Wednesday, January 30, 2013

রাশিয়া হতে অস্ত্র ক্রয় নিয়ে অহেতুক দড়ি টানাটানি :প্রফেসর আবদুল মান্নান



Saturday, January 26, 2013

রাশিয়ায় তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তার এই সফর নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তর্ক বিতর্ক এখনো পত্র পত্রিকায় চলছে, চায়ের টেবিলও বাদ যাচ্ছে না । প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত বিরতি দিয়ে বিদেশ সফর করেন, কিন্তু অতীতে কখনো তার অন্য কোন সফর নিয়ে এতো কথাবার্তা হয়েছে বলে মনে হয়না যেমনটি তার রাশিয়া সফর নিয়ে হচ্ছে । ১৯৭২ সনের পর এটি বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের রাশিয়ায় এটি দ্বিতীয় দ্বিপাক্ষিক সফর, যদিও শেখ হাাসিনা ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে টাইগার সামিটে যোগ দিতে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ সফরে গিয়েছিলেন । ১৯৭২ সনে ১ হতে ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাশিয়া সফর করেছিলেন । যদিও সে সফরটি ছিল অনেকটা একটি নতুন দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি বন্ধু প্রতিম দেশে প্রথম সফর-তথাপি সেই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ তখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশ সমূহ বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি । একাত্তরে আমদের মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক পরিম-লে রাশিয়া (তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন) অসামান্য অবদান রেখেছিল । ১৯৭১ এর ৩ ডিসেম্বর ঢাকা মুক্ত করার জন্য যখন চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় তখন পাকিস্তানের বন্ধুরা সেই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতি সংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনটি পৃথক যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব আনে যা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে ভেস্তে যায় । যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যদি গৃহীত হতো তা হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল । নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বেও সামরিক ভারসাম্য নিশ্চিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক হয়েছে সত্য কিন্তু এখনো পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যে কয়েকটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে তার মধ্যে রাশিয়া সব চেয়ে শক্তিশালী এবং জাতি সংঘে তার ভেটো প্রয়োগ ক্ষমতা অটুট রয়েছে । অন্যদিকে একবিংশ শতকে যে কটি দেশ প্রথম দিকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে বলা হচ্ছে তার মধ্যে রাশিয়া অন্যতম । রাশিয়ার বর্তমান গড় উৎপাদনের পরিমাণ আনুমানিক ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ১৪ কোটি জনসংখ্যার এই দেশটিতে বাংলাদেশের মতো একটি উদিয়মান অর্থনীতির দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করার অপার সম্ভাবন রয়ে গেছে ।
বঙ্গবন্ধু এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের মাঝখানে প্রায় এক চল্লিশ বছর পার হয়েছে । এই একচল্লিশ বছরে রাশিয়ার সাথে আমাদের বন্ধুত্বের বেশ খানিকটা চিড় ধরেছে এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ রাশিয়ার বেশ কয়েকজন কূটনীতিককে এই দেশ হতে বহিস্কারও করেছে । পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাশিয়া আমাদের নতুন রাষ্ট্রদূত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং সে সময় আমাদের একটি বাণিজ্য মিশনের রাশিয়া সফর বাতিল করেছিল । অন্য কোন দেশের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটি পূর্বে কখনো ঘটেনি অথচ এই রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন) বাংলাদেশের জন্মলগ্নে ছিল একটি অসাধারণ বন্ধুপ্রতিম দেশ । এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের রাশিয়া সফর বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য একটি বড় ধরণের অর্জন বলতে হবে । কারো কারো মতে হঠাৎ করে বাংলাদেশের এই ‘রাশিয়া অভিযান’ তার সাথে অন্যান্য বন্ধু প্রতিম দেশগুলির সাথে বিরাজমান সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে । এই অন্যান্য দেশ বলতে সাধারণত আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে বুঝিয়ে থাকি । এমনটি