Saturday, December 29, 2018

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির জয় অর্জনের মাধ্যমে রচিত হোক নতুন ইতিহাস-সুমি খান


আজ ৩০ ডিসেম্বর, রোববার আমাদের সামনে  অসামান্য এক সকাল এসেছে- নাগরিক অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ নির্ধারণ করবে কারা পরবর্তী বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘সর্বাধিক সংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। উৎসবমুখর ভোট হবে এটাই আশা।তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান।
১০ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে আজ ক্ষমতা। আজ আমরাই বাংলাদেশ। আমরা ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমাদের নেতা নির্বাচন করব। দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আজ রোববার সকাল আটটায় শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এবারের ভোটে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত নভেম্বর। এরপর একবার পুনঃ তফসিল করা হয়। এর ফলে ভোটের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।
৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ (নৌকা) বিএনপির (ধানের শীষ) মধ্যে। ভোটে আওয়ামী লীগ মহাজোট ১৪ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে।  বিএনপি ২০ দলের নেতৃত্বে . কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক  
এবারও কী বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতছে না কি, তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জিতবেএমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে আজই। বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের পর শুরু হবে ভোট গণনা। এবারই প্রথমবারের মতো ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট হচ্ছে। ইভিএমে ভোট হবে ঢাকা-, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-, রংপুর-, খুলনা- সাতক্ষীরা- আসনে। এসব আসনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। তবে ব্যালটে ভোট হওয়া আসনগুলোর ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে পরবর্তী সরকার কারা গঠন করছে, সে সম্পর্কে জানতে পারবে সাধারণ মানুষ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে একটি আসন (গাইবান্ধা-) ছাড়া বাকি ২৯৯টি আসনে আজ ভোট গ্রহণ হচ্ছে। গাইবান্ধা- (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান . টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী ২১ ডিসেম্বর ভোরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আইন অনুযায়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে এই আসনের নির্বাচন বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন।এই আসনে ভোট গ্রহণের নতুন তারিখ আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী নিজের ভোট দিয়ে বেরিয়ে বিজয়ের চিহ্ণ দেখিয়ে বলেছেন, নৌকাই বিজয়ী হবে। একই সাথে তিনি বলেছেন, জনগণের রায় তিনি মাথা পেতে নেবেন। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা . কামাল হোসেন বলেছেন, ভোটে কারচুপি না হলে তাঁরাই জিতবেন। তিনি ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে লাখ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ্যাব, আনসার, কোস্টগার্ড, বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন। সারা দেশে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র নিরাপদ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।
১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার এর মধ্যে পুরুষ ভোটার কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন ,মহিলা ভোটার কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন ।নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি ।মোট প্রার্থী হাজার ৮৬১ জন, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হাজার ৭৩৩ জন ,স্বতন্ত্র প্রার্থী ১২৮ জন
এই বাস্তবতায় ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ কাদের নিয়ন্ত্রণে দেবেন তারা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না , তিরিশ লাখ শহীদের আত্মদানে আমরা দেশ পেয়েছি। আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের পতাকা, আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি সবকিছু অর্জন করতে হয়েছে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে যারা আত্মদান করেছেন , তাঁদের রক্তের স্রোতধারায় স্বাধিকার আদায়ের জন্য  দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের রক্তাক্ত পটভূমি তৈরি করে দিয়েছেন তিরিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ বীরাঙ্গনা। তাঁদের মহান আত্মদান যেন আমরা ভুলে না যাই। একই সাথে এই মহান আত্মদান নিয়ে যারা বারবার প্রশ্র তুলেছে, তাদের চিনতে যেন আমরা ভুল না করি।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া একাত্তরে কী ভূমিকা পালন করেছেন, কম বেশী অনেকেই তা জানেন। কারণেই হয়তো তিনি এবং তার অনুসারীরা প্রশ্ন তুলেন তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরের মাথায় এসে ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি দিবসে ঢাকায় আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া একাত্তরের মহান শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মানুষদের আনুষ্ঠানিক যে সংখ্যা সেটি নিয়ে বিতর্কের কথা তুলে তিনি বলেন, মক্তিযুদ্ধের সময় কতো মানুষ নিহত হয়েছিলো তা নিয়ে বিতর্ক আছে।সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজউদ্দীনআহমেদ। (বিবিসি,২১শে ডিসেম্বর,২০১৫)
(https://www.bbc.com/bengali/news/2015/12/151221_bangladesh_khaleda_zia_1971)

   খালেদা জিয়ানিজামী জোটের ২০০১-২০০৫ শাসনামল, ভয়াবহ সংখ্যালঘু নিধনের ধারাবাহিকতা, হাওয়া ভবনের পার্সেন্টেজ এবং গ্রেনেড হামলার বর্বোরোচিত কালো অধ্যায় গত ১০ বছরে অনেকে ভুলে গেলেও ইতিহাসের কাছে বারবার আমাদের ফিরে যেতে হবে। নাহয় সেই বর্বর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কেউ রোধ করতে পারবে না।
প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন ব্যবস্থাই আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আজ আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন বা ধারাবাহিকতা রক্ষার সবচেয়ে বড় উৎসব, নির্বাচনে অংশ নেব। আজ আমরা ভোট দিয়ে আমাদের অধিকার বুঝে নেব। আর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে- মুক্তিযুদ্ধের উদার গণতান্ত্রিক চেতনাকে আমরা সমুন্নত রাখবো। আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ যেন কোন ভাবেই ভূলুন্ঠিত না হয়।
একটি উদার, মুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থাই আমাদের কাম্য।

