Thursday, May 23, 2013

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে ‘আলো স্টারের’ নতুন চাতুরী:আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



গত সপ্তাহে জনকণ্ঠের পাঠকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ‘প্রথম আলোর’ সম্পাদক মতিউর রহমানের দীর্ঘকালের জামায়াত-কানেকসন এবং তার কারণ সম্পর্কে ইতিবৃত্তান্ত লিখব। পরে মনে হলো, ব্যক্তিচরিত্রের নোংরামি ও ইতরামি নিয়ে আর কত কর্দম ঘাঁটব? আমার এক বন্ধুকে কথাটা বলতেই তিনি বললেন, এটা ব্যক্তিচরিত্রের নোংরামি ঘাঁটা নয়; এটা এক দুষ্টগ্রহের অশুভ কার্যকলাপ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করে দেয়া। কারণ তার হাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বিপথগামী করার হ্যামিলনের বাঁশি রয়েছে।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক থাকার সময় থেকে মতিউর রহমানের জামায়াত ও ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকার অভিযোগ শুনে আসছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি। তবে মনে সন্দেহ ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘একতার’ সম্পাদক থাকাকালে যে ব্যক্তি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রথম লন্ডন সফরের সময় তাকে মহান জননেতা বানিয়ে গুণগান করতে পারেন, তাঁর পক্ষে সম্ভবত অনেক কিছুই করা সম্ভব।
তাঁর সম্পাদিত দুই কাগজেই- ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোতে আমি দীর্ঘকাল কলামিস্ট ছিলাম। তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনার ও জানার সুযোগ আমার হয়। জামায়াতের মতো স্বাধীনতার শত্রুপক্ষ এবং ঘাতক দলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি আমার চোখে তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে এই সম্পর্কটি আরও অনেকের চোখে ধরা পড়েছে। সম্প্রতি ঢাকার অনলাইন সংবাদপত্রে ‘প্রথম আলোর’ এককালের সাংবাদিক এবং মতিউর রহমানের গুণমুগ্ধ ভক্ত প্রভাষ আমিনের মতি-জামায়াত সম্পর্কিত লেখাটা পড়েছি। মতিচরিত্র উদ্ঘাটনে প্রভাষ আমার চাইতেও বেশি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ।
মতি-জামায়াত পিরিতি নিয়ে লেখা এ সপ্তাহেও স্থগিত রাখলাম। মনে হচ্ছে মতি আবার নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এই ভূমিকাটি আরও মারাত্মক। জনমত জরিপের নামে শাহবাগ চত্বরের ঐতিহাসিক গণজাগরণ মঞ্চকে কালিমালিপ্ত করার অশুভ প্রচেষ্টাটি ধরা পড়তে না পড়তেই মতিউর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে নতুন খেলায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে ঢাকা থেকে অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন।
জনমত জরিপের নামে চাতুরীর খেলায় তিনি তাঁর দোসর মাহফুজ আনামকে সঙ্গে নেননি। এবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে তাঁর নতুন খেলায় মাহফুজ আনামকেও সঙ্গে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে মতিউর রহমান চৌধুরী নামে সাংবাদিক পরিচয়ের আরেক দুষ্টগ্রহকেও নাকি একই চক্রান্তের রূপকার হিসেবে পেয়েছেন। খবরটা কতটা সঠিক তা জানি না। কিন্তু ঢাকার নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই জেনেছি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিকে সামনে এনে দেশের বিশিষ্ট সম্পাদকদের অনেককেই বিভ্রান্ত করে একটি বিবৃতিতে সই আদায়ের খেলায় নেপথ্যে বসে কলকাঠি নেড়েছেন নাকি দুই মতি এবং মাহফুজ চক্রই। মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামের অতীতের কার্যকলাপ দেখে মনে হয় তাঁদের বর্তমান ভূমিকা সম্পর্কে খবরটিও অসত্য নয়।
‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কি একজন সাংবাদিক? আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি একজন ‘এডিটর বাইচান্স।’ তাঁর কোনো সাংবাদিক-অতীত নেই। একজন রাজনৈতিক চক্রান্তকারী এবং স্বাধীনতাবিরোধী শিবিরের লোক বলে তিনি পরিচিত। স্বাধীনতার শত্রু শিবিরের শক্তি বৃদ্ধির জন্য তিনি হঠাৎ অর্থের জোরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর ‘আমার দেশ’ কাগজটি হাতিয়ে নিয়ে মালিক এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হয়ে বসেন। তাঁর এই অর্থের যোগানদার কে বা কারা, সে সম্পর্কে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানী টিমের রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে এই হঠাৎ সাংবাদিকের আসল পরিচয় জানা যাবে।
উত্তরা ষড়যন্ত্র থেকে হাটহাজারী (হেফাজত) চক্রান্ত পর্যন্ত রাষ্ট্রবিরোধী অধিকাংশ চক্রান্তের সঙ্গে এই ব্যক্তিটি জড়িত। গতকাল (মঙ্গলবার, ২১ মে) দৈনিক সংবাদে মাহমুদুর রহমান সম্পর্কিত তাঁর ছবিসহ একটি খবর ছাপা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক পরিবৃত অবস্থায় মাহমুদুর রহমান মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসছেন। এটা ৫ মের হেফাজতী তা-বের কিছু আগে তোলা ছবি। খবরটিতে বলা হয়েছে, ১৩ দফা দাবি নিয়ে হেফাজতীদের সন্ত্রাসী কাজে উস্কানিদাতাদের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি তিনি। বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে পারলে তিনি নতুন সরকারে কয়েকজন হেফাজতী নেতাকে মন্ত্রী করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
অবৈধ পথে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে তালেবানী সরকার প্রতিষ্ঠায় যে চক্রান্ত হয়েছিল, তা শুধু সরকারবিরোধী চক্রান্ত নয়, রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্ত। ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটিকে মাহমুদুর রহমান এই চক্রান্ত সফল করার কাজেই ব্যবহার করে আসছিলেন। কোন সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ‘আমার দেশে’ ছিল না। কোন পত্রিকা কোন দলবিশেষ বা মতবিশেষের সংবাদপত্র হলেও পত্রিকাটি সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতিমালা মেনে চলতে পারে। এই নীতিমালা মেনে চলার কোন বালাই মাহমুদুর রহমানের ছিল না। কারণ তিনি তো কোন প্রকৃত সাংবাদিক বা সম্পাদক নন। তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী একজন চক্রান্তকারী হিসেবে।
গত কয়েক মাস যাবত বাংলাদেশে যে ধর্মান্ধ সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে তাতে অবিরত উস্কানি দিয়ে চলেছে ‘আমার দেশ।’ শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে ডাহা মিথ্যা প্রচার, ব্লগারদের লেখার বিকৃতি সাধন, তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে একাধিক ব্লগারের জীবননাশ ও জীবননাশের চক্রান্তÑ সব কিছুর মূলে প্রধান হোতা মাহমুদুর রহমান। দেশের নিরাপত্তা, জনগণের নিরাপত্তার জন্য তিনি একজন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে গ্রেফতার না করে সরকারের পক্ষে আর কী উপায় ছিল? তাঁকে তো সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার করা হয়েছে দেশে ধর্মীয় উস্কানি প্রদান করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোর অপরাধী হিসেবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সাইনবোর্ডের আড়ালে তিনি দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে সর্বনাশা ভূমিকা নেবেন, আর একটি গণতান্ত্রিক সরকার তার মোকাবেলায় নীরব দর্শকের ভূমিকা নেবে তা হতে পারে কী?
