Friday, July 12, 2013

এসো ভাই- এসো বোন- বন্ধু-স্বজন- পিতা- মাতা সন্তান: বিকৃত নপুংসক আহমদ শফিদের ঠেকাও- সুমি খান

এসো ভাই- এসো বোন- পিতা- মাতা সন্তান: বিকৃত নপুংসক আহমদ শফিদের আর সুযোগ দেয়া যায় না!

আমার জন্ম একটি ধর্ম নিরপেক্ষ বা সেক্যুলার পরিবারে। যেখানে ধর্ম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা কিছু নিয়েই কখনো কোন বাড়াবাড়ি বা শোষণ নিপীড়ন ছিল না। মনের আনন্দে পড়েছি আর ফাঁকিবাজি করেছি। এর কারণ ছিল, আমার মা-বাবা দু’জনের পরিবার ই সেক্যুলার ছিল। চার-পাঁচ প্রজন্ম আগেও ধর্ম নিয়ে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি কাউকে পোহাতে হয় নি। মুক্তচিন্তা আর মুক্ত আনন্দে বেড়ে উঠেছে ভাই বোন সবাই। তবে এও সত্যি, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেক্যুলারিজমের পাশাপাশি ধর্মান্ধতা গেড়ে বসেছে এই প্রজন্মের জীবনাচরণে !পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব যাবে কোথায় আর!
আমাদের শৈশব এবং কৈশোরে যাদের কাছে আরবী শিক্ষা গ্রহণ করেছি, তাদের আচরণ ছিল প্রকৃত শিক্ষাগুরুর মতো অত্যন্ত স্নেহশীল এবং মায়াময় । এখনো সেই শিক্ষাগুরু আমাদের পারিবারিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে এলে মায়ের কাছে আমার খোঁজ নেন । পথে ঘাটে তার সাথে দেখা হলে বিনম্র শ্রদ্ধায় তার পা ছুঁয়ে সালাম করতে ছুটে যাই। আমি এবং আমার দু’ভাই যখন হুজুরের কাছে পড়তে বসতাম, কখনো তার আচরণে অথবা কথায় কোন বৈষম্য পাইনি। আমার মনে পড়ে না- কখনো বেত হাতে তিনি আমাদের পড়তে বসিয়েছেন। আমার পোষাক, জীবনাচরণ নিয়ে কোন রকমের মন্তব্য করেন নি কখনো। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন ইসলাম ধর্মের মূল বাণী শান্তি এবং মানব সভ্যতার বিকাশ এবং প্রগতি । তার চোখে ছিল পিতৃসুলভ অপত্য স্নেহ, যা এখনো অমলিন। এই শিক্ষাগুরু এবং ইসলামের পবিত্রতা কে কলঙ্কিত করছেন জামায়াত –হেফাজতি আহমদ শফি, সাঈদী গোলাম আযম নিজামী , সাকাচৌধুরী এবং তাদের অনুসারীরা । যারা বিপন্ন করে তুলেছেন মুক্তচিন্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে। সংকটময় করে তুলেছেন এদেশের স্বাভাবিক জনজীবন কে।
নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “ আমায় একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো”।
আর এই স্বঘোষিত ‘আলেম’ সমাজ এদেশের উদীয়মান সুপ্রতিষ্ঠিত নারীসমাজকে চারদেয়ালে বন্দী রাখলেই যেন এদের সব খায়েশ পূর্ণ হয়ে যায় ! কারণ , তার কাছে তো নারী রক্তমাংসের মানুষ নঙ, প্রাণহীন নির্জীব আসবাব মাত্র!!
নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘স্বামী যখন পৃথিবী হইতে সূর্য ও নক্ষত্রের দূরত্ব মাপেন, স্ত্রী তখন একটা বালিশের ওয়াড়ের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সেলাই করিবার জন্য মাপেন। স্বামী যখন কল্পনার সাহায্যে সুদূর আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রমালা বেষ্টিত সৌরজগতে বিচরণ করেন, সূর্য মন্ডলের ঘনফল তুলাদন্ডে ওজন করেন এবং ধুমকেতুর গতি নির্ণয় করেন, স্ত্রী তখন রন্ধনশালায় বিচরণ করেন, চাউল ডাল ওজন করেন এবং রাঁধুনীর গতি নির্ণয় করেন। সুশিক্ষার অভাবে নারীরা যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন না”।
আহমেদ শফী নারীকে সেভাবেই দেখতে চান। দেখতে চান তার যৌনতা আর শয্যার আজ্ঞাবাহী হিসেবে মাত্র। অথর্ব মূর্খ এই মিথ্যুকের অশ্লীল বাক্যের বক্তৃতা শুনে তার প্রতি ঘেন্নায় থুথু ছিটাতে ইচ্ছে হয়। এদেশে অন্যায়ের বিচার নেই বলেই এখনো মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারে এই হিংস্র নপুংসকের দল!! তারা ভুলে গেছে মালালা দের দমন পীড়নের দিন শেষ! এখন জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে নারী শিক্ষার জাগরণের মাধ্যমে সব ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেয় মালালা!
হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী নারীদের পোষ্য , নির্জীব বস্তু হিসেবে গণ্য করেন। যা তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট। তিনি সকল পুরুষ কে আহ্বান জানিয়েছেন তার মতো কুৎসিত অশ্লীল ভাবে নারীদের দিকে তাকাতে। কলঙ্কিত করলেন এ সমাজের পুরুষ দের যারা কারো বাবা, ভাই ,স্বামী অথবা সন্তান। যারা নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাদের মা, বোন, স্ত্রী অথবা কন্যাকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় পাশে রেখেছেন সুখ-দু:খের সাথী করে। যাদের সহযোগিতায় এই সমাজ এগিয়েছে এতোটা পথ!
ভাবতে করুণা হয়,৯৩ বছর আগে কী কু-সন্তান জন্ম দিয়েছেন শফীর মা! স্বাধীনতা, শিক্ষা ও চাকরি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, সভ্যতা ও উন্নয়ন বিরোধী মন্তব্য করেছেন। ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি ওয়াজ মাহফিলে ভিডিওচিত্রে তার এ বক্তব্য এখন দেশে বিদেশে চরম নিন্দিত-সমালোচিত !
উল্লেখ না করলেই নয়, শফীর সহযোদ্ধা একাত্তরের ঘাতক দের কথা। এদের অন্যতম পালের গোদা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়াকে উদ্দেশ্য করে অনেক তির্যক , অশ্লীল মন্তব্য করেছেন বারবার । ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে সাকা চৌধুরী বিএনপি তে যোগ দেয়া নিয়ে অনেক অশ্লীল কথা বলেছিলেন, যার সবটাই ছিল খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে। বলেছিলেন, “তালাক দেয়া বিবি কে আমি ঘরে তুলি না।- কুকুরে লেজ নাড়ে, না লেজে কুকুর নাড়ে ” বেগম খালেদা জিয়া জানেন, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই । তাই নিজেকে ‘কুকুর’ বলে মেনে নিয়েই কাছে টেনে নেন।সেই সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পরবর্তীতে তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা বানান ! রাজাকার, চরিত্রহীন, সমকামী সাকা চৌধুরীকে ওআইসি এর মহাসচিব হিসাবে দাঁড় করানোর মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করার ধৃষ্টতা দেখান বেগম জিয়া। আর এখন তিনি আবার শফী কে সাথে নিয়ে ধর্মের নামে নতুন করে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু করেছেন। এর পরিণতি থেকে তিনি নিজেও কি রক্ষা পাবেন? তাকে দেখে ও যে ৯৩ বছরের শফির তেঁতুলের মতো লোভনীয় মনে হয়- সেটা কি তিনি বুঝতে পারছেন না?
দেশের পোষাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শিল্পের ৮০ শতাংশ শ্রমিক নারী । এদের উপার্জনে দেশ আজ স্বনির্ভর। সেই টাকায় মূর্খ মিথ্যাচারী শফী সাহেব হেলিকপ্টারে করে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান আর ভুড়িভোজন করেন। । আর বলে বেড়ান , মেয়েরা আসবাবপত্রের মতো । গার্মেন্টসের মেয়েদের ‘জেনা’ থেকে রক্ষা করতে চার দেয়ালের ভেতর বন্দী করে রাখতে । ধিক্ শত ধিক্ !!
হাটহাজারী আলজমিয়াতুল আহলিয়া উলুম মাদ্রাসার পরিচালক, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও হেফাজত-এ ইসলাম বাংলাদেশের আমীর কী করে হলেন আহমদ শফি ? কারা তাকে ওতে হেদায়েত করছেন? কী উদ্দেশ্যে?
