Wednesday, January 22, 2014

শুভাশীষের সঙ্গে সতর্কবাণীও -আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল তাঁর হাতের দুই আঙুলে ভি চিহ্ন তৈরি করে তাঁর দেশের মানুষকে ভিক্টোরি বা বিজয়ের প্রতীক দেখিয়েছিলেন। এবার ২০১৪ সালে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে ভি চিহ্ন দেখাননি, তাঁর নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার গঠন করেছেন। ১২ জানুয়ারি রবিবার এ মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করেছে।
অনেকের ভয় ছিল, শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের মতো হয়তো এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন, যা জনগণের অনেকের পছন্দসই হবে না। আমিও কয়েক দিন যাবৎ আমার বিভিন্ন কলামে শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছি, এবার যেন তিনি দেশকে একটি ক্লিন ও যোগ্য মন্ত্রিসভা উপহার দেন। যারা দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করবে। তা যদি হয়, তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে যাঁরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রশ্ন তুলছেন, বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাইছেন, তাঁরা নিশ্চুপ হবেন এবং জঙ্গি মৌলবাদ, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও একটি নিরপেক্ষতার মুখোশধারী সুধীসমাজ নতুন করে চক্রান্ত শুরু করার সুযোগ পাবে না।
নতুন মন্ত্রিসভায় ২৯ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী আছেন। সাকল্যে ৪৯ জনের মন্ত্রিসভা। আরো দু-একজন বেশি মন্ত্রী গ্রহণ করা না হলে একে একটি মাঝারি সাইজের মন্ত্রিসভা বলা চলবে। এই মন্ত্রিসভায় ২০০৮ সালে গঠিত মন্ত্রিসভার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য, দক্ষ, প্রবীণ ও নতুন মন্ত্রী আছেন। তাতে আমরা আশ্বস্ত। এই মন্ত্রিসভা একেবারে ক্লিন- সে কথা আমি বলব না। কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি অবশ্যই আছেন। কিন্তু শতভাগ ক্লিন মন্ত্রিসভা গঠনের মতো ফেরেশতা বাংলাদেশে কেন, কোনো দেশেই আজকাল পাওয়া যাবে, তা মনে হয় না। যদি পাওয়া যেত, তাহলে নয়াচীনের মতো একটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত কমিউনিস্ট দেশে ক্ষমতাসীন পার্টি ও সরকারের বহু শীর্ষস্থানীয় নেতাকে দুর্নীতির দায়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে হতো না।
বর্তমান যুগে ডান ও বাম দুই ধরনের রাজনীতিই অনেকটা সোনার গয়নার মতো। খাঁটি সোনা দিয়ে যেমন গয়না গড়া যায় না, তাতে খাদ মেশাতে হয়, তেমনি রাজনীতিতেও ভালোমন্দের মিশ্রণ না থাকলে তা কার্যকর রাজনীতি হয়ে ওঠে না। জনসাধারণও অতি ভালো মানুষ বা ফেরেশতাদের অক্ষম সরকার চায় না। তারা চায় ভালোমন্দে মিশ্রিত মানুষের সরকার। তবে সেই সরকারে ভালো ও দক্ষ মানুষের সংখ্যা যেন বেশি হয় এবং তাঁরা যেন দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হন। তাদের বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়ান।
শেখ হাসিনা এবার দেশকে এমন একটি সরকার উপহার দিতে পেরেছেন বলে অনেকেই মনে করেন। তোফায়েল আহমদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রাশেদ খান মেননের মতো অভিজ্ঞ প্রবীণ মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা তো এই মন্ত্রিসভায় আছেনই; তাঁদের সঙ্গে গত মন্ত্রিসভায় যাঁরা দক্ষতা ও যোগ্যতার জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, তাঁরাও আছেন। যেমন ওবায়দুল কাদের ও হাসানুল হক ইনু। শেষোক্ত দুজনই তুলনামূলকভাবে তরুণ। নতুন আইনমন্ত্রী হয়েছেন আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় তাঁর আইনি দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া গেছে। আশা করা যায়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা ও দণ্ডদানের কাজও তিনি যোগ্যতার সঙ্গে দ্রুত শেষ করে সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করবেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।
মন্ত্রিসভায় পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে নতুন মুখ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাতীয় পার্টি থেকে এসেছেন। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। পানিসম্পদ নিয়ে দেশ এখন বড় ধরনের সংকটের সম্মুখীন। ফারাক্কার পানির ভাগ পাওয়া নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিতর্ক তো এখনো রয়েছেই। তার ওপর গোঁদের ওপর বিষফোড়া সৃষ্টি করেছে তিস্তার পানি, মনু নদী ও টিপাইমুখ বাঁধের সমস্যা। ভারতের সঙ্গে এসব সমস্যার আশু সুসমাধান না হলে বাংলাদেশ একদিকে ভয়াবহ খরা, অন্যদিকে অতিবৃষ্টি ও প্লাবনের দ্বারা ধ্বংস হবে।
