বিকৃত নপুংসক আহমদ শফিদের আর সুযোগ দেয়া যায় না! - সুমি খান
আমার জন্ম একটি ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেক্যুলার পরিবারে। যেখানে ধর্ম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা কিছু নিয়েই কখনো কোন বাড়াবাড়ি বা শোষণ নিপীড়ন ছিল না। মনের আনন্দে পড়েছি আর ফাঁকিবাজি করেছি। এর কারণ ছিল, আমার মা-বাবা দু’জনের পরিবার ই সেক্যুলার ছিল। চার-পাঁচ প্রজন্ম আগেও ধর্ম নিয়ে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি কাউকে পোহাতে হয় নি। মুক্তচিন্তা আর মুক্ত আনন্দে বেড়ে উঠেছে ভাই বোন সবাই। তবে এও সত্যি, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেক্যুলারিজমের পাশাপাশি ধর্মান্ধতা গেড়ে বসেছে এই প্রজন্মের জীবনাচরণে !পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব যাবে কোথায় আর!
আমাদের শৈশব এবং কৈশোরে যাদের কাছে আরবী শিক্ষা গ্রহণ করেছি, তাদের আচরণ ছিল প্রকৃত শিক্ষাগুরুর মতো অত্যন্ত স্নেহশীল এবং মায়াময় । এখনো সেই শিক্ষাগুরু আমাদের পারিবারিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে এলে মায়ের কাছে আমার খোঁজ নেন । পথে ঘাটে তার সাথে দেখা হলে বিনম্র শ্রদ্ধায় তার পা ছুঁয়ে সালাম করতে ছুটে যাই। আমি এবং আমার দু’ভাই যখন হুজুরের কাছে পড়তে বসতাম, কখনো তার আচরণে অথবা কথায় কোন বৈষম্য পাইনি। আমার মনে পড়ে না- কখনো বেত হাতে তিনি আমাদের পড়তে বসিয়েছেন। আমার পোষাক, জীবনাচরণ নিয়ে কোন রকমের মন্তব্য করেন নি কখনো। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ইসলাম ধর্মের মূল বাণী শান্তি এবং মানব সভ্যতার বিকাশ এবং প্রগতি । তার চোখে ছিল পিতৃসুলভ অপত্য স্নেহ, যা এখনো অমলিন। এই শিক্ষাগুরু এবং ইসলামের পবিত্রতা কে কলঙ্কিত করছেন জামায়াত –হেফাজতি আহমদ শফি, সাঈদী গোলাম আযম নিজামী , সাকাচৌধুরী এবং তাদের অনুসারীরা । যারা বিপন্ন করে তুলেছেন মুক্তচিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে। সংকটময় করে তুলেছেন এদেশের স্বাভাবিক জনজীবন কে।
বড়ো হয়ে দেখেছি আমাদের শিক্ষাগুরু একেবারেই ব্যাতিক্রম । ধর্মশিক্ষা যারা দেন, তারা অধিকাংশই অশিক্ষিত বিকৃত চরিত্রের ; লোভী এবং প্রবঞ্চক। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ আহমদ শফী। যার বিকৃত বাণী এখন বিশ্বজুড়ে নিন্দিত। মুক্তচিন্তা আর সভ্যসমাজ প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছে বা এখনো করছে- তারাই এদের টার্গেট।
বেগম রোকেয়া বলেছিলেন; আমি কারসিয়ং ও মধুপুর বেড়াইতে গিয়া সুন্দর সু-দর্শন পাথর কুড়াইয়াছি উড়িষ্যা ও মাদ্রাজে সাগরতীরে বেড়াইতে গিয়া বিচিত্র বর্ণের বিবিধ আকারের ঝিনুক কুড়াইয়া আনিয়াছি। আর জীবনে ২৫ বছর ধরিয়া সমাজ সেবা করিয়া কাঠ মোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইয়াছি।’
বেগম রোকেয়া থেকে জাহানারা ইমাম এদের টার্গেট। এরাই তো একাত্তরে ইসলামের নামে ঘরে ঘরে নারীদের বর্বরোচিত ভাবে ধর্ষণ , নির্যাতন এবং তিরিশ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালী কে হত্যা করেছিলো । দুই কোটি মানুষকে দেশছাড়া করেছিলো ইসলাম রক্ষার নামে। বিজয়ের দু’দিন আগে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে এ দেশ কে মেধাশূণ্য করার সুপরিকল্পিত নীল নক্সার বাস্তবায়ন করেছিলো ‘ইসলাম রক্ষা’র নামে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত,ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ফেরদৌসী মজুমদার , মুনতাসীর মামুন , শাহরিয়ার কবির , ডা. ইমরান এইচ সরকার তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক, ‘মুরতাদ’ । কারণ, এরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক । যাদের নিরলস প্রচেষ্টা এখনো এ জাতিকে শেকড়চ্যুত হতে দেয় নি। এদের বিরুদ্ধে নিরীহ ধর্মভীরু মানুষদের ক্ষেপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ,আফগানিস্তান অথবা সোমালিয়ার মতো অন্ধকার দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে মত্ত শফি এবং তার বাহিনী।
আমার মতো ক্ষুদ্র একজন সংবাদকর্মী ও বার বার এই অন্ধকারের শক্তির অন্যায় মিথ্যাচার ,মৃত্যু পরোয়ানা, হুমকি আর আক্রমনের শিকার হয়েছি। কেন? ইসলামের যাবতীয় শুদ্ধতার ক্ষমতা কি এদের হাতে? আমাদের অতি সাধারণ জীবনটি এভাবে বিপন্ন করে তোলার অধিকার এদের কে দিয়েছে?
নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “ আমায় একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো”। আর এই স্বঘোষিত ‘আলেম’ সমাজ দেশের উদীয়মান সুপ্রতিষ্ঠিত নারীসমাজকে চারদেয়ালে বন্দী রাখলেই যেন এদের সব খায়েশ পূর্ণ হয়ে যায় !
