Saturday, October 19, 2013

আলোর জরিপে এতটা আঁধার ! জামায়াত, তোমার কী লাগে আর ? -ফেরদৌস আরেফীন



বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র উদ্যোগে একটি পেশাদার জরিপ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া সর্বশেষ রাজনৈতিক জরিপটি অনেকগুলো কারণেই বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এবং নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মতানৈক্য থেকে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে, জনমত ভিত্তিক রাজনৈতিক তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত এই জরিপটি গেল ১০ অক্টোবর দৈনিক ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনামে বিশাল অংশ জুড়ে ছাপা হওয়ার পর থেকে অনেকেই এটি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা-মন্তব্য করছেন, সোজা কথায় মাথা ঘামাচ্ছেন। জরিপের উদ্যোক্তা দৈনিক পত্রিকাটি তাদের এই জরিপটির স্বপক্ষে একাধিক মতামত তথা উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশের মাধ্যমে, জরিপ থেকে উঠে আসা ফলাফলগুলো আমলে নিয়ে নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারলে তারা লাভবান হবে বা হতে পারবে -এমন একটি মতবাদ দেয়ারও চেষ্টা করেছে। কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জরিপটি নিয়ে আলোচনা, টক-শো আয়োজন করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মুখ থেকেও এই জরিপ বিষয়ে যার-যার অবস্থান অনুযায়ী কম-বেশি বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জরিপটি প্রকাশের পর এর খুঁটিনাটি পড়ে এবং ‘প্রথম আলো অনলাইন’ সংস্করণ থেকে মুল জরিপের ইংরেজি ভার্সনটিতে চোখ বোলানোর পর, দীর্ঘ রিপোর্টিং ক্যারিয়ারে জন্ম নেয়া ব্যাক্তিগত ‘সন্দেহপ্রবণ ও অনুসন্ধানী’ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিশ্লেষণ করে জরিপটির গোড়াতেই অনেকগুলো বেখাপ্পা গলদ আমার চোখে পড়ে। আমি কোনো জরিপ বিশেষজ্ঞ নই, অর্থনীতি বা পরিসংখ্যানের লোকও নই। কিন্তু মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদ চর্চায় নিজেকে একজন অগ্রপথিক মনে করি। আর দৈনিক ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র জরিপটি তাই যুক্তির ছকে ফেলে তাতে মুক্তচিন্তার প্রয়োগের পর কিছু বিষয়ের জন্য এটিকে সোজা ভাষায় ‌উদ্দেশ্যমূলক, দূরভিসন্ধীমূলক এবং এক বা একাধিক বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় সুকৌশলে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে মূল্যায়ণ করা ছাড়া আমার পক্ষে আর কিছুই মনে করা সম্ভব হয়নি! আর, বিভিন্ন এলাকার ভিন্ন-ভিন্ন শ্রেনী, পেশা ও বয়সের পাঁচ হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়েছে এবং যে কোনো জরিপের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য এই ‘পাঁচ হাজার’ সংখ্যাটি একটি বৃহত্ এমনকি যথেষ্ঠেরও অধিক বলে আ্যখ্যা দিয়ে, বারবারই পত্রিকাটি এই জরিপটিকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক, বস্তুনিষ্ঠ এবং প্রায়-বাস্তবসম্মত মানের একটি জরিপ হিসেবে আখ্যা দেয়ার যে চেষ্টা করছে, তার জবাবে শুধু একটা কথাই বলতে হয়- তথ্যদাতার বিশাল সংখ্যা কিংবা তথাকথিত ‘বহুস্তরবিশিষ্ট প্রণালিবদ্ধ দৈবচয়ন নমুনায়ন ভিত্তিক’ –এরকম যত কথাই বলা হোক না কেন, জরিপের ফলাফল বলতে গেলে পুরোটাই নির্ভর করে মতামত গ্রহণের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রশ্ন ও বিষয়াবলীর ওপরই। আর এক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরন ও মাত্রিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দৈনিক ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র জরিপে ওই পাঁচ হাজার মানুষের মতামত গ্রহণের সময় তাদের সামনে রাখা প্রশ্ন ও বিষয়াবলী এতটাই উদ্দেশ্যমূলক, একপাক্ষিক, বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতা বিবর্জিত ছিলো যে, এই জরিপের ফলাফল শেষ পর্যন্ত পুরো জাতির মনে কেবল একরাশ বিভ্রান্তি আর দোলাচলের সৃষ্টি করেছে, আর এটাই ছিলো জরিপের মূল উদ্দেশ্য।