ব্রিটেনের মতো গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চিত গ্যারান্টি রয়েছে, সেদেশেও মাহমুদুর রহমানের কার্যকলাপকে সাংবাদিকের স্বাধীনতা বলে স্বীকার করা হতো না, তাঁকে দেশ ও গণবিরোধী ভূমিকার জন্য বহু আগে গ্রেফতার করে বিচারে শাস্তি দেয়া হতো। সম্প্রতি টাইমসের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী ও প্রভাবশালী পত্রিকা গোষ্ঠী নাগরিকদের টেলিফোন হ্যাকিং এবং তাদের প্রাইভেসি ও নিরাপত্তাহরণকারী নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। সরকার এই পত্রিকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। এই পত্রিকা গোষ্ঠীর মালিক রুপার্ট মারডকের প্রতাপের কাছে বহু দেশের সরকার পর্যপ্ত কম্পিত। কিন্তু এবার তাঁকে বার বার পুলিশের জেরার সম্মুখীন হতে হয়। তাঁর মালিকানাধীন দু’শ’ বছরের পুরনো এবং ব্রিটেনে সর্বাধিক প্রচারসংখ্যার অধিকারী ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর এক সম্পাদকসহ একাধিক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়।
বিলেতের অন্য সংবাদপত্রগুলো বা সম্পাদকরা এটাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেননি। বরং সংবাদপত্রের নীতিমালা ক্ষুণœকারী একজন অপরাধীকে ধরা হয়েছে বলে ধরে নিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর ব্যবস্থার কোন প্রতিবাদ করেননি। যদি এটা সত্যি সত্যি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ হতো, তাহলে শুধু ব্রিটেনে নয়, সারা ইউরোপে হৈচৈ পড়ে যেত এবং সেই হৈচৈয়ে ব্রিটেনের ক্যামেরন সরকারের পতন ঘটতে পারত।
কিন্তু সাংবাদিকতার নামে টাইমস গ্রুপের কাগজের এই কেলেঙ্কারির ব্যাপারে সরকার কঠোর নীতি গ্রহণ করায় সাংবাদিকদের দ্বারাও প্রশংসিত হয়েছে এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতাতেই বর্তমান সরকার প্রেস আইনের যেসব ফাঁকফোকর দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অপব্যবহার করা যায়, সেগুলো বন্ধ করে প্রেস আইন সংশোধনের পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশেও সংবাদপত্রের বা মিডিয়ার স্বাধীনতার নামে যাতে কেউ এই স্বাধীনতার অপব্যবহার দ্বারা তাকে কলঙ্কিত করতে না পারে, সেজন্য ব্রিটিশ প্রেস আইনের অনুসরণে আমাদের প্রেস আইনও সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে মাহমুদুর রহমান নামক এক ভুঁইফোড় সম্পাদককে ধর্মীয় উস্কানিদান ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানোর অপরাধে গ্রেফতার করার পর তাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ তুলে দেশের যে সংবাদপত্র সম্পাদকরা বিবৃতিতে সই দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশ সম্পাদকই সৎ ও স্বাধীনচেতা সম্পাদক। দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র শিল্পের উন্নয়নে তাঁদের যথার্থ অবদান রয়েছে। বিবৃতিতে তাঁদের সই কেমন করে আদায় করা গেল, তা আমার কাছে এক বিস্ময়। আমার জানতে ইচ্ছে করে কোন চাতুরী খাটিয়ে বা চাপ সৃষ্টি দ্বারা এই সই সংগ্রহ করা হয়েছে কি না?