বেগম রোকেয়া আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সেলাই করিবার জন্য মাপেন। স্বামী যখন কল্পনার সাহায্যে সুদূর আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রমালা বেষ্টিত সৌরজগতে বিচরণ করেন, সূর্য মন্ডলের ঘনফল তুলাদন্ডে ওজন করেন এবং ধুমকেতুর গতি নির্ণয় করেন, স্ত্রী তখন রন্ধনশালায় বিচরণ করেন, চাউল ডাল ওজন করেন এবং রাঁধুনীর গতি নির্ণয় করেন। সুশিক্ষার অভাবে নারীরা যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না”।
আহমেদ শফী নারীকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিতে চান। দেখতে চান তার যৌনতা আর শয্যার আজ্ঞাবাহী ক্রীতদাসী হিসেবে মাত্র। অথর্ব মূর্খ এই মিথ্যুকের অশ্লীল বাক্যের বক্তৃতা শুনে তার প্রতি ঘেন্নায় থুথু ছিটাতে ইচ্ছে হয়। এদেশে অন্যায়ের বিচার নেই বলেই এখনো মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারে এই হিংস্র নপুংসকের দল!!
হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী নারীদের পোষ্য , নির্জীব বস্তু হিসেবে গণ্য করেন। যা তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট। তিনি সকল পুরুষ কে আহ্বান জানিয়েছেন তার মতো কুৎসিত আর অশ্লীল ভাবে নারীদের দিকে তাকাতে। কলঙ্কিত করলেন এ সমাজের পুরুষ দের যারা কারো বাবা, ভাই ,স্বামী অথবা সন্তান। যারা নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাদের মা, বোন, স্ত্রী ,কন্যা অথবা বন্ধু কে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় পাশে রেখেছেন সুখ-দু:খের সাথী করে। যাদের সহযোগিতায় এই সমাজ এগিয়েছে এতোটা পথ!
ভাবতে করুণা হয়,৯৩ বছর আগে কী কু-সন্তান জন্ম দিয়েছেন শফীর মা! স্বাধীনতা, শিক্ষা ও চাকরি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, সভ্যতা ও উন্নয়ন বিরোধী মন্তব্য করেছেন। ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি ওয়াজ মাহফিলে ভিডিওচিত্রে তার এ বক্তব্য এখন দেশে বিদেশে চরম নিন্দিত-সমালোচিত !
উল্লেখ না করলেই নয়, শফীর সহযোদ্ধা একাত্তরের ঘাতক দের কথা। এদের অন্যতম পালের গোদা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়াকে উদ্দেশ্য করে অনেক তির্যক , অশ্লীল মন্তব্য করেছেন বারবার । ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে সাকা চৌধুরী বিএনপি তে যোগ দেয়া নিয়ে অনেক অশ্লীল কথা বলেছিলেন, যার সবটাই ছিল খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে। বলেছিলেন, “তালাক দেয়া বিবি কে আমি ঘরে তুলি না।- কুকুরে লেজ নাড়ে, না লেজে কুকুর নাড়ে ” বেগম খালেদা জিয়া জানেন, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই । তাই নিজেকে ‘কুকুর’ বলে মেনে নিয়েই কাছে টেনে নেন।সেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরবর্তীতে তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা বানান ! রাজাকার, চরিত্রহীন, সমকামী সাকা চৌধুরীকে ওআইসি এর মহাসচিব হিসাবে দাঁড় করানোর মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করার ধৃষ্টতা দেখান বেগম জিয়া। আর এখন তিনি আবার শফী কে সাথে নিয়ে ধর্মের নামে নতুন করে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু করেছেন। এর পরিণতি থেকে তিনি নিজেও কি রক্ষা পাবেন? তাকে দেখে ও যে ৯৩ বছরের শফির তেঁতুলের মতো লোভনীয় মনে হয়- সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না?
দেশের পোষাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিক নারী । এদের উপার্জনে দেশ আজ স্বনির্ভর। সেই টাকায় মূর্খ মিথ্যাচারী শফী সাহেব হেলিকপ্টারে করে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান আর ভুড়িভোজন করেন। সেই বিবেক বোধ তার নেই বলেই বলে বেড়ান , “মেয়েরা আসবাবপত্রের মতো । গার্মেন্টসের মেয়েদের ‘জেনা’ থেকে রক্ষা করতে” নারীদের চার দেয়ালের ভেতর বন্দী করে রাখতে বললেন! ধিক্ শত ধিক্ !!
হাটহাজারী আলজমিয়াতুল আহলিয়া উলুম মাদ্রাসার পরিচালক, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও হেফাজত-এ ইসলাম বাংলাদেশের আমীর কী করে হলেন আহমদ শফি ? কারা তাকে এই পদ পেতে হেদায়েত করছেন? কী উদ্দেশ্যে?
সবাই জানেন, এই শফি জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন মেয়েদের ৪/৫ ক্লাসের বেশী না পড়াতে, সর্বদা ঘরে থাকতে, এমনকি জিনিসপত্র কিনতেও বাইরে না যেতে। বলেছেন গার্মেন্ট-নারীরা জ্বেনা করে উপার্জন করে, নারীরা তেঁতুলের মত যা দেখলেই পুরুষের মুখে লালা পড়ে। বলেছেন স্ত্রীদের আল্লাহ "বাদশা" বানিয়েছেন, তারা শুধু স্বামী-পুত্রকে "অর্ডার" করবে আর তারা তা করবে। নারীদের নাকি ২২ তাল। যে কারো রুচিতে বাধবে এসব বলতে।
জানেন তো, হিংস্র পশুদের খাঁচায় বন্দী করে রাখতে হয়? আপনাকে অনেক আগেই খাঁচায় বন্দী করে রাখা উচিত ছিলো। এখনই আপনি আর আপনার অনুসারী দের খাঁচায় বন্দী না করলে আমাদের দেশের নারী দের যে কী পরিণতি হবে – সেই ভয়াবহতা আপনার কথাতেই প্রকাশ পাচ্ছে। তবে আপনাদের তান্ডবের কারণে বাংলাদেশে এমন সৎসাহস নিয়ে কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় এখনো আসে নি।
যে কারণে এখনো সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা হয়নি এ সমাজে। আমরা নিজেরাই কি তবে অন্ধকার কে ভালোবাসি?