সবাই জানেন, এই শফি জাতিকে উপদেশ দিয়েছেন মেয়েদের ৪/৫ ক্লাসের বেশী না পড়াতে, সর্বদা ঘরে থাকতে, এমনকি জিনিসপত্র কিনতেও বাইরে না যেতে। বলেছেন গার্মেন্ট-নারীরা জ্বেনা করে উপার্জন করে, নারীরা তেঁতুলের মত যা দেখলেই পুরুষের মুখে লালা পড়ে। বলেছেন স্ত্রীদের আল্লাহ "বাদশা" বানিয়েছেন, তারা শুধু স্বামী-পুত্রকে "অর্ডার" করবে আর তারা তা করবে। এছাড়া আরো যা বলেছেন তা উল্লেখ করতে রুচিতে বাধছে। নারীদের নাকি ২২ তাল।
এতোদিন শুনে এলাম , ইসলাম শান্তির ধর্ম, নারী-বান্ধব ধর্ম! আপনি এবং আপনার মতো মুসলিম ব্রাদার হুড নেতারা ইসলামের এই শান্তির বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন শফি সাহেব! আপনার মতো মোল্লারা অস্ত্র তুলে দিলেন ইসলাম বিরোধী দের হাতে।আহমদ শফি এতো নোংরা, হিংস্র কথা বলেছেন- যা ইসলাম , মানব-সভ্যতা এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে চরম হুমকি ।
জানেন তো, হিংস্র পশুদের খাঁচায় বন্দী করে রাখতে হয়? আপনাকে অনেক আগেই খাঁচায় বন্দী করে রাখা উচিত ছিলো। এখনই আপনি আর আপনার অনুসারী দের খাঁচায় বন্দী না করলে আমাদের দেশের নারী দের যে কী পরিণতি হবে – সেই ভয়াবহতা আপনার কথাতেই প্রকাশ পাচ্ছে। তবে আপনাদের তান্ডবের কারণে বাংলাদেশে এমন সৎসাহস নিয়ে কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় এখনো আসে নি। যে কারণে এখনে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা হয়নি এ সমাজে। আমরা নিজেরাই অন্ধকার কে ভালোবাসি । গায়ের উপর না আসলে আপনার মতো বিষাক্ত সাপ দের দুধকলা দিয়ে পুষতেই ভালোবাসেন আমাদের রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা!
এই যে ,দুর্মর শফী- তবু আপনাকে বলি, অন্যান্য শিক্ষায় বড় সার্টিফিকেট হাসিল করলেই তাকে সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলা যায়। কিন্তু ইসলামে বা কোন ধর্মেই তা নয়। ডিগ্রী থাকুক বা না থাকুক, যিনি কোরান-রসুল বা অন্য ধর্ম কে মানুষের মঙ্গল কামনায় সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন-তিনিই প্রকৃত আলেম, প্রকৃত মাওলানা অথবা ধর্মযাজক!
অতীত বর্তমানে বিশ্ব-মুসলিমের অনেক ক্ষতি করেছেন অনেক ডিগ্রীধারী তথাকথিত মাওলানা। বড়পীরের মতো দরবেশকে এক হাজার মাওলানা কাফের ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছিল ইমাম হৌজ-এর নেতৃত্বে-(মুখবন্ধ –ফতহুল.গযব,-তাঁর.বক্তৃতার.সংকলন)।
এজন্যই রসুল বলেছিলেন-উম্মতের জন্য তাঁর "সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ পথভ্রষ্টকারী আলেমদের নিয়া"-সহি ইবনে মাজাহ ৫ম খণ্ড ৩৯৫২। এটাও দেখুন:-"এ সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দেদ আলফে সানী মাকতুবাত গ্রন্থে লিখেছেন যে, জনৈক বুযুর্গ ব্যক্তি একবার অভিশপ্ত ইবলিসকে দেখতে পায় যে, সে একেবারে খোশ মেজাজে ও বেকার বসে আছে। ঐ বুযুর্গ ব্যক্তি ইবলিসকে তার এহেন বেকার বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে সে বলে যে, বর্তমান সময়ের আলেম সমাজ আমাদের কাজ সমাধা করছে, জনগণকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তারাই যথেষ্ট "।
এখন বিচার করুন আপনি ইবলিশের হয়ে কাজ করছেন না? রসুলের "সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ" আপনাকে নিয়ে নয় কি?
