Monday, February 3, 2014

এবার বৃক্ষ নিধনকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হোক :কাওসার রহমান

এবার বৃক্ষ নিধনের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু করা দরকার। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই বৃক্ষ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা ও শাস্তির দাবি উঠেছে।
রাজনৈতিক সহিংসতার অংশ হিসেবে জামায়াত-শিবির সারাদেশে বৃক্ষ নিধনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সারাদেশে ৬০ হাজারেরও বেশি গাছ নিধন করেছে। এর মধ্যে শুধু বন বিভাগেরই রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি গাছ। সড়ক অবরোধের নামে দেশের ১০টি জেলার প্রধান সড়কের পাশে এসব ছায়াবৃক্ষ ধ্বংস করেছে জামায়াত-শিবির। এই ২০ হাজার গাছের সঙ্গে আরও কাটা গেছে লাখখানেক গাছের লতাগুল্ম ও বড় গাছের ডালপালা। আর্থিক হিসাবে এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন সাইজের এই গাছ কাটার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে। 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় গত বছর সারাদেশে নিধন হয়েছে ৬৩ হাজার ৯০০ বৃক্ষ। বৃক্ষ নিধনের শীর্ষে রয়েছে নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজার জেলা। এসব জেলায় বৃক্ষ নিধন হয়েছে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। এতে সারাদেশের পরিবেশগত আর্থিক ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আন্দোলনের নামে এই বিপুল পরিমাণ বৃক্ষ নিধনের ক্ষতি পরবর্তী ২০ বছরেও পূরণ সম্ভব হবে না। কারণ, ২০-২৫ বছর বয়সী একটি বৃক্ষ নিধন হলে সেটির ক্ষতি পূরণ হতে ২০ থেকে ২৫ বছরই সময় লাগবে। এর আগে কোনভাবেই এই ক্ষতি পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। 
২০১৩ সাল আমাদের জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি দুঃস্বপ্নের বছর। এ বছর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ব্যাপকভাবে বৃক্ষ নিধন করেছে। সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে রাস্তার পাশের। এ গাছগুলোর মালিক বাংলাদেশ বন অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, এলজিইডি ও এনজিওরা। এর মধ্যে সামাজিক বনায়নেরও প্রচুর গাছ রয়েছে। সামাজিক বনায়নের এ সকল গাছ কাটার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের দরিদ্র মানুষ। তারা তাদের অংশীদার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সর্বশেষ জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা বৃক্ষ নিধনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে যশোরে। জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার খবর প্রচার হওয়ার পর পরই জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা যশোর-খুলনা মহাসড়কের চাউলিয়া থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের বিভিন্ন ধরনের গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে দেয়। যশোর-খুলনা মহাসড়কের অন্তত ৩ কিলোমিটার এলাকায় গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এছাড়াও সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধে কেশবপুর-বকুলতলা, কেশবপুর-কাটাখালী, কেশবপুর-চিংড়া, কেশবপুর-সাগরদাঁড়ি, যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশ থেকে হরতাল অবরোধের সমর্থকরা নানা প্রজাতির শত শত বৃক্ষ কেটে সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। 
জামায়াতের সহিংসতার নতুন তিন কৌশলের একটি হচ্ছে বৃক্ষ নিধন। গত ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশ থেকে এই বৃক্ষ নিধনের কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে এক রাতের ব্যবধানে মতিঝিলের অতি চেনা শাপলা চত্বর অচেনা হয়ে গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের তা-বে। পল্টন মোড়ের প্রীতম হোটেলের সামনে থেকে বিজয়নগর মোড় পর্যন্ত ছোট-বড়-মাঝারি ধরনের অন্তত শতাধিক গাছ কাটা হয়েছিল যার মধ্যে অনেক পুরনো দিনের গাছও ছিল। 
