Monday, February 3, 2014

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ এমপিদের বিতর্ক: না-বলা কথা: শওগাত আলী সাগর

ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১৪
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রেহমান চিশতি ব্রিটেনের কনজারভেটিভ দলীয় এমপি। সেদেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি যে দুটি আলোচনা বা বিতর্ক হয়ে গেল, দুটিতেই তিনি ছিলেন সোচ্চার। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া নিয়ে বক্তৃতায় বারবারই পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে আনছিলেন তিনি।
১৬ জানুয়ারি, ২০১৪ ‘ব্যাকবেঞ্চ এমপিদে’র বিতর্কে পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্যের বৃত্তান্ত দিয়ে রেহমান চিশতি বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাচ্ছিলেন। চলতি সপ্তাহের ওয়েস্ট মিনিস্টার হলের বিতর্কেও তিনি নতুন একটি নির্বাচনের জন্য সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে সেটির পক্ষেও পাকিস্তানকেই উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন।

ব্রিটিশ এমপিদের কেউ কেউ ‘দ্রুত’ নির্বাচনের যে কথা বলছিলেন, সেটি রেহমান চিশতির মোটেও পছন্দ হয়নি। তিনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হকের উদাহরণ টেনে সহকর্মী এমপিদের বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, পাকিস্তানে জিয়া যখন ক্ষমতা দখল করেন, তিনিও বলেছিলেন দ্রুতই গণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সেই ‘দ্রুত’ সময়টা আর দ্রুত যায়নি। বাংলাদেশেও নির্বাচনের একটা সময়সীমা নির্দিষ্ট করে না দিলে এই সরকার পাঁচ বছরের আগে কোনো নির্বাচন দেবে না।

তবে আলোচনায় রেহমান চিশতির ‘সময় নির্দিষ্ট’ করে দেওয়ার প্রস্তাবনাটি তেমন একটি গুরুত্ব পায়নি। বরং এমপিরা তাদের সীমানার মধ্যেই থেকেছেন পুরো আলোচনায়। তারা বলেছেন, নির্বাচনের সময়টা আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই ঠিক করতে হবে, তারা কেবল সহায়কের ভূমিকাই পালন করতে পারেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দু’দফা আলোচনার খণ্ডিত অংশ মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে

ব্রিটেনে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং বাংলাদেশি নাগরিকের বাস। এমপিদের ভোটের জন্য এই বাংলাদেশিদের কাছে যেতে হয়। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে তাদের উদ্বেগের মাত্রাটা একটু বেশি। বাংলাদেশে ব্রিটেনের বিনিয়োগের পরিমাণও কম নয়। এদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে তাদের ব্যবসায়ও তার প্রতিক্রিয়া হয়। সেটি আবার তাদের সরকারেরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সতর্ক থাকতেই হয়। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের বিতর্কের আয়োজনে এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই বেশি প্রভাবিত করেছে।

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার ঘটনাটির অবশ্যই একটা তাৎপর্য আছে। তবে পশ্চিমের রাজনীতির ধরন-ধারন এবং মন্ত্রী-এমপিদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে যারা অবগত তারা জানেন, নিজ নির্বাচনী এলাকার নাগরিকদের অনুরোধে কিংবা মোটা অংকের অনুদানের বিনিময়েও পশ্চিমা এমপিরা নানা ইস্যু আলোচনার জন্য পার্লামেন্টে নিয়ে যান। বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুটো আলোচনায় অংশগ্রহণকারী এমপিদেরই যথেষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশি ভোটার আছে। সেটা তারা আলোচনায় উল্লেখও করেছেন। ফলে দুটো আলোচনার পেছনের প্রভাবক সম্পর্কে আমরা খানিকটা আন্দাজ করে নিতে পারি।

ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে ২৯ জানুয়ারির আলোচনার উদ্যোক্তা ছিলেন লেবার পার্টির এমপি গ্যাভিন শুকার। নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দিতে রেহমান চিশতির চাপাচাপিকে শুকারই অনেকটা নাকচ করে দেন। তার মত হল, নির্বাচনের সময়সীমা আমরা চাপিয়ে দেব না, বরং সংশ্লিষ্ট পার্টিগুলোকেই আলোচনার মাধ্যমে সেটি ঠিক করতে হবে। সদস্যদের তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ‘‘আমরা সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছি, কিন্তু বাংলাদেশ শিগগিরই একটি স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। আমরা যাই বলি বা করি না কেন, আমাদের উচিত হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার আসন্ন ‘জানালা’টির দিকেই মনোযোগ দেওয়া। স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যদি আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি একটা আস্থা সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে সেটি পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে।’’

