Sunday, July 14, 2024

মুক্তিযোদ্ধা,প্রতিবন্ধী,ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ সকল কোটা পুনর্বহালে আদালতের নির্দেশের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ

১৪ জুলাই ২০২৪ রবিবার (১৪ জুলাই) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করবার নির্দেশ জারি সংক্রান্ত ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য,গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রবিবার প্রকাশিত পূর্নাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব, আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের এ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, প্রয়োজনে উল্লিখিত শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এ রায় বিবাদীদের জন্য কোনও বাধা তৈরি করবে না। যেকোনও পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করায় সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। পরে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান বলেন, গত ১০ জুলাই আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পরে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেদিন ৯ জুন সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন চেম্বার জজ আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি মামলার শুনানি মুলতবি রাখেন আদালত। গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিকে গত ৮ জুলাই আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। এরপর ১০ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্রের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে বলে জানান আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর ১১ জুলাই বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের মূল অংশ (কার্যকরী অংশ) প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলেন আদালত। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোটা বাতিলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের একদিন পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ পরিপত্র জারি করে।

Thursday, December 29, 2022

ফুটবল সম্রাট পেলে চিরনিদ্রায়-সুমি খান

তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী পেলে ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন।

১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ তিনি ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন। ’ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরি বোর্ডের বিচারে বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার পেলে মানবতার সেবায় নিবেদিত ছিলেন । ৮২ বছর বয়সে এ ফুটবল সম্রাট  চলে গেলেন সকলকে ছেড়ে। 

পেলে ১৯৭৭ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্রাজিলের রাজনীতিতে অংশ নেন দরিদ্র মানুষদের জন্য নিজেকে নিবেদন করেন। আমৃত্যু ব্রাজিল তথা সারা বিশ্বের  মানবতার  সেবায় কাজ করেছেন। বিভিন্ন কোম্পানীর ব্র‌্যান্ড  ছিলেন পেলে ৷

১৯৫৮ সালে ব্রাজিল প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে পেলের নেতৃত্বে। পর পর চারটি বিশ্বকাপে খেলে তিন বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেলের নেতৃত্বে ব্রাজিল। বিশ্বের আর কোনও ফুটবলারের এ কৃতিত্ব  নেই। 

 সর্বাধিক ৫৪১ টি গোল৷ আর সব রেকর্ড মেলালে ১২৯৭ গোল করেন তিনি৷এক মরশুমে সর্বাধিক ৭৭ টি গোল করার পর ব্রাজিলে পেলেকে জাতীয় নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

স্যান্টোসের কোচকে মাত্র ১৫ বছর বয়সে পায়ের যাদুতে মুগ্ধ করেছিলেন পেলে৷ সেই থেকে স্যান্টোস এফসিতে তাঁর ফুটবল কেরিয়ারের শুরু৷ ১৯৫৬ সালে নিজের কন্ট্র্যাক্ট সাইন করেন তিনি৷ তারপরেই তিনি নিজেদের পেশাদার অভিষেক ঘটান৷ নিজের প্রথম ম্যাচেই গোল করেন ।ব্রাজিলিয়ান লীগে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন৷ 

পেলে খেলবেন বলে নাইজেরিয়ান সিভিল ওয়ারের দুটি দল ৪৮ ঘণ্টা ১৯৬৯ সালে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল৷ পেলে এরপর ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলেন৷ কিন্তু ইন্টারমিলান এবং রিয়েল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের জন্য খেলেন৷

১৯৯২ সালে পেলে ইউনেসকো চ্যাম্পিয়ন্স ফর স্পোর্টসে পিছিয়ে থাকা অর্থনীতির শিশুদের খেলার বিকাশের জন্য নিযুক্ত হন৷ কিন্তু ২০০১ সালে এক বিশাল আর্থিক   দুর্নীতিতে তাঁকে ৭ লক্ষ ডলার তছরূপের  জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপে তাঁর যোগদান৷ যাদুকরী খেলার গুণে অসংখ্য আকর্ষণীয় অফার পান। কিন্তু সব প্রত্যাখ্যান করে তিনি স্যান্টোসের সঙ্গেই ছিলেন৷ তাঁর দল ১৯৬২ সালে ইন্টারকন্টিনেন্টল কাপ এবং ১৯৬৩ সালে কোপা লিবারেটোডরেস জেতেন ।

পেলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ বিপুল।মৃত্যুকালে ১০০  মিলিয়ন ডলার সম্পত্তি রেখে গেলেন ফুটবল সম্রাট ।

তাঁর মার্কেটিং কোম্পানি পেলে স্পোর্টস অ্যান্ড মার্কেটিং ইউনিসেফের থেকে টাকা ধার করেছিলেন একটি প্রীতি ম্যাচের জন্য, যা কখনও খেলা হয়নি৷ পেলে অডিট করে নিজের পার্টনারের বিরুদ্ধে ৪ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেন,তবে তা প্রমাণ করা যায় নি।

পুমা-র (Puma) সহ  অনেকের ব্র‌্যান্ড পেলে অবসর নেবার এক যুগ পরও দশ লক্ষ ডলার করে রোজগার করতেন এনডর্সমেন্টের সুবাদে৷ 

ফুটবলের যাদুকর মারাদোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে হঠাৎ প্রয়াত হন । এবার পেলে ও  চলে গেলেন। দু’বছরের মধ্যে বিশ্ব হারাল সারাবিশ্বে কোটি ফুটবল অনুরক্ত দর্শকের হৃদয়ের রাজা দুই কিংবদন্তী ফুটবল যাদুকরকে।।



১৯৭৭ সালে তিনি অবসরে যান। ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট দিয়েগো মারাদোনার পক্ষে ছিল। ফিফা দু’জনকেই  যুগ্ম ভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে । ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর  পেলের জন্ম। ২০২১ সাল থেকে অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে।

 পেলে নামে চেনে বিশ্ব তাঁকে; মায়ের দেয়া নাম এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো নামে দুনিয়া তাকে চেনে না।  

 কাতার বিশ্বকাপের সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৯ নভেম্বর তাঁকে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ২২ ডিসেম্বর ক্যানসারের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে বাড়ি ফেরা হয়নি। বড়দিন হাসপাতালেই কাটিয়েছেন। বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি গণমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তাঁর কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছেন ছেলে এডিসন। 

পরিবারের লোকেরা হাসপাতালে তাঁর পাশে থেকেও শেষ রক্ষা হল না। চিকিৎসকেরা বাঁচাতে পারলেন না ফুটবল সম্রাটকে।

 চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন পেলে।

৩০ ডিসেম্বর,২০২২



Friday, February 25, 2022

৪০ বছর পর ফের দু'ভাগে বিভক্ত বিশ্ব-৮ ঘণ্টা পর ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিল রাশিয়া

 'ঠান্ডা যুদ্ধ'-র প্রায় ৪০ বছর পর ফের দু'ভাগে বিভক্ত বিশ্ব। একে অনেকেই 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ'র আগের মুহূর্ত বলে ব্যাখ্যা করছেন। 



অবশেষে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিল রাশিয়া। বিদেশমন্ত্রী লাভরভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন অস্ত্র রেখে দিলে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি মস্কো। পাল্টা প্রতিরোধ করা চলবে না। চিনা সরকারের আধিকারিকের দাবি, ইউক্রেনের সঙ্গে কথা বলতে রাজি পুতিন। চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে পুতিনের।

আমেরিকা ও ন্যাটোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইউক্রেনে দুদিন ধরে ‘সামরিক অভিযান’ (Russia-Ukraine War) জারি রেখেছে রাশিয়া। হঠাৎ করে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। চেনা ইউক্রেন রাতারাতি পাল্টে  গেছে।যুদ্ধ ঘোষণা করেই একসঙ্গে ইউক্রেনের ১১ টি শহরে আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। রাজধানী কিয়েভ সহ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন শহরকে নিশানা করা হয়েছে।ইউক্রেনের একশ’র বেশি সেনা নিহত । 

  রাশিয়ার চিরশত্রু ইউক্রেনের পাশে আমেরিকা;রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছে  আমেরিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিন। আফগানিস্তানের তালিবান শাসক কায়েম হওয়ার পর সুরক্ষার স্বার্থে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো রাশিয়াকেই সমর্থন করবে। আজারবাইজান এবং মধ্য প্রাচ্যের ইরানকেও পাশে পাবে মস্কো। এছাড়া পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে উত্তর কোরিয়ারও সমর্থন পাবে রাশিয়া।

ন্যাটো (NATO) অন্তর্ভুক্ত ইউরোপিয় দেশগুলোকে পাশে পাবে ইউক্রেন। বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্য়ান্ড, ইতালি, লাক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, ব্রিটেন এবং আমেরিকার সমর্থন পাবে ইউক্রেন। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াও ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার বিকেলেই প্রকাশ্যে আসে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীর ঘোষণা। 

চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার আর্জি জানিয়ে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং 'রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছেন। 

আগেই চিন জানিয়ে দিয়েছে যে এই লড়াইয়ে রাশিয়ার পাশে রয়েছে তাঁরা। এছাড়া একসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, কর্গিস্তান, তাজিকিস্তান এবং বেলারুসের সমর্থন পাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin)। 


Tuesday, December 28, 2021

একটা ছোট্ট ট্রিক- বদলে যাবে হোয়াটসঅ্যাপ লোগোর রঙ

 মেসেজিং অ্য়াপ বলতে হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) -যাঁরা হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) ব্যবহার করছেন, তাঁরা সবুজ রঙের লোগো দেখতেই অভ্যস্ত- একটা পদ্ধতি রয়েছে যা ব্যবহার করলে মুহূর্তে বদলে যাবে হোয়াটসঅ্যাপের (WhatsApp) লোগোর রঙ।

যদি  নিজের হোয়াটসঅ্যাপ লোগোর রঙ বদলাতে চান, মেনে চলুন এই পদ্ধতিগুলো-



আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করুন 'Nova Launcher' নামে একটি অ্যাপ। ডাউনলোড হয়ে গেলে এবার সেখানে গোল্ডেন হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) আইকন সিলেক্ট করুন।গোল্ডেন হোয়াটসঅ্যাপ আইকনটি ডাউনলোড করুন। এরপর হোমস্ক্রিনে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপটি অনেকক্ষণ প্রেস করে থাকুন বা চেপে ধরে থাকুন। 

এরপর স্ক্রিনের উপর একটা 'এডিট পেনসিল' দেখতে পাবেন। ওটাতে ক্লিক করে ফোন গ্যালারিতে গিয়ে গোল্ডেন হোয়াটসঅ্যাপ লোগোটি সিলেক্ট করুন। দেখবেন মুহূর্তে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ লোগো সবুজ থেকে সোনালী হয়ে যাবে।Zee News


