Saturday, October 19, 2013

কথিত নাস্তিকেরা “নাস্তিক” নন-পিনাকী ভট্টাচার্য



নাস্তিক শব্দটি বাংলা নয়, সংস্কৃত এবং বৈদিক। শব্দটি যখন বাংলায় অন্তর্ভুক্ত হয়, সে সময় যারা এই শব্দটাকে বাংলা ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন তারা শব্দটার সঠিক অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেকারণে নাস্তিক বলতে সংস্কৃতে যা বোঝায় বাংলায় সেটা বোঝানো হয়না। বাংলায় নাস্তিককে এথিস্টের সমার্থক মনে করা হয়। এই সরলীকরণ ধর্মতত্ত্বের জন্য একটা বড় সমস্যা। কারণ সংস্কৃতে নাস্তিক মানে নিরীশ্বরবাদী নয়। বিশেষ করে নাস্তিক শব্দটি যারা আবিষ্কার করেছে তাঁদের জন্যও নাস্তিক শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার অস্বস্তিকর। ধর্মতাত্ত্বিক এই জটিল সমস্যা মেটানোর জন্য প্রয়োজনে বাংলা অভিধান সংশোধন করা যেতে পারে।

হিন্দু ধর্মতত্ত্বে নাস্তিক বলতে তাঁদেরকেই বোঝায় যারা বেদের অপৌরুষেয়তায় বিশ্বাস করে না। অর্থাৎ বেদকে ঐশ্বরিক গ্রন্থ মনে করে না। এর মানে এটা নয় যে নাস্তিকরা নিরীশ্বরবাদী বা ধর্মদ্রোহী। হিন্দুদের মধ্যে চার্বাক পন্থীরা ধর্ম পালন করেও নাস্তিক্যবাদের চর্চা করতে পারেন। তারা বেদের পশুঘাত, শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া এবং ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব মানেন না। হিন্দু ধর্মের মতে ভারতীয় দর্শনের মধ্যে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মও নাস্তিক দর্শন।

নাস্তিক শব্দটা অবশ্য প্রথমে ঘৃণা ও অবহেলা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিলো। কিন্তু নাস্তিক ও আস্তিকদের মধ্যে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা তীক্ষ্ণ বিতর্কে হিন্দু ধর্মের কঠোরতা পরিবর্তিত হয়েছে। ভারতবর্ষের অহিংসার দর্শন নাস্তিকদের অবদান। জৈন আর বৌদ্ধ ধর্মের উদ্ভব হওয়ার ক্ষেত্রে চার্বাক নাস্তিকদের অবদান অনস্বীকার্য। নাস্তিকদের কারণেই হিন্দু ধর্ম সংস্কার এবং এর ফলে মানব জীবনের আদর্শ উচ্চতর হয়েছে। তর্কবিদ্যাও নাস্তিকদের অবদান।

এথিস্টদের নিরীশ্বরবাদী বলার ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে, কারণ বৌদ্ধরা নিরীশ্বরবাদী। তবে কী বলা যায় এথিস্টদের? আমার প্রস্তাব যাদের জন্য এটা মাথা ব্যথা তারা একটু এটা নিয়ে মাথা ঘামাক।

হেফাজতে ইসলামী কি জানে যে এটা একটা বিশুদ্ধ সংস্কৃত এবং কঠোর বৈদিক শব্দ?

লেখক: ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট Unmochon

No comments:

Post a Comment