Wednesday, May 15, 2013

পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা:প্রকৌ. তাওহীদ হাসান



আমি পত্রিকায় লেখা লেখির জীবন শুরু করেছিলাম পুলিশকে নিয়ে লিখে। সাধারনত পুলিশের নামে যেসব লেখালেখি হয়, গতানুগতীক সেসব ধরনের লেখার বাইরে ছিল আমার লেখাটি। পত্রিকার বার্তা সম্পাদক, সম্পাদক অনেক চিন্তা ভাবনা করে লেখাটি ছেপেছিলেন। শিরনাম ছিল “পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা”।
আমার একটি ধারনা থেকেই লেখাটি শুরু করা। সারা দেশের মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নির্ঘুম পুলিশই কিন্তু জনসাধারনের শান্তি-নিরাপত্তা-ঘুম নিশ্চিত করে। তাই তাদের প্রতিও আমাদের অল্প হলেও কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার।

সম্প্রতি পুলিশের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনা ঘটছে। প্রতিউত্তরে, পুলিশও জনগনকে ফুল দিয়েছে। আমার স্মরন শক্তিতে বাংলাদেশে ঘটনাটি প্রথম। বিশ্বের অন্যকোথাও ঘটেছে কিনা ঠিক জানা নেই। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর কোন দরকার নেই যে, আবারো প্রমানিত হল, পুলিশ জনগনের বন্ধু। আর অন্ধ লোকরাতো কোন দিনই চোখে দেখতে পাবে না।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্থান পাওয়ার মতই একটি ঘটনা এটি। পুলিশ কমিশনার নিজেও এই “স্যালুট টু পুলিশ” কর্মকান্ডের সাথে জড়িতদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই কাজের যিনি উদ্দোগতা তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন সিনিয়র। তার কাজের সাথে আমি স্বশরীরে যুক্ত হতে না পারলেও তিনি যেদিন থেকে যেভাবে কাজ শুরু করেছিলেন সবই আমি জানি। কিন্তু দূঃখ লাগে যখন শুনি এমন একটা কাজও অনেকে সহজে মেনে নিতে পারে নি। আমার ভয়ের জায়গাটা অন্য। এইসব লক্ষণতো ভালো না !
যে পুলিশ জনগনের সেবায় নিয়োজিত তাদের উপর ইদানিংকালে হামলা হচ্ছে। জিনিসটাকে কি হালকা ভাবে নেয়ার উপায় আছে? সামনের দিনে কি দেখতে হবে কে জানে, তবে এসব কর্মকান্ডের নমুনা কিন্তু ভালো নয় !
উদাহরন টেনে বলা যেতে পারে সবচেয়ে বেশি সারা জাগে এপ্রিলের শুরুতে রাজশাহীর ঘটনায়। রাজশাহীতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা চালানো হয়। সে সময় ইট ও হেলমেট দিয়ে মাথায় আঘাত করে এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনা ঘটে। এ সময় এসআই জাহাঙ্গীর আলমের পিস্তলও কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অল্পের জন্য প্রানে বাচেঁন তিনি।
১৪ এপ্রিল মৌলভীবাজারের রাজনগরে পুলিশের উপর হামলা চলে। রাত ১০ টার দিকে কয়েকজন আসামী আটক করে থানায় নিয়ে আসার পথে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। এসময়ে কয়েকজন পুলিশ আহত হন এবং পুলিশের ব্যবহৃত একটি গাড়িও ভাংচুর করা হয়েছিল। ঘটনাটি চিন্তা করতেই কেমন যেন লাগে !
এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে বরিশালের কাটপট্টি এলাকায় বেলা ১২ টার দিকে হরতালের সমর্থনে মিছিলের প্রস্ততিকালে পুলিশের উপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে পুলিশ সদস্য আহত হন।
এপ্রিল মাসের ১২ তারিখের দিকে। বৃহস্পতিবার ডাকা হরতালে পুলিশ কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা ঘেরাও করে রাখলে পুলিশের উপর ইট পাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৪ পুলিশ কনস্টেবল আহত হন।
এপ্রিল মাসে রাতে অন্ধকারেই কক্সবাজার শহরে মিছিল বের হয়েছিল। ওই সময় কক্সবাজার শহরের বাজার ঘাটা এলাকায় পুলিশের উপর গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় কক্সবাজার সদর থানার এসআই জাকির সহ ৪ জন।
পুলিশের উপর ককটেল-গুলি। প্রতিরোধের সময় কি এখনো আসেনি ? এমনভাবে চলতে থাকলে, দেশের নিরাপত্তার কি অবস্থা হবে?
২১ মার্চ সকালে মহেশপুরে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে।
পুলিশের উপর হামলার ঘটনা ঘটে শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে ।
রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, সিলেটে আধা বেলা হরতালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ঝটিকা মিছিল বের হয়েছিল। নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় পিকেটারদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
জানুয়ারি, ২০১৩। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল বাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে যাতে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন।
হামলার স্বীকার হয়েছেন বেগমগঞ্জ সার্কেল এএসপি মো: মাহাবুবল আলম খানসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য, ঘটনাটি ফেব্রুয়ারি মাসের।
চট্রগ্রামে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নানকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাটি অবশ্য গেল বছরের।
গেল বছরের শেষের দিকে, রোববার পিরোজপুরের জিয়ানগরে, জিয়ানগর থানার ওসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।
পুলিশের উপর হামলার খুব অল্প কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবতা আরো নির্মম, ফলাফল ভয়াবহ। এই চক্রকে ঠেকানো দরকার বলে মনে করি। এদের এখনি রুখতে না পারলে, আইনের শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভবনা নেই?
হ্যা এটা বলা হচ্ছে না, পুলিশ সবাই শ্বর্গীয় দূত। কিন্তু তাদের বিচার দায়িত্ব জনগনকে দেয়া হয়েছে এটাওতো কোথাও বলা হয়নি। পুলিশের উপর হামলা করে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। যা মেনে নেওয়া কষ্ট, প্রতিরোধ করা রীতিমত সময়ের চাহিদা না হলে বিপদ অবিশ্বম্ভাবি।

লেখক : প্রকৌশলী
tawheed555@gmail.com

No comments:

Post a Comment