Wednesday, March 13, 2019

নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব প্রশ্নে পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা থেকে সমস্যাপূর্ণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে- আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস

 ৮ মার্চ ২০১৯
শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয় হলো লিঙ্গসমতা ও নারীর অধিকার। আমরা কেবল ঐতিহাসিক অবিচার সমূহকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সবার অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে কথা বলে প্রতিষ্ঠানে আস্থা পুনঃস্থাপন ও সংহতি পুনর্গঠন করতে পারি এবং বহুমাত্রিকভাবে লাভবান হতে পারি।

সাম্প্রতিক দশকগুলোয় কিছু ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব প্রশ্নে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু এসব অর্জন পুরো বা ধারাবাহিক অর্জনের তুলনায় নগন্য এবং এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা থেকে সমস্যাপূর্ণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে।
ক্ষমতার প্রশ্নে লিঙ্গসমতা একটি অপরিহার্য বিষয়। আমরা পুরুষশাসিত বিশ্বে পুরুষনিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতির মধ্যে বাস করি। নারীর অধিকারকে আমরা যখন সবার লক্ষ্য হিসেবে নিই, যা কি না সবাইকে লাভবান করতে পারে এমন একটি পথ, তখনই কেবল আমরা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখি।
নারীদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য। জাতিসংঘে আমি এই বিষয়টিকে ব্যক্তিগত ও জরুরি অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছি। বিশ্বজুড়ে আমাদের দলগুলোকে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে এখন লিঙ্গসমতা নিশ্চিত হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা দলে এখন নারী সদস্যের সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। আমরা এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রাখব।

কিন্তু ক্ষমতা প্রাপ্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের এখনো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মাত্র ছয়টি দেশ কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমানাধিকার দেয়। এবং এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অর্থনৈতিকখাতে লিঙ্গ পার্থক্য ঘুঁচিয়ে উঠতে এ বিশ্বের ১৭০ বছর সময় লাগবে।
জাতিয়তাবাদী, জনরঞ্জনবাদী ও কঠোরতা নীতিতে লিঙ্গ অসমতা যোগ করে, যা নারীর অধিকার খর্ব করে এবং সামাজিক পরিসেবা সীমিত করে। কিছু দেশে হত্যাকাণ্ডের সার্বিক হার কমলেও লিঙ্গজনিত কারণে বিদ্বেষপ্রসূত নারী হত্যার হার বাড়ছে। অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে আমরা পারিবারিক সহিংসতার বা নারীর জননাঙ্গ ছেদের বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষার ঘাটতি দেখতে পাই। আমরা জানি, নারীর অংশগ্রহণ শান্তিচুক্তিকে টেকসই করে, কিন্তু এমনকি সরকারও, যারা এ ক্ষেত্রে সোচ্চার কণ্ঠ তারাও কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের কথার বাস্তবায়নে ব্যর্থ। ব্যক্তি ও পুরো সমাজকে আঘাত করার কৌশল হিসেবে সংঘাতে যৌন সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটের বিরুদ্ধে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নেতৃত্বকে সুরক্ষা দিতে ও এর পক্ষে প্রচারণার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। দশকের পর দশক ধরে যে বিষয়টি বিজয়ী হয়ে এসেছে, আমাদের তাকে আর জয়ের সুযোগ দেওয়া উচিত নয় এবং এ ক্ষেত্রে সার্বিক, দ্রুত ও আমুল পরিবর্তনের ওপর আমাদের অবশ্যই জোর দিতে হবে।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন’, যা সেই সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকেই। আমাদের এই বিশ্বটাকে পুনঃকল্পনা ও পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের একটি উদ্ভাবনী পথ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা সবার জন্যই সমান কার্যকর হবে। নগরায়ন নকশা, পরিবহন ও জনপ্রশাসনের মতো ক্ষেত্রে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এসব খাতে নারীর প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিহত এবং সবার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন।
এই বিষয়টি ডিজিটাল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যা আমাদের ওপরই নির্ভরশীল। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে নির্মাতার বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হয়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত ও নকশা প্রণয়ন খাতে নারীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি সবার জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।
গত মাসে ইথিওপিয়ায় আমি ‘আফ্রিকান গার্লস ক্যান কোড’ নামের একটি উদ্যোগের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছি। এই উদ্যোগ ডিজিটাল জগতে লিঙ্গ পার্থক্য ঘোচাতে এবং প্রযুক্তি দুনিয়ায় আগামীর নেতৃত্বকে প্রশিক্ষণ দিতে কাজ করে। ওই মেয়েরা নিজেদের প্রকল্পে যে শক্তি আর উদ্যম প্রদর্শন করেছে, তাতে আমি অভিভূত। এ ধরনের কর্মসূচি কেবল দক্ষ জনশক্তিই গড়ে তোলে না, এগুলো মেয়েদের লক্ষ্য ও স্বপ্নকে সীমিত করা ধরাবাধা ছককেও চ্যালেঞ্জ জানায়।
এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, আসুন আমরা নিশ্চিত করি যে নারী ও কিশোরীরাও আমাদের সবার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলা নীতি, পরিষেবা ও অবকাঠামোর আকার দিতে পারে। এবং আসুন যে নারী ও কিশোরীরা সবার জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়তে বাধা ভাঙছে, তাদের সমর্থন জানাই।

