Saturday, December 6, 2014

মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বিজয় আজ কেন বিপন্ন-কামাল লোহানী


শনিবার  ২৫ আগস্ট, ২০১২আমরা একজন সাক্ষী সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের, দিন ক্ষণের। নিজেকে গর্বিত মনে হয় অমন দৃশ্যকে ভাষায় রূপান্তরিত করে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে সারা বিশ্বের অগণিত শ্রোতার কাছে বাংলার কিংবদন্তি নেতার স্বদেশ ফেরার কাহিনী তুলে ধরতে পেরেছিলাম। আমরা ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলাম ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তে।
আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, অর্থাৎ ১৯৭১ সালে আমরা প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সর্বতভাবে সহযোগিতা করেছিল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আমেরিকা তো সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করে দিতে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। কিন্তু সেদিন যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের দৃঢ় সংকল্প আর মুক্তিফৌজের অদম্য মনোবল মার্কিনী চক্রান্তকে সেদিন হতাশ করে দিয়েছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ না করত তবে আমরা কি পারতাম মার্কিন চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে? তবু যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে নিজেদের প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছেড়ে না দিয়ে ইসরাইলের মতো যুদ্ধোন্মাদ দুষ্টক্ষতকে লেলিয়ে দিয়েছিল মুক্তিকামী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কৌশলে মার্কিনী চক্রের খবরদারির মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মুক্তিযুদ্ধরত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে আমরা যেন লক্ষ্যে পেঁৗছতে না পারি এবং ওরা যেন নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দিয়ে নব্য রাষ্ট্রের ওপর খবরদারি করতে পারে তার জন্য কনফেডারেশন তত্ত্বক জাল বিছিয়েছিল '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন। মুক্তিকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে মার্কিনী পুতুলের ভূমিকায় কাজ করে আসছিলেন যে খোন্দকার মুশতাক সেই আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রবাসী সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবেই স্থানীয়ভাবে 'এজেন্ট' এর কাজ করে যাচ্ছিল। মার্কিনীদের হুকুম তামিল করাই ছিল তার কাজ। যে আমেরিকান স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করে চলেছিলেন, তিনিই একদিন সফল হলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে। 
একটি লক্ষ্যণীয় বিষয় বাংলাদেশ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এ পর্যায়ে অতীব উদ্দীপনামূলক ঘটনা ঘটে গেল। বঙ্গবন্ধু যখন মুক্ত স্বদেশে ফিরে এলেন পাকিস্তান জেল থেকে তখন তিনি সোজা লন্ডন হয়ে দিলি্লতে স্টপওভার করে চলে এলেন সদ্যমুক্ত বাংলাদেশের বিধ্বস্ত রাজধানী ঢাকায়। এই দিন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দোল্লাসের দিন। এই দিনেই তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বৃটিশ হাওয়াই জাহাজের সিঁড়িতে ফুলেল সংবর্ধনা জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এবং বঙ্গবন্ধুর বুকে পড়ে অঝোরে আনন্দাশ্রু ঝরাতে থাকলেন। কিন্তু রানওয়েতে হুইল চেয়ারে অপেক্ষমান ছিলেন শেখ মুজিবের গণিত পিতা শেখ লুৎফর রহমান। বঙ্গবন্ধু সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন। পিতৃস্নেহে আপ্লুত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি অবর্ণনীয় আবেগে পিতাকে জড়িয়ে ধরলেন। এবারে ঝর ঝর করে ঝরতে থাকল বঙ্গবন্ধুর চোখের জল।
আমরা চারজন_ বাংলাদেশ বেতারের আমি এবং আমার যুদ্ধের সাথী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের সংগঠক আশফাকুর রহমান খান ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দিলি্ল থেকে এসেছিলেন আকাশবাণীর প্রধান সংবাদপাঠক ও ধারাভাষ্যকার সুরজিত সেন, হিন্দি সার্ভিসের সংবাদ পাঠক ও ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার যশদেব সিং এবং কলকাতা আকাশবাণীর জনপ্রিয় সংবাদপাঠক ও আবৃত্তিকার দেব দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তেজগাঁও বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের দোতলার পশ্চিম কোণার ছাদে দাঁড়িয়ে সরাসরি সম্প্রচারে অংশগ্রহণ করছিলাম। ১৭ পৃষ্ঠার পর