জরিপের শুরুতেই দেখা যায়, ‘প্রথম আলো’র ছাপার ভাষায়- “এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে দেশের ৩৬.৫ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে, আর ৫০.৩ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে চান”। আবার এই জরিপেরই আরেকটি অংশে দেখা যায় যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার পক্ষে আছেন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসলে যে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াটি নিশ্চিতভাবেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে- সে কথা পাগলেও জানে। জরিপ থেকে উঠে আসা এই দুই তথ্য দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার পক্ষে থাকা ওই ৮০ শতাংশ মানুষের ৩৬.৫ শতাংশ যদি আওয়ামী লীগে ভোট দিতে ইচ্ছুক অংশের সেই মানুষেরা হয়ে থাকেন, তাহলে বিচারের পক্ষে থাকা বাদবাকি ৪৩.৫ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট না দিয়েও কিভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন? তারা সবাই কি এতটাই বিভ্রান্ত? নাকি জরিপ প্রতিষ্ঠানটি বেছে-বেছে কেবল বিভ্রান্ত ব্যাক্তিদের কাছ থেকেই মতামত সংগ্রহ করেছে? নাকি আবার এই সাড়ে ৪৩ শতাংশ মানুষ ভাবছেন যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এরকমই চালু রাখবে? কিন্তু স্বয়ং বিএনপি-চেয়ারপার্সন যেখানে বলেছেন যে, “বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের বিচার করা হবে”, সেখানে বিএনপি ক্ষমতা পেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভদ্রলোকের মতো চালিয়ে যাবে –এটা চিন্তা করা তো একেবারেই অসম্ভব! এই জরিপে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সমর্থন করা মানুষের অনুপাত এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষ-বিপক্ষ মতামত নিয়ে পাওয়া অনুপাত দেখে মনে হয় যেন, এই ফলাফল দুটি জরিপের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান দৈনিক ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র সেই চিরায়ত আওয়ামী-বিরোধীতা সত্ত্বেও প্রগতিশীলতার ভাব রক্ষার্থে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষাবলম্বন করা এক অদ্ভুত-সাংঘর্ষিক মানসিকতারই বহি:প্রকাশ। ঠিক এরকম বহি:প্রকাশই ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’ দেখিয়েছিলো এ বছরের এপ্রিল মাসে, এই একই বিচার সম্পর্কিত অন্য একটি ইস্যুতে- যখন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে শাহাবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং ওই মঞ্চে ‘প্রথম আলো’র বেশ ক’জন সিনিয়র কর্তাব্যাক্তির নিয়মিত-সরব উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও, সেই ‘প্রথম আলো’তেই আবার হাসনাত আবদুল হাই রচিত চরম বিতর্কিত একটি গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের গোটা বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার একটি হীন-জঘণ্য অপচেষ্টার মাধ্যমে। অব’শ্য ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে ‘মাফ চেয়ে’ গল্পটি ‘প্রত্যাহার’ করে নেয় পত্রিকাটি! (ছাপানো অক্ষর প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে অদ্যাবধি ধরেনি!)
এ তো গেল একটা ভন্ডামি। এবার লক্ষ্য করুন আরেকটি আরও ভয়াবহ বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস। তা হলো এই যে, জরিপটি করার সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নে মানুষের মতামত নেয়া হলেও, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তখন এই বিচার প্রক্রিয়া চলমান কিংবা স্থবির –এ দুই অবস্থার প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাবনা নিয়ে কোনো ধরনের মতামতই নেয়া হয়নি! অথচ পুরো জাতির সামনে এখন এটি একটি অনেক বড় প্রশ্ন! বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিচারের কি হবে, ট্রাইবুনাল থাকবে নাকি বিলুপ্ত হয়ে যাবে- এসব নিয়ে জনগণের মধ্যে যে চরম শঙ্কা-সন্দেহ-দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে, সেটি ‘প্রথম আলো’র জানা নেই- তাও কি বিশ্বাস করতে হবে! আবারও বলতে হচ্ছে, যে কোনো জরিপের ফলাফল পুরোপুরিই বিষয় আর প্রশ্নের ওপর নির্ভরশীল। প্রশ্ন না থাকলে উত্তর-অনুপাত আসবে কোথা থেকে?