নিজের গায়ের উপর না এলে আপনার মতো বিষাক্ত সাপ দের দুধকলা দিয়ে পুষতেই ভালোবাসেন আমাদের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা! যে কারণে আওয়ামী লীগের কওমীপন্থী প্রভাবশালী নেতাদের প্ররোচণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতোদিন মৌন সমর্থন দিয়েছেন শফী বাহিনীর নষ্টামী আর দুরাচারে। তার ওয়াজ সরাসরি শোনার পর এদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বৈপ্লবিক নেতৃত্ব দানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠিন বক্তব্য দিলেন শফীর বিরুদ্ধে । তবে কঠোর ভূমিকা নিতে পারলেন না এখনো।
এতোদিন শুনে এলাম , ইসলাম শান্তির ধর্ম, নারী-বান্ধব ধর্ম! আপনি এবং আপনার মতো মুসলিম ব্রাদার হুড নেতারা ইসলামের এই শান্তির বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন শফি সাহেব! আপনার মতো মোল্লারা অস্ত্র তুলে দিলেন ইসলাম বিরোধী দের হাতে।আহমদ শফি এতো নোংরা, হিংস্র কথা বলেছেন- যা ইসলাম , মানব-সভ্যতা এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে চরম হুমকি ।
এই যে ,দুর্মর, দুরাচার শফী- তবু আপনাকে বলি, অন্যান্য শিক্ষায় বড় সার্টিফিকেট হাসিল করলেই তাকে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলা যায়। কিন্তু ইসলামে বা কোন ধর্মেই তা নয়। ডিগ্রী থাকুক বা না থাকুক, যিনি কোরান-রসুল বা অন্য ধর্ম কে মানুষের মঙ্গল কামনায় সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন-তিনিই প্রকৃত আলেম, প্রকৃত মাওলানা অথবা ধর্মযাজক!
অতীত বর্তমানে বিশ্ব-মুসলিমের অনেক ক্ষতি করেছেন অনেক ডিগ্রীধারী তথাকথিত মাওলানা। বড়পীরের মতো দরবেশকে ও ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়ে স্বাক্ষর করেছিল ইমাম হৌজ-এর নেতৃত্বে এক হাজার মাওলানা (মুখবন্ধ –ফতহুল.গযব,-তাঁর.বক্তৃতার.সংকলন)।
এজন্যই রসুল বলেছিলেন-উম্মতের জন্য তাঁর "সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ পথভ্রষ্টকারী আলেমদের নিয়া"-সহি ইবনে মাজাহ” ৫ম খণ্ড ৩৯৫২। এটাও দেখুন:-"এ সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী মাকতুবাত গ্রন্থে লিখেছেন যে, জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি একবার অভিশপ্ত ইবলিসকে দেখতে পায় যে, সে একেবারে খোশ মেজাজে ও বেকার বসে আছে। ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি ইবলিসকে তার এহেন বেকার বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে সে বলে যে, বর্তমান সময়ের আলেম সমাজ আমাদের কাজ সমাধা করছে, জনগণকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তারাই যথেষ্ট "। এখন বিচার করুন আপনি কি ইবলিশের হয়ে কাজ করছেন না? রসুলের সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ আপনার মতো ভ্রষ্ট পথপ্রদর্শকদের নিয়ে নয়কি?
শফির মতো বর্বর অপরাধীদের ইসলাম-বিরোধী নিষ্ঠুরতার কয়েকশ' উদাহরণ তুলে ধরেছেন শারীয়া গবেষক হাসান মাহমুদ। যিনি দশ বছর একনিষ্ঠ ভাবে শারিয়া নিয়ে গবেষণা করে "শরিয়া কী বলে, আমরা কী করি" বইটি প্রকাশ করেছেন।
এই গবেষণা গ্রন্থটি যারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন, তারা অনুধাবন করতে পারবেন- আহমদ শফি, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী , মতিউর রহমান নিজামী , গোলাম আজমের র মতো ধর্মব্যবসায়ীরা পবিত্র কোরান হাদিস নিয়ে কতোটা মিথ্যাচার করেন।
কোরান-রসুল থেকে মানুষের মঙ্গল যারা তুলে আনতে পারেন, তাঁরাই সত্যিকার আলেম, মাওলানা ও ইসলামের পতাকাবাহী। আর যাঁরা কোরান-রসুল থেকে তুলে আনেন মানুষের অমঙ্গল ও নারীর ওপরে অত্যাচার তাঁরা আলেমের ছদ্মবেশে ভয়ংকর রাক্ষস।
নারীর ওপরে অত্যাচারের মধ্যে তাঁরা দেখেন সওয়াব, খোঁজেন বেহেশত। ‘কোরাণ’ ‘কোরাণ’ বলে মুখে ফ্যানা তুলে কাজে তাঁরা প্রয়োগ করেন হাদিস। তাও, কোরান-বান্ধব হাদিস প্রয়োগ করেন না, - করেন কোরান বিরোধী নারী-বিরোধী হাদিস। বৌ-পেটানোর মত অমানবিক সন্ত্রাসকে তাঁরা হালাল করেছেন কোরানের (নিসা ৩৪) বিকৃত অর্থ করে আর এই ধরণের নারী-বিরোধী হাদিস দিয়ে - রোজ হাশরে কোনো স্বামীকে নাকি জিজ্ঞাসা করা হবে না কেন সে এই দুনিয়ায় বৌকে পিটিয়েছিল - সুনান আবু দাউদ, ২১৪২। নবীজী নাকি বলেছেন, “যত ইচ্ছে বৌ পেটাও, কোনো সমস্যা নেই”। এটাই তাঁদের ইসলাম। শারীয়া বলে , ইসলাম সম্পূর্ণ আলাদা ও নারী-বান্ধব।সহি মুসলিমে নবীজীর সুস্পষ্ট ও কঠিন নির্দেশ দেয়া আছে, "বৌকে পেটাবে না"।
