Sunday, October 26, 2014

‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ’ - সুমি খান

অক্টোবর ২৬, ২০১৪

জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ’ নামে একটি নতুন জঙ্গি প্ল্যাটফর্ম তৈরি : ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা: বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও লতিফ সিদ্দিকীসহ চিহ্নিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নীরব হত্যার পরিকল্পনা: জামায়াত ‘মাদার এজেন্ট’

অক্টোবরের শেষে একুশে আগষ্টের মতো গ্রেনেড হামলা করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিনাশ ঘটানোর উদ্দেশ্যে প্রস্তুত হুজি


অক্টোবরের শেষে দেশে নীরব হত্যা , বোমা হামলা সহ বড়ো ধরণের নাশকতা করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পাকিস্তানে তৈরি একটি সাবমেশিনগান  (এসএমজি) ,উচ্চমাত্রার ৫৫ প্রকারের বিষ্ফোরক , জেহাদী বই এবং  আল-কায়দা অনুসারী উগ্র জঙ্গী সংগঠন ‘আইএস’ এর মনোগ্রাম সহ  নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাত উল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) ‘র  চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।  জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ  তাদের  ‘মাদার এজেন্ট’ বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম। আল কায়দা অনুসারী  উগ্র জঙ্গী মতবাদের সকল  ধর্ম ব্যবসায়ী দল জোটবদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে ‘আইএস‘  এর  সাথে এক হয়ে কয়েকটি জেহাদি টীম গঠন করে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল বলেও জানিয়েছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন নিয়ে ‘বাংলাদেশ জিহাদি গ্রুপ ’ নামের একটি সম্মিলিত জঙ্গি প্ল্যাটফর্ম করার পরিকল্পনা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দা হেফাজতে জঙ্গীরা জানায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো অক্টোবর মাসের শেষে ২০০৪ সালের একুশে আগষ্টের মতো গ্রেনেড হামলা করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিনাশ ঘটানো। একই সাথে আল-কায়দা  অনুসারী জঙ্গী সংগঠন আইএস  এর সাথে মিলে কয়েকটি জেহাদী গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নীরব হত্যা এই চার জঙ্গি  ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম । তিনি  বলেন, "বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের।" উল্লেখ্য সম্প্রতি হজ্জ এবং তাবলিগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে রোষানলে পড়েছেন লতিফ সিদ্দিকী।
ঢাকা  মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং নগর বিশেষ শাখা(এসবি)‘র পাঁচটি দল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা, টিকাটুলি এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. রফিক আহমেদ ওরফে সাজিদ (৩৪), মো. উমর ওরফে ফয়জুল ওরফে রবি (২৫), মো. নাদিম আহমেদ ওরফে সুমন (৩০) ও মো. সালাউদ্দিন আহমেদ (২৯) কে গ্রেপ্তার করে । বোমা তৈরি এবং উচ্চমাত্রার বিষ্ফোরক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করার জন্যে তাদের তৈরি দুইটি ল্যাবরেটরির সন্ধান পাওয়া যায় নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা এবং রাজধানীর ওয়ারীতে। জঙ্গীরা জানিয়েছে বোমা তৈরি এবং জঙ্গীবাদ প্রচারণার জন্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎস ছাড়াও পাকিস্তান থেকে আসতো তাদের অর্থ।এই অর্থের যোগানদাতার সন্ধানে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা।

  উল্লেখ্য , ২০০৪ সালের  ২১শে আগষ্ট আ্ওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান  প্রধানমস্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অনেকেই  প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হয়েছিলেন। হুজি জঙ্গীদের ভাষায় সেই ‘অসমাপ্ত কাজ’  ‘সমাপ্ত ’ করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আ্ওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে বিনাশ করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আগষ্ট মাসেই নাশকতার উদ্দেশ্য থাকলেও  আগষ্টে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী তুলনামূলকবাবে বেশী সতর্ক থাকার কারণে অক্টোবর মাসে নাশকতা ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াত হুজিএনতারা।
এই চারজঙ্গীর আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত বিষ্ফোরক দিয়ে তৈরি বোমা দিয়ে কোন বড়ো সমাবেশে হামলা করলে এর বিষ্ফোরণে কমপক্ষে ২৫ জন মানুষ একসাথে নিহত হতে পারে জানালেন বোমা বিশেষজ্ঞ গোয়েন্দারা।  জামায়াত হুজি জঙ্গী জোটের তালিকা ডাটাবেজ করে রাখা হয়েছে , যাতে  পরবর্তীতে যে ‘মুজাহিদ‘ই দায়িত্ব নিক না কেন ,দলের নির্দেশনা  অনুসরণ করে যেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে, সেজন্যে হত্যা তালিকায়  দেশের গুরুত্বপূণ এবং সম্মানিত (ভিভিআইপি)  ব্যক্তিদের নাম , ঠিকানা , ফোন নম্বর , বাসার ঠিকানা , গাড়ির নম্বর লিপিবদ্ধ রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে তৈরি সাবমেশিন গান(এসএমজি) কাশিমপুর কারাগারে বন্দী হুজি আধ্যাত্মিক গুরু আবু জাফরের বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে এই চার জঙ্গীর নেতা রফিক আহমেদ ওরফে সাজিদ। জাফরের আত্মীয় পরিচয়ে তার আদালতে হাজিরার দিন এবং কাশিমপুর কারাগারে নিয়মিত দেখা করে কর্মপরিকল্পনা এবং নির্দেশনা নিয়েছেন তার ভাবশিষ্য এবং সন্তানতুল্য লালিত উমর ওরফে ফয়জুল, ওরফে  রবি।