গোটা বিমানবন্দরটাই আমাদের চোখের সামনে ভাসছিল। দেখতে পাচ্ছিলাম সবই। তাই সেদিনের স্মৃতিবিজড়িত অপরূপ দৃশ্যাবলী আজও চোখে ভেসে ওঠে স্বপ্নের মতো। 
আমরা একজন সাক্ষী সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের, দিন ক্ষণের। নিজেকে গর্বিত মনে হয় অমন দৃশ্যকে ভাষায় রূপান্তরিত করে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে সারা বিশ্বের অগণিত শ্রোতার কাছে বাংলার কিংবদন্তি নেতার স্বদেশ ফেরার কাহিনী তুলে ধরতে পেরেছিলাম। আমরা ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলাম ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তে।
সেদিন ঢাকা শহরের যে দৃশ্য দেখেছিলাম তা আগেও দেখেছিলাম বহুবার কিন্তু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ একটি অনির্বচনীয় আনন্দাশ্রু চোখে উজ্জ্বল যে মুখচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলাম সব মানুষের মনে তার বর্ণনা দেয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু হৃদয়ের ক্যানভাসে ছবিটি অাঁকা হয়ে গেছে, তা মুছে ফেলার নয়। চির জাগরুক থাকবে। রাজনৈতিক অঙ্গনে মানসিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করেছি জীবনভর কিন্তু যে কোনো গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির অসম উত্থানের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। যখন মুক্তিযুদ্ধ নামের সংগ্রামের নতুন পর্যায় শুরু হয়েছিল তখনো রাজনৈতিক সংকীর্ণ মানসিকতা লক্ষ্য করেছিলাম আওয়ামী ঘরানার মধ্যে। বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানের মতো এক অকল্পনীয় জনপ্রিয় এবং অবিসংবাদিত যখন নেতৃত্ব। মনে করি সেই ১৯৪৯ সালের কথা। যখন জুন মাসে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তৎকালীন পাকিস্তানে পশ্চিমা জমিদার-জোতদারদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সাম্প্রদায়িক দল ছেড়ে শাসকশ্রেণী-মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রথম বিরোধী রাজনীতির পত্তন করেছিলেন। সৃষ্টি করলেন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। তাই পূর্ববঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে আছেন মওলানা ভাসানী। মনে হয় সেদিনের পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছিল খুবই কঠিন। কারণ তাদের ভিত্তি ছিল ধর্মান্ধতা আর পাকিস্তানের পক্ষে গণভোটে পূর্ববঙ্গের মুসলিম ভোট সবচেয়ে বেশি পড়েছিল। সে কারণে ধর্মভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করার বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত সফল হলেও যাদের হাতে ক্ষমতা গেল সেই মুসলিম লীগ ও তার নেতাদের বৈমাত্রেয় আচরণে দেশভাগের ক'দিনের মধ্যেই ওদের কপট চরিত্র প্রকাশ পেল। নতুন রাষ্ট্রের বিধি-বিধানে পূর্ববঙ্গকে উপেক্ষা-অবহেলার কুৎসিত এবং উদ্ভট চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু হলো। প্রথমেই আঘাত নেমে এলো আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর, আমরা প্রতিরোধ করলাম জীবন বিসর্জন দিয়ে। সেই যে শুরু তার কিছুদিন পরেই মার্কিন আগ্রাসন যেন ক্রমেই বিষাক্ত দংশনে পরিণত হতে থাকল। পঞ্চাশের দশকেই ওরা পিস কোর নামধারণ করে ঢুকেছিল শিক্ষা ক্ষেত্রে, ইংরেজি শেখানোর শিক্ষক হিসেবে। শহরে-মফস্বলে, গ্রামেগঞ্জে ওরা ঢুকে যেতে লাগল, মানুষকে নানা কৌশলে প্রলুব্ধ করে। যেহেতু ইংরেজি শিক্ষাটা উপলক্ষ ছিল, তাই কেউ এর ভেতরে কোনো অসৎ মওকার সুযোগ আছে বলে ভাবত না। কিন্তু ওরা ঘুণ পোকার মতো কাটতে শুরু করে ক্ষতটাকে দগদগে করে ফেলল। এভাবেই ভিড়িয়ে ফেলেছিল পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি করে কেন্দ্রের পাকিস্তান সরকারকে পুরোপুরি ঘায়েল করে ফেলেছিল। সেই সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল সিয়াটা এবং সেন্টো চুক্তি। আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরার সব ফন্দি এঁটে ফেলেছিল।
এখানে একটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই, ঢাকা শহরের আওয়ামী মুসলিম লীগের যে খুঁটি ছিল, তিনি হলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান। সংগঠনের প্রবল শক্তি তারই দক্ষতায় সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ইয়ার মোহাম্মদ খান মওলানা ভাসানীর ন্যাপের চলে যাওয়ায় আওয়ামীরা ঢাকার কুখ্যাত ধনাঢ্য গু-া বাদশাকে ক্ষেপিয়ে জনসভা ভাঙার জন্য লোক লাগিয়েছিল। প্রথমে ভেঙে গিয়েছিল কিন্তু মওলানা ভাসানীর অগি্নবর্ষী বক্তৃতা সেদিন গুন্ডামিকে পরাভূত করে জনসভাকে সফল করতে সক্ষম হয়েছিল।