সংকট মুক্তির পথে নারীর পাশে থাকুক তার মা, পরিবার এবং সমাজ-সুমি খান

  আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলো বিশ্বব্যাপী । March 8 ,2019- #BalanceforBetter প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার নারী দিবস পালিত হলো। একটু ভালোর জন্যে জীবন জীবিকা নিয়ে ব্যালেন্স করে চলতে শিখতে হয় আমাদের।
 অনেকটা নীরবেই পার করেছি এবারের নারী দিবস। আমার কৈশোর থেকে নারী দিবসের প্রাক্কালে পত্র পত্রিকায় লেখা দিয়েছি। সকালবেলা মা’কে নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হতো নারী দিবস। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে এ দিবস পালনের রীতি ছিল । এবারে একটু দেরিতেই নারী দিবস বিষয়ে লিখতে বসলাম। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে মনে করেন অনেকে। আপাতদৃষ্টিতে তেমন মনে হলে ও বাস্তবে তা হয়েছে বলে মনে করেন না সমাজবিশ্লেষকেরাও।তবু নারীর অধিকারের লড়াইয়ের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং গোৗরবোজ্জ্বল। 

এই দিবসটি উদযাপনের নেপথ্যে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে গুলি চললে নিহত হন অনেক নারীশ্রমিক।সরকারী লাঠিয়াল বাহিনীর দমন-পীড়ন চলে মিছিল কারী প্রতিবাদী নারীশ্রমিকদের উপর।
 ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেৎকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়- ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে 'নারীদের সম-অধিকার দিবস' হিসেবে দিনটি পালিত হবে।
দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি - নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে - আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া,আজারবাইজান, বেলারুশ, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কিউবা,জর্জিয়া, গিনি-বিসাউ,ইরিত্রিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মলদোভা,মঙ্গোলিয়া,মন্টেনিগ্রো, রাশিয়া,তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,উগান্ডা,ইউক্রেন,উজবেকিস্তান,ভিয়েতনাম এবং জাম্বিয়া।এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিনভোগ করেন। আমাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে নারী দিবস পালিত হলেও এখনো নারীর অধিকার প্রশ্নে পরিবার এবং সমাজ আন্তরিক ভূমিকা পালনে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে ।
নারী দিবসে বাণী দিলেন দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোও তাদের বাণিজ্য করতে ছাড়ে নি । মীনা বাজার এর মেসেজ এলো নারী দিবসে তাদের পণ্যমূল্যে ছাড় দেবার প্রলোভন দেখিয়ে। 
