Wednesday, May 31, 2017

বিন্দুবাসিনীর দিনলিপি-০০১

বিন্দুবাসিনী স্বপ্ন দ্যাখে , তার পুত্র যে কিনা সেই ছোট্ট সময়ে মা'কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ আঁকতো, আর  শান্তিনিকেতন থেকে রবিঠাকুরের বই আনবার ফরমায়েস দিতো-শিশুটি আজ অনেক বড়ো-কিন্তু হারিয়ে গেছে তার সেই মন।  সেই হারিয়ে যাওয়া অতুলনীয়  সন্তানটিকে আগের অকৃত্রিম রূপে ফিরিয়ে নিতে প্রানান্ত চেষ্টা বিন্দুবাসিনীর।
কী করে হবে ?
এই চেষ্টা করতে গিয়ে বাড়ির লোকেরা যে পরিহাস করে চলেছে নিত্য!
মৃত্যুর ডাক পায়ে পায়ে ঘুরছে বিন্দুর।
যদি কখনো পুত্রটি আবার তার নিপুণ হাতে রবি-নজরুল- সুকান্তের ছবি আঁকে-আবার তার সুললিত কন্ঠে উচ্চারিত হয়- আলো আমার আলো ওগো আলো ভূবন ভরা-আলো নয়ন ধোওয়া-ওগো আলো হৃদয় হরা-
 বিন্দুর মনে উদ্বেগ- পুত্রদের ভবিষ্যৎ চিন্তা-গড়ে নেবে নিজেদের-তবে শেকড়ের টান থাকবে তো?

ভাইদের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকবার ন্যূনতম ইচ্ছে বিন্দুর নেই -
পারিবারিক চিকিৎসক বলে, যাও, হাওয়া বদল করে এসো-ভাইদের দেখে এসো সময় করে।
বিন্দু কী করে বলবে- এ যে সম্ভব নয়। দুনিয়া ঘুরে এলেও ভাইদের সংসারে যাওয়া যে তাদের বিপদে ফেলে দেয়া। না পারবে ফেলতে- না পারবে রাখতে... প্রসঙ্গটি শেষ করবার জন্যে মৃদু হেসে বলে- , হ্যাঁ, তা যাবো বৈকি!
একের পর এক কী সব জটিল রোগের উপসর্গ পাওয়া যায় বিন্দুর শরীরে -যেসব জিনিস পত্র কিনতে হবে  , ডাক্তার বললে, ওরা বাইরে আছে, বললে ওরা এনে দেবে। এখানে অনেক দাম।
বিন্দু হেসে বলে, কেন, ভারতের তৈরি  জিনিস ও তো পায় বললো ডাক্তার.. তা পায়, কিন্তু যেটা ভালো বেশি সেটা ব্যবহার করো-তোমাদের ফ্যাক্টরি আছে....ডাক্তার দাদার ও বলিহারি বটে! কেন , কার খরচে ডাক্তারি জিনিস পত্র  কেনাকাটা করার কথা বলছেন?
পরিবারের বোঝা বিন্দু।
তাও ফুটফরমায়েসের কাজ করে এতে হয়-
এখন আবার বিন্দুর জন্যে  কেন , কতো দাম দিবে পরিবারের লোকেরা? কতো টা?

এক জীবনে হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলে বিশাল এক বোঝায় পরিণত করেছে নিজেকে। যার ছোট ছোট অনুভূতি গুলো ও বিকোচ্ছে অনেক জলের দামে।
দুই সন্তান ভাইপো ভাইঝিদের সমান ভাবে বিন্দুর প্রাপ্য সামান্য যা কিছু আছে বাগ করে দিতো যদি কেউ। কাকে বলবে? এমন ই করুণ এ পৃথিবীতে বিন্দু এতোটাই অবাঞ্ছিত যে, একটা মনিষ্যি কোথাও নেই, যার কাছে লিখিত সব দিয়ে যেতে পারে- বিন্দুর মৃত্যুর পর সবাইকে বরে জিনিস পত্র ভাগ করে দিতো। ... মৃদু কন্ঠে গেয়ে ওঠে বিন্দু- " হেথা যে গান গাইতে আসা,  আমার হয় নি সে গান গাওয়া....."
বিন্দু নিস্তেজ হতে থাকে দিনে দিনে-


জীবনের প্রতি পদে যদি পরিবারের ভাইবোনের খরচ করাতে হয়-কেউ এমনি ই কথা বলতে চায় না-পরবর্তীতে একেবারে না আবার ত্যাজ্য করে দেয়- যা চক্ষু লজ্জায় বলতে ও পারছে না, করতে ও পারছে না।...
সুধাময়ী কাল থেকে খুব অসুস্থ। তার পাশে কেউ নেই ,  ওই একজন ছাড়া। তাকে বিন্দু কী করে  নিজের জন্যে  বেঁধে রাখে? এ বড়ো অন্যায়।
বিন্দুর দ্রুত অপসারণ জরুরী যে যে কারণে-এটা তার মধ্যে অন্যতম।
সুধাময়ীর আর একলা হতে হবে না।
৩১ মে ২০১৭, বসুন্ধরা আবাসিক

No comments:

Post a Comment