স্মরণ করতে হবে ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত শাসন ব্যবস্থার কথা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নিয়মরক্ষার নির্বাচন আর সেই নির্বাচন প্রতিরোধের নামে আগুন-সন্ত্রাসের বিভীষিকা ভুলে গেলে  নিজেদের সাথে জাতির সাথে চরম হঠকারী হবে। আর সেই বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনটি জাতির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সবাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যাদের নিবন্ধন নেই, তারাও একাকার হয়ে গেছে বড় দুই জোটে। বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, জনসমর্থনে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থ আর পেশিশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করছে তারা। ধর্মীয় দলগুলোও যার যার মতো করে তাদের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী মাঠে নামার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। একাত্তরের চিহ্নিত স্বঘোষিত ঘাতকদের আবারো তিরিশ লাখ শহীদের রক্তস্নাত আমাদের পবিত্র জাতীয় পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে জাতীয় সংসদে যাবার সুযোগ করে দিয়ে যেন ইতিহাস কলঙ্কিত হতে না দিই। 

বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতার ভয়াবহতায় বারবার আক্রান্ত হচ্ছে নিরীহ মানুষ। নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনের দিন নির্বাচনপরবর্তী- তিন ক্ষেত্রেই সহিংসতা ছড়ানো হয়। এসব সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন নারীরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিশু কিশোরী প্রবীণ দেরও ধর্ষণ করা, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার দৃষ্টান্ত চাক্ষুষ করেছি আমরা ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল অবধি।। সেই বর্বরতা আবার ফিরে আসুক নিশ্চয়ই কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চান না। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ শনিবার বলেছেন, ’সারাদেশের সংখ্যালঘু এলাকাগুলোয় সেনাবাহিনী গিয়ে আশ্বস্ত করছে, ভোটাররা যেন নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে এবং যার যার ভোট প্রদান করতে পারে। এজন্য সেসব এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনী টহল আজকেও যাচ্ছে, নির্বাচনের পরেও যাবে।' তিনি বলেন, 'সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের অত্যন্ত চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সেনাপ্রধান হিসেবে বলছি, আমিও এই দেশের নাগরিক। গত এক সপ্তাহ সারাদেশ ঘুরে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, বিগত ৪৭ বছরে এরকম শান্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমি দেখিনি।'
 এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিগত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে কোনোটির চেয়ে সহিংসতার মাত্রা কম।আজ ভোটের দিন, যাতে একটিও সহিংসতা না ঘটে, এটাই সাধারণ দেশের মানুষ চায়।
যে দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন বিজিত দল তাদের মেনে নেবেন এই আশা করা হয়তো বেশি চাওয়া। তবু জনগণের কাছে সেটাই কাঙ্খিত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় কার্যকর বিরোধী দল অপরিহার্য। যদিও আমরা গত ১০ বছরে সত্যিকার অর্থে কোন রাজনৈতিক দলকেই বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করতে দেখিনি। তবু প্রত্যাশা থাকে । সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের যারা এবার নিবন্ধিত হয়েছেন নির্বাচনের জন্যে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, তাদের রাজনৈতিক নীতিনিষ্ঠতা থাকলে , তাঁরা নির্বাচনে বিজয়ী না হলেও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক হিসেবে দেশের এবং দশের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করবেন, তা না হলে আগামীতে কখনো ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রার্থীতা দাবি করার কোন যোগ্যতা তাঁরা রাখেন কিনা, সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে।
এ কারণেই যারা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা কোন ধ্বংসাত্মক পথে না গিয়ে গঠনমূলক রাজনীতি করবেন। বিরোধী দলের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। যারা বিজয়ী হবেন, তারা সরকার গঠন করবেন, তাই বলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে দেশের নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভিটে মাটি দখল করার জন্যে তাদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নির‌্যাতন, বা বিরোধী দলকে গ্রেনেড বিষ্ফোরণে নিশ্চিহ্ণ করা বা  প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে লালন করে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মতো ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কান্ডের ধারাবাহিকতা জনগণ দেখতে চায় না।
 গত ১০ বছরে রাজনীতিতে ইতিবাচক, নেতিবাচক দু’ধরণের পরিবর্তন মানুষ দেখতে পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে।  বোমা হামলার ধারাবাহিকতা এবং আগুন সন্ত্রাসের ভয়াবহতা প্রায়  বন্ধ করা গেছে বলা যায়। তবে এর পাশাপাশি ভোটের রাজনীতির কাছে হার মেনে  আওয়ামী লীগ সরকারের অদূরদর্শী পদক্ষেপে সভ্যতার জন্যে চরম হুমকি জঙ্গী সংগঠন হেফাজতে ইসলামী এবং কওমী মাদ্রাসার ধারক বাহকদের ব্যাপক উথ্থান কাউকে গ্রাস করেছে, আবার কাউকে সন্ত্রস্ত, উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত করেছে। বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িক সমাজ রক্ষা করতে হলে এই নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠতেই হবে আওয়ামী লীগকে। সেটা দুরূহ হলেও একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষেই তা সম্ভব। এ কারণে সাধারণ মানুষের অনেক বেশি নির্ভরতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর। তারা রাজনীতিতে ইতিবাচক এবং গুণগত পরিবর্তন আশা করে। আর তার প্রমাণ দিতে হবে আজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির প্রতীকে ভোট দানের মাধ্যমে ।

