Sunday, October 22, 2017

আদমজীর পাগলা আবদুল হক - তুষার কান্তি বসাক

১৯৬৮ সাল। ৬দফা সমর্থনে দেশব্যাপী চলছে প্রচার অভিযান।


 আদমজী জুট মিলস ছিল তখন ৬ দফার শক্ত ঘাটি। কুটির হাট অঞ্চলের অনেকে তখন আদমজী জুট মিলে চাকুরি করতেন তাদের মধ্যে গোপাল গাঁও গ্রামের আবদুল হক (পাগলা আবদুল হক) ও আমীন উল্ল্যাহ অন্যতম। একদিন ছুটিতে এরা দু'বন্ধু দেশে আসেন। কুটির হাট বাজারের ঈদগাওয়ের এককোনে বসে গল্প করছেন। সেই সময় ঈদগাওতে ভাসানি ন্যাপের সভা চলছে নেতৃত্ব রফিকুল ইসলাম ভূঞা ইন্তু মিয়া। সেই সভাতে হামলা করে তখনকার সরকার সমর্থক গোষ্ঠী। আবদুল হক ও আমান উল্ল্যা দেখলেন আদমজীতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে শক্ত অবস্থান আছে কিন্তু নিজ এলাকায় সমর্থক থাকলেও কোন সাংগঠনিক কাটামো নেই। তাই তারা দু'জন নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কাটামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে একদিন শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন এবং নিজ এলাকায় একজন নেতাকে আমন্ত্রন জানান। বঙ্গবন্ধু তখন বলেন থানা কমিটি ও জেলা কমিটির অনুমোদন নিয়ে আসতে। তখন থানা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ইছহাক মিয়া ও জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন আবদুল মালেক উকিল। তাঁরা থানা কমিটির এছহাক মিয়া অনুমতি নিয়ে জেলা কমিটির অনুমতি আনতে গেলে আব্দুল মালেক উকিল নিজে উনাদেরকে শেখ মুজিবের কাছে নিয়ে যান। পরে সিদ্ধান্ত হয় তখনকার আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক তাজ উদ্দীন আহম্মদ আসবেন বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ দফার পক্ষে জনসভা করতে। কিন্তু ইস্কুলের তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবিএম তালেব আলী তিনি ইস্কুল মাঠে অনুমতি দিতে নারাজ। এর পর মাস্টার নূর আহম্মদকে সভাপতি কাজী আব্দুল কাদেরকে সাধারন সম্পাদক ও মাস্টার মাহবুবল হক, মুলকতের রহমান, জহির উদ্দীন ভূঞা, হাফেজ আহম্মদ ভূঞা সহ অনেককে সদস্য করে ১ নং চরমজলিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এবিএম তালেব আলীর অনুমতি না পেয়ে  সভাপতির দায়িত্বে থাকা নুর আহম্মদ মাস্টার নোয়াখালী গিয়ে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে বিষ্ণুপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ৬দফার সমর্থনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তাজ উদ্দীন আহম্মদের উপস্থিতিতে সভা করতে সমর্থ হয় এভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী কমিটি গঠিত হয়। ঠিক ঐ সময়ে বড়হালিয়া গ্রামের সোলতান আহম্মদকে সভাপতি ও আবদুছ সালাম বিএসসিকে সাধারন সম্পাদক করে ২নং বগাদানা ইউনিয়ন কমিটিও গঠিত হয়।

পরবর্তীতে ৭০ এর নির্বাচনে আবদুল হক ও আমান উল্ল্যার নেতৃত্বে একদল আদমজীর শ্রমিক বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবী জানান এবিএম তালেব আলীকে নোমিনেশন দিতে। সেই নির্বাচনে এছহাক মিয়া ও বালিগাঁও ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহনেওয়াজও প্রার্থীর জন্য নোমিনেশন চেয়েছিল। কিন্তু এবিএম তালেব আলী ভাসানী ন্যাপ থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। এবং ফেনী ৩ নং আসনটি ৮৬ সাল পর্যন্ত  আওয়ামী লীগের দখলে ছিলেন।

ছবিতে: আবদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা (প্রয়াত), আমান উল্ল্যা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, বর্তমানে কুটির হাট বাজারে ফুটপাতে ব্যাবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

No comments:

Post a Comment