Wednesday, June 7, 2017

আমি রবিধার্মিক.- বাসুদেব ঘোষ

রবীন্দ্রনাথ
সদ্য জমিদার রবীন্দ্রনাথ। ১৮৯১ সাল। পুণ্যাহ উৎসব। জমিদার এসেছেন উৎসবে। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে।
প্রথামতো হিন্দুমতে পুজো। তার পর প্রজারা করদান করবেন। দ্বারকানাথের আমল থেকে এই উৎসবে ধর্ম-জাতি-বর্ণ অনুসারে থাকতো আলাদা ব্যবস্থা। জমিদারবাবুর জন্য ভেলভেটমোড়া সিংহাসন। গোমস্তা-নায়েবদের জন্য পৃথক উচ্চাসন। হিন্দু প্রজারা চাদরঢাকা সতরঞ্চির এক ধারে। তার মধ্যে ব্রাহ্মণের স্থান আলাদা।...... চাদর ছাড়া সতরঞ্চিতে মুসলমান প্রজারা।
রবীন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন এই ব্যবস্থার কারণ। অভাবিত প্রশ্নে বিস্মিত নায়েব বলেন, বরাবর এই নিয়ম চলে আসছে। রবীন্দ্রনাথ বললেন, শুভ অনুষ্ঠানে এ প্রথা চলবে না। সবাই এক আসনে বসবো। নায়েব-গোমস্তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। ক্রুদ্ধ রবীন্দ্রনাথ বললেন, প্রাচীন প্রথা আমি বুঝি না। সবার একাসন করতে হবে। জমিদার হিসাবে এই আমার প্রথম হুকুম।
নায়েব আর সব হিন্দু আমলারা একযোগে পদত্যাগের হুমকি দেন। রবীন্দ্রনাথ অবিচলিত। তিনি প্রজাদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই মিলন উৎসবে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এসো আমরা সবাই একসাথে বসি।
সব প্রজা একসাথে একাসনে বসে পড়লেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে। মধ্যমণি রবীন্দ্রনাথ। সেখানেই একসাথে। সবার মাঝে সবার সাথে বসে। উৎসব শুরু হলো। দলে দলে আরো মানুষ এসে যোগ দিলেন উৎসবে। সেদিন থেকে ঠাকুর এস্টেটের পুণ্যাহ উৎসবে শ্রেণীভেদ প্রথা উঠে গেলো।
এর থেকে বড় বিপ্লব সেই যুগে আর ক'জন করতে পেরেছেন!!!!!.....
রবীন্দ্রনাথ কিন্ত জেনে গেলেন সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা। সংকল্পবদ্ধ হলেন তিনি। সেদিনই ঘোষণা করলেন, " সাহাদের হাত থেকে শেখদের বাঁচাতে হবে। এটাই আমার সর্বপ্রধান কাজ।"
আমি এই রবীন্দ্রনাথে নিবেদিত। আমি রবিধার্মিক.

No comments:

Post a Comment