Friday, September 18, 2020

উদ্বাস্তু : অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

চলতাড়াতাড়ি কর,
আর দেরি নয়বেরিয়ে পড় বেরিয়ে পড় এখুনি।
ভোররাতের স্বপ্নভরা আদুরে ঘুমটুকু নিয়ে
আর পাশে ফিরতে হবে না।
উঠে পড় গা ঝাড়া দিয়ে,
সময় নেই-
এমন সুযোগ আর আসবে না কোন দিন।
বাছবাছাই না করে হাতের কাছে যা পাস
তাই দিয়ে পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে নে হুট করে।
বেড়িয়ে পড়,
দেরী করলেই পস্তাতে হবে
বেরিয়ে পড়-
ভূষণ পাল গোটা পরিবারটাকে ঝড়ের মতো নাড়া দিলে।
কত দূর দিগন্তের পথ-
এখান থেকে নৌকা করে ষ্টিমার ঘাট
সেখান থেকে রেলষ্টেশন-
কী মজাআজ প্রথম ট্রেনে চাপাবি,
ট্রেন করে চেকপোষ্ট,
সেখান থেকে পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-
ছোট ছোলেটা ঘুমমোছা চোখে জিঞ্জেস করলে,
সেখান থেকে কোথায় বাবা?
কোথায় আবার! আমাদের নিজের দেশে।
ছায়াঢাকা ডোবার ধারে হিজল গাছে
ঘুমভাঙা পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে উঠল।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাল সেই ছোট ছেলে,
দেখলে তার কাটা ঘুড়িটা এখনো গাছের মগডালে
লটকে আছে,
হাওয়ায় ঠোক্কর খাচ্ছে তবুও কিছুতেই ছিঁড়ে পড়ছে না।
ঘাটের শান চটে গিয়ে যেখানে শ্যাওলা জমেছে
সেও করুণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করছেকোথায় যাবে?
হিজল গাছের ফুল টুপ টুপ করে এখনো পড়ছে জলের উপর,
বলছেযাবে কোথায়?
তারপর একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মত ধান হয়েছে-
লক্ষীবিলাস ধান-
সোনা রঙ ধরবে বলে। তারও এক প্রশ্ন- যাবে কোথায়?
আরো দূরে ছলছলাৎ পাগলী নদীর ঢেউ
তার উপর চলেছে ভেসে পালতোলা ডিঙি ময়ূরপঙ্খি
বলছেআমাদের ফেলে কোথায় যাবে?
আমারা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু?
এ জন্মের কেউ নইস্বজন নই?

তাড়াতাড়ি কর- তাড়াতাড়ি কর-
ঝিকিমিকি রোদ উঠে পড়ল যে।
আঙিনায় গোবরছড়া দিতে হবে না,
লেপতে হবে না পৈঁঠে-পিঁড়ে,
গরু দুইতে হবে নাখেতে দিতে হবে না,
মাঠে গিয়ে বেঁধে রাখতে হবে না।
দরজা খুলে দাওযেখানে খুশি চলে যাক আমাদের মত।
আমাদের মত! কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
তা জানিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আছে কী?
সব আছে। অনেক আছেঅঢেল আছে-
কত আশা কত বাসা কত হাসি কত গান
কত জন কত জায়গা কত জেল্লা কত জমক।
সেখানকার নদী কি এমনি মধুমতী?
মাটি কি এমনি মমতামাখানো?
ধান কি এমনি বৈকুন্ঠবিলাস?
সোনার মত ধান আর রুপোর মতো চাল?
বাতাস কি এমনি হিজলফুলের গন্ধভরা
বুনো-বুনো মৃদু মৃদু?
মানুষ কি সেখানে কম নিষ্ঠুর কম ফন্দিবাজ কম সুবিধাখোর?
তাড়াতাড়ি করোতাড়াতাড়ি করো-
ভূষণ এবার স্ত্রী সুবালার উপর ধমকে উঠল:
কী কত বাছাবাছি বাঁধাবাঁধি করছ,
সব ফেলে ছড়িয়ে টুকরো-টুকরো করে এপাশে-ওপাশে বিলিয়ে দিয়ে
জোর কদমে এগিয়ে চলো,
শেষ পর্যন্ত চলুক থামুক ট্রেনে গিয়ে সোয়ার হও,
সোয়ার হতে পারলেই নিশ্চিন্তি।
চারধারে কী দেখছিসছেলেকে ঠেলা দিল ভূষণ-
জলা-জংলার দেশদেখবার আছে কী!
একটা কানা পুকুর
একটা ছেঁচা বাঁশের ভাঙা ঘর
একটা একফসলী মাঠ
একটা ঘাসী নৌকো-
আসল জিনিস দেখবি তো চল ওপারে,
আমাদের নিজের দেশেনতুন দেশে,
নতুন দেশের নতুন জিনিষ-মানুষ নয়জিনিস-
সে জিনিসের নাম কী?
নতুন জিনিসের নতুন নাম-উদ্বাস্তু।

ওরা কারা চলেছে আমাদের আগে-আগে-ওরা কারা?
ওরাও উদ্বাস্তু।
কত ওরা জেল খেটেছে তকলি কেটেছে
হত্যে দিয়েছে সত্যের দুয়ারে,
কত ওরা মারের পাহাড় ডিঙিয়ে গিয়েছে
পেরিয়ে গিয়েছে কত কষ্টক্লেশের সমুদ্র,
তারপর পথে-পথে কত ওরা মিছিল করেছে
সকলের সমান হয়েকাঁধে কাঁধে মিলিয়ে,
পায়ে-পায়ে রক্ত ঝরিয়ে-
কিন্তু ক্লান্ত যাত্রার শেষ পরিচ্ছেদে এসে
ছেঁড়াখোঁড়া খুবলে-নেওয়া মানচিত্রে
যেন হঠাৎ দেখতে পেল আলো-ঝলমল ইন্দ্রপুরীর ইশারা,
ছুটল দিশেহারা হয়ে
এত দিনের পরিশ্রমের বেতন নিতে
মসনদে গদীয়ান হয়ে বসতে
ঠেস দিতে বিস্ফারিত উপশমের তাকিয়ায়।
পথের কুশকন্টককে যারা একদিন গ্রাহ্যের মধ্যেও আনেনি
আজ দেখছে সে-পথে লাল শালু পাতা হয়েছে কিনা,
ড্রয়িংরুমে পা রাখবার জন্যে আছে কিনা
বিঘৎ-পুরু ভেলভেটের কার্পেট।
ত্যাগব্রতের যাবজ্জীবন উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে
যারা এত দিন ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চড়েছে
সাধারণ মানুষের দুঃখদৈন্যের শরিক হয়ে
তারাই চলেছে এখন রকমারি তাকমার চোপদার সাজানো
দশঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে
পথচারীদের হটিয়ে দিয়েতফাৎ করে দিয়ে
সমস্ত সামনেওয়ালাকে পিছনে ফেলে
পর-ঘর বিদেশী বানিয়ে।
হ্যাঁওরাও উদ্বাস্তু।
কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে
কেউ উৎখাত আদর্শ থেকে।

আরো আগেইতিহাসেরও আগেওরা কারা?
ঐ ইন্দ্রপুরী-ইন্দ্রপ্রস্থ থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ের দিকে-
মহাভারতের মহাপ্রস্থানের পঞ্চনায়ক ও তাদের সঙ্গিনী
স্ব- স্বরূপ- অনুরূপা-
যুদ্ধ জয় করেও যারা সিংহাসনে গিয়ে বসল না
কর্ম উদযাপন করেও যারা লোলুপ হাতে
কর্মফল বন্টন করল না নিজেদের মধ্যে,
ফলত্যাগ করে কর্মের আদর্শকে রেখে গেল উঁচু করে,
দেখিয়ে গেল প্রথমেই পতন হল দ্রৌপদীর-
পক্ষপাতিতার।
তারপর একে একে পড়ল আর সব অহঙ্কার
রূপের বিদ্যার বলের লোভের-আগ্রাসের-
আরো দেখাল। দেখাল-
শুধু যুধিষ্ঠিরই পৌছয়
যে হেতু সে ঘৃণ্য বলে পশু বলে
পথের সহচর কুকুরকেও ছাড়ে না।

Friday, September 11, 2020

ছাত্র ইউনিয়নের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ চাই- সুমি খান


মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ কমিউনিষ্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে কলঙ্কিত করার কোন অধিকার বর্তমান প্রজন্মের নেই। এই পার্টির লাল পতাকা হাতে কমরেড পূর্নেন্দু কানুনগো ( আমার সেলিম চাচ্চু) , কমরেড অনঙ্গ সেন,কমরেড হেনা দাস, বারীন দাস (আমাদের সালাম চাচ্চু), আমার ছোটমামা ফয়েজ আহমেদ সিদ্দিকী, কমরেড অশোক সাহা কে দেখেছি তাঁদের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন পার্টির জন্যে। মনোরমা বসু মাসীমা সহ লাখো কোটি মানুষ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন!

তাঁদের মহান আত্মদানের সম্মান না করেন, অবমাননা করার কোন অধিকার কোন প্রজন্মের কারো নেই! আপনারা ঠগবাজ,মিথ্যুক আর ক্রীমলোভীদের লালন করেন নিজেদের স্বার্থে।

কিন্তু আমাদের রক্তক্ষরণ হয় প্রাণে সংগঠনকে এভাবে কলংকিত করলে!!

বুকে যে এখনো বাজে-আমরা তাজুলের সহযোদ্ধা, শাহাদাত আমাদের ভাই!

এই মোর্শেদ যে তাজুল শাহাদাতের ঘাতকদের সহযোগী শক্তি, সেটা কি বর্তমান প্রজন্ম জানে না? ইতিহাস কথা বলে! রক্তের সাথে কতো আর বেঈমানী করবেন? কতোদিন??

