Sunday, October 13, 2013

ষড়যন্ত্রের রাজনীতির থলের বেড়ালটি বেরিয়ে আসছে - আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



প্রবীণ এক বাম নেতার এই সাক্ষাতকারটি প্রথমে আমার চোখে পড়েনি। কোন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিকে সাক্ষাতকারটি বেরোয়নি। একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে বেরিয়েছে, যেটি সচরাচর আমার চোখে পড়ে না। বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে শুনে সাক্ষাতকারটি পড়লাম। দৈনিকটির ৫ অক্টোবরের সংখ্যায় তা বেরিয়েছে। ছোট সাক্ষাতকার। তবু আমার জন্য খুবই আগ্রহোদ্দীপক। কারণ, তিনি আমার কলেজ জীবনের খুবই প্রিয় শিক্ষক। পরবর্তীকালে তিনি হন দেশের এক সময়ের বৃহত্তম বাম গণতান্ত্রিক সংগঠন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এখন বিরানব্বই বছর বয়স। তাঁকে এখন বলা চলে আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পিতামহ। তাঁকে আমি খুবই শ্রদ্ধা করি।
ন্যাপের সেই সুদিন এখন আর নেই। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এখনও দলের সভাপতি আছেন বটে, বয়সাধিক্যে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবু এই বয়সেও তিনি তাঁর চিন্তা-চেতনা ও পরামর্শ দ্বারা দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। তাঁর কথা কেউ শুনছে কী শুনছে না, তার পরোয়া করছেন না। তিনি এখনও আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি বাতিঘর। ৫ অক্টোবর ঢাকার বহুল প্রচারিত দৈনিকটিতে আলাপচারিতা বিভাগে প্রকাশিত তাঁর দেয়া সাক্ষাতকারটিতেও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে তাঁর প্রকৃত সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ জন্যই সাক্ষাতকারটি আমি অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে পড়েছি।
এই সাক্ষাতকারটি পড়তে গিয়ে আমি এমন একটি তথ্যের মুখোমুখি হয়েছি, যা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো নব্বই-উর্ধ প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকে বের না হলে আমার পক্ষেও বিশ্বাস করা সহজ হতো না। এ কথা অস্বীকার করব না, আমি ড. কামাল হোসেন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কঠোর সমালোচক। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের। কারণ, তিনি এক সময় বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুই তাঁকে হাত ধরে টেনে এনে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেন। পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার রাজনীতির অবশ্যই সমালোচনা, এমনকি বিরোধিতাও করতে পারেন। কিন্তু হাসিনার প্রতি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিদ্বেষে অন্ধ হয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী চক্রান্তের শিবিরে গিয়ে সরাসরি যোগ দিতে পারেন, এটা আমার কাছেও ছিল অকল্পনীয়।
ঢাকার দৈনিকটির ৫ অক্টোবরের সংখ্যায় প্রকাশিত ‘আলাপচারিতায়’ দেশের বয়োবৃদ্ধ প্রবীণতম নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, ‘আমি যে রাজনীতি করি, তা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়। এটি সরল রাজনীতি। আমি ষড়যন্ত্রের মধ্যে নেই। ড. কামাল হোসেন এসেছিলেন আমার কাছে জাতীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে। আমার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্যে নেই। আমি রাজি হইনি। আমার রাজনীতির অর্থ হচ্ছে সত্য কথা বলা, সড়ক দিয়ে হাঁটা এবং ডাল দিয়ে খাবার খাওয়া। ড. কামাল হোসেন ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করতে ইচ্ছুক। সে কারণে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।’