ঘটার কোন কারণ নেই । কারণ বর্তমান রাশিয়া আর সত্তর আশির দশকের ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগের ভøাদিমির লেনিন প্রতিষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের কোন মিল নেই । বর্তমান রাশিয়া সার্বিক অর্থেই একটি বাজার অর্থনীতির দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই চায় রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন হোক । বাংলাদেশ রাশিয়া হতে চার বৎসরে যে এক বিলিয়ন ডলারের (আট হাজার কোটি টাকা) অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেছে তা নিয়ে বিভিন্ন জনে নানা প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করছেন । কেউ কেউ জেনে করছেন আর কেউ কেউ না জেনে ঢালাও মন্তব্য করছেন । কারো মতে রাশিয়ার অস্ত্র নি¤œ মানের আবার অন্যরা বলেন রাশিয়া বাংলাদেশকে বোকা বানিয়ে তাদের পুরানো অস্ত্র গছিয়ে দেবে । এই সব মন্তব্য যারা করেন তাদের এই বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রচ- ঘাটতি রয়েছে অথচ আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাজার সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেট টিপলেই নানা তা সহজে পাওয়া যায় ।
রাশিয়া হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানি কারক দেশ (২৪%) । তার উপরে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র (৩০%) । আবার সেই যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়া হতে সামরিক হেলিকপ্টার ক্রয় করে । ২০১১ সালে পেন্টাগন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রশোবোরনএক্সপোর্ট (জড়ংড়নড়ৎড়হবীঢ়ড়ৎঃ) হতে ৪১১ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২১টি এম-আই ১৭ হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে । পেন্টাগন এটি স্বীকার করেছে আফগানিস্তানের মতো দূর্গম এলাকায় চলাচলের জন্য এই ধরনের হেলিকপ্টারের কোন বিকল্প নেই । যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ফ্র্যাঙ্ক কেন্ডাল গত বছর ২৭ জুলাই এই বিবৃতিতে বলেছেন ‘এই মুহুর্তে পেন্টাগন এম-আই ১৭ এর কোন ভাল বিকল্প খুঁজে পায়নি ।’ বাংলাদেশ অস্ত্রক্রয়ের যে চুক্তি করেছে তা এই মডেলের আরো উন্নত সংষ্করণ, এম-আই ১৭১ । শুধু রাশিয়া নয় বাংলাদেশ যদি অন্য কোন দেশের সাথে অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করে তাহলে সেই অস্ত্র সংযোজনের প্রতিটি পর্যায়ে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বহিনীর প্রকৌশলীরা পর্যবেক্ষণ করেন । তারা ছাড়পত্র দিলেই অস্ত্র সংযোজন কাজ শুরু হয় । এমনটি চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে । আর যদি বংলাদেশ কোন দেশ হতে পুরানো অস্ত্র ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় তা হলে অন্য কথা । সাধারণত যুদ্ধ জাহাজ ক্রয়ে অনেক সময় পুরনো জাহাজ ক্রয় করা হতে পারে । নতুন যুদ্ধজাহাজের আন্তর্জাতিক মূল্য অনেক বেশী । খুশির খবর বাংলাদেশ এখন নিজেই যুদ্ধজাহাজ তৈরী করা শুরু করেছে । রাশিয়া হতে অস্ত্র ক্রয়ে চীন নাখোশ হওয়ার কোন কারণ নেই কারণ চীন বাংলাদেশ সসস্ত্র বাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এই কিছুদিন আগে বাংলাদেশ চীন হতে ক্রয় করা ৪৪ টি ট্যাংক তার সাঁজোয়া বাহিনীতে সংযোজন করেছে । তবে চীনের সাথে সব সময় সব চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেনা । বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ১১৭ মিলিয়ন ডলার ব্যায়ে চীন হতে ১৬ট এফ-৭ জঙ্গী বিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছিল । চুক্তি সইয়ের একমাসের মাথায় বাংলাদেশকে কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হয় যদিও সে বিমানের কোন চালান তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়নি । এই বছর চীনকে তার এই বিমান ক্রয় বাবদ শেষ কিস্তি পরিশোধ করতে হবে । অন্যদিকে রাশিয়া হতে যে সমরাস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তার প্রথম কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে ২০১৮ সাল হতে এবং দশ বছরে বিশ কিস্তিতে তা পরিশোধ করতে হবে আর ক্রয় শেষ করতে হবে ২০১৭ সালের মধ্যে । কী কী অস্ত্র বা সরঞ্জাম বাংলাদেশ রাশিয়া হতে খরিদ করবে তার তালিকা বাংলাদেশে প্রস্তুত করবে । যেকোন মুহুর্তে বাংলাদেশ এই চুক্তি হতে বের হয়ে আসতে পারবে তবে তার জন্য তাকে ০.৭৫% সাভিস চার্জ দিতে হবে ।
