৩০ আগষ্ট ২০১৪, ১৫ ভাদ্র ১৪২১
জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন ৩ ॥ তাগুতিদের খতম করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই প্রধান খায়েশ-
সুন্নীবাদ, সুফীবাদ এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সঙ্গে ধর্মীয় মতাদর্শগত বিরোধের কারণে যেমন জামায়াতের টার্গেট, তেমনই জেএমবির টার্গেটও এরা- জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেএমবি নেতা। তারা মনে করে ইসলাম শান্তির ধর্ম তখনই হবে যখন ‘তাগুতি’দের খতম করে ফেলা হবে। যতদিন গণতন্ত্রকামী বা ‘তাগুতি’দের শেষ করা যাবে না, ততদিন জেএমবি-জামায়াত রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। জেএমবির দাবি- তাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের একাত্মতা জন্মগত। তবে জেএমবি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিএনপি নেতা সাবেক ভূমি উপমন্ত্রীর ভাইপো ও ভাগ্নে হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে। বিএনপি- জামায়াতের বি-টিম হিসাবে রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করাই ছিল তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেএমবি সংগঠক এই প্রতিবেদককে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, জেএমবি প্রথম জামায়াতের ভেতরেই ছিল। জামায়াত-শিবিরও লাদেনপন্থী, জেএমবিও লাদেনপন্থী। আর তাই এখনও কওমী মাদ্রাসার ছাত্র এবং শিবির কর্মীদের অনেকে জেএমবির সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তবে জামায়াত কৌশলগত ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। জেএমবি নির্বাচনবিরোধী, তাগুতিদের হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায় তালেবানদের মতো। জেএমবির এই জঙ্গী নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, কৌশলগত কারণে জেএমবি জামায়াত থেকে বের হয়ে এসেছে। তবে জেএমবির অনুদান আন্তর্জাতিক অনেক ফান্ড জামায়াতের মাধ্যমেই আসে। জামায়াতের নেতারাও বড় রকমের ডোনেশান দেয়। জেএমবির অনেক কাজ মূলত জামায়াতের সঙ্গেই হয়- বলেন তিনি। তার মতে জামায়াত অনেক এলোমেলা কাজ করে, জেএমবি পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে হত্যা করে।
জেএমবি নেতা বলেন, সাংগঠনিকভাবে অনেক মিল বা অভিন্নতা থাকার কারণে জামায়াতের নির্দেশ মতো তাদের অনেক টার্গেটকে জেএমবি ‘খতম’ করে দেয়। জেএমবির এই ক্যাডাররা প্রথম দিকে নিজেদের ‘দুলু বাহিনী, গামা বাহিনী, আল-কায়েদা বাহিনী, মুসলিম রক্ষা পরিষদ, মুজাহিদীন বাংলাদেশ, হরকত-উল-জিহাদ’সহ নানা নামে নিজেদের জাহির করে। পরবর্তীতে তারা ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ’ বা জেএমজেবি নামে তাদের হত্যাযজ্ঞ বা অপারেশন চালাতে থাকে।
বাংলা ভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমানকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে জামায়াত নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী রচিত বিভিন্ন বই এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজের অনেক সিডি ক্যাসেট পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন, জেএমবির জঙ্গীবাদে বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতা আড়াল করার জন্যই মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাই ও বাংলা ভাই বাহিনী বা জঙ্গী সংগঠনের কোন অস্তিত্ব নেই বাংলাদেশে। এসব মিডিয়ার সৃষ্টি।’
জামায়াতের সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততার তথ্য প্রমাণ পুলিশের কাছে থাকলেও তৎকালীন জামায়াত-বিএনপি রাষ্ট্রনায়কদের নির্দেশে গায়েব করে ফেলা হয় বলে স্থানীয় অনেকে জনকণ্ঠকে জানান। এ ব্যাপারে রাজশাহীর পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি এখনও এ ধরনের তথ্য পাননি।
বাংলা ভাইয়ের হত্যা আর নির্যাতনের ধরন ছিল- মানুষকে উল্টো করে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল ওসমান বাবুকে (২৭) বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে আহত করার পর জবাই করে হত্যা করে। সর্বহারা নিধনের নাম দিয়ে এরকম হত্যাকাণ্ড চালাতে থাকে তারা রাজশাহীর অন্যান্য থানাতেও । এটাই ছিল বাংলা ভাইয়ের প্রথম প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড।