শুকারের এই বক্তব্য পছন্দ হয়নি রেহমান চিশতির। তিনি স্থানীয় নির্বাচনে যে বিএনপি অংশ নেবে তার নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শুকার তাকে জানিয়ে দেন, বিএনপি বিবৃতি দিয়েই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।

গত মাসের ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের আলোচনায়ও নতুন নির্বাচনের প্রশ্নটি উঠেছিল। সেখানেও সদস্যরা চমৎকার সব মতামত দিয়েছেন। কিন্তু সেই মতামতগুলো মিডিয়াতেই তেমনভাবে যায়নি। ১৬ জানুয়ারির আলোচনাটির গুরুত্ব হচ্ছে ওই আলোচনার আয়োজক ছিলেন বাংলাদেশ সংক্রান্ত ইউরোপীয় এমপিদের সংগঠন ‘অল পার্টি গ্রুপ ফর বাংলাদেশ’-এর প্রধান অ্যান মেইন। মিজ মেইন এমপিদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে তিনি শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়াসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির সংকটের শেকড় সম্পর্কেও তার ধারণা অনেক পরিষ্কার।

ব্যাকবেঞ্চ কমিটির আলোচনায় নতুন নির্বাচনের প্রশ্নটি সামনে এলে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলীয় এমপি মার্টিন হরহুড পরিষ্কারভাবে বলে দেন, বাংলাদেশের নির্বাচনটি কখন হবে, কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটি নির্ধারণের এখতিয়ার পুরোপুরি বাংলাদেশের। বাইরের তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে কিছু বলার নেই।

তবে লেবার এমপি জিম ফিটজপ্যাট্টিক নতুন নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দেন আলোচনায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি এই মুহুর্তে নতুন একটি নির্বাচনের কথা বলা হবে প্রিম্যাচ্যুরড। তাড়াহুড়ো করে আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করা হলে গত নির্বাচনে যারা সাবোটাজ করার চেষ্টা করেছে তাদের হাতই শক্তিশালী করা হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে সহায়তা করা, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে ঐকমত্যে পৌঁছুতে সহায়তা দেওয়া এবং নির্বাচনের পরিবেশে তৈরিতে সাহায্য করা।’’

জিমের মতে, আওয়ামী লীগ যদি পুরো পাঁচ বছর দেশ শাসন করে তবে সেটি হবে এখানে আমরা যে আলোচনা করছি সে স্পিরিটের পরিপন্থী। নির্বাচন হওয়ার মতো একটি পরিবেশে নিশ্চিত করাও কঠিন কাজ। তবে তিনি মনে করেন না যে পাঁচ বছর পরই আরেকটি নির্বাচন হতে হবে। আবার এক সপ্তাহ বা একমাসের মধ্যেই যে নির্বাচন হতে হবে সেটিও ঠিক না। এই মুহুর্তে একটি নির্বাচনের ডাক দেওয়া কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আলোচনায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যেমন সমালোচনা হয়েছে তেমনি কঠোর সমালোচনা হয়েছে নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতারও। লিবারেল ডেমোক্র্যাট মার্টিন হরউড স্পষ্ট করেই বলেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলটি পরিষ্কারভাবেই সহিংসতায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে; বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর মতো কতিপয় বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে হবে। নির্বাচন বর্জন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা এবং একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের ডাক দেওয়া– একটি বিপজ্জনক প্রবণতা।

এমপিরা নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতারও সমালোচনা করেছেন
এমপিরা নির্বাচন-পূর্ববর্তী সহিংসতারও সমালোচনা করেছেন
ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গটি জোরেসোরেই আলোচিত হয়েছে। রেহমান চিশতি ছাড়াও বেশ ক’জন এমপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু বিতর্কের উদ্যোক্তা ‘অল পার্টি গ্রপ ফর বাংলাদেশ’-এর প্রধান অ্যান মেইন সেই বক্তব্যগুলো তেমন একটা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেননি। তিনি বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেও ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

অ্যান মেইন তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি অসংখ্যবার অল পার্টি গ্রুপের বৈঠকে এবং গ্রুপের সঙ্গে অন্যদের বৈঠকেও আলোচিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল দুটি রাজনৈতিক দলের পরষ্পরের প্রতি অবিশ্বাস থেকে। ২০০৬ সালের নির্বাচনের সময় সেই সময়কার বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি করে। তারা অভিযোগ করে ক্ষমতাসীন বিএনপি তাদের নিজেদের সমর্থকদের দিয়ে সরকারের নানা জাযগায় বসিয়েছে যাতে তারা একটি প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’’

