Thursday, January 23, 2014

জীবন কথন ॥ গবেষণ ॥ মানবপরিচয়ের স্থানিক বিশেষণ রণজিৎ বিশ্বাস

রায়গঞ্জের হলে রায়গঞ্জি, গোলাপগঞ্জের হলে গোলাপি, জিলবাংলার হলে জিলাপি, গোপালগঞ্জের হলে গোপালিÑ এমন ফর্মুলায় নাম কি কারও হতে পারে?
: পারবে, এক শ’ বার নয়, দু’ শ’ তিনবার পারবে, দু’ শ’ তিনবার নয়, তিন শ’ উনিশবার পারবে, তিন শ’ উনিশ নয়, পাঁচ শ’ সাঁইত্রিশ বার পারবে, আট শ’ পঁয়তাল্লিশ বার পারবে, নয় শ’ পঞ্চান্নবার পারবে, এগারো শ’ আটানব্বইবার পারবে। যেমনÑরংপুরী, দিনাজপুরী, শরিয়তপুরী, টাঙ্গাইলি, বাসাইলি, পাতরাইলি, চৌদ্দগ্রামী, চাঁদপুরী, এনায়েতপুরী, মনোহরপুরী ইত্যাদি। বাখেরগঞ্জি, বালাগঞ্জি, ঈশ্বরঞ্জি, ফেঞ্চুগঞ্জি, শ্রীহটলি ইত্যাদিও হতে পারে। হওয়ালেই হয়, চালালেই চলে, বলালেই বলে, নাচালেই নাচে, ফাটালেই ফাটে। 
: তারপরও বলি, আপনার ই-ফর্মুলা বা ঈ-ফর্মুলা সব জায়গায় খাটবে না। 
: চাটগাঁর মানুষকে কী বলবেন? চাটলী? 
: সে রকম কেন বলব?! আমি পাগল নাকি? 
:অন্যের বেলা জানি না, আমার কোন সন্দেহ নেই।
: অমন বিড়বিড় করে কী বলছেন! যা বলবেন পরিষ্কার করে বলবেন, স্পষ্ট করে বলবেন। শুনিয়ে শানিয়ে বলবেন। এমনভাবে বলবেন আমাকে যেন বলতে না হয়- এই ভদ্রলোক, কী বলছিলেন এতক্ষণ! পরিষ্কার করে বলুনতো শুনি। বাড়ি, কোথায়? ইত্যাদি ইত্যাদি, ওগাইরা ওগাইরা। 
: আমি বলছি, কিছু কিছু জায়গা আছে, নাম এমন খটমট, আপনার ফর্মুলা প্রয়োগে ভজকট বাধবে। 
: বাধবে না। 
: আমি বলছি, বাধবে। চট্টগ্রামের লোকেদের না হয় আপনার দীর্ঘ ঈ-ফর্মুলায় চট্টগ্রামী বলে চালিয়ে দিলেন, ‘চাটগাঁ’ যদি আমি বলি? তখন কী করবেন?
: তখন ভিন্ন ফর্মুলা। তখন হবে, চাটগাঁইয়া, যেমন সোনারগাঁইয়া, বনগাঁইয়া ইত্যাদি। 
: যদি বলি নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, স্বরূপকাঠি, নেছারাবাদ, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ভোলা? 
: আমার কোন অসুবিধা হবে না। তখন স্থানিক বিশেষণগুলো হবে- নোয়াখাইল্যা, কুমিল্লাইয়া, বরিশাইল্যা, পউট্টাখাইল্যা, কক্সবাজাইরগ্যা, স্বরূপকাইট্টা, নেছারাবাইদ্যা, চন্দ্রঘোইন্যা, কাপ্তাইয়া, বান্দরবাইন্যা, খাগড়াছইড়গ্যা, ভোলাইয়া ইত্যাদি। 
: তারপরও দেখবেন, কোন কোন জায়গার নাম আপনি এমন পাবেন, স্থানিক বিশেষণ আপনি সহজে যোগাড় করতে পারবেন না। বড় মনের কিছু ছোট মানুষের মতো-আউটডেইটেড ও আউটফ্যাশানড মানুষগুলোর কথা বাদ দিন, ছোট মনের বড় মানুষগুলোর মতো অন্য মানুষকে অসম্মান করার মতো উপযুক্ত, উন্নত, লাগসই, উপযোগী, ও ‘খাপখাইটিং’ শব্দ আপনি খুঁজে পাবেন না। আপনার ফর্মুলা ছক মানবে না। 
: বুঝলাম না!
: বুঝতে হবে আপনাকে। সন্দ্বীপ, উড়িরচর, চরফ্যাশান, চরকুকড়িমুকড়ি, লালমোহন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া, গোমদ-ী, রাজশাহী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, রাঙ্গাবালি, সুন্দরবন, কটকা, হিরণ পয়েন্ট, উল্লাপাড়া, হাটিকুমরুল, চৌহালি, কাজীপুর, লাহিড়ীমোহনপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজবাড়ি, পলাশবাড়ি, পাকুন্দিয়া, কটিয়াদি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাঞ্ছারামপুর, বিতঙ্গল, নাগরপুর, এলাসিন, চৌহালি, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট, বগুড়া, বাদলগাছি, পঞ্চগড়, হাতিয়া, রামগতি, ময়নামতি, নারাঙগিরি চিৎমরং, আলুটিলা, সাজেক, দিঘীনালা, তাড়াশ, হরিণঘাটা, মেলাদহ, পোড়াদহ, ঈশ্বরদী, নরসিংদী, বেলাব, জামুর্কি, চরভদ্রাসন 
-এসব এলাকার মানুষগুলোকে অবজ্ঞা করার জন্য অসম্মান করার জন্য ছোট মনের বড় মানুষদের মুখে আপনি কী কী শব্দ তুলে দেবেন?!
: আমাকে একটু সময় দিন, গবেষণা করে দেখি!
: না। সময়ও আপনাকে দেয়া যাবে না, গবেষণা করে দেখতেও আপনার হবে না।
: আমি তাহলে কী করব?
: কিছুই আপনাকে করতে হবে না। আপনি শুধু বহু পুরনো একটি কথা মেনে নিন। খেলিলে খেলোযাড়, কিন্তু জানিলে জানোয়ার নয়, লিখিলে নয় লেখোয়াড়, আনিলে নয় আনোয়ার, মনে মনে ভাবিলেই নয় মনোয়ার। 
লেখক : শ্রমজীবী কথাসাহিত্যিক ও রম্যলেখক

No comments:

Post a Comment