Sunday, January 27, 2013

রক্ষীদের দুষ্কৃতী-যোগের অভিযোগ ;পাচারে মদত বিএসএফেরই, রিপোর্ট ডিজি-র



জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা
সীমান্তে নজরদারির দায়িত্ব যাদের, তাদের মদতেই চলছে পাচার! অন্তত রাজ্য পুলিশ-প্রধানের তেমনই অভিযোগ।
মুর্শিদাবাদ সীমান্ত থেকে আসা নথিপত্র-সহ রিপোর্ট পাঠিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় সরকারকে বলেছেন, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজশে এ দেশে অনুপ্রবেশে প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র একাংশ। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠানো ডিজি’র রিপোর্টের সুপারিশ, সরকার এখনই বিষয়টি নিয়ে বিএসএফ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুক। নচেৎ পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত-এলাকা ক্রমেই মানুষ-মাদক-গরু পাচারের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠবে বলে ডিজি তাঁর রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ডিজি-র ‘বিস্ফোরক’ রিপোর্টটি পেয়ে মহাকরণের কর্তারা বিএসএফ-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যে হেতু পুলিশের রিপোর্টে সরাসরি বিএসএফের বেশ কয়েক জন অফিসারের নাম করে অনুপ্রবেশে মদতদানের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাই স্বরাষ্ট্র দফতর এ ব্যাপারে কড়া মনোভাব নিচ্ছে বলেই দফতর-সূত্রের খবর। “গুরুতর অভিযোগ। বিএসএফ-কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে, মুর্শিদাবাদ সীমান্তে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছে।” মন্তব্য এক স্বরাষ্ট্র-কর্তার।
স্বরাষ্ট্র দফতরের খবর: গত ৭ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর সেখানকার সীমান্ত-এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিজি-কে একটি রিপোর্ট দেন। তাতে বলা হয়েছে, সীমান্তে এখন বিএসএফের একাংশই মানুষ পাচারে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, যে জন্য বিএসএফের কেউ কেউ বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সংশ্রব রাখতেও কসুর করছেন না। এসপি-র রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজশাহি জেলার সমাজবিরোধী মহম্মদ সইদুল ইসলামের সঙ্গে বিএসএফের কিছু অফিসারের যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। এসপি’র বক্তব্য: বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)-এর গোদাবাড়ি আউটপোস্ট এলাকায় সক্রিয় সইদুল চর-আসারিয়াদহ, সাহেবনগর প্রভৃতি পয়েন্ট হয়ে রাজশাহি করিডর দিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে লোক ঢোকায়। বিএসএফের বেশ কিছু অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে সইদুল এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করে এসপি’র রিপোর্টে অভিযোগ, এ ভাবে দু’পক্ষের যোগাযোগের মাধ্যমেই লাগাতার অনুপ্রবেশ চলছে। নিজের দাবির সমর্থনে তথ্যও পেশ করেছেন মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার। কী রকম?
এসপি জানিয়েছেন, গত ১৮ নভেম্বর রানিনগর থানা-এলাকায় বেশ কয়েক জন বাংলাদেশিকে পুলিশ পাকড়াও করে। তাঁরা এ দেশে ঢুকেছিলেন বিএসএফের ১৩০ নম্বর ব্যাটালিয়নের আওতাধীন কিছু এলাকা দিয়ে, মূলত কাহাড়পাড়া আয়রন ব্রিজ ধরে। এসপি’র দাবি: জেরার মুখে ধৃতেরা বলেন, বিএসএফের ইন্সপেক্টর শিবরাম শিবাজিরাও ভোঁসলে ও মুর্শিদাবাদ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফের ডিআইজি-সদর তাঁদের অনুপ্রবেশের কথা জানেন। পাশাপাশি সইদুলের সঙ্গে ওই সব অফিসারের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কথা জানিয়ে ধৃতেরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘বোঝাপড়ার’ মারফতই তাঁরা এ দেশে ঢুকেছেন। এসপি জানান, পুলিশ অনুপ্রবেশকারী ওই দলটিকে গ্রেফতার করে তাঁদের থেকে আরও তথ্য পেয়েছে। পুলিশ সব খতিয়ে দেখছে।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ-কর্তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এখন অনুপ্রবেশের খোলা ময়দান হয়ে গিয়েছে। বিশেষত ভগবানগোলা, যেখানে বিএসএফের ১৫১ নম্বর ব্যাটালিয়ন মোতায়েন। এসপি’র রিপোর্ট মোতাবেক, ভগবানগোলা, লালগোলা, চর-লবণগোলার ৭ থেকে ১০ নম্বর পয়েন্ট দিয়ে মানুষ-মাদক-গরু অবাধে পাচার হচ্ছে, এমনকী আইরমারিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিতে কাঁটাতারের বেড়া খোলা রাখা হয়েছে। পুলিশের অভিযোগ: বিএসএফ সব জেনেশুনেও চুপ, কারণ তাদের একাংশই এই কাজের মদতদাতা। মুর্শিদাবাদের ১৫১ এবং ১৩০ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ এলাকা দিয়েই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে জেলা পুলিশ মহাকরণকে জানিয়েছে।
৭ ডিসেম্বর এসপি’র ওই রিপোর্ট পেয়ে তা ১০ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছেন ডিজি। স্বরাষ্ট্র-সচিবকে তিনি লিখেছেন, বিএসএফের বিরুদ্ধে ওঠা এ হেন মারাত্মক অভিযোগ নিয়ে সরকার সংশ্লিষ্ট স্তরে আলোচনা করুক, প্রয়োজনে তদন্ত হোক। ডিজি-র রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র দফতরও বিএসএফ-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা চেয়েছে বলে মহাকরণের খবর। বিএসএফের কী বক্তব্য?
সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের এডিজি বংশীধর শর্মা বলেন, “মহাকরণ থেকে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এক আইজি পদমর্যাদার অফিসারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। কাজ চলছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে বাহিনীর এক মুখপাত্রের দাবি, “বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বিএসএফ সীমান্তে মাদক ও গরু পাচার রুখতে কড়া মনোভাব নিলেই পুলিশ অসুবিধায় পড়ে যায়। যে সব অফিসার কড়া মনোভাব দেখান, তাঁদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের একটা অংশ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দেখা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না।”

No comments:

Post a Comment