বাংলাদেশ বন অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী বলেন, ‘আন্দোলনের নামে সারাদেশে বৃক্ষ নিধনের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সারাদেশে কাটা হয়েছে ৬০ হাজারেও বেশি বিভিন্ন ধরনের গাছ। এসব গাছ কাটার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে’। 
সারাদেশে গাছ নিধনের ফলে দেশের আর্থিক ও পরিবেশগত দুই ধরনের ক্ষতিই হয়েছে। দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাড়ছে। এতে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ও টর্নেডোর সংখ্যা। গাছপালা তার ডালপালার মাধ্যমে এ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। বাতাসের গতিবেশ সীমিত করে। এতে জীবন ও সম্পদহানি অনেক কম হয়। 
ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে সরকারী হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমি পরিমাণ ১৭ শতাংশ। যেখানে তিনটি গাছ কাটা হচ্ছে সেখানে লাগানো হচ্ছে একটি গাছ। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ব্যাপক হারে নির্বিকার বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটছে। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ নেমে এসেছে ৩.৬ শতাংশ। তারই বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়ায়। দিনের বেলা দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচ- শীত অনুভূত হচ্ছে। আর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বৈশ্বিক উষ্ণতার অন্যতম কারণ এই অকাতরে বৃক্ষ নিধন।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দুই পাশে বিশাল যে রেইনট্রিগুলো এত দিন প্রকৃতির কোলে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে আসছিল, সেগুলোর একটা বড় অংশ এখন আর নেই। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ওই গাছগুলোর ছায়ায় প্রাণ জুড়াত পথচারীরা। পাখপাখালির আশ্রয়ও ছিল তারা। সে গাছগুলো কেটে ফেলেছে জামায়াত-শিবির। বাংলাদেশে গাছের ওপর আঘাত করে ঠিক যেন জীবন-জীবিকার ওপরই আঘাত করা হলো। প্রকৃতিবিদরা একে রাজনীতির নামে প্রকৃতির প্রতি প্রতিহিংসার এক নিকৃষ্ট নজির হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 
ব্যাপক হারে এই গাছ কাটতে বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক করাত ব্যবহার করা হয়েছে। হাতে বহনযোগ্য ও দ্রুত গাছ কাটা যায় এমন করাত সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে টেকনাফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকায় এই করাত গাছচোরেরা ব্যবহার করছে। রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে চীনের তৈরি এই করাতগুলো বাংলাদেশে ঢুকেছে। আসলে সড়ক অবরোধের জন্য এই ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবির আগেই এমন বিপুলসংখ্যক করাত সংগ্রহ করেছে।
হাতে বহনযোগ্য তিন থেকে নয় ফুট পর্যন্ত লম্বা যান্ত্রিক এই করাত দিয়ে একজন মানুষ ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাছ কেটে ফেলতে পারে। এই ধরনের করাতের সামনের দিকে একটি ধারালো ব্লেড থাকে, যা রাবারের বেল্টের মাধ্যমে সচল হয়। সাধারণত বনের গাছ দ্রুত কাটতে গাছচোরেরা এটি ব্যবহার করে থাকে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রাজশাহী জেলার প্রধান সড়কের গাছ নির্বিচারে কেটে অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে প্রায় আট হাজার গাছ নিধন করা হয়। এই গাছগুলোর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারই ছোট গাছ। বাকিগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরা জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশের প্রায় তিন হাজার গাছ কাটা হয়। সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়ক, কলারোয়া সড়ক ও সাতক্ষীরা-খুলনা প্রধান সড়কের দুই পাশে আকাশমণি, বেলজিয়াম, মেনজিয়াম, রেইনট্রি ও কড়ইগাছের শোভাও এতে ধ্বংস হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগের বয়সও ১০ থেকে ১৫ বছর।