সবার প্রিয় টুলু' দা, চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক,রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি ত্রিদিব চৌধুরী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৬৩ বছর বয়স হয়েছিলো তার। কয়েকদিন আগেই দেশের বাইরে থেকে চলে এলেন ভোট দেবার জন্যে ।ভাই বারবার অনুরোধ করলেন দেশের এ পরিস্থিতিতে না ফিরতে, শোনেন নি ভাইয়ের কথা। দেশের এমন ক্রান্তিলগ্নে একজন সচেতন নাগরিক তার ভোটাধিকার প্রয়োগ না করে থাকেন কী করে? আশা করি নির্বাচিত সাংসদরা এমন সচেতন দায়িত্বশীল নাগরিক দের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
১০৫ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে টুলু'দা কয়েক দিন বাড়িতেই ছিলেন । কোন চিকিৎসক দেখান নি।দেরি হয়ে গেলো বড়ো! তিনি চিরকুমার ছিলেন। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে চট্টগ্র্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হবার দু'দিনের মধ্যেই ১৫ জানুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে জানানো হলো, টুলু'দার প্রত্যঙ্গ সমূহ একের পর একে নিস্ক্র্রিয় হয়ে যাচ্ছে।১৭ জানুয়ারী রাত প্রথম প্রহর ২টা ২০ মিনিটে সব চেষ্টাই ব্যর্থ করে টুলু'দা চলে গেলেন। ভোর ৪টায় তাকে চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দিরের পাশে এনায়েতবাজার 'কল্যাণী' তে আনা হয়েছে। সেখানেই আছে তার শবদেহ।
আজ বিকেল ৩ টায় কল্যাণী তে শোকসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৫টায় অভয়মিত্র শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
ধলঘাট.গ্রামে টুলু 'দার জন্ম ।উদিচী চট্টগ্রামের প্রথম কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ত্রিদিব চৌধুরী।
আজ খুব মনে পড়ছে আমাদের বড়োদদিমিণির কথা! অপর্ণা চরণ স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী প্রণতি সেন এর ভাগ্নে টুলু'দা। আমাদের বড়ো দিদিমণি প্রণতি সেন থাকতেন তাঁর বান্ধবী এবং তার আমৃত্যু সহযোদ্ধা কল্যাণী সেনের সাথে তাঁর এনায়েত বাজারের বাড়িতে।দুই বন্ধুই চিরকুমারী ছিলেন। কল্যানী সেন এবং প্রণতি সেন বীরকন্যা প্রীতিলতার শিষ্য অনুসারী নিবেদিতা প্রাণ শিক্ষক ছিলেন। প্রীতিলতা অপর্ণা চরণ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। প্রণতি সেন এবং কল্যাণী সেন তাদের মেধা মনন এবং জীবনযাত্র্রায় অনন্য ছিলেন। যা স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁদের ছাত্রীদের হৃদয়ে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক চিকিৎসক বিপ্লবী ডা. কেশব সেনের একমাত্র কন্যা কল্যাণী সেন দেশমাতৃকার কল্যানে শিক্ষাব্রতী হিসেবেই আমৃত্যু নিবেদন করেন তার জীবন । অপর্ণা চরণ স্কুল পরচিালনা করতে গিয়ে চট্টগ্রামের সমাজপতিদের চরম অসহযোগিতা এবং অন্যায় হস্তক্ষেপের চাপে ১৯৮৪ সালের ৭ জুন হৃদযন্ত্র্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্র্রী