এসব সমস্যা সমাধানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আগ্রহ ও আন্তরিকতা দেখালেও প্রচণ্ড বাধার সৃষ্টি করে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই দপ্তরের মন্ত্রীকে তাই তাঁর কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দ্বারা এই পানি সমস্যা সমাধানে দ্রুত সাফল্য দেখাতে হবে। আমার ধারণা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ ব্যাপারে তাঁর যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দেখাতে পারবেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় আরেকজন প্রতিশ্রুতিশীল নতুন মুখ আসাদুজ্জামান নূর। তিনি একাধারে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের একটি টেলিনাটকে বাকের ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। সব চেয়ে অভূতপূর্ব ঘটনা, নাটকের বাকের ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ যাতে না হয় তার দাবি জানিয়ে ঢাকায় বিরাট মিছিল বের হয়েছিল। নূর সাংস্কৃতিক চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শিবিরের লোক। তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী হয়েছেন। এই মন্ত্রী বাছাইয়ে শেখ হাসিনাকে প্রশংসা করতে হয়। তিনি যোগ্য হাতে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
বহুকাল এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যোগ্য হাতে ছিল না। অথচ এই সাংস্কৃতিক ফ্রন্টেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে, যাতে বাংলাদেশ ও বাঙালির লোকায়ত ভাষা-সংস্কৃতির ভিত্তি ধ্বংস করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপসংস্কৃতির আগ্রাসনকে জয়যুক্ত করা যায়। সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে পরাজয় দেশের গণতান্ত্রিক শিবিরের রাজনৈতিক পরাজয়ও ডেকে আনবে। এদিকটা মনে রেখে আসাদুজ্জামান নূরের মতো একজন প্রগতিশীল মানুষের হাতে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পিত হওয়ায় আশা করা যায়, দেশের প্রায় ঝিমিয়ে পড়া প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাটিকে তিনি পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেন এবং সাংস্কৃতিক শিবির আবার সেক্যুলার আন্দোলনের সহযোদ্ধা হয়ে উঠবে।
মন্ত্রিসভায় দুটি নাম না দেখে একটু বিস্মিত হয়েছি। একজন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আরেকজন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। সাবেক মন্ত্রিসভায় মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী (বর্তমান মন্ত্রিসভায়ও একই পদে আছেন) ও ড. আবদুর রাজ্জাক খাদ্যমন্ত্রী থাকায় দুজনের আন্তরিকতা ও পরিশ্রমে দেশ শুধু কৃষি উৎপাদনেই উদ্বৃত্ত হয়নি, খাদ্যেও স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই আবদুর রাজ্জাক নতুন সরকারেও একই পদে থাকবেন ভেবেছিলাম। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা কী বিবেচনা করেছেন, তা আমি জানি না। সুতরাং অধিক মন্তব্য আর করছি না।
জাহাঙ্গীর কবির নানক যুবলীগের নেতা হিসেবে যে সংগঠন শক্তির পরিচয় দেখিয়েছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। এক-এগারোর সেই দুঃসময়ে আগরতলায় পলাতক অবস্থায় থেকে নানক কিভাবে দেশের ভেতরে ও বাইরে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, তা আমি জানি। তিনি আগরতলায় বসে সুদূর লন্ডনে টেলিফোনে আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং প্রতিরোধ আন্দোলনে সহায়ক এমন লেখার উপাদান আমাকে সরবরাহ করতেন।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর অনেক দুর্নাম রটেছিল, এ কথা সত্য, তা কতটা সঠিক তা আমি জানি না। নেহরু একবার বলেছিলেন, 'যেকোনো কাজেই যারা একটু বেশি সক্রিয় ও বেশি দায়িত্ব পালন করে, দুর্নামের বোঝা তাদের বইতেই হবে।' এ কথা নানকের বেলায় প্রযোজ্য কি না জানি না। বর্তমান মন্ত্রিসভাকে তুলনামূলকভাবে একটা ক্লিন চেহারা দানের জন্য বা অন্য কোনো কারণে যদি জাহাঙ্গীর কবির নানককে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আপত্তি নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে আমার একটি নিবেদনও আছে। নিবেদনটি তাঁকে জানতে দ্বিধাবোধ করছি না।
জাহাঙ্গীর কবির নানকের বর্তমান জীবন বলতে গেলে এক প্রকার বিপর্যস্ত।