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের ‘আলাপচারিতায়’ এই বক্তব্যটি দেশের অনেক মানুষের কাছে ড. কামাল ও ড. ইউনূস জুটির বর্তমান কার্যকলাপ ও আচার-আচরণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেবে। আমি নিজেও দীর্ঘদিন যাবত এই জুটির কার্যকলাপ ও বক্তৃতা-বিবৃতির সমালোচনা করলেও সবসময় ভেবেছি, এরা শেখ হাসিনার প্রতি প্রচ- বিরাগবশত দেশের গণতান্ত্রিক শিবিরের যে ক্ষতি করছেন, তা হয়ত নিজেরাও উপলব্ধি করছেন না। কিন্তু তাঁরা যে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত গোঁ চরিতার্থ করার জন্য সরাসরি ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং এতটা নিচে নেমে যেতে পারেন, তা কল্পনাও করিনি। আওয়ামী লীগ রাজনীতির একটা বড় দুর্ভাগ্য, এই রাজনীতিতে এক মোশতাকের তিরোভাব না ঘটতেই আরেক মোশতাকের আবির্ভাব হয়।
একটি তথাকথিত ‘জাতীয় সরকারের রূপরেখা’ পকেটে নিয়ে ড. কামাল হোসেন দেশে যা করে বেড়াচ্ছেন, তা যে ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ এটা বুঝতে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো রাজনীতির বটবৃক্ষের কিছুমাত্র অসুবিধা হয়নি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ড. কামাল হোসেনকে বলে দিয়েছেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের মধ্যে নেই’ এবং তাদের ষড়যন্ত্রে দোয়া (সমর্থন) দিতেও রাজি নন। শুধু অধ্যাপক মোজাফ্ফর নন, ড. কামাল হোসেন নাকি তাঁর জাতীয় সরকারের রূপরেখা (যে সরকারে তিনি কিংবা ড. ইউনূস প্রধান হবেন) নিয়ে দেশের আরও কয়েকটি ডান এবং বাম গণতান্ত্রিক দলের নেতার দরজায় গিয়ে দোয়া লাভের জন্য ধর্ণা দিয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই একবাক্যে না বলে দিয়েছেন।
শেষপর্যন্ত তিনি সম্ভবতঃ তাঁরই মতো জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত কয়েকজন নেতাকে তাঁর বিতর্কিত রাজনীতিতে সঙ্গী করতে পেরেছেন। এরা হলেন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ। এদের অধিকাংশই সচরাচর নির্বাচনে জেতেন না। কারও কারও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ড. কামাল হোসেনকে বঙ্গবন্ধু একবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদে জিতিয়ে এনেছিলেন। তারপর আর কোনও নির্বাচনে জেতেননি। শেখ হাসিনা তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন। সেখানেও বিএনপির বিচারপতি সাত্তারের কাছে হেরেছেন। গত নির্বাচনে তাঁর গণফোরামের প্রার্থীদের কারও জামানত রক্ষা পায়নি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রেকর্ড তো অনুরূপ উজ্জ্বল। তেজারতিতে তিনি দক্ষ। তবুও রাজনীতিতে ঢোকার খুব শখ। কিন্তু রাজনৈতিক মূলধন কিছুই নেই। ছাত্রজীবন থেকে বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনের ত্রিসীমানায় তিনি ছিলেন না। গরিবের নামে ব্যবসা করে নিজে বিরাট ধনী হয়েছেন। গরিবের বাড়িতে ভুলেও যান না। তাঁর জেট সেট লাইফ। রাজারাজরাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের তিনি বিশ্বস্ত অনুচর।
ফলে গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের প্রভুরা তাঁকে খুশি হয়ে অর্ধেক নোবেল পুরস্কার দিয়েছে এবং এখনও বড় বড় পুরস্কার দিচ্ছে। অর্ধেক নোবেলজয়ী হওয়ার পর আনন্দের এভারেস্ট চূড়ায় উঠে ওই নোবেল পুরস্কারকে মূলধন করে তিনি নূতন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন। এই দল গঠনের এক মাসের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর দল শেষপর্যন্ত ‘কাকতাড়ুয়ার দল’ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি রাজনীতি করার আগেই জনগণ কর্র্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাজনীতি ছাড়েন।