তার মতে, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে একটি পারফেক্ট সিস্টেম ছিল না। সাংবিধানিকভাবেই এই পদ্ধতি বদলে ফেলার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের ছিল এবং তারা সেটিই করেছে। আমি স্বীকার করি, অনেকেই এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটি স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে যেহেতু দলটি ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে এসেছে, কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নেওয়া সিদ্ধান্তটি তাদের নির্বাচনী ম্যান্ডেটের মধ্যেই পড়ে।’’

ব্রিটেনরে পার্লামেন্টে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে দু’দফা আলোচনা নিয়ে অনেকের মধ্যেই অতিউৎসাহ তৈরি হয়েছে। সেই উৎসাহের আতিশয্যে বিতর্কের খণ্ডিত অংশ নিয়ে টকশোতে উচ্চকণ্ঠ হয়ে পড়েছেন তারা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সব আলোচনায় আলোচকদের প্রায় সবাই সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অংশবিশেষই ব্যবহার করছেন। ১৬ জানুয়ারি ব্যাকবেঞ্চ এমপিদের বিতর্কের পর ঢাকার সরকারবিরোধী একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিল– ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে প্রস্তাব পাশ’। অথচ ওই আলোচনায় কোনো প্রস্তাবের ব্যাপার ছিল না, কোনো প্রস্তাব গৃহীতও হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক অ্যাকটিভিজম করতে গিয়ে পত্রিকাটি অসত্য তথ্য পরিবেশন করতেও দ্বিধা করেনি।

আবার ২৯ জানুয়ারি ওয়েস্ট মিনিস্টার হলে বিতর্কের পর শীর্ষ একটি পত্রিকার শিরোনাম ‘ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আবার বিতর্ক/নির্বাচন না ছিল অবাধ, না ছিল সুষ্ঠু’। পত্রিকাটি লিখেছে, “বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না ছিল অবাধ, না ছিল সুষ্ঠু। সে কারণে তা সঠিক বা যথার্থ হয়নি বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঘোষণা করা উচিত। গত বুধবার রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা বিতর্কে এই অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।’’

দ্বিতীয় দফা বিতর্কে কি কোনো অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে? কোনো সর্বসম্মত ঘোষণা? বিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে বিতর্কের যে ট্রান্সক্রিপ্ট দেওয়া আছে তা কিন্তু কোনো অভিমতের কথা বলে না। তাহলে?

ওয়েস্ট মিনিস্টার হলের বিতর্কের উদ্যোক্তা গ্যাভিন শুকারের প্রস্তাব ছিল এটি। তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে “বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না ছিল অবাধ, না ছিল সুষ্ঠু। সে কারণে তা সঠিক বা যথার্থ হয়নি’’ মর্মে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। এই প্রস্তাব নিয়ে পুরো বিতর্কে আর কেউ কোনো মন্তব্য করেননি।

তাহলে একজন এমপির বক্তব্য পুরো বিতর্কের অভিমত হয় কীভাবে? এমনকি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিউ রবার্টসনও তো এই বক্তব্যে সায় দেননি। তাহলে ১৬ জানুয়ারির আলোচনায় যে একজন এমপি বলেছেন, ‘এই মুহুর্তে একটি নির্বাচনের ডাক দেওয়া কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে না’ সেটিকেও কি আমরা ব্রিটিশ সংসদের বিতর্কে অভিমত হিসেবে দেখব?

পার্লামেন্টের দুটো বিতর্কই হয়েছে পেছনের সারির এমপিদের উদ্যোগে। সেই বিতর্কে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নের দিকে নজর রেখে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীরা বক্তব্য রেখেছেন। কোনো কোনো এমপির আলোচনায় বিশেষ মতের প্রতি পক্ষপাত থাকলেও, সামগ্রিক আলোচনায় সহিংসতা, অস্থিতিশীলতাও যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশে অনেকেই এই বিতর্কের খণ্ডিত তথ্য উপস্থাপন করে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিতর্কে যখন বলা হয়, ‘আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের মধ্যকার চলমান অবিশ্বাস দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অকার্যকর করে রেখেছে, যা একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রায় অলীক কল্পনা হয়ে উঠেছে’ তখন তো দল হিসেবেই কেবল নয়, জাতি হিসেবেই আমাদের লজ্জিত হওয়ার কথা।

শওগাত আলী সাগর: প্রথম আলোর সাবেক বিজনেস এডিটর, টরন্টো থেকে প্রকাশিত নতুনদেশ ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক।

No comments:

Post a Comment