পরিবার এবং সমাজে নারী তার প্রাপ্য সম্মান থেকে এখনো বঞ্চিত । এ কারণে নারী দিবসে ঔদার‌্য দেখাতে যারা বাণী দিলেন, তাদের নিজেদের বোধ ও বিবেকের কাছে জবাবদিহিতা আছে কিনা প্রশ্ন থেকে যায়। নারীর মাতৃত্ব যাদের কাছে দুর্বলতা , তাদের শঠতা ,নীচতা আর হঠকারীতার কাছে কেন বিকিয়ে যায় জীবনের দায়িত্ব! নারী তার পরিবারেই বঞ্চিত হয় প্রাপ্য সম্মান থেকে।কবে এর অবসান হবে? বিবাহিত নারীর প্রতি স্বামী কর্তৃক সহিংসতা-সংক্রান্ত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১১ সালের রিপোর্টে এ সহিংসতার হার ছিল ৮৭ শতাংশ, যা ২০১৫ সালে কমে হয়েছে ৮০ শতাংশ। আবার পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা-বিষয়ক মামলা রুজুর হার বেড়ে চলেছে। যেমন: ২০১০ সালে সারা দেশে এ বিষয়ক মামলা রুজু হয়েছিল মোট ১৭ হাজার ৭৫২টি, সেখানে ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২২০টি। এই দুটি উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে একদিকে নারীর প্রতি সহিংসতার হার কমছে, আবার এ ধরনের সহিংস ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। অর্থাৎ নারী আইনের পথে তার বঞ্চনা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজে নিচ্ছে। জয় হোক নারী অধিকারের। আইনী পথে প্রতিকার খুঁজে নেবার পর ও পরিবার নারীকে তার জন্মগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এমন দৃষ্টান্ত খুবই হতাশাব্যঞ্জক !
২০১৯ সালের নারী দিবসের অঙ্গিকার হোক এ ধরণের সামাজিক সমস্যা থেকে মুক্ত করতে হবে সমাজকে। নারীর প্রতিটি সংকটে পাশে থাকুক তার জন্মদাত্রী মা এবং পরিবার ; সংকট থেকে উত্তরণের পথে একাত্ম হোক । 
নারী মুক্তি মানব মুক্তির পথ খুলে দেয়। এ কারণেই নারী দিবস ২০১৯ এর প্রতিপাদ্য’  সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন', যা সেই সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকেই। পুরুষ শাসিত সমাজে বেড়ে ওঠা নারী এখনো বিব্রত হয় কন্যা সন্তানের অধিকারের লড়াইয়ে একাত্ম হতে। পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকে বন্দী নারী নিজের অজান্তে অথবা সচেতন ভাবেই ডুবে যায় অন্ধকারের অতল গর্ভে!তবে কি  কন্যা সন্তান এখনো নিরাপদ নয় জন্মদাত্রী মায়ের ছায়াতে থেকেও?
   মায়ের ছায়া যদি ঢাকা পড়ে যায় পুরুষতান্ত্রিকতার দাপুটে  সংস্কৃতির আলোছায়ার খেলায়, অসহায় কন্যার বেঁচে থাকার অধিকার লুঠ হয়ে যায়!
আইনি সুরক্ষায় ক্ষেত্রবিশেষে নারী কোনরকমে রক্ষা পেলে ও পুরুষ নির্ধারিত এবং পরিচালিত সংস্কৃতির প্রতি অন্ধ পরিবারের দায়িত্বহীন বিরূপ অবস্থান সংকটময় করে তোলে নারীর জীবন ও ভবিষ্যৎ।
 সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেৎকিনের জয় হোক! সফল হোক আন্তর্জাতিক নারী দিবস!
 সুমি খান: সম্পাদক, সূর‌্যবার্তানিউজডটকম
১৩ মার্চ, ২০১৯, ঢাকা

Monday, December 31, 2018

লড়ে নেবে নারী তার অধিকার-সুমি খান

একদিন জেগে ওঠে
চির প্রবঞ্চিত নারী-
পক্ষ থেকে পক্ষান্তরে
হয়ে ওঠে ভয়ঙ্করী!

আজন্ম লালিত
পুরুষ শাসিত সমাজের আধিপত্য ভাঙ্গে
প্রবল বিদ্রোহে !

জেনে গেছে লড়ে নিতে
বাঁচবার অধিকার!

পয়লা জানুয়ারী, ২০১৯, সকাল ৯টা
বসুন্ধরা, ঢাকা।

ব্রাত্যজনের কাব্য- সুমি খান

ব্রাত্যজনের কাব্য-১

নামেই বিধাতা তুমি
 মানো না জন্মের অধিকার !
মানো না  মাতৃত্বের অধিকার !
মানো শুধু প্রবঞ্চকের
শঠতার জয়-
 তাই বুঝি কেড়ে নিতে হয় ?