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়ায় প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এগুলো প্রায় সবই পুরনো গাছ। কক্সবাজারে প্রায় ২০০ এবং বাকি সাতটি জেলায় প্রায় তিন হাজার গাছ ধ্বংস করা হয়। কক্সবাজারের গাছগুলো দেশের অন্যতম পুরনো। স্থানীয় করাতকল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, এ রকম একেকটি গাছের দাম প্রায় এক লাখ টাকা। আর ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী গাছের দাম স্থান ও প্রকৃতিভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
নিধনের শিকার গাছের বেশিরভাগই সামাজিক বনায়নের আওতায় গ্রামের গরিব মানুষ সরকারের সহায়তায় রোপণ করেছিল। গ্রামের গরিব মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই গাছ লাগানো হয়েছিল। গ্রামবাসী বছরের পর বছর গাছগুলোর পরিচর্যা ও পাহারা দিয়ে আসছিল। সামাজিক বনায়নের এসব গাছ নিলামে বিক্রি করার পর পরিচর্যাকারী গরিব মানুষদের মোট দামের ৫৫ ভাগ পাওয়ার কথা ছিল। অবৈধভাবে গাছ কাটার ঘটনায় সারাদেশে ৫৬টি মামলাও হয়েছিল। কিন্তু বৃক্ষশত্রুদের শেষ পর্যন্ত আইনে শাস্তি হয়নি। 
চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের কৈয়ারপুল এলাকার বন বিভাগের উপকারভোগীদের সভাপতি সামছুল আলম মামুন বলেন, ‘আমরা বহু টাকা খরচ করে বাগানটি করেছি। এখানে সরকারের অংশ সামান্য আর পুরো অংশটাই আমাদের উপকারভোগীদের। অথচ গাছগুলো কেটে কেটে আমাদেরই ক্ষতি করা হয়েছে’।
গাছপালা পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। মানবজীবনে বৃক্ষের ভূমিকা সীমাহীন। গাছপালা ছাড়া এই পৃথিবীই অচল। পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম জাগরণ বৃক্ষ। বৃক্ষ পৃথিবীকে সুন্দর ও শোভন করেছে। শুধু তা-ই নয়, বৃক্ষই পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। তাই মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছপালার জুড়ি নেই। বৃক্ষ ও বনভূমি বায়ুম-লকে বিশুদ্ধ ও শীতল রাখতে সাহায্য করে। যেখানে গাছাপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। বৃক্ষ মাটির ক্ষয় রোধ করে উর্বরাশক্তি বাড়ায়। ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধেও গাছপালা সহায়তা করে। মোটকথা গাছপালা না থাকলে পরিবেশ হয়ে উঠত আরও উষ্ণ। পৃথিবী হয়ে উঠত মরুভূমি। এর ফলে মানুষের অস্তিত্ব হতো বিপন্ন। মোট কথা বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় ।
আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু যদি বলা হয়, বৃক্ষের অপর নাম জীবন তাহলে অনেকের কাছেই তা অবাক লাগতে পারে। পানি ব্যতীত কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না, এটা সত্যি। কিন্তু সেই পানির প্রধান দুটি উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান উপকরণ অক্সিজেন সরবরাহ করে বৃক্ষ। আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা পাই বৃক্ষ হতে। কোন কারণে বিশ্ব যদি কয়েক দিনের জন্য পানিশূন্য হয়ে যায় তাহলেও অনেক প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ এবং অন্য কোন প্রাণী এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য বৃক্ষের উপস্থিতি কতটা অনিবার্য।
জামায়াত-শিবির চক্র নিজেকে ধর্মের ঠিকাদার মনে করে। অথচ ইসলাম ধর্মেই পরিবেশের পর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। তাই ইসলামে বৃক্ষ রোপণ এবং বৃক্ষের পরিচর্যার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান যুগে বৃক্ষ রোপণের ওপর যে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে তার পথ প্রদর্শন করেছে ইসলাম। আজ হতে দেড় হাজার বছর আগেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে গেছেন।