কমিউনিস্ট পার্টি বর্তমান নেতৃত্ব যদি ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে, এই সিদ্ধান্তে একমত হয়, তবে তাদের ও আমি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্ব বলেই মনে করি এবং সংশ্লিষ্ট দের অপসারণ দাবি করছি!!
আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান সেই গেরিলা বাহিনীর বীর যোদ্ধা। তিনি একজন রাজাকারকে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমার দাদা বরউঠানের জমিদার এবং সাবেক গভর্ণমেন্ট প্লীডার (জিপি)ফজলুর রহমান খান ১০০ পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মী এবং তাঁদের পরিবার ছিলেন ৯৫%। বাবা এবং বড়ো চাচা ডা. কামাল এ খানের খোঁজে পাকিস্তানী সেনা রা আমাদের বাড়ি আক্রমন করে, লুঠতরাজ চালায়। আমার বড়ো ভাইদের বেয়নেটের খোঁচায় রক্তাক্ত করেছে পাকি সেনারা। আমার দাদা তখন মৃত্যুশয্যায়। তিনি তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তান কামাল কে আর দেখতে পান নি। আমাদের বাপ্পু ডা. কামাল এ খান ও তাঁর পিতাকে শেষ দেখা দেখতে পান নি! আমার মা নূরজাহান খান তাঁর জীবন কমিউনিস্ট পার্টি, মহিলা পরিষদ আর ছাত্র ইউনিয়নের জন্যে উৎসর্গ করেছেন, এখনো পার্টির যে কোন সংকটে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। তার সাক্ষী কেন্দ্রীয় নেতা দের অনেকেই, যদিও জানি, তাঁদের কেউ কেউ স্বীকার না ও করতে পারেন। তিনি এই পোস্ট পড়লে আমাকে তিরস্কার করবেন, তাঁর আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করছি বলে।এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস যে আমি ধারণ করি! আর তাই গর্বের সাথে উল্লেখ করি, যেন পরবর্তী প্রজন্ম কখনো ভুলে না যায় এমন নিঃস্বার্থ ত্যাগী মানুষদের অবদান যেন ধুলায় না লুটাই!
দেশের আরো অনেক পরিবারের মতো আমাদের পরিবারের ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মাতৃভূমি এবং প্রিয় কমিউনিস্ট পার্টির জন্যে।
তাই বলে এই পরিবারের কেউ কখনো পার্টি থেকে ন্যূনতম সুবিধা নিয়েছে- এমন কখনো হয় নি। শুধু সেবা দিয়ে গেছেন প্রত্যেকে। নীরবে, গোপনে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাঁরা।
আর তাই পার্টির মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং ক্ষতিকর অবস্থানের বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই বলার আছে! সেই সৎসাহস আমি ধারণ করি!
তার জ্বলন্ত সাক্ষী মতিয়া চৌধুরী, কমরেড তপন দত্ত, কমরেড অশোক সাহা, কমরেড আহসানউল্লাহ চৌধুরী নিজে এবং তাঁর লেখা।যে লেখায় কমরেড আহসানউল্লাহ চৌধুরী সাইফুদ্দিন খানকে ষাটের দশকের কমিউনিস্ট পার্টির বৃহত্তর চট্টগ্রামের 'পিলার ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাবা। তাঁর কৈশোর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত সেই বীরোচিত আত্মত্যাগের গৌরব এবং নির্যাতনের ক্ষত তিনি বহন করে গেছেন। এসব তুলে ধরার কারণ, ইতিহাসের যারা জ্বলন্ত সাক্ষী তাঁদের দ্বারস্থ হওয়া এবং ইতিহাস যেন কখনো বিকৃত না হয়, সে ব্যাপারে বাম নেতৃত্ব কে সতর্ক করা।
এই ইতিহাস বিকৃতকারীদের নেতা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কর্মীর আরাধ্য পুরুষ, আমার বাবা মা'র কন্ঠে উচ্চারিত 'বড়োভাই' কমরেড মণি সিংহকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছিলো। এই ইতিহাস উল্লেখ করেছিলেন কমরেড শেখর দত্ত তাঁর একটি কলামে।
কখনো যেন না ভুলে যাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে সাইফুদ্দিন খান, গোলাম আরিফ টিপুর মতো লাখো কোটি দেশপ্রেমিক মানুষের রক্তে এবং আত্মদানে আমরা পেয়েছি জাতীয় পতাকা এবং স্বাধীন মাতৃভূমি।
লাখো নেতা কর্মীর আত্মদানের গৌরবে ৬০ বছরের বেশি পথ এগিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন! তাঁদের প্রতি ও এই বিবৃতি চরম অবমাননা।
আওয়ামী লীগের সমর্থন বা বিরোধিতা ভিন্ন বিষয়। তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে মেলানো হবে কেন?? সেটা কোন সুস্থ রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দর্শন হতে পারে না- এটুকু বোধ কি বর্তমান নেতৃত্বের নেই??
ঢাবি শিক্ষক বিএনপি নেতা- একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের পত্রিকা ইনকিলাব এবং জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখাতে বিএনপি নেতা মোরশেদ তার নেতা জিয়াকে 'মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে 'সপরিবারে ভারতে পলায়নকারী ' হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং যায় যায় দিন পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে 'জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিথ্যের চাষের অংশ হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন মোর্শেদ হাসান খান।
২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, 'আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে(?) চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও(?)। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে 'ত্রাতারূপে'(?) আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। "দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত"(??) এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। "
স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান লেখেন, 'দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে 'বাক-স্বাধীনতা' বলতে কিছুই ছিল না। '
একইভাবে ২০১৬ সালের ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘স্মৃতিময় জিয়া’ শিরোনামে এক লেখায়ও মোর্শেদ হাসান খান একই ধরনের বক্তব্য লিখেন।
তার বক্তব্য কি মিথ্যার বেসাতি নয়?? ষড়যন্ত্র মূলক নয়??
তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিল ছাত্রলীগ।
কিন্তু আমার প্রশ্ন,ছাত্রলীগ একা কেন প্রতিবাদ করবে?
এই দাবি কি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালীর নয়?
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অন্যায়, অপরাধ কখনো সমর্থনযোগ্য নয়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সকল প্রগতিশীল শক্তি মাঠে নামবেন না কেন?
জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামের কলামে ইতিহাসবিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।
ছাত্র ইউনিয়ন কেন মোর্শেদের লেখার প্রতিবাদ করে নি??

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। তাদের সাথে একাত্ম ছাত্র ইউনিয়ন ও!!

আজ ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সংগঠনের বিবৃতি প্রথম আলো, এনটিভি অনলাইন সহ অনেক মিডিয়া ছাপালো!

ভয়ঙ্কর এই ইতিহাস বিকৃতিকারীকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের দাবি করছে আমার তিন প্রজন্মের দায়িত্বশীল ভুমিকায় সমৃদ্ধ প্রাণের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ??

হায় রে রাজনীতির দুরাচার!!

কেন বাম নেতা কর্মীরা একাত্তরের ঘাতক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পুনর্বাসনকারী ঘাতক জিয়ার রাজনীতি লালন করবে??

এই রাজনীতি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তো নয়ই, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থনে লালিত।
ছাত্র ইউনিয়নের এই বিবৃতি দেশমাতৃকার প্রতি কতো বড়ো অসম্মান - সেই বোধ ও কি তাদের বিলুপ্ত??
ধিক্কার জানাই এমন বিএনপিপ্রেমী নেতৃত্বকে!

একে কখনো মুক্তচিন্তা বা freedom of speech বলে না। তাহলে তো পৃথিবীকে কোন অপরাধই নেই!
অপরাধীকে সমর্থন freedom of Speech?? হতে পারে না কখনো!
ইতিহাস বিকৃতিকারীকে সমর্থন করে ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করলো ছাত্র ইউনিয়ন।
রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরশাসক এবং ঘাতক জিয়া বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করেছে খালেদ মোশাররফ সহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে! সেসব ভয়াবহ ইতিহাস কি একক ভাবে শুধু আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে?
সেসব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব কি বাম দলগুলোর নয়??
জিয়ার ষড়যন্ত্রে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা যদি তর্কের খাতিরে বাদ ও দিই, জিয়ার ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কারাগারে জিয়ার পেটোয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে বর্বরভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের অসহায় পরিবার গুলোর হিসাব কখনো নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন??
খালেদার শাসনামলে জামাত বিএনপির বর্বর নির্যাতনে নিহতদের কতোটা খবর নেন তারা? কখনো প্রতিবাদ করেছেন??
বরং জিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধের 'মহানায়ক' সাজানোর ষড়যন্ত্র কে সমর্থন দিচ্ছে!!
বলিহারি এসব নষ্ট রাজনীতির!! দেশকে ভালোবেসে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরুন আপনারা। গঠনমূলক প্রতিবাদে গর্জে উঠুন।
ইতিহাস বিকৃতকারীর প্রচলিত আইনে সাজা দাবি না করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করবেন কেন?? কোন্ উদ্দেশ্যে??
এই ছাত্র ইউনিয়নের জন্য আমার ছাত্রজীবন আমি উৎসর্গ করি নি।
এবং এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বকে আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে মনে করি না!
ধিক্কার জানাই কোন 'প্রগতিশীল শক্তি'র এমন সিদ্ধান্তের!!
একই সাথে এমন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ দাবি করছি!!
সুমি খান, সকাল ১১টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 আওয়ামী লীগের সমর্থন বা বিরোধিতা ভিন্ন বিষয়। তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কে মেলানো হবে কেন?? সেটা কোন সুস্থ রাজনীতি বা কোন রাজনৈতিক দর্শন হতে পারে না- এটুকু বোধ কি বর্তমান নেতৃত্বের নেই??

 ঢাবি শিক্ষক  বিএনপি নেতা- একাত্তরের ঘাতক মওলানা মান্নানের পত্রিকা ইনকিলাব এবং জামাতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে প্রকাশিত লেখাতে বিএনপি নেতা মোরশেদ  তার নেতা জিয়াকে 'মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে 'সপরিবারে ভারতে পলায়নকারী ' হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত এবং যায় যায় দিন পত্রিকায় ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ শিরোনামে 'জিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে মিথ্যের চাষের অংশ হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরবোজ্জ্বল  ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়ে ভয়াবহ ইতিহাস বিকৃতি করেছেন মোর্শেদ হাসান খান। 

২০১৮ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘জ্যোতির্ময় জিয়া’ নিবন্ধে অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান লেখেন, 'আওয়ামী নেতাদের বেশিরভাগই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার-পরিজনসহ ভারতে(?) চলে গেলেন এ দেশবাসীকে মৃত্যুফাঁদে ফেলে দিয়ে নেতৃত্বহীন অবস্থায়। যাকে ঘিরে এ দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখত সেই শেখ মুজিবুর রহমানও(?)। জাতির এ সংকটকালীন মুহূর্তে 'ত্রাতারূপে'(?) আবির্ভূত হন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান। "দেশপ্রেমের মহানমন্ত্রে উজ্জীবিত"(??) এই টগবগে যুবকের কণ্ঠে ২৬ মার্চ রাতে বজ্রের মতো গর্জে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা। স্বাধীনতার ডাক এসেছিল শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর তার আগে নয়। আমার জানা মতে, তিনি কোনো স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। "

স্বাধীনতার পরের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোর্শেদ হাসান লেখেন, 'দেশবাসী দেখলো শেখ মুজিব একদলীয় বাকশালী শাসনব্যবস্থা চালু করে নিজেই যেন দাঁড়িয়ে গেলেন নিজের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। ১৯৭২ থেকে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশে 'বাক-স্বাধীনতা' বলতে কিছুই ছিল না। '

একইভাবে ২০১৬ সালের ৩০ মে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ‘স্মৃতিময় জিয়া’ শিরোনামে এক লেখায়ও মোর্শেদ হাসান খান একই ধরনের বক্তব্য লিখেন।

তার বক্তব্য কি মিথ্যার বেসাতি নয়?? ষড়যন্ত্র মূলক নয়??

 তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিল ছাত্রলীগ।

কিন্তু আমার প্রশ্ন,ছাত্রলীগ একা কেন প্রতিবাদ করবে?

 এই দাবি কি প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালীর নয়?

 ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অন্যায়, অপরাধ কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। 

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সকল প্রগতিশীল শক্তি মাঠে নামবেন না কেন?

জ্যোতির্ময় জিয়া' শিরোনামের কলামে ইতিহাসবিকৃতির দায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান।

ছাত্র ইউনিয়ন কেন মোর্শেদের লেখার প্রতিবাদ করে নি??

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ কথা লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাবি প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দল। তাদের সাথে একাত্ম ছাত্র ইউনিয়ন ও!!

আজ ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সংগঠনের বিবৃতি প্রথম আলো, এনটিভি অনলাইন সহ অনেক মিডিয়া ছাপালো! 

ভয়ঙ্কর এই ইতিহাস বিকৃতিকারীকে চাকরিতে পুনর্নিয়োগের দাবি করছে আমার তিন প্রজন্মের দায়িত্বশীল ভুমিকায় সমৃদ্ধ প্রাণের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ??

হায় রে রাজনীতির দুরাচার!! 

কেন বাম নেতা কর্মীরা একাত্তরের ঘাতক এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের রাষ্ট্রক্ষমতায় পুনর্বাসনকারী ঘাতক জিয়ার রাজনীতি লালন করবে??

এই রাজনীতি কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তো নয়ই, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সমর্থনে লালিত।

 ছাত্র ইউনিয়নের এই বিবৃতি দেশমাতৃকার প্রতি কতো বড়ো অসম্মান - সেই বোধ ও কি তাদের বিলুপ্ত??

ধিক্কার জানাই এমন বিএনপিপ্রেমী নেতৃত্বকে!

  একে কখনো মুক্তচিন্তা বা freedom of speech বলে না। তাহলে তো পৃথিবীকে কোন অপরাধই নেই! 

অপরাধীকে সমর্থন freedom of Speech?? হতে পারে না কখনো!

ইতিহাস বিকৃতিকারীকে সমর্থন করে ইতিহাস বিকৃতিকে সমর্থন করলো ছাত্র ইউনিয়ন। 

রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক স্বৈরশাসক এবং ঘাতক জিয়া বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করেছে খালেদ মোশাররফ সহ  হাজার হাজার  মুক্তিযোদ্ধাকে! সেসব ভয়াবহ ইতিহাস কি একক ভাবে  শুধু আওয়ামী লীগ তুলে ধরবে? 

সেসব পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব  কি বাম দলগুলোর নয়??

 জিয়ার ষড়যন্ত্রে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের কথা যদি তর্কের খাতিরে বাদ ও দিই, জিয়ার ষড়যন্ত্রে অন্ধকার কারাগারে জিয়ার পেটোয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে বর্বরভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা,  অসংখ্য  মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য এবং তাদের অসহায় পরিবার গুলোর হিসাব কখনো নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন??

খালেদার শাসনামলে জামাত বিএনপির বর্বর নির্যাতনে নিহতদের কতোটা খবর নেন তারা? কখনো প্রতিবাদ করেছেন??

 বরং জিয়াকে মহান মুক্তিযুদ্ধের 'মহানায়ক' সাজানোর ষড়যন্ত্র কে সমর্থন দিচ্ছে!! 

বলিহারি এসব নষ্ট রাজনীতির!! দেশকে ভালোবেসে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরুন আপনারা। গঠনমূলক প্রতিবাদে গর্জে উঠুন। 

ইতিহাস বিকৃতকারীর  প্রচলিত আইনে সাজা দাবি না করে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে পুনর্বহালের মাধ্যমে মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করবেন কেন?? কোন্ উদ্দেশ্যে??  

এই ছাত্র ইউনিয়নের জন্য আমার ছাত্রজীবন আমি উৎসর্গ করি নি। 

এবং এই ছাত্র ইউনিয়ন নেতৃত্বকে  আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি বলে মনে করি না!

 ধিক্কার জানাই কোন 'প্রগতিশীল শক্তি'র এমন সিদ্ধান্তের!!

    একই সাথে এমন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নেতৃত্বের অপসারণ দাবি করছি!!

    সুমি খান,  সকাল ১১টা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০  

Friday, September 4, 2020

রান্নার সিক্রেট ০০১

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

#  গরম মশলা গুঁড়ো প্রায় সব রান্নাতেই ব্যবহার করি আমরা।গুঁড়ো না দিয়ে গোটা মশলা কিনে বাড়িতে পিষে নিলে রান্নার স্বাদ সবচেয়ে ভাল হয়। তবে বড় এলাচের পরিমাণ কম হলেই ভাল। এর স্বাদ তীব্র হওয়ায় তা বাকি মশলার গন্ধকে ঢেকে দেয়।

# ডাল বা ঝোলে যদি নুন বেশি পড়ে যায়- আটা মেখে ছোট লেচি কেটে তা ডাল বা ঝোলে দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পরে আটার লেচি গুলো তুলে ফেলে দিন। এতে অতিরিক্ত নোনতা ভাব কেটে যাবে।

#সর্ষের মধ্যে সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম বেশি পরিমাণে থাকায় হাঁপানি, আর্থ্রাইটিস ও হাই কোলেস্টেরলের রোগীদের বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।পাটায় পেষা সর্ষের স্বাদই আলাদা। তবে ব্লেন্ডারে সর্ষে বাটতে হলে আগে সামান্য বরফজলে সরষে ভিজিয়ে তারপর বেটে নিন। এতে স্বাদ বাড়বে।

# বেগুন ভাজার সময়ে তেল টেনে নেয় অতিরিক্ত। কিন্তু নুন, হলুদ,মরিচ বা অন্যান্য মশলার সঙ্গে যদি সামান্য আটা ছড়িয়ে বেগুনে মিশিয়ে নেন, তা হলে তেল টানবে কম।

# রান্না করার সময়ে হঠাৎ হলুদ গুঁড়ো বেশি পড়ে গেলে - মশলার কাঁচা গন্ধ লাগে। এমন হলে লোহার একটা খুন্তি গ্যাসের আগুনে গরম করে নিন। এর পরে সেই খুন্তি দিয়ে রান্না নেড়ে নিলে অতিরিক্ত হলুদ লোহার খুন্তি শুষে নেয়। 

#পটল ভাজতে গেলে তেল কালো হয়ে যায় যদি- তেলে পটল ছেড়ে কড়াই বা প্যান ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ভাজতে হবে। এতে তেল কালো হবে না আর।

#অনেক সময়েই কুমড়ো, লাউ, চালকুমড়োর খোসা আমরা ফেলে দিই। কিন্তু সামান্য ঘি গরম করে কালোজিরে, আদা, কাঁচা মরিচের ফোড়ন দিয়ে খোসা ভেজে নিতে পারেন। রুটি, এমনকী মুড়ির সঙ্গেও এই খোসা ভাজা খেতে লাগে অপূর্ব।

অন্যদৃষ্টি

Saturday, March 14, 2020

সাংবাদিক অারিফের মুক্তি চাই- কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানার শাস্তি চাই - সুমি খান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশে জনবান্ধব, মানবিক, দেশপ্রেমিক এবং নারীবান্ধব রাষ্ট্রনায়ক অার কখনো অাসে নি কেউ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই নারীর ক্ষমতায়নে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন। এদেশে নারীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদ পাচ্ছেন - অনেকেই মানতে পারেন নি।দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাই তিনি স্রোতের বিপরীতে প্রভূত কাজ করে গেছেন, এখনো করছেন। এই প্রজন্মের অনেক নারী তাদের গ্রামে প্রথম শিক্ষিত নারী। জেলা প্রশাসক বা ডিসি যে কোন জেলার জন্য ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সেই ক্ষমতার অসদ্ব্যবহার যারা করছেন,তার সংখ্যা প্রচুর। কিন্তু সীমাহীন অসততা অার ক্ষমতার অপব্যবহার যে কারো পতন ডেকে অানে। নারীও তার উর্ধে নয়,সেটা হয়তো ভুলে গেছেন কুড়িগ্রামের ডিসি মোছা. সুলতানা পারভীন। ৪০ বছরের প্রাচীন পুকুর সংস্কার কাজ শুরু করেই নিজের নামে নামকরণ করলেন!
এ ধরণের যারা ক্ষমতায়ন বা পদ্য়নের সুযোগ পেয়ে তার অপব্যবহার করছেন,তাদের চরম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।অামলা বলে নিশ্চয়ই তারা অাইনের অপব্যবহার করতে পারেন না;তারা নিজেরা ও নিশ্চয়ই কোনভাবেই অাইনের উর্ধে নন!-একের পর এক অন্যায় করে যাবেন, সংবাদকর্মীরা তাদের দায়িত্বপালন করবেন না? দায়িত্ব পালন করলেই তাকে একের পর এক হুমকি দিতে হবে? সন্ত্রাসী অার জেলা প্রশাসকের মধ্যে তফাত থাকলো কোথায়?
পুলিশ, অামলা বা কোন সরকারী কর্মকর্তা কর্মসূত্রে কোন পদে থাকলে, তার নামে পার্ক, পুকুর করতে হবে? ধিক্কার জানাই এ ধরণের নিন্দনীয় অাত্মপ্রচারকারী জেলাপ্রশাসক বা অামলাদের।এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরণের গর্হিত কাজ থামানো যাবে না। তারামণ বিবি বা অগ্নিযুগের কোন বিপ্লবী বা দেশের সমাজের কৃতি ব্যক্তিদের নামে করা হোক সেই সরোবরের নামকরণ।
পুকুরের নাম নিজের নামে করা যায়, সেই খবর ছাপানোর অপরাধে'(?) মধ্য রাতে সাংবাদিককে মারতে মারতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ড্রাগের মিথ্যা মামলা সাজিয়ে মোবাইল কোর্টে এক বছরের জেল দেয়া হলো কেন?
সাংবাদিক আরিফের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা এবং পেশাগত দায়িত্ব পালন কি 'অপরাধ'? সাংবাদিক অারিফ, তার স্ত্রী এবং শিশু সন্তান দের যে মানসিক চাপ তৈরি করা হলো,তার দায় ডিসি সুলতানা এবং তার ঠ্যাঙারে বাহিনীকে নিতে হবে।তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কুড়িগ্রাম শহরে সরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের অনুদানে পুকুর সংস্কার করে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনের নাম অনুসারে ‘সুলতানা সরোবর’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বইছে সমালোচনার ঝড়। জেলার সচেতন মহলের প্রশ্ন, সরকারি অর্থ ব্যয়ে পুকুর সংস্কার করে জেলা প্রশাসকের নাম কেন দেওয়া হবে?

কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্প থেকে এই পুকুর সংস্কারের জন্য চাল ও সোলার স্ট্রিট লাইট বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. মিজানুর রহমান।

কুড়িগ্রাম শহরের ‘নিউ টাউন পার্ক’ নামে পরিচিত এই পুকুরটি ৪০ বছরের পুরনো। সংবাদে প্রকাশ, ১৯৭৮ সালে কুড়িগ্রাম শহরে এই পুকুর খনন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘নিউ টাউন পার্ক’। পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হতো। পাশাপাশি এর পাড়ে গড়ে ওঠে নার্সারি। সাবেক জেলা প্রশাসকের পরিকল্পনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন পুকুরটি সংস্কার করে এর পাড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন পুকুরটির সংস্কার করেন। পুকুরটি পুনঃখনন করে চারপাশে ওয়াকওয়ে তৈরি করে স্থাপন করা হয় সোলার স্ট্রিট ল্যাম্প।
হঠাৎ ১৪ মে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার ছবিসহ পুকুরের নতুন নাম দেন সুলতানা সরোবর। সেই পোস্ট দেখার পর জেলাজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
মো. মাইদুল ইসলাম মাহিন তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘জনগণের টাকায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিজের নামে পুকুরের নাম দিয়েছেন, অথচ ডিসি কোয়ার্টারের পেছনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী কছিম উদ্দীনের জমি অধিগ্রহণ করে তাকে ভূমিহীন করা হয়েছে। পুকুরটি কছিম উদ্দীনের নামে বা সৈয়দ শামসুল হকের নামে কিংবা তারামন বিবির নামে হতে পারতো। এতে ডিসির সুনাম বাড়তো।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দশম সংসদের কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার অনুকূলে টিআর কাবিখা’র বরাদ্দ অর্থ থেকে পুকুরটি সংস্কার কাজ করা হয়। এতে প্রায় ১০৪ দশমিক ৫৫৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২৫টি সোলার স্ট্রিট ল্যাম্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য স্থান থেকে ৩১টি সোলার স্ট্রিট ল্যাম্পের বরাদ্দ কেটে এই পুকুর পাড়ে স্থাপন করা হয়। এছাড়াও জেলার কিছু ব্যক্তি অনুদানও দেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদ দুলাল বোস বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকায় কোনও সংস্কার কাজ করে জেলা প্রশাসক নিজের নামে নামকরণ করতে পারেন না। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে জেলায় এসেছেন।’

রেল, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সভাপতি নাহিদ হাসান বলেন, ‘এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। জনগণের টাকায় পুকুর সংস্কার হওয়ায় জেলার কোনও কৃতী সন্তানের নামেই এটির নামকরণ করা উচিত।’

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এমন অন্যায় মানতে পারেন নি স্থানীয় তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ।তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদী তরুণেরা।অভিবাদন তাদের।জয় হোক তারুণ্যের! 
ন্যায় বিচার চাই অামরা৷ সাংবাদিক অারিফুল ইসলামের মুক্তি চাই, ডিসি সুলতানা এবং তার ঠ্যাঙাড়ে  বাহিনীর শাস্তি চাই।
sumikhan29bdj@gmail. com 

Thursday, October 10, 2019

আবরারদের কেউ হনন করে কেউ হননকারী - জ শ তিমির


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বলে যাওয়া কথাগুলি নিয়ে ভাবছিলাম   'দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, দেশ চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয়, তবেই দেশ প্রকাশিত। সুজলা, সুফলা মলয়শীতলা ভূমির কথা যতই উচ্চকণ্ঠে রটান ততই জবাবদিহির দায় বাড়বে, প্রশ্ন উঠবে প্রাকৃতিক দেশ তো উপাদানমাত্র, তা নিয়ে মানবিক সম্পদ কতটুকু গড়ে তোলা হল। মানুষের হাতে দেশের জল যদি শুকিয়ে যায়, ফল যদি যায় মরে, মলয়জ যদি বিষিয়ে ওঠে মরিবীজে, শস্যের জমি যদি হয় বন্ধ্যা, তবে কাব্য-কথায় দেশের লজ্জা চাপা পড়বে না। দেশ মাটিতে তৈরী নয়, দেশ মানুষে তৈরী’' ।

 বাংলাদেশ তথা রাজধানীর শ্রেষ্ঠ মানুষ গড়ার অন্যতম কেন্দ্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বুয়েটে  একটি টর্চার সেল আছে, এই টর্চার সেলে কিভাবে আবরার ফাহাদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল সেটির  বিবরণী পত্রিকাতে পড়তে পড়তে খুন হয়ে যাওয়া ছেলেটির ফেসবুক আইডিতে গেলাম - আবরার সেপ্টেম্বর মাসে ইন্ট্রো অর্থাৎ নিজের সম্পর্কে ভূমিকাতে লিখেছিলো - 'অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে ''।

কয়েকটি সংবাদপত্রে এসেছে আবরারের পড়ার টেবিলে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পাওয়া গেছে, কয়েকটি স্ট্যাটাস নজরে পড়লো, একাত্তরে বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও কিন্তু বিবিসি মুক্তিবাহিনীর খবর প্রচার করে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর অপপ্রচার আর তাদের মিডিয়াতে শান্ত কাশ্মীরের যে খবর প্রচার করছে একাত্তরে পাকমিডিয়াও একই কাজ করেছিল'আর কয়েকটি পোস্টে দেখা গেলো ভারতকে পানি, গ্যাস ও সমুদ্রবন্দর দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে  তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, নিজস্ব মতামত।

আমাদের সাথে তার সে মতামত বা দৃষ্টিভঙ্গি নাও মিলতে পারে, আবার মিলতেও পারে ।
কারো মতামত কারো সাথে না মিললে তাকে হত্যা বা নির্যাতন করার কোনো অধিকার বা ক্ষমতা ছাত্রলীগ বা কাউকেই কেউ দেয়নি। কথিত, যে, নিহত ফাহাদের ফেসবুক একাউন্ট ও ইনবক্স ঘেঁটে তার সঙ্গে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া গেছে বলে মনে করেছিল ফাহাদ হত্যার সাথে জড়িত বলে সন্দেহভাজনরা ।
জামাত শিবির বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত করা হয়নি, জামাত  শিবিরের অনেক নেতা কর্মী সদস্যরা  বর্তমান সরকারি দলটিতে যোগদান করেছে, এমন খবর পত্রিকাতে প্রচুর পাওয়া যাবে, কুখ্যাত  যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী দণ্ডিত অপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে  নিবাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, এই বাস্তবের প্রেক্ষাপটে কোন স্পর্ধাতে ঘন্টার পর ঘন্টা অত্যাচার করে  একজন ছাত্রকে হত্যা করলো আরো কয়েকজন ছাত্র ?

এই ছাত্র রাজনীতি আমাদের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৮ এর শিক্ষানীতি, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান ও  মুক্তিযুদ্ধ, নব্বই এর স্বৈরাচার  বিরোধী গণ আন্দোলন - একের পর এক মাইল ফলক  দিয়েছে স্বর্ণালী ইতিহাসের নেতৃত্বদানকারী নেতা নেত্রী, উত্তরাধিকার নেয়ার সন্তান সন্ততি কেউ কি কোথাও নেই ?

পাকিস্তান আমলে ভারত  বিদ্বেষী রাজনীতির সমর্থনে ছিল এদেশের ২০ শতাংশ মানুষ, বর্তমান বাংলাদেশে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশ, ভারত ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক আজ সেখানে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী  তথা মুসলিমদের নানা ভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে, তবে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর এখনো পাল্লা ভারী। 

বাংলাদেশে এখন ভারতবিদ্বেষী রাজনীতির সমর্থকের পাল্লা ভারী, বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে  মানুষ যদি হত্যা করতে হয় তাহলে তো বর্তমান বাংলাদেশের আশি ভাগ জনসংখ্যা হাপিশ করার মতো গণ হত্যা যজ্ঞে নামতে হবে, সেটা কি সভ্য বা সুস্থ কোনো চিন্তা চেতনা ? এই চিন্তা বা কর্ম একটি মারাত্মক অপরাধ !

তবে, বিচারহীনতা আমাদের সমাজকে বেপরোয়া করে দিয়েছে, আমরা মানুষের জীবন দিতে পারিনা, মানুষকে দুবেলা খেতে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা ভাবিনা, মানুষের দায়িত্ব নেয়ার কথা ভাবিনা, মানুষের উপকার করার কথা ভাবিনা, কিন্তু স্বার্থে লাগলে খুন করতে,  জীবন কেড়ে নিতে, পিছপা হয়না, প্রয়োজনে জোট বাঁধি ।

ভিন্ন মতের মানুষ হত্যা বাংলাদেশে খুব স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে , দেশের মানুষ ভিন্ন মতের  মানুষ হত্যা কখন স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে অথবা কখন যে পারেনা, সেটা কি বোঝা সহজ !একটু ফ্ল্যাশব্যাক -

১৯৭৭ সালে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্র শিবির নামে জামাত ই ইসলামীর ছাত্র সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। হাতুড়ি, রড, ইট, মুগুর দিয়ে হাড় গুঁড়ো করে দেয়া, রিকশার স্পোক কানের ভেতর ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মগজ বের করে আনা, হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলা, মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলা, কব্জি কেটে নেয়া, কিরিচ, ছোরা, কুড়াল ব্যবহার করে হত্যা করার মতো নৃশংসতা এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কেবল শিবিরের নামের সাথেই যুক্ত ছিল । ৮০ র দশকে ভিন্ন মতের ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম হত্যার কাফেলা  শুরু করে শিবির, মাত্র কয়েকটি উদাহরণ -

১৯৮১: শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।   ১৯৮৪: চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে শিবিরেরকর্মী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা  শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে।  ১৯৮৬ :শিবির ডান হাতের কবজি কেটে নেয় জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা আবদুল হামিদের। পরবর্তীতে ঐ কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।   ১৯৮৮: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মেইন হোস্টেলের সামনে, কলেজের প্রিন্সিপাল ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, ও শত শত শিক্ষাথীদের সামনে ছাত্রমৈত্রী নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা। ১৯৮৮:  চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তার নিজ বাড়ীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। 