নিষ্প্রাণ দেহের
নিঃশেষিত প্রাণবায়ু
ভেসে বেড়ায় অনন্ত আকাশে!
তার পূর্বকালেই
সব কেড়ে নিতে পারো-
নীরবে নিঃশেষে!

শঠতার হঠকারী
অথবা নীরবতার তীব্রতা
জানা নেই তোমার যেমন!
অনন্তলোকের প্রতীক্ষা কি
পলে পলে ফুরায় এমন!

নাড়িছেঁড়া ধন আর
মায়ের মমতা যতো
সবই তুমি কেড়ে নিতে পারো?
বলো নি তো দুঃস্বপ্নেও!

এতোটা ধৃষ্টতা যেন
তুমিই দেখাতে পারো-
জেনে রাখো তবু দিনশেষে
আমরা নারীরা লিখি
মায়েদের হাত দিয়ে
বোনেদের প্রাণ দিয়ে
 আমার ই গভীর দীর্ঘশ্বাস
ভাসে  তোমার বাতাসে!!

সত্য কঠিন মেনে-
কঠিনেরে ভালোবেসে-
অষ্টপ্রহর বেনোজলে ভেসেছি
নিজেকে  চিতায় পুড়েছি   !
চিতার ছাইভস্ম থেকে
ফিনিক্স পাখির মতো
জেগে উঠে
চিরউদ্বাস্তু সীতা !

ভালোবেসে দিনশেষে
যুগ থেকে যুগান্তর
স্তব্ধতা ভাঙ্গবার
স্পর্ধিত ভালোবাসা
 ব্রাত্যজনের প্রাণে
 স্পর্শে নিরন্তর!

 (২০১৮ ছেড়ে ২০১৯ এ পদার্পন -)
০১০১১৯ সকাল ৮.১৫


Saturday, December 29, 2018

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির জয় অর্জনের মাধ্যমে রচিত হোক নতুন ইতিহাস-সুমি খান


আজ ৩০ ডিসেম্বর, রোববার আমাদের সামনে  অসামান্য এক সকাল এসেছে- নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ নির্ধারণ করবে কারা পরবর্তী বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান।
১০ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে আজ ক্ষমতা। আজ আমরাই বাংলাদেশ। আমরা ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের নেতা নির্বাচন করব। দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ রোববার সকাল আটটায় শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এবারের ভোটে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত নভেম্বর। এরপর একবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এর ফলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।
৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ (নৌকা) বিএনপির (ধানের শীষ) মধ্যে। ভোটে আওয়ামী লীগ মহাজোট ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।  বিএনপি ২০ দলের নেতৃত্বে . কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক  
এবারও কী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতছে না কি, তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জিতবেএমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে আজই। বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর শুরু হবে ভোট গণনা। এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট হবে ঢাকা-, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-, রংপুর-, খুলনা- সাতক্ষীরা- আসনে। এসব আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে ব্যালটে ভোট হওয়া আসনগুলোর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, সে সম্পর্কে জানতে পারবে সাধারণ মানুষ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে একটি আসন (গাইবান্ধা-) ছাড়া বাকি ২৯৯টি আসনে আজ ভোট গ্রহণ হচ্ছে। গাইবান্ধা- (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান . টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী ২১ ডিসেম্বর ভোরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইন অনুযায়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে এই আসনের নির্বাচন বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন।এই আসনে ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী নিজের ভোট দিয়ে বেরিয়ে বিজয়ের চিহ্ণ দেখিয়ে বলেছেন, নৌকাই বিজয়ী হবে। একই সাথে তিনি বলেছেন, জনগণের রায় তিনি মাথা পেতে নেবেন। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা . কামাল হোসেন বলেছেন, ভোটে কারচুপি না হলে তাঁরাই জিতবেন। তিনি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে লাখ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। সারা দেশে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার এর মধ্যে পুরুষ ভোটার কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন ,মহিলা ভোটার কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন ।নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি ।মোট প্রার্থী হাজার ৮৬১ জন, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হাজার ৭৩৩ জন ,স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন
এই বাস্তবতায় ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ কাদের নিয়ন্ত্রণে দেবেন তারা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , তিরিশ লাখ শহীদের আত্মদানে আমরা দেশ পেয়েছি। আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের পতাকা, আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে যারা আত্মদান করেছেন , তাঁদের রক্তের স্রোতধারায় স্বাধিকার আদায়ের জন্য  দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের রক্তাক্ত পটভূমি তৈরি করে দিয়েছেন তিরিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ বীরাঙ্গনা। তাঁদের মহান আত্মদান যেন আমরা ভুলে না যাই। একই সাথে এই মহান আত্মদান নিয়ে যারা বারবার প্রশ্র তুলেছে, তাদের চিনতে যেন আমরা ভুল না করি।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরে কী ভূমিকা পালন করেছেন, কম বেশী অনেকেই তা জানেন। কারণেই হয়তো তিনি এবং তার অনুসারীরা প্রশ্ন তুলেন তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় এসে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি দিবসে ঢাকায় আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া একাত্তরের মহান শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষদের আনুষ্ঠানিক যে সংখ্যা সেটি নিয়ে বিতর্কের কথা তুলে তিনি বলেন, মক্তিযুদ্ধের সময় কতো মানুষ নিহত হয়েছিলো তা নিয়ে বিতর্ক আছে।সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দীনআহমেদ। (বিবিসি,২১শে ডিসেম্বর,২০১৫)
(https://www.bbc.com/bengali/news/2015/12/151221_bangladesh_khaleda_zia_1971)