   পরিশেষে ,সার্বিক ভাবে জনগণের কাছে কাঙ্খিত গণতন্ত্র বজায় রাখতে হলে আবারো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে আজকের ভোটারদের।  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রগতিশীল শক্তিকে বিজয়ী করতে সম্মিলিতভাবে আমরা কাজ করে যাবো এই শপথে একাত্ম হতে হবে আমাদের। সকল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিজয়ের মাধ্যমে আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনা করুক আজকের এই দিন।
Sumikhan29bdj@gmail.com


Thursday, December 13, 2018

বধ্যভূমির ভোরে -সুমি খান


ভোর অাসবার অাগেই
হানা দিয়েছিলো
জলপাই রঙ্গা জীপ-
পথ দেখিয়েছিলো
বাঙ্গালী হন্তারক নকশাকারী
অাশরাফ অার মঈনুদ্দিনের ছক-
শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর হাতে পায়ে ধরে
ডা.অালীম চৌধুরীর বাড়িতে অাশ্রয় নিয়ে
বুদ্ধিজীবী হত্যার ছক সফল করলো ঘাতক মান্নান
পরাজয় নিশ্চিত জেনে হত্যাযজ্ঞে মত্ত হলো রাজাকার অালবদর ঘাতকের উন্মত্ত দল!
চোখ বেঁধে নেয়া হলো
ডা.ফজলে রাব্বী, অালীম চৌধুরী,
সেলিনা পারভীন সহ
শত শত চিকিৎসক,সাংবাদিক, শিক্ষক,বুদ্ধিজীবীদের-
ঘাতকের দল বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে
উপড়ে নিলো
বুদ্ধিদীপ্ত চোখগুলো!
উপড়ে নিলো
দেশ এবং মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ
হৃৎপিন্ড গুলো!
তবু সেই রক্তাক্ত জনপথ বেয়ে
জাতীয় পতাকা উড়েছিলো!
পরাধীনতার গ্লানি মুছে দিলো
লাখো বাঙ্গালীর অাত্মদান!
ঘরে ঘরে নব প্রাণে জাগে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান!

দিগন্তে নব সূর্যোদয়
নব অানন্দে জাগে বাঙালী
রক্তে প্রলয়ের দোল
বিজয়ের উল্লাস!
অাবারো ঘাতকেরা জোট বাঁধে-
অমানিশার কালো রাতে
উল্লাসে মাতে
পিতার হন্তারক!
পনেরো অাগস্ট থেকে জেল হত্যা
পিতার বুক তো নয়-
ঝাঁঝরা হয়ে গেলো
বুলেটবিদ্ধ জাতির হৃদয়!
ঘাতকের গুলি বোমা গ্রেনেডে
রমনার বটমূল
উদীচীর সমাবেশ
২১শে অাগষ্টের সমাবেশ
বারবার রক্তে ভেসেছে!
জনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ
বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে
নতুন শপথে জাগে অারবার!7
ঘাতকের ভীতি যেন-
মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা
দিনে দিনে এক হয় জনতা
রাজপথে জনতা
রাজপথে একতা
রক্তের ঋণশোধে
একাত্ম জনতা!
জনতার জাগরণে
ফাঁসির দড়িতে ঝুলে ঘাতকের দল!
বধ্যভূমির মাটি থেকে ভেসে অাসে
নব অাহ্বান-
নব প্রত্যয়!
রক্তঋণের দায়ে
প্রজন্ম
বদ্ধ হাত
অাকাশে উঁচিয়ে বলে,
'জয় বাংলা'!!
বেলা ১০টা ৩০ মিনিট, শুক্রবার ১৪ ডিসেম্বর,২০১৮
sumikhan29bdj@gmail.com

Thursday, November 29, 2018

সত্য ভাষণ দিক মানে না- সুমি খান


 বিন্দু বিন্দু ভুলকে নিয়ে
সিন্ধুসাগর কালপেরিয়ে
পাখির পালক আর হাসেনা
জীবন জয়ী র মৃত্যুবাণে
দৃপ্ত জীবন আর ডাকে না
সত্য ভাষণ দিক মানে না

  সকাল ৮.৫৬
১০ নভেম্বর ২০১৮, বসুন্ধরা আবাসিক


Wednesday, October 31, 2018

সেদিন অামি বলিনি - সুমি খান


অামার যেদিন বাঁচার ছিল
সেদিন অামি বাঁচি নি
অামার যেদিন বলার ছিল
সেদিন অামি বলিনি!
অামার পথে চলার ছিল,
সে পথে তো চলো নি!
তোমরা খুবই ব্যস্ত ছিলে
শূন্য অামায় বোঝো নি!
নিজের করে না পাওয়াতে
তোমাদের তো বলি নি!
নিজের ভালো নিজের মন্দ
কবে কখন বুঝেছি?
সবার ভালো সবার মন্দ
সবসময়ে খুঁজেছি!
---- -----------+------------

কবে তুমি বুঝবে বলো
জীবন ভরে বুঝলে না,
পুত্র তুমি,পূর্ণ জীবন
মা হয়ে ও পুঁছলে না!


