নশ্বর এ পৃথিবীতে কেউ চিরদিন থাকে না। আমিও থাকবো না। আমার বাবা ও নেই ।
কিন্তু ২০০৭ সালের ২৮ জুনের অন্ধকার ভোরের পর থেকে এক প্রগাঢ় শূন্যতার হাহাকার বুকের গহনে ফিরে ফিরে আসে বারবার। আমার পরিশ্রম আর কাজের দায়বদ্ধতা যার কাছে অসীম ভালোবাসা আর সম্মানের ছিল। আমার অনুসন্ধানী রিপোর্ট, টপটেররদের এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ ....আমার কাজ , মেধা, শ্রম আর সততার প্রতিটা স্বীকৃতি যিনি মাথার মুকুট হিসেবে পরে নিতেন নিজের সম্মান ভেবে-তিনি আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান!
মিষ্টি মধুর বন্ধুত্ব নয়, ঝগড়াও হতো অনেক।
তবু আমার বাবা আমার প্রাণের দোসর ছিলেন ।
সেই শৈশব থেকেই আমার খেলাধুলা, দুরন্তপনা , ফাঁকিবাজি , রাজপথে আন্দোলন , সংগ্রাম , রিপোর্টিং য়ের চ্যালেঞ্জ, বেপরোয়া স্বভাব-সবকিছুতেই বাবার যে কী অসীম প্রশ্রয় আর আত্মবিশ্বাস পেয়েছি! আজ প্রতি মুহুর্তে বাবার অভাব প্রতিটি রক্তক্ষরণে আমি শিরায় শিরায় টের পাই! স্নায়ুতে স্নায়ুতে বলে উঠি-তোমার এ অক্ষম সন্তান তোমার আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলো না বাবা! তুমি যে চলে গেলে!
আর যে কেউ নেই যে আমায় হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে আমার কাজকে মাথার মুকুট করে আমার কাজ এগিয়ে নেবে দূর বহুদূর !
এসো না আব্বু , আমায় একটু আশীর্বাদ করে যাও! তোমার হাতের ছোঁয়া আমার মাথায় টের পাচ্ছি আব্বু!
তোমার সাথে যারা দিনের পর দিন অন্যায় অত্যাচার করে গেছে, সেই ঘাতকদের বিচার কাজ চলছে। যদিও এই বিচার কাজ পদে পদে বাধা পাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি তোমার সহযোদ্ধাদের ঘাতক-তোমার অত্যাচারীদের বিচার হবেই ।
আমার কাজ যে এগিয়ে নিতে হবে আরো আরো অনেক দূর! দূর আকাশে তাকিয়ে আছি- সেই ধ্রুবতারাটার দিকে। তোমার হাতটা দাও না , আব্বু! চোখের জল যে বাধ মানে না! অনেক অনেক কথা আজ বেদনার ঢল হয়ে অবিরল অশ্রুধারায় ঝরে পড়ছে!
বাবা দিবসেই শুধু নয়-সবসময়, সবখানে তুমি আছো আমার সাথে।
আমাকে পিছুটান বলতেন এক আন্ডারগ্রাউন্ড বিপ্লবী সেলিম চাচ্চু। তার প্রকৃত নাম পূর্ণেন্দু কানুনগো। কেলিশহরের বিশাল জমিদার পরিবারের এই সন্তান তাঁর সমস্ত জমিদারী মুসলিম প্রজাদের উৎসর্গ করে শ্রেণীভেদ প্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন। কমিউনিষ্ট পার্টির কাজ করতে গিয়ে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত নিগৃহীত হয়েছেন। অনেক বছর আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেছেন। একাত্তরে আমাদের বাসায় যখন ছিলেন -বেরুবার সময়ে পিছু ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে নাকি বলতেন, আমিই তার পিছুটান। বড়ো হয়েও চাচ্চুকে দেখেছি -অসীম মেধা আর ব্যক্তিত্ব ছিল তাঁর । তাঁকে আদর্শ হিসেবেই প্রতিটি কাজে স্মরণ করেছি। নিজেকে সমাজের হিতের জন্যে পরের স্বার্থে বলি দিয়েছেন যাঁরা-এই প্রজন্মের কাছে তাঁদের অবদান তুলে ধরবার কোন কাজ কমিউনিষ্ট পার্টি করছে না। বড়ো দুর্ভাগ্যজনক!
আজ বাবা দিবসে আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান এবং আমার চাচ্চু পূর্ণেন্দু কানুনগো কে অনেক মিস্ করছি।তাঁদের দিকনির্দেশনা বড়ো প্রয়োজন ছিল আজকের দিনে।
এই দু'টি মানুষের মানবতা এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সমাজকে এগিয়ে নিয়েছে অনেক দূর! তাদের আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরী। এর ফলে আমরা নতুন প্রজন্মে নিশ্চয়ই আরো অনেক পূর্ণেন্দু কানুনগো অথবা সাইফুদ্দিন খান কে খুঁজে পাবো। এই সমাজ কে যারা এগিয়ে নেবে!!
লাল সালাম চাচ্চু, লাল সালাম আব্বু!
sumikhan29bdj@gmail.com
No comments:
Post a Comment