শফির মতো বর্বর অপরাধীদের ইসলাম-বিরোধী নিষ্ঠুরতার কয়েকশ' উদাহরণ তুলে ধরেছেন গবেষক হাসান মাহমুদ। যিনি দশ বছর একনিষ্ঠ ভাবে শারিয়া নিয়ে গবেষণা করে "শরিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইটি প্রকাশ করেছেন। তার গবেষণা গ্রন্থটি যারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন, তারা অনুধাবন করতে পারবেন- শফি, সাঈদী ,নিজামী , গোলাম আজমের র মতো ধর্মব্যবসায়ীরা পবিত্র কোরান হাদিস নিয়ে কতোটা মিথ্যাচার করেন।
কোরান-রসুল থেকে যাঁরা তুলে আনেন মানুষের মঙ্গল তাঁরাই সত্যিকার আলেম, মাওলানা ও ইসলামের পতাকাবাহী। আর যাঁরা কোরান-রসুল থেকে তুলে আনেন মানুষের অমঙ্গল ও নারীর ওপরে অত্যাচার তাঁরা আলেমের ছদ্মবেশে ভয়ংকর রাক্ষস।
নারীর ওপরে অত্যাচারের মধ্যে তাঁরা দেখেন সওয়াব, খোঁজেন বেহেশত। ‘কোরাণ’ ‘কোরাণ’ বলে মুখে ফ্যানা তুলে কাজে তাঁরা প্রয়োগ করেন হাদিস। তাও, কোরান-বান্ধব হাদিস প্রয়োগ করেন না, - করেন কোরান বিরোধী নারী-বিরোধী হাদিস। বৌ-পেটানোর মত অমানবিক সন্ত্রাসকে তাঁরা হালাল করেছেন কোরানের (নিসা ৩৪) বিকৃত অর্থ প্রতিষ্ঠা করে আর এই ধরণের নারী-বিরোধী হাদিস দিয়ে - রোজ হাশরে কোনো স্বামীকে নাকি জিজ্ঞাসা করা হবে না কেন সে এই দুনিয়ায় বৌকে পিটিয়েছিল - সুনান আবু দাউদ, ২১৪২। নবীজী নাকি বলেছেন। অর্থাৎ যত ইচ্ছে বৌ পেটাও, কোনো সমস্যা নেই। এটাই তাঁদের ইসলাম। শারীয়া বলে , ইসলাম সম্পূর্ণ আলাদা ও নারী-বান্ধব।সহি মুসলিমে নবীজীর সুস্পষ্ট ও কঠিন নির্দেশ দেয়া আছে, "বৌকে পেটাবে না"।
Book 11, Number 2138: Narrated Mu'awiyah ibn Haydah: I said: Apostle of Allah, how should we approach our wives and how should we leave them? He replied: Approach your tilth when or how you will, give her (your wife) food when you take food, clothe when you clothe yourself, do not revile her face, and do not beat her.
Book 11, Number 2139:Narrated Mu'awiyah al−Qushayri: I went to the Apostle of Allah peace_be_upon_him) and asked him: What do you say (command) about our wives? He replied: Give them food what you have for yourself, and clothe them by which you clothe yourself, and do not beat them, and do not revile them.


তাহলে? এ ব্যাপারে বিদায় হজ্বের বক্তৃতায় নবীজী কি হুকুম করেছেন সেটাও তাঁরা কখনোই জাতিকে জানতে দেন না - "তাহাদের (স্ত্রীদের) উচিত নয় তোমরা যাহাকে পছন্দ করনা তাহাকে নিজের বিছানায় বসায় - তাহা করিলে প্রহার করিতে পার কিন্তু মৃদুভাবে" - "they should not allow anyone to sit on your bed whom you do not like. But if they do that, you can chastise them but not severely”.- সহি মুসলিম ৭ম খণ্ড ২৮০৩, সহি ইবনে মাজাহ ৪র্থ খণ্ড ৩০৭৮ ইত্যাদি। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ "বিছানায় বসা"-র অর্থ করেছেন পরকীয়া। অর্থাৎ নবীজী হুকুম করেছেন – “পরকীয়া ব্যভিচার না করা পর্য্যন্ত বৌয়ের গায়ে হাত তুলবে না”।
এখানে আমি বিস্মিত হই, নারী বিছানায় শোবে কি শোবে না- তা নির্ধারণ করবে পুরুষ? বলতে হয়, যাহা বাহান্ন, তাহা ই তেপ্পান্ন। নারীর ইচ্ছে- অনিচ্ছে বন্দী থাকবে পুরুষের মুঠোয়? তাহলে আর নারী কে মানুষের কী মর্যাদা দিলো শারিয়া? এই প্রশ্নের একমাত্র জবাব- কোন মানবিক অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ- অন্য একজন মানুষকে তার ইচ্ছে –অনিচ্ছের দাস ভাবতে পারেন না কখনো। শারীয়ার এই স্ববিরোধী এবং নারীর প্রতি অবমাননামূলক নির্দেশনা গুলোর সুযোগ নিয়েছে এই কাঠমোল্লারা ।
তবু উল্লেখ করতে হয়, শারীয়া গবেষক হাসান মাহমুদের বক্তব্য। পরকীয়াই হোক বা "বিছানায় বসা"-ই হোক ওটা ছাড়া অন্য কোনো কারণে বৌযের গায়ে হাত তোলা নাজায়েজ; নানা রকম কুযুক্তি কূটতর্কে সেটা জায়েজ করে রসুলের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেন তাঁরা । পুরুষ নারীর ওপরে কর্তা, তাই না? কারণ আল্লাহ পুরুষকে নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ করেছেন, তাই না? কারণ পুরুষের গায়ে শক্তি বেশী, তাই না? তাহলে তো আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ নয়, পশু বা ডায়নোসর!