২৭ ডিসেম্বর সমুদ্রযাত্রা তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে লহমায় বদলে দিল সৃষ্টিতত্ত্ব-যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকে- সুমি খান

 ২৭ ডিসেম্বর একটি সমুদ্রযাত্রায় ছিলেন ডারউইন  -তাঁর ইতিহাস বদলে দেওয়া অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে  বিবর্তনতত্ত্ব একটি বই লিখেছিলেন।বই তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে পুরনো ধ্যানধারণা সব লহমায় বদলে দিয়েছিল।জীববিজ্ঞানেই শুধু নয়, সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের পৃথিবীতেই একটা 'প্যারাডাইম শিফট' ঘটে গেল।  

ধাক্কা খেয়েছিল সৃষ্টিতত্ত্ব! বিশ্ব জুড়ে জ্ঞানবুভুক্ষু মানুষ চেটেপুটে পড়তে লাগলেন পৃথিবীর জীবজগতের নিয়ম। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব তো শুধু বিজ্ঞান নয়, দার্শনিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বিপুল সাড়া ফেলেছিল। 


বিগল নামের জাহাজটির ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিটজয় -এই  ক্যাপ্টেনের সাদর আমন্ত্রণেই তরুণ জীববিদ্যাবিদ চার্লস ডারউইন চেপে বসতে পেরেছিলেন সেই জাহাজে এবং পৌঁছে যেতে পেরেছিলেন গ্যালাপোগোস দ্বীপে। শুরু করেন তাঁর অনন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ডারউইনের বাবা চাননি, ছেলে এই সমুদ্রভ্রমণে যাক। বাবার অমতেই ডারউইন নেমে পড়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করতে। সমুদ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল ২৭ ডিসেম্বর। চার্লস ডারউইন সেই সমুদ্রযাত্রায় ছিলেন -তাঁর ইতিহাস বদলে দেওয়া অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন।

১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বরে লন্ডন থেকে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তি অথবা জীবনসংগ্রামে আনুকূল্যপ্রাপ্ত গোত্রের সংরক্ষণ বিষয়ে বইটি বেরিয়েছিল। নাম-- 'অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিসেস'। বইটির পুরো নাম দ্য অরিজিন অফ স্পিসিসেস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন, অর দ্য প্রিজারভেশন অফ ফেভারড রেসেস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর লাইফ'! বছরতেরো পরে অবশ্য বইটির নাম ছোট করে দেওয়া হয়-- 'দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস'।


সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাই ওই বই। সেই বইয়ের ভূমিকায় ডারউইন আর্মাডিলো, রিয়া নামের এক উড্ডীন-অক্ষম পাখি, কয়েকটি বিলুপ্ত প্রজাতির ঘোড়া এবং অধুনালুপ্ত স্লথের জীবাশ্মের কথা উল্লেখ করেন।

 গ্যালাপোগোস দ্বীপের প্রাণী ও উদ্ভিদদের দেখেই তিনি বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে প্রথম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। সেই চিন্তাভাবনা ক্রমে মহীরুহের আকার নেয়। 


হঠাৎ ডারউইন কেন ভাবতে গেলেন এই সব? তাঁর প্রেরণা ছিলেন লামার্ক। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মগ্রহণ করে প্রাকৃতিক নিয়মেই জন্মদাতার থেকে একটু আলাদা হয়ে যায় জীব। এবং এই ভাবে চলতে-চলতেই দীর্ঘ সময় পরে বড় ধরনের বদল, বা 'বিবর্তন' ঘটে। এই ভাবনাই ডারউইনকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল।   

ডারউইন গুরুর চেয়ে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে গেলেন। দেখালেন, বিবর্তন শুধু পরিবর্তন নয়; এ হল পরিবর্তনের এমন এক ধারা যা অতীতকে সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে ভেসে চলে। এই পরিবর্তনের ভেসে চলার গতিপথ 'অতি সরল' থেকে 'সরল', 'সরল' থেকে 'জটিল' আবার 'জটিল' থেকে 'জটিলতর' কিংবা 'অনুন্নত' থেকে 'উন্নত', 'উন্নত' থেকে 'উন্নততরে'র দিকে। 

এই জার্নিতে জীবকে পরিবেশের সঙ্গে লড়তে হয়, খাপ খাওয়াতে হয়। খাপ খাওয়ানোর এইসব কাজ করতে-করতে জীব নানা বৈচিত্র্য অর্জন করে এবং যোগ্যতমেরাই বেঁচে থাকে।

 এর সঙ্গেই অন্বিত 'প্রাকৃতিক নির্বাচন'। এই পথেই নতুন এবং উন্নততর প্রজাতির সৃষ্টি হয়। আরশোলা একই অবয়বে সুদীর্ঘকাল টিকে থাকল পৃথিবীতে। 

আরশোলা খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে বলেই এটা পারল।ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল; খাপ খাওয়াতে পারল না। অর্থাৎ, এখানে প্রাকৃতিক নির্বাচনই আসল খেলাটা খেলছে বলে মত ডারউইনের। Source Zee


Friday, July 30, 2021

বাংলাদেশে নাশকতা-পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক মাযহার খান-সুমি খান

বাংলাদেশে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাকিস্তান দূতাবাসের এক কূটনীতিক। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও অর্থায়ন করেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর অন্যতম সংগঠকও এই পাকিস্তানি। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে। মাযহার খান নামে ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী ভয়ঙ্কর সব তৎপরতার তথ্য-প্রমাণ পেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চলছে তোলপাড়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সন্দেহও করছেন কেউ কেউ। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি তৎপরতাই শুধু নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন তিনি। এ জন্য পরিচালনা করেন ভারতীয় জাল রুপির এক বিশাল নেটওয়ার্ক। ধরাও পড়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। কিন্তু কূটনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয় ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস। বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতায় জড়িত এই কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে গোপনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানে। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মকর্তার সহযোগী মজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশি একজন নাগরিক গ্রেফতার হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ধারাবাহিক তদন্তের সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গি তৎপরতা ও জাল রুপি নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিদের কার্যক্রমের ক্রমধারা ও রূপরেখা। পাওয়া গেছে তাদের তালিকা ও কথোপকথনের সারাংশ। ওই প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কড়া ভাষায় পাকিস্তান হাইকমিশনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার ও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশের আসা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে।  

 <a href='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=a35ce767' target='_blank'><img src='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=782&n=a35ce767' border='0' alt='' /></a> 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নাশকতার সঙ্গে পাকিস্তান দূতাবাসের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দীর্ঘ অনুসন্ধান চালায় বাংলাদেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মাযহার খান জাল নোট (রুপি) তৈরি ও সংগ্রহ করে কতিপয় বাংলাদেশি নাগরিকের মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন। এতে তিনি প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে আরও নিশ্চিত হন যে, মাযহার খানের সঙ্গে জলিল   আখতার ও মো. মজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলের লোকজনের যোগাযোগ    রয়েছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিশেষ করে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, যশোর, বেনাপোল এলাকার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। এটা নিশ্চিত হওয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গত ১২ জানুয়ারি রাতে বনানীর মৈত্রী মার্কেট এলাকায় মজিবুর রহমান ও পাকিস্তান দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খানকে গোপন বৈঠকের সময় আটক করে। ওই সময় মাযহার তার সঙ্গে থাকা বেশ কিছু কাগজপত্র ছিঁড়ে ফেলেন। ছিঁড়ে ফেলা কাগজ সংগ্রহ করে গোয়েন্দারা কিছু বাংলাদেশি পাসপোর্ট নম্বর পান। ওই পাসপোর্টের সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে, পাসপোর্টধারীদের এমন তিন ব্যক্তি রয়েছেন যাদের নাম বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুত করা হিযবুত তাহরীরের তালিকায় আছে। এরপরই গোয়েন্দারা মজিবুর ও মাযহারকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বনানী থানায় নিয়ে যান। খবর পেয়ে সেদিনই রাত ১০টার দিকে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব সামিনা মাহতাব বনানী থানায় উপস্থিত হয়ে মাযহার খানকে নিজের হেফাজতে নিয়ে যান। অন্যদিকে, মজিবুর রহমানকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত আট থেকে ১০ বছরে ২২ বার পাকিস্তানে ১১ বার ভারত ও ২২ বার থাইল্যান্ডে যাওয়া মজিবুর রহমানের সঙ্গে মাযহার খানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাযহার খানের পূর্বসূরি সহকারী ভিসা কর্মকর্তা। পরবর্তীকালে মজিবুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবিন্দতে জানান, মাযহার খান এক লাখ ৮০ হাজার ভারতীয় জাল রুপি চালানোর জন্য তাকে দেন। একইভাবে মাযহার আরও ভারতীয় জাল রুপি জাহিদ, ইমরান ও আরও কয়েকজনকে দিয়ে বাজারে ছাড়িয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মাযহার খান পাকিস্তান দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করা হয়। মূলত বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে।  
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রের তথ্যমতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানি মোহাম্মদ ইমরানকে আশি লাখ জাল রুপিসহ আটক করা হয় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। ইমরানের পাসপোর্টের ভিসাও ছিল জাল। আগের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ইমরানেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। 
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে ২ বছর দায়িত্ব পালনের বাইরে মোহাম্মদ মাযহার খান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াত-শিবিরের কর্মকাণ্ড, পৃষ্টপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রাবাজার ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশাল জাল রুপির নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। এই নেটওয়ার্কের অন্যতম সদস্য মুজিবুর রহমান জঙ্গিসংগঠনগুলোর জন্য অর্থ পাচার কাজে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এ জন্যই তিনি ঘন ঘন ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডে আসা-যাওয়া করেছেন। পাকিস্তানে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রদান না করায় জাল ভিসার সংখ্যা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পাসপোর্ট অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অতি জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয় বলে জানা গেছে।
০২/০৪/২০১৫

Sunday, April 18, 2021

আফগানিস্তানে তারাবির নামাজ পড়ার সময় মসজিদে গুলি চালিয়ে এক পরিবারের আট ব্যক্তিকে হত্যা

আফগানিস্তানে তারাবির নামাজ পড়ার সময় মসজিদে গুলি চালিয়ে এক পরিবারের আট ব্যক্তিকে হত্যা করেছে আইএস জঙ্গিরা। স্থানীয় এক পুলিশ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘তারাবির নামাজের সময় মসজিদে ঢুকে গুলি চালানো হয়। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে এটি টার্গেটেড হামলা।’ আল-জাজিরা জানিয়েছে, দেশটির পূর্ব নানঘর প্রদেশে শনিবার এই ঘটনা ঘটেছে। আফগানিস্তানের এই প্রদেশে আইএস জঙ্গিদের ঘাঁটি আছে। তাদের কারণেই সাধারণ মানুষের হাতে হাতে অস্ত্র চলে গেছে।
পুলিশ বলছে, জালালাবাদের ওই এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাদের হত্যা করা হয়। আটজনের মধ্যে পাঁচজন এক মায়ের সন্তান, বাকি তিনজন তাদের চাচাতো ভাই। আফগানিস্তানে জমি সংক্রান্ত বিরোধ প্রায়ই দেখা যায়। এই ধরনের সমস্যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। গত এপ্রিলে ছয়জন উপজাতিকে এভাবে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন ২০ জন।-অন্যদৃষ্টি ব্রেকিং