বই ১১. নং ২১৩৮ বর্ণিত আছে,মুআ’হি বিন হাইদাহ: আমি আল্লাহর প্রেরিত পুরুষকে বলেছি, “আমরা আমাদের স্ত্রীদের কী করে উপস্থাপন করবো –তাদের ছেড়ে দেবো কী করে? –তিনি বলেছেন, তুমি যেভাবে চলবে , ঠিক সেভাবেই তার (তোমার স্ত্রীর) ভরণ পোষণ করবে, কখনো তাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার , গালাগাল অথবা সমালোচনা করবে না। কখনো তাকে প্রহার করবে না।
এ বাণী গুলো আহমদ শফীর জানা নেই । কারণ , তিনি বিবেক বর্জিত এবং ইসলামের শান্তির বাণীর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। তিনি এবং তার নষ্ট ভ্রষ্ট মস্তিষ্কের অনুসারী রা মানবতা, মানবসভ্যতা এবং ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের হোলিখেলায় নেমেছেন।
এ ব্যাপারে বিদায় হজ্বের বক্তৃতায় নবীজী কি হুকুম করেছেন সেটাও তাঁরা কখনোই জাতিকে জানতে দেন না - "তাহাদের (স্ত্রীদের) উচিত নয় -তোমরা যাহাকে পছন্দ করোনা তাহাকে নিজের বিছানায় বসাও - তাহা করিলে প্রহার করিতে পারো, কিন্তু মৃদুভাবে" - সহি মুসলিম ৭ম খণ্ড ২৮০৩, সহি ইবনে মাজাহ ৪র্থ খণ্ড ৩০৭৮ ইত্যাদি। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ এই শব্দ টি "বিছানায় বসা"-র অর্থ করেছেন পরকীয়া। অর্থাৎ তারা ব্যাখ্যা করেন, নবীজী হুকুম করেছেন – “পরকীয়া- ব্যভিচার না করা পর্য্যন্ত বৌয়ের গায়ে হাত তুলবে না”।
এখানে আমি বিস্মিত হই, একজন নারী বিছানায় শোবে কি শোবে না- তা নির্ধারণ করবে পুরুষ অথবা নারী , অথবা অন্য কেউ ? বলতে হয়, যাহা বাহান্ন, তাহা ই তেপ্পান্ন। নারীর ইচ্ছে- অনিচ্ছে বন্দী থাকবে পুরুষ বা অন্য কারো মুঠোয়? তাহলে আর নারী কে মানুষের কী মর্যাদা দিলো শারিয়া? এই প্রশ্নের একমাত্র জবাব- কোন মানবিক অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ- অন্য একজন মানুষকে তার ইচ্ছে –অনিচ্ছের দাস ভাবতে পারেন না কখনো। আমার বলতেই হয়, শারীয়া প্রবর্তন কালীন পিছিয়ে তাকা সমাজের প্রতিচ্ছবি আমরা পাই। এই স্ববিরোধী এবং নারীর প্রতি অবমাননামূলক নির্দেশনা গুলোর সুযোগ নিয়েছে শফীর মতো কাঠমোল্লারা ।
উল্লেখ করতে হয়, শারীয়া গবেষক হাসান মাহমুদের বক্তব্য।“পরকীয়াই হোক্, বা "বিছানায় বসা"-ই হোক ওটা ছাড়া অন্য কোনো কারণে বৌযের গায়ে হাত তোলা নাজায়েয। নানা রকম কুযুক্তি কূটতর্কে সেটা জায়েয করে রসুলের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেন তাঁরা”।
এই কাঠমোল্লাদের কথার সূত্র ধরে প্রশ্ন ওঠে, পুরুষকে কেন তারা নারীর কর্তা দাবি করেন ? আল্লাহ পুরুষকে নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেছেন কখনো? তারা এই দাবি করেন , কারণ তারা মনে করেন পুরুষের গায়ে শক্তি বেশী, তাই না ? একজন রেসলার নারীর সাথে শারীরিক শক্তিতে সাধারণ পুরুষ পারবেন তো? তাহলে তো ‘ আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নয়, পুরুষ রূপী পশু বা ডায়নোসর!
শফীর মতো কাঠমোল্লারা বলেন , “নবীজী দোজখে বেশীর ভাগ ই নারী দেখেছেন”। কী করে একথা বলেন তারা ? শারীয়া মতে , বেহেশত-দোজখে তো আমরা যাবো কেয়ামতের পরে- হাশরের বিচারের পরে। ঐ মেয়েগুলো দোজখে চলে গেলো- মানে কেয়ামত হয়ে গেছে? কবে হলো? রোজ হাশরের বিচার ও হয়ে গেলো বুঝি? কবে হলো?
গবেষক হাসান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আপনাদের নারী-বিরোধী হাদিসকে পরাজিত করি ওই কোরান, ওই রসুল থেকেই”।
কিছু ব্যতিক্রম সব সমাজেই আছে, আপনাদের অনেক মাদ্রাসাতেও ব্যাতিক্রম আছে। সাধারণভাবে আমাদের নারীরা অত্যন্ত মেধাবী, সক্ষম, কর্মঠ, দক্ষ । তাদের চলাফেরা যথেষ্ট শালীন। অর্থনীতি সহ দেশের সর্বক্ষেত্রে তাঁরা অসামান্য অবদান রাখছেন, তাঁরা আপনাদের মতো যাকাতের টাকায় চলেন না বরং তাঁদের উপার্জনের ট্যাক্স ও যাকাত দিয়ে আপনাদের চলতে হয়। তাঁরা আপনার চেয়ে কম ধার্মিক নন। কেবল আপনি ই মুসলমান অন্য কে মুসলমান আর কে নন- তা নিশ্চয়ই আপনারা নির্ধার করবেন না?