রাত ১টা ২৮ মি ৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার



Monday, October 22, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান

বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও। সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে। তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো 'হিসেবি' হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।

সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শো তেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন,  জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
সুমি খান, সম্পাদক, সূর‌্যবার্তা নিউজডটকম
http://surjobartanews.com/http:/surjobartanews.com/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%BE-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A6%B8/

Sunday, October 21, 2018

মাসুদা ভাট্টি ইস্যুতে তসলিমার প্রশ্ন:সময় বুঝে বোবা অথবা বিপ্লবী-সুমি খান


বিশ্বজুড়ে নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার! বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি জনপ্রিয় এক নারী সাংবাদিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবাদের ঝড় দেখা যায় নি কোথাও।সাংবাদিক সূবর্ণা নদীকে তার প্রাক্তন স্বামী পাবনায় কুপিয়ে হত্যা করলো, ঘাতককে এখনো গ্রেফতার করা হলোনা। নারী সাংবাদিকেরা প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না! 
প্রতিবেশী দেশ ভারতে মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো এক নারী  সাংবাদিকের ‘মি টু’ হ্যাশ ট্যাগ এবং ‘এবিউজ’ মামলার কারণে। বিজেপি সরকার ও মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়নি।অাইনি লড়াই চলছে অভিযোগের সত্য মিথা যাচাইয়ে।
তবু দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বড়ো ‘হিসেবি’ হয়ে গেছে মনে হয় মাঝে মাঝে।হয়তো বা কখনো হুজুগে ও বটে! এ কারণেই হয়তো অাবারো বেদনায় রক্তাক্ত হয়েছেন প্রিয় দেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। যার লেখা বরাবরই অালোচনার ঝড় তুলেছে চায়ের টেবিল থেকে সম্পাদকের কলামে- দেশ থেকে দেশান্তরে!জবাবে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য নিয়ে খেদ প্রকাশ করে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি বলেছেন, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে ক’বার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টক শো তে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মাসুদা ভাট্টিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ‘চরিত্রহীন’ বলাতে প্রতিবাদ করেছেন নারী সাংবাদিক সংগঠন, সংস্কৃতিসেবী এবং ৫৫জন সম্পাদক। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন পরবর্তীতে ফোন করে মাসুদা ভাট্টির কাছে ক্ষমা চাইলেও মাসুদা ভাট্টি বলেছিলেন লাইভ শো তে ক্ষমা চাইতে হবে। অাশ্চর্যের ব্যাপার  সেই লাইভ শোতেই তো তাৎক্ষণিকভাবে মাসুদা ভাট্টি প্রতিবাদ করতে পারতেন,ক্ষমা ও দাবি করতে পারতেন; জানিনা কেন তা তিনি করেন নি। লাইভ টক শো’র উপস্থাপিকা ও তাৎক্ষনিক ভাবে সেই শব্দ প্রত্যাহার করতে বলতে পারতেন; তিনি সেটা করেন নি।
পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বিষয়টিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকদের সম্পৃক্ত করা হয়,বা তাঁরা সম্পৃক্ত হন। ’চরিত্র ‘ শব্দটি  যেন কখনো নারী কে অাক্রমনের হাতিয়ার না হয়,সেই দাবিতে উচ্চকিত হয়েছেন অনেকে। নিউজরুমে বা বাইরে নারী সাংবাদিকদের ‘এবিউজ’ বা নিপীড়ন করেছেন এমন নীতিনির্ধারক ও নারীর ‘চরিত্র’ সুরক্ষায় সোচ্চার হলেন নারী সাংবাদিক নেত্রীদের সাথে একাত্ম হয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীর সন্তানও নারী সাংবাদিকদের সাথে একাত্ম হলেন, এক্ষেত্রে জামাত প্রশ্ন তুললেন না কেউ।
তবে এই প্রতিবাদে যদি সবাই সততার সাথে অার অন্তর থেকে একাত্ম হয়ে থাকেন,সেটা গণমাধ্যমের জন্যে অবশ্যই শুভ লক্ষ্মণ। যদি তা না ও হয়,তবু অন্তত  নারীর সম্মানের প্রশ্নে নীতিনির্ধারকদের  বিবৃতি অবশ্যই সমাজে একটা ভালো প্রভাব ফেলবে মনে হয়েছিলো অামার।
হঠাৎ তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুকে মাসুদা  ভাট্টি ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হলেন অাবার! লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অনেক লেখার সাথে অামি একমত নই ;চরম বিরোধিতাও করি কখনো কখনো। কিন্তু এদেশের বিরোধিতা করে যুদ্ধাপরাধীরা যদি দেশের পবিত্র মাটিতে থেকে দেশের শ্রেষ্ঠসন্তানদের হত্যার ষড়যন্ত্র করতে পারে, একজন লেখিকা তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরও মাতৃভূমির মাটিতে পা দিতে পারবেন না, এ কেমন বিচার?মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে কি তবে  মাথা নত করেছে রাজনৈতিক শক্তি? রাজনীতির হঠকারিতায় তসলিমা তার মাতৃভূমি থেকে নির্বাসিত থাকবেন চিরদিন? কেন কোন প্রতিবাদ অাসেনা তসলিমাকে দেশের মাটিতে ফেরানোর দাবিতে?

