রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিথ্যা
প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান জরুরী –সুমি খান
ধর্মীয় কাজে রাজনীতির ব্যবহার, অথবা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার- মানবতার
জন্যে দুই-ই বিপজ্জনক এবং সর্বনাশা। বিশ্বজুড়ে
এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে সবাই। ইসলামী দেশ তিউনিসিয়া ও নিজেদের ‘ইসলামী রাষ্ট্র’
পরিচয় বদলে রিপাবলিকান দেশ হিসেবে পরিচয়
দিতে সংসদে প্রস্তাব পাশ করেছে। মসজিদে খুৎবা দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য
শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদী আরব। এই আইন গুলো এদেশে ও কার্যকর
জরুরী । নাহয় মসজিদ আর ‘ইসলামী জলসা’ কে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু এবং নারীদের
বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রচারণা বন্ধ হবে না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তৃণমূল পর্যায়ে
মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি দিয়ে এ দেশকে সংখ্যালঘু এবং
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি শূন্য করার ষড়যন্ত্র ঠেকানো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।
নতুন
মন্ত্রীপরিষদ দায়িত্ব নিয়েই অভিনন্দন পাবার মতো কিছু কাজ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস দমনে ভারতীয়
যৌথবাহিনীর অবস্থান সংক্রান্ত ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে দৈনিক ইনকিলাব
কর্তৃপক্ষ এবং তাদের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার
আলম এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে
এজন্যে অভিনন্দন জানাই। এই ধারাবাহিকতা ব্যাহত
হলে মিডিয়াকে ব্যবহার করে পরিকল্পিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি
ঠেকানো কঠিন হবে । দেশের সার্বভৌমতা কে চ্যালেঞ্জ করেছে বিভ্রান্তিকর এ প্রতিবেদন।
এ ব্যাপারে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর স্পষ্ট বক্তব্য এই অপপ্রচার এবং সাধারণ মানুষের
বিভ্রান্তি ঠেকাতে জরুরী।
দৈনিক প্রথম আলো ৬ জানুয়ারী কলঙ্কিত নির্বাচন: জাল ভোট
শিরোনামের লিড রিপোর্টে ফটোশপের মাধ্যমে সিঁদুর বসিয়ে হিন্দু নারী
ভোটারদের আলোচিত ছবি প্রকাশ করে। যা
পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক হামলায় উস্কানি দেয়।জালভোটের মিথ্যা ছবি প্রকাশ করে; যার
প্রতিবাদ জানায় ছবির তরুণ। তার জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে ভোট কিভাবে দিতে হবে
জিজ্ঞেস করছিলো ঐ তরুণ।ঐ তরুণের ব্যাপারে না জেনে এ ধরণের ছবি প্রকাশ সাংবাদিকতার
নীতি নৈতিকতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার জীবনের প্রারম্ভেই যে কলঙ্ক প্রথম আলো তার
জীবনে লেপন করে দিলো- তার কী শাস্তি হওয়া উচিত? এ ধরণের হরুদ সাংবাদিকতা ঠেকাতে এর
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
একই ভাবে ইনকিলাবের মিথ্যা ভিত্তিহীন
প্রতিবেদনের রেফারেন্স ব্যবহার করে মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভ্রান্ত করার অপরাজনীতি
ও ঠেকাতে হবে ।
অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রদায়িক
অপশক্তি জামাত মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের ঘাতকদের পক্ষে সমর্থনমূলক ভূমিকা আদায় করে নিচ্ছে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ।এর
বিপরীতে শুভ শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরী। রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা
প্রদর্শন জরুরী। সরকারের প্রতিটি পর্যায় থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট
অবস্থান নিতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার এক পর্যায়ে দেখা গেলো,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিও)
ধর্মব্যবসায়ীদের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছে।কী কারণে তাদের এ হঠকারী অবস্থান? এর ব্যাখ্যা দাবি রাখে।
তাদের
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, “মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে পিছনের
দিকে চলে গেছে।” কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুশীল সমাজ,
গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সরকার কঠোর দমন-পীড়নে
