Monday, March 2, 2015

অভিজিৎ হত্যা : বাংলাদেশ কোন পথে ?- শাহরিয়ার কবির

'মুক্তমনা' ওয়েবসাইটের পরিচালক, যুক্তিবাদী লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড সমাজের বিবেকসম্পন্ন মানুষদের অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও স্তম্ভিত করেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) রাত সাড়ে ৯টায় বইমেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশের রাস্তায় মৌলবাদী ঘাতকরা তাকে ধারালো ছুরি ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন অভিজিতের সহধর্মিণী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ১১ বছর আগে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে প্রায় একই সময়ে একই স্থানে একইভাবে ছুরি-চাপাতি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা। আমার 'জিহাদের প্রতিকৃতি' প্রামাণ্যচিত্রে সাবেক হুজিকর্মী তার জবানবন্দিতে বলেছে, হুমায়ুন আজাদের হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে কিভাবে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা উল্লসিত হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। হুমায়ুন আজাদের ওপর হুজির বর্বরোচিত হামলার তিন সপ্তাহ আগে জামায়াতের তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, তার মতো মুরতাদকে হত্যার জন্য ব্লাসফেমি আইন পাস করতে হবে। হামলার পর হুমায়ুন আজাদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এর জন্য জামায়াতের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মতিউর রহমান নিজামী দায়ী। হুমায়ুন আজাদের 'অপরাধ' ছিল তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ওপর 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। মুক্তচিন্তার পক্ষে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন এই বরেণ্য লেখক। শুধু লেখক নন, তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাষাবিজ্ঞানী। তাঁর গদ্য ও পদ্য বাংলা সাহিত্যকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছে। হুমায়ুন আজাদ বেঁচেছিলেন মাত্র ছাপ্পান্ন বছর। তাঁর একটি অসামান্য উপন্যাসের নাম 'ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল'। হুমায়ুন আজাদের প্রথাবিরোধী, যুক্তিবাদী সাহিত্যের যোগ্য উত্তরাধিকারী অভিজিৎ রায়কে ছাপ্পান্ন বছরও বাঁচতে দেয়নি মৌলবাদী ঘাতকরা। মাত্র বিয়াল্লিশ বছরে অভিজিৎ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক অজয় রায় আমাদের 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র অন্যতম উপদেষ্টা। তিনি 'মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন'-এর অন্যতম সভাপতি। 'হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস' এবং 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ'-এরও সভাপতি তিনি। পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত। কয়েক বছর তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল মর্গের অফিসে অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে অজয়দা বলছিলেন, 'আমার এই ছেলেটি সব দিক দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।' ২০০৭ সালে আমরা অভিজিতের 'মুক্তমনা' ওয়েবসাইটকে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য 'জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক' প্রদান করেছিলাম। জামায়াতে ইসলামী তালিকা প্রস্তুত করে শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের হত্যাযজ্ঞ আরম্ভ করেছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। বাঙালিকে মেধাশূন্য করার জন্য ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড আরো পরিকল্পিত ও ব্যাপকভাবে সংঘটিত করার জন্য জামায়াত তখন 'আলবদর' নামে ভয়ংকর ঘাতক বাহিনী গঠন করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হিটলারের 'এসএস' বাহিনীর আদলে।
 