আওয়ামী মুসলিম লীগ কিন্তু 'মুসলিম' শব্দটি পরিহার করেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রভূত্ব এবং সামরিক চুক্তিকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করতে সাহস পায়নি। কারণ মার্কিনীদের নাখোশ করার সাধ্যি ছিল না, তার কারণ শহীদ সোহরাওয়ার্দী তখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। এমনিভাবে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির উত্থান ঘটল। 

বিজয়ী আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর জাতীয় নেতৃত্বকে অস্বীকার করে পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের রায়কে অগ্রাহ্য করে সামরিক শাসনকর্তা জেনারেল ইয়াহিয়া খান নির্বাচনে জাতীয় পর্যায়েও পরাজিত পশ্চিমা রাজনীতির ক্ষমতা দখলের প্রতিভূ জুলফিকার আলী ভুট্টোর খপ্পরে পড়ে ঢাকায় ডাকা জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অকস্মাৎ বাতিল করে দেয়ায় বিক্ষুব্ধ পূর্ববাংলার বিস্তৃত জনপদ আর সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ অগি্নগর্ভ হয়ে উঠেছিল। এমনি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ এবং তখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া তো দিয়েছিলেনই বরং তখন জনগণের প্রত্যাশা ছিল মুক্তির। লড়াই করেই জিততে হবে, এমনই ছিল মনোবাসনা। মনোবলে সুদৃঢ় পাহাড়ের মতন তখন জনগণের ঐক্য। কেউ তাকে পারবে না অবণত করতে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং এ দেশে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার প্রত্যেকটি সংগ্রামের পেছনে কমিউনিস্ট পার্টি যে প্রকাশ্যে বা গোপনে থেকে সংগঠন গড়ে তোলা, মানুষকে সংগঠিত করা এবং বিশ্বের নানা দেশের মুক্তি সংগ্রাম থেকে পাঠ-অভিজ্ঞতা এবং আদর্শ চিন্তা করে নিজেদের বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করছিল, সেই গণ-মানসিকতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রাণপণ যুদ্ধে। কিন্তু অবমূল্যায়িত হয়েছে ওই প্রবলশক্তির ও বলিষ্ঠ মানসিকতার মানুষ। পরে দেশমুক্তির পর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের এমনকি তাজউদ্দিন আহমদের সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গঠিত সরকারের ন'মাসের মুক্তিযুদ্ধেকেও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন করা হয়নি। সত্তরের পাকিস্তানি নির্বাচনের ফল দিয়েই পরবর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল। চরম দুঃখজনক ঘটনা, যে তাজউদ্দিন আহমদ দিনরাত্রি পরিশ্রম নয় কেবল, মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে ন'মাসের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন মার্কিনী হুমকি ও ইসরাইলী প্রলোভনকে উপেক্ষা করে সেই মহতী অধিনায়ককে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে প্রথম পরে অর্থমন্ত্রীত্ব থেকেও অপসারণ করা হয়েছিল, তিনি জেলে হত্যা হলেন তার মুক্তিযুদ্ধের সাথী মন্ত্রিসভার সহযোগী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানের প্রাণ দিয়ে যে তিনি সঠিক পথেই চলেছিলেন। পরম পরিতাপের বিষয়, যে খোন্দকার মুশতাক আহমদ কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে বসে চক্রান্ত করে যাচ্ছিলেন, বঙ্গবন্ধু সেই মুশতাককেই মন্ত্রিসভায় রেখেছিলেন। 
ধর্মনিরপেক্ষতার স্নোগান দিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে পুনরুদ্ধার করেছিলাম ১৯৭১-এ বিপুল রক্তখরচে সেই বাংলাদেশ আজ মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জঙ্গি কার্যকলাপের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছে। এদের মদদদাতা ও সংগঠিত শক্তি হলো জামায়াত-শিবির। যারা আলবদর, আল শামস গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে খুন করেছে এবং খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ, ব্যাপকভাবে ক্ষতিসাধন করেছে। এ অপশক্তি যাদের যুদ্ধাপরাধী বলে জানি, বর্তমানে যাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যাদের বিচার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। এ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্রশ্রয় ও আশ্রয় দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া এবং মাদাম জিয়া তাদের পুনর্বাসন এবং রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন, তাই নয়, তিনি তাদের কাছে চেপে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে মন্ত্রীত্ব দিয়ে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ভজিয়ে রাখেন ক্ষমতায় যাওয়ার এবং থাকার উদ্দেশে।