নিয়োজিত ছিল।”হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এ প্রতিবেদনে সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করা
হলেও এক্ষেত্রে জামায়াতের ভূমিকার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। গাড়ি পুড়িয়ে, পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের বিষয়েও বলা হয়নি কিছু।আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর ওপর হামলার বিষয়েও কিছু নেই।
উল্টো
ক্ষমতাসীনদের ‘নির্যাতনের শিকার ’ হিসেবে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ‘অধিকার’ এর দুই
কর্তাব্যক্তি আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে
প্রতিবেদনে। যারা হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযানের তথ্য বিকৃতির জন্য সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত।এছাড়া বিএনপি নেতা, ‘নাস্তিক’ ব্লগার এবং ‘আমারদেশ’কে ‘প্রধান সংবাদপত্র’ উল্লেখ করে এর সম্পাদককে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
প্রতিবেদনে।
অন্যায় আর মিথ্যাচারের প্রতি কী নির্লজ্জ
এবং ভয়ংকর সমর্থন! আবারো বলছি, শুধু
রাষ্ট্র বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয়, এর প্রতিবাদ করতে হবে আমাদের সাধারণ নাগরিক
সমাজ থেকেও।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত
হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটসওয়াচে'র
অবস্থান স্পষ্টভাবে একাত্তর এবং সাম্প্রতিক সময়ের জামাত শিবিরের ঘাতকদের
পক্ষে ।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া আর রাজনৈতিক অস্থিরতা
মিলিয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো
নাজুক হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রকাশিত হলো ২১
জানুয়ারী মঙ্গলবার ।
২০১৩ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে,
তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়, তাতে বিক্ষোভ
দমনে বাংলাদেশ সরকার ‘বেআইনিভাবে’
শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রিপোর্টে
ব্যালেন্স দেখাতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস আবার
বলেছেন, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মতপার্থক্যের কারণে সহিংস ঘটনার
জন্য দুই পক্ষই দায়ী । বিরোধী দলগুলো তাদের
সমর্থকদেরকে হিংসা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, অন্য পক্ষে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো আইন-শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য কখনো কখনো চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।” এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলতে হয়, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে
নিরীহ মানুষদের জীবন্ত দগ্ধ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কী সাজা দেয়া হতো? গণহত্যা
, ধর্ষণ , অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের দায়ে তারা কী শাস্তি দিতেন?
সাদ্দাম , লাদেন ,
গাদ্দাফির শেষ পরিণতি কি মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়? তখন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর
পর্যবেক্ষক টীম কোথায় ছিল?
একাত্তরের ঘাতককূল শিরোমণি গোলাম আযমের রায় নিয়ে অনাকাঙ্খিত মন্তব্যের জন্য সংগঠনটির বিরুদ্ধে
কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল । এর পর ও যেন ‘টাকা কথা বলে’- আর তাই ঘাতকদের বিচার বন্ধ করার জন্যে লাগামছাড়া
মন্তব্য করেই যাচ্ছে তথাকথিত এই মানবাধিকার সংগঠন- যা হত্যা আর নির্যাতনের পক্ষেই
তাদের হঠকারী অবস্থান স্পষ্ট করছে বারবার।
হিউম্যান
রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের
সমালোচনা করে বলেছেন, “এই
সরকার গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু বরং তারা ক্রমশ স্বৈরাচারী ও
অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।” তবে কি একাত্তরের ঘাতক দের মুক্তির
দাবি তে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে সরকার বিরোধিতার নামে
জনজীবন অচল করে দিয়ে বোমার মুখে মানুষকে জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে যারা, তাদের আইনী
প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা স্বৈরাচারী এবং অসহিষ্ণুতার প্রকাশ?