অন্যদিকে এখন ক্ষমতাসীন দলের সাথে রাজনৈতিক সখ্য বলেই কি একসময় পাকিস্তানী স্বামীর সাথে সংসার করলেও, তৎকালীন রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে ভূমিকাহীন ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া মাসুদা ভাট্টির সাথে একে একে প্রতিবাদী  হলেন সংস্কৃতিসেবী এবং গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকেরা?  বেদনা অার হতাশা থেকেই হয়তো তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন -কখনো বোবা,কখনো বিপ্লবী কেমন এ খেলা !
মূলত: একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে লেখিকা মাসুদা ভাট্টি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন কে তার জামাত সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’ বলে অাখ্যায়িত করেন। এ চরম অন্যায় অাচরণ। পরবর্তীতে অনেকেই মাসুদা ভাট্টির পাশে দাঁড়িয়ে মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক তার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। এ ঘটনার পর চরম ক্ষুব্ধ প্রখ্যাত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে  মাসুদা ভাট্টির কঠোর সমালোচনা করলেন।  এতোটাই ক্ষুব্ধ হলেন তিনি, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাসুদা ভাট্টিকে তিনি ‘চরিত্রহীন ‘ আখ্যা দিলেন!২১ অক্টোবর রোববার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। তসলিমা নাসরিনের লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
কে মইনুল হোসেন, কী করেন, কী তাঁর চরিত্র, কী তাঁর আদর্শ আমি জানি না, তবে জানি মাসুদা ভাট্টি একটা ‘ভীষণ রকম চরিত্রহীন’ মহিলা। ‘চরিত্রহীন’ বলতে আমি কোনওদিন এর ওর সঙ্গে শুয়ে বেড়ানো বুঝি না। ‘চরিত্রহীন’ বলতে বুঝি, অতি অসৎ, অতি লোভী, অতি কৃতঘ্ন, অতি নিষ্ঠুর, অতি স্বার্থান্ধ,অতি ছোট লোক। মাসুদা ভাট্টি এসবের সবই।
মহিলাটির জন্য ১৯৯৬ বা ১৯৯৭ সালে আমার কাছে খুব করে আব্দার করেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। লন্ডন থেকে স্টকহোমে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশের মেয়ে। এক পাকিস্তানি লোককে বিয়ে করে এখানে ছিল। পাকিস্তানির সঙ্গে তালাক হয়ে গেছে। এখন ব্রিটেন থেকে ওকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো ওকে। ওর জন্য ব্রিটিশ সরকারকে একটা চিঠি লিখে দাও। লিখে দাও মাসুদা ভাট্টি বাংলাদেশে তোমার পাব্লিশার ছিল, তোমার জন্য আন্দোলন করেছে। ও যদি এখন দেশে ফিরে যায়, ওকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা’।আমি বললাম, ‘মহিলাকে আমি চিনিই না। আর আপনি বলছেন ও আমার পাবলিশার ছিল? আমি মিথ্যে বলি না। আমি মিথ্যে কথা বলতে পারবো না।’ এরপর ওই মহিলা আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি, আমাকে বাঁচান। আপনি না বাঁচালে আমি মরে যাবো জাতীয় কান্না। কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজের চোখেও জল চলে আসে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাসুদা ভাট্টিকে না তাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলাম। মহিলার জন্য মিথ্যে কথা আমাকে লিখতে হলো, লিখতে হলো, আমার পাবলিশার ছিল সে, দেশে ফিরলে তাকে মেরে ফেলবে মৌলবাদিরা। তখন আমার খুব নাম ডাক। আমার চিঠির কারণে মাসুদা ভাট্টির পলিটিক্যাল এসাইলাম হয়ে গেল, ব্রিটেনের নাগরিকত্বও হয়ে গেল।
তারপর কী হলো? তারপর ২০০৩ সালে আমার আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড ‘ক’ যখন বাংলাদেশে বেরোলো,আমি কেন নারী হয়ে দেশের এক বিখ্যাত পুরুষের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছি, আমি কেন নারী হয়ে নিজের যৌনতার কথা লিখেছি, সারা দেশের নারী-বিদ্বেষী আর ধর্মান্ধ মৌলবাদি গোষ্ঠি উন্মাদ হয়ে উঠলো আমাকে অপমান আর অপদস্থ করার জন্য, আমাকে অবিরাম অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালি তো দিতেই লাগলো, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে শুরু করলো, সেই মিছিলে সামিল হলো মাসুদা ভাট্টি।
আমার বিরুদ্ধে এ যাবৎ প্রচুর কুৎসিত লেখা লিখেছে লোকে, সর্বকালের সর্বকুৎসিত লেখাটি লিখেছে মাসুদা ভাট্টি। সবচেয়ে জঘন্য, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বীভৎস সে লেখা। এত ভয়াবহ আক্রমণ আমার চরমতম শত্রুও আমাকে কোনওদিন করেনি। ক বইটি নাকি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে শরীরে ঘিনঘিনে ঘা ওলা রাস্তায় পড়ে থাকা এক বুড়ি বেশ্যার আত্মকথন।
মাসুদাভাট্টি আমার উপকারের জবাব ওভাবেই দিয়েছিল। ও যদি চরিত্রহীন না হয়, দুনিয়াতে চরিত্রহীন কে?