বাংলা ভাইয়ের জঙ্গী বাহিনীর নির্যাতনে নিহত অনেকের কথাই এখনও প্রকাশ হয়নি বলে মনে করেন নির্যাতিতরা। তবে ৩২ জনের কথা জানা যায় সেই সময়ে। এদের সবার নাম পাওয়া যায়নি। যাদের নাম পাওয়া গেছে-(১) ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল ওয়াসিম ওরফে ওসমান বাবু, (২) ১১ এপ্রিল (১১ এপ্রিল নির্যাতনের পর ১৭ এপ্রিল নিহত) বাগমারার কনোপাড়ার গোলাম রব্বানী মুকুল প্রামাণিককে মাথা নিচে পা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন। (৩) ২০ এপ্রিল দুর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আজাহার আলী (৪) ২২ এপ্রিল নওগাঁর রানীনগরের বেলঘরিয়ার মোশারফ হোসেন, (৫) নাটোরের পীরগাছার সাইফুর, (৬) ২৩ জুলাই নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের কাশিয়াবাড়ির দীপংকর, (৭) ২৭ এপ্রিল ইউপি দফাদার, (৮) এপ্রিল মাসেই দুর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আজাহার আলীকে নির্যাতন করে বাংলা ভাই। নির্যাতনের কারণে প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কয়েক বছর পর মারা যান। (৯-১১) ১ মে আত্রাই য়ের ভোঁপাডার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শেখ ফরিদ ও অজ্ঞাত ৩ ব্যক্তি, (১২) রাজশাহীর বাগমারার নিমপাড়ার রাবেয়া, ১৩ মে বাংলা ভাইয়ের ধর্ষণের শিকার হয়। ১৪ মে আত্মহত্যা করে রাবেয়া (১৩) ১৫ মে বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও সর্বহারা নেতা নওগাঁর রানীনগরের সফিকপুরের আবদুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে, (১৪) ২৪ জুন রানীনগরের সিম্বা গ্রামের আওয়ামী লীগ ও সর্বহারা নেতা খেজুর আলীকে টুকরো টুকরো করে কাটে বাংলা ভাই, (১৫) রানীনগরের বড়গাছার আফজাল, (১৬) ৩০ জুন গাছে ঝুলিয়ে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় বাগমারার মাডারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে (১৭-১৮) ২৫ জুন নাটোরের বাসুদেবপুরে অজ্ঞাতনামা ৩ ব্যক্তিকে হত্যা, (১৯) ১৪ নবেম্বর রানীনগরের ভেটি ক্যাম্পে ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউল হক জিয়া, (২০) ২৭ নবেম্বর বাগমারার তাহেরপুরের বিষ্ণুপুরে বাসদ (মাহবুব) নেতা আলী আকবর, (২১,২২) ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি বাগমারার শ্রীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর হত্যা ও আওয়ামী লীগ নেতা জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া বাংলা ভাইয়ের অত্যাচার নির্যাতনে বাড়িছাড়া হন অনেকে। এদের মধ্যে রহিমা বেওয়া কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন। ৫ বছর পর এলাকায় ফিরে নিজের বাড়িতে বসবাস করছেন বাগমারার আবদুল বারী।
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর ও নিরাপদ বোধ করেনি এলাকার লোকেরা। সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এলাকার নির্যাতিতরা তাদের নিরাপত্তা এবং ২০০৪ এর এপ্রিল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত নির্যাতনের ন্যায়বিচার প্রার্র্থনা করেন। জেএমবির জঙ্গীবাদ বর্বর নির্যাতনে সহযোগিতার অভিযোগে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতৃত্বকে দায়ী করেন।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার আলমগীর কবির এ তথ্য জানিয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, বাগমারার নির্যাতিত যারা বেঁচে আছেন এবং নিহতদের স্বজনেরা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, বাংলা ভাই বাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডে সরাসরি মদদ দিয়ে জেএমবির সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন রাজশাহীর আলোচিত তৎকালীন এসপি মাসুদ মিয়া (জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগে চাকরিচ্যুত), রাজশাহীর পুঠিয়া-দুর্গাপুর থেকে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক ।
২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি বাগমারার আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধাকে বাংলা ভাই বাহিনীর ক্যাডাররা হত্যা করতে এসে জনপ্রতিরোধের শিকার হয়। জনতার ওপর বোমা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমানকে হত্যা করে জেএমবি। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধে আটক হয় বাংলা ভাই বাহিনীর তিন ক্যাডার। তিনজনই গণপিটুনিতে নিহত হয় সেইদিন।