অনেকের মতে ,মুসলিম ব্রাদারহুড এর নামে সন্ত্রাস দমনে সিরিয়া, মিশর এবং সৌদী আরবে নিয়মিত মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা
হচ্ছে , প্রকাশ্য রাজপথে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সেই পথেই যেতে হবে বাংলাদেশ কে।
একাত্তরে
গণহত্যাকারীদের বিচার ঠেকাতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে জামায়াত।হিউম্যান রাইটস ওয়াচও সেই লবিষ্ট দের অন্যতম । তাই গণহত্যাকারীদের
বাঁচাতে চাইছে ।
সংগঠনটির
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে
বাংলাদেশের রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সারা বছর তা চলতে থাকে এবং এতে
প্রায় ২০০ জন মারা যায় এবং হাজারেরও বেশি আহত হয়।প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে ,“আগের বিক্ষোভগুলোর সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুন্যাল
(আইসিটি)-এর নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর যোগসূত্র ছিল, যা হল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘটা অপরাধ ও অন্যান্য নির্যাতনগুলোর
জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত একটি দেশীয় আদালত।”
যুদ্ধাপরাধের
দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আব্দুল কাদের মোল্লার যুদ্ধাপরাধ গোপন করে তিনি জামায়াতে
ইসলামীর একজন বর্ষীয়ান সদস্য – এই পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়,“মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর বছর শেষে আরো বিক্ষোভ
ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। "
আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক
আইন লঙ্ঘন করে আইসিটির আইনে সংশোধনীগুলো
অনুসরণ করে তাকে অভিযুক্ত করা হয় ও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।” এ ধরণের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি
করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জরুরী।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের এ ধরণের হঠকারী
ভূমিকা পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক
অপশক্তি কে। যে কারণে এখনো হিন্দু পরিবার গুলোর উপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পুলিশ ও জনগণের
ওপর জামায়াতীদের হামলা করা হচ্ছে বারবার। ১৮
জানুয়ারী শনিবার আবার সেই ঘটনার
পুনরাবৃত্তি হয়েছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকায়। শনিবার মধ্যরাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট
এলাকায় ‘পুলিশ হত্যা মামলা’ সহ
কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার করতে অভিযান চালায় পুলিশ ।এ সময় একটি মসজিদ ও
মাদ্রাসার মাইক থেকে প্রচার করা হয়, গ্রামে সশস্ত্র
ডাকাতরা হামলা চালিয়েছে। গুজব ছড়ানো হয়, আওয়ামী লীগ,
যুব লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ডাকাত সেজে হামলা চালিয়েছে। মসজিদ
ও মাইকে এই মিথ্যা ঘোষণা শুরু হলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।
তারা পুলিশের পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। খানাবাড়ি গ্রামের ১২টি বসতবাড়ি ও খড়ের গাদায়
আগুন দেয়া হয়। জামায়াতের ক্যাডার ও জামায়াত সমর্থক গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের
সংঘর্ষে ২২ পুলিশ জখম হয়। কিছু গ্রামবাসীও আহত হয়েছে ।এসবের দায় কার?
১১
এপ্রিল ২০১৩ দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের কাজীরহাটে মসজিদের মাইকে মিথ্যা গুজব
ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলের ওপর হামলা হয়, যাতে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের
কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী
নিহত হন, আহত হন দেড়শতাধিক। পুড়িয়ে দেয়া হয় মিছিলের সঙ্গে
থাকা দুই শতাধিক মোটরসাইকেল, কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও জিপ। ভুজপুর ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান ও থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিউল্লাহ নুরী সরাসরি এই হামলার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত। সেদিন কাজীর হাট
জামে মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার করা হয় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে মসজিদে হামলা করা
হয়েছে এবং স্থানীয় মাদ্রাসার বড়– হুজুরকে তুলে নিয়ে যাওয়া
হচ্ছে। পরিকল্পিত এই ঘোষনার গুজবে কান দিয়ে জামায়াতকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়
গ্রামবাসীরাও হামলায় অংশ নেয়।
সেই
ভয়ংকর ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন এভাবে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে হত্যা এবং নির্যাতনে যেন আর কোন মসজিদের মাইক ব্যবহার করা না হয়। এই
ঘোষণার কোন কার্যকারিতা দেখা গেলো না। আবারো পুনরাবৃত্তি হলো, আক্রান্ত হলো স্বয়ং
পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং তাদের বহন করা গাড়ি। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ
ছাড়া আর কী বলা যায় একে?
