Tuesday, June 25, 2013

সালাম আম্মা জাহানারা ইমাম !!!


শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ১৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ! দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ডেট্রয়েটের একটি হাসপাতালে মারা যান জাহানারা ইমাম । একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূলে নেতৃত্ব দেবার 'অপরাধে' স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়েই প্রয়াত হন নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী মহিয়সী সাহসী যোদ্ধা এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ।


১৯২৯ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তার জন্ম। সরকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল আলির সাত সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান জাহানারা ইমাম কে সর্বোচ্চ মিক্ষায় শিক্ষিত করার সব রকমের চেষ্টা করেছেন তার পিতা সৈয়দ আবদুল আলি এবং মাতা হামিদা আলি । ১৯৪৫ সালে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়েন। এ সময়ে তার সাথে বন্ধুত্ব হয় কলেজের কৃতি ছাত্র শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ এর সাথে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর কোলকাতায় লেডি ব্রেবোর্ণ কলেজে ভর্তি হন জাহানারা ইমাম। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে তার গ্র্যাজুয়েশান শেষ করেন। '৪৭ এর দেশভাগের পর তার বাবা-মায়ের কাছে ময়মনসিংগে এসে বিদ্যাময়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে তার বিয়ে হয় প্রকৌশলী শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ এর সাথে। তারা ঢাকায় চলে আসেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদে যোগ দেন জাহানারা ইমাম।

'খাওয়াতিন' নামে একটি মাসিক পত্রিকার প্রথম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন জাহানারা ইমাম ১৯৫২ সালে। পরবর্তী কয়েক বছর তিনি সফলতার সাথে এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। ১৯৫২ এবং ১৯৫৪ সালে তার দুই পুত্র রুমী এবং জামীর জন্ম হয়। ১৯৬০ সালে প্রধান শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে দিলেন সন্তান দের জন্যে। এসময় বললেন , " আমি হাজার হাজার সন্তানের শিক্ষা দিয়েছি। এখন আমার দুই সন্তানকে গড়ে তোলার জন্যে কিছু সময় দিতে হবে।"

এ সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর তিনি পুরোপুরি শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। ১৯৬৬ থেকে '৬৮ ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ও কয়েক বছর ছিলেন। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শিক্ষকতায় দেন তিনি। ১৯৬৪-৬৫ সালে ফুলব্রাইট স্কলার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হন। পরবর্তীতে আবারো ১৯৭৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রনে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের এদেশীয় সহযোগী বাহিনী রাজাকার আলবদর দের সাথে নিয়ে নিরীহ বাঙ্গালী দের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে
তাদের প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জাহানারা ইমামের পুত্র গেরিলা যোদ্ধা শফি ইমাম রুমি । বেশ কিছু অপারেশনে সরাসরি অংশ নেন তিনি। পাকিস্তানী সেনারা এক রাতে তুলে নিয়ে যায় রুমি এবং তার পিতা প্রকৌশলী শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ কে। অত্যাচারিত নির্যাতিত শরীফুল ইমাম মৃত্যুবরণ করেন ১৩ ডিসেম্বর ।মায়ের কোলে আর ফিরে এলেন না রুমি।

১৯৯২ সালে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠনের সময়ে বেগম সুফিয়া কামাল তার বাড়িতে বসে প্রস্তাব করেন জাহানারা ইমামকে এর দায়িত্ব দেবার জন্যে। জননী সাহসিকার সিদ্ধান্ত তখন শিরোধার্য। কারণ , তার দূরদর্শীতার কাছে সবাই পরাজিত হয়েছে।! এর ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নেতৃত্ব দেন শহীদ রুমির মা জাহানারা ইমাম। ক্যান্সার নিয়েও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে সক্রিয় আন্দোলন চালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন তিনি । ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত জাহানারা ইমামের আত্মজীবনীমূলক‘ গ্রন্থ একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি অসাধারণ দলিল। এছাড়া আরো ৭টি গ্রন্থ রয়েছে তার 'বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার' সহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন জননী জাহানারা ইমাম! সারা জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

No comments:

Post a Comment