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার বদৌলতে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে জামায়াত হিন্দু নিধনের পাশাপাশি মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের হত্যার জন্য শতাধিক জঙ্গি মৌলবাদী সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। তাদেরই একটি 'আনসার বাংলা সেভেন' অভিজিৎ হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এর আগে ১৯৯৯-এর ১৮ জানুয়ারি জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার জন্য তাঁর বাড়িতে গিয়ে হামলা করেছিল। পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধের কারণে সেবার কবি অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। তখন ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। শামসুর রাহমানের হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য প্রথমে তিনজন হুজি ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা বিভাগ মোট আটচল্লিশজনকে গ্রেপ্তার করেছিল, যাদের ভেতর একজন ছিল পাকিস্তানি সাজিদ এবং আরেকজন দক্ষিণ এশিয়ার সাদিক। এরা বলেছিল, আফগানিস্তানে জিহাদের উদ্দেশ্যে মুজাহিদীন রিক্রুট করার জন্য ওসামা বিন লাদেন তাদের ২০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল, যা তারা ৪২১টি মাদ্রাসায় বিতরণ করেছে। বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদীদের নেটওয়ার্ক, বিশেষভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তখনই প্রথমবারের মতো জেনেছিলাম আমরা, যা ২০০১ সালের অক্টোবরে জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরো বিস্তৃত হয়েছে। শামসুর রাহমানের ওপর হামলার জন্য যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, জামায়াত-বিএনপির জোটের জমানায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে- যারা পরে হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড-বোমা হামলার পাশাপাশি অর্থনীতিবিদ কিবরিয়া, অধ্যাপক ইউনূস ও সাংবাদিক মানিক সাহা সহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী হত্যা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি এবং হয়নি বলেই এখনো মুক্তচিন্তার লেখক ও ব্লগারদের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। প্রগতিবাদী শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের কেন হত্যা করতে হবে, কিভাবে হত্যা করতে হবে- এসব বিষয়ে জামায়াত এবং তাদের সহযোগীদের বহু প্রকাশনা রয়েছে। তাদের একাধিক তালিকায় 'মুক্তমনা' অধ্যাপক অজয় রায় ও অভিজিৎ রায়ের নাম আছে। পাঁচ বছর আগে অধ্যাপক অজয় রায় 'জিহাদের প্রতিকৃতি' প্রামাণ্যচিত্রে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানানোর উদ্দেশ্যেই জামায়াত-বিএনপির জোট সাম্প্রদায়িক সহিংসতাসহ যাবতীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। অভিজিতের হত্যাকাণ্ডের জন্য অধ্যাপক অজয় রায় জামায়াতকেই দায়ী করেছেন। দুই বছর আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসীরা ব্লগার রাজীবকে হত্যা করেছে। ঘাতকরা তাদের ব্লগে এবং জামায়াত-হেফাজতের নেতারা জনসভায় বক্তৃতায় বলেছেন, ধর্মদ্রোহিতার জন্য রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে। দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নিহত রাজীবের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে গিয়ে বলেছিলেন, জামায়াত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।
 
অভিজিৎ হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী তো নয়ই, তার মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যও অভিজিতের মাতা-পিতাকে সমবেদনা কিংবা সহমর্মিতা জ্ঞাপন করতে যাননি।
 
 ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত আমি অজয়দার সঙ্গে ছিলাম। বাংলাদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই এসেছিলেন বিধ্বস্ত অজয়দা ও শয্যাশায়ী বউদিকে সমবেদনা জানানোর জন্য। সরকারের বা রাজনৈতিক দলের কোনো নেতাকে দেখিনি।
 
 বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মৌলবাদের আশঙ্কাজনক উত্থান ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির পায়ের তলার মাটি ক্রমেই দখল করে নিচ্ছে। যেসব দল ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে, নেতাদের অনেকের মস্তিষ্কের নিভৃত কোণে মৌলবাদের অন্ধকার অবস্থান করছে।
 
অভিজিৎ নিহত হওয়ার আড়াই ঘণ্টা আগে অজয়দা আমাকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁদের 'মুক্তমনা' ব্লগটি সরকার বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে, এ বিষয়ে কিছু করতে পারি কি না। আমি বিস্মিত হয়ে বলেছিলাম, এটা কখনো সরকারের নীতি হতে পারে না। এই সরকার কেন 'মুক্তমনা'র মতো জামায়াত-জঙ্গিবাদবিরোধী ব্লগ বন্ধ করবে! অজয়দা বললেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন কে এ কাজ করেছে। তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, এ নিয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। এর পরই আমি টেলিভিশনের একটি আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য বেরিয়ে যাই। আলোচনার মাঝপথে উপস্থাপক জানালেন যুক্তিবাদী লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার সংবাদ।
 
ফিরে এসে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে ফোন করে লাইন বন্ধ পেয়েছি। সম্ভবত তিনি দেশে নেই। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ অবশ্য অভিজিৎ হত্যার নিন্দা করেছেন এবং এর জন্য জামায়াত-বিএনপিকে দায়ী করেছেন।
 
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অভিজিতের হত্যাকারীরাও ধরা পড়বে না, মামলা মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে জেলা আদালতের কোনো অন্ধকার কোণে। ঘাতকরা ছুরিতে শাণ দেবে তালিকার পরবর্তী জনকে হত্যার জন্য। জঙ্গিদের বিভিন্ন আস্তানা থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ যতগুলো হিটলিস্ট উদ্ধার করেছে, প্রতিটি তালিকায় প্রথম নাম শেখ হাসিনার। '
 
জিহাদের প্রতিকৃতি' প্রামাণ্যচিত্রে হুজি নেতা মুফতি হান্নান বলেছেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় হামলা পরিকল্পনায় জামায়াত-বিএনপির শীর্ষ নেতারা কেন ও কিভাবে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ ভারতীয় গণমাধ্যম ও গোয়েন্দা সূত্র থেকে জেনেছি, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিস্তার এবং কিভাবে আত্মঘাতী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। কলকাতায় সংবাদপত্র থেকে এটাও জেনেছি, দীর্ঘকাল ধরে জামায়াত ও জঙ্গিরা বাংলাদেশে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কোথাও গিয়ে গা ঢাকা দেয়। অনেক সময় পশ্চিমবঙ্গে তারা সরকারি দলের সহযোগিতাও পায়।
 
হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলাকারীরা যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেত, তাহলে রাজীব অথবা অভিজিৎ হত্যার আগে ঘাতকরা দশবার চিন্তা করত। এসব হত্যার বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীরা শুধু নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিরাপদ নন।
 
মৃত্যুর এক বছর আগে হুমায়ুন আজাদ একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, যার শিরোনাম 'আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম ?' সরকার পতনের জন্য গত ছাপ্পান্ন দিন যাবৎ অবরোধ-হরতালের নামে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা বাস ও অন্যান্য পরিবহনে পেট্রলবোমা মেরে যেভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, হুমায়ুন আজাদের গ্রন্থের শিরোনাম ধার করে প্রশ্ন করতে পারি- আমরা কি এই বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? এই বাংলাদেশের জন্যই কি ৩০ লাখ নিরীহ মানুষ আত্মদান করেছে? জামায়াত এবং তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশকে কোথায় নিতে চায় আমরা জানি।
 
 '৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হলে, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করতে হলে, বাংলাদেশকে মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে হলে, আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের ঘাঁটি স্থাপন করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জিহাদি বলয়ের অংশ করতে হলে চলমান সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বিকল্প কিছু নেই। ঝাড়েবংশে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত জামায়াত তাদের এজেন্ডা থেকে একচুলও নড়বে না। সরকার বারবার কঠোর হওয়ার হুমকি দিলেও এবং মাঠপর্যায়ের খুচরা জঙ্গিদের অনেকে গ্রেপ্তার হলেও যাবতীয় সন্ত্রাসের মূল হোতা এবং দার্শনিক ভিত্তি নির্মাতা জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। জামায়াত এবং তাদের নতুন ও পুরনো সহযোগীরা বাংলাদেশকে যেখানে নিতে চায়, প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থানকারী জামায়াত ও জঙ্গি সুহৃদরা একই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে।
 
ঘাতকরা অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী বন্যাকে যেখানে ছুরিকাঘাত করে, তার অল্প দূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য- পুলিশ ঘাতকদের ধাওয়া করলেই ধরতে পারত; কিন্তু তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
 
গত জানুয়ারিতে প্যারিসে কার্টুন পত্রিকা 'শার্লি এবদো'র দপ্তরে আল-কায়েদার জঙ্গি হামলার পর কয়েক হাজার ফরাসি পুলিশ কিভাবে ঘাতকদের অনুসরণ করে তাদের কুকুরের মতো গুলি করে হত্যা করেছে, আমরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি। প্রশাসনের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরও যদি রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত অবস্থান করে, সে দেশে জঙ্গি দমন সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় 'বন্ধ্যাগমনের মতো নিষ্ফল' হতে বাধ্য। ২০১৩-১৪ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় সংবাদ বেরিয়েছে, বহু জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল, কোথাও তারা হামলাকারীদের সহযোগিতাও করেছে। তিন বছর ধরে ক্রমাগত বলছি, প্রশাসন জামায়াতমুক্তকরণের পাশাপাশি আমাদের পুলিশ বাহিনীর জনবল ও রসদ বৃদ্ধি করতে হবে, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করতে হবে।

No comments:

Post a Comment