একটা ঘটনা জানি, যেখানে ইত্তেফাকের সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সই সংগ্রহের জন্য দুই নম্বর মতিউর রহমান (চৌধুরী) তাঁর গোত্রের আরও দু-একজনকে নিয়ে ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। অনেক ধরাধরি এবং চাপাচাপির পরও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সই দিতে রাজি হননি। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার যোগ্য সন্তানের ভূমিকা নিয়েছেন। এই বিবৃতিতে সই দিতে রাজি হননি বিডি নিউজের প্রধান তৌফিক ইমরোজ খালিদি এবং ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানের স্বাক্ষরও এ বিবৃতিতে নেই। সম্পাদকেরও নেই। তাঁদের কাছে সই দেয়ার এপ্রোচ জানাতেই নাকি সই সংগ্রহকারীরা সাহসী হননি। এই চারজন সম্পাদককে আমার অভিনন্দন জানাই।
যেসব দেশপ্রেমিক প্রকৃত সম্পাদক সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্যের কারণে বিবৃতিতে সই দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই হয়ত এতদিনে বুঝতে পেয়েছেন, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়নি, বরং এই স্বাধীনতায় কালিমা লেপনকারী এক দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে সাংবাদিকতার মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি এই সম্পাদকদের সতর্ক হওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাই।
মাহমুদুর রহমানকে রক্ষা করার এই বিবৃতির মুসাবিদা ও সম্পাদকদের সই আদায়ের উদ্যোগটি আলো-স্টার পত্রিকার উদ্যোগ বলে আমার সন্দেহ করার কারণ এই যে, অতীতেও স্বৈরাচারকে সমর্থন জানানো এবং গণবিরোধী কাজে মতি-মাহফুজ এই দুই নন্দীভৃঙ্গিকে উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। আমার লেখার পাঠকদের স্মরণ আছে কি না জানি না, এক-এগারোর সময় তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অসামরিক প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে ডিঙিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের কাছে সংবাদপত্রের একটি সমস্যা সুরাহা করার নামে সকল সম্পাদককে নিয়ে হাজির হওয়ার এবং সেনাপ্রধানের হাত শক্তিশালী করার প্রধান উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। জেনারেল মইন তাঁকে পাত্তা না দেয়ায় তিনি প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার কাছে ধর্ণা দেন এবং মূসার উদ্যোগে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সম্পাদকদের বৈঠক হয়। তাতে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সিভিল অথরিটির মর্যাদা ও কর্তৃত্ব ক্ষুণœ হলো কি না তা মতি-মাহফুজ ভেবে দেখেননি।
এবার আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে মতি-মাহফুজ নতুন খেলায় নেমেছেন। তার আরেকটি প্রমাণ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে সম্পাদকদের একটি বিবৃতি প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাহফুজ আনামের নামে সকল সম্পাদকের কাছে প্রেরিত এক দাওয়াতপত্রে গত সোমবার রূপসী বাংলা হোটেলে এক ভোজসভায় মিলিত হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এই ভোজসভার উদ্দেশ্য হিসেবে নাকি বলা হয়েছে, সম্পাদকদের একটি ফোরাম গঠন করা। ভোজসভাটি আদৌ অনুষ্ঠিত হয়েছে কি না এবং হলে ক’জন সম্পাদক তাতে অংশগ্রহণ করেছেন তা আমার এখনও জানা হয়নি। এটা শেষ পর্যন্ত ‘জাতীয়তাবাদী সম্পাদক ফোরাম’ গঠনের উদ্যোগ কি না তা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। এখানেও নিরপেক্ষতার সাইনবোর্ডের আড়ালে জাতীয়তাবাদী সম্পাদক ফোরাম গড়ে উঠলে বিস্ময়ের কিছু নেই।
মনীষীরা বলেন, চালাকির দ্বারা কোন মহৎ কাজ করা যায় না। মতি-মাহফুজ চক্রও তাই দেশে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি ছাড়া কোন মহৎ কাজ করতে পারছেন না। এই চালাকির মুখোশও এখন ছিন্ন হতে শুরু করেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে সম্পাদকদের যে বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে তার প্রতিবাদ উঠেছে নানা মহল থেকে। দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীরা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামও এই প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আছে। লক্ষণীয় ব্যাপার, বিবৃতিদাতা বুদ্ধিজীবীদের শীর্ষ নামটি হচ্ছে বিখ্যাত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর। তিনি ‘প্রথম আলোর’ শিল্প নির্দেশনার উপদেষ্টা, অন্যদিকে প্রথম আলোর চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রধান বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন প্রথম আলোর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন। শুধু প্রভাষ আমিন নয়, প্রথম আলোতে কর্মরত বহু প্রগতিমনা তরুণ সাংবাদিকের মতিউর রহমান সম্পর্কে মোহভঙ্গ হচ্ছে, তার স্বরূপ তাদের কাছে উদ্ঘাটিত হয়েছে।
সন্দেহ নেই, টাইটানিক ডুবির সূচনা হয়েছে মাত্র। সময় লাগতে পারে, কিন্তু তার ভরাডুবি অনিবার্য।

লন্ডন, ২১ মে, মঙ্গলবার, ২০১৩
সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

No comments:

Post a Comment