৫ মে নবম সংসদ নির্বাচনের পর অনেকের ধারণা ছিল, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা হয়ত জঙ্গী তৎপরতা
থেকে বিরত থাকবে। হয়তো তাদের কৌশল বদলাবে।
কিন্তু
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশের ওপর জামায়াতী সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলার পর প্রমাণ
হলো, জামায়াত-শিবির চক্র মরিয়া।
নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরও বড় ধরনের হামলা
চালানোর আশংকা স্পষ্ট। এ জন্য এখন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বক্ষণিকভাবে
সম্ভাব্য যে কোন ধরনের হামলা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জামায়াত-শিবির
সন্ত্রাসী সংগঠন- সেটা তাদের কর্মকান্ডে বারবার প্রমাণিত।
এটাও প্রমাণিত
হলো, তারা পবিত্র
ধর্মের কথা বলে, কিন্তু কল্যাণমূলক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। মওদুদীর দীক্ষামতে মিথ্যাচার
আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ তাদের মূল লক্ষ্য।
মিথ্যাচার
প্রতারণা ও লুটপাট তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি। মসজিদ মাদ্রাসার মতো
পবিত্র স্থানকে তাদের হীন রাজনৈতিক কৌশল চরিতার্থের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। তারা ধর্মভীরু মানুষের সরল
ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে জিম্মি করে
ফেলে। যে নিরীহ ছা-পোষা মানুষেরা ভাবতেও পারে না, কেউ কখনো মসজিদের মাইকে মিথ্যা প্রচার চালাতে
পারে। কিন্তু জামায়াতী দুর্বৃত্তরা তাই করছে। তারা মাইকে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে
পুলিশ এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত
হামলা করছে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটার জেলেপাড়া,
হাটহাজারী , ফটিকছড়ি, সাতক্ষীরা , রামুর বৌদ্ধমন্দির সহ অসংখ্য ঘটনার ধারাবাহিকতা তার ই প্রমাণ।
পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর নামে তারা মূলত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু
করেছে। একাত্তরের চরিত্র অপরিবর্তনীয়। কারণ, বাংলা এবং বাঙ্গালী কৃষ্টি সংস্কৃতি বিনাশে
তাদের লক্ষ্যে তারা স্থির।
জামায়াত-শিবির
চক্র বারবার প্রমাণ করছে তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং সন্ত্রাস বিধ্বস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।স্পষ্টত: তারা রাষ্ট্রদ্রোহী।
আর তাই বাংলাদেশের মাটিতে রাষ্ট্রদ্রোহী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করার
সুযোগ নেই। এখন থেকে মাদ্রাসা ও মসজিদে রাখা প্রতিটি মাইক ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর
বিধিনিষেধ চালু করা দরকার। ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন নাশকতার উদ্দেশে এসব
মাইক ব্যবহার করা যাবে না। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যারা হামলা করেছে, তাদের অবিলম্বে দ্রুত বিচারব্যবস্থায় বিচারের
মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫ জানুয়ারীর দ্য উইক পত্রিকা লিখেছে, আরব বসন্তের দু’টি দেশ মিসর
এবং তিউনিসিয়া গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইতে
নেমেছে। ৯৮% মুসলিমের দেশ তিউনিসিয়া। তাদের
সংসদে মেজরিটি-ভোটে গঠনতন্ত্র পাশ হল । দেশের আইন ব্যবস্থা শারিয়া-ভিত্তিক হবে না, হবে আধুনিক। তিউনিসিয়াকে আর "ইসলামী
রাষ্ট্র" বলা হবেনা, বলা হবে রিপাবলিক বা
"প্রজাতন্ত্র"। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের শিরোমণি সৌদি আরবের মন্ত্রনালয় নির্দেশ দিয়েছে "জুমা'র নামাজের খুতবায় রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে ইমাম চাকরী হারাবেন"।এটা
জরুরী ভিত্তিতে চালু করতে হবে এদেশেও।আবারো বলছি,সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে যে দৃষ্টান্ত
, সেটা অনুসরণ করতে হবে।
অনেক বিপর্যয়ের পর দেশে
আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরছে মনে করছে মানুষ। এ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ
সরকারকে মানবতা রক্ষার সংকল্পে অটল থাকতে হবে।আর এ কারণেই রাজনীতিতে ধর্ম এবং ধর্মে
রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে সরকারকে।রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্তা এবং সাধারণ
মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় এর কোন বিকল্প নেই।
Sumikhan29bdj@gmail.com