   খালেদা জিয়ানিজামী জোটের ২০০১-২০০৫ শাসনামল, ভয়াবহ সংখ্যালঘু নিধনের ধারাবাহিকতা, হাওয়া ভবনের পার্সেন্টেজ এবং গ্রেনেড হামলার বর্বোরোচিত কালো অধ্যায় গত ১০ বছরে অনেকে ভুলে গেলেও ইতিহাসের কাছে বারবার আমাদের ফিরে যেতে হবে। নাহয় সেই বর্বর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেউ রোধ করতে পারবে না।
প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থাই আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আজ আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন বা ধারাবাহিকতা রক্ষার সবচেয়ে বড় উৎসব, নির্বাচনে অংশ নেব। আজ আমরা ভোট দিয়ে আমাদের অধিকার বুঝে নেব। আর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে- মুক্তিযুদ্ধের উদার গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমরা সমুন্নত রাখবো। আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ যেন কোন ভাবেই ভূলুন্ঠিত না হয়।
একটি উদার, মুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থাই আমাদের কাম্য।

স্মরণ করতে হবে ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত শাসন ব্যবস্থার কথা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নিয়মরক্ষার নির্বাচন আর সেই নির্বাচন প্রতিরোধের নামে আগুন-সন্ত্রাসের বিভীষিকা ভুলে গেলে  নিজেদের সাথে জাতির সাথে চরম হঠকারী হবে। আর সেই বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনটি জাতির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যাদের নিবন্ধন নেই, তারাও একাকার হয়ে গেছে বড় দুই জোটে। বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, জনসমর্থনে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থ আর পেশিশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করছে তারা। ধর্মীয় দলগুলোও যার যার মতো করে তাদের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। একাত্তরের চিহ্নিত স্বঘোষিত ঘাতকদের আবারো তিরিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত আমাদের পবিত্র জাতীয় পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে জাতীয় সংসদে যাবার সুযোগ করে দিয়ে যেন ইতিহাস কলঙ্কিত হতে না দিই। 

বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতার ভয়াবহতায় বারবার আক্রান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনের দিন নির্বাচনপরবর্তী- তিন ক্ষেত্রেই সহিংসতা ছড়ানো হয়। এসব সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন নারীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিশু কিশোরী প্রবীণ দেরও ধর্ষণ করা, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার দৃষ্টান্ত চাক্ষুষ করেছি আমরা ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল অবধি।। সেই বর্বরতা আবার ফিরে আসুক নিশ্চয়ই কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চান না। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শনিবার বলেছেন, ’সারাদেশের সংখ্যালঘু এলাকাগুলোয় সেনাবাহিনী গিয়ে আশ্বস্ত করছে, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে এবং যার যার ভোট প্রদান করতে পারে। এজন্য সেসব এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী টহল আজকেও যাচ্ছে, নির্বাচনের পরেও যাবে।' তিনি বলেন, 'সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের অত্যন্ত চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সেনাপ্রধান হিসেবে বলছি, আমিও এই দেশের নাগরিক। গত এক সপ্তাহ সারাদেশ ঘুরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিগত ৪৭ বছরে এরকম শান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমি দেখিনি।'
 এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিগত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে কোনোটির চেয়ে সহিংসতার মাত্রা কম।আজ ভোটের দিন, যাতে একটিও সহিংসতা না ঘটে, এটাই সাধারণ দেশের মানুষ চায়।
যে দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন বিজিত দল তাদের মেনে নেবেন এই আশা করা হয়তো বেশি চাওয়া। তবু জনগণের কাছে সেটাই কাঙ্খিত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় কার্যকর বিরোধী দল অপরিহার্য। যদিও আমরা গত ১০ বছরে সত্যিকার অর্থে কোন রাজনৈতিক দলকেই বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করতে দেখিনি। তবু প্রত্যাশা থাকে । সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের যারা এবার নিবন্ধিত হয়েছেন নির্বাচনের জন্যে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক নীতিনিষ্ঠতা থাকলে , তাঁরা নির্বাচনে বিজয়ী না হলেও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হিসেবে দেশের এবং দশের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করবেন, তা না হলে আগামীতে কখনো ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থীতা দাবি করার কোন যোগ্যতা তাঁরা রাখেন কিনা, সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে।
এ কারণেই যারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা কোন ধ্বংসাত্মক পথে না গিয়ে গঠনমূলক রাজনীতি করবেন। বিরোধী দলের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। যারা বিজয়ী হবেন, তারা সরকার গঠন করবেন, তাই বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে দেশের নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভিটে মাটি দখল করার জন্যে তাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নির‌্যাতন, বা বিরোধী দলকে গ্রেনেড বিষ্ফোরণে নিশ্চিহ্ণ করা বা  প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে লালন করে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মতো ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কান্ডের ধারাবাহিকতা জনগণ দেখতে চায় না।
 গত ১০ বছরে রাজনীতিতে ইতিবাচক, নেতিবাচক দু’ধরণের পরিবর্তন মানুষ দেখতে পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে।  বোমা হামলার ধারাবাহিকতা এবং আগুন সন্ত্রাসের ভয়াবহতা প্রায়  বন্ধ করা গেছে বলা যায়। তবে এর পাশাপাশি ভোটের রাজনীতির কাছে হার মেনে  আওয়ামী লীগ সরকারের অদূরদর্শী পদক্ষেপে সভ্যতার জন্যে চরম হুমকি জঙ্গী সংগঠন হেফাজতে ইসলামী এবং কওমী মাদ্রাসার ধারক বাহকদের ব্যাপক উথ্থান কাউকে গ্রাস করেছে, আবার কাউকে সন্ত্রস্ত, উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত করেছে। বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ রক্ষা করতে হলে এই নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠতেই হবে আওয়ামী লীগকে। সেটা দুরূহ হলেও একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই তা সম্ভব। এ কারণে সাধারণ মানুষের অনেক বেশি নির্ভরতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর। তারা রাজনীতিতে ইতিবাচক এবং গুণগত পরিবর্তন আশা করে। আর তার প্রমাণ দিতে হবে আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির প্রতীকে ভোট দানের মাধ্যমে ।

   পরিশেষে ,সার্বিক ভাবে জনগণের কাছে কাঙ্খিত গণতন্ত্র বজায় রাখতে হলে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে আজকের ভোটারদের।  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রগতিশীল শক্তিকে বিজয়ী করতে সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করে যাবো এই শপথে একাত্ম হতে হবে আমাদের। সকল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিজয়ের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করুক আজকের এই দিন।
Sumikhan29bdj@gmail.com