আজ দেশের ৫৫ জন বিশিষ্ট সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির পক্ষে লড়ছেন কারণ কেউ তাকে চরিত্রহীন বলেছে। যত অশ্লীল শব্দ বাক্য পৃথিবীতে আছে, তার সবই আমার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হচ্ছে নব্বই দশকের শুরু থেকে। আমি তো জনপ্রিয় কলাম লেখক ছিলাম তখন, জনপ্রিয় লেখক ছিলাম, কই কোনও বিশিষ্ট সম্পাদক আর কোনও সিনিয়র সাংবাদিককে তো আমার বিরুদ্ধে হওয়া লাগাতার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবাদ করতে কোনওদিন দেখিনি।আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হলো, আমার বিরুদ্ধে লক্ষ লোকের লং মার্চ হলো, আমার ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে দিনের পর দিন মিছিল হলো, সরকার একের পর এক আমার বই নিষিদ্ধ করলো, আমার মত প্রকাশের বিরুদ্ধে মামলা করলো, আমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, কই দেশের কোনও সম্পাদক বা সাংবাদিক কেউ তো টুঁ শব্দ করেনি। এই যে আজ ২৪ বছর আমাকে অন্যায়ভাবে কোনও সরকারই দেশে ফিরতে দিচ্ছে না, কোনও বিশিষ্ট জন তো মুখ খোলেন না। একজনের বেলায় বোবা, আরেকজনের বেলায় বিপ্লবী, এ খেলার নাম কী?
তসলিমা নাসরিনের স্ট্যাটাসের জবাব দিলেন মাসুদা ভাট্টি । মাসুদা ভাট্টির জবাব তুুুুলে ধরা হলো-
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তসলিমা নাসরিনের দেওয়া স্ট্যাটাসের জবাবে মাসুদা ভাট্টি লিখেছেন, তসলিমা নাসরিনকে আমি ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি এরকম একটি মোক্ষম সময়কে বেছে নিয়েছেন আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্ষোভকে প্রকাশ করে ২০ বছর আগে দেয়া আমার একটি বক্তব্যের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।যে সকল ঘটনার উল্লেখ তিনি করেছেন তা ২০০০ সালের এবং তিনি সত্যিই আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন কারণ তখন আমাকে ব্রিটেন থেকে বের করে দেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। একটি আলোচিত সাক্ষাতকার গ্রহণের পর থেকে আমার সে দেশে টিকে থাকা মুস্কিল হয়ে পড়েছিল এবং তখনও অনেক সাংবাদিক আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন যেমন দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তসলিমা নাসরিন কখনোই আমাকে তার পাবলিশার হিসেবে চিঠি দেননি, দিয়েছিলেন তার একজন ফ্যান বা সমর্থক হিসেবে বর্ণনা করে। খুঁজলে সে চিঠি আমি নিশ্চয়ই পাবো।
যখন তার প্রথম আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘ক’ বের হলো তখন এই বই নিয়ে প্রচারণার অংশ হিসেবেই আমি একটি পুস্তক সমালোচনা লিখি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমার তখন নারীবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা, উদারনৈতিক ও সমতাভিত্তিক সমাজব্যাবস্থা সম্পর্কে খুব বেশি একাডেমিক লেখাপড়া ছিল না। আমি সমালোচনায় বইটি সম্পর্কে এই কথাই বলতে চেয়েছিলাম যে, একজন ব্যক্তির সঙ্গে আরেকজন ব্যক্তির স্বেচ্ছা-সম্পর্কের দায় দুপক্ষের সমান এবং তা প্রকাশের আগে অন্যপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন পড়ে – ক বইটি পাঠে আমার তা মনে হয়নি। প্রায় কুড়ি বছর আগের লেখা এবং সেখানে আমি তসলিমা নাসরিনকে কোনো ভাবেই ব্যক্তিগত কোনো আক্রমণ করিনি। করতে পারি না কারণ আমি সবসময় একথাই বলে এসেছি যে, আজকে যে আমরা মেয়েরা অনায়াস-লেখা লিখতে পারছি তার মূলপথ আমাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন। অথচ গত কুড়ি বছর যাবত তসলিমা নাসরিন অন্ততঃ কুড়িবারেও বেশি এই প্রসঙ্গে আমাকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন তার প্রকাশিত বইতে, লেখায় এবং তার ও আমার জানাশোনা ব্যক্তিবর্গের কাছে।
২০০০ সালের পরে অসংখ্য লেখায় আমি তসলিমা নাসরিনের প্রশংসা করেছি এবং সে কারণে আমাকে সমালোচকরা নতুন তসলিমা নাসরিন আখ্যা দিয়ে আমার বিচার, অপমান এবং ফাঁসিও চেয়েছে। তসলিমা নাসরিন এসব কথা কখনও উল্লেখ করেননি, তিনি সব সময় গত কুড়ি বছর ধরে বহুবার, বহু জায়গায় আমার এই পুস্তক-সমালোচনার কথা উল্লেখ করে আমাকে চরম আঘাত করেছেন। আমি বিরত থেকেছি জনসমক্ষে কিছু বলা থেকে কিন্তু তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে আমি বহুবার একথা বলেছি যে, তার বইয়ের সমালোচনায় আমি যা বলেছি সেটা একেবারেই তার বইয়ে সন্নিবেশিত তথ্যের সমালোচনা, তার ব্যক্তি-সমালোচনা নয়। আমি একথা ২০০৩ সালেই প্রকাশ্যেও লিখেছি, এমনকি যখন তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তখন আমি প্রতিবাদ করেছি, লেখকের বিরুদ্ধে মামলা বা বই নিষিদ্ধের দাবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি। আমার সেসব প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সব ভেসে গেছে, থেকে গেছে কেবল সমালোচনাটুকু।এমনকি এই সেদিনও বাংলা একাডেমীতে আয়োজিত লিট ফেস্ট ২০১৭ তে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছি যে, তিনি আমাদের পুরোধা লেখক যিনি পথ দেখিয়েছেন, অনেক শব্দকে ছাপার অক্ষরে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, তিনি মুক্ত করে দিয়েছেন।
তসলিমা নাসরিনের প্রতি আমার কোনো ধরনের বিদ্বেষ, রাগ কখনোই ছিল না। বরং আমার দুঃসময়ে তিনি পাশে ছিলেন সেটা আমি ভুলিনি। তাই বলে তার প্রকাশিত বইয়ের সমালোচনা আমি করতে পারবো না সেটাতো হতে পারে না। হতে পারে তিনি মনে করেছেন যে, আমার সমালোচনাটি কুৎসিৎ ব্যক্তি আক্রমণ, কিন্তু আমি নিজে জানি যে, তখনও আমি সেটা করিনি আর এখনতো আরও করবো না। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি একটি লেখার জন্য আমাকে কবার শাস্তি দেবেন? এরতো কোথাও না কোথাও একটা শেষ হতে হবে, নয়? হয়তো এবারই সেই চরম শাস্তিটুকু তিনি আমায় দিলেন। আমি মাথা পেতে নিলাম।