১৯৮৮:  সিলেটে শিবির ক্যাডাররা মুনীর, জুয়েল ও তপনকে বর্বরভাবে হত্যা করে। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯০: ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারম্নককে শিবিরের ক্যাডাররা জবাই করে।  ১৯৯২ : শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জাসদের মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাসদ নেতা মুকিম মারাত্মক আহত হন এবং ২৪ জুন তিনি মারা যান।  ১৯৯৩: বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কমীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী ক্রিকেটার জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।  ১৯৯৩: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে ছাত্রদল ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রদল নেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র নতুন এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপন সহ ৫ জন ছাত্র নিহত হয়।

১৯৯৪: পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির কমীরা।১৯৯৫ : শিবির কমীরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ্ববতী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার আগে বর্বর শিবির ক্যাডাররা তার হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়।১৯৯৬ : জাসাস রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং

১৯৯৭: চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করার পর পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।
১৯৯৮:  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয় তলাপত্রকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। ২০০০: চট্টগ্রামের বদ্দরহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১৯৯৯: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এনামুল হকের ছেলে ও ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মুছাকে শিবিরকমীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।২০০৪: অধ্যাপক মোঃ ইউনুসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাবার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।এলাকাবাসী অনেকেরই মতামত হচ্ছে ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররাই তাকে হত্যা করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্র শিবির তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।২০০৪: বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা হত্যা করে।২০০৬ : বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং রাবি ছাত্র শিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীন সহ আরো দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে অতকিতে হামলা চালিয়ে রাবি’র ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে।   ২০১০: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।

বাংলাদেশে প্রথম বড় রকমের বোমা হামলা হয়েছিল বিএনপি আমলে ১৯৯৯ সালের ৭ই মার্চ৷ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে চালানো বোমা হামলায় সেদিন ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছিলেন ৷ সে বছরেরই ৮ই অক্টোবরে খুলনার নিরালা আবাসিক এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় সাত জনকে, আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩০ জন৷ তারপর ২০০১ সালে রমনা বটমূলে নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বোমা হামলায় প্রাণ হারান ১০ জন, এখনো শরীরে হামলার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন শতাধিক মানুষ ৷ ২০০৫ সালে  দেশের ৬৩টি জেলার পাঁচশ'রও বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ৷

৮০ র দশকে ভিন্ন মতের ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম হত্যার কাফেলা  শুরু করে ইসলামী ছাত্র শিবির, পরবর্তীতে শুধু কওমি মাদ্রাসাগুলোই  নয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও জঙ্গিবাদের কারখানা হিসাবে চিহ্নত হতে থাকে, আনসারুল্লাহ, হিজবুত তাহেরি ও হেফাজতি ইসলামী সহ নানা নামে নানা তরিকতে  ইসলামী উগ্রপন্থী ও জঙ্গিরা ভিন্ন মতের ভিন্ন ধর্মের  মানুষ কোপানো ও হত্যালীলা শুরু করে ফতোয়া দিয়ে তালিকা পাঠিয়ে ৷

২০১৩ সালে  রাজীব হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।অভিজিৎ রায়কে হত্যার এক মাসেরও কম সময়ের মাথায় ২০১৫ সালের ৩০শে মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।২০১৫ সালের ১২ মে ঢাকার বাইরে সিলেটে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের হামলায় খুন হন ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাশ, সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন হওয়ার পর তিন মাস না পেরোতেই ঢাকায় আরেক ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টেবর রাজধানীর লালমাটিয়ায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ দুই জনকে কুপিয়ে আহত করা হয় । এর চার ঘণ্টার মাথায় শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট সাভারে ব্লগার আশরাফুল আলমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  একই কায়দায় ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ২০১৬ ২৬ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে স্লোগান দিতে দিতে দিনের আলোয় পৰ ছেড়ে বেরিয়ে যায় হত্যাকারীর দল ।

এর দুই দিন আগে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১ ৬ তে, এই ফেসবুকে লেখার জন্যেই, রাজধানীতে খুন হয়েছিলেন  অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদ, হত্যা করা হয়েছে শাহজাহান  বাচ্চুকে  ।  প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডেই নিহতদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, অথবা মোটর সাইকেল যোগে দিনের আলোয় এসে  হত্যা করা হয় এবং এখনো কোনোটার বিচার শুরু অথবা শেষ হয়নি ।

বেশ ক বছর হলো আওয়ামী লীগ পুশব্যাক দেখছি বুক ফুলিয়ে  মুসলিম আওয়ামী লীগের দিকে ৷ কারণ তারা দেখেছে,  ধর্ম দিয়ে রাজনীতি খেতো ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় উপমহাদেশ, খেয়েছে পাকিস্তান, স্বাধীন বাংলাদেশের পঁচাত্তর পরবর্তী ফর্মুলা গেছে জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার হাত ধরে ৷

আর তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাহাত্তরের সংবিধান এবং কওমি দোয়া নিয়ে ইসলামিক বাংলাদেশের সোজা পথে আগে বেড়েছে বর্তমান ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক দল  ৷

অথচ, দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলন যা  মৌলবাদ-কূপমণ্ডুকতা থেকে উত্তরণের উৎকৃষ্ট উপায়, আর প্রগতিশীল এবং বামপন্থি নামধারী গোষ্ঠী শুয়োরের  মতো ঘোৎ ঘোৎ আওয়াজ তোলার শক্তি নিঃশেষ করে ফেলেছে বিধায় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সমাজের সর্বস্তরে ধর্মান্ধতা আর ধর্মীয় উগ্রতা প্রতিষ্ঠিত করতে কারো কোনো বেগ পেতে হয়নি  ৷ ক্ষমতাসীন দলে জায়গা হয়েছে জামাত শিবির বিএনপি মাহে কলেমা দিব্যি করে  পেশা ছেড়ে দেয়া জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের ৷

একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনি ও পরিকল্পনাদাতা নেতৃবৃন্দ পার পাননি, ২১ শে আগস্টের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য  ৷  আবার হাজারো  রাজনৈতিক গুম খুন জোড়া খুন, ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার এখনো হয়নি ৷  দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তারেক রহমানের হাওয়া ভবনও টেঁসে গেছে, তার স্থলাভিষিক্ত  হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বহু কোটিপতি নেতা পাতি নেতাদের ভবন ৷  রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে অবৈধ ব্যবসা, দুর্নীতি, হত্যা, জুলুম  আর জবরদখলে বঙ্গবন্ধুর সেই চাটার দল এখন কোটি গুনে স্ফীত আর শক্তিশালী ৷

জনগণ ই সকল ক্ষমতার উৎস, যে ভুলেছে সে ডুবেছে,  আর জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী হলো তরুণ প্রজন্ম যাদেরকে হত্যার লক্ষ্য ও হত্যাকারী হিসাবে নয়, আমাদের জীয়ন কাঠি হিসাবে আগলে রাখতে হবে আমাদের সামনের দিনের জন্যে নাহলে আলো জ্বালাবার কেউ থাকবে না !
১০ অক্টো, ২০১৯ 

Wednesday, October 2, 2019

মা দিবসে অামার মা

মা অামার  অকপট, অকৃত্রিম অশেষ ভালোবাসা, মানবতার সেবা আর প্রাণ খোলা হাসির প্রাণপ্রাচুর্যে ভরিয়ে রাখেন চারপাশের জগৎ সংসার! অথচ নিজে কখনো জানতেই পারলেন না ‘মায়ের কোল’ কাকে বলে-;মায়ের অাদর ‘ কাকে বলে, জানলেন না। মায়ের ছোঁয়া ই পেলেন না কখনো আমার মা !  অাম্মুর জন্মের তিন দিনের দিনই  অাম্মুর জন্মদাত্রী মা জাহান অারা বেগম টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রয়াত হন।জন্মানোর পর পর ই আমার মা  নূরজাহান খান মা হারানোর গভীরতম শূন্যতায় ডুবে গেলেও যেন অন্য কাউকে  সেই বেদনা পেতে না হয়, সেই প্রচেষ্টা করে যান চিরকাল। যে কারণে আম্মুর অাশে পাশে  নানান জাতি, বর্ণ গোত্রের অনেক মানুষ তাঁর অাদরে স্নেহে ধন্য শত শত সন্তান -আকুল  হয়ে তাঁকে ‘মা’ বলেই ডাকেন ! অামি অাম্মুর অযোগ্য কন্যা! অাজ মা দিবসে অাম্মু অামাকে  প্রাণ ভরে অাশীর্বাদ করে  বললেন, "তুমি অামার মা, অামি যেমন তোমার মা...অনেক ভালো থেকো.."!  অাম্মু, এতো ভালো কেন, তৃমি? অামি যেন তোমার সত্যিকার মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারি।তুমি শতায়ু হয়ে এমন করেই পূর্ণতায় ভরিয়ে রাখো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে!