আল্লাহ ও নারী সমাজের মধ্যে কোনো দালালের দরকার নেই ইসলামে সে সুযোগও নেই। শফী কাঠ মোল্লা কে বলি, আপনি নারী সমাজকে যথেষ্ট অপমান করেছেন । আপনি অপমান করেছেন পুরুষদেরও।
এ প্রসঙ্গে আবার ও গবেষক হাসান মাহমুদের বক্তব্য তুলে ধরতে হয়, “ আপনি সব পুরুষদের কামুক জন্তু বানিয়ে ছেড়েছেন। এতো সাহস, এতো স্পর্ধা আপনার কি করে হলো? আপনার ইসলাম আপনাকে এই শিখিয়েছে? আপনি দুনিয়া দেখেন নি, আপনি কিছুই জানেন না। আমরা নারী-পুরুষ একসাথে পড়াশুনা করেছি, একসাথে চাকরী করছি -আপনার মাথায় সবসময় যে নোংরা পোকাগুলো নড়াচড়া করে সেগুলো আমাদের মাথায় নেই। আমাদের কাছে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের দেয়া কোরানের- রসুলের নারী-বান্ধব ব্যাখ্যা ও হাদিস আছে”।
শারীয়া গবেষক শ্রদ্ধেয় হাসান মাহমুদ বিদগ্ধ জন। শফীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, ইসলামের যে ব্যাখ্যা শফী এবং তার অনুসারীরা বয়ে বেড়ান সেটা যে কতো নোংরা ও নিষ্ঠুর তা দলিল ধরে ধরে দশ পনেরো বছর ধরে জাতিকে জানাতে চেষ্টা করছি। কাজটা কঠিন, সাফল্য বেশী নয় কিন্তু কাজ এগোচ্ছে। শফী এক লহমায় সেই সাফল্য এনে দিলেন। ইসলামের নামে শফী গংদের ভেতর লুকিয়ে রাখা রাক্ষসের চেহারাটা দেখে আতংকে আঁৎকে উঠছে জাতি। সমাজের এই রাক্ষস দের মুখোশ খুলে গেলো। মানুষকে সচেতন করার কাজ সহজ হয়ে গেল কিছুটা হলেও।
হেফাজতের এই ধর্মান্ধ নেতা বলেন, ‘ তোমরা নারীরা শুন, বাড়ির বাইরে যেয়ো না। রাস্তায়, স্টেশনে, বাজারে, মাঠে নগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা করো না। সাবধান! কেনাকাটা করতে যাবে না। তোমার স্বামী বা ছেলেকে বলো বাজার করার জন্য। তোমাকে কেন যেতে হবে? তুমি শুধু বসে থাকো এবং ছেলেকে হুকুম করো। তোমাকে কেন এই ঝামেলা পোহাতে হবে?’ শফীর মতে, নারীদের কাজ হলো আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়া, সন্তান লালন-পালন করা, ঘরের মধ্যে থাকা। চট্টগ্রামভিত্তিক হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ৯৩ বছর বয়সী শফী বলেন, ‘শোনো নারীরা, চার দেয়ালের ভেতরই তোমাদের থাকতে হবে। স্বামীর বাড়িতে বসে তোমরা আসবাবপত্র দেখভাল করবা, শিশু লালন-পালন, পুরুষ দের যত্ন করবা। এই হলো তোমাদের কাজ।’এ যেন পাকিস্তান আর আফগানিস্তান এর অন্ধকারে ঠেলে দেয়া।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর ২০১০ সালের হিসাব মতে, দেশের চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ২০০২-০৩ সালে এটা ছিল এক কোটি। তবু পুরুষের তুলনায় তা অর্ধেক।
ওয়াজে নারীদের তিনি তুলনা করেছেন তেঁতুলের সঙ্গে। তেঁতুল দেখলে মানুষের যেমন জিভে জল আসে তেমনি নারীদের দেখলে ‘দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়’ -বলে অশ্লীল , ঘৃণ্য মন্তব্য করেছেন তিনি। যাদের তা হয় না, তাদের পুরুষত্বহীন বলে তিরস্কার করেছেন শফি! শফির ওই বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক আর ব্লগে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ ধরণের নোংরা বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছেন।
সম্প্রতি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করেই উগ্রপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠী হেফাজত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। সংগঠনটির ১৩ দফা দাবি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব দাবির মধ্যে ছিল নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করা, বিদেশি সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করা, মোমবাতি প্রজ্বলন নিষিদ্ধ করা। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিলের সমাবেশে এই দাবিগুলো পেশ করে হেফাজত।সমাবেশের দিন নারী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় হেফাজতের লোকজন। হেফাজতের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন গেলো ? তাদের মাথায় কাপড় নেই কেন? এ ধরনের অযাচিত প্রশ্ন তুলে নারী সাংবাদিকদের হেনস্থা করা হয়। সমাবেশের পাশ দিয়ে কোন কর্মজীবি নারী বাড়ি ফেরার পথে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রামে অনেক দম্পতিকে রিক্সায় করে যাবার সময়ে অপমান করে রিক্সা থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ একসাথে রিক্সায় বসতে পারবে না বলে। পুরুষ টি যতোই দৃঢ়তার সাথে বলছেন, “ ইনি আমার বিবাহিত স্ত্রী”- ততোই উগ্র আক্রমনাত্মক ভঙ্গীতে হুংকার দিয়ে বলা হয়েছে- তারা যেন হেঁটে যান।
একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক নাদিয়া শারমিনকে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধোর করা হয়েছে। একই সময়ে কয়েকজন টিভি সাংবাদিক এবং ক্যামেরাপরসন কে বেধড়ক পিটিয়েছে হেফাজতি কর্মীরা। তাদের কে ‘নাস্তিক’ বলা হয়েছে।