মুক্তিযুদ্ধোত্তর ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলে, নতুন আরেক চক্রান্ত অাঁটে মার্কিনীরা। তাতে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিয়ে ফেলে। লাহোরে অনুষ্ঠিত 'ইসলামী দেশগুলোর সম্মেলন'-এ বঙ্গবন্ধু নিজে উপস্থিত হন অনেকের বারণ সত্ত্বেও। ১৯৭৩ সালে যে দালাল আইন প্রণয়ন করে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়, পরে তা সংশোধন করে অনেককে ছেড়ে দেয়ায় হত্যাকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। আর এরই সুযোগ করে জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে দেন। এবং নিজের ক্ষমতালিপ্সা পূরণ করার পথটাকে সুগম করে নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা অবহেলা করে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন।
জিয়া যেখানে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্যে পাঠান সেনা ও অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিলেন তার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশিকিছু কি আশা করা যায়? কিন্তু তার লিজনম্র গৃহবধূ খালেদা যিনি মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানিদের সাথেই বাস করেছিলেন, তিনি যখন ঘোমটা খুলে বিচারপতি সাত্তারকে দলীয় প্রধান পদ থেকে সরিয়ে নিজেই প্রধান হলেন তখন তিনি সংহার মূর্তি ধারণ করলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সারা দেশের সাধারণ মানুষ যখন, তখন তিনি ক্ষমতার দাপটে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলন স্তব্ধ হয়নি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এ দেশের মানুষ গণরায় দিলো মহাজোটের পক্ষে। বর্তমান সরকারের পবিত্র দায়িত্ব আর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের তাগিদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছেন। ক্ষমতায় না থাকলে কী হবে, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন এমনকি সংসদে না গিয়ে রাজপথকে উত্তপ্ত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিক্ষোভ, মানববন্ধন, রোডমার্চ, সমাবেশ, মহাসমাবেশ, হরতাল কত কী করছেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারকে বিচারের উদ্যোগ নেয়ায় ধন্যবাদ জানাই।

শুধু বিচার করলেই তো হবে না ওদের শাস্তি কার্যকর করতে তো হবে। এত বছর বসে থেকে এখন যখন এই বিচার করছেন, তখন ভাবছি, আদৌ শেষ করার সুযোগ পাবেন কি?
details&feature=yes&type=single&pub_no=220&cat_id=1&menu_id=78&news_type_id=1&index=2&archiev=yes&arch_date=25-08-2012

No comments:

Post a Comment