যুক্তারাষ্ট্র হতে বাংলাদেশে তেমন কোন সমরাস্ত্র ক্রয় করেনা । তবে অতীতে জেনারেটর, ভারি উদ্ধার যান, পরিবহণ বিমান, ভ্রাম্যমান পানি শোধনাগার ক্রয় করেছে । পরিবহনের জন্য গাড়ী এসেছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, জাপান আর কোরিয়া হতে । যুক্তরাজ্য হতে ক্রয় করেছে শব্দের দূরত্ব নির্ণয় যন্ত্রপাতি । বর্তমানে রাশিয়া হতে যে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে তার মাধ্য আছে এপিসি। ট্যাঙ্কের মতো দেখতে । ভিতরে দশ থেকে বার জন সৈনিক বসতে পারে । এমন যান বর্তমানে পুলিশেরও আছে । হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী রকেট, পন্টুন ব্রীজ, যা অনেক সময় রীলিফ কাজে ব্যবহার করা হয় । মোদ্দা কথা এই গুলির সবই সেনা বাহিনীকে গতিশীল করবে । কোনটিই আক্রমণাত্মক সরঞ্জাম নয় । এই তালিকা ইতোমধ্যে সামরিক কতৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছে । আর যেহেতু রাশিয়ার সাথে চুক্তিটি হয়েছে দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে এবং সব সরবরাহই করা হবে রাশিয়ার রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান হতে সেহেতু এখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগী নেই এবং কমিশন বাণিজ্যের কোন সুযোগও নেই । কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলেছেন এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে সামররিক সরঞ্জাম না কিনে তা কী শিক্ষা বা স্বাস্থ খাতে ব্যবহার করা যেত না ? অবশ্যই ভাল এবং এটি আদর্শ প্রস্তাব । তবে বাস্তবে যেহেতু এই অর্থ রাশিয়া হতে নির্দিষ্ট খাতের জন্য ঋণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে তা অন্য কোন খাতে ব্যবহার করা যাবে না । আর এই অর্থটি যাবে সামরিক বাজেট হতে । এই সব ক্রয়ের জন্য বাড়তি কোন বরাদ্দ নেই । শুনতে খারাপ লাগলেও দাতা গোষ্ঠি বা ঋণ সহায়তা দেশগুলি যত সহজে মূলধনী যন্ত্রপাতি বা সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অর্থ সাহায্য করতে চায় অথবা ঋণ দেয় তত সহজে শিক্ষা বা স্বাস্থ্য খাতে দিতে চায়না । শেখ হাসিনার পূর্ববর্তি সরকারের আমলে আমি তৎকালিন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দপ্তরে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শাটল ট্রেন চলাচল উন্নয়ন করার জন্য দেন দরবার করতে । তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন তার জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ নেই । তার অফিস কক্ষে বেশ বড় বড় অনেকগুলি নব নির্মিত রেল সেতুর ছবি ছিল । তাকে বলি এর একটার অর্থ দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেনের বেশ উন্নতি ঘটানো সম্ভব । তিনি জানালেন এগুলি সবই বিদেশী সহায়তায় নির্মিত, আর তারা তাদের ভাষায় কোন অলাভজনক প্রকল্পের জন্য তেমন অর্থ যোগান দেয় না ।
চীন হতে বাংলাদেশ নিয়মিত সামিরক সরঞ্জাম ও অস্ত্র ক্রয় করে । তা নিয়ে তেমন কোন আলোচনা সমালোচনা হয়না; যেমনটি রাশিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে । মাঝে মঝে এই সব সমালোচনা বেশ কৌতুকউদ্দিপক । যেমন চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন বিএনপি নেতা সেদিন টেলিভিশনের এক টকশোতে বলছিলেন তার নেতা জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে প্রথম আধুনিকায়ন করেছেন । তার কাছ হতে জানা গেল একবার পাঁচত্তরের পনেরই অগাষ্টের পর জিয়া চট্টগ্রাম সার্কিট হ্উাজে অবস্থান কালে সেনা সদস্যরা পতাকা নামানোর সময় তিনি আবিষ্কার করলেন স্যালুটের সময় সেনা বাহিনীর বুটের আওয়াজ নেই । পরে তাদের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাদের পায়ে কাপড়ের জুতা । সম্পূর্ণ একটি ঢাহা অসত্য তথ্য । প্রথমে পতাকা নামানোর কাজটি ঐতিহাসিক ভাবে পুলিশের কাজ । সেনা বাহিনীর নয় । সেনা নিবাসের অভ্যন্তরে হলে তা অন্য কথা । দ্বিতীয়ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগ পর্যন্ত জিয়া সেনা বাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন । এই পদটি বঙ্গবন্ধু জিয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই পদটি বিলুপ্ত করা হয় । বঙ্গবন্ধু জিয়াকে পূত্রবত ¯েœহ করতেন । তো একজন সেনা উপ-প্রধানকে কেন এতো দেরীতে আবিষ্কার করতে হবে সেনা বাহিনী কাপড়রে জুতা পরে তাদের ডিউটি করছেন ? বাস্তবে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কখনো কাপড়ের জুতা পরে ডিউটি করেনি । মুক্তিযুদ্ধের পর আমার কম পক্ষে ডজন খানেক বন্ধু সেনা বাহিনীতে থেকে