আমার গহনের মাতৃত্বের পূর্ণতার ২০ বছর

মাতৃত্বের পূর্ণতা হয়তো একেই বলে। মায়েদের খুব বেশি কিছু অথবা কিছুই চাওয়ার থাকে না।  অনেক কষ্টের অশ্রুধারায় অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমার গহন আজ ২০ বছর পূর্ণ করলো। Full Scholarship নিয়ে IUB তে ভর্তি হবে।  ১৯৮৭ সাল থেকে লেখালিখি করি। 'নারী' হবার দোষে সংবাদপত্রে চাকরি হলোনা। ফ্রিল্যান্স কাজ করে অনেক কাভার স্টোরি করলাম।  অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করলাম। ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের সাড়া জাগানো ইংরেজী মাধ্যম স্কুল CGS য়ে যখন চাকরি শুরু  করি purely breastfeeder baby গহন তখন ৭ মাস বয়স।  সেই সাতসকাল থেকে দুপুর,  মা ছেলে দু'জনেরই অনেক কষ্ট হতো। ওর জন্য ছুটে অাসতে হতো। চাকরি ছেড়েই দিলাম একদিন। বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে ভালো রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগে এতোটুকু দ্বিধা করিনি কখনো। ১৯৯৭ য়ের ৩০ নভেম্বর থেকে ১৯৯৯ য়ের ডিসেম্বর এক রাত ও ঘুমাইনি।  ২ বছর যতো কষ্টই হোক, অামার সন্তানদের কখনো ফ্যাশান বা বিলাসিতা দেখাতে  বা নিজের ঘুম নিশ্চিন্ত করার জন্যে বেবিকট য়ে রাখিনি, ফিডার ( Feeder)  দেইনি। অামাদের অভিভাবক অামাদের বাপ্পু ডাক্তার কামাল এ খান অামাদের শৈশব থেকেই বাচ্চাদের ওয়াকারে হাঁটানো শিখানো বিপদ্জজনক বলে মানা করেছিলেন অামার মা'কে। মা তাই অামাদের ওয়াকারে হাঁটানো শেখান নি। শিশুর কোমরের হাড়ে চাপ পড়ে বলে অামিও চারপাশের মানুষের মতো 'দেখানোপনা' র স্রোতে ভেসে ওয়াকার (Walker)  দিয়ে বাচ্চাদের হাঁটা শিখাইনি।বিছানার পাশ ধরে দাঁড় করাতাম, খেলনা দিচ্ছি দেখিয়ে বিছানার দুইপাশে হাঁটাতাম। বাড়ির বড়োদের হাত ধরে একটু একটু হাঁটতো। রাতে বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছি। কখনো কোন কৃত্রিমতায় অামার বাচ্চাদের বড়ো করিনি। গহনকে নিয়ে একবার চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেছি একলাই। অামার কোলে গহনকে দেখে কার্ডিওলজিস্ট এসসি ধর বললেন, " নিশ্চয়ই ব্রেস্টফিডার বাচ্চা? বাচ্চার মুখ দেখলেই বোঝা যায়।  তুমি  ওর শারীরিক অার মানসিক  ভিত গড়ে দিলে। খুব মেধাবী হবে এই বাচ্চা। অারে, গরুর দুধ তো গরুর বাচ্চার জন্যে, মানুষের বাচ্চা তো মায়ের দুধ খাবে।" ধীমান 'দা (ডা. ধীমান চৌধুরী)  সতর্ক করেছিলেন ৫বছর বয়সের নীচে চিপস, কোক ফান্টা দিলে ব্রেনে এফেক্ট হতে পারে, যা পরে প্রভাব পড়বে। তাই বাচ্চাদের ৮/৯ বছর বয়স পর্যন্ত কোক ফান্টা বা চিপস খেতে দেইনি।  এর পর মেহমান দের দেখে কোক ফান্টা খেতে চাইতো গহন, তাই  একটু পানি মিশিয়ে দিতাম। কয়দিন অাগে পর্যন্তও গহন পানি মিশিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতো। কতো স্মৃতি মনে পড়ছে অাজ! অনেক না বলা রইলো, কিছু বলি অাজ।
জ্যেষ্ঠ সন্তান অতুলনকে  কাজীর দেউড়ি বাসা থেকে রিক্সায় করে ফুলকিতে অানা নেয়ার সময়ে ছোট্ট গহন অামার বুকে ঘুমাতো।  ফুলকির দরজায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের ভেতরে ঢুকাতেন বীরেন'দা। কয়েক বছর পর গহন হাঁটছে, বড়ো হচ্ছে দেখলেন। একদিন বললেন, "এই বাচ্চাটা একদম অাপনার বুকের মাঝেই বড়ো হয়েছে। দেখবেন দিদি, ও কখনো অাপনাকে ছেড়ে যাবেনা। "  অতুলনকে ৪ বছর বয়সে বৃটিশ কাউন্সিলে ভর্তি করলাম YLC course য়ে। ১৯৯৮ সালে ২/ ৩/৪ মাসের গহন কে বৃটিশ কাউন্সিলের তক্তপোষে  শুইয়ে রাখতাম। অতুলনকে শেলফ থেকে বই নামিয়ে চেয়ারে বসে পড়াতাম।  তখন ইঞ্জিনীয়ার্স ইইন্সটিটিউট ভবনে  বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরী।  মাতৃভূমি,  মানবতা,  পেশাদারীত্ব অার সন্তান সমান্তরাল রেখে এই সংসার সমরাঙ্গনে  ঠকেছি অার ঠেকেছি বারবার। তবু তো মাতৃত্ব সবার উপরে। সন্তান প্রতিপালনে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে চায় একজন মা। ২০০৪ সালে জামাত বিএনপি'র সন্ত্রাসীরা হামলা করলো, ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে বাচ্চারা খুব কষ্ট পেলো। অতুলন খুব কাঁদতো,  মুখের সামনে অাসতে পারতো না। গহন ওর মাটির টেরাকোটার ছোট্ট পুতুল গুলো এনে দিতো অামি যেন বিছানায় শুয়ে খেলতে পারি, অামার মমন যেন  ভালো থাকে।  জামাত বিএনপি  সসরকারের পুলিশ গ্রেফতার করলো যেদিন,  গহনের প্রচন্ড জ্বর সেদিন।  ছোট্ট গহন তার মায়ের জন্যে কাঁদতে কাঁদতে পুলিশের জীপের পেছন পেছন ছোট্ট ছোট্ট পায়ে অাস্তে অাস্তে হেঁটে চলে গিয়েছিলো অনেক দূর। প্রতিবেশী  হরিজন পললীর লোকেরা গহনকে নিয়ে পৌছে দিয়েছিলো বাসায়। প্রতিটি সংকটে  অামার সন্তানেরা অামার বুকের মাঝে, অামার পাশে থেকেছে। অামি ইটিভিতে যোগ দেবার পর ২০০৭ সালের শুরু থেকে সেই ৯  বছর বয়স থেকে মায়ের সান্নিধ্য থেকে দিনের পর দিন বঞ্চিত থেকে সপ্তাহশেষে শুক্রবার অামি চট্টগ্রামে এলে মায়ের উমে নাক ডুবিয়েছে।  ইটিভি তে যোগ দেবার সময়ে অামার চট্টগ্রামে  কাজ করবার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ সেই কথা অার রাখেন নি। দুস্তর বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে যেন চোখ মেলে দেখছি অামার সকল সুখদুঃখে র সাথী অামার নাড়িছেঁড়া ধন অামার গহন।  যখন অামার বুকে মাথা রাখে অামার কনিষ্ঠ সন্তান গহন,  জগতের সকল সুখ যেন অামায় ঘিরে রাখে।  মানবতায় উৎসর্গিত হোক তোমার জীবন,  বাবাধন!  এদেশের মাটি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষ কোটি মানুষের পবিত্র রক্তে স্নাত মনে রেখেই নিজেকে সুকঠিন দায়িত্ব পালনে  নিবেদিত রেখো সেই প্রতিদান পরবর্তী প্রজন্মে ফিরিয়ে দিতে।  ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ নির্যাতন, পাকিস্তানী শাসক শোষকদের নিপীড়ন নির্যাতন সয়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে  অকাতরে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন যাঁরা, তাঁদের মহান অাত্মদানের ইতিহাস পৌঁছে দিও প্রজন্মান্তরে তৃণমূ্ল থেকে বিশ্বসভায়। জ্ঞানে, মেধায় অনেক বড়ো হবে,কঠোর পরিশ্রম অার সততায়  জিনে নিও বিশ্ব। Celebrating 20th Birthday of My lovely  younger Son Writban. 

Sunday, September 1, 2019

রূপবতী- সুমি খান

যুগ থেকে যুগান্তরে অামার চাক্ষুষ করা ব্যস্ত নগর এবং অজ পাড়া গাঁয়ের কয়েকটি ঘটনা, যার সঙ্গে বর্তমানের খুব বদল নেই।  তার ভিত্তিতে রচিত অামার লেখা প্রথম ঝুরোগল্প! অাধমরাদের ঘা দিয়ে বাঁচায় যদি এ গল্প!
ছবি- অালমগীর হক স্বপন 


  রূপবতী। অাজন্ম 'পাগল' ডেকে যাকে সমাজ বঞ্চিত করলো তার ন্যূনতম মানবিক অধিকার থেকেও। জন্মদাতা পিতা সমাজের প্রথম সারির ব্যক্তি হলেও কন্যা যে অাজন্ম সমাজে অবাঞ্ছিত! কৈশোরেই পিতৃহীন রূপবতী তার পরিবারে,সমাজে অবাঞ্ছিত। অার সমাজ ' রক্ষা' র নামে  তাকে 'পাত্রস্থ' করতে মরিয়া সমাজপতিরা। একদিন বিয়ের ঢাক বেজে উঠলো।স্বজন মহলে সাজ সাজ রব! ভুড়িভোজ অার পানাহারে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো সকলে। বিশাল রাজত্ব অার রাজকন্যা পেলো বর।......তার পর??
 হঠাৎ এক সূর্যোদয়েের ভোরে নিরাভরণ হলো রূপবতী! ধীরে ধীরে নিরাবরণ করে ফেললো নিজেকে রূপবতী। নিমেষে ছুঁড়ে ফেলে দিলো গায়ের কাপড়ের ক্ষুদ্র চিহ্ণটুকুও। চেয়ে দেখলো না কোনদিকে; এমনকি নিজের দিকে ও না!ভোরের অালোয় ঝিকমিকিয়ে উঠছে রূপবতীর বাহুতে পরা রূপোয় গড়া হীরের বাজুবন্ধ!ঝলসে উঠলো রূপবতীর  ডান হাতের ধারালো চাকুর ফলা!!
 ব্যস্ত রাজপথ!
কুঁচবরণ কন্যার মেঘছায়া এলো চুল ঢেকে দিলো তার দীর্ঘ কপাল।তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থির সম্মুখে!
সটান  নিটোল বক্ষ, নিদাগ, অপরূপ দেহ ছুটছে দিগ্বিদিক.....তবে জ্ঞানশূন্য নয়!   পিনপতন নীরবতা ভেঙ্গে ছুটছে রূপবতী। ব্যস্ত রাজপথে কর্মব্যস্ত পথচারীরা হঠাৎ স্তব্ধ!
দৃষ্টিহারার চোখে হঠাৎ অালোর ঝলকানি....... নিষ্প্রাণ ফিরে  পেতে চায় প্রাণ..পাগলপ্রায় উন্মত্ত দেহজীবির দল..... হৃত যৌবন নবতিপর, নবযৌবন ধর্মজীবী, হর্ম্যজীবি,ঘর্মজীবি,ছুটছে রাজপথের মোহনার দিকে  ..... নগ্ননারীর নিরাবরণ রূপ দেখবার লোভে.... নগরজুড়ে সাইরেন.... মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়্যারলেসে বার্তা যায়- "পাকড়াও করো  উন্মাদিনীকে...."
হঠাৎ একটা নীল চাদরে ঢেকে গেলো রূপবতীর নগ্ন দেহ! পিছন থেকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো তাকে জন্মদাত্রী মা!  চাদরের ভেতর থেকে রক্তে ভেজা  ডান হাত শূণ্যে উঁচিয়ে ধরে চারপাশের লালায়িত চোখগুলোতে একে একে  চোখ রাখে রূপবতী.... এতোক্ষণ যে চোখগুলোতে ধর্ষণের লোভে লালায়িত ছিল,  অাকস্মিক নীল চাদরের পর্দায় ঢাকা রূপবতীর শরীরের একমাত্র  নগ্ন  অংশ দক্ষিণ হস্তের পানে তাদের চকিত নজর।
বিষ্ফারিত নেত্রে সবাই চেয়ে দেখে রূপবতীর হাতে পূর্ব পশ্চিমে  পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে  রক্তাক্ত একটি  লম্বাটে মাংসপিন্ড! টপ্....টপ্....টপ......রক্ত ঝরছে.....!!