শফী বলেছেন , নবীজী দোজখে বেশীর ভাগ নারী দেখেছেন। কী করে? শারীয়া মতে , বেহেশত-দোজখে তো আমরা যাবো কেয়ামতের পরে- হাশরের বিচারের পরে। ওই মেয়েগুলো দোজখে চলে গেল তার মানে কেয়ামত হয়ে গেছে? কবে হলো? হয়ে গেছে রোজ হাশরের বিচার? কবে হল? বলুন, মিষ্টার শফি? হাসান মাহমুদ বললেন, “আমরা আপনাদের নারী-বিরোধী হাদিসকে পরাজিত করি ওই কোরান, ওই রসুল থেকেই”।
আরবকিছু ব্যতিক্রম সব সমাজেই আছে, আপনাদের অনেক মাদ্রাসাতেও আছে কিন্তু সাধারণভাবে আমাদের নারীরা অত্যন্ত মেধাবী, সক্ষম, দক্ষ ও শালীন। অর্থনীতি সহ দেশের সর্বক্ষেত্রে তাঁরা অসামান্য অবদান রাখছেন, তাঁরা আপনাদের মতো যাকাতের টাকায় চলেন না বরং তাঁদের উপার্জনের ট্যাক্স ও যাকাত দিয়ে আপনাদের চলতে হয়। তাঁরা আপনার চেয়ে কম মুসলমান নন। আল্লাহ ও তাঁদের মধ্যে কোনো দালালের দরকারও নেই ইসলামে সে সুযোগও নেই। আপনি তাঁদের যথেষ্ট অপমান করেছেন; আপনি অপমান করেছেন পুরুষদেরও। আপনি সব পুরুষদের কামুক জন্তু বানিয়ে ছেড়েছেন। এতো সাহস, এতো স্পর্ধা আপনার কি করে হলো? আপনার ইসলাম আপনাকে এই শিখিয়েছে? আপনি দুনিয়া দেখেন নি, আপনি কিছুই জানেন না। আমরা নারী-পুরুষ একসাথে পড়াশুনা করেছি, একসাথে চাকরী করছি -আপনার মাথায় সবসময় যে নোংরা পোকাগুলো নড়াচড়া করে সেগুলো আমাদের মাথায় নেই। আমাদের কাছে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের দেয়া কোরানের- রসুলের নারী-বান্ধব ব্যাখ্যা ও হাদিস আছে।

শ্রদ্ধেয় শারীয়া গবেষক হাসান মাহমুদ বিদগ্ধ জন। শফীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, ইসলামের যে ব্যাখ্যা শফী এবং তার অনুসারীরা বয়ে বেড়ান সেটা যে কতো নোংরা ও নিষ্ঠুর তা দলিল ধরে ধরে দশ পনেরো বছর ধরে জাতিকে জানাতে চেষ্টা করছি। কাজটা কঠিন, সাফল্য বেশী নয় কিন্তু কাজ এগোচ্ছে। শফী এক লহমায় সেই সাফল্য এনে দিলেন। ইসলামের নামে শফী গংদের ভেতর লুকিয়ে রাখা রাক্ষসের চেহারাটা দেখে আতংকে আঁৎকে উঠছে জাতি। সমাজের এই রাক্ষস দের মুখোশ খুলে গেলো। মানুষকে সচেতন করার কাজ সহজ হয়ে গেল কিছুটা হলেও। বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর ২০১০ সালের হিসাব মতে, দেশের চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। ২০০২-০৩ সালে এটা ছিল এক কোটি। তবু পুরুষের তুলনায় তা অর্ধেক।


কূপমন্ডুক এই হেফাজতি ধর্মান্ধ নেতা মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলে যান,‘বাড়ির বাইরে যেয়ো না। রাস্তায়, স্টেশনে, বাজারে, মাঠে নগ্ন হয়ে ঘোরাফেরা কোরো না। সাবধান! কেনাকাটা করতে যাবে না। তোমার স্বামী বা ছেলেকে বলো বাজার করার জন্য। তোমাকে কেন যেতে হবে? তুমি শুধু বসে থাকো এবং ছেলেকে হুকুম করো। তোমাকে কেন এই ঝামেলা পোহাতে হবে?’ তার ওয়াজে নারীদের তিনি তুলনা করেছেন তেঁতুলের সঙ্গে। তেঁতুল দেখলে মানুষের যেমন জিভে জল আসে তেমনি নারীদের দেখলে ‘দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। আল্লামা শফির ওই বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকসহ নানান ব্লগে এখন সমালোচনার ঝড় বইছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ওই বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছেন। এ বিষয়ে এরই মধ্যে নারী নেত্রীরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।শফীর মতে, নারীদের কাজ হলো আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়া, সন্তান লালন-পালন করা, ঘরের মধ্যে থাকা। ৯৩ বছর বয়সী শফী বলেন, ‘শোনো নারীরা, চার দেয়ালের ভেতরই তোমাদের থাকতে হবে। স্বামীর বাড়িতে বসে তোমরা আসবাবপত্র দেখভাল করবা, শিশু লালন-পালন, পুরুষ শিশুদের যতœ করবা। এই হলো তোমাদের কাজ। তোমাদের কেন বাইরে যেতে হবে?’ কেন বাইরে যেতে হবে- সেটা কি তাকে বলতে হবে?