রাজনীতির সদর দরজা দিয়ে যাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারেন না, তাঁরা পেছনের দরজা দিয়ে সেই ক্ষমতায় যেতে চাইবেন, তা আর এমন কী বিস্ময়ের ব্যাপার। তবে কামাল হোসেনদের ক্ষেত্রে বিস্ময়ের কথা এই যে, তাঁরা গণতন্ত্র, সুশাসন, স্বচ্ছ রাজনীতি এ সবের কথা বড় বেশি বলেন। গণতন্ত্র, সুশাসন ও স্বচ্ছ রাজনীতির পথ তো হচ্ছে জনগণের কাছে যাওয়া, স্বচ্ছ, বাস্তব ও সুস্থ কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার ম্যান্ডেট চাওয়া। সে জন্যে নির্বাচনে যাওয়া।
ড. কামাল হোসেনরা গণতন্ত্রের এই সদর দরজা দিয়ে না হেঁটে কেন পেছনের দরজা খুঁজছেন এবং তথাকথিত জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখা (যেটি আসলে ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা) পকেটে নিয়ে একশ্রেণীর প্রবীণ-নবীন রাজনীতিক নেতার বাড়িতে ধর্ণা দিয়ে তাদের দোয়া চেয়ে বেড়াচ্ছেন? জনগণ কর্তৃক বার বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই জাতীয় সরকার নামক একটি অনির্বাচিত সরকার গঠন দ্বারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ভূতটি ড. কামাল হোসেনদের মাথায় চেপেছে।
মজার ব্যাপার এই যে, মাত্র গত ২৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বরিশালে এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘...এবার দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে ছাড়ব।’ এটা খুবই ভাল কথা। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে যদি কামাল হোসেন সাহেবরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে পারেন, তাহলে তো বলব, তাঁরা গণতন্ত্রের পথেই হাঁটছেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও জাতীয় সরকার তো এক কথা নয়।
ড. কামাল হোসেনরা কোনটি চান? যদি সত্যিই তাঁরা বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করেন, তাহলে এই দাবি আদায়ের জন্য বিএনপি চলতি মাসেই যে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে, সে আন্দোলনে যোগ দিন। তা না করে পর্দার আড়ালে আবার জাতীয় সরকারের খেলা খেলছেন কেন? জনগণের কাছে না গিয়ে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মতো প্রবীণ নেতাদের দরজায় গিয়ে গোপন ধর্ণা দিচ্ছেন কেন? আবার জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে নিজে কিংবা ড. ইউনূসের সেই অনির্বাচিত জাতীয় সরকারের প্রধান হওয়ার আগাম ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন কেন?
ড. কামাল হোসেন ও ড. ইউনূসের জুটির নেতৃত্বে চালিত তথাকথিত সুশীল সমাজের মনস্তত্ত্বটা বুঝতে কারোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। জনগণের আস্থা তাদের ওপর নেই, জনগণ কখনই তাদের ভোট দেবে না এবং নির্বাচন এলে যত খারাপ বা মন্দ হোক আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকেই তারা ভোট দেবে। দেশের মানুষ এই দল দুটিকে বোঝে। এই দুই দলের নেতারা যত অপরিশীলিত ভাষায় বক্তৃতা দেন, তার অর্থ তারা বোঝে। আর ড. কামাল হোসেন বা ড. ইউনূস সাহেবরা গণতন্ত্রের অভিধান থেকে যে সব ভাল ভাল কথা বেছে নিয়ে জনগণের নাগালের বাইরের এভারেস্ট চূড়া থেকে কথা বলেন, তার অর্থ তারা বোঝে না। সে সব কথায় আস্থা স্থাপনও করে না।
