Sunday, June 30, 2013

ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ অনেক বড়ো বিপর্যয় ঠেকাতে পারে। এসো বন্ধুরা - সুমি খান


ফেসবুকে আমার কমেন্ট , পোষ্ট অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগায়। প্রতিক্রিয়া জেনে অন্তত তাই বুঝলাম। কাল বিকেলে একুশে টেলিভিশনের পাশের খুপড়ি চায়ের দোকানে বসে পুরনো কলিগদের সাথে চা খেতে খেতে আমার এক অনুজ নারী সাংবাদিক প্রশ্ন করলো ," আপু , আপনার লেখা -পোষ্ট পড়ে মাঝে মাঝে মনে হয় আপনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছেন। " অতি বাম রাজনীতির সৈনিক আমার এই অনুজ ।তার রাজনৈতিক দীক্ষায় আওয়ামী বিরোধিতা আর ভারত বিরোধিতা বদ্ধমূল ধারণায় গেঁথে রেখেছে। তার যখন এ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়, আমি তখন একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক। আমার অত্যন্ত প্রিয় এবং স্নেহভাজন এই অনুজ কে বললাম, "দ্যাখো, এমন মনে হতেই পারে । কিন্তু আমার কথা গুলো সত্য এবং বাস্তব! কারণ আমরা তো ভুক্তভোগী! ২০০১ থেকে ২০০৫ যারা সাংবাদিকতায় একনিষ্ঠ ছিল, তারা কাছে থেকে দেখেছে জামাত -বিএনপি মানবতা র কী ভয়ানক বিপর্যয় ডেকে আনে। সাংবাদিক নির্যাতন কাকে বলে ....!!" এ কথা গুলো গেলো তিন বছর আরাম আয়েশে বিএনপি বীট করা এ্ই টিভি সাংবাদিক এর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি। তার চোখে বিএনপি নেতা দের 'নিপীড়ন' নির্যাতন' অনেক বড়ো ব্যাপার। তারা তো মানিক সাহা , হুমায়ুন কবির বালু, গৌতম দাস সহ ১৩ সাংবাদিক হত্যা, মুনতাসীর মামুন , শাহরিয়ার কবির , সালিম সামাদ , পিরোজপুরের মিঠু, বরুন বিশ্বাসকে কী ভয়ংকর নির্যাতন সইতে হয়েছে- শুধু সাংবাদিকতা করার অপরাধে- তার কতোটা অনুমান করতে পারবেন এখনকার শখের সাংবাদিকেরা? শখের সাংবাদিক বলতে বাধ্য হলাম। কারণ এখন পর্দায় মুখ দেখিয়ে তারকা হবার জন্যেই টেলিভিশন সাংবাদিকতায় ছুটে আসেন অনেকে। সেই সময়ে জাইবা মালিক, প্রিসিলা রাজ অথবা আমার মতো নগন্য সাংবাদিক কে ও নির্যাতন , গ্রেফতার এবং হত্যার নিরন্তর হুমকির মুখেই বাঁশখালি, সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি , সন্দ্বীপ সহ প্রত্যন্ত এলাকার বিপন্ন মানুষের কাছে ছুটে যেতে হয়েছে। বিএনপির বড়ো ডোনার হয়েও অপহরণ, হত্যার শিকার হয়ে তিনবছর গুম রাখা হয়েছে জামালউদ্দিন কে। বাবর শিকার করেছে বিএনপির সাংসদ সারওয়ার জামাল নিজামের থেকে এজন্যে ৫শ'কোটি টাকা নিয়েছে তারেক জিয়া। জামালউদ্দিনের পরিবার এখনো বিপন্ন । কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের কারো তাগিদ নেই এই খুনি কে গ্রেফতার অথবা বিচারের মুখোমুখি করা! এই ঘটনার বিচার হবার জন্যে অন্তত আবার ওয়ান ইলেভেন আসা দরকার বলেই আমার মনে হয়! জামাতের খুনি শাহজাহান চৌধুরীর হত্যাযজ্ঞের প্রধান সাক্ষীআহমদু, প্রকাশ আহমইদ্যা বিএনপি তে যোগ দেয়ার একবছরের মধ্যেই নব্বই দিন সময় বেঁধে হুমকি দিয়েছিলো শাহজাহান চৌধুরী কে। বলেছিলো -" জামাতের এক গুণ- ধর্মের নামে মানুষ খুন। নব্বই দিন পর হয় শাহজাহান চৌধুরী থাকবে, নয় আমি থাকবো। " তার এ ঘোষণার পর আমার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার দেয় আহমেদুল হক চৌধুরী, প্রকাশ আহমইদ্যা। ক্লাস এইটে পদার সময়ে ফুলকুঁড়ি আসরের মাধ্যমে তাকে কিভাবে ধর্মের দোহাই দিয়ে শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত করা হয়। এবং এর অল্পদিন পরেই শাহজাহান চৌধুরী তাকে অস্ত্র