Thursday, February 4, 2021

তৃষাতুর ঘাতক-সুমি খান

(বিকেল ৫টা, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৫) বাতাসে লাশের গন্ধ- ২৫ মার্চ ১৯৭১- ইয়াহিয়ার দাবি ছিল অতি 'সামান্য' বাংলাদেশের মাটি- সে মাটি লুটে নিতে লুটেছে তোমার আমার সব- লুটেছে রবীন্দ্র নজরুল কেড়েছে তিরিশ লাখ প্রাণ লুটেছে তিন লাখ নারীর সম্ভ্রম- বাড়ি-ঘর মন্দির-মসজিদ-গীর্জা-প্যাগোডা আজো সেই প্রেতাত্মার রক্তবীজ রক্তপিপাসু লালায়িত - চলছে রক্তের হোলিখেলা- তুমি আমি নির্বাক- প্রশ্নের ঝোড়ো হাওয়া লুটে নেয় রক্তপ্রাণ প্রশ্নচিহ্ন আছে বটে- তবে সেটা শুধু শ্লীল অশ্লীলতার কি? বিষয়টা ভাবনার গভীর থেকে গভীরতর- যেন গভীরখাদ.. উবু হয়ে দেখতে হবে। পেছনে প্রস্তুত ঘাতকের সারি! যাদের দায়িত্ব সামান্যই- তুমি উবু হতেই খুব হাল্কা হাতে তোমার মাথার ঠিক পেছনটায় একটা চাটি- তলিয়ে যাবে তুমি- খাদের একেবারে তলানিতে!! তবু জেগে আছি আমি তুমি পিতৃপুরুষের ঋণে তিরিশ লাখ প্রাণের প্রতিশোধের দাবি নিয়ে- জেনে যাক্ ঘাতকের দল- যতোই বড়ো হোক্ ঘাতকের সারি- আমাদের মিছিলের সারি আজ তার চেয়ে অনেক বড়ো- জেগে আছি আমি তুমি লাশ কাটা ঘর নয় লাল সবুজের সবীজ মাতৃভূমির বুকে- ধানসিঁড়িটির তীরে- শঙ্খচিল শালিকের ভিড়ে- কর্ণফুলীর তীরে মাস্টার'দা প্রীতিলতার রক্তবীজ বেয়ে- ঘাতকের শান দেয়া ছুরির মুখে আমি আছি আছো তুমি বন্ধু চিরঞ্জীব!

না চিনিতেই ভালোবেসে কেনা দীর্ঘশ্বাস- সুমি খান

০১ দাম দর করতে শিখি নি- শিখিনি যাচাই আর পরখ বিচার এ জীবনে হলো না কিছুই বুঝি আর দানের মহিমা বুঝেছে কবে কে! ০২ কিছু পুরুষ বলে তারা নাকি নারীর সবটুকু চায়! কিছু দুর্বোধ নারী থাকে যাদের না পাওয়াতেই সুখ যারা ভাবে- ভালোবাসলে ’অদেয় কিছুই থাকে না’! ঈশ্বর মুখ টিপে হাসেন তখন- নারীশ্বর থাকতো যদি কেউ রক্ষক হয়ে আগলে রাখতো এসব দুর্বোধ নারীদের! হৃৎপিণ্ড থেকে বাঁচবার কথা ভুলে নিঃশ্বাস টুকুও উজাড় করে দেবার পর দমটুকু গারদে ভরে দিলে তোমরা- শ্বাসটুকু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকলো! শ্বাস ও দীর্ঘ হয়- মেয়েটি জানলো- ধীরে ধীরে! সবটা দিলেও দীর্ঘশ্বাসগুলো আর কাউকে দিলো না মেয়েটি - ভালোবাসার বিনিময় হয় না যে! নিজের বলে এ জীবনে ওইটুকুই রয়ে গেলো মেয়েটির! দীর্ঘশ্বাস জমতে থাকে- সম্পদ বাড়তে থাকে মেয়েটি বেশ সম্পদশালী হয়ে গেলো তিলে তিলে! সকাল ৮টা ২০ মি. ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১, পাথরঘাটা, চট্টগ্রাম

Friday, December 18, 2020

আমাদের সুপারম্যান বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য শত বছরের বীরযোদ্ধা বাঘা যতীনের আবক্ষ মূর্তি সারা দেশে হোক-সুমি খান