সেই ঘটনার পর ২০০৫ সালের ২৪ জানুয়ারি রাজশাহীর বিতর্কিত এসপি মাসুদ মিয়া প্রথমবারের মতো বাংলা ভাইয়ের অবস্থান এবং কর্মকা- স্বীকার করে বলেন, ‘বাংলা ভাই আছে।’ সেই সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাংলা ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ দেবার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতারকৃত বাংলা ভাই বাহিনীর ক্যাডারদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বাংলা ভাই ও বাংলা ভাইয়ের আধ্যাত্মিক গুরু বলে পরিচিত শায়খ আবদুর রহমানের নেতা হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ-আল-গালিবের নাম আলোচনায় আসে।
এর পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গালিবকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্দেশে পুলিশ ২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে ড. গালিবকে তার তিন সহযোগী (আবদুস সামাদ সালাফী, আবদুল লতিফ ও আযীযুল্লাহ)সহ গ্রেফতার করে। এর পর আবার বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানকে গ্রেফতারের অভিযান থমকে যায়।
২০০৫ সালের ১১ মার্চ রাজশাহীর তৎকালীন এসপি মাসুদ মিয়াকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। পরবর্তীতে জঙ্গী তৎপরতায় মদদ দেয়ার অভিযোগে এসপি মাসুদকে চাকরিচ্যুত করে সরকার।
২০০৫ সালে বাংলা ভাই জেএমবি জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশে-বিদেশে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে।
২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতর থেকে বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানকে ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সেই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘোষণা দেন এই দুই জঙ্গী সন্ত্রাসীকে ধরে দিতে পারলে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। যেকোন একজনকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকার পুরস্কার। বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে ২০০৬ সালের ১ মার্চ সিলেটের শাপলাবাগের সূর্যদীঘল বাড়ি নামের একটি বাড়িতে শায়খ আবদুর রহমানের অবস্থান নিশ্চিত হবার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, র্যা ব বিশাল বাহিনী নিয়ে অভিযান চালায়। শায়খ আবদুর রহমান বাধ্য হয় আত্মসমর্পণ করতে। এর কয়েকদিন পর ৬ মার্চ বাংলা ভাই ধরা পড়েন মুক্তাগাছার রামপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে।
২০০৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এলাকায় সন্ত্রাসের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ের দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতার ভাইপোকে তার সহযোগীসহ হত্যা করে সর্বহারা দল। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলাধীন কামারপাড়া বাজারে সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীরা হত্যা করে তৎকালীন ভূমি উপমন্ত্রী বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাইপো ও যুবদল নেতা গামা, তার সহযোগী পুঠিয়ার সাধনপুরে যুবদল নেতা পাখি ও দুর্গাপুরের ওয়ার্র্ড কমিশনার বিএনপি নেতা আনোয়ারকে। পাখি ও আনোয়ার কমিশনার বিএনপির স্থানীয় সাংসদ নাদিম মোস্তফার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ছিল। তাদেরও হত্যা করে সর্বহারা দলের সন্ত্রাসীরা ।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আরেক ভাইপো যুবদল নেতা ডলার এবং দুলুর ভাগ্নে ডালিমের নেতৃত্বে প্রায় দু’শ’ লোকের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নলডাঙ্গার কাজীপাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতা-কর্মীদের ৩১টি বাড়ি ও ১৫টি দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট, ভাংচুর ও গান পাউডার দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। গামা এবং দুলুর ভাইপো সর্বহারাদের হাতে নিহত হবার পর কথিত সর্বহারাদের নিধনের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির জন্যে জঙ্গীদের মাঠে নামানো হয় বলে মনে করে এলাকার জনগণ।
রবিবার, ৩১ আগষ্ট ২০১৪, ১৬ ভাদ্র ১৪২১
লন্ডনে ইনুকে আক্রমণ করে আমাদের লোকেরাই...
জঙ্গী আস্তানায় ৫ দিন শেষ পর্ব -
ঠিক দুপুর বেলা, ভূতে মারে ঠেলা। না, ভূতের কোন অস্তিত্ব নেই। চারদিকে সবুজ আর শাল শিমুলে ঘেরা পুকুর। দুই তরুণী গলা জলে ডুবে মুখোমুখি অন্তরঙ্গ কথকতায় মত্ত। সারা শরীর জলে ডুবিয়ে চোখে চোখ রেখে দুই সখীর কী এত কথা? কার কথা? কোন সুখ? কোন ব্যথা? দশ বছর আগে এই জনপদের নিরীহ মানুষগুলো দুঃস্বপ্নের অতলে হারিয়ে গিয়েছিল সেই সব দিনের কথা।
প্রত্যন্ত জনপদের এই সবুজ মনোমুগ্ধকর জীবন আবার কখনও ফিরে আসবে এমন বাস্তবতা এই তরুণীদের স্বপ্নেরও অতীত ছিল। কিন্তু সেসব দুঃস্বপ্ন এখন শুধুই মরা অতীত। শান্ত নিস্তব্ধ রাজশাহীর বাগমারার অজপাড়া গাঁয়ে উদাস দুপুর এখন শান্ত, নীরব। হংসমিথুন আর কিশোরীর জলকেলির চিরন্তন দৃশ্য আবার দৃশ্যমান। ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত একেবারে হারিয়ে গিয়েছিল। সে সময়ে বাংলা ভাইয়ের তথাকথিত সর্বহারা নিধন অভিযানে নিহত হয়েছে এই এলাকার শতাধিক মানুষ, ধর্ষিতা হয়েছে অসংখ্য নারী।
শঙ্কিত এ জনপদ আর বিশাল এক গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে নিস্তরঙ্গ জলের ওপর। সেই ডালের চিরল পাতার ছায়ায় পুকুরের এক পাড়ে দাঁড়িয়ে থমকে দূর থেকেই গলাজলে ডুবন্ত দুই তরুণীর দিকে অপলক চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। জঙ্গী অধ্যুষিত এই জনপদে হেঁটে হেঁটে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম জেএমবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। পুকুরের নিস্তব্ধ জল থেকে নজর সরানো গেল না। নিস্তব্ধ বেশ কিছুক্ষণ। না, দুই সখী চোখে চোখ রেখে আড্ডায় নিমগ্ন-জগতে কেহ কিছু নাহি আর। এক পর্যায়ে জেএমবির এক নারীর মুখোমুখি হলাম অনেক কসরৎ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বললেন তার ‘দাওয়াতী’ স্বামী জেএমবির এহসার। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী তাকে দাওয়াতী হতেই হবে। দীর্ঘদিন জেএমবির সঙ্গে আছেন যারা, তাদের মনে এখন নানান দ্বন্দ্ব, নানান প্রশ্ন। দশ বছর পর তারা নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট চরমে। একান্ত সাক্ষাতকারে সেই বিষয়টিই উঠে এসেছে।
জেএমবি : আওয়ামী লীগ বিএনপির সব নেতাদের একটা একটা করে জবাই করেছে চরমপন্থীরা। সেই সর্বহারা চরমপন্থীদের দমন করতে আমাদের সহযোগিতা করেছে বিএনপি। এরা আমাদের সাংগঠনিক লোক নয়, চরমপন্থী দমনে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। তাই জেএমবির ওপর নির্ভর করেছে এরা। ভেবেছে, ‘এরা যদি পারে চাল ভাত দিয়ে সহযোগিতা করলে ক্ষতি কী আছে?’
জিহাদ করা আল্লাহর হুকুম, এটা করা দরকার, এটা প্রয়োজন, ঠিক আছে। এদেশে যুদ্ধ করা যাবে না। কারণ, প্রথম কথা নিরাপদ জায়গা দরকার। অন্য দেশে মনে করেন, পাহাড় থাকে, চর থাকে- যেখানে লুকানোর জায়গা থাকে। আফগানিস্তানে পালানোর বা লুকানোর জায়গা আছে, যেখানে সরকারের কোন লোকই যায় না। বাংলাদেশে এ রকম কোন জায়গাই নেই- যেখানে আমরা নিরাপদ মনে করতে পারি। আমাদের দেশে এ রকম নিরাপদ জায়গা নেই। তাই এদেশে যুদ্ধ করা যাবে না। এদেশে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্তই ভুল।
‘ইনুকে লন্ডনে আক্রমণ করেছে আমাদের ছেলেরাই। আক্রমণ করেছে- যে কোনভাবে বেঁচে গেছে। পরিকল্পনায় দুর্বলতা ছিল হয়ত। হয়তবা দলের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তই তেমন ছিল। নির্দেশনা যদি থাকত- ‘মেরে দাও’- তাহলে মেরেই দিত। সেই সুযোগ ছিল। তবে সব প্রোগ্রাম সাকসেসফুল নাও হতে পারে। তবে বিএনপির ওপর আমাদের অনেক রাগ আছে। কেন বাংলা ভাইকে ধরিয়ে দিলে ৫০ হাজার টাকা দেবে বলেছিল বিএনপি সরকার? তাদের কথায় এত কাজ করেছে আমাদের মুজাহিদীন, বাংলা ভাই। তারা সব ভুলে গেল?