তসলিমা নাসরিন তার মতামত দিয়েছেন আমার সম্পর্কে। আমি সে সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা দিতে পারি মাত্র, এর বেশি আর কীই বা করতে পারি? তবে এমন একটি সময়কে ২০ বছর আগে লেখা সমালোচনার (যার জন্য বহুবার তিনি প্রকাশ্যে আমায় গাল দিয়েছেন) জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন যখন আমি কেবল আক্রান্তই নই, আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্নটিও তিনি আমলে আনেননি, আমার চেয়ে তার এই নিরাপত্তা-সংকটের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি বোঝার কথা ছিল। আজকে তার দেওয়া চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিয়ে যারা আমাকে তুলোধনুা করছেন তারাই প্রতিদিন তার মাথা চায়, নোংরা আক্রমনে জর্জরিত করে, কখনও বা তাকে দেশছাড়া করতে চায়। কিন্তু আজ আমার বিরুদ্ধে তারই দেওয়া ভীষণ চরিত্রহীন তকমার করাত দিয়ে আমাকে টুকরো টুকেরো করছে। জানি না, এতে কার লাভ কী হলো? কিন্তু কিছু একটা হলো নিশ্চয়ই।এরকম একটি চরম সংকটকালে যখন পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কবলে থেকে একদল মানুষ ন্যয়ের জন্য লড়ছে, তখন মইনুল হোসেনের দেওয়া তকমা ‘চরিত্রহীন’ কে একটি ভীষণ শব্দ জুড়ে দিয়ে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট-কে আরো শক্ত করেছেন তসলিমা নাসরিন – আমি এ জন্যও তার কাছে কৃতজ্ঞ। অগ্রজ লেখক হিসেবে হয়তো এটুকুই আমার প্রাপ্য তার কাছে।
পরিশেষে দু’জনের বক্তব্যের পর সন্দেহ থাকেনা তসলিমার দাবির সত্যতা নিয়ে; তার ক্ষোভের কারণ অাছে বটে। তবে মাসুদা ভাট্টি ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন তসলিমার কাছে ; হতাশা ও ব্যক্ত করেছেন।
তবে ঘন কালো মেঘের ছায়া ঢেকে অাছে গণমাধ্যমের অাকাশ! যে অাকাশে নারায়নগঞ্জের নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াত অাইভিকে একাত্তর টিভির লাইভ শো তে শামীম ওসমান চরম অশ্লীল গালাগাল করে যান উপস্থাপক শাকিল অাহমেদ এর নীরব উস্কানিতে। লাইভ টক শো তে অাইভির চরম অপমানে কেউ সেদিন এগিয়ে অাসে নি তো! গণমাধ্যমের এমন স্বেচ্ছাচারিতাতে প্রশ্ন ওঠে বৈকি, কখনো বোবা অার কখনো বিপ্লবী কেন হবে এ সমাজ  ?  তার মানে এই নয়, মাসুদা ভাট্টির অপমান নীরবে হজম করে যেতে হবে।
একটি সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিবাদে মুখর হতে হবে নারীর প্রতিটি অসম্মানে! প্রতিবাদী হতে হবে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ।
আমি মনে করি,  গনমাধ্যমে নারীর সম্মানজনক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে হলে চিহ্নিত করতে হবে প্রকৃত সংকট।অাজকের দিনে গণমাধ্যম ক্ষমতার রাজনীতি অার সিন্ডিকেটবাজদের কাছে জিম্মি! ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার হীন প্রতিযোগিতায় মত্ত সাংবাদিক নেতাদের অনেকে সচেতন ভাবে গণমাধ্যমের নারীদের মূলধারা থেকে সরিয়ে রেখেছেন। সমাজের অন্যদের প্রতি তাদের অবজ্ঞা এবং দায়িত্বহীনতা প্রকট;যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! এর থেকে বেরিয়ে অাসার কোন পথ তারা খুঁজে পান না,পেতে ও চান না হয়তো!
এ এক অমানিশার কাল অামরা অতিক্রম করছি, যে বাস্তবতা পেশাদারীত্বকে পায়ে দ’লে হীনতা অার নীচতার প্রতিযোগিতার নগ্ন লড়াইয়ে মগ্ন! জানিনা কবে কাটবে গনমাধ্যমের এ ক্রান্তিকাল!
গণমাধ্যমে নারীর অবস্থান এখনো শক্তিশালী নয়। নারী সাংবাদিকদের অনেকে এখনো নিউজরুমে নানারকম হেনস্থার শিকার হচ্ছে। কোন কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত হচ্ছে সৎ, মেধাবী নারী সাংবাদিকেরা। কেউ তাদের পাশে নেই। কেউ কখনো চাকরিচ্যুত নারী সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায় না।কর্মচ্যূত নারী সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা ও কেউ করেনি; করে না। মেধা ও শ্রমের অপচয় হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। এতো নেতা নেত্রীদের কেউ কখনো একবারের জন্যেও নারী সাংবাদিকদের কাজের মূল্যায়নের প্রশ্নে সোচ্চার নন।
নারীর পেশাদারীত্ব এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা না করলে নারীর প্রকৃত  মর্যাদা প্রতিষ্ঠা দুরূহ হয়ে যাবে। নারী সাংবাদিকের মেধা, নিরলস শ্রম, সততা এবং নিষ্ঠা এখনো এই পেশায় যথাযথভাবে  মূল্যায়িত হয়নি। নারীর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে  নিজেদের ইগো থেকে বেরিয়ে সকলে একাত্ম হয়ে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে অানা জরুরী।বাহিরে অন্তরে সৎ হতে হবে লক্ষ্য অর্জনে।
সাংবাদিকতার দর্শনের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকলে পরিণতি কাউকে ক্ষমা করবেনা।রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা থাকতে পারে সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা রক্ষায় একাত্মতা জরুরী, যা অাজ সোনার পাথরবাটিতে পরিণত হয়েছে।বাহ্যিক দর্শনের অাধুনিকতা চিন্তা চেতনার পশ্চাদপদতাকে লুকাতে পারে কি??