অনির্বাচিত জাতীয় সরকার গঠন ড. কামাল হোসেনের বহুদিনের একটি পেট থিয়োরি। বার বার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়ে এবং জনগণকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রবল রাজনৈতিক হতাশা থেকে সম্ভবতঃ তাঁর মনে এই থিয়োরিটির জন্ম। বহুকাল আগে তিনি তাঁর ‘সুশীল সমাজ’ দ্বারা এই থিয়োরিটি একবার জনসমক্ষে এনেছিলেন। দেশের মানুষ এই গণঅধিকার বর্জিত সরকারের থিয়োরি গ্রহণ করেনি। তখন এক বাম রাজনীতিক প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ‘গু মড়াবৎহসবহঃ, মড়ড়ফ ড়ৎ নধফ, রং নবঃঃবৎ ঃযধহ ঁহবষবপঃবফ মড়ড়ফ মড়াবৎহসবহঃ’ (আমার সরকার, ভালোমন্দ যা-ই হোক, অনির্বাচিত ভালো সরকারের চাইতে ভালো)।
নিজের পছন্দের, নিজের ভোটাধিকার দ্বারা গঠিত সরকার মন্দ হলেও জনগণ সেই সরকারই চায়। অন্যের পছন্দের এবং অন্যদের ইচ্ছায় গঠিত সরকার ভালো হলেও জনগণ তা পছন্দ করে না। এটা গণতন্ত্রের ইতিহাসের আদি সত্য।
ড. কামাল হোসেনদের অনেক বিদ্যাবুদ্ধি। কিন্তু এই সত্যটা তাঁরা বোঝেন না। আর বোঝেন না বলে জনগণের কাছে পৌঁছতেও পারেন না। এদিকে, ক্ষমতায় যাওয়ার অদম্য লিপ্সা তাদের তাড়িত করে বেড়ায়। তখন ক্ষমতার লোভে বিদেশী সাহায্য ও সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে তাঁরা দেশ এবং গণতন্ত্রের সমূহ সর্বনাশ করেন। আমার আশঙ্কা, ড. কামাল হোসেনদের বর্তমান ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দেশের জন্য এক অকল্যাণকর পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে।
ঢাকার বহুল প্রচারিত দৈনিকটিতে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের আলাপচারিতার বক্তব্য পাঠের আগেই আমার এক লেখায় ড. কামাল হোসেন ও ড. ইউনূসের বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্কে আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করেছিলাম। লিখেছিলাম, বাংলাদেশে কারজাই অথবা জারদারি মার্কা একটি সরকার অনির্বাচিত জাতীয় সরকার হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য যে তৎপরতা চলছে, সেটি সফল করার লক্ষ্যে এই সুশীল চক্রের এক নেতা ইউরোপ-আমেরিকার রাষ্ট্র নেতাদের দরবারে তাদের সাহায্য ও সমর্থনের আশায় ধর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে, অন্য নেতা দেশের ভেতরে সেই জাতীয় সরকারের নীলনক্সায় রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাইরে তাঁরা দেখাচ্ছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সমর্থন দানের জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা করছেন।
এরা হয়ত ভাবতে পারেননি, দেশের বাম রাজনীতির এক বটবৃক্ষ নেতা এমন সোজা সরল ভাষায় তাদের গোপন তৎপরতার কথা ফাঁস করে দেবেন এবং তাকে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আখ্যা দেবেন। ড. কামাল হোসেন জানেন কিনা জানি না, তিনি রাজনীতির রেসের মাঠে পরাজিত ও প্রত্যাখ্যাত ঘোড়ায় পরিণত হয়েছেন। বিদেশীরা তাঁকে নিয়ে খেলতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় বসাবে না। তিনি এখন তাদের বাতিল ও ব্যর্থ নেতাদের তালিকায় আছেন। তিনি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী থেকে কাদের সিদ্দিকী পর্যন্ত যাদের সঙ্গে জুটিয়েছেন তাঁরাও এই তালিকাভুক্ত নেতা। এই দলে নতুন মুখ ড. ইউনূসের। কিন্তু মাটিতে তাঁর পা নেই। তিনি শাখামৃগের মতন। শাখামৃগের ওপর কেউ নির্ভর করে না। তাকে কলা দেখিয়ে ব্যবহার করে মাত্র।

লন্ডন, ৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০১৩

No comments:

Post a Comment