গিয়েছিলেন । সেদিন তিনি আরো প্রশ্ন করলেন কার জন্য এত সব ট্যাঙ্ক ক্রয় ? আমাদের তিন দিকে মিত্রদেশ ভারত । দক্ষীণে বঙ্গোপসাগর । ট্যাঙ্কগুলি কী আমরা বঙ্গোপসাগরে চালাবো ? উনি ক্রয় তালিকায় ট্যাঙ্ক কোথায় পেলেন তা বুঝা গেলনা । আর ট্যাঙ্ক থাকলেও অসুবিধা কী ? কোন দেশতো বর্তমানে অন্যদেশ আক্রমন করার জন্য সমারাস্ত্র ক্রয় করে না । নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য এই সবের প্রয়োজন হয় । বাংলাদেশ তার প্রথম ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করেছিল বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে, মিশর হতে । তাও রাশিয়ায় প্রস্তুতকৃত । সেই ট্যাঙ্ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ।
সসস্ত্র বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন রাশিয়ার সাথে চুক্তির আওতায় যে অস্ত্রগুলি সংগ্রহ করা হবে তা মূলতঃ জাতিসংঘ শান্তি রক্ষাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য । একজন সৈনিকের জুতা হতে শুরু করে পানির ট্যাঙ্ক, আসবাব পত্র, তাবু, ট্যাঙ্ক অথবা গাড়ী যাই আমাদের শান্তিরক্ষা বাহিনী তাদের কাজে ব্যবহার করে তার প্রত্যেকটিরই ভাড়া দেয় জাতিসংঘ । যেমন ১৯৯৯ সনে সাড়ে চাড় লক্ষ ডলার দিয়ে যে এপিসি বাংলাদেশ সেনা বাহিনী চীন হতে ক্রয় করেছে তার মাসিক ভাড়া আট হাজা ডলার । পাঁচ বছরে প্রতিটি এপিসির দাম উঠে এসেছে আর এপিসি গুলিও বাংলাদেশের রয়ে গেছে । শান্তি রক্ষা মিশনে একটি যুদ্ধ বিমান উড়লে ঘন্টায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ হতে আড়াই হাজার ডলার ভাড়া পায় । আনুমানিক তিন বছরে এর মূল্য উঠে আসে । দেশে ফেরার সময় এই বিমান আমরা দেশে নিয়ে আসি । বর্তমান সরকারের আমলে মায়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্র সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগরের এক বিশাল এলাকা জুড়ে তার সার্বভৌমত্ব কায়েম করেছে । ইতোমধ্যে কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর জন্য একটি নতুন ঘাঁটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে । বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বর্তমানে কৌশলগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এই সবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি আধুনিক সসস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলতে হবে । কোন দল ক্ষমতায় থাকলো তা তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নয় । এই কথাগুলি কোন টকশোতে তেমন একটা কেউ বলেন না । সরকারের টকশো সমালোচকরা হয় অজ্ঞতা কারণে এই সব তথ্য সাধারণ মানুষকে পরিবেশন করেন না অথবা জেনে শুনে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন ।
রাশিয়া হতে অস্ত্র ক্রয় চুক্তি নিয়ে সসস্ত্র বাহিনী ছাড়াও খোদ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন । এটিও একটি অভূতপূর্ব ঘটনা । একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় এমনটিই হওয়া উচিৎ । এটি ঠিক যে অনেক সময় রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তার কারণে অনেক তথ্য জনগনের সামনে তুলে ধরা যায় না । তবে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু কখনো করা হয় না । সে সব তথ্য ভিন্ন দেশের প্রকাশিত তথ্যেও সূত্র ধরে জনগনকে জানতে হয় । তবে প্রধানমন্ত্রী বা সসস্ত্র বাহিনী যতই বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দিক না কেন ব্যরিস্টার মওদুদ-তরিকুল ইসলাম গং এই সব নিয়ে আরো কিছুদিন অপরাজনীতি করতেই থাকবেন । তবে এতে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ক্ষতিগ্রহস্থ হওয়া উচিৎ নয় । বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক সেনা বাহিনীর গোড়া পত্তন করেছিলেন । এটি এখন বিশ্বে একটি সম্মানিত সেনা বাহিনী । তবে এই সেনা বাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু আর জিয়া নিহত হয়েছেন । তাদেরকে কিছু ক্ষমতা লোভী কর্মকর্তা দেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা জবর দখল করার জন্য ব্যবহার করেছেন । এদেও কারণেই এক এগারোর পর একটি অসাংবিধানিক সরকার জোর করে দুই বছর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল কে রেখেছিল। দেশের মানুষ আশা করে আগামীতে তেমন কোন ক্ষমতা লোভি গোষ্ঠির হাতে তারা আর কখনো ব্যবহৃত হবেন না।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। জানুয়ারী ২৫, ২০১৩

No comments:

Post a Comment