বাঘা যতীনের আবক্ষ মূর্তি ভেঙ্গে বাঙালীর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় যারা কলঙ্কিত করতে চায়,তাদের চরম সাজা দিতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো প্রতিটা স্বাধীনতা সংগ্রামীর আদর্শ বাঘা যতীন। আমাদের কোন কল্পিত সুপারম্যান নেই আক্ষরিক সুপারম্যান যাঁরা,তাঁদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ,তাঁর পূর্বসুরী বাঘা যতীন, মাস্টার’দা, বীরকন্যা প্রীতিলতা,কল্পনা দত্ত অন্যতম। যারা এই বীর যোদ্ধাদের বারবার অসম্মান করছে, রাষ্ট্র যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করে। কোন আপোষকামীতাআমাদের অন্ধকারের চোরাবালিতে ডুবিয়ে দেবে। আমরা যেন এই ক্ষমাহীন অপরাধেল বিরুদ্ধে একাত্ম হই। বাবা মায়ের আদর্শে লালিত জাতপাত প্রথাবিরোধী বাঘা যতীন শৈশব থেকেই কুষ্টিয়ার মুসলিম অসহায় এক বৃদ্ধাকে তাঁর নিজের খাবার গুলো দিয়ে দিতেন। বড়ো হয়ে ও তাঁকে মাসোহারা দিতে ভুলতেন না। সেই একশ’বছর আগের এই মানবতাবাদী বিপ্লবীর অসম্মান আমাদের সারা জাতির অসম্মান!
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ – ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫) ছিলেন বাঙলার বীর যোদ্ধা, ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা।বাঘা যতীন নামেই সমধিক পরিচিত এই বিপ্লবী যোদ্ধার অবদান চিরস্মরণীয় । বাংলার ঘরে ঘরে তাঁর আবক্ষ মূর্তি এ দেশের সন্তান দের সাহসী বীর যোদ্ধা হবার অনুপ্রেণা দেবে। জানি না এ সত্য কবে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা বুঝবেন। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মান প্লট তারই মস্তিস্কপ্রসূত। পরে মার্কিন- ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রে দেশীয় বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতায় জার্মান জাহাজ ভর্তি গোলা বারুদ ধরা পড়ে যায়। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ মিলিটারির সাথে সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখ যুদ্ধে উড়িষ্যার বালেশ্বরে তিনি গুরুতর আহত হন এবং বালেশ্বর হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করার পর তিনি সাঁটলিপি ও টাইপ শেখেন এবং পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের স্ট্যানোগ্রাফার হিসেবে নিযুক্ত হন। যতীন ছিলেন শক্ত-সমর্থ ও নির্ভীক চিত্তধারী এক যুবক। অচিরেই তিনি একজন আন্তরিক, সৎ, অনুগত এবং পরিশ্রমী কর্মচারী হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। একই সঙ্গে তার মধ্যে দৃঢ় আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ জন্মায়। বাঘা যতীনের জন্ম হয় কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। তার পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। ঝিনাইদহ জেলায় পৈতৃক বাড়িতে তার ছেলেবেলা কাটে। ৫ বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হয়। মা এবং বড় বোন বিনোদবালার সাথে তিনি মাতামহের বাড়ি কয়াগ্রামে চলে যান। যতীন শৈশব থেকেই শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি চিতা বাঘের সাথে লড়াই করে বাঘকে হত্যা করেন।বাঘের বিষাক্ত নখের আঘাতে গুরুতর আহত হন।চিকিৎসকের নিরলস সেবায় সেরে উঠেন তিনি। সেই থেকে তাঁর নাম হয় বাঘা যতীন।রাষ্ট্রীয় পদক ও পান। ১৯৭০ সালে তাঁর নামে ভারত সরকার ডাকটিকেট প্রকাশ করে। যতীনের মা বিধবা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। সমসাময়িক বাঙালি চিন্তাবিদদের রচনাবলীর পাঠিকারূপে তিনি অবগত ছিলেন দেশের মঙ্গলের পথ এবং সেইমতো তিনি লালন করতেন তার সন্তান দু'টিকে। পরোপকার, সত্যনিষ্ঠা, নির্ভীক চিন্তায় ও কর্মে অভ্যস্ত যতীন পড়াশোনা ও খেলাধুলার পাশাপাশি কৌতুকপ্রিয়তার জন্যও সমাদৃত ছিলেন। পৌরাণিক নাটক মঞ্চস্থ ও অভিনয় করতে তিনি ভালোবাসতেন এবং বেছে নিতেন হনুমান, রাজা হরিশচন্দ্র, ধ্রুব, প্রহ্লাদ প্রভৃতি চরিত্র। যতীনের বড় মামা বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় (বিপ্লবী হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের পিতা) ছিলেন কৃষ্ণনগরের আইনজীবি এবং আইনের অধ্যাপক। তার পরামর্শ নিতেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - পার্শ্ববর্তী শিলাইদহে তার জমিদারী সংক্রান্ত নানা প্রয়োজনে। কৈশোর থেকে রবীন্দ্রনাথ যে অনুরাগ নিয়ে আন্দোলন চালিয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে, তারই প্রেরণায় শরৎশশী উদ্বুদ্ধ করেছিলেন যতীনকে। রবীন্দ্রনাথের ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ইতিহাস-ভক্ত। যতীনের চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে তিনি হাজির হতেন যতীনের ফুটবল ক্লাবে; সেখানে দামাল ছেলেগুলির সামনে সুরেন তুলে ধরতেন দেশপ্রেমের আদর্শ। গীতাপাঠের মধ্যে তাদের বুঝিয়ে দিতেন নিষ্কাম কর্মের উপযোগিতা। যতীন কৃষ্ণনগর শহরে এংলো ভার্নাকুলার (এ ভি) বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৯৫ সালে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজে (বর্তমানের ক্ষুদিরাম বোস সেন্ট্রাল কলেজ) ভর্তি হন। কলেজের পাশেই স্বামী বিবেকানন্দ বাস করতেন। বিবেকানন্দের সংস্পর্শে এসে যতীন দেশের স্বাধীনতার জন্য আধ্যাত্মিক বিকাশের কথা ভাবতে শুরু করেন। এসময়ে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিবেকানন্দের আহবানে যতীন তার বন্ধুদের দল নিয়ে এই রোগে আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত হন।স্বামী বিবেকানন্দের পরামর্শে যতীন শরীরচর্চার জন্য অম্বু গুহের কুস্তির আখড়ায় যোগ দেন। সেখানে তার সাথে সেসময়ের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের দেখা হয়। এদের একজন শচীন বন্দোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়ের সূত্রে তিনি শচীনের পিতা যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের সাক্ষাৎ পান। যোগেন্দ্রনাথ তখনকার ইউরোপের মাৎসিনি, গারিবল্ডি প্রমুখ ইতালীয় বিপ্লবীদের জীবনের আলেখ্য রচনা করেছিলেন। কলেজ পাঠের সঙ্গে সঙ্গে যতীন অ্যাটকিনসন সাহেবের স্টেনো টাইপিংয়ের ক্লাসে ভর্তি হন। সদ্য প্রচলিত টাইপরাইটার ব্যবহার করার এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মোটা মাইনের চাকুরি পাওয়া সম্ভব ছিলো। ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তিতে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠে ইস্তফা দিয়ে যতীন ১৮৯৯ সালে মজঃফরপুর চলে যান। সেখানে তিনি ব্যারিস্টার কেনেডীর সেক্রেটারি হিসাবে কাজে যোগ দেন। ভারতের জন্য মজুদ অর্থ দিয়ে ইংরেজ সরকার সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করছে সাম্রাজ্য রক্ষার স্বার্থে, তার বিরুদ্ধে কেনেডি কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে বক্তৃতা মারফৎ এবং তার সম্পাদিত ত্রিহুত কুরিয়ার পত্রিকায় প্রচারণা চালাতেন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তিভোগী এই ভারত প্রেমিক ব্যারিস্টার কেনেডি ছিলেন মোগল সাম্রাজ্যের উপরে মৌলিক গবেষণার জন্য বিখ্যাত। দুর্ভাগ্যক্রমে কেনেডি'র স্ত্রী ও কন্যার জীবননাশ ঘটে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকীর বোমায়। কেনেডির উৎসাহে মজঃফরপুরের তরুণদের জন্য যতীন ফুটবল ও অ্যাথলেটিক ক্লাব গড়ে তুলেন। জননী শরৎশশীর অসুস্থতার সংবাদে যতীন কয়াগ্রামে এসে দেখেন এক কলেরা রোগীর সেবা করতে করতে তার সংক্রমণে যতীনের মা মৃত্যুবরণ করেছেন। দিদি বিনোদবালার কাছে যতীন জানতে পারেন, তার প্রয়াত মা কুমারখালীর উমাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে ইন্দুবালার সাথে যতীনের বিয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন। ১৯০০ সালে যতীন ইন্দুবালাকে বিয়ে করেন। তাদের ৪টি সন্তান হয় - অতীন্দ্র (১৯০৩-০৬), আশালতা (১৯০৭-৭৬), তেজেন্দ্র (১৯০৯-৮৯) এবং বীরেন্দ্র (১৯১৩-৯১)। যতীন মজঃফরপুরে আর ফিরবেন না - এই খবর পেয়ে কেনেডি একটি সুপারিশ দেন তার বন্ধু হেনরি হুইলারের নামে, যিনি তখন বাংলা সরকারের অর্থসচিব। যতীনকে হুইলার নিজের স্ট্যানোগ্রাফার হিসাবে নিয়োগ করেন। যতীনের পেশাগত নৈপুণ্যের সঙ্গে তার আত্মসম্মানবোধ ও দেশপ্রেম মুগ্ধ করে হুইলারকে। ভারতীয় প্রজাদের উপরে ইংরেজ অফিসারদের অবর্ণনীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তখন বিপিন চন্দ্র পাল নিউ ইন্ডিয়া (New India) পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপছেন; তারই প্রতিধ্বনি তুলে বংগদর্শনের পৃষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন মুষ্টিযোগের উপযোগিতা বিষয়ে - ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত ইংরেজের পক্ষ নিয়ে সরকার যেভাবে তার বদলা নেয়, সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করে রবীন্দ্রনাথ ইঙ্গিত দিচ্ছেন ভারতীয়দের সংঘবদ্ধ হতে। এর পিছনে প্রচ্ছন্ন আছে বিপ্লবীদের গুপ্ত সমিতি গঠনের পরিকল্পনা।১৯০৩ সালে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের বাড়িতে শ্রী অরবিন্দের সাথে পরিচিত হয়ে যতীন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। সরকারী নথিপত্রে যতীন পরিচিত হন শ্রী অরবিন্দের দক্ষিণহস্ত হিসাবে।অরবিন্দ ঘোষের সংস্পর্শে এসে যতীন শরীর গঠন আখড়ায় গাছে চড়া, সাঁতার কাটা ও বন্দুক ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুগান্তর দলে কাজ করার সময় নরেনের (এম.