এতোক্ষণ নিষ্পলক পুঙ্গবের দল সঙ্গে সঙ্গে বুঁজে ফেললো তাদের চোখ! সাথে সাথে তাদের নগ্ন লালায়িত হাত চলে যায় নিজেদেরই দু' পায়ের মাঝখানে!!
চারিদিক থেকে রায়ট ভ্যান অার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দাঙ্গা পুলিশের বীর সন্তানেরা ভীড় সরাতে ব্যস্ত হয়ে যায়!
সুমি খান। বেলা ১২টা পয়লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭, চট্টগ্রাম

Sunday, August 18, 2019

মানবিকতার জয়গান গেয়েছেন সাবিত্রী রায়- জন্মশতবর্ষ পেরিয়েও আজ বিস্মৃত তিনি-বিপ্লব আর দেশভাগ জীবন্ত তাঁর কলমে

তাঁর উপন্যাস নিষিদ্ধ করেছিল কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু কলমকে থামাতে পারেনি। সাম্যবাদী রাজনীতির প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা রেখেই একের পর এক উপন্যাসে মানবিকতার জয়গান গেয়েছেন সাবিত্রী রায়। জন্মশতবর্ষ পেরিয়েও আজ বিস্মৃত তিনি।

শিশির রায়  
কলকাতা| ,১৮ অগস্ট, ২০১৯, ০০:০২:০০
শতবর্ষে বিস্মৃত  লেখিবা বিপ্লবী সাবিত্রী রায়
মিঠিসোনা, তুমি যখন বড় হ’য়ে স্কুলে পড়বে, ঐ ভিখিরী শিশুদের চাইতে নিজেকে বড় মনে করো না। যারা বাড়ীর আবর্জনা থেকে ছেঁড়া পুরানো কাগজ কুড়িয়ে নিচ্ছে একাগ্রমনে, কেউবা বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে শুকনো ডালপালা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, শীতের রাতে ওদের শীর্ণ কঙ্কাল হাতগুলি গরম করবে বলে, আর ওদের মায়েরা রুটি সেঁকবে সে ধোঁয়াটে আগুনে তিন ইটের উনুনে খোলা প্ল্যাটফর্মের এক কোণে।...এমন দিন যদি কখনও আসে, ওদের সঙ্গে মানবতার প্রতিযোগিতায় (যার নাম প্রগতি) নামতে হয়েছে তোমাকে পৃথিবীর ময়দানে, হয়তো দেখবে, তুমি পিছিয়ে আছ অনেক পিছনে। ওদের চোখে জয়ের স্নিগ্ধ হাসি।’

আদরের নাতিকে চিঠি লিখেছিলেন সাবিত্রী রায়। ‘নীল চিঠির ঝাঁপি’ নামের সেই চিঠির বইয়ের পাতায় পাতায় স্নেহময়ী দিদিমার মনের কথা, কবিতার টুকরো, রোজনামচা। আছে ভবিষ্যতের প্রতি দিক্‌নির্দেশ, নিজে যে বিক্ষুব্ধ রক্তাক্ত অতীত পেরিয়ে এসেছেন তার ইঙ্গিতও— শিশুমনের যতটুকু প্রয়োজন। ইতিহাসে কিছু মানুষ শুধু জমি তৈরি করে আর তার ফসল তোলে আর একটি প্রজন্ম, এই সারসত্য মনে রাখার আর মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটুকু জীবনসায়াহ্নেও ভোলেননি ‘স্বরলিপি’, ‘পাকা ধানের গান’, ‘মেঘনা পদ্মা’ উপন্যাসের লেখিকা।

কিন্তু কে চেনে আজ তাঁকে? যে দলের মতাদর্শের প্রতি তাঁর আজীবন প্রতীতি, সেই কমিউনিস্ট পার্টিই তো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাঁর লেখা থেকে! ‘স্বরলিপি’ উপন্যাসে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরকার দ্বন্দ্ব থেকে একটু উপরের তলার নেতাদের দ্বিচারিতা— সোজাসাপটা লিখেছিলেন তিনি। সেই বই নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তার পাঠ। নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনার ‘আদেশ’, স্বামী শান্তিময় রায়কে পার্টি থেকে বহিষ্কার, কোনও কিছুই সাবিত্রীকে দমাতে পারেনি। থামাতে পারেনি তাঁর কলমও।

‘স্বরলিপি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালে। সেটা তাঁর তৃতীয় উপন্যাস। তার পরেই তিনি লিখেছেন তাঁর দুই ম্যাগনাম ওপাস— তিন খণ্ডে ‘পাকা ধানের গান’, দু’খণ্ডে ‘মেঘনা পদ্মা’ (তার তৃতীয় খণ্ড আবার ‘সমুদ্রের ঢেউ’ নামে আলাদা উপন্যাস হিসেবে)। চল্লিশের দশকের জটিল ও রক্তাক্ত রাজনীতি— বিয়াল্লিশের অগস্ট আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, হাজং বিদ্রোহ, দেশভাগ, দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা— তাঁর উপন্যাসে শুধু উঠে এসেছে বলাটা ভুল, সমসময় ও সাহিত্য সেখানে একে অন্যের আয়না। এই সমস্তই তিনি দেখছেন, লিখছেন— কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রতি অটল কিন্তু নির্মোহ থেকে। লেখক তো দ্রষ্টা, ব্যক্তিগত দেখাটাও তাঁকে করে তুলতে হয় নৈর্ব্যক্তিক। কিন্তু দল তা মানবে কেন? সে তো বোঝে কেবল ‘পার্টি লাইন’, দাবি করে মনোযোগ আর আনুগত্যের সবটুকু। সমালোচনা দূরস্থান, মতামতে যে মতের পাশাপাশি অমতও থাকতে পারে, ‘পার্টি’ তা বুঝেও বোঝে না। এই সিদ্ধান্তটা ভুল হচ্ছে, ওই কাজটা করা উচিত নয়— বললে নেমে আসে ‘সংস্কারবাদী’ তকমা, বহিষ্কারের ফতোয়া, একঘরে করার হুমকি। সাবিত্রীর নিজের জীবন আর তাঁর গল্প-উপন্যাসের চরিত্রদের জীবন তাই দিনশেষে এক ও অকৃত্রিম হয়ে ধরা দেয়।

১৯১৮-র ২৮ এপ্রিল ঢাকায় জন্ম সাবিত্রীর। শৈশব কেটেছে ফরিদপুরের গ্রামে। পিতার পদবি সেন। বাবা-মা ছাড়াও দশের কাজে এগিয়ে-আসা পিসির প্রভাব পড়েছিল তাঁর জীবনে। বেথুন কলেজ থেকে বিএ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটি পাশ করা মেয়েটি নিজের বিপ্লবী দাদার বন্ধু শান্তিময় রায়কে বেছে নিয়েছিল জীবনসঙ্গী হিসেবে। ১৯৪০-এ বিয়ে, বিয়ের কয়েক মাস না যেতেই স্বামীর কারাবাস। স্কুলে পড়ানোর কাজ নিয়েছিলেন সাবিত্রী, চাকরি করতে গিয়ে শিশুকন্যার দেখাশোনায় সমস্যা হচ্ছে দেখে ছেড়ে দেন সে কাজ। শিক্ষিতা মেয়ে অথচ নিজে উপার্জনক্ষম নন, এই আক্ষেপ ছিল তাঁর মনে। লেখালিখিকে আঁকড়ে ধরায় সেই খেদ দূর হয়েছিল। সংসারের নানা কাজের মধ্যেই সময় বার করে লিখেছেন ন’টা উপন্যাস, কিছু ছোটগল্প, এমনকি শিশু-কিশোরপাঠ্য বইও। শেষ উপন্যাস ‘বদ্বীপ’ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে, শেষ বই ‘নীল চিঠির ঝাঁপি’ ১৯৮০-তে। মারা গিয়েছেন ১৯৮৫ সালের ৮ ডিসেম্বর। ক্যালেন্ডারের হিসেবে এই তো সে দিন, ত্রিশ বছরের কিছু বেশি। অথচ পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের মধ্যে লেখা সাবিত্রী রায়ের বইগুলো আজ কলেজ স্ট্রিটের বইবাজারে পাওয়া যায় না— একমাত্র ‘সাবিত্রী রায়ের নির্বাচিত রচনা-সংকলন’ নামে তাঁর ছোটগল্প-সংগ্রহটি ছাড়া।

এ আমাদের দুর্ভাগ্য। সাবিত্রীর বই, বিশেষত উপন্যাসগুলি না পড়া মানে, একটা খুব জরুরি আর জটিল সময়কে শুধু সাম্যবাদী মতবাদের দিক দিয়ে বলে নয়, মানবিক জীবনবোধ দিয়ে বুঝতে অস্বীকার করছি আমরা। ভুলে থাকছি একটা বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের যাত্রাপথের মাইলফলক আর খানাখন্দ, উভয়কেই। এই বিস্মৃতি কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, ভয়ঙ্করও; কারণ আজকের রাজনীতিতেও চোখে পড়ে সেই উত্তরণ ও স্খলন, সাবিত্রী যা পঞ্চাশ বছর আগে লিখে গিয়েছেন।

তাঁর ‘স্বরলিপি’ উপন্যাসে পৃথ্বী, রথী, ফল্গু, শীতা, সাগরীর মতো নিবেদিতপ্রাণ পার্টিকর্মীর গায়ে গায়েই ঘোরাফেরা করে নন্দলাল, ব্যোমকেশ, মধু মুখার্জির মতো স্বার্থান্বেষী নেতারা। শীতাংশু নামের তরুণ কর্মীটি স্তম্ভিত হয়ে দেখে, সারা দিন না-খাওয়া কৃষক কর্মীদের একটু অর্থসাহায্যের আবেদন নস্যাৎ করে ব্যোমকেশ তাকে নিয়ে ‘একটু চা খাওয়া যাক’ বলে রেস্তরাঁয় ঢোকে, ডবল কাপ চা আর পুরু অমলেট অর্ডার দেয়। ব্যোমকেশের বাড়িতে শৌখিন আসবাব, নরম গালিচা, বিলিতি কাপে সুগন্ধি চায়ের সঙ্গে সাম্যবাদী নেতার বিপ্লবের বুলিকে মেলাতে পারে না সে। প্রতিবাদ করে পৃথ্বী আর রথী দু’জনেই ‘বুর্জোয়া সংস্কারবাদী’ ছাপ্পায় দল থেকে বহিষ্কৃত, নেতা নন্দলাল কৌশলে রথীর স্ত্রী সাগরীকেও টেনে আনে নিজের কমিউনে, সাগরীকে চাপ দেয় রথীকে ডিভোর্স দিতে। আসলে হিংস্র পুরুষের কামুক নজর পড়েছে বিপ্লবের স্বপ্ন-দেখা মেয়ের উপরে, নন্দলালের স্যাঙাত এক দিন সাগরীকে জানিয়েই দেয়, ‘নন্দলাল is waiting for you...’ এই ঘিনঘিনে নীচতার আবর্তে সাম্যবাদ কোথায়! দল আর মতাদর্শের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকে যে পুরুষতন্ত্রের রাক্ষস, সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে দাঁতনখ নিয়ে— রাজনীতি-সচেতন নারী তার কবল থেকে বাঁচে কী করে— লিখে যান সাবিত্রী।