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, যুদ্ধাপরাধের রায় নিয়ে বিএনপি’র নীরব ভূমিকা বিষয়েও এই জরিপে ভোট বা মতামত নেয়া হয়েছে! বিএনপি’র নীরবতা সঠিক না বেঠিক- তা নিয়ে জনগণের এত মাথাব্যাথা তো কোত্থাও দেখলাম না? তাহলে ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র এ নিয়ে এত দুশ্চিন্তা কিসের? অথচ এর চেয়ে অনেক-অনেক জরুরী বিষয় বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এই বিচার প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত্ কি হবে- সেই প্রশ্ন বা প্রসঙ্গই নেই জরিপে? আসলে বিএনপি’র নিরবতা নিয়ে জরিপে অহেতুক টানাটানির কারণ ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’ না বললেও আমরা যে বুঝি না, তা কিন্তু নয়‍! রায় নিয়ে বিএনপি’র নীরবতার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপিকে কিঞ্চিত বিব্রত করার মধ্য দিয়ে বন্ধুপ্রতীম জামায়াতকে একটু খুশী করাই ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’র উদ্দেশ্য? বন্ধুর খারাপ সময়ে এরকম ছোট-ছোট ‘গিফট’ মন্দ নয়! ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’কে বলতে চাই, বন্ধুকে ‘গিফট’ দেয়ার উদ্দেশ্যে, গণমানুষের প্রকৃত চিন্তাধারাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অযাচিত-অপ্রয়োজনীয় চিন্তাকে সামনে টেনে আনার এই অপকৌশল নতুন কিছু নয়। কিন্তু এর পরিনাম কখনোই ভালো হয়নি, বরং বুমেরাং হয়েছে। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন তুঙ্গে থাকা অবস্থায় নিজের গদি বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে স্বৈরাচারী এরশাদ গণমানুষের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতের বাবরী মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে সারাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগানোর যে চেষ্টা করেছিলেন- অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মুসলমান সম্প্রদায় এরশাদের সেই সাজানো খেলায় অংশ না নিয়ে, বরং এরশাদের পালিত গুন্ডা-বাহিনীর হাত থেকে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বন্ধুদেরকে নিজেদের গৃহে আশ্রয় দিয়ে, স্বৈরাচারের ওই শেষ অপচেষ্টাটিও ভন্ডুল করে দিয়েছিলো। আর আন্দোলনের শেষদিকে স্বৈরাচারের সেই রায়ট-নাটক গণঅভ্যুত্থানের পালে যেন আরও বেশি হাওয়ার যোগানই দিয়েছিলো। ‘প্রথম আলো’তে কর্মরত পরম শ্রদ্ধাভাজন সিনিরয় সাংবাদিক ভাইদের সেই ঘটনাগুলো তো ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ডসহ মনে থাকার কথা! তবুও কেন তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ভবিষ্যত্ বিষয়ে বিএনপি’র যে সিদ্ধান্ত বা চিন্তাটি এদেশের প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার পক্ষের প্রতিটি মানুষের এই মুহূর্তের প্রধানতম জিজ্ঞাসা- তার বিন্দুমাত্র ধারে-কাছে না গিয়ে, শুধুই জামায়াতকে খুশি করতে বিএনপি’র নিরবতা নিয়ে অহেতুক গবেষণায় মত্ত হলেন? এই বুঝি ‘যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো’র নমুনা?
