Wednesday, April 23, 2014

জামায়াতীদের সফল বিলাত অভিযান- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

ছোটবেলায় আমরা স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের ইতিহাস পড়েছি। অনুমান করছি, আর কিছুকাল পরেই ব্রিটেনের স্কুলে শিক্ষার্থীরা জামায়াতীদের সফল ব্রিটেন অভিযানের কাহিনী পড়তে পারবে। আলেকজান্ডার ভারতের বিশাল এলাকা দখল করেছিলেন বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জামায়াতীরা ব্রিটেন দখল করতে চলেছে কেবলমাত্র স্কুল-কলেজে অনুপ্রবেশ দ্বারা। বার্মিংহাম, ব্রাডফোর্ড, ম্যানচেস্টার শহরে ইতোমধ্যেই তারা বহু স্কুলকে কার্যত জামায়াতী মাদ্রাসায় পরিণত করেছে এবং লন্ডনের বাঙালীঅধ্যুষিত ইস্টএন্ডসহ অন্যান্য শহরেও তাদের অভিযান শুরু হয়েছে। এমনকি সরকারী অনুদানে পরিচালিত অসংখ্য স্টেট স্কুলও তারা দখল করে নিয়েছে।
লন্ডনের ইস্টএন্ডে মূলত বাঙালী, সোমালিয়ান-মুসলমান ইত্যাদি এমনকি কম্যুনিটি বাস করে। এই অঞ্চলটি গত দশ বছরে জামায়াতীদের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ এখন এই টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকাকে ঠাট্টা করে ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব টাওয়ার হ্যামলেটস’ আখ্যা দিয়েছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস বায়ার বর্তমান নির্বাচিত মেয়র এককালে ব্রিটিশ লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মেয়র পদের নির্বাচনে তিনি লেবার পার্টির মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান এবং জনরব তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদ এবং এই মসজিদকেন্দ্রিক শক্তিশালী জামায়াতী-সমর্থনে নির্বাচিত হন।
মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন। যে পূর্ব লন্ডন ছিল আশির ও নব্বইয়ের দশকে বর্ণবাদবিরোধী ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান ঘাঁটি, সেই টাওয়ার হ্যামলেটস এখন জঙ্গী জামায়াতীদের সব চাইতে শক্তিশালী আস্তানা। সেক্যুলার বাঙালীদের সংখ্যা এবং তাদের প্রভাব এই বারায় দ্রুত কমে গেছে এবং শহীদ আলতাফ আলী পার্কে স্থাপিত একুশের ভাষা শহীদ মিনার পর্যন্ত মাঝে মাঝে জামায়াতীরা দখল করে মিনারের অসম্মান ঘটাতেও কসুর করেনি। ইতোমধ্যে পবিত্র কাবা শরিফের ইমামও এসে বাঙালী মেয়রের সঙ্গে দেখা করে গেছেন। 
এটা বাঙালী, সোমালিয়ান প্রভৃতি মুসলমান ভোটাদের মধ্যে মেয়রের ইমেজ বাড়াতেও যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসে আবার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। বর্তমান মেয়র আবার প্রার্থী হয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ হলো, তিনি কাউন্সিলের আর্থিক অনুদান বরাদ্দ করার ব্যাপারে নানা ছদ্মনামে গজিয়ে ওঠা নানা মৌলবাদী সংগঠনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অধিকাংশকে কোন গুরুত্ব দেননি। এছাড়াও রয়েছে নানা আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ। ফলে এই অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা হয়েছে, অডিটর নিযুক্ত হয়েছে। মেয়র নির্বাচনের আগে বর্তমান মেয়রের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করা হয়েছে।