প্রণতি সেন । সেদিন আমাদের স্কুলে বড়োদিদিমণির মরদেহ আনার সাথে সাথে বড়োদিদিমণির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু হয়। কাবেরী সেনগুপ্তা , জয়ন্তী লালা আমাদের দিদিমণিরা একের পর একে গেয়ে গেলেন, তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু,.....! সেদিন প্র্রথম মায়ের সাথে কেশব ভবনে গেলাম। দেখলাম টুলু'দা, অরুণ কাকা ( কবি , সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত) সবাই মাটিতে বসে আছেন। রবীন্দ্র্র সঙ্গীত গাইছেন অনেকে। দাদা (টুলু'দা) মাথা নেড়ে আমাকে ও গাইতে বললেন। বড়ো দিদিমণিকে হারিয়ে শোকগ্রস্থ হৃদয়ে গান ধরলাম, 'আগুনের পরশ মণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পূণ্য করো.....এ জীবন পূণ্য করো দহন দানে..।'
চিরবন্ধু হারানোর শোক বুকে নিয়ে আরো কিছু দিন বেঁচে ছিলেন কল্যাণী সেন। তিনি মৃত্যু বরণ করেন ২০০০ সালের দিকে। এর আগে তিনি টুলু'দাকে বাড়িটি দান করে যান ।
কল্যানী সেনের বাড়ির জায়গাতেই ষ্টুডিও করে ফটোগ্রাফী করতেন ত্রিদিব চৌধুরী। পরবর্তীতে কল্যানী সেনের এলাকার সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে বাড়িটি ডেভেলাপার কে দিয়ে দেন।
কল্যাণী দিদিমণিকে দেখতে আমার অতুলন কে নিয়ে একবার গেছি '৯৯ সালের দিকে সম্ভবতঃ। খুব আশীর্বাদ করলেন! এর পর আর ঐ বাড়িতে আর যাই নি।
স্মিত হাস্য নিভৃতচারী মৃদুভাষী মানুষ টুলু 'দাকে শেষ দেখা দেখলাম ১৫ জানুয়ারী রাত ১১টায় মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এইচ ডিইউ বেডে শায়িত। আমার পুত্র ইরাবান আলীম অতুলন , আলেক্স আলীম আর আমি দরোজার বাইরে থেকে দেখলাম টুলু'দা একটু নড়াচড়া করছেন !! আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম সেরে উঠবেন ভেবে। না হয় নি! টুলু'দা আর ফিরলেন না আমাদের মাঝে!! সেখানে দেখা হলো ড. অনুপম সেন স্যার, অরুণ দাশগুপ্ত, আবুল মোমেন, অনুপ সাহা, কুন্তল বড়ুয়া, সোমা বড়ুয়া সহ অনেকের সাথে। সবার মধ্যেই হতাশা। কেন সময়মতো ডাক্তার দেখালেন না, টুলু'দা? কেন এতো উদাসীনতা নিজের প্রতি? ভারতের সহকারী হাই কমিশনার সোমনাথ সেনগুপ্ত বললেন, " খুব রাগ হচ্ছে আমার, কেন উনি এতো জ্বর নিয়ে বাড়িতে রয়ে গেলেন? ..." !! এমন ই নিভৃতচারী টুলু 'দা আজ আমাদের সব রাগের উর্ধ্বে !!
সকালে মা ই প্রথম এ দুঃসংবাদ জানালেন কলম্বো থেকে। মা ক'দিন আগেই কলম্বো গেছেন আমার আপা বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কিশওয়ার কামাল খানের সাথে তার বাড়িতে। কিশু আপা আর টুলু'দা সহপাঠী এবং বন্ধু ! তিনি সকালেই এ দুঃসংবাদ পেয়েছেন। মা ও জেনেছেন । আমার মা নূর জাহান খান স্বাভাবিক ভাবেই টুলু'দা র এমন আকস্মিক প্রয়াণে ভীষণ মর্মাহত। সশরীরে আসতে না পারলে ও তিনি যেন সর্বক্ষণ চট্টগ্রামেই আছেন। বললেন তাঁর পক্ষ থেকে যেন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাই টুলু'দার শেষযাত্রায়!