অকারণে বা বিনা প্রয়োজনে ইসলাম কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেয় না। কারণ যে ব্যক্তির জমিতেই গাছ জন্মাক না কেন তাতে অন্য মানুষ, এমন কি জীবজন্তু, পশুপাখির হক আছে। ইসলাম কোন ফলবান বৃক্ষের নিচে কাউকে মলত্যাগ করার অনুমতি দেয় না। মানুষ ইচ্ছেমতো গাছের ফল ভোগ করতে পারে। এমন কি কাঠ কেটে এনে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু অকারণে বনে আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেবার অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয় না। 
প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) নিজ হাতে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও কারো হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে সে যেন তা রোপণ করে নেয়। কারণ এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন অনেক সওয়াব দেয়া হবে। বৃক্ষরাজি সর্বদা আল্লাহকে সেজদারত থাকে এবং তারা তসবিহ পাঠ করতে থাকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আকাশম-লীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রম-লী, পর্বতরাজী, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। বৃক্ষরাজি মানুষ এবং পশুপাখির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। 
গাছ না থাকলে দেশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। যার মাসুল দিতে হবে পুরো জাতিকে। পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে মিশে আছে আমাদের অস্তিত্ব। তাই মানুষসহ সব প্রাণীর জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছ পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান, যা সকল প্রাণীর জন্য যোগান দেয় প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। কিন্তু সম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পেয়েছি, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করে ধ্বংস করা হয়েছে প্রকৃতির এই মূল্যবান সম্পদকে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, যদি মানুষ হত্যা অপরাধ হয়, তাহলে মানুষের জীবন রক্ষাকারী বৃক্ষ নিধনও একই অপরাধ। মানুষ হত্যা করলে যদি কান্না আসে গাছ কাটলেও কান্না করা উচিত। রাজনীতির নামে পরিবেশ রক্ষাকারী লাখ লাখ গাছ কাটা হয়েছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধের চেয়ে কম নয়। রাজনীতির নামে যারা পরিবেশ ধ্বংস করছে তারাই আবার মুখে বলছে মানুষকে বাঁচানো ও মানবতা রক্ষার জন্য এ গাছ কাটা হয়েছে। প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ধ্বংস হোক এটা কারও কাম্য নয়। বৃক্ষ নিধনকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। 
সিটিজেন রাইটস্ মুভমেন্ট মহাসচিব তুষার রেহমানের মতে, হেফাজত ইসলামের আন্দোলন থেকে বৃক্ষ নিধনের সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। হেফাজত ইসলাম ও কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ধর্মের নামে গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংস করেছে। এই বৃক্ষ নিধনকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করা উচিত। 
নগরের ইটপাথর কংক্রিটের স্তূপের মাঝে গাছ মানুষকে ছায়া ও শীতল হাওয়া দেয়। উষ্ণ হয়ে ওঠা পৃথিবীর কার্বন শোষণ করে গাছ এ বিশ্বকে রক্ষা করে চলেছে। আর গাছ হচ্ছে, আমাদের যান্ত্রিক সভ্যতার রুক্ষতার মাঝে মমতাভরা পৃথিবীর প্রাণের পরশ। এসব গাছ বড় হতে কত সময় নেয়, কত যতœ করতে হয়। এইসব বৃক্ষ নিধন করে যে ক্ষতি হলো তা কখনও পূরণ করা সম্ভব নয়। নির্মমভাবে নিমিষে তাদের কেটে ফেলা হচ্ছে, অথচ একটি গাছ বড় করতে কত কত বছর লাগে তা কি তারা ভাবে না ? এই ক্ষতি তো তাদেরও, গাছ কি কেবল আওয়ামী দেখে ছায়া দেয়, বাতাস দেয়, কার্বন শুষে অক্সিজেন দেয়? লোকগানের চারণ এক কবি একটি গোলাপ নিহত হলে তার বিচার চেয়েছিলেন- আর হাজার হাজার এইসব বৃক্ষ হত্যার বিচার কে করবে?

লেখক : সাংবাদিক

No comments:

Post a Comment