নাদিয়া সহ সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের খবর সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় সমাবেশ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘পুরুষের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন?’ একপর্যায়ে নাদিয়াকে মারতে মারতে সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সমাবেশ থেকে হেফাজতি রা প্রতিটি নারী সাংবাদিককেই হেনস্থা করেছে । সেদিন আমি চট্টগ্রামে ছিলাম । ওয়াসার সামনে মূল সমাবেশের একপাশে ফুটপাতে ল্যাম্প পোষ্টের সাথে হেলান দিয়ে ছবি আর নোট নিচ্ছিলাম। সাদায় হাল্কা ছাপা আড়ং য়ের ফুল হাতা কামিজ পায়জামা পরেও হেফাজতী জঙ্গীদের রোষানল থেকে রক্ষা পাওয়া যায় নি। আমাকে মারবার জন্যে তেড়ে এসেছিলো যারা ,তাদের ছবি তুলে রেখেছি আমি। আমার ক্যামেরা মোবাইল কেড়ে রাখতে চেয়েছিলো। আমি দৌড়িয়ে ও আসিনি -পালাই ও নি। ক্যামেরা আর মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলেছিলাম- নিতে পারেন, সমস্যা নেই । হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিলো এই জঙ্গীরা তখন। আমি এ একদৃষ্টে তাকিয়েছিলাম – কী করে তারা আমার দিকে আঘাত করতে আসে তা দেখবার অপেক্ষায়। এ সময়ে আপাতদৃষ্টিতে আধুনিক,বাচনে আধুনিক- সুষ্পষ্ট বাংলা এবং ইংরেজী উচ্চারণে উচ্চশিক্ষিত তরুণের একটি দল আল-জাজিরার প্রতি ‘ইসলামিক ভালোবাসা’ থেকেই হয়তো তাদের সংবাদকর্মী হিসেবে আমাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে রাখে। পেছন ফিরে নারী দেখে উত্তেজিত জঙ্গীদের ধমকে বলে ,” সরে যান আপনারা!” আমাকে বিনয়ের সাথে বেরিয়ে আসতে বলে সমাবেশ থেকে। বলে, “ এরা খুব খারাপ, আপনি প্লীজ চলে যান!” আমি তাদের প্রশ্ন করেছিলাম, “খারাপ ই যদি বোঝেন ,আপনাদের মতো উদ্যমী তরুণেরা কেন এদের সমাবেশে এসে এদের মিথ্যাচার আর উগ্র ধর্মান্ধতার আফিমে নিজেদের আকন্ঠ ডুবিয়ে দিচ্ছেন?” না , এই পথভ্রষ্ট তরুণেরা আমার কথা শুনবার মতো মানসিক সুস্থতায় ছিলেন না। আমাকে নিরাপদে সমাবেশের সীমানার বাইরে মূল সড়কে এনে দিলো যারা- অসহায় করুণ ভাবে তাকিয়ে দেখলাম সেই নিরীহ সুন্দর মুখগুলোর দিকে –যারা তাদের মেধা এবং মনন বিকারগ্রস্থ ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে বিকিয়ে দিয়েছে। যারা তাদের এই বিকারগ্রস্থ দীক্ষাগুরুদের প্ররোচনায় যে কোনদিন অবলীলায় চাপাতি হাতে আমাকে কুপিয়ে যাবে!!
এদের সুপথে ফিরিয়ে আনবার জন্যে সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত এবং সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরী। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকদের সমন্বিত উদ্যোগ এবং সিদ্ধান্তের অভাবে জাতি এই ক্রান্তিকালের মুখোমুখি।
নারীর প্রতি এতো ঘৃনা আর অশ্রদ্ধা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন বিষিয়ে তুলে কোন্ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন শফি এবং তার অনুসারী রা?
এর পর ও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে দেশের সাম্প্রতিক ৫টি নির্বাচনে অবৈধ অর্থ বিলি এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে জয়ী হয়েছে জামাত-বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বলেছিলেন,‘এই বিংশ শতাব্দী কালে যৎকালে অন্যান্য জাতি নিজেদের প্রাচীন প্রথাকে নানা রকমে সংস্কৃত, সংশোধিত ও সুমার্জিত করে আঁকড়ে ধরে আছেন, ... ... ... ... তৎকালে আমরা নিজেদের অতিসুন্দর ধর্ম, অতিসুন্দর সামাজিক আচার-প্রথা বিসর্জন দিয়ে এক অদ্ভুত জানোয়ার সাজতে বসেছি।’
নারীরা পৈত্রিক সম্পত্তিতে ইসলাম প্রদত্ত অধিকার থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। এর প্রতিবাদে বেগম রোকেয়া বলেন, ‘হায় পিতা মোহাম্মদ (দ. )! তুমি আমাদের উপকারের নিমিত্তে পিতৃসম্পত্তির অধিকারিনী করিয়াছ, কিন্তু তোমার সুচতুর শিষ্যগণ নানা উপায়ে কুলবালাদের সর্বনাশ করিতেছে। আহা! মহম্মদীয় আইন পুস্তকের মসি-রেখারূপে পুস্তকেই আবদ্ধ থাকে। টাকা যার, ক্ষমতা যার, আইন তাহারই। আইন আমাদের ন্যায় নীরব অবলাদের নহে।’ [গৃহ, রোকেয়া রচনাবলী, পৃ:৭২]
বেগম রোকেয়া দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এখন আমাদের আর ধর্মের নামে নত মস্তকে নরের অযথা প্রভুত্ব সহ্য করা উচিত নহে। যেখানে ধর্মের বন্ধন অতিশয় দৃঢ়, সেইখানে নারীর প্রতি অত্যাচার অধিক। প্রমাণ-সতীদাহ। যেখানে ধর্মবন্ধন শিথিল, সেখানে রমণী প্রায় পুরুষের ন্যায় উন্নত অবস্থায় আছেন। এস্থলে ধর্ম অর্থে ধর্মের সামাজিক বিধান বুঝিতে হইবে।’এ-প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘কেহ বলিতে পারেন যে, ‘তুমি সামাজিক কথা বলিতে গিয়া ধর্ম লইয়া টানাটানি কর কেন?’ তদুত্তরে বলিতে হইবে, ‘ধর্ম’ শেষে আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে; ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন। তাই ‘ধর্ম’ লইয়া টানাটানি করিতে বাধ্য হইলাম। এ জন্য ধার্মিকগণ আমায় ক্ষমা করিতে পারেন।’ [নবনূর, ২য় বর্ষ, ৫ম সংখ্যা, পৃঃ ২১৮]। ‘পর্দার দোহাই দিয়ে, অনেক ভালো জিনিসে আমাদের বঞ্চিত করে রেখেছে, আর তা আমরা থাকবোনা ... ... আমরা চাই আমাদের ইসলাম দত্ত স্বাধীনতা, চাই ইসলাম দত্ত অধিকার ... ... কে আমাদের পথ রোধ করবে? সমাজরূপী শয়তান? কখনই পারবেনা।’ [পর্দা বনাম প্রবঞ্চনা, সওগাত, ভাদ্র ১৩১৬, পৃ. ৬৯-৭১]