গার্মেন্টসের এই নারী;দেন পরিবার পরিজনের জীবন কি শফির বিণী দিয়ে চলবে? শফির কথা মতো এই নারী অন্দরবাসী হলে এদের পরিবারের ব্যয় আসবে কোথা থেকে? এসব ভেবে দেখার মতো চিন্তামিল মস্তিষ্ক এই নষ্ট ভ্রষ্ট লোকের নেই!

সম্প্রতি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করেই উগ্রপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠী হেফাজত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। সংগঠনটির ১৩ দফা দাবি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব দাবির মধ্যে ছিল নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করা, বিদেশি সংস্কৃতি নিষিদ্ধ করা, মোমবাতি প্রজ্বলন নিষিদ্ধ করা। ঢাকায় গত ৬ এপ্রিলের সমাবেশে এই দাবিগুলো পেশ করে হেফাজত।সমাবেশের দিন নারী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় হেফাজতের লোকজন। হেফাজতের সামবেশে নারী সাংবাদিক কেন, মাথায় কাপড় নেই কেন--এ ধরনের অজুহাত তুলে তাদের হেনস্থা করা হয়। একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক নাদিয়া শারমিনকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। নাদিয়া হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের খবর সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় সমাবেশ থেকে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘পুরুষের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন?’ একপর্যায়ে সমাবেশের নাদিয়াকে মারতে মারতে সমাবেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।বাংলানিউজের জাকিয়া সহ প্রতিটি নারী সাংবাদিককেই হেনস্থা করেছে হেফাজতি রা। আমাকে মারবার জন্যে তেড়ে এসেছিলো যারা ,তাদের ছবি তুলে রেখেছি আমি। আমার ক্যামেরা মোবাইল কেড়ে রাখতে চেয়েছিলো , পারে নি। আমি দৌড়িয়ে ও আসিনি পালাই ও নি। তাকিয়েছিলাম কী করে তারা আমার দিকে আঘাত করতে আসে। এ সময়ে বাহ্যিক পোষাকে আধুনিক বাচনে আধুনিক সুষ্পষ্ট বাংলা এবং ইংরেজী উচ্চারণে উচ্চশিক্ষিত তরুণের একটি দল আমাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরে ।বিনয়ের সাথে আমাকে বেরিয়ে আসতে বলে সমাবেশ থেকে। বলে, “ এরা খুব খারাপ, আপনি প্লীজ চলে যান!” আমি তাদের প্রশ্ন করেছিলাম, “খারাপ ই যদি বুঝেন আপনাদের মতো উদ্যমী তরুণেরা কেন এদের সমাবেশে এসে এদের মিথ্যাচার আর উগ্র ধমান্ধতার আফিমে নিজেদের আকন্ঠ ডুবিয়ে দিচ্ছেন?” না , এই পথভ্রষ্ট তরুণেরা আমার কথা শুনবার মতো মানসিকতায় ছিলেন না।
আল-জাজিরার প্রতি ভালোবাসা থেকে তাদের সংবাদকর্মী হিসেবে আমাকে নিরাপদে সমাবেশের সীমানার বাইরে মূল সড়কে এনে দিলো যারা- অসহায় করুণ ভাবে তাকিয়ে দেখলাম সেই নিরীহ সুন্দর মুখগুলোর দিকে –যারা যে কোনদিন অবলীলায় চাপাতি হাতে আমাকে কুপিয়ে যাবে। এদের সুপথে ফিরিয়ে আনবার জন্যে সুচিন্তিত, সুপরিকল্পিত এবং সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরী।
নারীর প্রতি এতো ঘৃনা আর অশ্রদ্ধা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন বিষিয়ে তুলে কোন্ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবেন শফি এবং তার অনুসারী রা?