এই অবস্থাটাকেও বর্তমান মেয়র নিজের অনুকূলে টেনে নিয়েছেন। তাঁর প্রোপাগান্ডায় শিবির থেকে তাঁকে এখন একাধারে বাঙালীর স্বার্থরক্ষক ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষক হিসেবে খাড়া করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ব্রিটেনের হোয়াইট এস্টাবলিশমেন্ট টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালীর কর্তৃত্ব সহ্য করতে পারায় বাঙালী মেয়র যাতে আবার নির্বাচিত না হন, সেজন্য এই অপবাদ ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ টাওয়ার হ্যামলেটসের আসন্ন নির্বাচনে বাঙালী কার্ড, ইসলামের কার্ড এবং সাদাদের বিরোধিতা- এই তিনটা কার্ড তিনি একই সঙ্গে খেলছেন। অনেকে বলছেন, তিনি লন্ডনের বাংলা কাগজগুলোর অধিকাংশকে কব্জা করে ফেলেছেন। তারা এখন ফলাও করে তার কথাই লিখছে। কী কৌশলে তিনি এই কাগজগুলো কব্জা করেছেন, সে সম্পর্কে অনেকে ইঙ্গিতে কথা বলছেন। হয়ত সময়মতো মুখ খুলবেন।
এই ‘বাঙালী-স্বার্থ’ ও ‘মুসলমানের স্বার্থের’ রক্ষক হিসেবে বর্ণিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বাঙালী মেয়র সম্পর্কে লন্ডনের আওয়ামী লীগসহ সেক্যুলার রাজনীতিক মহলেও একটা মোহ তৈরি হয়েছে। এই মোহ সহজে ভাঙ্গা যাবে তা মনে হয় না। সেক্যুলারিস্ট বাঙালী মহলেই বর্তমান মেয়র সম্পর্কে এই মোহ থাকার ফলে লেবার পার্টির মেয়র প্রার্থী জন বিগস যদি অবাঙালী, অমুসলমান এবং সাদা- এই কারণে হেরে যান, তাহলে আমি বিস্মিত হব না। কিন্তু আমার ধারণা জন বিগস যদি এই মেয়র নির্বাচনে না জেতেন, তাহলে পূর্ব লন্ডনে বাঙালী ও অন্যান্য এথনিক কম্যুনিটির প্রগতিশীল ও সেক্যুলার অংশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে ধর্মান্ধতার রাজনীতির ঘাঁটি আরও শক্ত হবে। শুধু লন্ডনে নয়, ব্রিটেনের অন্যান্য শহরেও দ্রুত এদের প্রভাব ছাড়াবে। যা পরিণামে ব্রিটেনের গোটা গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এটা গেল ব্রিটেনে জামায়াতী অভিযানের সাফল্যের একটা চিত্র। অপর চিত্রটি আরও ভয়াবহ। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনে বসবাসকারী সেক্যুলার বাঙালীরা ব্রিটিশ সরকারের কাছে ব্রিটেনে মসজিদ ও স্কুলগুলোকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী জঙ্গী সংগঠনগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। এমনকি বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও ঘাতকদের কেউ কেউ (চৌধুরী মইনউদ্দীনসহ) লন্ডনে আশ্রয় নিয়ে মসজিদ ও নানা ধরনের তথাকথিত ইসলামী সংগঠনের নামে মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন মুসলিম দেশের অঢেল অর্থ সাহায্যে (এমনকি ব্রিটেনে তাদের অধিকৃত অথবা প্রভাবিত বারা কাউন্সিলের অর্থ সাহায্য অপব্যবহার করে) এই মৌলবাদী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে, ক্যাডার তৈরি করছে তারা তা ব্রিটিশ সরকারের গোচরীভূত করেছে। ব্রিটেনের লেবার অথবা টোরি কোন সরকারই সে ব্যাপারে নজর দেয়া এতদিন প্রয়োজন বোধ করেনি।

এতদিনে এই সরকারের টনক নড়েছে। সরকার টের পেয়েছে। এই উগ্রপন্থীরা ব্রিটেনের বড় বড় শহরে প্রচুর অর্থবৃষ্টি দ্বারা, নিজস্ব লোকদের স্কুলের গবর্নিং বডি বা পরিচালকম-লীতে ঢুকিয়ে শুধু প্রাইভেট স্কুল নয়, সরকারী স্কুলগুলোতে নামে না হয় কাজে জামায়াতী মাদ্রাসায় পরিণত করা শুরু করেছে এবং শিক্ষার আধুনিক কারিকুলাম বদলে ফেলে সেখানে ইসলামী শিক্ষার নামে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা কচি-শিশুদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতের জঙ্গী তৈরি করার চেষ্টা করছে। 