এখন আবার আমাদের অনেক মেয়ে কাজ করছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থা থেকে অনেক মেয়ে আসে। সারাদেশে দুই থেকে তিন হাজার হবে। আমরা মাঝে মাঝে ঢাকায় গাজীপুর, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকায় বৈঠকে যাই। দাওয়াতী বৈঠক। আমাদের সবার খরচ দেয় সংগঠন।
আল্লাহর নির্দেশে স্বামী যা বলে আমরা তাই করি। সংগঠনের মধ্যেই তালাক হয়, আবার বিয়েও দেয় দাওয়াতীদের সঙ্গে।
আমাদের ঘরে কোন ছবি রাখা যাবে না। হাতমোজা, পায়ে মোজা, বোরখা পরতে হয়। শুধু চোখ খোলা রাখি আমরা। কারণ, দাওয়াতীদের ইসলামী কায়দায় চলতে হয়।
যারা তাগুতি তাদের মারার নির্দেশ আছে কোরানে। বেনজীর ভুট্টোকে মারল না, পাকিস্তানে? আমাদেরই লোক। আমাদের নেতারা অনুসরণ করেন টার্গেট, নির্দেশনা এলেই আমরা কাজ করি। মনে করেন আপনি এখানে এসেছেন, আপনার কোন প্রটেকশন নেই। আপনাকে মেরে দেয়া সহজ।
হরতালে সব ইসলামী সংগঠন একসঙ্গে কাজ করেছে। এখানে আমরা সব সংগঠন চেয়েছি সাঈদী বাঁচুক। আমাদের নির্দেশনা আছে হরতালের ঘোষণা হলেই সব ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মী এক হবে। পেট্রোল বোমা আর গ্রেনেড নিয়ে হাজির হবে সবাই। যারা বানাতে পারে না- তাদের অন্যেরা সহায়তা করবে।
২০০৪ সালে আমাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল গ্রেনেড। দশ বিশটা তাদের ব্যাগে ছিল। মোটরসাইকেলে করে যাবার সময় কেউ ধরলেই ছুড়ে মারত, ব্যস উড়ে যেত।
ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আর বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সব এক। আমাদের একই অস্ত্র। সারা বিশ্বে যত অস্ত্র বোমা মৌলবাদীরাই বানায় আর বোমা মারে, মনে রাখবেন। এহসাররা সান্তাহারে ৭০ জন ইঞ্জিনিয়ারকে রিসিভ করেছে একদিন। সব বিদেশী। এরা পাকিস্তান ভারত থেকে এসেছে।
হেফাজত, জামায়াত, বিএনপি আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছে। বাংলা ভাইয়ের বিয়ে হয় সাধারণ মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি এই সংগঠন সম্পর্কেও জানত না। কোন দাওয়াতী ছিল না। এখন জেলে। তার পক্ষে কোন আইনজীবীও নেই। ভয়েও তার পক্ষে মামলা করে না কেউ।
‘এহসাররা কখনও ক্ষমা চাইবে না।’ বাংলা ভাই ওকালতনামায় সই করেনি। আষ্টপতির (রাষ্ট্রপতি) কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেনি। কারণ, আল্লাহ প্রশ্ন করবে তুমি কার কাছে ক্ষমা চেয়েছ? প্রাণভিক্ষার মালিক আমি না আষ্টপতি (রাষ্ট্রপতি)? যারা শারীয়া আইন মানে না- তাদের কাছেই ক্ষমা চাইলা? আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। আমাদের বোরকার ভেতরে তো চেকিং হয় না। আমরা বড় জিনিস (অস্ত্র) নিতে পারি না, তবে বোমা (গ্রেনেড) নিতে পারি।
ত্রিশালের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে- তাদের কোন পুরস্কার নেই, তবে তার কৌশল সফল হলে ধাপে ধাপে এগোবে। আমি যুক্তির কথা বলি। কোরান হাদিস জানি না, তবু আমাকে মানে সবাই। অনেক নারী আমার কথায় গায়েরী এহসার হয়েছে। আগামীতে আমাদের বড় পরিকল্পনা আছে- তবে পরিস্থিতির ওপর তা নির্ভর করবে।
sumikhan29bdj@gmail.com

1 comment:

  1. Are you looking for free Google+ Circles?
    Did you know you can get them ON AUTOPILOT & ABSOLUTELY FOR FREE by using Like 4 Like?

    ReplyDelete