
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, জামায়াত-শিবিরকে আইন করে নিষিদ্ধ করা না হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
নিষিদ্ধ করার আগে জামায়াতের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র কার্যকর হবে বলেও অভিমত তাদের।
বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য আমরা সব সময়ই মাঠে ছিলাম, থাকবো। কিন্তু আইন করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো সশস্ত্র প্রতিরোধে গেলে তা গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারে, যার ঘোষণা আগেই জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে।”
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামী নামের সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামীরই আরেকটি সংগঠন। তারা আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে তার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছে।
“সরকার যদি এ ধরনের কর্মসূচিতে অনুমতি দেয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য এর চেয়ে ক্ষতিকর আর কিছু হতে পারে না।”
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তরুণ প্রজন্মের সব কর্মসূচি অহিংস ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে তারা ইতোমধ্যেই সহিংস প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি একে খন্দকার বলেন, জামায়াত আজকে যে তাণ্ডব চালাচ্ছে তা তাদের এ ধরনের প্রথম কাজ নয়।
“মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এ দলটির রাজনীতি করার অধিকার শুধু নয়, এ দেশে তাদের থাকারও অধিকার নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
তাদের প্রধান দাবি হলো- জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি ও সহিংস আগ্রাসন চালানোর অপরাধে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা।
এই গোষ্ঠীর আর্থিক বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে সেজন্য এদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ সতকর্তা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ অবলম্বন করা ।
এছাড়া সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূক শাস্তির দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষী ও তাদের পরিবারের পূর্ণ নিরাপত্তার দেয়াসহ অন্যান্য কাজে ট্রাইব্যুনালের জনবল ও রসদের ঘাটতি পূরণের দাবি তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আগ্রাসন ও নির্বিচার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক সব সংগঠনকে দেশের সর্বত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গণআদালতের বিচারক আবু ওসমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।