এটা প্রথম ধরা পড়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে এবং সানডে টাইমস পত্রিকার এক রিপোর্টিংয়ের ফলে। পত্রিকাটির খবরে জানা যায়, ব্রিটেনের প্রথম ফ্রি মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় ডার্বি শহরে। স্কুলটির নাম ‘আল মদীনা স্কুল।’ সরকারী অনুদান পাওয়ার লোভে এই স্কুলে আধুনিক শিক্ষাদান করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলের হেড ও ডেপুটি হেড টিচারকে নানা অজুহাতে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। অতঃপর বলা হয় স্কুলের অমুসলিম নারী স্টাফকেও হিজাব পরতে হবে, নইলে চাকরি ছাড়তে হবে। ছাত্রছাত্রীদের একত্রে ক্লাসে বসা বন্ধ করা হয়। স্কুল ইনস্পেক্টরগণ অভিযোগ পেয়ে এই স্কুলে তদন্ত চালাতে গিয়ে দেখেন, তাতে ন্যাশনাল কারিকুলামের কোন শিক্ষাদানের পরিবর্তে ইসলামী শরাশরিয়তের শিক্ষাদানই বেশি। এমনকি এই স্কুলে রূপকথা পাঠ করা এবং পাশ্চাত্য সঙ্গীত শোনাও নিষিদ্ধ করা হয়।
ব্রিটিশ শিক্ষা দফতর বার বার স্কুলটিকে সতর্ক করার পরেও তারা তাতে কর্ণপাত না করায় আল মদীনার সেকেন্ডারি স্কুলটিকে সরকারী নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে দেখা গেল এটা শুধু একটা স্কুলের সমস্যা নয়। সমস্যাটি অনেক বড় আকারের। লন্ডনসহ বহু শহরের স্কুলে সমস্যাটি ছড়িয়েছে। সানডে টাইমসে বলা হলো- ‘A much bigger Problem, also exposed in recent months lies, with the take over of secular schools by Islamic hardliners. It is feared many schools are effiectively becoming state funded madrasalies.’ (সম্প্রতি আরও বড় সমস্যা ধরা পড়ে, যে সমস্যা হলো ইসলামিক হার্ডলাইনারদের দ্বারা বহু সেক্যুলার স্কুল দখল হয়ে যাওয়া। আশঙ্কা করা হচ্ছে বহু স্কুল সরকারী অর্থে চালিত মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে)।
বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ব্রাডফোর্ড থেকে চাঞ্চল্যকর খবর আসতে থাকে যে, ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিস্টরা স্কুলগুলো দখল করে ফেলছে। যেহেতু পাকিস্তানী ও বাংলাদেশী জনসংখ্যা এই শহরগুলোতে অধিক, ফলে স্কুলের গবর্নিং বডিগুলোতে ঢুকে তারা ব্রিটেনের আধুনিক ও সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে। আল মদীনা স্কুলের মতো এসব স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক ক্লাস, ছাত্রীদের জন্য পর্দাপ্রথা বাধ্যতামূলক করা, অমুসলিম শিক্ষকদের বিতাড়ন এবং ক্রিসমাসের মতো অমুসলিম ধর্মীয় উৎসবগুলো পালনও বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়।
ফলে ব্রিটেনের অমুসলিম অধিবাসী (যারা বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ) এবং আধুনিকমনা সেক্যুলার বাঙালীদের মধ্যেও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল সানডে টাইমসের প্রধান সম্পাদকীয়র হেডিং ‘Keep Islamism out of the classroom.’ (ইসলামিজমকে ক্লাসরুমের বাইরে রাখ)। এই সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি বলেছে, ‘Schools should be places of learning and understanding, of preparing young people for life in britain today. We will all suffer if schools become a breeding grond for religious intolerence and radicalism and where the education provided for pupils is poor.’ (স্কুলগুলো হবে আজকের ব্রিটেনে জীবনধারণের উপযোগী করার জন্য তরুণদের শিক্ষা ও উপলব্ধি দেয়ার স্থান। তার বদলে স্কুলগুলো যদি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সূতিকাগার হয় এবং শিক্ষাদানের মান হয় অত্যন্ত নিম্নস্তরের, তাহলে আমাদের সকলেরই শঙ্কিত হওয়ার কথা।)
