Thursday, September 12, 2013

সম্পাদকরা না বুঝেই বিবৃতি দিয়েছেন : তথ্যমন্ত্রী


মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও আমার দেশ পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে সরকারের কার্যক্রম খতিয়ে না দেখে, না বুঝে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ভবিষ্যতে না জেনে মাহমুদুর রহমানের পক্ষে 'ওকালতি' না করার ব্যাপারেও সম্পাদকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
আমার দেশ পত্রিকা, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে গত শনিবার দেশের ১৬টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক একটি বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
ইনু বলেন, 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি, অশান্তি
তৈরিতে উস্কানি দেওয়া, সাইবার হ্যাকিং কি অপরাধ নয়? এ ধরনের অপরাধীরা কি আইনের ঊধর্ে্ব থাকবে?'
'আমার দেশ' প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেমন অসীম, দায়িত্বশীলতাও তেমনি অসীম। আমার দেশ পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে সেই দায়িত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেয়নি। পত্রিকা ও পত্রিকাটির সম্পাদক 'হ্যাকিং' বা চুরি করা এবং মিথ্যা-উস্কানিমূলক সংবাদ ও ছবি ছেপে দেশে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে পত্রিকাটি। এসব কাজ ফৌজদারি ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনবিরোধী অপরাধ। মন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট অপরাধে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতেই আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের সমালোচনা এবং ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ার কারণে আমার দেশের সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়নি।
মন্ত্রী দাবি করেন, এই সরকারের আমলে সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য কখনও কাউকে বাধা দিচ্ছে না সরকার।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দৈনিক 'আমার দেশ', দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সম্পর্ক নেই। তাই মাহমুদুর রহমানের মতো কলঙ্কজনক ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গাওয়া সংবাদপত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এতে গণমাধ্যমকর্মীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
আমার দেশের ছাপাখানা বন্ধ প্রসঙ্গে ইনু বলেন, আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ থাকলেও পত্রিকাটি ছাপাতে আইনগত কোনো বাধা নেই এবং বৈধ অনুমতি নিয়ে অন্য ছাপাখানায় তা ছাপাতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, 'তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুসারে পত্রিকাটির ছাপাখানায় তল্লাশি চালানো হয় এবং সেখানে অপরাধ সংঘটিত করার যন্ত্রপাতি ও হ্যাকিংয়ের প্রমাণাদি জব্দ করা হয়েছে এবং ছাপাখানা তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিচারকাজের স্বার্থে যতক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত শেষ না হবে, ততক্ষণ পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ থাকবে।'
মাহমুদুর রহমান তার মাকে নিয়েও জালিয়াতি করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'অন্য ছাপাখানা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশের যে নিয়ম রয়েছে দৈনিক আমার দেশ তা পালন করেনি। যে কারণে দৈনিক সংগ্রামের ছাপাখানা আল-ফালাহর বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের মাকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান দেখিয়ে সত্য গোপন করে সংগ্রাম পত্রিকার ছাপাখানা থেকে তারা পত্রিকা প্রকাশ করেছে।'
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সরকার কোনো মামলা করেনি। তাদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা চিঠির জবাব দিয়েছে। জবাব সন্তোষজনক হলে চ্যানেল দুটি আবার সম্প্রচারে যেতে পারবে।
১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিস্ময়
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে ১৬ সম্পাদকের বিবৃতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক। গতকাল সম্মিলিত সাংস্কৃৃতিক জোটের নির্বাহী সদস্য হানিফ খান স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, পত্রিকার সম্পাদকীয় কলামে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সাম্প্রায়িক সম্প্রীতি, প্রগতি ও মানবাধিকারের কথা বলা হলেও শুধু পেশাগত ঐক্যের কারণে এসব আদর্শে বিরোধিতাকারী, রাষ্ট্রীয় আইন ও শান্তি ভঙ্গের উস্কানিদাতা মাহমুদুর রহমানের পক্ষে দেশের কয়েকজন বরেণ্য সম্পাদকের বিবৃতি প্রদানে আমরা বিস্মিত, হতবাক ও মর্মাহত হয়েছি। বিবৃতিতে শুধু পেশাগত ঐক্য নয়_ মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, প্রগতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের দৃঢ় অবস্থান প্রত্যাশা করা হয়। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক অনুপম সেন, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কবি নির্মলেন্দু গুণ, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. কামরুল ইসলাম খান, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গোলাম কুদ্দুছ ও মুহাম্মদ সামাদ।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বিস্ময়
মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করে ১৬ সম্পাদকের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। রোববার এক বিবৃতিতে ফোরাম নেতৃবৃন্দ মাহমুদুর রহমানকে 'সংবাদপত্রের গণশত্রু' আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা বিস্মিত, মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ বীরউত্তম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. কামরুল ইসলাম খান রোববার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পবিত্র কাবা শরিফ এবং মৃত্যুদ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দৃশ্যমান_ এরকম সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীনউদ্দেশ্যে এ পত্রিকাটি ক্রমাগত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির-বাড়িঘরে হামলা ও অগি্নসংযোগে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উত্তেজিত করে। আমরা মনে করি, পরিকল্পিতভাবে সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এমন একজন সম্পাদককে গ্রেফতার ও পত্রিকা নিষিদ্ধ করা যে কোনো দায়িত্বশীল সরকারের অবশ্য করণীয়।
তারা বলেন, ১৬ সম্পাদকের মধ্যে প্রগতিশীল ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন সম্পাদকের সঙ্গে কতিপয় প্রগতিবিরোধী ও ধর্মীয় মৌলবাদী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক সংবাদপত্রের সম্পাদকের নাম দেখে আমরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করব, দেশপ্রেমিক সম্পাদকরা এ ব্যাপারে তাদের সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেবেন।

No comments:

Post a Comment