এন রায়) সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং একে-অপরের আস্থাভাজন হন। ১৯০০ সাল থেকে মূল অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জেলায় জেলায় যতীন পত্তন করেন এই গুপ্তসমিতির শাখা। পথে-ঘাটে ভারতীয় নাগরিকদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সদা প্রস্তুত যতীনের এই দেশাত্মবোধ গুণগ্রাহী হুইলারের মনে কৌতুক জাগাত। ১৯০৫ সালে যুবরাজের ভারত সফরকালে কলকাতায় বিরাট শোভাযাত্রা উপলক্ষে যতীন স্থির করলেন এদেশে ইংরেজদের আচরণ প্রত্যক্ষ করাবেন যুবরাজকে। একটি ঘোড়াগাড়ির ছাদে একদল সৈনিক বসে মজা লুটছে, তাদের বুটসমেত পা দুলছে গাড়ীর যাত্রী, কয়েকজন দেশী মহিলার নাকের সামনে। যুবরাজ নিকটবর্তী হওয়ামাত্র যতীন অনুরোধ করলেন গোরাদের নেমে আসতে। অশালীন রসিকতায় মুখর গোরাদের হতভম্ব করে একছুটে যতীন গাড়ীর ছাদে ওঠা মাত্র একজোটে গোরারা তাঁকে আক্রমণ করে। ইতিমধ্যে নিছক বাঙ্গালী থাপ্পড় মারতে মারতে যতীন তাদের ধরাশায়ী করছেন দেখে যুবরাজ তার গাড়ী থামাতে বলেন। যতীন জানতেন, নিয়মিত লণ্ডনে ভারত-সচিব মর্লি'র দফতরে অভিযোগ পুঞ্জীভূত হয় এইসব দুষ্কৃতকারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যুবরাজ দেশে ফিরে গিয়ে ১৯০৬ সালে ১০ মে দীর্ঘ আলোচনা করেন মর্লি'র সংগে এর প্রতিকার চেয়ে। ব্রিটিশ যুবরাজ মানবিক মানুষ ছিলেন। ব্রিটিশ দের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর সহযোগিতা ও সমর্থন পেলেন যতীন। অতীন্দ্রের অকাল মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান যতীন দিদি বিনোদবালা আর স্ত্রী ইন্দুবালাকে নিয়ে তীর্থভ্রমণে বের হন। হরিদ্বারে তারা স্বামী ভোলানন্দ গিরি'র কাছে দীক্ষা নিয়ে অন্তরের শান্তি ফিরে পেলেন। গিরিজি জানতে পারেন যতীনের দেশসেবার কথা এবং পূর্ণ সম্মতি জানান এই পন্থায় অগ্রসর হবার সপক্ষে। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে সপরিবারে যতীন দেওঘরে বাস করতে থাকেন, বারীণ ঘোষের সঙ্গে একটি বোমা কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। এই কারখানার অভিজ্ঞতা নিয়ে অবিলম্বে কলকাতার মানিকতলায় বারীণ আরো বড় করে কারখানা খোলেন। যতীন চাইতেন প্রথমে একদল একক শহীদ এসে দেশের লোকের চেতনায় নাড়া দেবে;দ্বিতীয়ত ক্ষেপে আসবে ছোট ছোট দল বেঁধে ইতস্তত খণ্ডযুদ্ধ; তৃতীয় পর্বে দেশব্যাপী এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণআন্দোলন। বারীণ চাইতেন আচমকা সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে হাউইয়ের মতো জ্বলে উঠে ফুরিয়ে যেতে। সংগঠনের দিক থেকে বারীণ তার একচ্ছত্র নেতৃত্বে বিশ্বাস করতেন। যতীন চাইতেন জেলায় জেলায় আঞ্চলিক নেতাদের অধীনে গুপ্তসমিতি শক্তিশালী হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা করবে। আপাতদৃষ্ট স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে বন্যাত্রাণে, কুন্তিমেলায়, অধোদয়যোগে, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মোৎসবে মিলিত হয়ে দলের ঐক্য ও শক্তি পরীক্ষার সুযোগ পেতেন তারা।
১৯০৭ সালে বিশেষ কর্ম-দায়িত্ব নিয়ে হুইলারের সচিবদের সংগে যতীন সপরিবারে দার্জিলিংয়ে স্থানান্তরিত হলেন। সমস্ত উত্তর বাংলার মতো এখানেও যতীন "অনুশীলন"-এর সক্রিয় শাখা স্থাপন করেছিলেন। ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাসে ক্যাপ্টেন মার্ফি ও লেফটেন্যান্ট সমারভিল প্রমুখ চারজন সামরিক অফিসারের সঙ্গে যতীনের মারপিট হয় শিলিগুড়ি স্টেশনে। চারজনের চোয়াল ভেঙ্গে ধরাশায়ী করে দেবার অপরাধে যতীনের নামে মামলা রুজ্জু হলে সারাদেশে বিপুল হর্ষ জাগে-কাগজে কাগজে এই নিয়ে লেখালেখির বহর দেখে সরকার চাপ দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে। ঠাট বজায় রাখতে ম্যাজিস্ট্রেট যতীনকে শাসিয়ে দেন, “এমনটি আর যেন না ঘটে!” দর্পভরে যতীন জবাব দেন “নিজের সম্মান বা দেশবাসীর সম্মান বাঁচাতে যদি প্রয়োজন হয়, এমনটি যে আবার করব না, এ শপথ আমি করতে অপারগ।” হুইলার একদিন ঠাট্টা করে যতীনকে জিজ্ঞাসা করেন, “আচ্ছা, একা হাতে ক'টা লোককে আপনি শায়েস্তা করতে পারেন?” হেসে যতীন বলেন, “ভাল মানুষ হয় যদি, একটাও নয়; দুর্বৃত্ত হলে যতগুলি খুশি সামলাতে পারব।” দৃঢ়চেতা মনোভাবী ও সমাজ সংস্কারক বাঘা যতীন ১৯০৬ সাল থেকে স্যার ডেনিয়েল হ্যামিলটনের সহযোগিতায় যতীন একাধিক মেধাবী ছাত্রকে বৃত্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় তারকনাথ দাসকে দিয়ে; পরপর তার পিছু পিছু রওনা হন গুরনদিৎ কুমার, শ্রীশ সেন, অধর লস্কর, সত্যেন সেন, জিতেন লাহিড়ি, শৈলেন ঘোষ। ...... এদের কাছে নির্দেশ ছিল, উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক লড়াইয়ের কায়দা ও বিস্ফোরক প্রস্তুতের তালিম নিয়ে আসতে এবং বিদেশের সর্বত্র ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি করতে। ১৯০৮ সালে বারীণ ঘোষের প্রথম প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে সবাই যখন হাল ছেড়ে দিয়েছে, তখন গোপনে শ্রী অরবিন্দের ঘনিষ্ঠ দুই প্রধান বিপ্লবী কানে কানে রটিয়ে দিলেন: "ওরে, হতাশ হস্‌নে! যতীন মুখার্জি হাল ধরে আছে!" এই দু'জনের নাম অন্নদা কবিরাজ ও মুন্সেফ অবিনাশ চক্রবর্তী। বাস্তবিক সভা-সমিতি যখন বেআইনি, সারাদেশ যখন ধড়-পাকড়ের আতঙ্কে বিহ্বল, যতীন তখন স্যার ডেনিয়েলের কাছ থেকে জমি লীজ নিয়ে গোসাবা অঞ্চলে পত্তন করলেন Young Bengal Zamindari Cooperative : পলাতক কর্মীদের গ্রাসাচ্ছাদনের সংগে তিনি সোদপুরের শশীভূষণ রায় চৌধুরী'র দৃষ্টান্ত অনুযায়ী শুরু করলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নৈশ বিদ্যালয়, ছোট ছোট কুটির শিল্পের প্রতিষ্ঠান, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। গ্রামাঞ্চলের সংগে বিপ্লবীদের এই প্রথম প্রত্যক্ষ পরিচয় অত্যন্ত সুফল আসলো। বিপ্লবীদেরকে অস্ত্র শিক্ষা ও ইংরেজ সরকার জেলার সুবিদিত অস্ত্র-ব্যবসায়ী নূর খাঁ'র কাছে আগ্নেয়াস্ত্র কিনে যতীন নিয়মিত বাদা অঞ্চলে গিয়ে নির্বাচিত কর্মীদের তালিম দিতেন। আলিপুর বোমা মামলার অভিযুক্ত বিপ্লবীদের ব্যয়ভার বহন, অস্ত্র সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য অর্থের প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও যতীন এইবার গণ-চেতনায় প্রত্যয় জাগানোর জন্য দুর্ধর্ষ কিছু স্বদেশী ডাকাতির আয়োজন করলেন। ১৯০৮ সালের ২ জুন থেকে ধাপে ধাপে এই অভিযান হয়ে উঠল ইংরেজ সরকারের বিভীষিকা। এই পর্যায়ের তুংগস্থান এসে পড়ল ১৯০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউটর আশু বিশ্বাসের হত্যা এবং ১৯১০ সালের ২৪ জানুয়ারি ডেপুটি কমিশনার শামসুল আলমের হত্যাঃ এঁরা দু'জনে সোনায় সোহাগার মতো যথেচ্ছভাবে আলিপুর বোমার আসামীদের ঠেলে দিচ্ছিলেন মর্মান্তিক পরিণামের দিকে; মূল অভিসন্ধি ছিল শ্রীঅরবিন্দকে চরম দণ্ড দেওয়া। ২৫ জানুয়ারি প্রকাশ্য সভায় বড়লাট মিন্টো ঘোষণা করলেন: "অভিনব এক মানসিকতা আজ দেখা দিয়েছে ........ যা চায় ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে। একটিমাত্র অপরাধী ২৭ জানুয়ারি, ১৯১০ তারিখে যতীনকে গ্রেপ্তার করা হল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে। শুরু হল হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা। দশম জাঠ বাহিনীকেই বিপ্লবীদের সংগে সহযোগিতার অপরাধে ভেঙ্গে দেওয়ার আগে প্রধান অফিসারদের ফাঁসিতে ঝোলানো হল। এক বছর ধরে এই মামলা চলতে দেখে নতুন বড়লাট হার্ডিঞ্জ অসহিষ্ণু হয়ে দাবি করলেন "একটিমাত্র অপরাধী"কে দণ্ড দিয়ে বাকি আসামীদেরকে রেহাই দেবার। "একটিমাত্র অপরাধী" হিসেবে যতীন কারাগারে বসেই খবর পেলেন যে অদূর ভবিষ্যতে জার্মানির সঙ্গে ইংল্যান্ডের লড়াই বাঁধবে। "দুই বাংলাতেই আজ শাসনব্যবস্থা বিফল", মরিয়া হার্ডিঞ্জ অনুযোগ করে ক্ষান্ত নন; কারামুক্ত যতীনকে গৃহবন্দী রেখে সরকার তৎপর হল শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। পুলিশী রিপোর্টে নিক্সন সাহেব লিখেছেন যে, মহাযুদ্ধ বেঁধে গেলে স্বাধীনতা-লাভের পথ প্রশস্ত হবে, এটা সম্যক উপলব্ধী করেন যতীন মুখার্জি। জার্মান যুবরাজ কলকাতায় সফর করতে এলে যতীন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যুবরাজের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পান-সশস্ত্র অভ্যুত্থানের জন্য জার্মানি থেকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য পাওয়া যাবে।সমস্ত সন্ত্রাসমূলক কাজ স্থগিত রেখে যতীন পরামর্শ দিলেন জেলায় জেলায়, কেন্দ্রে কেন্দ্রে শক্তি সংহরণে নিবিষ্ট হতে। আকস্মিক এই সন্ত্রাস-বিরতি দিয়ে যতীন প্রমাণ করলেন যে, সুনিয়ন্ত্রিত পথেই তিনি হিংসাত্মক কর্মে নেমেছিলেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রয়োজনে, যেটা টোরিটোরার সময়ে গান্ধীজির হাত ফসকে শোচনীয় আকার নেয়। পুলিশের চোখে ধুলো দিলেন যতীন কলকাতার পুরো দায়িত্ব অতুলকৃষ্ণ ঘোষের হাতে অর্পণ করে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে যতীন উপস্থিত হলেন তার পৈতৃক ভিটা ঝিনাইদহে। সেখানে ঠিকাদারের ব্যবসা শুরু করলেন তিনি যশোর-ঝিনাইদহ রেলপথ নির্মাণ উপলক্ষে। ব্যবসার সুবাদে তিনি সাইকেলে অথবা ঘোড়ার পিঠে চড়ে জেলায় জেলায় অবিশ্রাম ঘুরে গুপ্তসমিতির শাখাগুলিকে সন্নিহিত করে তুললেন। ১৯১৩ সালে বাংলা এবং বাংলার বাইরের বিভিন্ন শাখার কর্মী ও নেতারা মিলিত হলেন বর্ধমানে বন্যাত্রাণ উপলক্ষে। উত্তর ভারত থেকে রাসবিহারী বসু এসে যতীনের সংগে আলোচনা করে নূতন প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হলেন- অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে যতীনের সংগে একাধিক বৈঠকে রাসবিহারী সিদ্ধান্ত নিলেন ফোর্ট উইলিয়ামের সৈন্য-বহরের পরিচালকদের সহযোগিতায় কলকাতা থেকে পেশোয়ার অবধি বিদ্রোহের আগুন জ্বলবে ১৮৫৭ সালের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে। ‘ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্র’ অভিযোগে অভিযুক্ত ১৯১৪ সালের নভেম্বর মাসে সানফ্রান্সিসকো থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন গাদ্দার নেতা সত্যেন সেন; সংগে এলেন বিষ্ণুগণেশ পিংলে, কর্তারসিং সরাংগা ও বিরাট একদল ত্যাগী কর্মী। সত্যেন জানালেন যে, বার্লিনে বীরেন চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত বিপ্লবীরা খোদ কাইজারের সঙ্গে চুক্তি সই করেছেন ভারতে অস্ত্রশস্ত্র ও অর্থ পৌঁছে দেবে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পাঠানো কয়েকটি জাহাজ; এর দায়িত্ব নিয়েছেন ওয়াশিংটনে জার্মান রাষ্ট্রদূত ব্যার্নস্টর্ফ ও তার মিলিটারী আতাশে ফন্‌পাপেন। কাইজারের সনদ নিয়ে একটি বিপ্লবী মিশন রওনা হচ্ছে কাবুল অভিমুখে; পথে তারা জার্মানির হাতে বন্দী ব্রিটিশ সৈন্যবহরের ভারতীয় জওয়ানদের নিয়ে গড়ে তোলা বাহিনী নিয়ে কাবুল থেকে কুচকাওয়াজ করে হাজির হবে দিল্লীতে, যোগ দেবে সশস্ত্র অভ্যুত্থানে। বার্মা সীমান্তেও সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত থাকছে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে বলে। দূরপ্রাচ্যে বিভিন্ন জার্মান দূতাবাস ও কনস্যুলেট সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। যতীনের চিঠি নিয়ে পিংলে ও কর্তারসিং গেলেন রাসবিহারী'র সঙ্গে দেখা করতে। ব্রিটিশ টেগার্টের রিপোর্টে দেখা যায়, এই সময়ে সত্যেন সেনকে নিয়ে যতীন কলকাতার বিভিন্ন রেজিমেন্টের অফিসারদের সংগে আলোচনায় ব্যস্ত। ভারতের এই যজ্ঞ-অনলে ইন্ধন দেবার জন্য সাজসাজ পড়ে গেল দূরপ্রাচ্যে আমেরিকায়, ইউরোপে, মধ্যপ্রাচ্যে। ভূপতি মজুমদার স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন যে, আন্তর্জাতিক এই সহযোগিতার উদ্ভাবন করেন স্বয়ং যতীন মুখার্জি। ইতিহাসে একে অভিহিত করা হয় "ভারত-জার্মান ষড়যন্ত্র" নামে। সমাগত ত্যাগী কর্মীরা কাজে নামতে চান, জার্মান অস্ত্র আসার জন্য তাঁদের তর সইছে না। যতীনের সঙ্গে পরামর্শ করে রাসবিহারী দিন ধার্য্য করলেন ২১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের জন্য। মিঞাসির (মহীসুর), লাহোর, ফিরোজপুর, রাওয়ালপিণ্ডি, জব্বলপুর, বেনারস-সর্বত্র তেরংগা ঝাণ্ডা উড়িয়ে দেওয়া হব-ঃ নীল হবে মুসলমান কর্মীদের প্রতীক; হলদে শিখ; লাল হিন্দু। কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দখল করে সমস্ত রেলপথ উড়িয়ে দেওয়া হবে, যাতে করে সরকার পক্ষ প্রত্যুত্তরের জন্য সৈন্যবাহিনী না আনাতে পারে। ইতিমধ্যে ২৬ আগস্ট ১৯১৪ সালে কলকাতার রডা কোম্পানী থেকে বিপ্লবীরা যথেষ্ট শক্তিশালী মাউজার পিস্তল সংগ্রহ করেছেন, প্রয়োজনমতো যা দূরপাল্লার রাইফেলের মতো ব্যবহার করা চলে। রাসবিহারী'র অনুরোধে অর্থ সংগ্রহ করতে যতীন নতুন একপ্রস্থ আক্রমণের পরিকল্পনা করণে। মোটরচালিত ট্যাক্সির সাহায্যে অভিনব এই ডাকাতির পদ্ধতি অবিলম্বে ফ্রান্সে দেখা যাবে প্রখ্যাত নৈরাজ্যবাদী সর্দার "বোনো"র পরিচালনায়। পরিশীলিত, শৃংখলাবদ্ধ দুঃসাহসিক এই কীর্তির সামনে মুগ্ধ আতঙ্কে ইংরেজ সরকার হতবুদ্ধি হয়ে রইল। আর পুলকে মুগ্ধ দেশবাসী প্রত্যয় ফিরে পেল বিপ্লবীদের কর্মক্ষমতায়। ১২/২/১৯১৫, ২২/২/১৯১৫ - দুই দু'টো চোখ ধাঁধানো ডাকাতির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে। ২৪/২/১৯১৫ যতীন এক গুপ্ত বৈঠকে কর্মসূচী নির্ধারণ করছেন, এমন সময়ে এক সরকারী গোয়েন্দা সেখানে উপস্থিত দেখে নেতার ইংগিতক্রমে চিত্তপ্রিয় তাকে গুলি করেন। গুপ্তচরটি তখনো মরেনি। মরার আগে সে যতীনকে তার ঘাতক’বলে সনাক্ত করে। থরহরিকম্পা পুলিশ রিপোর্টে অসহায় টেলিগ্রাম দেখা যায় "চড়া ইনাম ঘোষণা করেও যতীনের হদিশ মিলছে না। এখনো তিনি ছদ্মবেশে কলকাতায় বহাল তবিয়তে যাতায়াত করছেন, কিন্তু তাঁর মতো উগ্র চরিত্রের নাগাল পাবার যোগ্য চর পাওয়া দুর্লভ, বিশেষত সর্বদাই তিনি সশস্ত্র থাকেন"। যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায় তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন,"কলকাতায় Flying Squad, Armoured Car-এর সশস্ত্র পাহাড়ার ব্যবস্থা হল। বড় রাস্তাগুলিতে ড্রপ-গেট করা হল - রেললাইন বন্ধ করার যেরূপ লোহার পাল্লা খাড়া রাখা হয়, ঠিক তেমনি। থানায় সাইরেন বসানো হল। কলকাতা থেকে উত্তর ও পূর্বদিকে খাল পার হবার যত পোল আছে - চিৎপুর, টালা, বেলগেছে, মানিকতলা, নারকেলডাংগা ও হাওড়ার পোলে সশস্ত্র প্রহরী দেওয়া হল। যাকে-তাকে এবং যে-কোনও গাড়ীকে ধরে তল্লাশ করা হতে লাগল। কৃপাল সিং- বিশ্বাসঘাতক 'গদর' কর্মী কোন মহৎ সাধনার পথে যতীন নেমেছেন, তা স্মরণে রেখে পুলিশের দেশী কর্মচারীরা পর্যন্ত মনেপ্রাণে যতীনের অনুরাগী হয়ে উঠলেন। ব্যতিক্রম ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর সুরেশ মুখার্জি। তিনি বিপ্লবীদের জব্দ করতে বদ্ধপরিকর। বারেবারে সুরেশের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে একদিন যতীন বললেন, "যতক্ষণ না সুরেশকে সরানো হচ্ছে, ততক্ষণ আমি জলস্পর্শ করব না"। ২৮/২/১৯১৫ তারিখে ভোরবেলা সুরেশ সদলবলে টহলে বেরিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড়লাট যাবেন-তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকা করতে। নিপুণহাতে সুরেশকে নিধন করে যতীনের সহকারীরা গা ঢাকা দিলেন। এদেঁর কর্মতৎপরতায় এমনকি টেগার্টও মুগ্ধ হয়ে পরবর্তীকালে স্বীকৃতি জানিয়েছেন যে, বাঙ্গালী এই বিপ্লবীদের চরিত্রের সমতুল জগতে আর কোথাও পাওয়া বিরল। এদেঁর আত্মবিশ্বাস ও দেশের কাজের জন্য সর্বস্বত্যাগের ব্রত টেগার্টকে মনে করিয়ে দিয়েছে গাঁন্ধীর কথা। জটিল এই পরিস্থিতিতে যতীনের আর কলকাতা থাকা সমীচীন নয়, বিবেচনা করে তার শিষ্য ও সহকারীরা খুঁজে পেলেন বালেশ্বর (বালাসোর)-এর আশ্রয়। ওখানকার উপকূলেই জার্মান অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রধান জাহাজটি আসার কথা। তার প্রতীক্ষায় যতীন ওখানে চার-পাঁচজন কর্মীকে নিয়ে আস্তানা গাড়লেন। স্থানীয় অভিভাবকরূপে রইলেন মনীন্দ্র চক্রবর্তী। দীর্ঘ ছ'মাস তিনি বুকের পাঁজরের মতো আগলে থেকেছেন মহানায়কের এই অজ্ঞাতবাসের আস্তানা। যতীনকে বালেশ্বরে নিরাপদ দেখে নরেন ভট্টাচার্য (এম.এন. রায়) রওনা হলেন বাটাভিয়া অভিমুখে, বীরেন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশমাফিক; সেখানে হেলফেরিষ্‌ ভ্রাতাদের কাছে বিশদ অবগত হলেন জার্মান অস্ত্র নিয়ে জাহাজ আসার পাকা খবর; ফিরে এসে নাটকীয়ভাবে গুরুর চরণে একথলে মোহর ঢেলে দিয়ে প্রণাম করে জানালেন, জার্মান সহযোগিতার দরুন প্রাপ্য অর্থের এটি প্রথম কিস্তি। মনীন্দ্র সবই দেখেছেন। সবই জানতেন। বিশাল ঝুঁকি নিয়ে তবু তিনি এঁদের আশ্রয় দিয়েছেন। মুগ্ধ হয়ে এঁদের সান্নিধ্য উপভোগ করেছেন। ইতিমধ্যে রাসবিহারী'র প্রচেষ্টা যেমন উত্তরাঞ্চলে ভেস্তে যায় কৃপাল সিং নামে বিশ্বাসঘাতক 'গাদ্দার' কর্মীর জন্য, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চেকোস্লোভাকিয়া থেকে সমাগত বিপ্লবীরা ইন্দো-জার্মান সহযোগিতার সংবাদ ফাঁস করে দেয় মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের দপ্তরে-প্রতিদানে নিজেদের সংগ্রামের অনুকূল সহানুভূতি পাবার প্রত্যাশায়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের উদ্যোগে জার্মান সরকারের সংগে জার্মান বিভিন্ন দূতাবাসের পত্র ও তারবার্তা হস্তগত করে ব্যাপক এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের মূল উপড়ে ফেলতে উদ্যত হল সমবেত ব্রিটিশ ও মার্কিন সুরক্ষা বিভাগ। পেনাং'এর একটি সংবাদপত্রের কাটিং থেকে যতীন খবর পেলেন যে, অস্ত্রশস্ত্রসমেত জাহাজ ধরা পড়ে গিয়েছে। মারাত্মক এই নিরাশায় তিনি ভেঙ্গে পড়বেন ভয় ছিল সহকারীদের। পরিবর্তে তিনি হেসে উঠলেন, যেন কিছুই তেমন ঘটেনি. "দেশের সুরাহা বাইরে থেকে নয়, তা আসবে অভ্যন্তর থেকে!" রোজ বিকেলে বনভূমির নীরব আশ্রয়ে যতীন গীতার ক্লাস নিতেন। শিষ্য নলিনীকান্ত কর তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, "মনে হত যেন গৌতম মুনির কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে বেদমন্ত্র"। ক্লাসের শেষে অস্তসূর্যের আলোকে একাকী যতীন কিছুক্ষণ ধ্যান করতেন। একদিন মনীন্দ্রও বসে রইলেন। হঠাৎ যতীন অদূরবর্তী মনীন্দ্রের হাত ছুঁয়ে বলে উঠলেন: "ওই দ্যাখ! কৃষ্ণ আমাদের দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছেন!" মনীন্দ্র সেই দৃষ্টির অভাবে প্রত্যক্ষ করলেন-যতীনের স্পর্শে এক তীব্র পুলকের স্রোত। বুড়ি বালামের তীরে খণ্ডযুদ্ধ ও যতীনের আত্মদান কলকাতা থেকে খবর এল, একের পর এক বিপ্লবীদের কেন্দ্রগুলিতে তল্লাস চালাচ্ছে পুলিশ। বালেশ্বরের সন্ধান পেতে দেরী নেই। দুর্গম ডুভিগর পর্বতশ্রেণী দিয়ে গা ঢাকা দেবার উপযোগিতা নিয়ে কেউ কেউ যখন জল্পনা-কল্পনা করছেন, যতীন দৃঢ়স্বরে জানালেন, "আর পালানো নয়। যুদ্ধ করে আমরা মরব। তাতেই দেশ জাগবে।" ৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে যতীন নিজের সাময়িক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলেন। সঙ্গে চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, জ্যোতিষচন্দ্র পাল, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন কেটে গেল গভীর জঙ্গলে। সারারাত পায়ে হেঁটে ৯ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা পৌঁছলেন বালেশ্বরের নদী বুড়ি বালামের উপকণ্ঠে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত শুকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন। বিপরীতপক্ষে চার্লস টেগার্ট, কমান্ডার রাদারফোর্ড, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কিলভি অসংখ্য সশস্ত্র পুলিস ও সামরিক বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছিল। পরিখার আড়ালে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে মোট পাঁচজন, হাতে মাউজার পিস্তল। যুদ্ধ শুরু হলে পুলিসের গুলিতে ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী।এই যুদ্ধের এমন নজির ইতঃপূর্বে দেখেননি বলে মেনে নিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ইংরেজ কুশীলবেরা। ৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ সালে সূর্যাস্তের সংগে অবসান হল এই যুদ্ধের। পরদিন বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে যতীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তখনো রক্তবমি হচ্ছে। হেসে বললেন:"এত রক্ত ছিল শরীরে? ভাগ্যক্রমে, প্রতিটি বিন্দু অর্পণ করে গেলাম দেশমাতার চরণে।" কয়েকটি পত্র যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি পত্রঃ- [১৯১০ সালের ৪ঠা এপ্রিল তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে দিদি বিনোদবালা দেবীকে লেখা] “ শ্রীশ্রীচরণকমলেষু- দিদি, আমার অসংখ্য প্রণাম জানিবেন। আপনার স্নেহাশীর্বাদী পত্র পাইয়া সমস্ত অবগত হইলাম।-আপনারা সকলে ভাল আছে জানিয়া সুখী হইলাম। আপনি আমার অসুখের সংবাদে ব্যস্ত হইয়াছেন, ব্যস্ত হইবেন না। আমি এক্ষণে সুস্থ হইয়াছি, তবে অসুখটা একটু বেশি হইয়াছিল তাই দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিলাম, আবার শ্রীগুরুর কৃপায় আস্তে আস্তে সবল হইতেছি। যাহা হউক, ভগবানে আত্মসমর্পণ করিয়া তাঁহারই চরণে আমাকে নিবেদন করিয়া রাখুন, তিনি যেমন আমাকে শৈশব হইতে নানা বিপদে রক্ষা করিয়া আসিতেছেন, এস্থলেও তিনিই একমাত্র ভরসা। তিনি যাহাকে যত বেশি ভালবাসেন তাহাকে তত বেশি পরীক্ষা করেন এবং সেইজন্যই নানা বিপদের মুখে নিপাতিত করিয়া তাঁহারই অস্তিত্ব বুঝাইয়া দেন।- তিনি যাহা করিবেন তাহার উপর মানুষের বিন্দুমাত্র হাত নাই; মানুষ কেবল তাঁহাতে নির্ভর করিয়া পুরুষকার করিতে পারে; ফলাফল তাঁহারই হাতে। যাহা হউক আমার জন্য কোন চিন্তা করিবেন না। তাঁহার প্রতি চাহিয়া বুক বাঁধিয়া সংসারে অবস্থান করুন। আমাপেক্ষাও ভগবানের অধিক স্নেহ আপনার প্রতি, তাই আপনার পরীক্ষা আমাপেক্ষা অধিক ও কঠিনতর। যাহা হউক, তাঁহার দয়া ভুলিবেন না। অথবা তাঁহাকে অবিশ্বাস করিবেন না। ইন্দুকে ও অপর সকলকে এই পত্রই দেখাইবেন। মেজমামাকে আর একবার সাক্ষাৎ করিতে বলিবেন।-তাঁহারা সকলে কেমন আছেন? শ্রীচরণে নিবেদনমিতি প্রণত সেবক জ্যোতি ” ২০ অগাস্ট, ১৯১০-এর পত্র [১৯১০ সালের ২০শে অগাস্ট জেল থেকে দিদিকে এই পত্রটি লেখা] “শ্রীশ্রীচরণকমলেষু- দিদি, আমার অসংখ্য প্রণাম জানিবেন। আপনার স্নেহাশীর্বাদী পত্র পাইয়া সমস্ত অবগত হইলাম এবং সকলেই শারীরিক কুশলে আছেন জানিয়া সুখী হইলাম।-খোকাদের লইয়া সর্বদা সাবধানে থাকিবেন। আমি আর সে বিষয়ে আপনাকে কি লিখিব?-আমার জন্য বিশেষ কোন চিন্তা করিবেন না-আমি শারীরিক ভাল আছি। মেজমামাকে মধ্যে মধ্যে পত্র লিখিব: তিনিই আপনদিগকে আমার সংবাদ লিখিবেন। কতদিনে মোকদ্দমা উঠিবে এখনও জানিতে পারি নাই।-যাহা হউক সেই সর্বমংগলময় পরম পিতার চরণের দিকে চাহিয়া আছি।-তিনি যে বিধান করেন, তাহাই তাঁহার আশীষ বলিয়া গ্রহণ করিব। তিনি আমাদের অমংগলের জন্য কখনই কিছু করেন না। আপাত দৃষ্টিতে যাহাকে অমংগল বলিয়া বোধ হয়, তাহারো পশ্চাতে কোন মহদুদ্দেশ্য নিহিত থাকে, যাহা ভ্রান্ত আমরা বুঝিতে পারি না। তাঁহার উপরে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিয়া প্রাণে বল ধরিয়া সময় প্রতীক্ষা করুন-অবশ্য নির্দোষীকে তিনি বিপন্মুক্ত করিবেন। যথাযোগ্য স্থানে আমার প্রণাম ও আশীষ দিবেন। ইতি-প্রণত সেবক জ্যোতি” ১৯১৫ সালের মে মাসের পত্র [১৯১৫ সালের মে মাসে বালেশ্বরের অজ্ঞাতবাস থেকে এই চিঠিটি দিদি বিনোদবালাকে লেখা] “শ্রীশ্রীচরণকমলেষু- দিদি আমার অসংখ্য প্রণাম জানিবেন। আমি বেশ ভাল স্থানে সর্বাংগীণ কুশলে আছি। আমার জন্য কোন চিন্তা করিবেন না। কর্মের নিমিত্ত বাহির হইয়াছি, ভবিষ্যতে সাক্ষাতাদি কর্মের উপরই নির্ভর করিতেছে। শীঘ্রও হইতে পারে, কিছু বিলম্বও হইতে পারে। তবে নিরাশ হইবার বা ভয়ের কোন কারণ দেখি না। সর্বদা স্মরণ রাখিবেন "ন হি কল্যাণকৃৎ কশ্চিৎ দুর্গতিং তাত গচ্ছতি"।-মার আশীর্বাদে সমস্ত বিপদ হইতে উদ্ধার হইয়াছি-তিনি সমস্ত কর্মে সর্বদা যেমন সাহায্য করিয়াছেন, এ বর্তমান অবস্থায়ও তেমনি সাহায্য করিবেন সন্দেহ নাই-তাঁহারই প্রেরণায় এ কর্ম-সমুদ্রে ঝাঁপাইয়াছি, তিনি কূলে লইবেন। আপনি যে মার সন্তান তাঁহার হৃদয়ের কথা স্মরণ করিয়া আপন হৃদয়ে বল রাখিয়া যে সকল রত্নগুলি আপনার নিকট আছে তাহাদের যাহাতে উদ্দেশ্যানুযায়ী কর্মের উপযোগী করিয়া ভবিষ্যতে মায়ের পূজায় অর্পণ করিতে পারেন, সেই চেষ্টা করিবেন। আপনি ব্যস্ত হইলে ইন্দুদের নিকট কি আশা করেন? আপনি ব্যস্ত হইবেন না। সমস্তই বুঝেন। সংসারে সমস্তই যে কত অস্থায়ী তাহা আপনি অনেক প্রকারে দেখিয়াছেন এবং বুঝিয়াছেন। এই অস্থায়ী সংসারে অস্থায়ী জীবন যে ধর্মার্থে বিসর্জন করিতে অবকাশ পায় সে ত ভাগ্যবান এবং তাহার সমস্ত শুভাকাংক্ষী আত্মীয়-স্বজন, বিশেষত তাহার মাতৃস্থানীয়া সহোদরা যদি স্থিরভাবে চিন্তা করিয়া দেখেন তাহা হইলে নিজেদের বংশের সৌভাগ্যের কথা বেশ উপলদ্ধি করিতে পারেন এবং ধর্মার্থে বহির্গত ব্যক্তির সাধনায় সিদ্ধির পূর্বে তাহার গৃহে প্রত্যাবর্তন কখনই বাঞ্ছনীয় মনে করেন না, বরং তাহার মন্ত্রের সাধন পথের সহায়তার নিমিত্ত তাহার অবর্তমানে গৃহে বুক বাঁধিয়া ভগবানে নির্ভরতা সহকারে পরস্পরের রক্ষণাবেক্ষণ ও শান্তিদান করাই তাহাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় এবং এই শ্রেণীর ব্যক্তিরাই জগতে ধন্য এবং সার্থক মাতৃস্তন্য পান করিয়াছেন। হা-হুতাশ ত' সকলেই করিয়া থাকে, আপনি আমিও যদি তাহাই করি তবে আমরা আমাদের স্বর্গীয়া মাতৃদেবী শরৎশশীর গর্ভে জন্মিয়াছিলাম কেন? আমরা ত সাধারণের ন্যায় দুর্বল হৃদয় অবিশ্বাসী সামান্য মায়ের সন্তান নই-আমাদের মা জীবন ভরিয়া কি সকল ব্যাপার হাসিতে হাসিতে সহ্য করিয়া গিয়াছেন একবার ভাবিয়া দেখুন তা আর আজ তিনি জীবিত থাকিলে তিনি স্বয়ং আমাকে আমার কর্মে বরণ করিয়া লইতেন সন্দেহ নাই। তাঁহার অবর্তমানে যাহার হাতে আমাকে তিনি রাখিয়া গিয়াছিলেন, আমার সেই মাতৃস্বরূপিণী সহোদরা ও গুরুভগ্নীর কি করা কর্তব্য একটু ভাবিয়া দেখিবেন। আপনি ইতিপূর্বে একসময়ে কোন বিপদের সময় আমাকে লিখিয়াছেন, "আমাদের অপেক্ষা যিনি তোমাকে বেশি ভালবাসেন তিনিই সর্বদা তোমার কথা ভাবিতেছেন, আমরা তোমার নিমিত্ত চিন্তা করিয়া কি করিব।"-আপনার অবস্থা এতদিনে আরও উন্নত হওয়ার কথা। হৃদয়ের বল এখন আরও অধিক হইয়াছে আশা করা যায়। আপনি অনুগ্রহ করিয়া মন শান্ত করিয়া সসন্তান ইন্দুকে রক্ষা করিবেন। সন্তানগুলি যাহাতে মানুষ হয় তাহার চেষ্টার যেন কোন ত্রুটি না হয়। কখন কোন বিষয়ের প্রয়োজন হইলে ভাইদের কাহাকেও স্মরণ করিবেন এবং আমার মত জ্ঞান করিয়া প্রয়োজন জানাইবেন, অভাব থাকিবে না। কোথায় আছি জানিয়া প্রয়োজন নাই-পত্র পাইলেন তাহাও কাহাকে বলিবার প্রয়োজন নাই। প্রেরিত লোকের নিকট বক্তব্য যদি কিছু থাকে জানাইবেন। সমস্ত গুরুজনদিগকে প্রণাম ও আশীর্বাদভাজনগণকে স্নেহাশীষ দিবেন। স্মরণ রাখিবেন বিপদের সময় স্থৈর্য্য সহকারে বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ করাই বিধেয়। পরমারাধ্য শ্রীগুরুদেবের চরণে সদা মতি রাখিবেন। তাঁহাকে পত্রাদি লিখিবেন। শ্রীচরণে নিবেদন ইতি প্রণত সেবক- (অস্পষ্ট) ”১৯১৫ সালের মে মাসে অজ্ঞাতবাস থেকে লেখা [১৯১৫ সালের মে মাসে বালেশ্বরের অজ্ঞাতবাস থেকে যতীন্দ্রনাথ এই পত্রটি লেখেন ইন্দুবালা দেবীকে; স্ত্রীকে লেখা এটি তার একমাত্র পত্র যা রক্ষা করা গিয়েছে পুলিশের আক্রমণ থেকে। বছরে একবার অন্তত পুলিশে এসে খানাতল্লাস ক'রে যেত তার দিদি ও স্ত্রীর কাছে যদি দৈবাৎ আপত্তিজনক কিছু পাওয়া যায়-এই প্রত্যাশা নিয়ে। তাদেঁর মৃত্যুর আগে জ্যেষ্ঠা পুত্রবধু ঊষারাণী দেবীর হাতে তারা এই অমূল্য পত্রগুলি গচ্ছিত রেখে যান।] “পরমকল্যাণবরাসু- ইন্দু, আমার স্নেহাশীষ লও। তোমাকে আর পৃথক কি লিখিব, দিদিকে যে পত্র আমি লিখিলাম উহা পড় ও মর্ম অবগত হও। ভগবদিচ্ছায় আজ ১৫/১৬ বৎসর আমার সহিত মিলিত হইয়াছ। এই দীর্ঘকাল যখন সময় পাইয়াছি তখনই বহুপ্রকারে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছি প্রকৃত মনুষ্যত্ব কোথায়। অদ্য যে অবস্থা আসিয়াছে এ অবস্থা যে এক সময় আসিবেই এ সম্বন্ধে নানাপ্রকার তোমাকে বুঝাইয়াছি এবং প্রস্তুত থাকিতেও বলিয়াছি। আশা করি তোমার মত ক্ষেত্রে আমার সকল শিক্ষার বীজ আশানুরূপ ফল প্রসব করিয়াছে। বহু বহু সহস্রের মধ্যে একজনের নিকট যেরূপ শক্তি, ধৈর্য ও কর্তব্যজ্ঞানের বিশেষ বিকাশ দেখিতে পাওয়া যায় তোমার নিকট প্রকৃতই তাহাই আশা করি। সন্তানগুলি যাহাতে ভবিষ্যতে মানুষের সন্তান বলিয়া পরিচিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখিতে ভুলিও না। ক্ষণিক দুর্বলতা সকলেরই আসিতে পারে; সেরূপ অবস্থায় দিদিকে সাহায্য করিও ও তাঁহার সাহায্য গ্রহণ করিও। সর্বদা মনে রাখিও যে প্রকৃতি লইয়াই পুরুষ পূর্ণ-যত দূরেই থাকি না কেন, তোমার প্রসন্নতা ও শুভেচ্ছাস্বরূপ শক্তির সাহায্য যেন সদা পাই। সর্বদা শ্রীগুরুদেব ও ভগবৎ চরণে তোমার স্বামীর সিদ্ধির নিমিত্ত প্রার্থনা করিও এবং হৃদয়ে বল রাখিও। ইতি- ” কাব্যে বাঘা যতীন ও তার সাথীদের অসমসাহসী যুদ্ধের কথা বাংলা কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে দুই বিখ্যাত কবি দ্বারা। কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয় শিখা কাব্যগ্রন্থের 'নব ভারতের হলদিঘাট' তাদের লড়াইকে স্মরণ করে রচিত। ১৯৩০ এর ডিসেম্বরে প্রলয় শিখা বইয়ের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনে সরকার। চারণ কবি বিজয়লাল চট্টোপাধ্যায়ের 'বুড়িবালামের তীরে' তার বই ’সব হারানোর গান' এ স্থান পেয়েছে। চলচ্চিত্র বাঘা যতীনের জীবনকাহিনী নিয়ে বাংলা সিনেমা 'বাঘা যতীন' প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। অভিনয় করেন ধীরাজ ভট্টাচার্য, নিমু ভৌমিক, ছায়া দেবী প্রমুখ। সুমি খান, ১৮ ডিসেম্বর , ২০২০