হাতে দিয়ে একের পর এক আওয়ামী রীগের নেতা দের হত্যা করিয়েছে- এর বর্ণনা এবং অকপট স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো আহমদু। এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হবার সাথে সাথেই আহমদু কে র‍্যাব এর ক্রসফায়ারের মাদ্যমে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয়। এর পর আমার সাথে সাক্ষাৎকারে র‍্যাব-৭ এর তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার কর্ণেল এমদাদ ( পরবর্তীতে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত) বলেছিলেন," আপনাকে যে সাক্ষাৎ কার দিয়েছ, তার পর তো তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না!" আমার প্রশ্ন ছিল , এই সাক্ষাৎকারের পর আপনাদের সুযোগ ছিল সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনের- যদি সত্যি আপনারা সন্ত্রাস দূর করতে চান। আপনারা শাহজাহান চৌধুরী কে কেন ক্রসফায়ারে ফেললেন না- যদি সৎসাহস থাকে? উল্টো তার পথের কাঁটা দূর করলেন? " নীরব হাসি ছাড়া আর কোন জবাব ছিল না কর্ণেল এমদাদ এর।
এসব তো এখনকার সৌখিন সাংবাদিকেরা দ্যাখে নি! কী করে ধারণা করবে তারা বিএনপি জামাতের ভয়ংকর রূপ? আওয়ামী সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও একের পর এক হঠকারী ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ করে তুলছে সাধারণ জনগণকে । তাদের ভালো কাজগুলোর চেয়ে অন্যায় আর অপরাধের চিত্র অদূরদর্শী হনগণের কাছে অগ্রগণ্য।... বিএন পির ক্ষমতায়ন তাই তাদের কাছে স্বপ্নের মতো!
.. বিএনপি ক্ষমতায় এলে যদি এই সাংবাদিকরা বিশেষ ভাবে ক্ষমতায়ন না হয়ে সাধারণ সাংবাদিকের কাতারে থাকে- তাদের এই স্বপ্নের ঘোর কাটতে এক ঘন্টা সময় ও লাগবে না... রক্তের বন্যা বয়ে যাবে দেশ জুড়ে!! দেশের বাম নেতা আর বুদ্ধিজীবি তাত্বিকেরা ২০০১-৫ যেমন ঘরে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন- রোম পুড়লে নিরো বাঁশি বাজায় যেমন - তেমনি অবস্থানে ছিলেন- একই অবস্থানে আবার ফিরে যাবেন তারা !
আর সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হবে নিরীহ মানুষ আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি। যারা ৪০ বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে পূর্বপুরুষ আর স্বজনদের নারকীয় হত্যার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষী দিয়ে গেছে, তাদের এবার কচু কাটা করা হবে! একাত্তরের ঘাতক হায়েনার দল গারদ থেকে বেরিয়ে অট্টহাস্যে ফেটে পড়বে , রক্তপিপাসু জিভে আবার রক্তের স্বাদ নিতে হামলে পড়বে হিন্দু- বৌদ্ধ আর খৃষ্টান দের বাড়ি-ঘর- মন্দিরে....হ্যাঁ, সাথে তাদের জামাত-বিএনপি - আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগীরা সবাই থাকবে- জমি জিরেতের ব্যাপার- ভোগ দখলের ব্যাপার... ভারত সীমান্তে লক্ষ লক্ষ বিপন্ন মানুষ ভীড় করবে প্রাণ বাঁচাতে.... এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমান দের হত্যা -নির্যাতন করবে বিজেপি আর নরেন্দ্র মোদীর শিষ্যরা। এর প্রতিক্রিয়া সারা বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে সহিংসতা !! তাই ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে আমাদের একটু সচেতনতা, একটু দূরদর্শীতা আর দায়িত্ববোধ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ অনেক বড়ো বিপর্যয় ঠেকাতে পারে। এসো বন্ধুরা মানবতার জয়গানে সব ধরণের সহিংসতা প্রতিরোধ করি!

No comments:

Post a Comment