মাত্র কিছুদিন আগে তাঁর একমাত্র পুত্রের অত্যন্ত তরুণ বয়সে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মেয়েরও পারিবারিক জীবন সুখের নয়। নানক তার পরও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন এবং শুধু সক্রিয় থাকা নয়, দলের কাজে তাঁর সাংগঠনিক শক্তির পরিচয় দেখাচ্ছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। সুতরাং আর কোনো কাজে না হোক, দলকে চাঙ্গা করে তোলার কাজে নানক ও তাঁর মতো অভিজ্ঞ নেতা-কর্মীদের লাগাতে হবে। আওয়ামী লীগের এক বন্ধু-নেতা আমাকে বলেছেন, 'নানক দুর্নীতি করেছেন।' আমি তাঁকে বলেছি, 'ঠগ বাছতে গেলে গাঁও উজাড় হয়ে যাবে।'
বর্তমান মন্ত্রিসভায় সব মন্ত্রী পদ এখনো পূর্ণ করা হয়নি। যেমন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই পদে মাত্র অভিজ্ঞ হয়ে উঠছিলেন। এখন প্রশ্ন মাহমুদ আলী এ পদে থাকবেন, না নতুন কেউ আসবেন? যদি নতুন কেউ আসেন, তাহলে পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অভিজ্ঞ কেউ এলে ভালো হবে। এ পদে নতুন নতুন মুখ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা ঠিক হবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি তো সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। কারণ দেশে যে জঙ্গি উৎপাত ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস এখনো বন্ধ হয়নি, তা বন্ধ করে জনজীবনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে একটি শক্তিশালী ও পুনর্গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দরকার।
আগেই বলেছি, দেশের এক ভয়ানক অস্বাভাবিক অবস্থায় স্বাভাবিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। ফলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সংসদ ও নতুন সরকারের গায়েও অস্বাভাবিকতার কিছু চিহ্ন সময়ের প্রয়োজনে আমাদের সাময়িকভাবে মেনে নিতে হবে। যেমন এই সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। আবার এ দলের কিছু সদস্য মন্ত্রিসভায়ও আছেন। তাহলে এটা কি একটি 'রেইনবো' বা রংধনু সরকার?
আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধির ধারণা, দেশের বর্তমান সরকার কতিপয় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে হয়তো একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য (পূর্ণ মেয়াদের জন্য নয়) ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যগুলো হলো, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করা, দেশে জামায়াতসহ জঙ্গিবাদী দলগুলোর উৎপাত ও সন্ত্রাস স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, আইনের শাসনের সুপ্রতিষ্ঠা ও কঠোর হাতে দুর্নীতি দমন, নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান এবং শিক্ষাঙ্গনের নৈরাজ্য দূর করা। সর্বোপরি দেশকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনা।
এই লক্ষ্য অর্জনের ব্যাপারে মহাজোটের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো মতানৈক্য আছে বা থাকবে বলে মনে হয় না। সুতরাং এই লক্ষ্য অর্জন ও দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল হয়েও অবশ্যই সরকারকে একটা সময় পর্যন্ত সমর্থন দিতে পারে এবং এই সমর্থনের প্রতীক হিসেবে তাদের কয়েকজন সদস্য মন্ত্রিসভায়ও থাকতে পারেন। আপৎকালীন সময়ে এ ধরনের সরকার গঠনের অনেক নজির আছে। তবে এই সমঝোতা সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে বিরোধী দলকে অবশ্যই সরকারের ভুলত্রুটিকে সমালোচনা ও বাধাদানের নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং আপৎকালীন সময় পেরিয়ে গেলে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদীয় বিরোধী দলের স্বাভাবিক ভূমিকায় ফিরে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে এরশাদ সাহেবও আর মন্ত্রীর পদমর্যাদা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের ভূমিকায় থাকতে পারবেন না।
প্রচণ্ড বাধার মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সরকার গঠনে সক্ষম হলেও শেখ হাসিনার সামনে এখনো কণ্টকাকীর্ণ পথ প্রসারিত। বিএনপি-জামায়াতি সন্ত্রাস ও ইউনূস-শিবিরের চক্রান্ত, সুধীসমাজের বিরোধিতা এবং সেই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ঘোঁটপাকানো সাময়িকভাবে পিছু হটেছে; পরাজিত হয়নি। সুযোগ পেলেই তারা আবার মাথা তুলবে। আরো বড় ধরনের ছোবল মারার চেষ্টা করবে। এর একমাত্র প্রতিকার হচ্ছে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে চেতনা সৃষ্টি করা এবং জাতীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এই সরকারকে শুভাশীষ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার সতর্কবাণী হচ্ছে, বর্তমান সাফল্যে কমপ্লাসেনসিতে না ভুগে সরকার যেন নিজেদের আপৎকালীন সময়ের অস্থায়ী সরকার মনে করে সর্বশক্তি নিয়ে এই আপদ প্রতিরোধের জন্য নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।
লন্ডন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪

No comments:

Post a Comment