Sunday, November 22, 2020

মুজিবের পরিবারকে আশ্রয় দানে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতবিরোধিতা- খুশবন্ত সিংকে জিয়া

 প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক খুশবন্ত সিং ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। 

জিয়ার কাছে আমার শেষ প্রশ্ন ছিল তার দেশে ক্রমবর্ধমান ভারতবিরোধী মনোভাব সম্পর্কে।

    অনেক দেয়ালের ওপর স্লোগান লেখা -‘ভারতীয় কুকুর, হঠে যাও’, ‘বাংলাদেশের ওপর থেকে হাত গুটিয়ে নাও’। 

    আমি জিয়ার কাছে জানতে চাই যে, তিনি তার দেশে ভারতীয় হস্তক্ষেপের কোনো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করতে পারেন কিনা। 

    তিনি যা বললেন, তা হলো ভারত সরকার কর্তৃক বাঘা সিদ্দিকী ও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান। 

আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য দায়ী একজনকেও কেন গ্রেফতার করা বা শাস্তি প্রদান করা হয়নি?

     আমার প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করলেন না; বরং অধৈর্যের মতো তার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। আমি জানতাম, সাক্ষাৎকারের সময় শেষ হয়েছে।

সেই সন্ধ্যায় আমিই ছিলাম জিয়ার শেষ দর্শনার্থী।

জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়ার বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য উল্লেখ করেছেন খুশবন্ত সিং।

  তিনি যখন জানতে চান বঙ্গবন্ধুর কোনো ঘাতককে কেন গ্রেফতার করা বা শাস্তির বিধান করা হয়নি, তাঁর এ প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য না করে জিয়া অস্থিরভাবে হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন বলে লিখেছেন খুশবন্ত সিং।

শেখ মুজিবুর রহমান এবং রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দু'জনের সঙ্গেই আমার অনেকবার সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার জানামতে শুধু বাঙালি মুসলিম হওয়া ছাড়া তাদের উভয়ের মধ্যে আর কোনো বিষয়ে মিল ছিল না। 

মুজিবের উচ্চতা ছিল একজন বাঙালির গড় উচ্চতার চেয়ে বেশি, তাঁর ছিল শরীর মাংসল এবং পরনে থাকত ঢিলেঢালা পোশাক। জিয়া আকৃতিতে খাটো, তার শরীর হালকা-পাতলা হলেও গঠন চাবুকের মতো শক্ত। একবার তার দেহরক্ষী আমাকে বলেছিলেন, ‘তাঁর এক মুষ্টাঘাত কোনো মানুষকে বেহুঁশ করে ফেলতে পারে।’ 

মুজিব অত্যন্ত আন্তরিক, উষ্ণ-হৃদয়ের, বহির্মুখী এবং কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলেন; জিয়া সুদূরের, গম্ভীর এবং অল্প কথা বলেন। 

মুজিবের দফতর মুঘল আমলের প্রাচ্যদেশীয় দরবারের মতো : কয়েক ডজন মানুষ কার্পেটের ওপর, সোফা ও চেয়ারের ওপর ছড়িয়ে বসে থাকে, দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। সারাক্ষণ একটির পর একটি টেলিফোন বাজে; তিনি ফোনে কথা বলার পাশাপাশি উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে যিনিই তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলছেন এবং তাঁর সামনে টেবিলে রাখা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। পুরো বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ।

 জিয়ার অফিস তার মতোই শীতল। ওয়েটিং রুমে তাঁর সচিব ও নিরাপত্তা কর্মীরা বিচক্ষণতার সঙ্গে আপনাকে মার্জিত কথাবার্তার মধ্যে ব্যস্ত রাখেন এবং তাদের সতর্ক দৃষ্টি খুঁজে ফিরে আপনার কাছে কোনো গোপন অস্ত্র আছে কিনা। 

 একসঙ্গে একজনের বেশি দর্শনার্থীকে তিনি স্বাগত জানান না এবং সময় মেনে চলেন স্টপওয়াচের মতো। 

 জিয়ার রুমে হুট করে অঘোষিতভাবে প্রবেশ করার সাহস কারও নেই। 

 কোনো টেলিফোনও বাজে না।

 আপনার প্রশ্নগুলো বাতাসে জমে থাকবে; 

 জিয়াউর রহমানের নির্দিষ্ট-পরিমিত উত্তর আপনার জমাট প্রশ্নগুলোকে গলাতে পারবে না।

 মুজিব আপনাকে আলিঙ্গন করবেন এবং দ্বিতীয় সাক্ষাতে আপনার তাঁর ‘পুরনো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করবেন। 

 জিয়া তার শীতল হাতে আপনার সঙ্গে হাত মেলাবেন এবং চিনতে পারার স্বীকৃতি হিসেবে অস্পষ্ট, ম্লান হাসবেন। 

 মুজিব নিজের সম্পর্কে স্বয়ং তৃতীয় পুরুষে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছেন’, এবং আপনার কাছেও অনুরূপ সম্বোধন আশা করবেন। 

জিয়া কখনো তার মুখ খোলেন না, অথবা তার সঙ্গে কাউকে খুব ঘনিষ্ঠ হতে দেন না।

 তিনি সবসময় ‘মিস্টার’, ‘প্রেসিডেন্ট,’ ‘স্যার’ ছিলেন।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার দুই বছর পর তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়।

 সামরিক একনায়কদের ব্যাপারে আমার আপত্তি ও নেতিবাচক মনোভাব ছিল এবং এমন একজনের প্রতি ভিন্ন ধরনের বিতৃষ্ণা ছিল, যিনি মুজিবের ঘাতকদের শাস্তি বিধান করার পরিবর্তে তাদের কূটনৈতিক দায়িত্বে ন্যস্ত করার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছিলেন। 

 তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অতিবাহিত করা সপ্তাহে ঢাকার পরিবেশের যতটুকু দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে, তাতে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি।

  মাত্র কয়েক বছর আগেও যে এলোমেলো নগরীতে বিরাজ করছিল চরম বিশৃঙ্খলা, সেখানে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় গড়ে ওঠা শপিং সেন্টার ও মার্কেটগুলো দেখে সমৃদ্ধির সুস্পষ্ট লক্ষণ বোঝা যায়। 

  দেশটিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঢাকার বাইরে পল্লীগুলোকে আরও সবুজ, আরও পরিচ্ছন্ন এবং আমি আগে যেমন দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী মনে হয়েছে।

   আমি জিয়াকে একথা বলার পর তাকে অত্যন্ত সন্তুষ্ট মনে হয় এবং তিনি তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের সময় প্রলম্বিত করেন। 

  করিডোর দিয়ে আমার কয়েক গজ সামনে বিশালদেহী দু'জন দেহরক্ষীর অবস্থানের মাঝখান দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। 

 তখনই আমি লক্ষ্য করলাম যে আকৃতিতে তিনি কতটা খাটো ছিলেন- পাঁচ ফুটের সামান্য বেশি। জিয়া হাই-হিল জুতা পরতেন।

(খুশবন্ত সিং এর ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য রিডিকুলাস’ থেকে)