আত্মকেন্দ্রীক ক্ষমতালোভী নেতৃত্বের এই দুঃসময়ে ত্রিদিব চৌধুরীর মতো সৎ, নিঃস্বার্থ এবং সচেতন সংগঠক বিরল! তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই প্রজন্মের কাছে তার কর্ম এবং জীবন সঠিক ভাবে উপস্থাপনের আশা প্রকাশ করছি।
টুলু'দার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
১০৫ ডিগ্রী জ্বর নিয়ে টুলু'দা কয়েক দিন বাড়িতেই ছিলেন । কোন চিকিৎসক দেখান নি।দেরি হয়ে গেলো বড়ো! তিনি চিরকুমার ছিলেন। প্রচন্ড জ্বর নিয়ে চট্টগ্র্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হবার দু'দিনের মধ্যেই ১৫ জানুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে জানানো হলো, টুলু'দার প্রত্যঙ্গ সমূহ একের পর একে নিস্ক্র্রিয় হয়ে যাচ্ছে।১৭ জানুয়ারী রাত প্রথম প্রহর ২টা ২০ মিনিটে সব চেষ্টাই ব্যর্থ করে টুলু'দা চলে গেলেন। ভোর ৪টায় তাকে চট্টগ্রাম বৌদ্ধমন্দিরের পাশে এনায়েতবাজার 'কল্যাণী' তে আনা হয়েছে। সেখানেই আছে তার শবদেহ।
আজ বিকেল ৩ টায় কল্যাণী তে শোকসঙ্গীতের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৫টায় অভয়মিত্র শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
ধলঘাট.গ্রামে টুলু 'দার জন্ম ।উদিচী চট্টগ্রামের প্রথম কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন ত্রিদিব চৌধুরী।
আজ খুব মনে পড়ছে আমাদের বড়োদদিমিণির কথা! অপর্ণা চরণ স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্রী প্রণতি সেন এর ভাগ্নে টুলু'দা। আমাদের বড়ো দিদিমণি প্রণতি সেন থাকতেন তাঁর বান্ধবী এবং তার আমৃত্যু সহযোদ্ধা কল্যাণী সেনের সাথে তাঁর এনায়েত বাজারের বাড়িতে।দুই বন্ধুই চিরকুমারী ছিলেন। কল্যানী সেন এবং প্রণতি সেন বীরকন্যা প্রীতিলতার শিষ্য অনুসারী নিবেদিতা প্রাণ শিক্ষক ছিলেন। প্রীতিলতা অপর্ণা চরণ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। প্রণতি সেন এবং কল্যাণী সেন তাদের মেধা মনন এবং জীবনযাত্র্রায় অনন্য ছিলেন। যা স্মরণীয় হয়ে আছে তাঁদের ছাত্রীদের হৃদয়ে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক চিকিৎসক বিপ্লবী ডা. কেশব সেনের একমাত্র কন্যা কল্যাণী সেন দেশমাতৃকার কল্যানে শিক্ষাব্রতী হিসেবেই আমৃত্যু নিবেদন করেন তার জীবন । অপর্ণা চরণ স্কুল পরচিালনা করতে গিয়ে চট্টগ্রামের সমাজপতিদের চরম অসহযোগিতা এবং অন্যায় হস্তক্ষেপের চাপে ১৯৮৪ সালের ৭ জুন হৃদযন্ত্র্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন স্কুলের প্রধান শিক্ষয়িত্র্রী প্রণতি সেন । সেদিন আমাদের স্কুলে বড়োদিদিমণির মরদেহ আনার সাথে সাথে বড়োদিদিমণির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু হয়। কাবেরী সেনগুপ্তা , জয়ন্তী লালা আমাদের দিদিমণিরা একের পর একে গেয়ে গেলেন, তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু,.....! সেদিন প্র্রথম মায়ের সাথে কেশব ভবনে গেলাম। দেখলাম টুলু'দা, অরুণ কাকা ( কবি , সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত) সবাই মাটিতে বসে আছেন। রবীন্দ্র্র সঙ্গীত গাইছেন অনেকে। দাদা (টুলু'দা) মাথা নেড়ে আমাকে ও গাইতে বললেন। বড়ো দিদিমণিকে হারিয়ে শোকগ্রস্থ হৃদয়ে গান ধরলাম, 'আগুনের পরশ মণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পূণ্য করো.....এ জীবন পূণ্য করো দহন দানে..।'