শুধু নেতা আর কর্মী নয়, জোতদার আর কৃষক নয়, পুরুষ আর নারী নয়। সবার উপরে তো জেগে থাকে মানুষ। বিপ্লব, বিদ্রোহ, দেশভাগ, দাঙ্গা পেরিয়ে রোজকার জীবনটা টেনে-হিঁচড়ে বয়ে নিয়ে যেতে হয় তাকে। ভাত খেতে হয়, ভাতের সন্ধানে বেরোতে হয়। এই নিরাবরণ নিরাভরণ মানুষকে সাবিত্রী দেখেন দরদ দিয়ে। ‘পাকা ধানের গান’-এর মূল চরিত্র পার্থ যখন হাজংদের নিয়ে কৃষক আন্দোলনে মিলিটারির গুলিতে প্রাণ দেয়, সাবিত্রীর কলম সে বর্ণনায় দৃঢ়। জমিদারের ধামাধরা জগাই বাড়ুজ্জের বিরুদ্ধে পাহাড়পুরের সাধারণ মানুষের সংগঠিত প্রতিরোধের ছবি আঁকেন অনমনীয় ঋজুতায়। সেই কলমই যেন ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ছোটগল্পে— যেখানে মন্বন্তরের পরের কলকাতায় বিরাট অভিজাত বাড়ির নর্দমা দিয়ে গড়িয়ে আসা ফ্যান আর তার সঙ্গে মিশে থাকা কয়েকটা ভাতের জন্য কামড়াকামড়ি করে ক্ষুধার্ত মানুষ। পেটের জ্বালা বড় জ্বালা— কাজের মেয়ে গোলাপি যে ক’টা ভাত পায় নিজেই খেয়ে ফেলে, স্বামীকেও দেয় না। আবার ‘পাকিস্তান’ থেকে চলে আসা অন্ধ ভিখিরি শহরের রাস্তায় ‘ময়ূরপঙ্খি নৌকা আমার মেঘনা চরে বাড়ি’ গান গেয়ে যত না ভিক্ষে চায়, তারও বেশি চায় বাউলের, শিল্পীর যথোচিত সম্মানটুকু। পুব বাংলার গ্রামের সম্পন্ন বাড়িতে সারা জীবন সেবা-দেওয়া বুড়ি পরিচারিকাকে রেখেই ‘ইন্ডিয়া’ রওনা দেয় সবাই। যে ছেড়ে যায় আর যাকে ছেড়ে যাওয়া হয়, এই দুই অসহায় মানুষের জন্যই ভালবাসা টলটল করে সাবিত্রীর কলমে।

এক ক্রান্তিকালের কথাকার হয়েও বাংলার ‘মূলস্রোতের’ সাহিত্যিকদের আলোচনায় উঠে আসে না সাবিত্রী রায়ের লিখন। বিয়াল্লিশের অগস্ট আন্দোলন বলতেই যেমন অমোঘ ভাবে ভেসে ওঠে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’, তেভাগা আন্দোলন-দেশভাগ-দাঙ্গার সূত্রে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ যেমন প্রগাঢ় ভাবে মনে পড়ে, পঞ্চাশের মন্বন্তর বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (নাকি সত্যজিৎ রায়ের?) ‘অশনি সংকেত’, অমলেন্দু চক্রবর্তীর গল্পটা মনে না রেখেও যে ভাবে মৃণাল সেনের ছবির জন্য মনে রাখি ‘আকালের সন্ধানে’, তেমন করে তো সাবিত্রী রায় আর তাঁর লেখালিখিকেও মনে রাখা উচিত ছিল! এই অতল বিস্মৃতি প্রাপ্য ছিল না সাবিত্রীর। গণ্ডিবদ্ধ সাংসারিকতা থেকে বাঙালি মেয়েকে উত্তরণের হদিশ দেওয়া আশাপূর্ণা দেবী, বা জল-জঙ্গল-মাটির সংগ্রামের হয়ে কলম ধরা মহাশ্বেতা দেবী যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন, সাবিত্রী রায় তা পাননি। তিনি রয়ে গিয়েছেন তাঁরই গল্পের চরিত্র শকুন্তলা দেবীর মতোই নিভৃতে, পানের পিক আর সর্দি-বসা পাকা কফ লাগা দেওয়াল পেরিয়ে সরু গলির মধ্যে স্যাঁতসেঁতে বাড়ি যার ঠিকানা; জ্বরার্ত শিশুর পরিচর্যা, রান্না, দেবর-শাশুড়ির বিদ্রুপ আর স্বামীর উদাসীনতা সয়েও যিনি লিখে যান। গত বছর জন্মশতবর্ষ পেরিয়েছে সাবিত্রী রায়ের, বাঙালি প্রকাশনাগুলো তাঁর বই পাঠকের হাতে ফের তুলে দেওয়ার ভার নিলে তাঁর লেখক-সম্মানটুকু বাঁচে। আনন্দবাজার



Sunday, June 16, 2019

চিরনির্ভর, চিরশান্তি - আমার বাবা সাইফুদ্দিন খান

কন্যাসন্তানের নামের সাথে 'কল্যাণীয়া' শব্দ বসাতে খুব ভালোবাসতেন অামার বাবা অাকৈশোর সংগ্রামী এক অনন্য মানবতাবাদী মানুষ সাইফুদ্দিন খান।বাবার কোলে করে বেড়ানোর স্মৃতি এখনো অমলিন।বাসা থেকে বেরুলেই হেঁটে কোর্ট বিল্ডিংয়ের মুখের দোকান থেকে নানান স্বাদের নাবিস্কো চকলেট কিনে দিতো অামাদের তিন ভাইবোন কে। কন্যাসন্তানের ও জীবন অাছে, তার ইচ্ছেমতো চলার স্বাধীনতা অাছে - একথা বাবাই প্রথম অামাকে বুঝতে শেখান। অাজ বাবা নেই বলে গভীর শূণ্যতায় ডুবে যাই বারবার!
 অামার যতো অনুযোগ, অনুরোধ,অভিমান প্রকাশের একচ্ছত্র অাধিপত্য ছিল যার ওপর,অামার অাব্বু কে খুব মিস করছি। অাজ বাবা দিবসে বাবাকে কাছে পেলে স্বর্গীয় সুখ পেতাম নিশ্চয়!
বাবাকে এভাবে না হারালে ও তো পারতাম!
 সময় কতো বদলে যায়, সন্তানদের কাছে  বাবার মতো অাব্দার করা না গেলে ও সন্তানদের বাবা বলে ডাকি।সন্তানদের গুরুত্ব, তাদের অাব্দার, মান অভিমান অামাদের কাছে অনেক গুরুত্ব রাখে। অার তাই তাদের বয়স এবং সময়ের কাছে ছেড়ে দিতে হয় তাদের বোধগম্যতা।অামার অাব্বু, তুমি যেখানেই থাকো- তোমার অসমাপ্ত কাজ অামার কর্মযজ্ঞের অংশ,জানো তুমি। তোমার স্পর্শ প্রতিমুহূর্তে অামি অনুভব করি,অাব্বু অামার! বাবা দিবসে অামার চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি বাবা সাইফুদ্দিন খানকে অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুভব করছি, যিনি অামার সবকিছুতে অামার সঙ্গে অাছেন বলে অামি অনুভব করি প্রতি মুহূর্তে!
বেলা ১১টা
১৬ জুন ডাবলিন,অায়ারল্যান্ড

Monday, April 29, 2019

এবার ফিরাও মোরে- কোথায় আল্লাহ ঈশ্বর ভগবান?-সুমি খান

প্যাগোডা গীর্জা
মসজিদ মন্দির
কোথায় আল্লাহ-তুমি অবতার?
কোথায যে ভগবান?
কোথায় কৃষ্ঞ যিশু?
কাঁদছে নারী
কাঁদছে পুরুষ
আবাল বৃদ্ধ শিশু!

পবিত্রতায় নিস্তরঙ্গ
করুণায় থরোথর!
বিপন্ন আজ তোমার মানুষ
কান্নার সরোবর!
রক্তের নদী বয়ে যায়
সিনাগগ,গীর্জায়!
মসজিদ -মন্দির ভাসে শুধু রক্তের বন্যায়!

তথাগত কতো শান্তির বাণী দিলো-
মন্দিরে দেবী খন্ডিত-
ভেঙ্গে চুরে
আর আগুনে পুড়ে
রামুর যতো বুদ্ধমূর্তি
সব একাকার লুন্ঠিত!

কেন তবু তুমি নির্বিকার-নীরব ?
বিশ্বজুড়ে যখন তারা সরব !
তাদের হাতেই খোলা তরবারি -
তাদের মাথায় কৃপা যে তোমারি!
যাদের হাতের খড়গ কৃপাণ
কেড়ে নিলো কোটি নিরীহ প্রাণ!

খড়গ হাতে গুজরাট জুড়ে
ছুটেছে কৃপাণ আসানসোলে
নিরীহ কিশোর সিবঘাতুল্লাহ
প্রাণ হারিয়েছে যাদের হাতে!
তাদেরও কপালে জ্বল জ্বল করে
ভগবান পদচিহ্ণ !
তারা শুধু ছুটে চলেছে অসীমে-
সভ্যতা নিশ্চিহ্ণ!

খোলা তরবারী পতাকায় আঁকা
কলেমা তৈয়ব লেখা -
উড়িয়ে সে ধ্বজা
হেসে হেসে খুন করে গেলো তারা
নিরীহ শিশু যতো -
দ্যাখোনি কি তুমি
জায়াানের মা- ’হায় খোদা ‘বলে
তোমায় ডেকেছে কতো?
তবু যে তোমার আরশ কাঁপে না-
শিয়রে তাদের মৃত্যু হাসে না
আসে না তো যম-
আসে না তো আজরাইল!
আসে না তো কোন দৈববাণী
শান্তির দূত হয়ে-
এবার ফিরাও মোরে!
হে বিধাতা মোর-
এবার ফিরাও মোরে!
------------------------
০০২
----------------
লক্ষ্মীপেঁচা জেগেছিলো কাল
বলে গেছে অমানিশা
ঘিরেছে পৃথিবী -
হারিয়েছে যেন দিশা!
সকাল ৮টা ২৪ মিনিট, ৩০ এপ্রিল,২০১৯, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা