Wednesday, November 19, 2014

নারীর ক্ষমতায়নে এগিয়েছে বাংলাদেশ:জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে





বিশ্বের তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়লেও  জবাবদিহিতার অভাবে প্রত্যাশিত সংসদীয় গণতন্ত্রের চিত্র বারবার বিঘিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৭ জন নারী ৬০ আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯ জন নারী সাধারণ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী সহ ৪ জন  নারী পূর্ণ মন্ত্রী ও ২ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।  কিন্তু ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ২৭ জন নারী সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে  নির্বাচিত হয়েছেন ১০ জন নারী এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছেন আরও ৮ জন।বর্তমান মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রী সহ ২জন নারী মন্ত্রী ও ২ জন নারী প্রতিমন্ত্রী আছেন।এই বাস্তবতা বলে দেয়,নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর  দেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের যে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল সেটি সেভাবে ধরে রাখা যায়নি।
তবে বর্তমান সংসদে একজন নারীকে স্পীকার হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।তিনি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশন (সিপিএ) এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কৃতিত্বের সাথে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
এদেশে নারী আন্দোলনের সাফল্যের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন  জাতীয় সংসদে নারীর সক্রিয়, কার্যকর অংশগ্রহণকে ধরে রাখতে হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সুষ্ঠু কাঠামো প্রয়োজন, যাতে নারীর ক্ষমতায়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকে ও ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে বারে বারে বলেছে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াটিকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত, দলীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল  না রেখে যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনী বিধিবিধানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
এক্ষেত্রে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত এক-তৃতীয়াংশ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধানসহ মন্ত্রী পরিষদ ও অন্যান্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কমপক্ষে এক- তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিধান রাখতে হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়েশা খানম।  

তিনি বলেন,রাজনৈতিক দলগুলোর আচার আচরণে চরম অসহিষ্ণুতার প্রকাশ পাচ্ছে যাতে সমগ্র দেশবাসীর  সাথে নারী সমাজও উদ্বিগ্ন।তার মতে,চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরণ ঘটিয়ে  দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সকল রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ভিন্ন মতের প্রতি সহনশীল ও সহিষ্ণু হতে হবে। গণতন্ত্রের বাস্তব চর্চা করতে হবে।পাশাপাশি সংসদ সহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরো স্বাধীন, সৃজনশীল ভূমিকা পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, বিচার বিভাগ, দূর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আয়েশা খানম বলেন,গণতন্ত্র ও সুশাসনের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে স্থানীয় সরকার। কিন্তু  স্থানীয় সরকারের স্বাধীন ভূমিকা পালনে রাষ্ট্রীয় যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেখানেও যথেষ্ট সংকট বিদ্যামান।

মহিলা পরিষদের এক গবেষণায় প্রকাশ,সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না।এই উপমহাদেশ সহ বিশ্বের সকল দেশের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সহযোগিতা দিতে বাধ্য থাকে প্রশাসন।
নারী নেত্রীরা বলেন,সেক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারে উপর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে, যেখানে স্থানীয় সরকারের নারী জনপ্রতিনিধিরা স্বাধীন ও স্ব-উদ্যোগে কাজ করবেন।

মহিলা পরিষদের গবেষণায় উঠে এসেছে, স্থানীয় সরকারের নারী জনপ্রতিনিধিরা মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। এমনই একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নূরজাহান বেগম।এ বছরের জানুয়ারি মাসে  রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বর্বরতার শিকার হয়েছেন নূরজাহান বেগম। একইভাবে কুষ্টিয়ার গোপগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মাসউদ আহসান শিবলী ও তার সহযোগীরা সেই এলাকার নারী ইউপি সদস্য লাইলী খাতুনকে ঘরে আটকে রেখে প্রহার করে প্রচন্ড আহত করে।মাদারীপুর রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার সরস্বতী বাড়ৈকে সেই এলাকার চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে।
এ প্রসঙ্গে নারী সংগঠক এবং গবেষক খুশি কবীর জনকন্ঠকে বলেন,এমন অনেক বাস্তব দৃষ্টান্তকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ নেই।শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে এসেও এখনো তৃণমূল থেকে রাজধানীর কেন্দ্র পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত নয় নারীকে তার মেধা এবং যোগ্যতার মাপকাঠিতে যোগ্য মর্যাদা দিতে।নারীর মেধা এবং শ্রমের মূল্যায়ন সমাজকে এগিয়ে নেয় অনেক দূর এ সত্য অনুধাবনে এখনো প্রস্তুত হয়নি আমাদের সমাজ। খুশি কবীর বলেন, অনেক যোেগ্যতা সম্পন্ন নারীকে এখনো পিছিয়ে রাখা হয়, যাতে নারী কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্বে না থাকে।

প্রায় সব দেশেই জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাই রাজনীতিতে নারীর সমঅংশীদারির বিষয়টি একই সঙ্গে ন্যায্যতা ও গণতন্ত্রের মৌল ভিত্তি হিসেবে সংযোজনের একমাত্র পন্থা হিসেবে সংসদে নারীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ বা রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে কোটাপদ্ধতির প্রচলন একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত। তবে উভয় ক্ষেত্রেই নারীকে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসতে হবে।
পৃথিবীর সব দেশে রাজনীতিতে নারীর সমঅংশীদারির ইস্যুটি গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির অংশ হলেও এযাবৎ রুয়ান্ডা ছাড়া কোনো দেশে এ নীতির বাস্তবায়ন হয়নি।যে কারণে বিশ্বগণতন্ত্রায়ণে নারীর প্রবেশ সাম্যতা,মর্যাদা ও প্রভাব কোথাও পুরুষের সমকক্ষ নয় এবং এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই ক্ষমতার প্ল্য্যাাটফর্মে এ সক্ষমতাই একবিংশ শতাব্দীতেও নারীকে ক্রমবর্ধমান হারে লিঙ্গবৈষম্যের শিকার করেছে।কোটাপদ্ধতির মাধ্যমেই এই সংকট থেকে উত্তরণের দিকে যেতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমান বিশ্বে মাত্র ২৩টি দেশে সংসদে ৩০ শতাংশ বা তার ঊর্ধ্বে নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এবং প্রতিটি দেশেই কোটাপদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি নারী-নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া পর্যন্ত কোটাব্যবস্থা ছাড়া কোনো দেশেই নারীর ন্যূনতম ৩০ শতাংশ আসনে নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা নেই।একমাত্র রুয়ান্ডার সংসদে নারীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।দীর্ঘকাল গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটি পার্লামেন্টে নারী সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর সুশাসনের কারণে পাঁচ বছরে মাথাপিছু গড় আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।ঐতিহাসিকভাবে পুরুষপ্রধান হবার কারণে রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় ভ’মিকা কার্যকর করতে বিভিন্ন দেশে যেসব কৌশল ও প্রক্রিয়া নেয়া হয়,তার মধ্যে রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রচর্চার প্রসার এবং আইন প্রণয়নের  মাধ্যমে দলীয় মনোনয়নে নারীর জন্য কোটা সংরক্ষণ সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।আশির দশকে দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু দেশও সংসদে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করে।কারণ, অনেক ক্ষেত্রে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো আইন রক্ষা করতে যে আসনে জেতার সম্ভাবনা নেই বা ‘নন-উইনেবল’ আসনে নারীকে মনোনয়ন দেয় এমন দৃষ্টান্ত ও রয়েছে।কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমেই নারীকে সংসদে আসতে হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধান-পরবর্তী ১০ বছরের জন্য সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে পরবর্তী ১৫ বছরের জন্য সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩০-এ উন্নীত করা হয়। ১৯৯০ সালে সংবিধান সংশোধন (দশম সংশোধন) করে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৩০টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান রাখা হয়। ওই সময় পার হয়ে যাওয়ার কারণে ২০০০ সালে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিলুপ্তি ঘটে এবং সে সময় যারা সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ হিসেবে যারা বহাল ছিলেন, তাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। নারী নেত্রীরা সে সময় এই দাবি উত্থাপন করেন যে, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন-ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে এবং ওই সব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সে সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়,যেহেতু সংসদে সংবিধান সংরক্ষণের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সংখাগরিষ্ঠতা নেই, সেহেতু নারী আসন সংরক্ষণের মেয়াদ বাড়াবার ক্ষমতাও তাদের নেই। ২০০০ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ২০০১ সালের অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সংসদের নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোনো আসন ছিল না।২০০৪ সালের মে মাসে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদের ৪৫টি নারী আসন আরো ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়।সেই বছরের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন নির্বাচনী বিল পাস হয়।একই সঙ্গে আগের ব্যবস্থা পাল্টে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রাপ্ত আসন অনুপাতে সংরক্ষিত মহিলা আসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়।ফলে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের জন্যই নারী আসন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতাসীন দলই সবগুলো আসন পেত।২০০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাষ্টপতির অনুমোদনক্রমে গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনটি কার্যকর হয়।এ আইন অনুযায়ী আইনটি কার্যকর হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। পরে ২১ ডিসেম্বর রাষ্টপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ৪৫ দিনের বদলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়।সেই অধ্যাদেশটি ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি 'সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচন সংশোধন আইন-২০০৫' নামের জাতীয় সংসদে পাস হয়।সংশোধিত সেই আইন অনুযায়ী ২০০৫ সালের ৭ মার্চের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল।কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রাখে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। পরে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হয়।সেই নির্বাচনে জাতীয় সংসদে প্রাপ্ত সাধারণ আসন অনুপাতে আওয়ামী লীগের নয়টি আসন পাওয়ার কথা থাকলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি।বর্তমান সরকার আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ এ উন্নীত করা হয়েছে।
স্বাধীনতার সাথে সাথে এদেশে নারীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  এদেশে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে একের পর এক আইন সংশোধন করে এগিয়ে নিচ্ছেন এই সমাজকে।কিন্তু সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী নারীরা তাদের দায়িত্বশীলতা কতোটা প্রমাণ করতে পেরেছে? এ প্রশ্নে এখনো সন্তোষজনক ভ’মিকা পালন করতে পারেন নি অধিকাংশ নারী জনপ্রতিনিধি।নারী সাংসদদের অনেকেই সংসদে অশালীন অরুচিকর এবং অসত্য বক্তব্য উপস্থাপন করে বিতর্কিত হয়েছেন।
সংসদে সংরক্ষিত আসনের কিছু নারী সাংসদের অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও অসত্য বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মহান সংসদের মর্যাদা-ক্ষুন্ন হয়েছে।এর ফলে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে দাবি তুলেছিলেন,সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্ত করা হোক।দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এজন্যে অনেকে তাদের রাজনৈতিক সহকর্মীদের হাততালিও পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের নারী সংগঠন গুলো দীর্ঘকাল ধরে দাবি করে আসছে সব রাজনৈতিক দলের জন্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীকে মনোনয়ন দেবার জন্যে। সেই আইন যতক্ষণ প্রণীত না হচ্ছে,নারীর জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসন হিসেবে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ আসন রাখতে হবে এবং সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমেই নারীকে সংসদে থাকতে হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও নারী নেত্রী সালমা খান।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নারী সাংসদরা কোন প্রশ্ন করেন না।নারী সাংসদদের কেউ কখনো সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন না বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের হার কতো? এই হার কমাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তারা প্রশ্ন করেন না ব্র্যাকের জরীপে গ্রামীণ নারীরা ন্যাযবিচারের অভাব ও লিঙ্গবৈষম্য তাঁদের জীবনের প্রধান অন্তরায় বলে উল্লেখ করেছে কেন? এ ব্যাপারে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা কখনো জানতে চান না।কোন নারী সাংসদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন নি কেন সন্ত্রাসীর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিশোরী তরুণীদের এসিড ছুড়ে মারা হয়, হত্যা করা হয়? কেন তাঁরা সংসদে বিল উত্থাপন করেন না বিদ্যমান শ্রম আইনের সংশোধন করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যেখানে ৭০ শতাংশ নারী কাজ করেন, সেখানে লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেবার জন্য। সে ক্ষেত্রে সংরক্ষিত আসনের মহিলা সাংসদদের দায়িত্বশীল ভ’মিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে কি তারা  অন্যায্য প্রাপ্তি লাভ করেছেন?তাই কি তারা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে উদাসীন?
অর্থনীতিবিদ ও নারী নেত্রী সালমা খান বলেন, নারীকে সরাসরি নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসা প্রয়োজন।আসনের নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ ও সহায়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই আসনে সরাসরি নির্বাচন ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক কালচারে তো দূরের কথা,বহু উন্নত দেশেও ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবারের হাতে গোনা দু-চারজন নারী ছাড়া মূলধারার জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী নারীর জন্য রাজনীতি হবে অপ্রবেশগম্য এবং সে ক্ষেত্রে আরও কয়েক শতাব্দী সম্পূর্ণ পুরুষশাসিত সমাজেই আমাদের বসবাস করতে হবে।
এ কারণেই  আইন করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাধ্য করা জরুরী মনে করছেন নারী নেত্রীরা।জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত এক-তৃতীয়াংশ নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধানসহ মন্ত্রী পরিষদ ও অন্যান্য নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কমপক্ষে এক- তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিধান রাখার ব্যাপারে নারী সংগঠন গুলো একমত হয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনারে এই দাবি তুলছেন।তবে তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে গেছে,এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নারীদের জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ### ১৯.১১.২০১৪

No comments:

Post a Comment