Monday, May 6, 2013

আমার গর্বের কষ্টে ছেয়ে আছ তুমি, কায়কোবাদ মামা-- আজাদ রাজিব


লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ০৫/০৫/২০১৩ - ১০:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি: স্মৃতিচারণ ইজাজ উদ্দীন কায়কোবাদ সাভার
আমার বিয়ের সময় কোন লাইটিং কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করি নাই। অন্যদের বিয়ে করার সময় ব্যবহার করতে দেখেছি, হাস্যকর লাগত। কিন্তু মনে মনে মজাও লাগত। এটা আমি সারা জীবন মনে রাখব, যে সারাদিন কাজ করে, এত এত দৌড়াদৌড়ির মধ্যে কিভাবে সময় বের করে, নিজের বড় ভাগ্নের বিয়েতে লাইটিং এর ব্যবস্থা করেছিল কায়কোবাদ মামা, কাওকে না জানিয়ে, আমাকে খুশি করতে। আমার লজ্জা লাগছিল, কেন এটা করলা মামা – প্রশ্ন করলে বলেছিল – আরে মামা তুমি কি বল, তুমি আমার ভাগ্নে না। আমি মনে মনে হেসে ভেবেছিলাম, ও এইরকম ই। ছোট, বড় যা কিছু করবে তা হবে least expected.

মামার মত ডানপিটে আর ফানি প্রকৃতির মানুষ আমি জীবনে কম দেখেছি। কারেন্ট চলে গেলে চিৎকার দিয়ে মানুষকে ভয় দেখানোর কথা মনে পড়ছে আমার। বাসায় ঝালমুড়ি বানাচ্ছে, অধীর আগ্রহে বসে আছি কখন খাব আমরা সবাই, মামা কোত্থেকে এসে ইয়া বিশাল মুঠ করে প্রায় পুরোটা একবারে মুখে দিয়ে দিল, আর খালামনি ওই হারামি ওই বলতে বলতে... মামা দিল দৌড়। আমরা হতাশ নয়নে ঝালমুড়ির গামলার দিকে তাকিয়ে আছি।

এই গল্পটা আমার মনে পড়ছে। আমাদের ফার্মগেটের বাসায় চাম্পা কলা বিক্রি করতে এক লোক আসত। লোকটা খুবি খাট প্রকৃতির ছিল, মাথায় ডালাতে কলা রেখে হাক দিত, কলা কলা... চাম্পা কলা। একদিন মামা আর আমি বাজার এ গিয়েছি, সামনে দেখি ওই লোক হেটে যাচ্ছে। মামা দেখলাম পিছনে পিছনে হাটছে আর কলা তুলে খাচ্ছে। আমি ফিসফিস করে বলার পর ও বলল, আরে ও টের পাবে না, তুই ও খা। আমাকে হাতে একটা কলা দেবার পর আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম, করে কি মামা।

এটা বলা ঠিক হবে কিনা জানিনা, তাও বলি। একবার শবে বরাতের বা কদরের রাত্রে মসজিদে গিয়েছি মামার সাথে। বরাবরের মত আমাদের টার্গেট মিলাদ শেষে জিলাপী খাব। মিলাদ শেষ হল, স্পেশাল রাত, তাই অনেক জিলাপী আর মিষ্টির প্যাকেট। এক হুজুর মিষ্টি বিলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি অপেক্ষা করছি, আর ঐসময় মামা উঠে গিয়ে ঐ হুজুরকে বলল, আমাকে একটা প্যাকেট দেন, আমিও বিলাই। হুজুর তো ভালো মনে করে দিল এক প্যাকেট, জানিনা এর মধ্যে মিষ্টি নাকি জিলাপী। হুজুর তখন মিষ্টি বিলানো মাত্র শুরু করেছেন, এসময় মামা বলল, বাবু তুই এদিকে আয়। আমি ভাবলাম, হুদাই এই কাজ করতেছে, এখন আমাকেও মিষ্টি সাপ্লাই করতে হবে। আচ্ছা ঠিকাছে, আমি ফলো করতেছি ওকে, ও কাওকে মিষ্টি তখনো দেয় নাই, পেছন থেকে দেয়া শুরু করবে তাই মসজিদের একেবারে দরজার কাছে পৌছে গেল, আর আমি পিছে পিছে। এসময় আমার দিকে ফিরে বলল, বাবু দৌড় দে। আমি এতক্ষনে বুঝলাম ব্যাপারটা কি। কিন্তু ওকে নিরস্ত করার আগে ও দিল দৌড়, এখন আমিও তো accomplice. আমিও দিলাম জান হাতে নিয়ে দৌড়। তারপর বাসায় গিয়ে আমাদের জিলাপী বিলাস। আজো হাসি, এত দুঃখের ভেতরেও।

মামা খেলাধুলাতে ছিল ওস্তাদ। একদিনের কথা বলি, সেন্ট যোসেফ স্কুলের মাঠে একবার বাইরের কিছু ছেলে এসে ক্রিকেট প্র্যাক্টিস করছিল। মামা দেখলাম ওদেরকে কনভিন্স করে কাঠের বল হাতে নিয়ে বলিং করা শুরু করল। তার একটা বলও আমি দেখিনাই, ঐ ব্যাটসম্যান রাও দেখেনাই। আমি তখন নটরডেম এ পড়ি, মামাকে সম্ভবত ওরা চাকিং করছে বলে নিরস্ত করেছিল। কিন্তু আমি শিওর ছিলাম, ওরা আসলে ঠেকাতে পারছিল না মামার বল।

মামার গল্প বলে ফুরানো যাবে না। আমি তাকে বলেছি সবসময়, তোমার পোটেনশিয়াল সেরকম। তুমি লেখাপড়া বা খেলা কিছু একটা তে কাজে লাগাও। ও শুধু শুনত আর হাসত।

তোমার সাহসিকতা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে মামা। তুমি কেন এত ডানপিটে ছিলে মামা, কেন এত সাহসী ছিলে। কে বলেছিল তোমাকে সাহস দেখাতে এত। নিজের জীবনের পরোয়া তো কখনই করনি, এখন নিজের পরিবারকে, আমাদেরকে পরোয়া করলে না এতটুকু।

আমার গর্বের কষ্টে ছেয়ে আছ তুমি কায়কোবাদ মামা।
সূত্র: সচলায়তন

No comments:

Post a Comment