চিরবন্ধু হারানোর শোক বুকে নিয়ে আরো কিছু দিন বেঁচে ছিলেন কল্যাণী সেন। তিনি মৃত্যু বরণ করেন ২০০০ সালের দিকে। এর আগে তিনি টুলু'দাকে বাড়িটি দান করে যান ।
কল্যানী সেনের বাড়ির জায়গাতেই ষ্টুডিও করে ফটোগ্রাফী করতেন ত্রিদিব চৌধুরী। পরবর্তীতে কল্যানী সেনের এলাকার সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে বাড়িটি ডেভেলাপার কে দিয়ে দেন।
কল্যাণী দিদিমণিকে দেখতে আমার অতুলন কে নিয়ে একবার গেছি '৯৯ সালের দিকে সম্ভবতঃ। খুব আশীর্বাদ করলেন! এর পর আর ঐ বাড়িতে আর যাই নি।
স্মিত হাস্য নিভৃতচারী মৃদুভাষী মানুষ টুলু 'দাকে শেষ দেখা দেখলাম ১৫ জানুয়ারী রাত ১১টায় মেট্রোপলিটন হাসপাতালের এইচ ডিইউ বেডে শায়িত। আমার পুত্র ইরাবান আলীম অতুলন , আলেক্স আলীম আর আমি দরোজার বাইরে থেকে দেখলাম টুলু'দা একটু নড়াচড়া করছেন !! আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম সেরে উঠবেন ভেবে। না হয় নি! টুলু'দা আর ফিরলেন না আমাদের মাঝে!! সেখানে দেখা হলো ড. অনুপম সেন স্যার, অরুণ দাশগুপ্ত, আবুল মোমেন, অনুপ সাহা, কুন্তল বড়ুয়া, সোমা বড়ুয়া সহ অনেকের সাথে। সবার মধ্যেই হতাশা। কেন সময়মতো ডাক্তার দেখালেন না, টুলু'দা? কেন এতো উদাসীনতা নিজের প্রতি? ভারতের সহকারী হাই কমিশনার সোমনাথ সেনগুপ্ত বললেন, " খুব রাগ হচ্ছে আমার, কেন উনি এতো জ্বর নিয়ে বাড়িতে রয়ে গেলেন? ..." !! এমন ই নিভৃতচারী টুলু 'দা আজ আমাদের সব রাগের উর্ধ্বে !!
সকালে মা ই প্রথম এ দুঃসংবাদ জানালেন কলম্বো থেকে। মা ক'দিন আগেই কলম্বো গেছেন আমার আপা বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কিশওয়ার কামাল খানের সাথে তার বাড়িতে। কিশু আপা আর টুলু'দা সহপাঠী এবং বন্ধু ! তিনি সকালেই এ দুঃসংবাদ পেয়েছেন। মা ও জেনেছেন । আমার মা নূর জাহান খান স্বাভাবিক ভাবেই টুলু'দা র এমন আকস্মিক প্রয়াণে ভীষণ মর্মাহত। সশরীরে আসতে না পারলে ও তিনি যেন সর্বক্ষণ চট্টগ্রামেই আছেন। বললেন তাঁর পক্ষ থেকে যেন ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানাই টুলু'দার শেষযাত্রায়!
আত্মকেন্দ্রীক ক্ষমতালোভী নেতৃত্বের এই দুঃসময়ে ত্রিদিব চৌধুরীর মতো সৎ, নিঃস্বার্থ এবং সচেতন সংগঠক বিরল! তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই প্রজন্মের কাছে তার কর্ম এবং জীবন সঠিক ভাবে উপস্থাপনের আশা প্রকাশ করছি।
টুলু'দার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
No comments:
Post a Comment