এর পর ও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ার দেশের সাম্প্রতিক ৫টি নির্বাচনে অবৈধ অর্থ বিলি এবং মিত্যা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে জয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বলেছিলেন,‘এই বিংশ শতাব্দী কালে যৎকালে অন্যান্য জাতি নিজেদের প্রাচীন প্রথাকে নানা রকমে সংস্কৃত, সংশোধিত ও সুমার্জিত করে আঁকড়ে ধরে আছেন, ... ... ... ... তৎকালে আমরা নিজেদের অতিসুন্দর ধর্ম, অতিসুন্দর সামাজিক আচার-প্রথা বিসর্জন দিয়ে এক অদ্ভুত জানোয়ার সাজতে বসেছি।’
নারীরা পৈত্রিক সম্পত্তিতে ইসলাম প্রদত্ত অধিকার থেকেও ছিল বঞ্চিত। এর প্রতিবাদে বেগম রোকেয়া বলেন, ‘হায় পিতা মোহাম্মদ (দ. )! তুমি আমাদের উপকারের নিমিত্ত পিতৃসম্পত্তির অধিকারিনী করিয়াছ, কিন্তু তোমার সুচতুর শিষ্যগণ নানা উপায়ে কুলবালাদের সর্বনাশ করিতেছে। আহা! মহম্মদীয় আইন পুস্তকের মসি-রেখারূপে পুস্তকেই আবদ্ধ থাকে। টাকা যার, ক্ষমতা যার, আইন তাহারই। আইন আমাদের ন্যায় নীরব অবলাদের নহে।’ [গৃহ, রোকেয়া রচনাবলী, পৃ:৭২]
বেগম রোকেয়া দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘এখন আমাদের আর ধর্মের নামে নত মস্তকে নরের অযথা প্রভুত্ব সহ্য করা উচিত নহে। যেখানে ধর্মের বন্ধন অতিশয় দৃঢ়, সেইখানে নারীর প্রতি অত্যাচার অধিক। প্রমাণ-সতীদাহ। যেখানে ধর্মবন্ধন শিথিল, সেখানে রমণী প্রায় পুরুষের ন্যায় উন্নত অবস্থায় আছেন। এস্থলে ধর্ম অর্থে ধর্মের সামাজিক বিধান বুঝিতে হইবে।’এ-প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘কেহ বলিতে পারেন যে, ‘তুমি সামাজিক কথা বলিতে গিয়া ধর্ম লইয়া টানাটানি কর কেন?’ তদুত্তরে বলিতে হইবে, ‘ধর্ম’ শেষে আমাদের দাসত্বের বন্ধন দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর করিয়াছে; ধর্মের দোহাই দিয়া পুরুষ এখন রমণীর উপর প্রভুত্ব করিতেছেন। তাই ‘ধর্ম’ লইয়া টানাটানি করিতে বাধ্য হইলাম। এ জন্য ধার্মিকগণ আমায় ক্ষমা করিতে পারেন।’ [নবনূর, ২য় বর্ষ, ৫ম সংখ্যা, পৃঃ ২১৮]। ‘পর্দার দোহাই দিয়ে, অনেক ভালো জিনিসে আমাদের বঞ্চিত করে রেখেছে, আর তা আমরা থাকবোনা ... ... আমরা চাই আমাদের ইসলাম দত্ত স্বাধীনতা, চাই ইসলাম দত্ত অধিকার ... ... কে আমাদের পথ রোধ করবে? সমাজরূপী শয়তান? কখনই পারবেনা।’ [পর্দা বনাম প্রবঞ্চনা, সওগাত, ভাদ্র ১৩১৬, পৃ. ৬৯-৭১]
‘”প্রথমে জাগিয়া উঠা সহজ নহে, জানি, সমাজ মহাগোলযোগ বাধাইবে জানিঃ ভারতবাসী মুসলমান আমাদের জন্য ‘কতল’ [অর্থাৎ প্রাণদন্ডের] বিধান দিবেন এবং হিন্দু চিতানল বা তুষানলের ব্যবস্থা দিবেন, জানি। [এবং ভাগ্নীদিগের ও জাগিবার ইচ্ছা নাই, জানি।] কিন্তু সমাজের কল্যাণের নিমিত্তে জাগিতে হইবেই। বলিয়াছিতো, কোন ভাল কাজ অনায়াসে করা যায় না। কারা মুক্ত হইয়াও গ্যালিলিও বলিয়াছিলেন, কিন্তু যাহাই হোক পৃথিবী ঘুরিতেছে ।আমাদিগকে ও এইরূপ বিবিধ নির্যাতন সহ্য করিয়া জাগিতে হইবে”।
তিনি পুরুষ দের সাথে নিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেবার জন্যে নারী স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন! তিনি লিখেছেন, ‘পরস্পরে একতা থাকাও একান্ত আবশ্যক। কিন্তু এই ঐক্য যেন সত্যের উপর স্থাপিত হয়। একতার মূলে একটা মহৎ গুণ থাকা আবশ্যক’ [সৌরজগৎ, রোকেয়া রচনাবলী, পৃ:১৩১-১৩২]

