Thursday, November 8, 2012

মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার


চট্টগ্রাম, নভেম্বর ০৮ - চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর আট খুনের মামলায় মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ইসলামী ছাত্র শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ হোসেনকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশের সদর দফতরে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি সাজ্জাদ আলী খানের গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) বনজ কুমার মজুমদার ।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী উপ কমিশনার তারেক আহমেদ জানান,বুধবার পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে সাজ্জাদ সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হলে বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে জানান তারেক আহমেদ।

২০০০ সালের জুলাই মাসে বহদ্দারহাটে একটি চলন্ত মাইক্রোবাসে গুলি করে ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজনকে সাজ্জাদের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়। ২০০১ সালের এপ্রিলে সাজ্জাদকে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার করা হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায়। ওই হত্যা মামলার রায়ে ২০০৮ সালে সাজ্জাদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরো তিন শিবির কর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অস্ত্র আইনের আরেকটি মামলায় ১০ বছরের জেল হয় সাজ্জাদের। তার বিরুদ্ধে আরো অন্তত আটটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ভয়ংকর এ সন্ত্রাসী দুবাইয়ে বসেই নগরীর পাঁচলাইশ, চালিতাতলী, অক্সিজেন, মুরাদপুর, চকবাজার, বায়েজিদ, হাটহাজারীসহ বিশাল এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। তার নামেই এসব এলাকায় এখনো ব্যাপক চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড চলছে। এ কাজে সাজ্জাদ এলাকার উঠতি যুবকদের ব্যবহার করছিলেন বলে নগর পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তবে সাজ্জাদ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কবে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিলো না।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার তারিক আহম্মদ খান বলেন, “সাজ্জাদের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর আছে। বিশেষত জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে এ চাঁদাবাজিটা হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেলেও কেউ সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেননি।”
এ বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঢুকে গুলি চালান একদল ক্যাডার। এ সময় তারা চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় অনেকদিন পর আবারও শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নাম আলোচনায় উঠে আসে। নগর পুলিশ কর্মকর্তারাও সাজ্জাদের বিষয়ে তৎপর হন। পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রায় এক দশক দুবাই ছিলেন সাজ্জাদ। সেখানে বাঙালি এক তরুণীকে তিনি বিয়ে করেন। পরে বাঙালি স্ত্রীকে সন্তানসহ দেশে পাঠিয়ে ভারতের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে ভারতে যান তিনি।

জমি দখলকে কেন্দ্র করে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নির্দেশে তার সহযোগীরা ব্যাপক অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড এবং বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। জমির মালিকদের কাছ থেকে বিক্রির সময় টাকা আদায়ের পাশাপাশি ক্রেতার কাছ থেকেও টাকা আদায় করছেন সাজ্জাদ বাহিনীর ক্যাডাররা।গত বছরের আগস্টে সাজ্জাদের দুই সহযোগী সরওয়ার ও ম্যাক্সনকে একটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বায়েজিদ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম।

নগরীর অক্সিজেন মোড় থেকে হাটহাজারী উপজেলার সঙ্গে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।ওই এলাকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)‘অনন্যা’ নামে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে।

মূলত সংযোগ সড়ক এবং আবাসিক এলাকা পাল্টে দিয়েছে ওই এলাকার দৃশ্যপট। বর্তমানে ওই এলাকায় জমির দাম বাড়ছে। এতে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ওই এলাকায় জমি কেনাবেচা নিয়ে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ শুরু করেন। ফলে ওই এলাকায় জায়গা জমি কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে একটি চক্রও গড়ে ওঠে।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাজ্জাদ সর্বশেষ ২০০১ সালের ৩ অক্টোবর বন্দুকযুদ্ধের পর তার সহযোগী ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার দেলোয়ার হোসেন ওরফে আজরাইল দেলোয়ারসহ নগরীর চালিতাতলী এলাকা থেকে গ্রেফতার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে পুলিশ একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করে।

তিন বছর জেল খেটে দেলোয়ারের আগেই সাজ্জাদ ২০০৪ সালে জামিনে মুক্তি পান।৫৪ ধারায় আবার গ্রেফতার এড়াতে কুমিল্লার জামায়াতের তৎকালীন সাংসদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের গাড়িতে করে জেলগেট থেকে পালিয়ে যায় সাজ্জাদ।২০০৪ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মুখে তৎকালীন জোট সরকার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পর  দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খান দুবাইয়ে পালিয়ে যায়।
২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খুন হন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার আওয়ামী লীগ সমর্থিত জনপ্রিয় ওয়ার্ড কমিশনার লিয়াকত আলী। লিয়াকত হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয় সাজ্জাদ ও আরেক দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জসিম উদ্দিন ওরফে ফাইভ স্টার জসিম। মূলত এ ঘটনার পরই অপরাধ জগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুদিন পর নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে সাজ্জাদের নেতৃত্বে মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার করে ছাত্রলীগের ৬ নেতা সহ ৮জনকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। আলোচিত এইট মার্ডারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিবিরের আরেক ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে গিট্টু নাছির এবং ফাইভ স্টার জসিম পরবর্তীতে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। ২০০৫ সালে আজরাইল দেলোয়ার জামিনে মুক্তি পায়। পরবর্তীতে র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ আজরাইল দেলোয়ার নিহত হয়।
এরপর নিজের দল জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শক্তিশালী অংশীদার হলেও পরিস্থিতি প্রতিকূল মনে করে  সাজ্জাদ আর দেশে ফেরেননি।০৮/১১/২০১২

No comments:

Post a Comment