বিশাল আরেকটি গলদ রেখে দিয়েছেন কৌশলী ‘প্রথম আলো’।
খুব কৌশলে কাজ সারলেও গলদটি রয়েই গেছে তাদের অগোচরে। সেটি হলো এই যে, ‘প্রথম আলো’র আগের জরিপটির মতো এবারের জরিপেও জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে নাকি মত দিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ! মানবতাবিরোধী অপরাধ আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধের বিচার মানে শুধু কিছু ব্যাক্তির বিচার করাই নয়, বরং অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনা। মাত্র আট মাস আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ আইনের সর্বশেষ সংশোধনটি আশা করি ‘প্রথম আলো’র বিজ্ঞতম সাংবাদিকবৃন্দ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাননি! আর তাঁরা নিশ্চই এটাও ভোলেননি যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল একাধিক আসামীর রায় ঘোষণার সময় জামায়াতে-ইসলামী নামের রাজনৈতিক সংগঠনটিকেও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ও সংশ্লিষ্ট বলে কঠোর ভাষায় মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু ‘প্রথম আলো’র আগেরটি এবং এবারেরটি- এই দু’টো জরিপেই জামায়াত নিষিদ্ধ করা বিষয়ে মানুষের মতামত নেয়া হলেও, জামায়াত নিষিদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জরুরী এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়- যুদ্ধাপরাধের দায়ে মানবতাবিরোধী অপকর্মে জড়িত সংগঠন হিসেবে জামায়াতে-ইসলামীকে বিচারের মুখোমুখী করা নিয়ে কোনো মতামতই নেয়া হয়নি! এর কারণ কি হতে পারে? পাঠক, কষ্ট করে খুঁজতে হবে না, আমিই বলে দিচ্ছি- গত কয়েক মাসে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ‘প্রথম আলো’র সংবাদ আর উপ-সম্পাদকীয়গুলো নেড়েচেড়ে দেখলে জামায়াতে-ইসলামীকে বিচারের মুখোমুখী করার প্রতি তেমন কোনো তাগাদাই চোখে পড়ে না। আবারও সেই একই ‘এরশাদীয়’ অপকৌশল! জামায়াতে-ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা বিষয়ে ‘প্রথম আলো’র জরিপে এই বিভ্রান্তিকর ‘হ্যাঁ-না’ ভোটাভুটির ফলাফল প্রকৃত অর্থে এই দাঁড়ালো যে- জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে মত দেয়া যে ৭০ শতাংশ মানুষের কথা বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে কতজন যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে-ইসলামীর বিচার চান, কিংবা জামায়াত নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এই জরিপ করা সময় যেভাবে প্রশ্নটি করা হয়েছে- ঠিক সেভাবে সরাসরি সরকারের নির্বাহী আদেশে দলটিকে নিষিদ্ধ না করে বরং মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাটিতে ওই দলটির রাজনীতি করার অধিকার চিরদিনের জন্য তুলে নেয়ার পক্ষে কতজনের মত আছে, অথবা উচ্চ-আদালতের রায়ে যে উপায়ে জামায়াতে-ইসলামীকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো- সেরকম পদ্ধতি অবলম্বনে কিছু একটা সিদ্ধান্তে যাওয়া ওই ৭০ শতাংশ মানুষের মধ্যে কতজন আশা করছেন – এসবের প্রশ্নের একটিরও উত্তরও জানার ‍সুযোগ পাওয়া গেল না এই জরিপ থেকে। উপরন্তু, জনগণের যে বিশাল অংশটি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে-ইসলামীর বিচার আশা করেন এবং যাদের তীব্র দাবির প্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধন করে ব্যাক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করা হলো- তাদের সবাইকে সুকৌশলে খাটো করার এক নষ্ট-খেলা হয়ে গেলো এই জরিপের আড়ালে! ‘প্রথম আলো’ কি মনে করে যে, তারা যেটিকে প্রশ্ন কিংবা ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত করে সেটির ওপর মতামত সংগ্রহের মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে অনুপাত গুনে ছাপিয়ে দেবেন, সেটাকেই আমাদের ইস্যু হিসেবে মেনে নিতে হবে? আর অধিকাংশ জনগণের মগজে যেটি আসলেই ইস্যু হয়ে বসে আছে, সেটির কোনো খবরই থাকবে না? এমনটা মনে করলে সামনে চরম ধরা খেতে হবে, অতীতে যারা এমনটা ভেবেছে- প্রত্যেকে ধরা খেয়েছে, মনে করে দেখুন।