এক সময়ে বুঝতে পারলাম, আমাদের শিক্ষাগুরু একেবারেই ব্যাতিক্রম । ধর্মশিক্ষা যারা দেন, তারা অধিকাংশই অশিক্ষিত- বিকৃত চরিত্রের ; লোভী এবং প্রবঞ্চক। এর প্রত্যক্ষ প্রমাণ আহমদ শফী। যার বিকৃত বাণী এখন বিশ্বজুড়ে নিন্দিত। মুক্তচিন্তা আর সভ্যসমাজ প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছে বা এখনো করছে- তারাই এদের টার্গেট।
বেগম রোকেয়া বলেছিলেন; আমি কারসিয়ং ও মধুপুর বেড়াইতে গিয়া সুন্দর সু-দর্শন পাথর কুড়াইয়াছি উড়িষ্যা ও মাদ্রাজে সাগরতীরে বেড়াইতে গিয়া বিচিত্র বর্ণের বিবিধ আকারের ঝিনুক কুড়াইয়া আনিয়াছি। আর জীবনে ২৫ বছর ধরিয়া সমাজ সেবা করিয়া কাঠ মোল্লাদের অভিসম্পাত কুড়াইয়াছি।’
বেগম রোকেয়া থেকে জাহানারা ইমাম এদের টার্গেট। এরাই তো একাত্তরে ইসলামের নামে ঘরে ঘরে নারীদের বর্বরোচিত ভাবে ধর্ষণ , নির্যাতন এবং তিরিশ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালী কে হত্যা করেছিলো । দুই কোটি মানুষকে দেশছাড়া করেছিলো ইসলাম রক্ষার নামে। বিজয়ের দু’দিন আগে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে এ দেশ কে মেধাশূণ্য করার সুপরিকল্পিত নীল নক্সার বাস্তবায়ন করেছিলো ‘ইসলাম রক্ষা’র নামে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত,ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ফেরদৌসী মজুমদার , মুনতাসীর মামুন , শাহরিয়ার কবির , ডা. ইমরান এইচ সরকার তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক, ‘মুরতাদ’ ।
যাতে নিরীহ ধর্মভীরু মানুষকে এদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিয়ে এই দেশটি কে পাকিস্তান ,আফগানিস্তান অথবা সোমালিয়ার মতো অন্ধকার দেশে পরিণত করা যায়।
আমার মতো ক্ষুদ্র একজন সংবাদকর্মী ও বার বার এই অন্ধকারের শক্তির অন্যায় মিথ্যাচার ,মৃত্যু পরোয়ানা, হুমকি আর আক্রমনের শিকার হয়েছি। কেন? ইসলামের যাবতীয় শুদ্ধতার ক্ষমতা কি এদের হাতে? আমাদের অতি সাধারণ জীবনটি এভাবে বিপন্ন করে তোলার অধিকার এদের কে দিয়েছে? দেশে এখন মাত্র ৮ শতাংশ হিন্দু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। পাকিস্তানের মতো এখানেও সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
মাহমুদুর রহমানের মতো নষ্ট রাজনীতির বরপুত্র যখন সম্পাদক হন- তার উদ্দেশ্যমূলক সাম্প্রদায়িক উস্কানি - নারীবিদ্বেষী নষ্ট ভ্রষ্ট অপসাংবাদিকতা ই এদের লালন করে, উৎসাহ দেয়। আমার ধৃষ্টতা হচ্ছে জেনেও এই বর্বর হাজার কোটি অবৈধটাকার মালিক মাহমুদুর রহমান কে সমর্থনকারী ১৫ সম্পাদকের সমালোচনা করতে হচ্ছে আমাকে।এই বিপন্ন আমি চিৎকার করে বলতে চাই- আমাদের নিরীহ জীবন কে বিপন্ন করা অথবা কোন জীবন কেড়ে নেবার ন্যুনতম কোন অধিকার আপনাদের নেই!
আমি একজন অতি ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী। আমার সাধ্য বড়ো সীমিত । তবু আমরা সকল শুভশক্তি মিলিত ভাবে সমুদ্রসমান হবো নিশ্চয়ই!আমি আহ্বান জানাই, সকল প্রকার ক্ষুদ্রতা, নীচতা, হীনতা, সাম্প্রদায়িকতা , বর্ণবাদ , স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা আর গোষ্ঠিচিন্তার উর্ধে উঠে এসো বোন, এসো ভাই পিতা-মাতা -সন্তান- আমাদের এ দেশ এবং সমাজ কে রক্ষায় মিলিত হাতে প্রতিরোধ করি এই অন্ধকারের শক্তি- এখনি রুখে দাঁড়াতে হবে এই অপশক্তিদের। সত্য ও সুন্দরের জয় অবধারিত। তাই জয় আমাদের হবেই সুনিশ্চিত।
১৩ জুলাই ২০১৩
Sumikhan29bdj@gmail.com

No comments:

Post a Comment