গ্রেপ্তারকৃতরা হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য উল্লেখ করে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে মো. রফিক আহমেদ ওরফে  সাজিদ তাদের সংগঠক। অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতো সাজিদ। রাজধানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণির রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র উমর দক্ষ বোমা কারিগর।  হুজি জঙ্গী উমর আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে  তার ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই কখনো  ফয়জুল কখনো রবি নামে পরিচিত করেছে নিজেকে। গোয়েন্দা শাখার যুগ্ম কমিশনার মুহম্মদ মনিরুল ইসলাম জনকন্ঠকে জানান , বোমা বানানোতে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে দক্ষ জঙ্গী ছিল বোমারু মিজান । উমরকে বোমা বানানো এবং জঙ্গীবাদে কাগজে কলমে এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষিত করেছে হুজি নেতা মওলানা আবু সাঈদ প্রকাশ আবু জাফর। এ কারণে উমর পুথিগত বিদ্যা এবং কারিগরি দিক দু’ভাবেই দক্ষ, যা বোমারু মিজানের ছিল না বলে জানালেন এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কাশিমপুর কারাগারে বন্দী জেহাদী গুরু মওলানা আবু সাঈদ প্রকাশ আবু জাফর সন্তানের মতো লালন পালন করে তার ভাবশিষ্য হিসাবে গড়ে তুলেছেন হুজি জঙ্গী উমরকে। মওলানা আবু সাঈদ প্রকাশ আবু জাফর হরকাত উল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) আমীর  মুফতি হান্নানের ও আধ্যাত্মিক দীক্ষাগুরু।

  হুজির অন্য সদস্যরা বোমা তৈরিতে উমরের  কারিগরী এবং  পুথিগত দক্ষতা কাজে লাগায়। গ্রেফতারকৃত জঙ্গী নাদিম আহমেদ সুমন ও সালাউদ্দিন বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ করতো। গ্রেপ্তার হওয়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের চার সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য দিয়েছে।
 সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ,জঙ্গীবিরোধী এই অভিযানের নির্দেশনা দেন গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর । জনকন্ঠকে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান , নারায়ন গঞ্জের ফতুল্লা এই জঙ্গীদের জন্যে তুলনামূলক নিরাপদ ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত । তাই হুজি  জঙ্গীরা নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার ধর্মগঞ্জে মালেক সরকারের বাড়ি ভাড়া নেয় ২০০৩ সালে । এখানেই দুই মাস আগে ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করে পদার্থবিদ্যার ছাত্র উমরের নির্দেশনায়  শক্তিশালী বোমা বানানোর প্রস্তুতি নেয়। ল্যাবরেটরিতে বিষ্ফোরক থেকে আত্মরক্ষার মাস্ক সহ প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণ পাওয়া যায়। অন্যদিকে রাজধানীর ওয়ারী থানার র‌্যাংকিন স্ট্রীটের ৬ তালা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে আরেকটি ল্যাব তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো হুজি জঙ্গীরা।
বোমা বানানোর জন্যে এই  বিপুল বিনিয়োগের নেপথ্যে দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার অর্থায়ন আছে বলে জানিয়েছে জঙ্গীরা। এ তথ্য যাচাই করা হচ্ছে বলে জানালেন গোয়েন্দারা।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সহযোগিতায় গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. রহমতউল্লাহ চৌধুরী, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও মাহমুদা আফরোজ লাকির নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের পাঁচটি দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গীদের অর্থের উৎস , সাংগঠনিক শক্তি এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন মনিরুল ইসলাম। শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়েএই সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ (দক্ষিণ) এর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপকমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর , মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান এবং এই গ্রেফতার অভিযানের সার্বিক তত্বাবধায়ক অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃত ৪  হুজি জঙ্গীর বিরুদ্ধে ওয়ারী, উত্তরা (পশ্চিম) , এবং নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং বিষ্ফোরক উপাদানাবলী আইনে  মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। ### ২৫.১০.২০১৪

No comments:

Post a Comment