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিথ্যা
প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান জরুরী –সুমি খান
ধর্মীয় কাজে রাজনীতির ব্যবহার, অথবা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার- মানবতার
জন্যে দুই-ই বিপজ্জনক এবং সর্বনাশা। বিশ্বজুড়ে
এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে সবাই। ইসলামী দেশ তিউনিসিয়া ও নিজেদের ‘ইসলামী রাষ্ট্র’
পরিচয় বদলে রিপাবলিকান দেশ হিসেবে পরিচয়
দিতে সংসদে প্রস্তাব পাশ করেছে। মসজিদে খুৎবা দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য
শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে সৌদী আরব। এই আইন গুলো এদেশে ও কার্যকর
জরুরী । নাহয় মসজিদ আর ‘ইসলামী জলসা’ কে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু এবং নারীদের
বিরুদ্ধে অশ্লীল প্রচারণা বন্ধ হবে না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তৃণমূল পর্যায়ে
মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি দিয়ে এ দেশকে সংখ্যালঘু এবং
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি শূন্য করার ষড়যন্ত্র ঠেকানো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।
নতুন
মন্ত্রীপরিষদ দায়িত্ব নিয়েই অভিনন্দন পাবার মতো কিছু কাজ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরায় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস দমনে ভারতীয়
যৌথবাহিনীর অবস্থান সংক্রান্ত ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশের দায়ে দৈনিক ইনকিলাব
কর্তৃপক্ষ এবং তাদের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার
আলম এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে
এজন্যে অভিনন্দন জানাই। এই ধারাবাহিকতা ব্যাহত
হলে মিডিয়াকে ব্যবহার করে পরিকল্পিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি
ঠেকানো কঠিন হবে । দেশের সার্বভৌমতা কে চ্যালেঞ্জ করেছে বিভ্রান্তিকর এ প্রতিবেদন।
এ ব্যাপারে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর স্পষ্ট বক্তব্য এই অপপ্রচার এবং সাধারণ মানুষের
বিভ্রান্তি ঠেকাতে জরুরী।
দৈনিক প্রথম আলো ৬ জানুয়ারী কলঙ্কিত নির্বাচন: জাল ভোট
শিরোনামের লিড রিপোর্টে ফটোশপের মাধ্যমে সিঁদুর বসিয়ে হিন্দু নারী
ভোটারদের আলোচিত ছবি প্রকাশ করে। যা
পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক হামলায় উস্কানি দেয়।জালভোটের মিথ্যা ছবি প্রকাশ করে; যার
প্রতিবাদ জানায় ছবির তরুণ। তার জীবনের প্রথম ভোট দিতে গিয়ে ভোট কিভাবে দিতে হবে
জিজ্ঞেস করছিলো ঐ তরুণ।ঐ তরুণের ব্যাপারে না জেনে এ ধরণের ছবি প্রকাশ সাংবাদিকতার
নীতি নৈতিকতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তার জীবনের প্রারম্ভেই যে কলঙ্ক প্রথম আলো তার
জীবনে লেপন করে দিলো- তার কী শাস্তি হওয়া উচিত? এ ধরণের হরুদ সাংবাদিকতা ঠেকাতে এর
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।
একই ভাবে ইনকিলাবের মিথ্যা ভিত্তিহীন
প্রতিবেদনের রেফারেন্স ব্যবহার করে মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভ্রান্ত করার অপরাজনীতি
ও ঠেকাতে হবে ।
অভিযোগ রয়েছে, সাম্প্রদায়িক
অপশক্তি জামাত মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের ঘাতকদের পক্ষে সমর্থনমূলক ভূমিকা আদায় করে নিচ্ছে তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ।এর
বিপরীতে শুভ শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরী। রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা
প্রদর্শন জরুরী। সরকারের প্রতিটি পর্যায় থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে সুষ্পষ্ট
অবস্থান নিতে হবে।
যুদ্ধাপরাধীদের
বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার এক পর্যায়ে দেখা গেলো,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিও)
ধর্মব্যবসায়ীদের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছে।কী কারণে তাদের এ হঠকারী অবস্থান? এর ব্যাখ্যা দাবি রাখে।
তাদের
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, “মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে পিছনের
দিকে চলে গেছে।” কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুশীল সমাজ,
গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর সরকার কঠোর দমন-পীড়নে
নিয়োজিত ছিল।”হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এ প্রতিবেদনে সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করা
হলেও এক্ষেত্রে জামায়াতের ভূমিকার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। গাড়ি পুড়িয়ে, পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যাকারীদের বিষয়েও বলা হয়নি কিছু।আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর ওপর হামলার বিষয়েও কিছু নেই।
উল্টো
ক্ষমতাসীনদের ‘নির্যাতনের শিকার ’ হিসেবে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ‘অধিকার’ এর দুই
কর্তাব্যক্তি আদিলুর রহমান খান ও নাসিরউদ্দিন এলানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে
প্রতিবেদনে। যারা হেফাজতবিরোধী মতিঝিল অভিযানের তথ্য বিকৃতির জন্য সুনির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত।এছাড়া বিএনপি নেতা, ‘নাস্তিক’ ব্লগার এবং ‘আমারদেশ’কে ‘প্রধান সংবাদপত্র’ উল্লেখ করে এর সম্পাদককে গ্রেপ্তারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে
প্রতিবেদনে।
অন্যায় আর মিথ্যাচারের প্রতি কী নির্লজ্জ
এবং ভয়ংকর সমর্থন! আবারো বলছি, শুধু
রাষ্ট্র বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয়, এর প্রতিবাদ করতে হবে আমাদের সাধারণ নাগরিক
সমাজ থেকেও।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত
হলো যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে মার্কিন মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটসওয়াচে'র
অবস্থান স্পষ্টভাবে একাত্তর এবং সাম্প্রতিক সময়ের জামাত শিবিরের ঘাতকদের
পক্ষে ।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া আর রাজনৈতিক অস্থিরতা
মিলিয়ে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো
নাজুক হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রকাশিত হলো ২১
জানুয়ারী মঙ্গলবার ।
২০১৩ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে,
তাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়, তাতে বিক্ষোভ
দমনে বাংলাদেশ সরকার ‘বেআইনিভাবে’
শক্তি প্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রিপোর্টে
ব্যালেন্স দেখাতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস আবার
বলেছেন, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মতপার্থক্যের কারণে সহিংস ঘটনার
জন্য দুই পক্ষই দায়ী । বিরোধী দলগুলো তাদের
সমর্থকদেরকে হিংসা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, অন্য পক্ষে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো আইন-শৃঙ্খলা
বজায় রাখার জন্য কখনো কখনো চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।” এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলতে হয়, পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে
নিরীহ মানুষদের জীবন্ত দগ্ধ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কী সাজা দেয়া হতো? গণহত্যা
, ধর্ষণ , অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধের দায়ে তারা কী শাস্তি দিতেন?
সাদ্দাম , লাদেন ,
গাদ্দাফির শেষ পরিণতি কি মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়? তখন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর
পর্যবেক্ষক টীম কোথায় ছিল?
একাত্তরের ঘাতককূল শিরোমণি গোলাম আযমের রায় নিয়ে অনাকাঙ্খিত মন্তব্যের জন্য সংগঠনটির বিরুদ্ধে
কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল । এর পর ও যেন ‘টাকা কথা বলে’- আর তাই ঘাতকদের বিচার বন্ধ করার জন্যে লাগামছাড়া
মন্তব্য করেই যাচ্ছে তথাকথিত এই মানবাধিকার সংগঠন- যা হত্যা আর নির্যাতনের পক্ষেই
তাদের হঠকারী অবস্থান স্পষ্ট করছে বারবার।
হিউম্যান
রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের
সমালোচনা করে বলেছেন, “এই
সরকার গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি এবং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
ক্ষমতায় এসেছিল, কিন্তু বরং তারা ক্রমশ স্বৈরাচারী ও
অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।” তবে কি একাত্তরের ঘাতক দের মুক্তির
দাবি তে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে সরকার বিরোধিতার নামে
জনজীবন অচল করে দিয়ে বোমার মুখে মানুষকে জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে যারা, তাদের আইনী
প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা স্বৈরাচারী এবং অসহিষ্ণুতার প্রকাশ?
অনেকের মতে ,মুসলিম ব্রাদারহুড এর নামে সন্ত্রাস দমনে সিরিয়া, মিশর এবং সৌদী আরবে নিয়মিত মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা
হচ্ছে , প্রকাশ্য রাজপথে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সেই পথেই যেতে হবে বাংলাদেশ কে।
একাত্তরে
গণহত্যাকারীদের বিচার ঠেকাতে লবিস্ট নিয়োগ করেছে জামায়াত।হিউম্যান রাইটস ওয়াচও সেই লবিষ্ট দের অন্যতম । তাই গণহত্যাকারীদের
বাঁচাতে চাইছে ।
সংগঠনটির
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে
বাংলাদেশের রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয় এবং সারা বছর তা চলতে থাকে এবং এতে
প্রায় ২০০ জন মারা যায় এবং হাজারেরও বেশি আহত হয়।প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে ,“আগের বিক্ষোভগুলোর সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুন্যাল
(আইসিটি)-এর নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর যোগসূত্র ছিল, যা হল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঘটা অপরাধ ও অন্যান্য নির্যাতনগুলোর
জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত একটি দেশীয় আদালত।”
যুদ্ধাপরাধের
দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আব্দুল কাদের মোল্লার যুদ্ধাপরাধ গোপন করে তিনি জামায়াতে
ইসলামীর একজন বর্ষীয়ান সদস্য – এই পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়,“মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর বছর শেষে আরো বিক্ষোভ
ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। "
আরো বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক
আইন লঙ্ঘন করে আইসিটির আইনে সংশোধনীগুলো
অনুসরণ করে তাকে অভিযুক্ত করা হয় ও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।” এ ধরণের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি
করে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জরুরী।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের এ ধরণের হঠকারী
ভূমিকা পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক
অপশক্তি কে। যে কারণে এখনো হিন্দু পরিবার গুলোর উপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
মসজিদের মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পুলিশ ও জনগণের
ওপর জামায়াতীদের হামলা করা হচ্ছে বারবার। ১৮
জানুয়ারী শনিবার আবার সেই ঘটনার
পুনরাবৃত্তি হয়েছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকায়। শনিবার মধ্যরাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট
এলাকায় ‘পুলিশ হত্যা মামলা’ সহ
কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার করতে অভিযান চালায় পুলিশ ।এ সময় একটি মসজিদ ও
মাদ্রাসার মাইক থেকে প্রচার করা হয়, গ্রামে সশস্ত্র
ডাকাতরা হামলা চালিয়েছে। গুজব ছড়ানো হয়, আওয়ামী লীগ,
যুব লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ডাকাত সেজে হামলা চালিয়েছে। মসজিদ
ও মাইকে এই মিথ্যা ঘোষণা শুরু হলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।
তারা পুলিশের পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। খানাবাড়ি গ্রামের ১২টি বসতবাড়ি ও খড়ের গাদায়
আগুন দেয়া হয়। জামায়াতের ক্যাডার ও জামায়াত সমর্থক গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের
সংঘর্ষে ২২ পুলিশ জখম হয়। কিছু গ্রামবাসীও আহত হয়েছে ।এসবের দায় কার?
১১
এপ্রিল ২০১৩ দুপুরে ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরের কাজীরহাটে মসজিদের মাইকে মিথ্যা গুজব
ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের হরতালবিরোধী মিছিলের ওপর হামলা হয়, যাতে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের
কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মী
নিহত হন, আহত হন দেড়শতাধিক। পুড়িয়ে দেয়া হয় মিছিলের সঙ্গে
থাকা দুই শতাধিক মোটরসাইকেল, কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও জিপ। ভুজপুর ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান ও থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিউল্লাহ নুরী সরাসরি এই হামলার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত। সেদিন কাজীর হাট
জামে মসজিদ থেকে মাইকে প্রচার করা হয় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে মসজিদে হামলা করা
হয়েছে এবং স্থানীয় মাদ্রাসার বড়– হুজুরকে তুলে নিয়ে যাওয়া
হচ্ছে। পরিকল্পিত এই ঘোষনার গুজবে কান দিয়ে জামায়াতকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয়
গ্রামবাসীরাও হামলায় অংশ নেয়।
সেই
ভয়ংকর ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন এভাবে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে হত্যা এবং নির্যাতনে যেন আর কোন মসজিদের মাইক ব্যবহার করা না হয়। এই
ঘোষণার কোন কার্যকারিতা দেখা গেলো না। আবারো পুনরাবৃত্তি হলো, আক্রান্ত হলো স্বয়ং
পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং তাদের বহন করা গাড়ি। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ
ছাড়া আর কী বলা যায় একে?
৫ মে নবম সংসদ নির্বাচনের পর অনেকের ধারণা ছিল, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা হয়ত জঙ্গী তৎপরতা
থেকে বিরত থাকবে। হয়তো তাদের কৌশল বদলাবে।
কিন্তু
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশের ওপর জামায়াতী সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলার পর প্রমাণ
হলো, জামায়াত-শিবির চক্র মরিয়া।
নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরও বড় ধরনের হামলা
চালানোর আশংকা স্পষ্ট। এ জন্য এখন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সর্বক্ষণিকভাবে
সম্ভাব্য যে কোন ধরনের হামলা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জামায়াত-শিবির
সন্ত্রাসী সংগঠন- সেটা তাদের কর্মকান্ডে বারবার প্রমাণিত।
এটাও প্রমাণিত
হলো, তারা পবিত্র
ধর্মের কথা বলে, কিন্তু কল্যাণমূলক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে না। মওদুদীর দীক্ষামতে মিথ্যাচার
আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ তাদের মূল লক্ষ্য।
মিথ্যাচার
প্রতারণা ও লুটপাট তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূল ভিত্তি। মসজিদ মাদ্রাসার মতো
পবিত্র স্থানকে তাদের হীন রাজনৈতিক কৌশল চরিতার্থের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। তারা ধর্মভীরু মানুষের সরল
ধর্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে জিম্মি করে
ফেলে। যে নিরীহ ছা-পোষা মানুষেরা ভাবতেও পারে না, কেউ কখনো মসজিদের মাইকে মিথ্যা প্রচার চালাতে
পারে। কিন্তু জামায়াতী দুর্বৃত্তরা তাই করছে। তারা মাইকে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে
পুলিশ এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর উপর পরিকল্পিত
হামলা করছে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটার জেলেপাড়া,
হাটহাজারী , ফটিকছড়ি, সাতক্ষীরা , রামুর বৌদ্ধমন্দির সহ অসংখ্য ঘটনার ধারাবাহিকতা তার ই প্রমাণ।
পুলিশ বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর নামে তারা মূলত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু
করেছে। একাত্তরের চরিত্র অপরিবর্তনীয়। কারণ, বাংলা এবং বাঙ্গালী কৃষ্টি সংস্কৃতি বিনাশে
তাদের লক্ষ্যে তারা স্থির।
জামায়াত-শিবির
চক্র বারবার প্রমাণ করছে তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং সন্ত্রাস বিধ্বস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।স্পষ্টত: তারা রাষ্ট্রদ্রোহী।
আর তাই বাংলাদেশের মাটিতে রাষ্ট্রদ্রোহী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করার
সুযোগ নেই। এখন থেকে মাদ্রাসা ও মসজিদে রাখা প্রতিটি মাইক ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর
বিধিনিষেধ চালু করা দরকার। ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন নাশকতার উদ্দেশে এসব
মাইক ব্যবহার করা যাবে না। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যারা হামলা করেছে, তাদের অবিলম্বে দ্রুত বিচারব্যবস্থায় বিচারের
মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৫ জানুয়ারীর দ্য উইক পত্রিকা লিখেছে, আরব বসন্তের দু’টি দেশ মিসর
এবং তিউনিসিয়া গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইতে
নেমেছে। ৯৮% মুসলিমের দেশ তিউনিসিয়া। তাদের
সংসদে মেজরিটি-ভোটে গঠনতন্ত্র পাশ হল । দেশের আইন ব্যবস্থা শারিয়া-ভিত্তিক হবে না, হবে আধুনিক। তিউনিসিয়াকে আর "ইসলামী
রাষ্ট্র" বলা হবেনা, বলা হবে রিপাবলিক বা
"প্রজাতন্ত্র"। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের শিরোমণি সৌদি আরবের মন্ত্রনালয় নির্দেশ দিয়েছে "জুমা'র নামাজের খুতবায় রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে ইমাম চাকরী হারাবেন"।এটা
জরুরী ভিত্তিতে চালু করতে হবে এদেশেও।আবারো বলছি,সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে যে দৃষ্টান্ত
, সেটা অনুসরণ করতে হবে।
অনেক বিপর্যয়ের পর দেশে
আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরছে মনে করছে মানুষ। এ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ
সরকারকে মানবতা রক্ষার সংকল্পে অটল থাকতে হবে।আর এ কারণেই রাজনীতিতে ধর্ম এবং ধর্মে
রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে সরকারকে।রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্তা এবং সাধারণ
মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় এর কোন বিকল্প নেই।
Sumikhan29bdj@gmail.com
No comments:
Post a Comment