জরিপ ব্যবহার করে জামায়াত নিয়ে ধোঁয়া ছড়ানোর এখানেই শেষ নয়। জরিপের একটি অংশে মতামত নেয়া হয়েছে- যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ের পর জামায়াতে ইসলামীর হরতাল ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে, যার বিপক্ষে ৮৬ শতাংশ এবং পক্ষে ১৩ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। এই সমীকরণ হয়তো বোকার মতো আমিও সাত-পাঁচ না বুঝে মেনেই নিতাম, যদি না চতুর ‘প্রথম আলো’ বিএনপি, আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির পাশাপাশি নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার পরও এবারের জরিপে জামায়াতে-ইসলামীর জনসমর্থন বিচারের বোকামিটুকু না করতো। করেছে, বেশ করেছে, আমি সূত্র পেয়ে গিয়েছি! জরিপের হিসাব অনুসারে, দলীয় সমর্থনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী’র সমর্থক যদি মাত্র ২.৯ শতাংশই হয়ে থাকেন, তাহলে জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন- এমন মানুষের সংখ্যা কেমন করে ১৩ শতাংশ হয়? জামায়াত সমর্থনকারী ২.৯ শতাংশ বাদে জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সমর্থন করা বাকি ১০.১ শতাংশ মানুষ কারা? তারা কি বিএনপিকে সমর্থন দেয়া সেই ৫০.৩ শতাংশের অংশ? কিন্তু এটা তো বাস্তবে হওয়ার কথা নয়! তাই যদি হবে, তাহলে তো একের পর এক জামায়াত নেতাদের রায় ঘোষণার পর জামায়াতে ইসলামীর হরতাল ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বিএনপি’র কিছুটা হলেও অংশগ্রহণ দেখা যাওয়ার কথা ছিলো! কিন্তু তা তো মোটেও দেখা যায়নি, বরং ক্ষমতার জোটসঙ্গী হয়েও রায়ের ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকে এবং হরতালে কোনো ধরনের সমর্থন ঘোষণা না দিয়ে, জামায়াতে-ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি’র দীর্ঘ-প্রেমময় সম্পর্কটি অনেকটা যেন বিচ্ছেদেই রূপ নিয়েছে। হায় রে প্রগতিশীল ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’... জামায়াতের পিঠ-বাঁচাতে আর জামায়াতের কাছে ভালো সাজতে এতটাই বুদ্ধিব্যায়!
সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে নয়, বরং দেশের একজন ক্ষুদ্র নাগরিক এবং বছরের পর বছর ধরে প্রতিদিন নগদ টাকায় দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার একজন নিয়মিত ক্রেতা হিসেবে ‘‌‌‌‌‌‌প্রথম আলো’ কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জানতে চাই- রাষ্ট্রের বা জনগণের ক্ষতি হয় ‌এমন যে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান অবলম্বন করা কি প্রতিটি গণমাধ্যমের জন্য আবশ্যক নয়? যদি তাই হবে, তবে জামায়াতে ইসলামীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জরিপে স্থান দিয়ে এর পক্ষ-বিপক্ষ যাচাইয়ে আপনাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি? যদি আরও বেশি মানুষ কিংবা ধরা যাক বেশিরভাগ মানুষই কোনো বিশেষ কারণে এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পক্ষে মতামত প্রদান করতো, তাহলে কি আপনারা এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে যৌক্তিক ও বৈধ হিসেবে আখ্যা দিয়ে দিতেন? অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মানুষের মতামত জানার বা নেয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে, জামায়াতে-ইসলামীর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পক্ষ-বিপক্ষ অনুসন্ধানে উদ্যোগী হয়ে আপনারা কী বোঝাতে চাইলেন? দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্যই কি শুধু এটা করা? নাকি জামায়াতের হরতালে বিএনপি’র সমর্থন-অংশগ্রহণ না থাকায় জামায়াত প্রশ্নে বিএনপিকে খাটো করার এটিও আরেকটি অপকৌশল? অথবা নাকি জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মতো একটা জঘণ্য বিষয়ের পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণ-চেষ্টার দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে এদেশের জনগণের মধ্যে বেড়ে ওঠা অন্য কোনো বিপরীত চিন্তাধারাকে উপহাস করার উদ্দেশ্যও লুকায়িত আছে এর মধ্যে? মাননীয় ‘প্রথম আলো’, তবে কি শেষ পর্যন্ত আপনারা স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে উপহাসে মেতে উঠলেন? জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পক্ষ-বিপক্ষ অনুসন্ধানের প্রকৃত কারণটির ব্যাখ্যা ‘প্রথম আলো’র কাছ থেকে না পেলে এগুলোই কারণ হিসেবে বুঝে নিতে হবে আমাদের।
পাঠক, এবার বলুন দেখি, যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং জামায়াতে-ইসলামীর রাজনীতি বিষয়ে ‘প্রথম আলো’র সাম্প্রতিক এই জরিপে এই যে এতগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্যের কথা এতক্ষণ ধরে জানালাম -এর একটিও কি আদতেই জরিপে উঠে এসেছে? নাকি খুব কৌশলের সাথে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উঠিয়ে আনা হয়েছে? রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে-ইসলামীর যেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করারই কোনো বৈধতা নেই, সেখানে দলটির জনসমর্থন যাচাই, দলটিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের কৌশলী প্রয়োগে এটিকে নিষিদ্ধের বিপক্ষে একটি বড় সংখ্যা দাঁড় করানো এবং এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতকে বিচারের আওতায় আনার গণদাবি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা, বিএনপি’র প্রতি সমর্থন এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করা- একই সঙ্গে এরকম দুটি সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক বিষয়ের পক্ষে দুটো বড় সংখ্যা প্রদর্শনের মাধ্যমে, প্রকৃতপক্ষে এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তিকর চিন্তা ছড়ানো অপপ্রয়াস, জামায়াতের ক্ষুদ্র সমর্থন সত্ত্বেও তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের পক্ষে সমর্থকের চেয়ে চার-গুনেরও বেশি মানুষের মতামত প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রকারান্তরে জামায়াতকে ধ্বংসযজ্ঞে ইন্ধন যোগানো –এভাবে একটি মাত্র জরিপ-প্রক্রিয়ার ভেতরে দেশের সবচেয়ে ঘৃণ্য সংগঠন জামায়াতে-ইসলামীকে একইসাথে এতগুলো সুযোগ-সুবিধা পাঁচ বছর ক্ষমতার সঙ্গী বানিয়ে বিএনপিও দিতে পেরেছিলো কিনা সন্দেহ! ‘প্রথম আলো’র মতো জামায়াতের এমন ঘনিষ্ট বন্ধু আর কে আছে? জামায়াত, তোমার কি লাগে আর?
চিন্তা করুন পাঠক- কতটা হাস্যকর হলে এটা সম্ভব যে, জামায়াত আর যুদ্ধাপরাধী নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর খেলায় মত্ত থাকার ফলে চলমান সময়ে জনমনে শঙ্কা ছড়ানো অত্যন্ত জরুরী বেশ অনেকগুলো প্রসঙ্গ জরিপে টানাই হয়নি! এর মধ্যে হেফাজতে ইসলাম, নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার, মহাজোট সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, ভারতসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক –এমন অনেকগুলো বিষয় জরিপে পুরোপুরি অনুপস্থিত! আবার, রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত যাচাই করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই জরিপে, ড. ইউনুস প্রসঙ্গে মানুষের মতামত ঠিকই নেয়া হয়েছে, এবং সেটিও একপাক্ষিক মতামত। জরিপে ড. ইউনুসের বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি অনুপাত খুঁজে বের করা হলেও, বিভিন্ন বিষয়ে সার্বিকভাবে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো এক বা একাধিক বিষয়ে ড. ইউনুসের ভূমিকা-বক্তব্য-কীর্তি নিয়ে কোনো মত প্রকাশের সুযোগ জরিপে না থাকায়, ড. ইউনুসের ভূমিকা-বক্তব্য-কীর্তি বিষয়ে মানুষের মত বা চিন্তার অনুপাত জানার কোনো সুযোগই নেই। তবে কি ‘ড. ইউনুস সমস্ত ভালো-মন্দের উর্দ্ধে’ ধরে নিয়েই এই জরিপ চালানো হয়েছে?