Wednesday, October 17, 2018

চরিত্র কি ধোয়া তুলসী পাতা?- সুমি খান

চরিত্র কি ধোয়া তুলসী পাতা? মাসুদা ভাট্টি বা কারো চরিত্র বিচারের ভার কি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে দিয়েছে কেউ?
১৬ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনের টক শো তে রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা চলছিলো। সেখানে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি যে প্রশ্ন করেছেন, তার সঠিক জবাব দিতেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, তার সৎ সাহস থাকলে । তিনি শিবিরের সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন এবং জামাতের প্রতিনিধি হিসেবে ঐক্যজোটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন -সেই বিষয়ে তিনি আলোচনা না করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন মাসুদা ভাট্টিকে।
মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করতে না পারলে , নিজের অসম্মান ডেকে আনা হয়।
নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পৌরুষে আঘাত লাগে যাদের, তারা ‘মানুষ’ হিসেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। লাইভ অনুষ্ঠানে একজন নারীকে ’চরিত্রহীন’ বলে নিজের হীনতা , দীনতা প্রমাণ করলেন ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন। তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার পুত্র তিনি- এমন বাবা মায়ের সন্তান হয়ে তিনি জীবনভর নারীবিদ্বেষ ই করে গেলেন? এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এবং আশা করছি দেশ জুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, এবার অন্তত এ ধরণের অন্যায় অপরাধের উপযুক্ত বিচার পাওয়া যাবে।

Saturday, September 15, 2018

মাতৃত্বের প্রতি অাহ্বান- সুমি খান


কোথায় হারিয়ে যায়
সম্পর্কের সুতোগুলো পলে পলে
কখনো হয়নি বলা
 নিজেদের অানন্দ বেদনার গল্প
যখনি বলতে গেছি,
হয় নি সময় তোমাদের!
 জটিলতার জালে জড়িয়ে গেছে
সংকটের জাল
শূণ্যতায় ভরে দেয় চারদিক
মা - বাবা, ভাই বোনের
 নির্মল অানন্দে পূর্ণ করে তোলা
 নিজেদের কথাগুলো
ভুলে গেছি বলতে
সেই কবে থেকে -
অনেক দিন!
অভিমানের পলেস্তারা জমতে জমতে
 প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসে
পরিবার, সন্তান অাগলে রাখতে
শুধু কি তবে নিঃস্ব করেছি নিজেকে?
তাই বুঝি অামি ব্রাত্য !

কালের যাত্রায় তবু প্রার্থনা নিরন্তর-
তোমাদের পূর্ণতা পূর্ণ থেকে পূর্ণতর হোক-
সময়ের অাহ্বান নিয়ে যাক
যতো দূর থেকে দূরে
হৃদয়ের অাহ্বান
 ঢাকেনি কোন কালো!
শুধু জানি কোন এক ভোরে
নিঃসীম অাকাশের পার হতে
ভেসে অাসা অালো
তোমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল ছুঁয়ে
 না বলা বাণীর কথকতা
ভেঙ্গে দেবে একদিন যতো নীরবতা!
08.58 am
160918