ব্রিটেনের কাগজগুলোতে লেখালেখির ফলে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের চৈতন্যোদয় হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী মাইকেল গোভ ডজন ডজন ইনস্পেক্টর পাঠাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন স্কুলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। শিক্ষাঙ্গনে ইসলামিক হার্ডলাইনাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ এবং তাদের ব্যাপক তৎপরতা সম্পর্কে তদন্তের জন্য তদন্তকারীরা মাঠে নেমেছেন। ব্রিটিশ শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বার্মিংহামের পনেরোটি স্কুলে ইতোমধ্যেই তদন্ত শেষ করেছেন। তাদের রিপোর্ট ইস্টারের ছুটির পরই বের হবে। শিক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রাইমারী স্কুলগুলোতেই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের অনুপ্রবেশ সম্পর্কে বেশি শঙ্কিত। তাদের মনে করেন শিশুদের মস্তিষ্ক ধোলাইয়ের কাজটি প্রাথমিক শিক্ষা স্তরেই শুরু করা হয়। এই শিশুদেরই পরবর্তী জীবনে জঙ্গী ও জেহাদিস্টে পরিণত করা অত্যন্ত সহজ হয়। 
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে ১০ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য শিক্ষামন্ত্রী গোভের কাছে চিঠি লিখে শিক্ষাঙ্গনে মৌলবাদীদের আধিপত্য বিস্তার রোধ করার জন্য সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা জানতে চেয়েছেন। বার্মিংহাম থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য লিয়াম বায়রন এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর এলাকায় স্কুলগুলোতে ইসলামিক হার্ডলাইনারদের তৎপরতা সম্পর্কে শুধু খ্রীস্টান অভিভাবকদের কাছ থেকে নয়, অসংখ্য মুসলিম অভিভাবক ও পিতামাতার কাছ থেকে অভিযোগ পাচ্ছেন। এই সমস্যাটি একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। 
ব্রাডফোর্ডের এক মুসলিম অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি কেন স্কুলে ইসলামী শিক্ষাদান সম্পর্কে চিন্তিত? জবাবে তিনি বলেন, ‘উন্নতমানের ইসলামী শিক্ষা দান করা হলে চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু স্কুলগুলোতে ইসলামী শিক্ষার নামে যে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, তা জামায়াতী শিক্ষা। আধুনিক যুগের সঙ্গে যে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই, এই শিক্ষা ইসলামের মূলনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের সন্ত্রাসী অথবা তথাকথিত জেহাদিস্ট তৈরি করা যাবে, তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত ও মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ হবে না।’ এই ভয় এখন ব্রিটেনের বহু স্কুলের মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের বহু অভিভাবকের মনেও ছড়িয়ে পড়েছে। 
লন্ডনের একটি দৈনিকে একজন প্রতিবেদক লিখেছেন, ব্রিটেন ও আমেরিকা যখন ওয়ার অন টেররিজমের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অন্য দেশে যুদ্ধ চালাচ্ছে, নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তখন এই দুই দেশের পেটের ভেতরেই সরকারী অর্থেই যে জঙ্গীবাদের চাষ হচ্ছে এবং জঙ্গীদের জন্মদান চলছে সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই। মনে হয়, মানুষ যেমন ঠেকে শিখে, তেমনি ইউরোপ-আমেরিকাতেও শিক্ষা এবং নানা সামাজিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মৌলবাদী দানবের আত্মবিকাশের কৌশলটির দিকে এতদিনে সরকারী পর্যায়ে চৈতন্য সৃষ্টি হয়েছে। 
ব্রিটেনের মতো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও স্কুলগুলোতেও ইসলামী শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার নামে ধর্মান্ধতা ও সন্ত্রাসের ঘাঁটি বিস্তার লাভ করছে। সরকার তা ঠেকাবে কিভাবে? এই ব্যাপারে আমাদেরও সতর্ক হওয়ার ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসেছে। 
[লন্ডন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৪]

No comments:

Post a Comment