আবার ও রোকেয়ার কাছে ফিরে আসি। তিনি বলেছিলেন, ‘”প্রথমে জাগিয়া উঠা সহজ নহে, জানি, সমাজ মহাগোলযোগ বাধাইবে জানিঃ ভারতবাসী মুসলমান আমাদের জন্য ‘কতল’ [অর্থাৎ প্রাণদন্ডের] বিধান দিবেন এবং হিন্দু চিতানল বা তুষানলের ব্যবস্থা দিবেন, জানি। [এবং ভাগ্নীদিগের ও জাগিবার ইচ্ছা নাই, জানি।] কিন্তু সমাজের কল্যাণের নিমিত্তে জাগিতে হইবেই। বলিয়াছিতো, কোন ভাল কাজ অনায়াসে করা যায় না। কারা মুক্ত হইয়াও গ্যালিলিও বলিয়াছিলেন, কিন্তু যাহাই হোক পৃথিবী ঘুরিতেছে ।আমাদিগকে ও এইরূপ বিবিধ নির্যাতন সহ্য করিয়া জাগিতে হইবে”।
তিনি পুরুষ দের সাথে নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবার জন্যে নারী স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন! তিনি লিখেছেন, ‘পরস্পরের একতা থাকাও একান্ত আবশ্যক। কিন্তু এই ঐক্য যেন সত্যের উপর স্থাপিত হয়। একতার মূলে একটা মহৎ গুণ থাকা আবশ্যক’ [সৌরজগৎ, রোকেয়া রচনাবলী, পৃ:১৩১-১৩২]
শুধু কি নারী বিদ্বেষী? অধিকাংশ মাদ্রাসার শিশু কিশোরেরা শিক্ষকদের নিয়মিত বলাৎকারের শিকার হয়। এর কতোটাই বা সংবাদে আসে?
এ সংক্রান্ত কিছু সংবাদ তুলে ধরছি। কুষ্টিয়ায় হেফাজত-নিয়ন্ত্রিত কওমি মাদ্রাসায় ৯ বছর বয়সী ছাত্র আবদুল্লাহকে বলাত্কারের চেষ্টা করেছেন সমকামী কওমি-শিক্ষক মোহাম্মদ তানভীর। ( তারিখ টা এই মুহুর্তে পাওয়া যায়নি।) পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার গোয়ালদিঘী নেছারিয়া ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্র সেলিমকে মাদ্রাসার কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও বোর্ডিং সুপার মো. মুক্তারুল আলম বলাত্কার করেন চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। চলতি বছর জুন মাসে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নুরুল উলুম কওমি হাফিজিয়া মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসেম ছাত্র ওমর ফারুককে বলাত্কার করে। গত বছরের জুন মাসে ঝিনাইদহের আল ফারুক একাডেমি মাদ্রাসার এক ছাত্রকে বলাত্কারের ঘটনায় মাদ্রাসাটির শিক্ষক হাফেজ মো. হাসানুজ্জামানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বছর দশেক আগে চট্টগ্রামের হালিশহর থানার কাছে একটি মাদ্রাসায় কয়েকজন কিশোর বলাৎকারের শিকার হবার পর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদিকা নূরজাহান খানের সহযোগিতা চায় অভিভাবকেরা। সে সময় আমি নিজে দেখেছি সেই মাদ্রাসার শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার অবোধ কিশোর এবং তাদের অভিভাবক দের কান্না এবং ক্ষোভ। সেখানকার ইমামের স্ত্রী ক্ষুব্ধ কন্ঠে নির্যাতক শিক্ষকের বিচার চেয়েছিলেন।
বাঁশখালীর বৈলছড়ি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুস সাত্তার ২০০৪ সালের ১৮ মে ধর্ষণ করে ছোট্ট শিশু ইকরা কে । তখন ইকরার বয়স ছিল তিন বছর । মাদ্রাসার পাশেই তারা থাকতো। অলস দুপুরে সবাই ঘুম । অন্যন্য শিশুদের সাথে ইকরা খেলছিলো উঠোনে । ওখান থেকেই ফুসলে ডেকে নিয়ে ধর্ষন করে সাত্তার ।এ মামলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম আমি। একনিষ্ঠভাবে চার বছর এ মামলা পরিচালনা করেন নূর জাহান খান, এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত । ধর্ষক সাত্তারের বিরুদ্ধে জঙ্গী তৎপরতার অভিযোগ ছিল। নিয়মিত পাকিস্তান,আফগানিস্তান,ব্যাংকক সফর করতো । তার পাসপোর্ট জব্দ করে নি পুলিশ । কারণ, তার চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র’ দাবি করে চারিত্রিক সনদ পত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সহ বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা। চারটি বছর এ মামলার জন্যে আমরা লড়াই করেছি। এখনো ইকরা কে দেখলে আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারি না। ওয়ান ইলেভেনের সময়ে এ মামলার রায় হয় সাত বছর কারাদন্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। আদালতে ঢুকবার পথে সাত্তার আমার আর নূরজাহান খানের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে দোয়া পড়ে ফু-ফু করে অভিসম্পাত করতো আমাদের। যেন তার মতো ধর্ষকের ‘অভিসম্পাতে’ আমি এবং নূরজাহান খান ধ্বংস হয়ে যাই। আমার ইচ্ছে করতো ছোট্ট শিশুর সাথে বর্বরতা করে এতো দাপট যার- তাকে যদি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা যেতো! ঘেন্নায় থুথু ছিটাতে ইচ্ছে হতো তাকে। এই চারটি বছর ছোট্ট ইকরাকে বার বার আদালতে বলতে হয়েছে তাকে তার শরীরের কোথায় কোথায় কী কী করেছে ধর্ষক সাত্তার ! কখনো মায়ের কোলে , কখনো বিচারকের পাশে চেয়ার নিয়ে ইকরা কে দাঁড় করানো হয়েছে। বার বারই সাত্তার কে ছোট্ট আঙ্গুলটি দেখিয়ে ইকরা বলেছে , “ ঐ সাত্তার মলই (মৌলভী) আাঁরে ( আমাকে) দুক্খু (ব্যথা ) দিয়ে (দিয়েছে) ।’’ ধর্ষক সাত্তারের আইনজীবিদের জেরার মুখে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে ছোট্ট ইকরা। একুশে টেলিভিশন থেকে আমি রিপোর্ট করতে ঐ মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম –দু:খজনক ভাবে শফীর মতো সাত্তারের পক্ষে ও সাফাই গেয়ে উগ্রমূর্তি ধারণ করেছে মাদ্রাসার অন্যন্য শিক্ষক এবং ছাত্ররা। এই যদি হয় ধর্মপ্রচারক এবং মাদ্রাসার চিত্র- এদের কাছে কী শিখবে আমাদের দেশের মানুষ?এই শিশুটির ট্রমা এখনো কাটে নি। শারীরিক ভাবে ও তেমন বেড়ে উঠে নি এখনো। এর জন্যে কি আমাদের এই সমাজব্যবস্থা দায়ী নয়? আমাদের দায়িত্ব থেকে সরে থাকা, বিচ্ছিন্নতা এবং উদাসীনতা দায়ী নয়? এভাবে চলতে পারে না। এই বিকৃত চরিত্রের ধর্মব্যবসায়ীদের আর সুযোগ দেয়া যায় না। আমাদের দেশের সকল শুভশক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে ।
শফির বক্তব্য সমর্থন করে হেফাজতে ইসলামী, চট্টগ্রামের সংগঠক মুফতি হারুণ বলেছেন, গ্রামের লোকেদের জন্যে এই ওয়াজ দিয়েছেন তাদের হুজুর আহমদ শফী । কী চমৎকার ব্যাখ্যা! গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো কে বিকৃত রুচির মানসিকতার মানুষে পরিণত করার হীন উদ্দেশ্যে এই অপপ্রচারে নেমেছে তারা।
সমাজ সভ্যতা এগিয়ে নিচ্ছেন যারা , তারা শিক্ষা দেন কী করে নারী-পুরুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা যায়। আর এই বিকৃত রুচির অশিক্ষিত কাঠমোল্লা শফি শিক্ষা দেন অনিয়ন্ত্রিত বিকৃত জীবন যাপনের । এখন আবার এরা অস্বীকার করছে এই বক্তব্য শফীর নয় বলে। অবাক হইনা। এরা তো মিথ্যার বেসাতি করেই চলে। এদের সাথে তাল মিলিয়েছে বিএনপির মুখপাত্র মানবজমিন। শফির কণ্ঠ নাকি ‘ডিজিটালি নকল’ করা হয়েছে। চমৎকার! অন্যায় মিথ্যাচার করলে নিজেদের সম্পর্কে সত্য বলার সৎসাহস থাকবে কী করে?
শান্তির ধর্ম ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা করে তরুণদের হাতে চাপাতি তুলে দিয়ে ‘মুরতাদ’ ‘নাস্তিক’ বলে যে মানুষগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছেন-তারা কারা? কী করেন তারা? তারা কেউ একাত্তরের , কেউ এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা । মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস , ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন তারা। প্রজন্মান্তরে এদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরছেন। যাতে এই প্রজন্ম শেকড়ের কাছে ছুটে যেতে পারেন।
প্রশ্ন উঠে তরুণ সমাজকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে কারা? বোনের বিরুদ্ধে ভাইকে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছেন – নারী পুরুষ একে অপরের পরিপুরক – এ শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে পুরুষের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিচ্ছেন নারীকে। এ নারীর গর্ভে ই তো আপনাদের সবার জন্ম। মায়ের প্রতি ও এমন ঘৃণা আর বিতৃষ্ঞার জন্ম দিচ্ছেন শফী , মস্তিষ্কের শুভশক্তিকেই নির্মূল করে দিচ্ছেন? উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আর জেন্ডার বৈষম্যের বীজ বপন করে দিচ্ছেন নিরীহ মানুষের মধ্যে? এটা তো হতে দেয়া যায়না। আপনাদের মতো অশুভ অন্ধকারের শক্তিকে ঠেকাতেই হবে। বারবার বলছি , হাজার বছরের বাঙ্গালী ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে সবাই কে। এই অপরাধীর সহযোগী শক্তিরা বুঝতে পারছেন না তারা কতোটা আত্মঘাতী কাজ করছেন!এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে কেউ মুক্তি পাবে না।
স্পষ্টভাবে বলতে চাই , বাঙ্গালী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সেক্যুলারিজমের সাথে ইসলামের কোন বিরোধ নেই। আমাদের নবীজী হযরত মোহাম্মদ(স:) তার জীবন চর্চায় যে উদারতা দেখিয়েছেন তা সেক্যুলারিজমের অনন্য দৃষ্টান্ত। কাঠমোল্লারা ইসলাম ধর্মকে ব্যবসায় পরিণত করেছেন। অমানবিক অসভ্য অশালীন জীবনাচরণের অভ্যস্ত এই কাঠমোল্লারা ধর্ম বেচে মানুষকে আফিং য়ের মতো নেশা ধরিয়ে দিয়ে এদেশের মেধাবী প্রজন্ম কে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে মত্ত। এই ষড়যন্ত্র কোনভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না।
সম্মিলিত শক্তিতে প্রতিরোধ করতে হবে এই অন্ধকারের শক্তিকে। তাই আহ্বান জানাই এসো ভাই, এসো বোন, এসো বন্ধু – এসো স্বজন আমাদের এ দেশ এবং সমাজ রক্ষায় মিলিত হাতে প্রতিরোধ করি এই অন্ধকারের শক্তি- এখনি রুখে দাঁড়াতে হবে এই অপশক্তিদের।
২২ জুলাই ২০১৩ //১৯, ২০ এবং ২১ জুলাই দৈনিক জনকন্ঠে প্রকাশিত ধারাবাহিক কলাম থেকে সংকলিত এবং সম্পাদিত । Sumikhan29bdj@gmail.com
No comments:
Post a Comment