আসলে সত্যি কথা হলো- ৩০০ আসনে ভিন্ন-ভিন্ন প্রার্থী নির্ভর নির্বাচনী ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক দলের জনপ্রিয়তা এবং ভূমিকা নিয়ে জরিপ করার গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয়। নির্বাচন এলে জনগণ দল-বিবেচনায় কতটুকু, আর প্রার্থী-বিবেচনায় কতটুকু সিদ্ধান্ত নেন, তা এই জরিপ করার সময় বিবেচনাই করা হয়নি। বরং জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কোনো একটি বিশেষ মহলের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের একটি ধাপ হিসেবে বিবেচনায় নিলে, এই ধাপটি সফল করার প্রাণপন চেষ্টাই শুধু করা হয়েছে।
‘প্রথম আলো’র এরকম ভূমিকায় আমার কিংবা দেশের মানুষের বিন্দুমাত্র বিচলিত বা চিন্তিত হওয়ার কোনই কারণ নেই, কেননা ‘প্রথম আলো’ যে গোষ্ঠী বা মহলের হয়ে এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে- তারা ‘প্রথম আলো’কে না পেলে অন্য কাউকে দিয়ে এটা করাতোই, ‘প্রথম আলো’ এক্ষেত্রে একটি ‘মধ্য-স্বত্ত্বভোগী এজেন্সি’ ছাড়া আর তেমন কিছুই নয়, যে এজেন্সিটি এখন ওই গোষ্ঠী বা মহল দ্বারা পরিচালিত।
বরং এর চেয়ে অনেক বড় চিন্তার বিষয় হলো জরিপটি প্রকাশের পরদিন এটিকে নিয়ে ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত একটি উপ-সম্পাদকীয়, যার লেখক ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সবার পরম শ্রদ্ধার ব্যাক্তি সৈয়দ আবুল মকসুদ। তাঁর এই উপ-সম্পাদকীয় নিয়ে আমাদের চিন্তিত-বিচলিত হওয়ার কারণ এই যে, ওই জরিপের মাধ্যমে জামায়াতে-ইসলামী এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তি সৃষ্টির যে হীন অপচেষ্টাগুলো করা হয়েছে, সেই সবগুলো অপচেষ্টার বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য সৈয়দ আবুল মকসুদের একটি কলামই যে যথেষ্ট, যা সুচতুর-ধুর্ত ‘প্রথম আলো’ খুব ভালোমতো জানে এবং বোঝে। কিন্তু জাতির বিবেকের ভূমিকায় দৃশ্যমান শুভ্র-পোশাকের যে নীতিবাদ-সত্-ত্যাগী-স্পষ্টবাদী প্রিয় মানুষটি –সেই সৈয়দ আবুল মকসুদ কি কিছুই বোঝেন না? আর তাই শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের এই দুর্ভাগা জাতির বিবেক নিয়েই বিচলিত-চিন্তিত-শঙ্কিত হয়ে পড়ি, আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যাই, আমরা নীরবে চোখের জল মুছতে-মুছতে কোলাহলপূর্ণ শাহবাগ প্রজন্ম চত্তরের এক কোনে একাকীত্বের নিদর্শন হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাংলাদেশের অনেক সন্ধিক্ষণের নিরব-সাক্ষী ওই লম্বা তালগাছটার দিকে তাকিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশের এককীত্ব অনুভব করি, বাংলাদেশের জন্য মন খারাপ করি, আর তারপর সেই তালগাছটাকেই জড়িয়ে ধরে বলি, ‘কে বলেছে তুমি একা বাংলাদেশ? এই যে আমরা আছি তো!’
‘প্রথম আলো’, আপানাকে বলছি, শুনতে পাচ্ছেন? কান পেতে মন দিয়ে শুনে নিন... আপনার থাকার কোনই প্রয়োজন নেই, আপনি থাকুন আপনার প্রিয় এজেন্ডা-বন্ধুদেরকে নিয়ে, বাংলাদেশের জন্য আমরা এরকম পিঁপড়া কিংবা মাছি অথবা প্রজাপতির মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাগল প্রেমিক ছিলাম, আছি, থাকবো।

ফেরদৌস আরেফীন,এডিটরিয়ার কোঅর্ডিনেটর, সময় টিভি
arefin78@gmail.com

No comments:

Post a Comment