১১ জুন ,২০০৮ সকালেই জানতাম সেদিন মুক্তি পাচ্ছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। আমি তখন একুশে টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি। আমাকে আমার আরো ২ সহকর্মী সহ সাবজেল এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো। ভারপ্রাপ্ত বার্তা প্রধান কে বললাম আমার পর্যবেক্ষণ-কোথায় কোথায় যেতে পারেন আপা । সুধা সদনে একজন, সাবজেলের সংসদ ভবনে একজন। আমি সাবজেলের দক্ষিণ গেটে সাত সকাল থেকে অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার স্যালওয়ারের ডানদিকে কোমরের সেলাই টা খুলে গেছে । আড়ং য়ের স্যালওয়ার স্যুট টা সেদিন সম্ভবত দ্বিতীয়বারের মতো পরেছি। কামিজের ফাড়া দিয়ে সালওয়ারের সেলাই খোলে যাওয়া অংশ টা দেখা যাচ্ছে। কামিজের ডান দিকের ফাড়াটা একহাতে জোড়া লাগিয়ে রাখলাম। এদিকে বাম হাতে মোবাইল। ফাকে ফাকে অফিসে আর সোর্সের সঙ্গে কথা চলছে। চোখ পড়লো রাস্তার উল্টো দিকে আড়ংয়ে । হাতে ১ হাজার টাকা ছিল শুধু। ভাবছিলাম, সারাদিনের ব্যাপার, কী করে এভাবে থাকবো। অনেক সময়ে শুধু প্যান্ট বা সালওয়ার বিক্রি করে আড়ংয়ে। এখানে আছে কিনা , দেখি। রাস্তা পেরিয়ে গেলাম, ক্যামেরা পারসন কে বলে গেলাম। ব্যস খবর চলে গেলো অন্য সহকর্মীদের কানে। তারা সোজা বার্তা প্রধানকে নালিশ জানালো। বার্তা প্রধানের তলবি ফোন এলো, " সুমি আপা, কোথায় আপনি? " বরলাম আছি..ভাই এখানেই। " আপনি নাকি আড়ংয়ে ঘুরতে গেছেন?" বললাম , আড়ং তো রাস্তার উল্টো দিকেই । তাছাড়া আমি জানি আপা এখনো বেরোন নি। আর বেরোলেও এদিকে বের হবেন না হয়তো। আমি জানবো কোন দিক থেকে কোথায় যাবেন। " কঠিন ধমকে বলা হলো, " আপনি ওখানেই যদি থাকবেন- এখনি আমার ফোন ধরে সাবজেলের সামনে যান..." গেলাম ছুটে রাস্তা পেরিয়ে আবার....সেই অবস্থাতেই চলে এলাম ৩২ নম্বরে । ..সেই ২ সহকর্মীর....কেউ কোন ফুটেজ পেলো না... আমার সোর্স আমাকে বলে দিচ্ছে কোন দিক থেকে নেত্রী কোথায় যাচ্ছেন...শুধু আমি পেলাম ফুটেজ... আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ব'লে দিলো ৩২ নম্বরের পিতার চরণ ছুঁতে কন্যা আসবেন ই একবার .. র্যাবের ট্রুপ গুটিয়ে চলে গেলো । বার্তা প্রধান বললেন, " সুমি আপা , আপনার কী মনে হয় ? এখানে কি আর আসবেন?" বললাম, "হ্যাঁ, আমার ধারণা আপা একবার আসবেন ই এখানে.."... বললেন, "তাহলে আপনি থাকেন..."
আমার সাথে ক্যামেরায় টিটো ভাই । ৩২ নম্বরেই এলেন গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনা। এর মধ্যেই হঠাৎ সাবজেল থেকে ফুটেজ পেতে ব্যর্থ হয়ে আরেক জুনিয়র সহকর্মী আমার থেকে বুম ( মাইক্রোফোন ) ছিনিয়ে নিয়ে আরেক সহকর্মী পিটিসি দিতে দিতে ভেতরে ঢুকলো ( বার্তা প্রধানের নির্দেশে?) । আমার ক্যামেরা পারসনের থেকে টেপ টা নিয়ে সেই ফুটেজ নিয়ে অফিসে গেলো , আমার ফুটেজেই তার নিউজ হলো ...৩২ নম্বরের ভেতরে ভীড়ে প্রায় অজ্ঞান ক্যামেরা পারসনকে আমি স্কয়ার হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম দ্রুত। ....
এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পুরো এ্যাস্ইনমেন্ট শেষ করবার পর যে সহকর্মী ফুটেজ ছিনিয়ে লিড রিপোর্ট করলো- সে টিজ করে করে বললো, " আপনি আড়ং য়ে গেছিলেন...পায়জামা নাকি ছিড়ে গেছে...হিহিহিহিহি.... জিন্স পরলেই তো পারেন সুমি আপা...." খুব অপমানে বললাম, আপনারা আমার ছোট ভাইয়ের মতো। কোন সংকটে পাশে থাকতে না পারেন, তামাশা করবেন না, প্লীজ..." বলতে পারতাম, আমি এমন বাবার সন্তান, যিনি আমার শৈশব কৈশোরেই আর দুই ভাইয়ের সাথে একই পোশাক পরিয়ে বড়ো করেছেন। প্যান্ট পরা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। তবে আকস্মিক কোন সংকটে হেনস্থা করা পৌরুষত্বের প্রকাশ ঘটে না, ক্লীবত্বের প্রকাশ মাত্র!
মনে মনে বলি, " শোন মর্ত্যের জীব, অন্যেরে যতো করিবে পীড়ন, নিজে হবে ততো ক্লীব ...."
সেই ২ সহকর্মী এভাবেই লুটে পুটে কেউ নানান অপরাধের শাস্তি হিসেবে ১ দিনের কারাভোগ করে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার , আর কেউবা প্রধানমন্ত্রী বীটের বেশ ক্ষমতাশালী রিপোর্টার । এখন বিশাল আরো অনেক কথা হয়তো লিখবো.....
No comments:
Post a Comment